রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে অনিশ্চয়তা কাটছে না



গত ২৩ জানুয়ারি থেকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তাতে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। ইতিপূর্বে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, প্রতি সপ্তাহে ১ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গা ফেরত যাবে, প্রতিদিন ৩০০ করে এবং দু’বছরে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে মিয়ানমারে দুটি ‘ক্যাম্প’ প্রতিষ্ঠা করা হবে- এমন একটি সিদ্ধান্তও হয়েছিল। প্রথম ‘ক্যাম্পে’ বাংলাদেশ থেকে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ‘গ্রহণ’ করা হবে এবং দ্বিতীয় ‘ক্যাম্পে’ তাদের যাচাই-বাছাই করা হবে। এখন পুরো প্রক্রিয়াতেই এক ধরনের অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। কেউই স্পষ্ট করে বলতে পারছে না, কবে নাগাদ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।
উল্লেখ্য, ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের প্রশাসনিক রাজধানী নেপিদোয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছিল। পরবর্তী সময়ে ১৯ ডিসেম্বর দেশ দুটি একটি ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠন করে। এর মধ্য দিয়ে একটা ধারণার জন্ম হয়েছিল, সদ্য আগত রোহিঙ্গারা শেষ পর্যন্ত বোধহয় নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন। কিন্তু ২৩ জানুয়ারি একটি তারিখ নির্ধারিত হলেও বহুল প্রত্যাশিত প্রত্যাবাসনের কাজটি শুরু হল না। আমরা বারবার বলে আসছি, মিয়ানমারের ওপর আস্থা রাখাটা সত্যিকার অর্থেই কঠিন। মিয়ানমার সনাতন কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চলে না। অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বলতে পারি, মিয়ানমার এর আগে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও সেই প্রতিশ্রুতি তারা পালন করেনি। এ নিয়ে দু’দেশের মধ্যে একাধিক বৈঠক হলেও তা কোনো ফল বয়ে আনেনি। কিছু রোহিঙ্গাদের তারা ফেরত নিয়ে গেছে বটে, কিন্তু ব্যাপক সংখ্যক রোহিঙ্গা, যারা নিবন্ধিত নয়, তারা বাংলাদেশের মাটিতে রয়ে গিয়েছিল। এখন এর সঙ্গে যোগ হল আরও সাড়ে ছ’লাখ রোহিঙ্গা। বাংলাদেশ এদের আশ্রয় দিয়ে নিঃসন্দেহে মানবতার পরিচয় দিয়েছিল। বাংলাদেশের এই ভূমিকা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে একটি চুক্তি অথবা ‘সমঝোতা’ স্মারকে স্বাক্ষর করা জরুরি ছিল। বাংলাদেশ সেটা করেছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের মানসিকতার যদি পরিবর্তন না হয়, তাহলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের মাটিতে থেকে যেতে পারে! সুতরাং মিয়ানমার সরকারের মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে, এটা আমরা বলতে পারি না। তাদের কোনো কার্যকলাপে তা প্রমাণিত হয় না।
মূলত এজন্যই একটা আশঙ্কা ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে, মিয়ানমার তথাকথিত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে কালক্ষেপণ করতে পারে। এই কালক্ষেপণের স্ট্র্যাটেজি তাদের অনেক পুরনো। এবারও এমনটি হতে পারে। গত ২১ জানুয়ারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফিং করেছেন। তিনি নিজে মিডিয়ার সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াং ঘি লিও গত ২১ জানুয়ারি উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। এদের সবার বক্তব্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে ব্রিফিং করেছেন, সেখানে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূতও। তার বক্তব্যও গুরুত্বের দাবি রাখে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ঠিক কোনদিন থেকে শুরু হবে, সেরকম তারিখ-টারিক বলা মুশকিল।’
তিনি আরও বলেছেন, যেতে না চাইলে তো জোর করে পাঠিয়ে দেয়া যাবে না। আমাদের চুক্তির সব জায়গায়ই স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কফি আনান কমিশনের রিপোর্টেও তা আছে। যখন রোহিঙ্গারা জানতে পারবে মিয়ানমারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে, তাদের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি হচ্ছে, বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে- ইত্যাদি দেখার পর তারা নিজেরাই যেতে উৎসাহী হবে (যুগান্তর, ২২ জানুয়ারি)। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের বক্তব্যের অনেকটা ‘মিল’ খুঁজে পাওয়া যায়। বার্নিকাট বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অবশ্যই নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় হতে হবে।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্পষ্টতই কয়েকটি বিষয়কে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। এক. রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি কতটুকু নিশ্চিত হয়েছে? দুই. রোহিঙ্গারা সেখানে কতটুকু নিরাপদ? তিন. রোহিঙ্গারা নিজ বাসভূমে ফিরে যেতে পারবে কিনা? চার. রোহিঙ্গারা ফিরে গেলে তাদের জীবন-জীবিকার কী হবে? মিয়ানমারের সঙ্গে যে সমঝোতা স্মারক ও পরবর্তীকালে ‘বাস্তুচ্যুত রাখাইনের বাসিন্দাদের প্রত্যাবাসন’ সংক্রান্ত যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, তাতে নাগরিকত্বের বিষয়টি আদৌ নেই। মিয়ানমার এদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। রোহিঙ্গা নামেও আপত্তি রয়েছে তাদের। এমনকি কফি আনান কমিশনের রিপোর্টেও রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। মিয়ানমার এদের ‘বাঙালি’ হিসেবে স্বীকার করে। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় এবং ডকুমেন্টে কোথাও রোহিঙ্গা শব্দটি নেই। গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে রোহিঙ্গা খেদাও অভিযান শুরু হওয়ার পর মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত থাকলেও নাগরিকত্বের প্রশ্নে তাদের অবস্থানে পরিবর্তন হয়েছে, এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। এ ক্ষেত্রে যে প্রশ্নটি উঠবে তা হল, নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা ছাড়া রোহিঙ্গারা আদৌ ফেরত যেতে চাইবে কিনা?
মিয়ানমারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকের এটা একটা বড় দুর্বলতা। আমাদের ব্যর্থতা এখানেই যে, আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় এই নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারিনি। দ্বিতীয় প্রশ্নটি সমান গুরুত্বপূর্ণ- নিরাপত্তা। এই নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে কীভাবে? নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসেছে। অনেকে তার স্ত্রী, স্বামী ও সন্তানকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক খুন হতে দেখেছে। অনেক দেরিতে হলেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রধান ‘সীমিত হত্যাকাণ্ডের’ কথা স্বীকার করেছেন। তাদের নিরাপত্তা যদি নিশ্চিত না হয়, তাহলে তারা নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে চাইবেন না, এটাই স্বাভাবিক। এখন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কে? যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের নিজ বাসভূম থেকে উৎখাত করেছে, রোহিঙ্গারা তাদের বিশ্বাস করবে না।
ইতিমধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনার নিরাপত্তার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তারা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া তাদের ফেরত পাঠানো যাবে না। রোহিঙ্গারা এ ধরনের বক্তব্যে উৎসাহিত হবেন নিঃসন্দেহে। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো নিজেই বলেছেন, জোর করে কোনো রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো যাবে না। এ ধরনের বক্তব্য রোহিঙ্গাদের এ দেশে থেকে যেতে উৎসাহ জোগাতে পারে। আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে আরও ম্যাচুরড বক্তব্য আশা করেছিলাম। তৃতীয় প্রশ্নটিকেও আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। রোহিঙ্গারা কি আদৌ নিজ বাসভূমে ফেরত যেতে পারবে? এর সরাসরি জবাব হচ্ছে ‘না’। যে চুক্তি হয়েছে, তাতে মিয়ানমার দুটি ক্যাম্প করছে। প্রথমটা অভ্যর্থনা ক্যাম্প, দ্বিতীয়টা অন্তর্বর্তীকালীন ক্যাম্প। অর্থাৎ যারা বাংলাদেশ থেকে ফেরত যাবে, তাদেরও প্রথমে অভ্যর্থনা ক্যাম্পে রাখা হবে। তারপর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য অপর একটি অন্তর্বর্তীকালীন ক্যাম্পে পাঠানো হবে।
বস্তুত এখানেই সমস্যা তৈরি হবে। এই ক্যাম্পে তারা বছরের পর বছর থেকে যেতে বাধ্য হবে। এটা এক ধরনের ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্প’। এখানে রেখেই তথাকথিত যাচাই-বাছাইয়ের কাজটি হবে। আমার শঙ্কা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ভাগ্য ফিলিস্তিনিদের মতো হতে পারে। পাঠক স্মরণ করতে পারেন- ফিলিস্তিনিরা নিজ বাসভূম থেকে উৎখাত হয়ে বছরের পর বছর, জেনারেশনের পর জেনারেশন থেকে যাচ্ছেন ক্যাম্পে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পাঠক, দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ যুগে ‘হোমল্যান্ড’গুলোর কথা স্মরণ করতে পারেন। বর্ণবাদ যুগের অবসানের আগে কৃষ্ণাঙ্গদের নিয়ে ৭টি হোমল্যান্ডে রাখা হয়েছিল। আমার আশঙ্কা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের অবস্থা অনেকটা হোমল্যান্ডগুলোয় থাকা কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী অথবা ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর মতো হতে পারে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় নীতি এটাই- রোহিঙ্গাদের অস্বীকার করা। আন্তর্জাতিক ‘চাপ’-এর কারণে তারা রোহিঙ্গাদের নিতে চাচ্ছে বটে, কিন্তু বাস্তবতাই বলে দিচ্ছে- তারা রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করে নিতে চাইছে না। উপরন্তু তারা কোনোদিনই রোহিঙ্গাদের স্ব স্ব বসতবাড়িতে ফেরত নেবে না। কেননা ওইসব বসতবাড়ির আদৌ কোনো অস্তিত্ব নেই। রাখাইনে কয়েকশ’ গ্রামে রোহিঙ্গাদের বসতবাড়ি মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। ওইসব গ্রাম এখন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ‘লিজ’ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ফলে রোহিঙ্গারা নিজ বাসভূমে থাকতে পারছেন না। রোহিঙ্গারা কোনোমতেই অন্যত্র থাকতে চাইবেন না। বংশপরম্পরায় তারা নিজ বাসভূমে বসবাস করে আসছেন। জমিজমা চাষ করে আসছেন। কেউ কেউ ব্যবসায়ে নিয়োজিত ছিলেন। এখন তাদের যদি অন্যত্র রাখা হয়, তারা তা মানতে চাইবেন না। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে এটা একটা অন্যতম সমস্যা। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে এসব প্রশ্নের জবাব থাকা বাঞ্ছনীয়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে বাংলাদেশ খুব শক্ত অবস্থানে গিয়েছে, এটা আমার মনে হয় না। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য এবং তার ‘বডি ল্যাঙ্গুয়েজ’ বলে দেয়- বাংলাদেশ একটি চুক্তি করতে চেয়েছিল! কিন্তু মিয়ানমারের ওপর ‘চাপ’ প্রয়োগ করার কোনো কৌশল অবলম্বন করেনি। জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞ হয়েছে। জাতিগত উচ্ছেদ অভিযান একটি ঘৃণিত অপরাধ। আন্তর্জাতিক আইনে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য। ইতিমধ্যে বসনিয়া-হারজেগোভিনা, কঙ্গো, লাইবেরিয়া কিংবা রুয়ান্ডাতে যারা জাতিগত উচ্ছেদ অভিযানে জড়িত ছিলেন, সেসব সেনা কর্মকর্তাদের বিচার হয়েছে। রায়ও দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র একাধিক সেনা কর্মকর্তাকে মিয়ানমারে গণহত্যার জন্য চিহ্নিত করেছে। বাংলাদেশ এদের বিচারের দাবি করতে পারত। তাহলে অন্তত মিয়ানমার সরকার একটা ‘চাপ’-এর মুখে থাকত। কিন্তু বাংলাদেশ তা করেনি। এর অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রশ্নে একটি ‘সফট ডিপ্লোম্যাসি’র আশ্রয় নিয়েছে।
২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা গণহত্যা ও রোহিঙ্গা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলেও বাংলাদেশ নিকট প্রতিবেশী, বিশেষ করে চীন ও ভারতের ‘সাহায্য’ নিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসা বন্ধ করার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। শেষ অব্দি চীন স্ব-উদ্যোগে একটি প্রস্তাব দিয়েছিল এবং সেই প্রস্তাব অনুসরণ করেই মিয়ানমার দ্বিপাক্ষিকভাবে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে। আগস্টের পর থেকে সংকটের গভীরতা বাড়লেও বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি চীন, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা যুক্তরাষ্ট্র সফর করেননি। এমনকি এসব দেশের সাহায্যও চাওয়া হয়নি। অথচ প্রতিটি দেশের সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ভালো। এসব দেশের মাধ্যমে আমরা মিয়ানমারের ওপর প্রভাব খাটাতে পারতাম।
এখন সে সুযোগ শেষ হয়ে গেছে- তা বলা যাবে না। বাংলাদেশ দু’ভাবে তার পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত করতে পারে। দ্বিপাক্ষিকভাবে মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ। একই সঙ্গে বহুপাক্ষিকভাবে মিয়ানমারের ওপর ‘চাপ’ প্রয়োগ করা। আমাদের ভুললে চলবে না, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ইচ্ছার বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিরুদ্ধে। অতীতে যারা এসেছিল, তাদের ক্ষেত্রেও ইউএনএইচসিআর একই নীতি অবলম্বন করেছিল। প্রকারান্তরে এই নীতি মিয়ানমারের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে।
বাংলাদেশ একটি ছোট্ট দেশ। এত বিপুলসংখ্যক বিদেশি নাগরিকের উপস্থিতি আমাদের নিরাপত্তাকে নানাবিধ ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ডিপথেরিয়ার মতো রোগ আবার ফিরে এসেছে উখিয়ায়। রোহিঙ্গা উগ্রপন্থীরা (এআরএস) বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে- এমন একটি তালিকা (১৫০ জন) মিয়ানমার বাংলাদেশকে দিয়েছে। এরা বাংলাদেশেও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ডিপথেরিয়া ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় বিদেশের কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশি ছাত্রদের উচ্চশিক্ষায় ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছে। প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এক ধরনের ‘চাপ’-এর মুখে রেখেছে। ফলে এই নির্বাচনী বছরে সরকারের জন্য রোহিঙ্গা ইস্যুটি নিঃসন্দেহে একটি বাড়তি ‘চাপ’। বিরোধী পক্ষ এটাকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে। এখন নির্ধারিত তারিখে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ায় গুজবের ডালপালা গজাতে পারে। সুতরাং যত দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা যায়, ততই আমাদের জন্য তা মঙ্গল। আর এ লক্ষেই কাজ করে যেতে হবে।
Daily Jugantor
25.1.2018

0 comments:

Post a Comment