রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

মিয়ানমারের গণহত্যার বিচার কি আদৌ হবে

ন্তর্জাতিক সাম্প্রদায় মোটামুটিভাবে এখন নিশ্চিত হয়েছে যে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা হয়েছে। এই গণহত্যায় শুধু মুসলমানদেরকেই যে হত্যা করা হয়েছিল, তেমনটি নয়। বরং দেখা গেছে হিন্দুরাও আক্রান্ত্ম হয়েছে এবং তাদেরও হত্যা করা হয়েছে। যে কারণে প্রশ্ন উঠেছে এসব গণহত্যাকারীর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের আদৌ বিচার হবে কি-না। অতীতে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় যেসব গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল। প্রায় ÿেত্রেই তার বিচার হয়েছে এবং দোষীদের শাস্ত্মি দেয়া হয়েছে। তবে এখানে বড় বাধা এখনও বৃহৎ শক্তিগুলো। বৃহৎ শক্তিগুলো যদি না চায়, তাহলে নিরাপত্তা পরিষদ বিচারের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত্ম নিতে পারবে না। গত ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত্ম আমরা জাতিসংঘ থেকে যে খবর পেয়েছি, তাতে গণহত্যা কারীদের বিচারের কোনো কথা বলা হয়নি। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যা একটি বড় ধরনের মানবিক সমস্যা সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক এদের, অর্থাৎ যারা বাংলাদেশ আশ্রয় নিয়েছে, তাদের সাহায্য করার কথা বলেছে। কিন্তু এটাই সব নয়। যদি গণহত্যাকারীদের বিচার না হয়, তাহলে সেখানে গণহত্যাকারীদের হত্যাকা-কে সমর্থন করা হবে! এমনকি অন্যত্র যেসব হত্যাকা- হয়েছে (বসনিয়া, রম্নয়ান্ডা, সুদান), তাদের বিচার নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তাই মিয়ানমানের গণহত্যাকারীদের বিচার হওয়া প্রয়োজন। এদিকে মিয়ানমারের ওপর আন্ত্মর্জাতিক সম্প্রদায়ের 'চাপ' ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু তাতে মিয়ানমার সরকার এতটুকু নরম হয়েছে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। জাতিসংঘ শেষ পর্যন্ত্ম সেখানে একটি অনুসদ্ধান টিম পাঠালেও, মিয়ানমার সরকার তাদের রাখাইনে প্রবেশ করতে দেয়নি। একটি আশঙ্কাজনক খবরও আমরা পেয়েছি আর তা হচ্ছে যেসব বাড়িঘর থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উৎখাত করা হয়েছে। সেখানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পুনর্বাসন হচ্ছে। অর্থাৎ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ওইসব বাড়ি-ঘর দখল করে নিচ্ছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া কয়েক লাখ মিয়ানমারের নাগরিককে মিয়ানমার সরকার ফিরিয়ে নেবে, এখন কোনো উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না। ফলে মিয়ানমার সরকারের অনাগ্রহের কারণে রোহিঙ্গা সংকটের গভীরতা বাড়ছে। এখনও রাখাইনে সামরিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। খুব সংগতকারণেই তাই সেখানকার যুদ্ধপরাধীদের বিচার জরম্নরি। সেব্রেনিসকায় কী হয়েছিল, তার কথা কী মনে আছে আপনাদের? সেইসব গণহত্যার (সেব্রেনিসকা, বসনিয়া) সাথে আজ মিয়ানমারের রাখাইনে যে গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে, তার সঙ্গে অদ্ু্ভত এক মিল আছে। সাব্রা ও সাতিলার (ংধনৎধ ধহফ ংযধঃরষধ) কথা মনে আছে। সাব্রা ও সাতিলা ছিল ফিলিস্ত্মিনিদের শরণার্থী ক্যাম্প। ওই ক্যাম্পে ইসরাইলি বিমান বোমা হামলা চালিয়ে ১৯৮২ সালের ১৬-১৭ সেপ্টেম্বর ২০০০ ফিলিস্ত্মিনি শিশু, কিশোর আর মহিলাদের হত্যা করেছিল। সারা বিশ্বব্যাপী এর প্রতিবাদ উঠলে ইসরাইল একটি তদন্ত্ম কমিটি গঠন করেছিল। তদন্ত্ম কমিটি তৎকালীন প্রতিরÿামন্ত্রী (পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী) এরিয়েল শ্যারনকে দোষী সাব্যস্ত্ম করেছিল। শ্যারন পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। ব্যক্তিজীবনে শারনের কী হয়েছিল, তা অনেকের মনে থাকার কথা। তিনি দীর্ঘ কয়েক বছর কোমায় থাকার পর তার মৃতু্য হয়েছিল। গণহত্যাকারীদের এভাবেই বিচার হয়। আর সেব্রেনিসকা? সেব্রেনিসকা হচ্ছে বসনিয়া হারজেগোভিনার একটি শহর। অধিবাসীদের অধিকাংশই মুসলমান। সেখানে সার্ব বাহিনী যে গণহত্যা চালিয়েছিল (১৯৯৫ সালের ১১-১৩ জুলাই), তাতে ৮৩৭৫ জন মুসলমান নাগরিককে হত্যা করেছিল সাব যুদ্ধাপরাধীরা। আজ রাখাইনে যে গণহত্যা হয়েছে (যা জাতিসংঘ স্বীকার করেছে), তার সাথে সাব্রা-সাতিলা কিংবা সেব্রেনিসকার গণহত্যার অদ্ভুত এক মিল আছে। রাখাইনে শত শত গ্রাম আগুন নিয়ে পুড়িয়ে দিয়ে সেখানকার সেনাবাহিনী যে নারকীয় ঘটনার সৃষ্টি করেছে। ইতিহাসে এর সাথে হিটলারের গ্যাস চেম্বারে যে শত শত নাগরিককে হত্যা করা হয়েছিল, তার সাথে মেলান যাবে। জীবন বাঁচাতে হাজার হাজার নারী-পুরম্নষ ও শিশু দিনের পর দিন না খেয়ে হেঁটে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে- এ কাহিনী তো আজ সারাবিশ্বের মানুষ জানে। বিশ্ব মিডিয়ায় আজ স্থান পেয়েছে রোহিঙ্গাদের করম্নণ কাহিনী। পাঠক, ÿ্য করবেন সিরিয়া, লিবিয়া আর ইরাক থেকেও এভাবে লাখ লাখ শরণার্থী, যারা প্রায় সবাই ছিল মুসলমান, তারা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের বনে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিল ২০১৫ সালে। সেই প্রবণতা এখন আর সিরিয়াতে নেই বটে, কিন্তু ইতিমধ্যেই এসব অঞ্চলে ১০ থেকে ২০ লাখ মানুষ দেশান্ত্মরিত হয়েছে। সিরিয়া-ইরাকের পর এখন মিয়ানমারের রাখাইন স্টেট, সেখানে মুসলমান শূন্য করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে রাখাইনের অর্ধেকের বেশি মানুষ তাদের নিজ বাসভূমি ত্যাগ করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। অথচ সু চি এদের নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি জাতির উদ্দেশ্যে যে ভাষণ দিয়েছেন, তা মিথ্যাচারে ভরা। যে জন্য তাকে নোবেল শান্ত্মি পুরস্কার দেয়া হয়েছিল। তা এখন মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। 
তিনি রাখাইন 'শান্ত্মি' নিশ্চিত করার পরিবর্তে এই সংকটককে আরও উসকে দিলেন। স্পষ্টতই মিয়ানমারের জেনারেলরা যা তাকে শিখিয়েছেন, তিনি তোতা পাখির মতো তা আউড়ে গেলেন মাত্র। তার ওই বক্তব্য প্রমাণ করে তিনি নিজেও চাচ্ছেন রোহিঙ্গা মুসলমানরা দেশ ত্যাগ করে বাংলাদেশে যাক। লÿ ÿ রোহিঙ্গা নাগরিকের বাংলাদেশে আশ্রয়। তাদের ওপর অত্যাচারের করম্নণ কাহিনীতে সারাবিশ্বের মানুষ যখন প্রতিবাদমুখর ও গণহত্যার দায়ে তার এবং সেই সাথে শীর্ষ স্থানীয় সেনা কমান্ডারদের বিচারের দাবি এখন জোরদার হচ্ছে তখন সু চি জাতির উদ্দেশ্য ভাষণ দিয়েছিলেন। বিশ্বের সর্বত্র তার ভাষণের ব্যাপারে একটা আগ্রহ ছিল। তিনি রোহিঙ্গা গণহত্যার ব্যাপারে কী বলেন রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে তার কর্মসূচি কী, এসব ব্যাপারে তাদের আগ্রহ ছিল। সুতরাং তার ভাষণ নিয়ে সর্বত্র একটা আগ্রহ তৈরি হলেও তিনি হাতাশ করেছেন। এমনকি বিবিসির সাংবাদিকরা পর্যন্ত্ম তিনি রোহিঙ্গা নির্যাতন প্রশ্নে মিথ্যা কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন। মনে হচ্ছে সেনা শাসকরা যা তাকে শিখিয়েছেন তিনি তাই বলেছেন। তিনি তার ভাষণে মূল যে কথাগুলো বলেছেন, তা অনেকটা এরকম : ক. ৫ সেপ্টেম্বর থেকে সামরিক বাহিনীর অভিযান বন্ধ রয়েছে, খ. রাখাইনে সবার জন্য শিÿা ও স্বাস্থ্য সুবিধা আছে, গ. ৫০ ভাগ রোহিঙ্গা পালিয়েছে; ঘ. মুসলমানদের মিয়ানমার থেকে দলে দলে পাঠানো রহস্যময় ঙ. রাখাইনে আন্ত্মর্জাতিক পর্যবেÿকদের ঢুকতে দেয়া হবে ইত্যাদি। এসব বক্তব্যের মধ্যে সত্যতা আছে কতটুকু? পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিই ঐতিহাসিকভাবেই রাখাইন স্টেটের মানুষ রোহিঙ্গা নামে পরিচিত। এবং আন্ত্মর্জাতিকভাবে তা স্বীকৃতও বটে। কিন্তু সূ চি একবারও তার ভাষণে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করেননি। তিনি বলেছেন, বাঙালি এবং মুসলমান। এর অর্থ হচ্ছে তিনি তার অবস্থান এতটুকুও পরিবর্তন করেননি। তাহলে এ সমস্যার সমাধান হবে কীভাবে? তিনি 'যাচাই-বাছাই' সাপেÿে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবার কথা বলেছেন কিন্তু তা সম্ভব কীভাবে? যারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অনেকের কাছেই নাগরিকত্ব প্রমাণের কোনো কাগজপত্র নেই। তাহলে তাদের নাগরিকত্ব সু চি সরকার নিশ্চিত করবেন কীভাবে? এটা একটা ভাঁওতাবাজি। 'লোক দেখানোর' নামে হয়তো আগামীতে কিছু শরণার্থীকে ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার। কিন্তু অনেককেই তারা নেবে না। ফলে উখিয়া, টেকনাফে যে বিশাল রোহিঙ্গা জনবসতি গড়ে উঠছে তারা অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে থাকতে বাধ্য হবেন বছরের পর বছর। ৫ সেপ্টেম্বর থেকে সেনা অভিযান বন্ধ রয়েছে বলে যে কথা সু চি বলেছেন, তা সর্বৈব মিথ্যা। কেননা সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বিবিসি কিংবা আল জাজিরা যেসব সংবাদ প্রচার করেছে। তাতে স্পষ্ট দেখা গেছে, রোহিঙ্গা অধু্যষিত অঞ্চলে ফের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। তাহলে সূ চির বক্তব্যের পেছনে সত্যতা থাকল কোথায়? রাখাইনে সবার জন্য শিÿ, স্বাস্থ্যের সুবিধা আছে দাবি করেছেন সু চি। এটা যে কত বড় মিথ্যা কথা, তা রোহিঙ্গা কিশোর-কিশোরীরা যে সাÿাৎকার দিয়েছে, তাতেই প্রমাণিত হয়েছে। গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তা তুলে ধরা হয়েছে করম্নণ কাহিনী যেখানে পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের অন্যদের থেকে আলাদা করা হয়েছিল। প্রাথমিক স্কুলের শিÿা পাঠ শেষ হওয়ার পর কোনো রোহিঙ্গাকেই মাধ্যমিক কিংবা উচ্চ শিÿার কোনো সুযোগ দেয়া হতো না। এরা এক অঞ্চল খেকে অন্য অঞ্চলে যেতে পারত না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া তো চিন্ত্মাও করা যায় না। এমনকি বিয়ে করার জন্য তাদের অনুমতি নিতে হতো। নিউইয়র্কভিত্তিক আন্ত্মর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে রাখাইন অঞ্চলে ২১৪টি গ্রাম ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সংস্থাটি স্যাটেলাইট থেকে ধারণকৃত ছবি তুলে দেখিয়ে দিয়েছে আগে ওইসব গ্রামে কি অবস্থা ছিল আর এখন কি অবস্থা হয়েছে। তাহলে সু চির কথায় যুক্তি থাকে কতটুকু


শতকরা ৫০ ভাগ মুসলমান পালিয়েছে। তাদের পালানো রহস্যজনক এ কথা বলেছেন সু চি। জীবন রÿার্থে যারা দিনের পর দিন না খেয়ে পাহাড় অতিক্রম করে শুধু বেঁচে থাকার আশায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তারা কেন পালাবে, তাদের তো বাধ্য করা হয়েছে। এই বাধ্য করার বিষয়টিকে সু চি আখ্যায়িত করেছেন 'পালানো' হিসেবে। আমার দুঃখ লাগে এই মানুষটির জন্য যখন তিনি দেশে অন্ত্মরীণ ছিলেন, তখন বাংলাদেশের মানুষ তার মুক্তি দাবি করেছে। তার জন্য প্রার্থনা করেছে। তাকে নিয়ে আশাবাদী হয়েছে। অথচ তিনি যে একজন সাম্প্রদায়িক মানুষ। প্রচ- মুসলমান বিদ্বেষী মানুষ, তা আমরা প্রথম জানতে পেরেছিলাম যখন তিনি অন্ত্মরীণ অবস্থা থেকে মুক্তি পান। সেই ২০১৫ সালের কথা তিনি তখন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন, তখনও তিনি স্বীকার করে নেননি রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। আন্ত্মর্জাতিক সম্প্রদায় যখন মিয়ানমারের গণহত্যার ব্যাপারে সোচ্চার, যখন নিরাপত্তা পরিষদের ৭টি দেশ (মোট দেশ ১৫টি) নিরাপত্তা পরিষদে (জাতিসংঘ) মিয়ানমারের গণহত্যা নিয়ে আলোচনার দাবি তুলেছে। ঠিক তখনই সু চি বিভ্রান্ত্ম বাড়ানোর জন্য নতুন করে আবার প্রস্ত্মাব করেছেন। কিছু শরণার্থীকে ফেরত নেয়া হবে! এটা এক ধরণের কালÿেপণ। অতীতেও অমরা দেখেছি, যারা বাংলাদেশে এসেছিল (১৯৭৮, ১৯৯২), তাদের একটা বড় অংশকেই তারা ফেরত নেয়নি। এটা তাদের এক ধরনের কৌশল। আলাপ আলোচনার নাম করে সময় ÿেপণ করা। তারা কখনই পুরো শরণার্থীদের ফেরত নেবে না। তথাকথিত আলাপ আলোচনার নামে সময় ÿেপণ করবে। তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার। মুসলমান শূন্য রাখাইনে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মগদের পুনর্বাসন করা। গত ২২ সেপ্টেম্বর সংবাদপত্রে এরকম একটি সংবাদই প্রকাশিত হয়েছে। শরণার্থী রোহিঙ্গা মুসলমানরা কেউই আর তাদের বসতবাড়ি ফেরত পাবে না। আগুনে পুড়ে যাওয়ার ফলে তারা প্রমাণপত্রও দেখাতে পারবেন না। ফলে আশঙ্কটা হচ্ছে তাদেরকে ফিলিস্ত্মিনিদের মতো ক্যাম্প জীবনযাপন করতে হতে পারে। এই যখন পরিস্থিতি, তখন একটি খবর এসেছে মালয়েশিয়া থেকে। মিয়ানমারে গণহত্যার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিচারের জন্য সেখানে একটি গণআদালত গঠিত হয়েছিল। গত ২২ সেপ্টেম্বর পার্লামেন্টে পিপলস ট্রাইবু্যনাল (পিপিটি) নামে এই আন্ত্মর্জাতিক গণআদালত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অং সান সু চিও দেশটির সেনাপ্রধানকে দোষী সাব্যস্ত্ম করেছে। রোহিঙ্গা ও কাচিনদের ওপর চালানো গণহত্যা ও নিষ্ঠুর নিপীড়নের তদন্ত্মে যুক্ত বিশিষ্টজন ও খ্যাতনামা আইনজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত সদস্যদের বিচারক 
প্যানেল এই রায় দেন। যুক্তরাষ্ট্রের জজ মাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোসাইড স্টাডিজ অ্যান্ড প্রিভেনশনের গবেষক অধ্যাপক গ্রেগরি স্ট্যানটনও জবানবন্দি দেন। আদালত ওই রায়ের আলোকে ১৭টি সুপারিশ করেন, যা কি-না জেনেভায় জাতিসংঘ সাধারণ কাউন্সিলে পাঠান হবে। দ্বিতীয় খরবটি এসেছে জাতিসংঘ থেকে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে ইরাকে একটি তথ্যানুসন্ধান টিম পাঠানের সিদ্ধান্ত্ম নিয়েছে। এই টিমের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিরা সেখানে কী ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। সে ব্যাপারে তথ্য অনুসন্ধান করা ও ইরাক সরকারকে সাহায্য করা। ব্রিটেন এই প্রস্ত্মাবটি উত্থাপন করে এবং ১০ লাখ পাউন্ড (১৩ লাখ ৩৫ হাজার ডলার) দেয়ার প্রতিশ্রম্নতি দেয়। যারা আইএস কর্তৃক নির্যাতিত হয়েছে, তাদের কিছুটা 'শান্ত্মি' দেয়ার জন্যই এই অর্থ দেয়া হবে। এখানে বলে রাখা ভালো ২০১৪ সালে আইএসের জঙ্গিরা ইরাকের উত্তরাঞ্চলে সিনজির পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত ইয়াজেদি সম্প্রদায়ের ওপর বড় ধরনের জাতিগত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। যাকে পরবর্তীতে জাতিসংঘ 'গণহত্যা' হিসেবে অভিহিত করেছিল। এ সময় শত শত যুবতি ইয়াজেদি মেয়েদের ধরে এনে তাদের যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করা হতো। তাদের করম্নণ কাহিনী ওই সময় সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল। এখন নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত্ম অনুযায়ী ইয়াজেদি সম্পদায়ের ওপর যে নির্যাতন ও গণহত্যা হয়েছে, তা তদন্ত্মে একটি তথ্যানুসন্ধান টিম গঠন করা হবে। সুতরাং আমরাও চাইব মিয়ানমারে মুসলিম গণহত্যার ব্যাপারে একটি আন্ত্মর্জাতিক অপরাধ আদালত গঠিত হোক। 

0 comments:

Post a Comment