মিয়ানমারের ওপর জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের
প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর একটি প্রশ্ন এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে- রোহিঙ্গা
ইস্যুতে কোন পথে যাবে বাংলাদেশ? দেশে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন নিয়ে যখন বড়
ধরনের হতাশার জন্ম হয়েছে, ঠিক তখনই এলো এ প্রতিবেদনের খবরটি। এতে
মিয়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লায়িংসহ পাঁচজন জেনারেলকে দোষী
সাব্যস্ত করা হয়েছে।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযানের পর (যাকে জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তারা ‘গণহত্যার উদ্দেশ্যে’ বলে চিহ্নিত করেছেন) গত এক বছরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের প্রশ্নে তেমন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
উল্লেখ করার মতো ঘটনা রয়েছে দুটি। এক. বাংলাদেশ ও মিয়ানমার গত বছর নভেম্বরে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে, যাতে মিয়ানমার তার নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত নিতে সম্মতি জ্ঞাপন করেছে। দুই. বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই প্রথমবারের মতো বিধ্বস্ত ও ধ্বংস্তূপে পরিণত হওয়া রাখাইনে হেলিকপ্টারযোগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচএম মাহমুদ আলী নিজ চোখে রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতি দেখেছেন। তিনি ঢাকায় ফিরে এসে তার সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন আশাবাদী হয়েছেন মিয়ানমার তার নাগরিকদের ফেরত নেবে, এর এক সপ্তাহের মাথায় সিঙ্গাপুরে একটি অনুষ্ঠানে আসল মনোভাবটি প্রকাশ করে ফেলেছেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি। তিনি রোহিঙ্গা পুনর্বাসন না হওয়ার জন্য বাংলাদেশেকে দায়ী করেছেন!
আমরা বারবার বলে আসছি, রোহিঙ্গা প্রশ্নে আমাদের কূটনীতি অনেক দুর্বল। গত এক বছরে যুক্তি-তর্ক দিয়ে বোঝাতে চেয়েছি, আমরা যেভাবে কূটনীতি পরিচালনা করছি, তাতে করে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে না। আমাদের শক্ত অবস্থানে যেতে হবে।
আমি একাধিকবার বিভিন্ন টকশোতে বলেছি, রোহিঙ্গা প্রশ্নে আমাদের ‘অবস্থানের’ কারণে মিয়ানমার আমাদের দুর্বল মনে করছে। আমি দীর্ঘ এক বছর বলতে চেয়েছি, রাখাইনে গণহত্যা হয়েছে এবং এ গণহত্যার জন্য দেশটির শীর্ষ জেনারেলরা দায়ী। অলিখিত সরকারপ্রধান হিসেবে অং সান সু চিও এর দায় এড়াতে পারেন না। এদের সবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার হওয়া উচিত। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন এক বছর পর সে কথাই বলল।
আমি বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হককে ধন্যবাদ জানাই সত্য কথা বলার জন্য। গত ২৭ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি পরোক্ষভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমালোচনাই করেছেন। তিনি বলেছেন, উচ্চপর্যায়ে একাধিক বৈঠক করে মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রশ্নে একটি চুক্তি করা হয়েছিল। অথচ এখনও কাউকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের লোকেরা এ ব্যাপারে আদৌ কোনো কাজ করছেন না বা করতে পেরেছেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে ‘অ্যাগ্রেসিভ’ ভূমিকা নিতে হবে বলেও মনে করেন তিনি (সমকাল, ২৮ আগস্ট)। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান যখন এ ধরনের কথা বলেন, তখন তার বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে হয়।
রোহিঙ্গা প্রশ্নে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান একটি ‘অ্যাগ্রেসিভ’ ভূমিকা নেয়ার কথা বলেছেন বটে; কিন্তু তিনি স্পষ্ট করেননি এ ভূমিকা কী হওয়া উচিত। এটা সত্য, মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বাংলাদেশ একটি ‘সফট অ্যাপ্রোচ’ নিয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ কোনো শক্ত অবস্থানে যায়নি। যেখানে সারা বিশ্ব রোহিঙ্গা প্রশ্নে বাংলাদেশের অবস্থানকে সমর্থন করেছে, সেখানে বাংলাদেশ এ থেকে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনায় ‘সুবিধা’ নিতে পারত। কিন্তু বাংলাদেশ তা পারেনি।
সর্বশেষ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মিয়ানমার সফরের পর এটা আরও স্পষ্ট হল যে, বাংলাদেশ মিয়ানমারকে একরকম ‘সমীহ’ করেই চলছে! মিয়ানমারের দাবির কাছে বাংলাদেশ একরকম নতজানু হয়েছে! সংবাদপত্রে এমন একটি সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে যে, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকার না করে মিয়ানমারের দাবি অনুযায়ী রাখাইনের বাস্তুচ্যুত নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে।
সেদিন এক টকশোতে (সময় টিভি) এক আলোচকও (যিনি সরকারের খুব ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত) বললেন, ১৯৭৮ সালের চুক্তিতেও বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ‘রাখাইনের বাস্তুচ্যুত নাগরিক’ হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছিল! তার যুক্তি, সেদিন যদি বাংলাদেশ এটা স্বীকার করে নেয়, তাহলে আজ স্বীকার করতে দোষ কোথায়? নিশ্চয়ই কোনো দোষ থাকার কথা নয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ১৯৭৮ সালে একটি চুক্তি হয়েছিল বটে; কিন্তু তখন কী লেখা হয়েছিল ওই চুক্তিনামায়? ‘বাস্তুচ্যুত নাগরিক’, না মিয়ানমারের নাগরিক?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৪ সালে একটি ‘গোপন’ দলিল প্রকাশ করে (রোহিঙ্গা নাগরিকদের ১৯৭৮ সালের প্রত্যাবাসনসংক্রান্ত), যেখানে মিয়ানমার সরকার উল্লেখ করেছিল, রোহিঙ্গারা আইনসিদ্ধভাবেই মিয়ানমারে থাকছেন। অর্থাৎ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের বৈধ নাগরিক। ফোর্বস (Forbes) ম্যাগাজিনে Anders Corr-এর লেখা 'Secret 1978 Document Indicates Burma Recognized Rohingya Legal Residence' শীর্ষক প্রবন্ধেও এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একজন সাবেক কূটনীতিক। পররাষ্ট্র সচিবও দীর্ঘদিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আছেন। তারা ভালো করে জানেন ১৯৭৮ সালের চুক্তিতেই মিয়ানমার (১৯৮৯ সাল থেকে বার্মার পরিবর্তে মিয়ানমার নামের ব্যবহার শুরু হয়) রোহিঙ্গাদের বৈধতা মেনে নিয়েছিল। ২৫ আগস্টের (২০১৭) পর বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিলে একাধিকবার দুই দেশের মাঝে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়েছে। একটি চুক্তিও হয়েছে।
প্রতিটি ক্ষেত্রে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করে আসছে। আর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সর্বশেষ মিয়ানমার সফরে বাংলাদেশ মিয়ানমারের ওই দাবিকে স্বীকৃতি দিল! কিন্তু তাতে করে কি মিয়ানমার এতটুকু নমনীয় হয়েছে? কিংবা মিয়ানমার কি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করেছে? মিয়ানমার যে রোহিঙ্গাদের আর গ্রহণ করবে না, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মিয়ানমার সফরের এক সপ্তাহের মাথায় সিঙ্গাপুরে অং সান সু চি সেটা জানিয়ে দিতে ভুল করেননি।
এ অবস্থায় বাংলাদেশকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কী পদক্ষেপ নেব আগামীতে। বাংলাদেশ ‘প্রিভেনটিভ ডিপ্লোম্যাসি’ বা নিবারক কূটনীতিতে বিশ্বাসী। অর্থাৎ সংঘর্ষ এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ পন্থায় সমস্যা সমাধানের উদ্যোগে বিশ্বাস করে বাংলাদেশ। তবে বিপুলসংখ্যক বিদেশি নাগরিকের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ যে নানাবিধ সংকটের সম্মুখীন, তার সমাধানে বাংলাদেশকে ‘অ্যাক্টিভ ডিপ্লোম্যাসি’তে যেতে হবে।
বাংলাদেশের জন্য এখন একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে গণহত্যার বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে নিয়ে যেতে। ইতিমধ্যেই আদালতের একজন কৌঁসুলি একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। এটি কীভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) আইনের মাধ্যমে করা সম্ভব, তা খতিয়ে দেখতে হবে। তবে বিষয়টি অত সহজ নয়। বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া এ চুক্তিতে (রোম স্ট্যাটিউট) স্বাক্ষর করেনি, যার মাধ্যমে আইসিসির জন্ম।
বাংলাদেশসহ ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য এতে স্বাক্ষর করেছে। মিয়ানমার এর আওতাভুক্ত নয়, কেননা দেশটি রোম স্ট্যাটিউটে স্বাক্ষর করেনি। সেক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি অত সহজ হবে না। তবে মিয়ানমারকে ‘চাপে’ রাখার একটি কৌশল প্রয়োগ করা যেতে পারে, যে ‘চাপে’ রাখার কথা জাতিসংঘের মহাসচিব বলে গিয়েছিলেন তার ঢাকা সফরের সময়।
প্রধানমন্ত্রী সেপ্টেম্বরে (২০১৮) নিউইয়র্কে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ বিষয়টি নিয়ে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করতে পারে। মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের কাউকে কাউকে সম্ভাব্য একটি নিষেধাজ্ঞা (মিয়ানমারের বিরুদ্ধে) চেয়ে কংগ্রেসে একটি বিল উত্থাপনের বিষয়ে কথাবার্তা বলতে শুনেছি। বিষয়টি বাংলাদেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে পারে। কংগ্রেসে ‘বাংলাদেশ ককাস’ সদস্যদের সঙ্গে বাংলাদেশ দূতাবাস মতবিনিময় করতে পারে। এজন্য ওয়াশিংটন ও নিউইয়র্কে বাংলাদেশ দূতাবাসের আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন।
ইন্টারন্যাশনাল ইমপার্শিয়াল অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্ট মেকানিজম বা আইআইআইএমের বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে পারে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতিসংঘ আইআইআইএম সংক্রান্ত একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, এর আওতায় যে কোনো ফৌজদারি অপরাধের ভবিষ্যৎ বিচারের জন্য তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ কর
মূলত ২০১১ সালের পর থেকে সিরিয়ায় যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেসব অপরাধকে বিবেচনায় নিয়েই আইআইআইএম গঠন করা হয়েছিল। যদিও এটি কতটুকু কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। সংগঠনটির চেয়ারপারসন হচ্ছেন ফ্রান্সের একজন সাবেক বিচারপতি মিস মার্চি উল। ইরাকে ইসলামিক স্টেট ও আল কায়দা যেসব অপরাধ সংঘটিত করেছে, সে ব্যাপারে তিনি অনুসন্ধান এবং তথ্য সংগ্রহ করেছেন, যাতে ভবিষ্যতে আইএস ও আল কায়দার নেতাদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো যায়।
যেহেতু জাতিসংঘের অনুসন্ধানী দল রাখাইনে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে মতামত দিয়েছে, সেহেতু রোহিঙ্গা প্রশ্নে আইআইআইএমকে এখন সক্রিয় করা যায়। জাতিসংঘের সদর দফতরে আইআইআইএমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ দূতাবাস মতবিনিময় করতে পারে।
আরও একটি কথা। জাতিসংঘের ওই রিপোর্ট সামনে রেখে বাংলাদেশকে চীন ও রাশিয়ায় রোহিঙ্গা প্রশ্নে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে। ইতিমধ্যে, গত ২৮ আগস্ট, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও রোহিঙ্গা প্রশ্নে একটি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বিতর্কে জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস রোহিঙ্গা গণহত্যা ও জাতিগত উচ্ছেদ অভিযানের কথা বললেও নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
বিতর্কে আবারও চীন ও রাশিয়া মিয়ানমারকে সমর্থন করেছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত উ হাইতাও বলেছেন, এটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এ দুই দেশের সমস্যা, দ্বিপাক্ষিকভাবেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত চীনা বক্তব্য সমর্থন করেন। সত্য হল, এটি এখন আর দ্বিপাক্ষিক সমস্যা নয়- এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। যখন একটি দেশের সাড়ে সাত লাখ নাগরিক (মোট প্রায় ১২ লাখ) নিজ দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয় এবং অন্য দেশে আশ্রয় নেয়, তখন তা আর দ্বিপাক্ষিক সমস্যা থাকে না।
বসনিয়া-হারজেগোভিনা, কসোভো, রুয়ান্ডাতে যে জাতিগত উচ্ছেদ অভিযান বড় ধরনের সংকটের জন্ম দিয়েছিল, তা-ও কিন্তু দ্বিপাক্ষিক সমস্যায় আটকে থাকেনি। আমাদের ব্যর্থতা এখানেই- আমরা চীন ও রাশিয়াকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি যে, এটি দ্বিপাক্ষিক সমস্যা নয়। নিরাপত্তা পরিষদের তিনটি স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু মনে করে রাখাইনে গণহত্যা হয়েছে।
আমরা এ তিনটি দেশকে আমাদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারতাম। কিন্তু আমরা তা পারিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উচিত ছিল এসব দেশ সফর করা। তিনি তা-ও করেননি। এখন জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিশনের রিপোর্ট আমাদের পক্ষে। গণহত্যার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিচারের দাবি বাংলাদেশেরও করা উচিত। মনে রাখতে হবে, এ বিপুলসংখ্যক বিদেশি নাগরিকের বাংলাদেশে অবস্থান আমাদের নানা সংকটের মাঝে ঠেলে দিয়েছে। বিশ্ব সম্প্রদায়কেই এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে।
Daily Jugantor
01.09.2018
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযানের পর (যাকে জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তারা ‘গণহত্যার উদ্দেশ্যে’ বলে চিহ্নিত করেছেন) গত এক বছরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের প্রশ্নে তেমন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
উল্লেখ করার মতো ঘটনা রয়েছে দুটি। এক. বাংলাদেশ ও মিয়ানমার গত বছর নভেম্বরে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে, যাতে মিয়ানমার তার নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত নিতে সম্মতি জ্ঞাপন করেছে। দুই. বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই প্রথমবারের মতো বিধ্বস্ত ও ধ্বংস্তূপে পরিণত হওয়া রাখাইনে হেলিকপ্টারযোগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচএম মাহমুদ আলী নিজ চোখে রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতি দেখেছেন। তিনি ঢাকায় ফিরে এসে তার সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন আশাবাদী হয়েছেন মিয়ানমার তার নাগরিকদের ফেরত নেবে, এর এক সপ্তাহের মাথায় সিঙ্গাপুরে একটি অনুষ্ঠানে আসল মনোভাবটি প্রকাশ করে ফেলেছেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি। তিনি রোহিঙ্গা পুনর্বাসন না হওয়ার জন্য বাংলাদেশেকে দায়ী করেছেন!
আমরা বারবার বলে আসছি, রোহিঙ্গা প্রশ্নে আমাদের কূটনীতি অনেক দুর্বল। গত এক বছরে যুক্তি-তর্ক দিয়ে বোঝাতে চেয়েছি, আমরা যেভাবে কূটনীতি পরিচালনা করছি, তাতে করে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে না। আমাদের শক্ত অবস্থানে যেতে হবে।
আমি একাধিকবার বিভিন্ন টকশোতে বলেছি, রোহিঙ্গা প্রশ্নে আমাদের ‘অবস্থানের’ কারণে মিয়ানমার আমাদের দুর্বল মনে করছে। আমি দীর্ঘ এক বছর বলতে চেয়েছি, রাখাইনে গণহত্যা হয়েছে এবং এ গণহত্যার জন্য দেশটির শীর্ষ জেনারেলরা দায়ী। অলিখিত সরকারপ্রধান হিসেবে অং সান সু চিও এর দায় এড়াতে পারেন না। এদের সবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার হওয়া উচিত। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন এক বছর পর সে কথাই বলল।
আমি বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হককে ধন্যবাদ জানাই সত্য কথা বলার জন্য। গত ২৭ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি পরোক্ষভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমালোচনাই করেছেন। তিনি বলেছেন, উচ্চপর্যায়ে একাধিক বৈঠক করে মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রশ্নে একটি চুক্তি করা হয়েছিল। অথচ এখনও কাউকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের লোকেরা এ ব্যাপারে আদৌ কোনো কাজ করছেন না বা করতে পেরেছেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে ‘অ্যাগ্রেসিভ’ ভূমিকা নিতে হবে বলেও মনে করেন তিনি (সমকাল, ২৮ আগস্ট)। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান যখন এ ধরনের কথা বলেন, তখন তার বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে হয়।
রোহিঙ্গা প্রশ্নে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান একটি ‘অ্যাগ্রেসিভ’ ভূমিকা নেয়ার কথা বলেছেন বটে; কিন্তু তিনি স্পষ্ট করেননি এ ভূমিকা কী হওয়া উচিত। এটা সত্য, মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বাংলাদেশ একটি ‘সফট অ্যাপ্রোচ’ নিয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ কোনো শক্ত অবস্থানে যায়নি। যেখানে সারা বিশ্ব রোহিঙ্গা প্রশ্নে বাংলাদেশের অবস্থানকে সমর্থন করেছে, সেখানে বাংলাদেশ এ থেকে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনায় ‘সুবিধা’ নিতে পারত। কিন্তু বাংলাদেশ তা পারেনি।
সর্বশেষ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মিয়ানমার সফরের পর এটা আরও স্পষ্ট হল যে, বাংলাদেশ মিয়ানমারকে একরকম ‘সমীহ’ করেই চলছে! মিয়ানমারের দাবির কাছে বাংলাদেশ একরকম নতজানু হয়েছে! সংবাদপত্রে এমন একটি সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে যে, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকার না করে মিয়ানমারের দাবি অনুযায়ী রাখাইনের বাস্তুচ্যুত নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে।
সেদিন এক টকশোতে (সময় টিভি) এক আলোচকও (যিনি সরকারের খুব ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত) বললেন, ১৯৭৮ সালের চুক্তিতেও বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ‘রাখাইনের বাস্তুচ্যুত নাগরিক’ হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছিল! তার যুক্তি, সেদিন যদি বাংলাদেশ এটা স্বীকার করে নেয়, তাহলে আজ স্বীকার করতে দোষ কোথায়? নিশ্চয়ই কোনো দোষ থাকার কথা নয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ১৯৭৮ সালে একটি চুক্তি হয়েছিল বটে; কিন্তু তখন কী লেখা হয়েছিল ওই চুক্তিনামায়? ‘বাস্তুচ্যুত নাগরিক’, না মিয়ানমারের নাগরিক?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৪ সালে একটি ‘গোপন’ দলিল প্রকাশ করে (রোহিঙ্গা নাগরিকদের ১৯৭৮ সালের প্রত্যাবাসনসংক্রান্ত), যেখানে মিয়ানমার সরকার উল্লেখ করেছিল, রোহিঙ্গারা আইনসিদ্ধভাবেই মিয়ানমারে থাকছেন। অর্থাৎ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের বৈধ নাগরিক। ফোর্বস (Forbes) ম্যাগাজিনে Anders Corr-এর লেখা 'Secret 1978 Document Indicates Burma Recognized Rohingya Legal Residence' শীর্ষক প্রবন্ধেও এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একজন সাবেক কূটনীতিক। পররাষ্ট্র সচিবও দীর্ঘদিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আছেন। তারা ভালো করে জানেন ১৯৭৮ সালের চুক্তিতেই মিয়ানমার (১৯৮৯ সাল থেকে বার্মার পরিবর্তে মিয়ানমার নামের ব্যবহার শুরু হয়) রোহিঙ্গাদের বৈধতা মেনে নিয়েছিল। ২৫ আগস্টের (২০১৭) পর বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিলে একাধিকবার দুই দেশের মাঝে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়েছে। একটি চুক্তিও হয়েছে।
প্রতিটি ক্ষেত্রে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করে আসছে। আর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সর্বশেষ মিয়ানমার সফরে বাংলাদেশ মিয়ানমারের ওই দাবিকে স্বীকৃতি দিল! কিন্তু তাতে করে কি মিয়ানমার এতটুকু নমনীয় হয়েছে? কিংবা মিয়ানমার কি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করেছে? মিয়ানমার যে রোহিঙ্গাদের আর গ্রহণ করবে না, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মিয়ানমার সফরের এক সপ্তাহের মাথায় সিঙ্গাপুরে অং সান সু চি সেটা জানিয়ে দিতে ভুল করেননি।
এ অবস্থায় বাংলাদেশকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কী পদক্ষেপ নেব আগামীতে। বাংলাদেশ ‘প্রিভেনটিভ ডিপ্লোম্যাসি’ বা নিবারক কূটনীতিতে বিশ্বাসী। অর্থাৎ সংঘর্ষ এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ পন্থায় সমস্যা সমাধানের উদ্যোগে বিশ্বাস করে বাংলাদেশ। তবে বিপুলসংখ্যক বিদেশি নাগরিকের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ যে নানাবিধ সংকটের সম্মুখীন, তার সমাধানে বাংলাদেশকে ‘অ্যাক্টিভ ডিপ্লোম্যাসি’তে যেতে হবে।
বাংলাদেশের জন্য এখন একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে গণহত্যার বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে নিয়ে যেতে। ইতিমধ্যেই আদালতের একজন কৌঁসুলি একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। এটি কীভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) আইনের মাধ্যমে করা সম্ভব, তা খতিয়ে দেখতে হবে। তবে বিষয়টি অত সহজ নয়। বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া এ চুক্তিতে (রোম স্ট্যাটিউট) স্বাক্ষর করেনি, যার মাধ্যমে আইসিসির জন্ম।
বাংলাদেশসহ ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য এতে স্বাক্ষর করেছে। মিয়ানমার এর আওতাভুক্ত নয়, কেননা দেশটি রোম স্ট্যাটিউটে স্বাক্ষর করেনি। সেক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি অত সহজ হবে না। তবে মিয়ানমারকে ‘চাপে’ রাখার একটি কৌশল প্রয়োগ করা যেতে পারে, যে ‘চাপে’ রাখার কথা জাতিসংঘের মহাসচিব বলে গিয়েছিলেন তার ঢাকা সফরের সময়।
প্রধানমন্ত্রী সেপ্টেম্বরে (২০১৮) নিউইয়র্কে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ বিষয়টি নিয়ে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করতে পারে। মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের কাউকে কাউকে সম্ভাব্য একটি নিষেধাজ্ঞা (মিয়ানমারের বিরুদ্ধে) চেয়ে কংগ্রেসে একটি বিল উত্থাপনের বিষয়ে কথাবার্তা বলতে শুনেছি। বিষয়টি বাংলাদেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে পারে। কংগ্রেসে ‘বাংলাদেশ ককাস’ সদস্যদের সঙ্গে বাংলাদেশ দূতাবাস মতবিনিময় করতে পারে। এজন্য ওয়াশিংটন ও নিউইয়র্কে বাংলাদেশ দূতাবাসের আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন।
ইন্টারন্যাশনাল ইমপার্শিয়াল অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্ট মেকানিজম বা আইআইআইএমের বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে পারে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতিসংঘ আইআইআইএম সংক্রান্ত একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, এর আওতায় যে কোনো ফৌজদারি অপরাধের ভবিষ্যৎ বিচারের জন্য তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ কর
মূলত ২০১১ সালের পর থেকে সিরিয়ায় যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেসব অপরাধকে বিবেচনায় নিয়েই আইআইআইএম গঠন করা হয়েছিল। যদিও এটি কতটুকু কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। সংগঠনটির চেয়ারপারসন হচ্ছেন ফ্রান্সের একজন সাবেক বিচারপতি মিস মার্চি উল। ইরাকে ইসলামিক স্টেট ও আল কায়দা যেসব অপরাধ সংঘটিত করেছে, সে ব্যাপারে তিনি অনুসন্ধান এবং তথ্য সংগ্রহ করেছেন, যাতে ভবিষ্যতে আইএস ও আল কায়দার নেতাদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো যায়।
যেহেতু জাতিসংঘের অনুসন্ধানী দল রাখাইনে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে মতামত দিয়েছে, সেহেতু রোহিঙ্গা প্রশ্নে আইআইআইএমকে এখন সক্রিয় করা যায়। জাতিসংঘের সদর দফতরে আইআইআইএমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ দূতাবাস মতবিনিময় করতে পারে।
আরও একটি কথা। জাতিসংঘের ওই রিপোর্ট সামনে রেখে বাংলাদেশকে চীন ও রাশিয়ায় রোহিঙ্গা প্রশ্নে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে। ইতিমধ্যে, গত ২৮ আগস্ট, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও রোহিঙ্গা প্রশ্নে একটি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বিতর্কে জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস রোহিঙ্গা গণহত্যা ও জাতিগত উচ্ছেদ অভিযানের কথা বললেও নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
বিতর্কে আবারও চীন ও রাশিয়া মিয়ানমারকে সমর্থন করেছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত উ হাইতাও বলেছেন, এটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এ দুই দেশের সমস্যা, দ্বিপাক্ষিকভাবেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত চীনা বক্তব্য সমর্থন করেন। সত্য হল, এটি এখন আর দ্বিপাক্ষিক সমস্যা নয়- এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। যখন একটি দেশের সাড়ে সাত লাখ নাগরিক (মোট প্রায় ১২ লাখ) নিজ দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয় এবং অন্য দেশে আশ্রয় নেয়, তখন তা আর দ্বিপাক্ষিক সমস্যা থাকে না।
বসনিয়া-হারজেগোভিনা, কসোভো, রুয়ান্ডাতে যে জাতিগত উচ্ছেদ অভিযান বড় ধরনের সংকটের জন্ম দিয়েছিল, তা-ও কিন্তু দ্বিপাক্ষিক সমস্যায় আটকে থাকেনি। আমাদের ব্যর্থতা এখানেই- আমরা চীন ও রাশিয়াকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি যে, এটি দ্বিপাক্ষিক সমস্যা নয়। নিরাপত্তা পরিষদের তিনটি স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু মনে করে রাখাইনে গণহত্যা হয়েছে।
আমরা এ তিনটি দেশকে আমাদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারতাম। কিন্তু আমরা তা পারিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উচিত ছিল এসব দেশ সফর করা। তিনি তা-ও করেননি। এখন জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিশনের রিপোর্ট আমাদের পক্ষে। গণহত্যার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিচারের দাবি বাংলাদেশেরও করা উচিত। মনে রাখতে হবে, এ বিপুলসংখ্যক বিদেশি নাগরিকের বাংলাদেশে অবস্থান আমাদের নানা সংকটের মাঝে ঠেলে দিয়েছে। বিশ্ব সম্প্রদায়কেই এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে।
Daily Jugantor
01.09.2018