Previoঅ+
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ১৮ মাসের শাসনামলে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে যেসব পরিবর্তন এনেছেন, তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। জেরুজালেমে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সরিয়ে নিয়ে তিনি যত বেশি সমালোচিত হয়েছিলেন, গত ১২ জুন সিঙ্গাপুরে উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উনের সঙ্গে মিলিত হয়ে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন। শীর্ষ বৈঠকের ফলাফল পুরোটা তাঁর পক্ষে না গেলেও তিনি যে বৈরী একটি দেশের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে রাজি হয়েছিলেন, এটি ছিল নিঃসন্দেহে একটি বড় ধরনের ঘটনা। কিন্তু এ ঘটনা ম্লান হয়ে গেছে ট্রাম্পের একটি সিদ্ধান্তে, যেখানে তিনি চীনসহ ইউরোপীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করায় এক ধরনের ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ শুরু করেছেন। এর মধ্য দিয়ে চীন ও ইউরোপের মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আস্থাহীনতার একটি সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এর আগে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭-এর শীর্ষ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শিল্পোন্নত দেশগুলোর বিরোধ চরমে ওঠে। গত ৮ ও ৯ জুন কানাডার লা মালবেয়িতে (কুইবেক) এই জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন (৪৪তম) অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ বৈঠকের পর যৌথ ইশতেহারে স্বাক্ষর করেনি। এমনকি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সম্পর্কেও তিনি বিরূপ মন্তব্য করেন। ফলে শীর্ষ সম্মেলনটি পরিণত হয়েছে জি-৬+১ হিসেবে। এ ঘটনার মধ্য দিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাঁর সনাতন মিত্রদের সম্পর্কের যে অবনতি ঘটেছে, তা প্রমাণিত হলো। ট্রাম্পের শাসনামলে তাই দুটি বিষয় এখন লক্ষ রাখার মতো। এক. চীন ও ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’, তা দেশটিকে কোথায় নিয়ে যাবে? দুই. উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যে ‘সমঝোতা’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাতে কোরীয় উপদ্বীপ আদৌ পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে কি না? এর সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নয়া অভিবাসননীতি, যেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা অবৈধ অভিবাসীদের শিশুসন্তানদের তাদের মা-বাবার কাছ থেকে পৃথক করে অন্যত্র নিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
তবে নিঃসন্দেহে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে তিনি যে ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ শুরু করেছেন, তা বহুল আলোচিত ও সমালোচিত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি চীনের তিন হাজার ৪০০ কোটি ডলারের আমদানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। আরো এক হাজার ৬০০ কোটি ডলারের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। চীন এর জবাবে পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে এশিয়ার শেয়ারবাজারে এর প্রভাব পড়ে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করেন, চীন অবৈধভাবে মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। ট্রাম্পের মতে, অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করলে এই ঘাটতি কমবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের কারণে আগামী ৬ জুলাই থেকে তিন হাজার ৪০০ কোটি ডলার সমমূল্যের ৮১৮টি চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হবে। পরবর্তী সময়ে আরো এক হাজার ৬০০ কোটি ডলারের পণ্যের ওপরও (মোট পাঁচ হাজার কোটি ডলার) অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হবে। এর পরিমাণ ২৫ শতাংশ। উল্লেখ্য, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৮০০ মিলিয়ন বা ৮০ হাজার কোটি ডলার। চীন এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানীকৃত কৃষিপণ্য (সয়াবিন), গাড়ি ও সামুদ্রিক পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক বসানোর কথা বলছে। বিষয়টি এখানেই থেমে থাকেনি। ট্রাম্প আরো বলেছেন, বেইজিং যদি মার্কিন পণ্যে শুল্ক বসানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র আরো শুল্ক বসাবে। স্পষ্টতই বড় ধরনের বাণিজ্যিক বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন।
পাঠকদের স্মরণ থাকার কথা, যুক্তরাষ্ট্র এর আগে চীন ও ইউরোপ থেকে আমদানীকৃত ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপ করেছিল। এর ফলে চীনের পাশাপাশি ইউরোপের দেশগুলোও পাল্টা ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। বলা ভালো, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর আরোপিত শুল্ক থেকে ইইউ, কানাডা ও মেক্সিকো এত দিন অব্যাহতি পেয়ে আসছিল। জুন মাসের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্র ইইউভুক্ত দেশগুলোর ইস্পাত রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ এবং অ্যালুমিনিয়াম রপ্তানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করে। এর মধ্য দিয়ে চীনের পাশাপাশি ইইউয়ের সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্র ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ শুরু করল। ইইউ এখন মার্কিন পণ্যের (হেভি মোটরসাইকেল, মদ ইত্যাদি) ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। ইইউয়ের পক্ষ থেকে ডাব্লিউটিওতে (WTO) অভিযোগ দাখিল করার কথাও বলা হয়েছে। জুন মাসে কানাডায় যে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তাতে এই বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব পড়েছিল। এখন এই বাণিজ্য যুদ্ধ যদি প্রলম্বিত হয়, তাহলে ভারতের মতো দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর মার্কিন শুল্ক আরোপের কারণে ভারতের ক্ষতি যথাক্রমে তিন কোটি ১০ লাখ ডলার ও ১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তে শুধু যে চীন ও ইইউতে এর প্রতিক্রিয়া পড়বে তা নয়, বরং বিশ্ববাণিজ্য ব্যবস্থায়ও এর প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে এই যে পরিবর্তন—এই পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব আসরে অনেকটা ‘একাকী’ করে দিয়েছে। শুধু বাণিজ্যসংক্রান্ত নীতিই নয়, বরং পারমাণবিক ইস্যুতে ইরান সমঝোতা প্রত্যাখ্যান, সিরীয় যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়া ইত্যাদি কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। গত ১২ জুন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে ট্রাম্প একটি ঐতিহাসিক বৈঠকে মিলিত হলেও এ বৈঠক নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ব্যবসায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কিম জং উনকে ‘স্বপ্ন’ দেখিয়ে এসেছেন যে উত্তর কোরিয়া একটি সম্পদশালী দেশে পরিণত হবে; কিন্তু তা আদৌ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো সফলতা বয়ে আনতে পারবে কি না, সে প্রশ্ন আছে। কেননা কিম বেশি মাত্রায় চীনের ওপর নির্ভরশীল। সিঙ্গাপুর ‘সামিট’-এর পরপরই কিম ছুটে গেছেন চীনে, বৈঠক করেছেন শি চিনপিংয়ের সঙ্গে। এখন চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আগামী সংলাপে প্রভাব ফেলবে। চীন তার স্বার্থে উত্তর কোরিয়াকে ব্যবহার করতে পারে। সিঙ্গাপুর ‘সামিট’ নিঃসন্দেহে বড় উদ্যোগ। এতে সফলতা কম। সন্দেহ বেশি। এখন পরবর্তী সময়ের কর্মশালা নিয়ে আলোচনা চলছে। ট্রাম্প একটি ঝুঁকি নিয়েছেন—তিনি ব্যর্থও হতে পারেন। বিখ্যাত ম্যাগাজিন দি ইকোনমিস্টের সর্বশেষ সংখ্যার (১৬-২২ জুন) কাভার স্টোরি হচ্ছেন Kim Jong Un। অর্থাৎ উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং বিজয়ী হয়েছেন! টাইমসের ২৫ জুনের কাভার স্টোরিও এই শীর্ষ বৈঠক নিয়ে—The Riskiest Show on Earth. পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঝুঁকিপূর্ণ ‘শো’। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কিম জং উনকে ‘স্বপ্ন’ দেখিয়েছেন একটি সম্পদশালী দেশে পরিণত হওয়ার। কিন্তু অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহারের কোনো উদ্যোগ নেই। ২০০৬ সালের পর থেকে উত্তর কোরিয়ার রপ্তানির ৯০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই অর্থনৈতিক অবরোধের কারণে। খাদ্য ঘাটতির কারণে ৪১ শতাংশ উত্তর কোরিয়ার নাগরিক অপুষ্টির শিকার। উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে রয়েছে বড় ধরনের অর্থনৈতিক বৈষম্য—দক্ষিণ কোরিয়ার মাথাপিছু আয় যেখানে ৩৯ হাজার ৪০০ ডলার, সেখানে উত্তর কোরিয়ার মাত্র এক হাজার ৭০০ ডলার। এসব বিষয় যদি বিবেচনায় না নেওয়া হয়, তাহলে উত্তর কোরিয়ায় অসন্তোষ থাকবেই। তাই অনেক কিছুই এখন নির্ভর করছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওপর। যদি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ‘সমঝোতাটি’ ব্যর্থ হয়, এটি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির জন্য হবে একটি দুঃখজনক ঘটনা।
যুক্তরাষ্ট্র গত ১৯ জুন জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, জাতিসংঘের এই সংস্থা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পক্ষপাত দোষে দুষ্ট। অর্থাৎ সরাসরিভাবে বলা যায়, সংস্থাটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কাজ করছে! এ ধরনের একটি সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র শুধু ইসরায়েলের পক্ষেই অবস্থান নিল না, বরং একটি স্বৈরাচারী সরকারের পক্ষে অবস্থান নিল। একসময় যুক্তরাষ্ট্রকে অভিহিত করা হতো ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে। কিন্তু ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের এ ভূমিকা এখন পরিত্যক্ত। সারা বিশ্বের মতামত ও জাতিসংঘের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জেরুজালেমে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস স্থানান্তর করেছেন। তাঁর মিত্ররাও তাঁকে এ ব্যাপারে সমর্থন করেনি। ঐতিহাসিকভাবেই স্বাধীন একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হচ্ছে জেরুজালেম। এখন ট্রাম্প এর বিরোধিতা করলেন। এতে একদিকে তাঁর প্রশাসন যে বেশি মাত্রায় ইসরায়েলমুখী তা যেমন প্রমাণিত হলো, ঠিক তেমনি আরব বিশ্বে তাঁর গ্রহণযোগ্যতাও হারালেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির জন্য কোনো ভালো খবর নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে এ মুহূর্তে আলোচিত অন্য একটি বিষয় হচ্ছে, ইরান সমঝোতা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহার। এতে পারস্য উপমহাসাগরে এক ধরনের পারমাণবিক প্রতিযোগিতার জন্ম হলো। ১২ জুন পর্যন্ত সময় ছিল ট্রাম্পের কাছে। কিন্তু এর আগেই তিনি চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিলেন। তিনি যে এই কাজ করবেন, সে ব্যাপারে অনেক আগেই তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন। অনেকের স্মরণ থাকার কথা, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তিনি ঘোষণা করেছিলেন, তিনি এই চুক্তি মানেন না। এখানে বলা ভালো, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো একরকম আতঙ্কে ছিল। তাদের সবার ধারণা ছিল, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করছে। আর ইরান যদি শেষ পর্যন্ত পারমাণবিক বোমা তৈরি করে ফেলে, তাহলে তা এ অঞ্চলে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। এ লক্ষ্যেই ইরানের সঙ্গে ছয় জাতি পারমাণবিক আলোচনা শুরু করে। দেশগুলো হলো—যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি ও ব্রিটেন। একমাত্র জার্মানি বাদে বাকি দেশগুলোর সবাই পারমাণবিক শক্তির অধিকারী। পরমাণু চুক্তি আলোচনায় জার্মানিকে নেওয়া হয়েছিল এ কারণে যে জার্মানির সঙ্গে তেহরানের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। কেননা ইরানের পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম সরবরাহকারী দেশ হচ্ছে জার্মানি। জার্মান ফার্ম সিমেন্স এ খাতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে আসছিল। প্রায় ৫০টির মতো জার্মান ফার্ম ইরানে কাজ করত। এটি বিবেচনা করেই ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি আলোচনায় জার্মানিকে নেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ আলোচনার পর ২০১৫ সালে একটি পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি পরিত্যাগ করেছিল। বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে যে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রে যে ইরানের সম্পদ ‘ফ্রিজ’ করা হয়েছিল, তা ‘ওপেন’ করে দেওয়া হয়। ইরানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যও শুরু হয়। ইরানের রাষ্ট্রীয় যাত্রীবাহী বিমানের জন্য খুচরা যন্ত্রাংশ কেনারও সুযোগ পায় ইরান। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ইরান তার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য খুলে দিয়েছিল। ইরান চুক্তির বাধ্যবাধকতা মেনে চলছিল। কিন্তু এখন সেই চুক্তি বাতিল হলো একরকম। চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র না থাকায় চুক্তিটি এখন বাহ্যত অকার্যকর। কিন্তু ট্রাম্প চুক্তিটি বাতিল করে খুব কি লাভবান হলেন? সেখানে এরই মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে এবং ইরান ও ইসরায়েল এক ধরনের ছায়াযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। এতে ইসরায়েল লাভবান হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র লাভবান হয়নি।
জুন (২০১৮) মাসের তৃতীয় সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তিকে বহির্বিশ্বে আরো বিতর্কিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের প্রবেশাধিকার ঠেকাতে সীমান্তে ছোট ছোট সন্তানকে তাদের মা-বাবার কাছ থেকে পৃথক করে অন্যত্র অস্থায়ী ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত এখন খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এ রকম ৯৬১টি ক্যাম্পের খবর দিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম। ট্রাম্প গত ৮ এপ্রিল তাঁর ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছেন। এর আওতায় শিশুদের পৃথক করা হচ্ছে। মেক্সিকো সীমান্তজুড়ে, ১৭টি রাজ্যজুড়ে শতাধিক শিশু বন্দিশিবিরগুলোতে রয়েছে, যাদের তাদের মা-বাবার কাছ থেকে পৃথক করা হয়েছে। তাঁর এ সিদ্ধান্তে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হলে শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক প্রশাসনিক আদেশবলে শিশুদের পৃথক করা বন্ধ করেছেন। কিন্তু নিউ ইয়র্ক টাইমস জানাচ্ছে, (২০ জুন) এরই মধ্যে যে দুই হাজার ৩০০ শিশুকে তাদের মা-বাবার কাছ থেকে পৃথক করা হয়েছে, তারা শিগগিরই তাদের মা-বাবার সঙ্গে মিলিত হতে পারছে না। কেননা এর সঙ্গে একটি আইনি প্রক্রিয়া জড়িত। শুধু নিজ দেশের অভিবাসীদের বিরুদ্ধেই যে ট্রাম্প কঠোর হয়েছেন তা নয়, বরং অতি সম্প্রতি তিনি জার্মানির অভিবাসননীতিরও সমালোচনা করেছেন। এতে জার্মানির সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের কিছুটা অবনতি ঘটেছে। সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই নীতি যুক্তরাষ্ট্রকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? যুক্তরাষ্ট্র বড় দেশ। বড় অর্থনীতি। দেশটির যেকোনো সিদ্ধান্ত বিশ্বরাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে বাধ্য। গত ১৮ মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা তাঁর আগের প্রেসিডেন্টরা কখনোই নেননি। এসব সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তিকে বিশ্বে উজ্জ্বল করেনি।
ডালাস, যুক্তরাষ্ট্র
Daily Kalerkontho
25.06.2018