জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে এই জোটের ব্যাপারে আগ্রহ বেড়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা প্রত্যাশা থাকবেই যে জোট ক্ষমতায় গেলে তাদের জন্য কী কী করবে। ক্ষমতায় গেলে তাদের পররাষ্ট্রনীতি কী হবে কিংবা অর্থনীতি কী হবে, সে ব্যাপারেও অনেকের আগ্রহ থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ফ্রন্টের এই ইশতেহারে আগামী ৫০ বছরের বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা নেই। ইশতেহারে সব সাধারণ কথাবার্তা বলা হয়েছে। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে শুধু এক জায়গায় বলা হয়েছে তিস্তা ও রোহিঙ্গা প্রশ্নে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান। এর মাধ্যমে নতুনত্ব কী পেলাম আমরা? সরকার তো তিস্তার পানিবণ্টনে ভারতের সঙ্গে ও রোহিঙ্গা প্রশ্নে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে আসছে। তাহলে সরকারের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের পার্থক্য থাকল কোথায়? পররাষ্ট্রনীতির প্রশ্নে তিস্তা ও রোহিঙ্গা ইস্যু দুটিই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে আমাদের ‘অ্যাপ্রোচ’ কী হওয়া উচিত, সে ব্যাপারে ব্যাখ্যা থাকা উচিত ছিল। সার্ক, বিবিআইএন, চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ ইত্যাদি বিষয় আমাদের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু সুস্পষ্টভাবে কোনো কথা লেখা নেই এসংক্রান্ত বিষয়ে। অর্থনীতি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের বেশি বলা হচ্ছে। এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে আমাদের কোন ধরনের কর্মসূচি হাতে নেওয়া প্রয়োজন, সে ব্যাপারে মহাপরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন। আমাদের এক বিশাল তরুণ প্রজন্ম রয়েছে। এই তরুণ প্রজন্ম একটি ‘শক্তি’। এই তরুণ প্রজন্মকে আমরা প্রশিক্ষিত করে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে বিদেশে রপ্তানিও করতে পারি। জাপানে ও ইউরোপে দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি রয়েছে। এ দেশগুলো এখন তাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো চালু রাখতে দক্ষ জনশক্তি আমদানি করবে। আমরা তাদের ‘অভাব’ পূরণ করতে পারি। কিন্তু সে জন্য যা প্রয়োজন, তা হচ্ছে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ার উদ্যোগ। আমাদের দেশের পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তরুণ বেকার সৃষ্টি করছে। এরা জাতীয় উন্নয়নে কোনো সমাধান রাখতে পারছে না। বিশেষ বিশেষ খাতকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। আইটি খাতে বিদেশে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। নার্সিং পেশার চাহিদা বিদেশে ব্যাপক। মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টও দরকার। এই খাতগুলো বাহ্যত উপেক্ষিত। প্রতিটি জেলায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা কোনো সমাধান নয়। বরং প্রতি জেলায় প্রতিটি কলেজকে টেকনিক্যাল কলেজে ধীরে ধীরে উন্নীত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সাধারণ শিক্ষার পরিবর্তে প্রযুক্তিগত বিদ্যা, বায়োটেকনোলজি, কৃষি, আইটি—এসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে ভেঙে প্রতিটি বিভাগে একটি করে টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। সাধারণ শিক্ষা আমাদের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। দক্ষ জনশক্তিও তৈরি করতে পারছে না। সুতরাং ঐক্যফ্রন্ট একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার কথা জাতিকে জানাতে পারত। কিন্তু ইশতেহারে তা নেই।
নির্বাচনের যখন বাকি আছে মাত্র কয়েকটি দিন, তখন ঐক্যফ্রন্ট, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ এবং সেই সঙ্গে বামফ্রন্ট ও জাতীয় পার্টি এক এক করে তাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছে। বিএনপি ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক দল হলেও ঐক্যফ্রন্টের বাইরে গিয়ে আলাদাভাবে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছে। তবে সংগত কারণেই ঐক্যফ্রন্ট আর আওয়ামী লীগের ইশতেহার নিয়ে আলোচনা হবে বেশি। ঐক্যফ্রন্ট তাদের ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে—প্রতিহিংসা নয়, জাতীয় ঐক্যই লক্ষ্য, আর এই লক্ষ্য প্রতিষ্ঠায় একটি ‘ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন’ (Truth and reconciliation) কমিশন গঠন, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনব্যবস্থায় সংস্কার, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, দুই টার্মের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকা, সংসদে ডেপুটি স্পিকারের পদটি বিরোধী দলকে দেওয়া, সরকারি চাকরিতে (পুলিশ ও সেনাবাহিনী বাদে) কোনো বয়সসীমা না থাকা, শিক্ষাব্যবস্থায় সংস্কার, দুর্নীতি রোধে যথাযথ ব্যবস্থা, বিচারবহির্ভূত সব হত্যাকাণ্ড বন্ধ, বিভাগীয় সদরে হাইকোর্ট বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা, ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ, নির্বাচনে মনোনয়নব্যবস্থায় ন্যূনতম ২০ শতাংশ নারীদের জন্য বাধ্যতামূলক করা, মোবাইল ফোনের কলরেট কমানো, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম চলমান থাকা, জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন, সমতার ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি, মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি, আলোচনার মাধ্যমে তিস্তা ও রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান, বঙ্গোপসাগর থেকে ভূমি উদ্ধারের ব্যবস্থা ইত্যাদি। ফ্রন্টে ইশতেহারে আছে ৩৫ দফা ও ১৪ প্রতিশ্রুতি। এই প্রতিশ্রুতির বেশির ভাগই আবার বিএনপির ইশতেহারেও আছে।
তবে এটা ঠিক, ইশতেহারে কিছু ভালো কথাও আছে। দুই টার্মের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না—এটি ভালো। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট দুই টার্মের বেশি থাকতে পারেন না। এমনকি ইউরোপের অনেক দেশে দল হেরে গেলে দলের নেতা যিনি নেতৃত্বে থাকেন কিংবা যাঁর নেতৃত্বে দল নির্বাচনে যায়, দল হেরে গেলে তিনি নেতৃত্ব ছেড়ে দেন। দৃষ্টান্ত ব্রিটেনের পার্লামেন্টারি সিস্টেম। দুই টার্মের বেশি কেউ ক্ষমতায় থাকলে ক্ষমতা এককেন্দ্রিক হয়ে যায়। চাকরিতে (সরকারি) বয়সসীমা তুলে দেওয়ার ঘোষণাও ভালো। প্রচলিত ব্যবস্থায় পিএসসির মাধ্যমে যাঁরা নিয়োগপ্রাপ্ত হন, প্রায় ক্ষেত্রেই তাঁদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিশ্ব বদলে যাচ্ছে। বিষয়ভিত্তিক দক্ষ জনশক্তি না থাকায় আমরা অন্য দেশের সঙ্গে ‘নেগোসিয়েশনে’ আমাদের স্বার্থ আদায় করে নিতে পারি না। তাই পরিচালনায়, বিশেষ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ক্যাডার প্রথার বাইরে গিয়ে বেসরকারি খাত থেকে দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্র এটা অনুসরণ করে। সম্প্রতি মোদি সরকারও ভারতে এটি চালু করেছে। নারীদের সংরক্ষিত কোটা কমিয়ে আনার প্রস্তাবও ভালো। পশ্চিমবঙ্গ কিংবা নরডিক দেশগুলোর দৃষ্টান্ত আমরা অনুসরণ করতে পারি। তবে যেটা গুরুত্বপূর্ণ, তা হচ্ছে বিরোধী দলের সঙ্গে একটা আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলা। এ জন্য সংসদে প্রধান বিরোধী দল থেকে একজন ডেপুটি স্পিকার, একাধিক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যানের পদ দেওয়া যেতে পারে। ফ্রন্টের প্রস্তাবে তা আছে। একটি Tauth and Reconciliation কমিশন গঠনের কথাও বলা হয়েছে। এটাও ভালো প্রস্তাব। এই কমিশন একটি আস্থার সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ইশতেহার নিয়েও আলোচনা করা যেতে পারে।
আওয়ামী লীগের ইশতেহারে রয়েছে ২১ দফা। এই ২১ দফায় আওয়ামী লীগ যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে—গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ, তরুণসমাজকে জনশক্তিতে রূপান্তর, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, নারীর ক্ষমতায়ন, নিরাপদ খাদ্য, জঙ্গিবাদ নির্মূল, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা, দারিদ্র্য নির্মূল, শিক্ষার মান বৃদ্ধি, কৃষিব্যবস্থা যান্ত্রিকীকরণ, দক্ষ জনপ্রশাসন, ব্লু-ইকোনমি, নিরাপদ সড়ক, প্রবীণ কল্যাণ ইত্যাদি। অন্যদিকে বিএনপি তাদের ইশতেহারে ২২টি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রেখেছে। এগুলো হচ্ছে—গণতন্ত্রকে নিত্যদিনের চর্চায় পরিণত করা, দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নিয়োগ, সংসদের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা, গণভোটব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন, স্বল্প সুদে শিক্ষাঋণ, বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার জন্য তহবিল গঠন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রসংসদের নির্বাচন, মাদরাসা শিক্ষাকে আধুনিকীকরণ, মসজিদের খতিবদের জন্য সম্মানী ভাতা, শিক্ষার্থীদের ওপর থেকে সব ভ্যাট বাতিল, পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল, আগামী পাঁচ বছরে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান, তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য ২০ বছর মেয়াদি ঋণ চালু করা, বেকার ভাতা চালু ইত্যাদি। আওয়ামী লীগ বলছে, তারা ক্ষমতায় গেলে জিডিপি ১০ শতাংশে উন্নীত করবে, অন্যদিকে বিএনপির ইশতেহারে ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলা হলেও বিএনপির ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা বলা হয়নি। যেহেতু ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে বিএনপি নির্বাচন করছে, সে ক্ষেত্রে বিএনপির আলাদা নির্বাচনী ইশতেহার দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। তার পরও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ইশতেহার নিয়ে কথা বলা যায়। উভয় দলের ইশতেহারেই এক ধরনের কাগুজে প্রতিশ্রুতি রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিশ্রুতি আছে কিন্তু কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তা সুস্পষ্ট করে বলা হয়নি। আওয়ামী লীগ বড় দল। সরকারে আছে ১০ বছর। প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন, আরো পাঁচ বছর তাঁর থাকা দরকার। এ কারণে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের আগ্রহ বেশি থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। আওয়ামী লীগ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলছে। কিন্তু তাদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। দলটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্সের’ কথা বলছে। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে ব্যাংকঋণ জালিয়াতির একাধিক সংবাদ ছাপা হয়েছে। কিন্তু দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আর জালিয়াতি বন্ধ করা যায়নি। খেলাপি ঋণের করাল গ্রাসে এখন ব্যাংকিং খাত। পাঁচটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫০ থেকে ৯৪ শতাংশ এবং অন্য ছয়টির ২০ থেকে ৩৪ শতাংশ। প্রথমবারের মতো ফারমার্স ব্যাংকের খেলাপি ৫৮ শতাংশ। ৯ মাসে বেড়েছে ২৫ হাজার ৫৮ কোটি টাকা। সিপিডির গবেষণায় বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে ১০ কেলেঙ্কারিতে লোপাট হয়েছে ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু ঋণ এখন ৬০ হাজার টাকা। অর্থনীতির এই পরিসংখ্যান সরকারের উন্নয়নের ধারাকে বাধাগ্রস্ত করছে। বিগত দিনগুলোতে সরকার অনেক ভালো কাজ করেছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাতের ওপরে। দারিদ্র্য কমেছে। কিন্তু দুর্নীতি রোধে সরকারের ব্যর্থতা চোখে লাগার মতো। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা আনা প্রয়োজন। বিশ্ব ধীরে ধীরে এক ধরনের আর্থিক সংকটের দিকে যাচ্ছে। চীন-যুক্তরাষ্ট্র ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ দৃশ্যত বজায় রয়েছে। এতে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারি। আগামী সরকারের জন্য এটা হবে বড় চ্যালেঞ্জ।
এই শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ, ঐক্যফ্রন্ট কিংবা বিএনপির কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নেই। উন্নয়ন আমাদের প্রয়োজন। সেখানে দুর্নীতি রোধ করাটা জরুরি। সমাজে বৈষম্য বেড়েছে। দারিদ্র্য কমলেও বৈষম্য বেড়েছে। ধনী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে গরিব মানুষের সংখ্যাও। দলগুলোর ইশতেহারে বৈষম্য কমাতে এ ব্যাপারে কোনো কর্মসূচি নেই। এ দেশে তরুণ বেকারদের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এরা বেকার, অর্ধবেকার। সরকার সবাইকে চাকরি দিতে পারবে না। কোনো সরকারই তা পারে না। আগামী পাঁচ বছরে ২৮ লাখ কর্মসংস্থানের কথা বলছে আওয়ামী লীগ। জনপ্রতি দুই লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথাও বলছে আওয়ামী লীগ। এতে করে বেকার সমস্যার পূর্ণ সমাধান হবে না। এ জন্য দরকার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য যোগ্য ও প্রশিক্ষিত কর্মী গড়ে তোলা। দলগুলোর ইশতেহারে আমরা কোনো ধরনের পরিকল্পনার কথা শুনিনি। জলবায়ু পরিবর্তন, নবায়নযোগ্য এনার্জি সম্পর্কে কোনো পরিকল্পনার কথা জানায়নি।
আসলে এ ধরনের নির্বাচনী ইশতেহার আমাদের মতো দেশে নির্বাচনে তেমন প্রভাব ফেলে না। সাধারণ মানুষ দলগুলোর প্রতিশ্রুতি দেখে ভোট দেয় না। ভোট দেয় মার্কা দেখে। সুতরাং দলগুলো কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বা এতে করে সাধারণ মানুষ কতটুকু উপকৃত হবে, সে বিষয়গুলো সাধারণ মানুষ খুব একটা বিবেচনায় নেয় না। তার পরও দলগুলোকে নির্বাচন সামনে রেখে এ ধরনের ইশতেহার দিতে হবে। একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করতে হলে প্রয়োজন একটি আস্থার সম্পর্ক। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে সেই আস্থার সম্পর্কে রয়েছে বড় ধরনের ঘাটতি। এ ক্ষেত্রে আস্থার সম্পর্ক যদি নির্বাচনের পরে গড়ে না ওঠে, তাহলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিকশিত হবে না।