রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

এক শিক্ষামন্ত্রীকে দুষে কী লাভ!

জাতীয় সংসদে সরকারের শরিক জাতীয় পার্টির একজন সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। শুধু তাই নয়, শিক্ষামন্ত্রীর ব্যর্থতা, অনিয়ম-দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীকে বরখাস্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমদ বাবলু এ দাবি তোলেন। তার বক্তব্য শেষে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেছেন, নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি শুনেছেন। তিনি তার বিবেক-বিবেচনায় জাতির স্বার্থে যতটুকু করা প্রয়োজন, অবশ্যই তা করবেন।
সরকারের শরিক কিংবা বিরোধী দল, যেভাবেই আমরা জাতীয় পার্টিকে বিবেচনায় নিই না কেন, এই পার্টির একজন সংসদ সদস্য যখন প্রকাশ্যেই সংসদে দাঁড়িয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে বরখাস্ত করার দাবি তোলেন, তখন বিষয়টিকে কি আমরা খুব হালকাভাবে নিতে পারি? এমন কোনো পাবলিক পরীক্ষা নেই যার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি, এমনকি ক্লাস ওয়ানের প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়েছে। এটা মহামারীর মতো সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রশ্ন ফাঁসকারীদের আদৌ চিহ্নিত করতে পারছে না। জিয়াউদ্দিন আহমদ বাবলু যেদিন সংসদে দাঁড়িয়ে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন, সেদিন এসএসসি পরীক্ষার ইংরেজি প্রথমপত্রের পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হয়, যা ৬ ফেব্রুয়ারির সংবাদপত্রগুলোতে ছাপা হয়েছে। এর আগে এসএসসি পরীক্ষার বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়েছিল। অনেকে স্মরণ করতে পারেন, শিক্ষামন্ত্রী তার একটি বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন। কয়েকদিন আগে তিনি শিক্ষা অধিদফতরের এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, আপনারা ঘুষ খান সহনীয় মাত্রায়। যদিও পরে এর একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন তিনি। অস্বীকার করেছিলেন যে এভাবে তিনি কথাটা বলেননি। কিন্তু টিভি ফুটেজে তার বক্তব্য স্পষ্ট ধরা পড়েছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তিনি হয়তো সত্যি সত্যিই এভাবে কথাটা বলতে চাননি। একজন মন্ত্রী এভাবে বলতে পারেন না- এটাই স্বাভাবিক। তার ওই বক্তব্যের সেদিন সমালোচনা হয়েছিল। মন্ত্রিপরিষদের কোনো কোনো সদস্য তার ওই বক্তব্যের সমালোচনা করেছিলেন। এটা সত্য, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে, এবং হচ্ছে। এই ক’বছরে আমাদের অনেক অর্জন আছে। বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অনেক বেশি। প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এখন প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষায় যদি বারবার ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া যায় এবং তা সত্য বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে দক্ষ জনশক্তি আমরা গড়ে তুলব কীভাবে? আমরা একটা তরুণ প্রজন্ম গড়ে তুলছি, যারা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ার জনশক্তি হওয়ার পরিবর্তে ফাঁস করা প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে অদক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে উঠছে। এই অদক্ষ জনশক্তি আমাদের কী দেবে? শিক্ষামন্ত্রী সজ্জন ব্যক্তি। বাম রাজনীতির মানসিকতায় যিনি নিজেকে কৈশোরে তৈরি করেছিলেন, তার কাছে দুর্নীতি কখনও মুখ্য বিষয় হবে না, এটাই স্বাভাবিক। তিনি দীর্ঘদিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। কেন তিনি নকল বন্ধ করতে পারবেন না? প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করা কঠিন কিছু নয়। এটা সম্ভব। প্রযুক্তির এই যুগে এটা কঠিন কোনো কাজ নয়। কিন্তু তিনি বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন! বোধকরি তার ব্যক্তিজীবন দিয়ে জাতীয় নীতি বাস্তবায়নকে বিচার করা যাবে না। তিনি ব্যক্তিজীবনে অতি সাধারণ একজন মানুষ। আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতার মতো প্রতিপক্ষের নেতাদের সমালোচনা করতে অশ্লীল বাক্য কখনও ব্যবহার করেন না। খারাপ কথাও তিনি বলেন না। আমাদের ভালো লাগা এখানেই। কিন্তু শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে যে ‘শক্ত’ অবস্থানে যাওয়ার কথা, সেখানে তিনি প্রচণ্ডভাবে ব্যর্থ। ধারণা করছি, তার এ দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যক্তি। তার নিজের ব্যক্তিগত ইমেজের স্বার্থেই তিনি সরে দাঁড়াবেন, এই প্রত্যাশা করতেই পারি।
২.
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড নিয়ে যখন আলোচনা করছি, তখন সঙ্গত কারণেই উচ্চশিক্ষা নিয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। শিক্ষামন্ত্রী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যান। সেখানে তিনি প্রতিবারই একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার কথা বলেন। কথাগুলো শুনতে ভালোই শোনায়। আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করি, তারা উৎসাহিত হই তার কথায়। কিন্তু এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগটি কী? পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কী হচ্ছে, সে ব্যাপারে তিনি কি জ্ঞাত আছেন? সেখানে যে অনিয়ম হচ্ছে, তা দূরীকরণে তার কোনো উদ্যোগ তো পরিলক্ষিত হচ্ছে না। প্রায় ৩৫-৩৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দেশে তরুণ প্রজন্মের সংখ্যা বেড়েছে। প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী এইচএসসি পাস করে। তাদের জন্য উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্তটি অযৌক্তিক নয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সেখানে কারা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন? রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে। শুধু তাই নয়, টিআইবি আমাদের জানিয়েছে, টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে! টিআইবি বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সংবাদ সম্মেলনে ভয়াবহ এ তথ্যটি উপস্থাপন করেছিল। তারপর কেটে গেছে অনেকটা সময়। আমার নিজের বিশ্ববিদ্যালয়েও যখন এ ধরনের কথা শুনি, তখন আমাকে একধরনের হতাশায় পেয়ে যায়। যদি যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ না হয়, তাহলে দক্ষ জনশক্তি আমরা গড়ে তুলব কীভাবে? যারা টাকার বিনিময়ে এবং রাজনৈতিক পরিচয়ে শিক্ষক হন, তারা পড়ানো ও গবেষণার পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষক রাজনীতিতে জড়িয়ে যান। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ছাত্ররা। এতে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণের যে উদ্যোগ, তা ভেস্তে যেতে বাধ্য। আরও একটা কথা। নতুন নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে একধরনের বৈষম্য তৈরি হয়েছে। ভালো শিক্ষকরা পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকায় সেখান থেকে ভালো ছাত্ররা বের হচ্ছে। অন্যদিকে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যোগ্য শিক্ষকের অভাব থাকায় সেখানকার ছাত্ররা বঞ্চিত হচ্ছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন রাষ্ট্রপতির কাছে একটি সুপারিশ করেছে, যেখানে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের নতুন প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেষণে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। দেখা যাবে পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একেকটি বিভাগে সিনিয়র শিক্ষকের (প্রফেসর) সংখ্যা এত বেশি যে তাদের অনেকেরই পড়ানোর মতো কোর্স থাকে না। ফলে তাদের কিছুটা আর্থিক সুবিধা দিয়ে (যা মঞ্জুরি কমিশনের সুপারিশে আছে) প্রেষণে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পাঠানো যায়। সেই সঙ্গে আরও একটি সুপারিশ রাখছি : অনেক সিনিয়র শিক্ষক সাম্প্রতিক সময়ে অবসরে গেছেন। কিন্তু তারা শারীরিকভাবে সুস্থ। তাদের কাউকে কাউকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করতে দেখি। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের ‘বিশেষ বিবেচনায়’ নিয়োগদান করা যেতে পারে। এজন্য হয়তো প্রচলিত আইন সংশোধন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এ উদ্যোগটি নিতে পারে। তাহলে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকের অভাব দূর হবে। একজন শিক্ষকের ৬৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পর কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনঃনিয়োগের সুযোগ নেই। অথচ অবসরপ্রাপ্ত এসব শিক্ষক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন। ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা উপকৃত হচ্ছে। তাহলে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ সুযোগটি পাবে না কেন? আমি আমার অনেক সিনিয়র সহকর্মীকে জানি যারা নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নিয়ে এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন। জামালপুর ও নেত্রকোনায় দুটি নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হতে যাচ্ছে। আমার ভয় হচ্ছে- এখানে শিক্ষকতায় কারা যাবেন? শুধু প্রভাষক আর সহকারী অধ্যাপকদের দিয়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এখন চলছে। উচ্চশিক্ষার জন্য এটা ভালো খবর নয়।
প্রধানমন্ত্রী উচ্চশিক্ষাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে চান। উদ্যোগটি ভালো। কিন্তু উদ্যোগটি নিতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেই। কাজটি মঞ্জুরি কমিশনের করা উচিত। কিন্তু মঞ্জুরি কমিশনের নেতৃত্ব এখানে ব্যর্থ। তারা কোনো উদ্যোগ নিতে পারছে না। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এখন অনেক- ১৩৫ কিংবা আরও বেশি। মাত্র ৫ সদস্য নিয়ে মঞ্জুরি কমিশনের পক্ষে এসব বিশ্ববিদ্যালয় দেখভাল করা কঠিন একটি কাজ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য আলাদা একটি কমিশন করা জরুরি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একেকটি ‘সনদ তৈরির’ কারখানায় পরিণত হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাই একধরনের নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এ মুহূর্তে সমাজের বাস্তবতা। এর প্রয়োজনীয়তা আমরা অস্বীকার করতে পারব না। কিন্তু যা প্রয়োজন তা হচ্ছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে তাদের ‘সাহায্য’ করা। এটা মঞ্জুরি কমিশন পারছে না। মাত্র একজন সদস্য এ কাজে নিয়োজিত। তার একার পক্ষে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দেখভাল করা সম্ভব নয়। এ কারণেই একটি কমিশন গঠন করা জরুরি।
একসময় কথা উঠেছিল একটি ‘অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল’ গঠন করা হবে, যাদের কাজ হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাংকিং করা। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মালিক পক্ষের চাপে সেই ‘অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল’ আজও গঠন করা সম্ভব হয়নি। আমরা চাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গ্রহণযোগ্যতা বাড়–ক। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যদি পারিবারিকভাবে পরিচালিত হয়, যদি সেগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি কাজ করে, তাহলে কোনোদিনই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যর্থতাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সামনে নিয়ে এসেছে। তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হবে। সেখানে যোগ্য ও মেধাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। আমাদের রয়েছে একটি বিশাল তরুণ প্রজন্ম। এ তরুণ প্রজন্মকে আমরা দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে পারি, যা চীন করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া করেছে। এজন্যই চীন, দক্ষিণ কোরিয়া আজ প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমরা অনেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। ব্যক্তিবিশেষকে সামনে রেখে নতুন নতুন বিভাগ খোলা হয়েছে, যার কোনো চাহিদা নেই অভ্যন্তরীণ বাজারে কিংবা বিশ্ববাজারে। বিবিএ’র নামে ‘শিক্ষিত কেরানি’ তৈরি করছি আমরা, যারা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারছেন না।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এখন ধীরে ধীরে ‘বেসরকারি’ চরিত্র পাচ্ছে। প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রতিটি বিভাগে এখন সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু করে অর্থ আয়ের একটি ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। কিছু শিক্ষক এ থেকে লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্রে তা কোনো অবদান রাখছে না। এখানেও ‘সনদ বিক্রির’ অভিযোগ উঠেছে। ফলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে নৈরাজ্য। উপাচার্যরা নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন। দুদক তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করছে। এক্ষেত্রেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। অথচ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চলে জনগণের টাকায়।
৩.
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলাদেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম সময়ের শিক্ষামন্ত্রী। এর আগে কোনো শিক্ষামন্ত্রী এত দীর্ঘদিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ছিলেন না। বোধকরি তিনিই একমাত্র শিক্ষামন্ত্রী, যিনি সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত হয়েছেন এবং সংসদে তাকে বরখাস্তের দাবি জানানো হয়েছে। আমাদের দুঃখ এখানেই, তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি শক্তিশালী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে এ কথাও সত্য, তিনি পদত্যাগ করলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শৈথিল্য আছে। মন্ত্রণালয়ের অন্য অনেক কর্মকর্তাও এর জন্য দায়ী। দুদক এদের কর্মকাণ্ডও খতিয়ে দেখতে পারে। একুশ শতকে এসে যেখানে যোগ্য ও দক্ষ জনশক্তি আমাদের দরকার, সেখানে আমরা ‘সনদ বিক্রির’ কারখানা প্রতিষ্ঠা করে অদক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলছি। শিক্ষামন্ত্রী ‘জ্ঞানভিত্তিক’ একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। কিন্তু বাস্তবতা বলে, আমরা ধীরে ধীরে জ্ঞান ও মেধাহীন একটি জাতিতে পরিণত হতে চলেছি। তাই পুরো মন্ত্রণালয়েই আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ভেঙে আলাদা একটি উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে ঢেলে সাজাতে হবে। সেখানে রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, বরং মেধা ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে হবে। আইন করে সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে সেখানে প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর ঊর্ধতন শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রেষণে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা কমিশন গঠন করতে হবে। অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠনের সিদ্ধান্ত অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
Daily Jugantor
10.02.2018

0 comments:

Post a Comment