রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

স্নায়ুযুদ্ধের ধারণায় ফিরছে যুক্তরাষ্ট্র!


যুক্তরাষ্ট্র কি ফের স্নায়ুযুদ্ধের ধারণায় ফিরছে? গেল সপ্তাহে পেন্টাগনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে পরমাণু বোমার আকার ক্ষুদ্র করে আধুনিকায়নের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পাঠক স্মরণ করতে পারেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার ‘স্টেট অব দি ইউনিয়ন’ ভাষণে বলেছিলেন, আগ্রাসন মোকাবিলায় পরমাণু অস্ত্র কাজ করবে। এখন পেন্টাগন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইচ্ছাকে বাস্তবায়ন করতে নতুন এক কর্মসূচি হাতে নিতে যাচ্ছেÑ যাতে বড় আকারের নয়, বরং ছোট আকারের পরমাণু বোমা বানানো হবে। গেল সপ্তাহে পেন্টাগন ‘নিউক্লিয়ার পোসচার রিভিউ ২০১৮’ শীর্ষক পরমাণু পর্যালোচনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি টম ম্যানন বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রের বাইরে কোনো গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের পরমাণু অস্ত্র পাওয়ার চেষ্টার বিষয়টি আমাদের ভাবনায় সবচেয়ে আগে আছে। তিনি জানিয়েছিলেন, ‘কোনো রাষ্ট্র বা গোষ্ঠী সন্ত্রাসীদের অস্ত্র দেওয়ায় সমর্থন করলে বা অস্ত্র দিলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের জবাবদিহির মধ্যে আনবে। এর অর্থ পরিষ্কার, যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু শক্তিধর কয়েকটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে। গত এক বছরে ট্রাম্প একাধিক ‘টুইট’ করেছেন উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে। তিনি উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে ‘রকেটম্যান’ হিসেবে আখ্যায়িত করতেও দ্বিধাবোধ করেননি। এমনকি ইরানের সঙ্গেও তার সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। তিনি ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয় জাতি যে সমঝোতা হয়েছিল, তা মানতেও অস্বীকার করেছিলেন। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ব্যাপারে তার আপত্তি রয়েছে। এমনকি রাশিয়া ও চীনের পারমাণবিক কর্মসূচির ব্যাপারেও তিনি সন্দিহান। সুতরাং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু কর্মসূচি যে নতুন করে সাজাবেন, সেটাই ছিল স্বাভাবিক। এমনকি তিনি পেন্টাগনকে একটি নির্দেশ দিয়েছেন ওয়াশিংটনে একটি সামরিক প্যারেড আয়োজন করার। এটা একটা শোডাউন; নিদেনপক্ষে উত্তর কোরিয়া, ইরান আর রাশিয়াকে পরোক্ষ একটা চ্যালেঞ্জ। যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রকে স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতায় ফিরিয়ে নিয়ে এলো। অর্থাৎ স্নায়ুযুদ্ধকালে যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে যে ‘যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব’ বিরাজ করছিল, সেই মানসিকতায় আবার ফিরে এলো যুক্তরাষ্ট্র। এই মানসিকতা আবার নতুন করে বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে উসকে দেবে। স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ২৭ বছর আগে। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয়েছিল। একটা সময় ছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন ইউরোপে প্রভাব বলয় বিস্তারের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে দুই পরাশক্তির মাঝে একধরনের ‘যুদ্ধের’ সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছিল। দীর্ঘ সময় ওই পরিস্থিতি বহাল ছিল, যা ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছে স্নায়ুযুদ্ধ হিসেবে। কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধকালীন দীর্ঘসময়ে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেখানে দুই পরাশক্তির কাছে যে পারমাণবিক অস্ত্র ছিল, তা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, ১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই নিউ মেক্সিকোর মরুভূমিতে ভোর হওয়ার আগে বিশ্বে ‘ট্রিনিটি’ নামের বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু করেছিল। পরবর্তী ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা ও ৯ আগস্ট নাগাসাকিতে দ্বিতীয় আরেকটি পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই দুই বোমাই জাপানের আত্মসমর্থন এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অবসানকে ত্বরান্বিত করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের পথ ধরে ১৯৪৯ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, ১৯৬০ সালে সাহারা মরুভূমিতে ফ্রান্স, ১৯৪৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূল মন্টেরোলো দ্বীপে ব্রিটেন এবং ১৯৬৪ সালে চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ঝিনজিয়াং প্রদেশের পারমাণবিক পরীক্ষার এলাকায় চীনের পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে বিশ্ব আসরে নাম লিখিয়েছিল। পারমাণবিক যুদ্ধে ভয়াবহতা উপলব্ধি করে ১৯৬৩ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে আংশিক পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৬৯ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন নিয়মিত কৌশলগত অস্ত্র সীমিতকরণ আলোচনা (সল্ট) শুরু করে। ১৯৭০ সালের মার্চে নতুন করে আর কোনো পারমাণবিক অস্ত্রের যাতে বিস্তার না ঘটে, সে লক্ষ্যে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধে চুক্তি (এনপিটি) স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৭৯ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন সল্ট চুক্তি স্বাক্ষর করে। ১৯৯১ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পারমাণবিক অস্ত্রের বিলোপসাধনে রাষ্ট্রপতি বুশ ও গরভাচেভ কৌশলগত অস্ত্র হ্রাস চুক্তি (স্ট্রাট) স্বাক্ষর করেন। ১৯৯৩ সালে স্বাক্ষরিত হয় স্ট্রাট-২ চুক্তি। ওই চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও রুশ পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের দুই-তৃতীয়াংশ হ্রাস করা হয়। ১৯৯৫ সালে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিকে (এনপিটি) ২৫ বছরের জন্য স্থায়ী রূপ দিতে জাতিসংঘে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এখানে আরও একটি কথা বলা প্রয়োজন। ভারত ১৯৭৪ সালে প্রথমবারের মতো এবং ১৯৯৮ সালে দ্বিতীয়বারের মতো, পাকিস্তান ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো, আর ২০০৬ সালে উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে যোগ দিয়েছিল। এর বাইরে ইসরাইলের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে বলে মনে করা হয়। যদিও ইসরাইলের এ ব্যাপারে কোনো স্বীকারোক্তি নেই। বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের সর্বশেষ যে তথ্য (২০১৭) আমরা পাই, তাতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ৬ হাজার ৮০০টি, রাশিয়ার কাছ ৭ হাজার, যুক্তরাজ্যের কাছে ২১৫, ফ্রান্সের কাছে ৩০০, চীনের কাছে ২৭০, ভারতের কাছে ১২০-১৩০, পাকিস্তানের কাছে ১৩০-১৪০, উত্তর কোরিয়ার কাছে ১০-২০টি পারমাণবিক ওয়্যারহেড রয়েছে। একটি ওয়্যারহেড একাধিক পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করতে পারে। আরও একটি কথা, ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ১২২টি দেশ পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল। এখন ৫০টি দেশ চুক্তিটি অনুমোদন করলেই ৯০ দিন পর এটি কার্যকর হবে। তবে এই চুক্তি বয়কট করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। পরমাণুযুদ্ধ এড়াতে সাত দশকের প্রচেষ্টার পর প্রথমবারের মতো পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধ করতে বৈশ্বিক ওই চুক্তিটি হয়েছিল। জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্যদেশের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ দেশের আলোচকরা ১০ পাতার চুক্তিটি চূড়ান্ত করেছিলেন। চুক্তির পক্ষে পড়েছিল ১২২টি ভোট। একটি ভোট পড়েছে বিপক্ষে। দেশটি হচ্ছে নেদারল্যান্ডস। সিঙ্গাপুর ভোটদানে বিরত ছিল। ভোটে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, ভারত, রাশিয়া, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া ও ইসরাইল বিশ্বের এই ৯টি পরমাণু অস্ত্র শক্তিধর দেশ কোনো আলোচনা ও ভোটাভুটিতে ছিল না। জাপানও আলোচনা বয়কট করে। যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ছোট ছোট পারমাণবিক বোমা তৈরির সিদ্ধান্ত বিশ্বে নতুন করে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে উসকে দিতে পারেÑ যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে চীন ও রাশিয়া তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। মস্কো মনে করে মার্কিন পরিকল্পনা সংঘাতপূর্ণ ও যুদ্ধের উসকানিমূলক। এ ধরনের পরিকল্পনা রাশিয়াবিরোধী বলেও মনে করে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আর চীন মনে করে, ‘শান্তি ও উন্নয়নে অপরিহার্য বৈশ্বিক প্রবণতা বজায় রাখা দরকার। এর বিরুদ্ধে না গিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরমাণু অস্ত্রের মালিক যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তা অনুসরণ করে চলা। আমরা আশা করি যুক্তরাষ্ট্র স্নায়ুযুদ্ধকালীন মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসবে।’ চীনকে অযৌক্তিকভাবে পরমাণু হুমকি মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। এক্ষেত্রে চীনের নীতি সবসময় আত্মরক্ষামূলকÑ চীনের এটাই বক্তব্য। অন্যদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতি স্পষ্টভাবেই পরমাণু অস্ত্র বিস্তারবিরোধী আন্তর্জাতিক আইনের (এনটিপি) লঙ্ঘন। পরমাণু বোমার ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে বেশি নির্ভরশীল, সে দিকটাই তুলে ধরেছে দেশটির নিউক্লিয়ার পোস্টার রিভিউ। এনপিটি লঙ্ঘনকারী এ পদক্ষেপ মানবসভ্যতাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে।
এখন যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের এই ছোট ছোট পারমাণবিক বোমা বানানোর সিদ্ধান্ত কি শেষ পর্যন্ত একুশ শতকের তৃতীয় দশকে নতুন করে একধরনের পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার জন্ম দেবে? এই মুহূর্তে হয়তো এটা আঁচ করা যাবে না। কিন্তু নিশ্চিত করেই বলা যায়, চীন, রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়া একটা পাল্টা কর্মসূচি গ্রহণ করবে। উত্তর কোরিয়া অনেক দিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে সীমিত পাল্লার পারমাণবিক হামলার কথা বলে আসছে। এখন এ সম্ভাবনা আরও বাড়ল। গত ২৪ জানুয়ারি ‘দি ন্যাশন’ পত্রিকায় অষরপব ঝষধঃবৎ-এর একটি প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেনÑ পৃথিবীর ৮০টি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। আর সেনাবাহিনী মোতায়েন করা আছে ১ লাখ ৩৮ হাজার। অন্যদিকে ৯টি দেশে রাশিয়ার ২৬ থেকে ৪০টি ঘাঁটি রয়েছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, রাশিয়া কম্বোডিয়ার তিনটি সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করার জন্য কম্বোডিয়া সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে যাচ্ছে। পাঠক, সিরিয়ার পরিস্থিতি স্মরণ করতে পারেন। সিরিয়ায় কুর্দি অঞ্চলে একসময় রাশিয়ার ঘাঁটি ছিল। পরবর্তীতে তুরস্কের সামরিক অভিযানের আগেই সেই ঘাঁটি প্রত্যাহার করে নেয় রাশিয়া। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি এখনও আছে। সিরিয়ায় রাশিয়ার বিমানঘাঁটি আছে। সিরিয়ার তারতাস ও লাতকিয়া সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে রাশিয়ার নৌবাহিনী। ফলে পরিবর্তিত বিশ্ব রাজনীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া একধরনের ‘প্রতিযোগিতা’য় লিপ্ত হয়েছে। এর উদ্দেশ্য পরিষ্কারÑ দেশ দুটি তাদের প্রভাব বাড়াতে চায়। এর বাইরে রয়েছে চীন ও ভারত। চীনকে টক্কর দিতে আফ্রিকায় সেনাঘাঁটি গাড়ছে ভারত (সিসিলি)। জিবুতিতে রয়েছে চীনা ঘাঁটি। আন্তর্জাতিক পরিসরে, বিশেষ করে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের স্বার্থ এক ও অভিন্ন। অন্যদিকে চীন ও রাশিয়া একধরনের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলছে। ঘুরে ফিরে সেই স্নায়ুযুদ্ধকালীন মানসিকতা ফিরে আসছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জমানায় এই মানসিকতা আরও স্পষ্ট হলো। ছোট পারমাণবিক বোমা বানানোর সিদ্ধান্ত এ রকমই একটি সিদ্ধান্ত, যার মধ্য দিয়ে বড় শক্তিগুলোর মধ্যে আস্থাহীনতার সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পেল। উল্লেখ্য, আকারে ছোট ও কম ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বোমার শক্তি থাকে ২০ কিলো টনের মতো। যদিও এই বোমার ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা ভয়াবহ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে জাপানের নাগাসাকি শহরে একই ধরনের বিস্ফোরণে ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল। আর তাতেই ৭০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি হচ্ছে, ‘যতই সীমিত হোক না কেন, পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার যে গ্রহণযোগ্য নয়, তা রাশিয়াকে অনুধাবন করাতে এই কৌশল কাজে দেবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের এই ‘কৌশল’ আদৌ কোনো কাজে দেবে বলে মনে হয় না। বরং এই ‘কৌশল’ নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম দেবে, যার আলামত আমরা ইতোমধ্যেই পেতে শুরু করেছি।
Daily Alokito Bangladesh
11.02.2018

1 comments:

  1. স্যার আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করছি,যেন এরকম বিশ্লেষণমূলক,তথ্যবহুল লেখা আমাদেরকে উপহার দিতে পারেন।

    ReplyDelete