রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

রোহিঙ্গা সমস্যা কি স্থায়ী রূপ নিতে যাচ্ছে?


৮ আগস্ট বাংলাদেশের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের মিয়ানমার সফরের পর একটি প্রশ্ন নতুন করে আলোচনায় এসেছে, তা হচ্ছে রোহিঙ্গা সমস্যাটি কি স্থায়ী রূপ নিতে যাচ্ছে? কেননা ওই সফরের পর মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি যে মন্তব্য করেছেন, তাতে করে এ ধরনের একটি আশঙ্কারই জন্ম হয়েছে। বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচএম মাহমুদ আলী। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই সফরে রোহিঙ্গা প্রশ্নে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। উপরন্তু একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা আমাদের নতুন করে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। এমন একটি খবর সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের পরিচয়পত্রে ‘মিয়ানমারের নাগরিক’ শব্দটি বাদ দিতে সম্মত হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মিয়ানমার সফরের সময় মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির অফিসে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেয়াও তিন্ত সূর্যির মধ্যকার বৈঠকে এ সিদ্ধান্তটি নেয়া হয় বলে রেডিও সাউথ এশিয়ার খবরে বলা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের আইডিতে ‘মিয়ানমারের নাগরিক’ শব্দের পরিবর্তে ‘রাখাইনের বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি’ শব্দটি বসাতে বাংলাদেশ রাজি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ‘মিয়ানমারের নাগরিক নয়’ শব্দটি ব্যবহার না করায় আমরা কি পরোক্ষভাবে মিয়ানমার সরকারের বক্তব্য সমর্থন করলাম না? মিয়ানমার তো প্রথম থেকেই বলে আসছে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক নন! তাহলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ সফরে আমাদের অর্জন কতটুকু? অর্জনের মাঝে শুধু এতটুকু আমরা দেখি, পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে হেলিকপ্টারযোগে রাখাইন নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এতেই আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খুশি। ঢাকায় ফিরে এসে তিনি সংবাদকর্মীদের জানিয়েছেন, ‘অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এ সফরটি বেশি ফলপ্রসূ হয়েছে। কারণ আগের সফরে মিয়ানমার সরকার সবকিছু কেমন যেন লুকাতে চাইত; কিন্তু এবার সড়কপথে ও হেলিকপ্টারযোগে তারা সবকিছু দেখাতে কার্পণ্য করেনি’ (মানবজমিন, ১৫ আগস্ট)। তিনি রাখাইন অঞ্চলের আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়িঘর দেখেছেন; কিন্তু এর মধ্য দিয়ে এ সফর কতটুকু ফলপ্রসূ হয়েছে, তা আমি বুঝতে অক্ষম। উপরন্তু অং সান সু চি সর্বশেষ যে মন্তব্যটি করেছেন, তা আমাদের আশাবাদী করে না। সম্প্রতি তিনি সিঙ্গাপুরে একটি সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ার জন্য বাংলাদেশ দায়ী! সু চি বলেছেন, মিয়ানমার শরণার্থীদের নিতে প্রস্তুত। তাদের পুনর্বাসনের জন্য জায়গাও ঠিক হয়ে গেছে। কিন্তু তাদের পাঠানোর দায়িত্ব বাংলাদেশের। আমরা শুধু সীমান্তে তাদের স্বাগত জানাব। কত দ্রুত এ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে তা নির্ভর করছে বাংলাদেশের ওপর। বিবিসি এ খবর দিয়েছে (যুগান্তর, ২১ আগস্ট)। এর অর্থ পরিষ্কার, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের পরপরই সু চি এ মন্তব্যটি করলেন। এটা যে কত বড় মিথ্যাচার, তা বিশ্ব জানে। বাংলাদেশ বারবার মিয়ানমারের নাগরিকদের ফেরত নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি নমনীয় অবস্থান নিলেও মিয়ানমারের মন গলাতে পারেনি।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে বাংলাদেশ খুব শক্ত অবস্থানে গিয়েছে, এটা আমার মনে হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য এবং পরবর্তী কার্যক্রম বলে দেয় বাংলাদেশ একটি চুক্তি করতে চেয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমারের ওপর ‘চাপ’ প্রয়োগ করার কোনো কৌশল অবলম্বন করেনি। জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছিলেন, মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞ হয়েছে। জাতিগত উচ্ছেদ অভিযান একটি ঘৃণ্য অপরাধ। আন্তর্জাতিক আইনে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য। ইতিমধ্যে বসনিয়া-হারজেগোভিনা, কঙ্গো, লাইবেরিয়া কিংবা রুয়ান্ডাতে যারা জাতিগত উচ্ছেদ অভিযানে জড়িত ছিলেন সেসব সেনা কর্মকর্তার বিচার হয়েছে। রায়ও দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র একাধিক সেনা কর্মকর্তাকে মিয়ানমারে গণহত্যার জন্য চিহ্নিত করেছে। বাংলাদেশ এদের বিচারের দাবি করতে পারত। তাহলে অন্তত মিয়ানমার সরকার একটা ‘চাপ’-এর মুখে থাকত। কিন্তু বাংলাদেশ তা করেনি। এর অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রশ্নে একটি ‘সফট ডিপ্লোমেসি’র আশ্রয় নিয়েছে। ২৫ আগস্ট ২০১৭ রোহিঙ্গা গণহত্যা ও রোহিঙ্গা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলেও বাংলাদেশ কাছের প্রতিবেশী, বিশেষ করে চীন ও ভারতের ‘সাহায্য’ নিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসা বন্ধ করার ব্যাপারে বড় কোনো উদ্যোগ নেয়নি। শেষ অব্দি চীন স্বউদ্যোগে একটি প্রস্তাব দিয়েছিল এবং সেই প্রস্তাব অনুসরণ করেই মিয়ানমার দ্বিপাক্ষিকভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। কিন্তু এ আলোচনা আদৌ কোনো ফল দেবে না। হেলিকপ্টারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে রাখাইনে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্ব সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করা। এটি তারা খুব সাফল্যের সঙ্গেই করতে পেরেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মিয়ানমার সফরের সময় ‘দুই পক্ষ মত দিয়েছে, প্রত্যাবাসন দ্রুত শুরু হওয়া উচিত। প্রত্যাবাসন হতে হবে স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও সম্মানজনক।’ মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরের অফিস থেকে এ তথ্যটি আমরা জানতে পেরেছি (কালের কণ্ঠ, ১১ আগস্ট)। পাঠক লক্ষ করুন, মিয়ানমারের বক্তব্যে বলা হয়েছে প্রত্যাবাসন হতে হবে স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও সম্মানজনক। প্রশ্ন হচ্ছে রোহিঙ্গারা কি স্বেচ্ছায় যাবেন? তাদের কি নিরাপত্তা সেখানে নিশ্চিত করা হয়েছে? রোহিঙ্গারা যেখানে তাদের নাগরিকত্বের ব্যাপারে নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না, সেখানে তারা ফিরে যাবেন না। উপরন্তু তাদের নিরাপত্তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইতিমধ্যে রাজি হয়েছেন, রোহিঙ্গাদের আইডিতে ‘মিয়ানমারের নাগরিকের’ পরিবর্তে ‘রাখাইনের বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি’ লিখতে হবে। রোহিঙ্গারা কি এটা লিখতে রাজি হবে? আমাদের ‘ডিপ্লোমেসি’ খুব শক্ত নয়। আমরা মিয়ানমারের সব কথাতেই রাজি হয়েছি। কিন্তু এতে করে সমস্যার সমাধান হবে না। নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে বিলম্ব করছে। আমরা চাই মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের ফেরত নিক। এটা যত দ্রুত করা সম্ভব, তা উভয় দেশের জন্যই মঙ্গল।
কিন্তু আমি মিয়ানমারের কর্মকাণ্ডে আস্থা রাখতে পারছি না। এটা তাদের স্ট্র্যাটেজি, সময়ক্ষেপণ করা। তাই তারা করছে। সু চি নিজেই এর জন্য বাংলাদেশকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। বাংলাদেশ নাকি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করছে না! এটা এক ধরনের পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই না। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে জাতিসংঘের মহাসচিব, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টসহ বিশ্বের নেতারা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। বাংলাদেশ তার সীমিত সম্পদ নিয়েও যে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে, তারা তার প্রশংসা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ ভূমিকাকে সারা বিশ্ব প্রশংসা করেছে। সাময়িকভাবে বাংলাদেশ এত বিপুলসংখ্যক বিদেশি নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে। বাংলাদেশ স্পষ্ট করেছে মিয়ানমারের নাগরিকদের গ্রহণ করার দায়িত্ব মিয়ানমার সরকারের। কিন্তু সু চি কী করে বলেন বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে রাজি হচ্ছে না? বাংলাদেশের উচিত সু চির এ বক্তব্যের ব্যাখ্যা চাওয়া। বাংলাদেশ ‘নিবারক কূটনীতি’ প্রয়োগ করেই মিয়ানমারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে এ সমস্যার সমাধান করতে চায়। সর্বশেষ ‘রাখাইনের বাস্তুচ্যুত নাগরিক’ হিসেবে রোহিঙ্গাদের স্বীকার করে নেয়ার পেছনেও এ স্ট্র্যাটেজি কাজ করে থাকতে পারে। মিয়ানমার আমাদের এ স্ট্র্যাটেজিকে আমাদের কোনো দুর্বলতা ভাবছে কিনা, সেটাই একটা প্রশ্ন এখন।
মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টিকে খুব সিরিয়াসলি নিয়েছে বলে মনে হয় না। যে কারণে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ থাকলেও সুচির মতো নেত্রী মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে খুশি করার জন্য অবাস্তব ও মিথ্যাচার করে চলেছেন। সুতরাং এক্ষেত্রে পথ একটাই, আর তা হচ্ছে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ানো, যা কিনা জাতিসংঘের মহাসচিব তার বাংলাদেশ সফরের সময় বলে গেছেন। একইসঙ্গে মিয়ানমারের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের দাবি তোলা। পাঠক, স্মরণ করতে পারেন হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের একজন কৌশলী একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে আলাদা আলাদাভাবে চিঠিও দিয়েছেন। বাংলাদেশ ওই চিঠির জবাবও দিয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার জানিয়ে দিয়েছে তারা এ চিঠির জবাব দেয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করে না। এ থেকেই বোঝা যায়, মিয়ানমার সরকার আদৌ আন্তর্জাতিক কমিউনিটিকে কোনো গুরুত্ব দেয় না। আমাদের একটা প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে কয়েকজন শীর্ষ জেনারেলকে চিহ্নিত করেছে, যারা রোহিঙ্গা গণহত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। ওইসব জেনারেলের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এসব জেনারেলকে এখন আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের আওতায় আনতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। কিছুদিন আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ভারপ্রাপ্ত সহকারী মন্ত্রী সয়মান হেনশ ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র অনেক ধরনের বিকল্প নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে। যখন যে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন, যুক্তরাষ্ট্র সেই পদক্ষেপ নেবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফর শেষ করে তিনি ওয়াশিংটনে সংবাদ সম্মেলনে এ ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়োজন, মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেসে একটি বিল উত্থাপন করার প্রক্রিয়া নিয়ে বেশ কয়েকজন কংগ্রেসম্যান এখন কাজ করছেন। এটা একটা ভালো দিক। এ ধরনের যে কোনো উদ্যোগ মিয়ানমারকে ‘চাপ’-এ রাখবে। বিল উত্থাপনের বিষয়টি মার্কিন আইনপ্রণেতাদের জন্য অত সহজ নয়। কিছু কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান হয়তো এটা চাইবে না। কেননা মিয়ানমারে তাদের স্বার্থ রয়েছে। তারা মিয়ানমারে যথেষ্ট বিনিয়োগ করেছেন। মিয়ানমারে যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু হয়েছে, তা এ ঘটনায় ব্যাহত হতে পারে বলেও কেউ কেউ মনে করেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্র সরকার খুব ধীরগতিতেই এগোচ্ছে।
জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্র রাখাইনে গণহত্যার কথা স্বীকার করেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তাদের জাতীয় স্বার্থের কারণে এগোচ্ছে অত্যন্ত শ্লথগতিতে। যারা আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে কাজ করেন, তারা জানেন কসোভোতে গণহত্যা বন্ধে ন্যাটো বাহিনী ১৯৯৯ সালের জুন মাসে সার্ব বাহিনীর ওপর বিমান হামলা চালিয়েছিল। সার্ব বাহিনী (সার্বিয়া) যখন সব ধরনের আলাপ-আলোচনা উপেক্ষা করে মুসলমান গণহত্যা অব্যাহত রেখেছিল, তখন এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটো বাহিনীকে হামলার নির্দেশ দিয়েছিল। ন্যাটোর বিমান হামলার পরই ওই গণহত্যা বন্ধ হয়েছিল। এখন অবশ্য রাখাইনে সেই পরিস্থিতি নেই। পরিকল্পিতভাবে গণহত্যার পর তারা সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গাকে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। এখন মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে। কিন্তু সিঙ্গাপুরে দেয়া সু চির বক্তব্য ভিন্ন বার্তা দেয় আমাদের। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য নাকি জায়গাও ঠিক করা হয়েছে। তিনি অবশ্য রোহিঙ্গা শব্দটি বলেননি, বলেছেন রাখাইনের বাস্তুচ্যুত নাগরিক। প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা কেন? রোহিঙ্গারা ফিরে যাবেন তাদের নিজ নিজ বাড়িঘরে। কফি আনান কমিশনের রিপোর্টে সে কথাটাই বলা হয়েছে। সু চি নিজে এ কমিশন গঠন করেছিলেন। কমিশনের রিপোর্টে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছিল। এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি হয়নি। বাংলাদেশ কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু শক্ত কোনো ‘জনমত’ গড়ে তুলতে পারেনি। তাই একটা আশঙ্কার জন্ম হয়েছে, মিয়ানমার সময়ক্ষেপণ করার স্ট্র্যাটেজি নিয়েছে। ফলে রোহিঙ্গা সমস্যা একটা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিতে যাচ্ছে বলেই আমাদের ধারণা। নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
Daily Jugantor
25.08.2018

0 comments:

Post a Comment