রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

Prof Dr Tareque Shamsur Rehman

In his Office at UGC Bangladesh

Prof Dr Tareque Shamsur Rahman

During his stay in Germany

Prof Dr Tareque Shamsur Rahman

At Fatih University, Turkey during his recent visit.

Prof Dr Tareque Shamsur Rehman

In front of an Ethnic Mud House in Mexico

ওই ‘টুপি’ কিসের লক্ষণ?

 হলি আর্টিজান হত্যাকাণ্ডের বিচারের বহুল প্রত্যাশিত রায় ঘোষিত হয়েছে বুধবার। রায়ে সাতজন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে খালাস দেয়া হয়েছে। এটি একটি যুগান্তকারী রায় এবং এর মধ্য দিয়ে অন্তত একটি মেসেজ সবার কাছে পৌঁছে গেল- আর তা হচ্ছে, ধর্মের নামে যারা মানুষ হত্যা করে, আইন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারে। আইনের হাত অনেক লম্বা। এখান থেকে ‘মুক্তি’ পাওয়ার উপায় নেই।
কিন্তু বিচারের রায় ঘোষিত হওয়ার পরও দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আচরণ ও দম্ভোক্তি প্রমাণ করল এই অপরাধীরা এতটুকুও অনুতপ্ত নয়। এমনকি তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সিম্বল সংবলিত ‘টুপি’ ব্যবহার করে তারা অন্তত এটি জানান দিতে চাইল যে, তারা আইএসের আদর্শ থেকে এতটুকু সরে আসেনি।
১৭ জন বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জন সাধারণ মানুষকে হত্যা এবং হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত, ষড়যন্ত্র, অর্থ সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির সঙ্গে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা জড়িত ছিল। কিন্তু এজন্য তারা এতটুকুও অনুতপ্ত নয়। বরং আদালত প্রাঙ্গণে ও প্রিজনভ্যানে ‘আল্লাহ আকবর’ স্লোগান দিয়ে তারা জানান দিতে চাইল, সাধারণ মানুষ হত্যা করাকে তারা ‘ঈমানি কাজের’ অঙ্গ বলেই মনে করে!
প্রিজনভ্যান থেকে বের হওয়ার সময় তারা ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়েছে এবং নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও তাদের প্রায় সবার মুখেই হাসি ছিল। এটাই প্রমাণ করে মৌলবাদের শিকড় কত গভীরে প্রবেশ করেছে সমাজে! হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা তারা স্বীকার করেছে। কিন্তু তারা যে অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী, তা তাদের কর্মকাণ্ডে প্রকাশ পায়নি।
আইএসের নেতা আবুবকর আল বোগদাদির মৃত্যুর পর আইএসের কর্মকাণ্ড এখন সীমিত হয়ে পড়েছে। সিরিয়া-ইরাক থেকে তারা উৎখাত হয়েছে। তথাকথিত ‘জিহাদি রাষ্ট্রের’ পতন ঘটেছে। কিন্তু তারপরও মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া ব্যক্তিরা যখন প্রকাশ্যেই আইএসের সিম্বল সংবলিত ‘টুপি’ ব্যবহার করে, তখন বুঝতে হবে তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার।
হলি আর্টিজান হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে কিছু বিভ্রান্ত তরুণ সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তারা বিশ্বকে জানান দিতে চেয়েছিল, মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ এ দেশে আইএস আছে! এর প্রায় সাড়ে তিন বছর পর মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিয়েও মাথায় আইএসের টুপি পরে তারা জানান দিতে চাইল- যে আদর্শকে তারা ধারণ করেছিল, তা তারা পরিত্যাগ করেনি। সারা বিশ্বের মিডিয়াতে এটি প্রচারিত হয়েছে।
হলি আর্টিজানের হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সময়ও আমরা বলেছিলাম, গুটিকয়েক বিভ্রান্ত যুবকের কর্মকাণ্ড দিয়ে এটি প্রমাণিত হয় না যে, বাংলাদেশে আইএস আছে। কিছু যুবক জঙ্গিবাদী মতাদর্শ গ্রহণ করে আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছিল। এরা আইএসের নাম ব্যবহার করেছিল বটে; কিন্তু আইএসের স্ট্র্যাটেজির সঙ্গে তা মিল খায় না। একটি বিদেশি চক্র মূলত বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত।
এরা বাংলাদেশের ধর্মভীরু মুসলমানদের তথা রাষ্ট্রটিকে চিহ্নিত করতে চায় একটি জঙ্গিবাদী তথা ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে। বাংলাদেশের মানুষ ইসলামকে ধারণ করে আছেন হাজার বছর ধরে। কিন্তু জঙ্গিবাদী আদর্শকে তারা কখনও গ্রহণ করেননি। শান্তির ধর্ম ইসলামকে তারা লালন করেন, ধারণ করেন ব্যক্তি জীবনে।
কিন্তু তথাকথিত জিহাদিরা যখন ইসলামের নামে মানুষ খুন করে, আত্মঘাতী হয়, খাঁচায় মানুষ পুড়িয়ে মারে (আইএস সিরিয়াতে তাই করেছে)- সেই ‘ইসলামের’ সঙ্গে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই। হলি আর্টিজানের ঘটনায় যখন ১৭ বিদেশি নাগরিককে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হল, বাংলাদেশের মানুষ তার প্রতিবাদ করেছে। মানুষ হত্যাকারীদের ঘৃণা করেছে। শান্তির ধর্ম ইসলামের সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলাম ধর্মে হত্যাকাণ্ড সমর্থন করে না।
নিঃসন্দেহে হলি আর্টিজান হত্যাকাণ্ডের বিচার একটি মাইলফলক। এ রায়ের মধ্য দিয়ে আমরা বিশ্বকে একটি মেসেজ দিতে পারলাম যে, বাংলাদেশ, বাংলাদেশের আইন এ ধরনের ‘ধর্মের নামে হত্যাকাণ্ড’কে সমর্থন করে না। বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়, এখানে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। কিন্তু মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা যখন আইএসের সিম্বল সংবলিত টুপি মাথায় পরে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়, তখন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক- ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স’কে কোনো অপশক্তি নস্যাৎ করে দিতে চায় কিনা?
কারণ ওই টুপি কোত্থেকে এলো, কারা সরবরাহ করল, কোন শক্তি এর পেছনে কাজ করছে? একটি কমিটি ইতিমধ্যে গঠিত হয়েছে। কমিটি জেলখানা ও সেই সঙ্গে কোর্ট-কাচারির সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ছবি যাচাই করে দেখতে পারে। জঙ্গি দমনে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যথেষ্ট সাফল্য আছে। কিন্তু এই একটি ঘটনায় তাদের সব অর্জন যেন ম্লান হয়ে না যায়।
মনে রাখতে হবে, এটি কোনো ছোট্ট ঘটনা নয়, এর একটি ইমপ্যাক্ট আছে। যে ‘শক্তি’ হলি আর্টিজান হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছিল, সেই শক্তিই এই ‘টুপি’ সরবরাহের পেছনে আছে। হলি আর্টিজান হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে তারা বিশ্বের মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল, আইএসের ‘টুপি’ দেখিয়ে একইভাবে তারা বিশ্বকে জানান দিল বাংলাদেশে এখনও জঙ্গি আছে! আমি এটাকে হালকাভাবে নিতে চাই না।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, আইএসের কোনো টুপি নেই। কিন্তু টুপিতে যে লোগো ব্যবহার করা হয়েছে, তা আইএসের, এটা তো অস্বীকার করা যাবে না? আইএস তাদের প্রচার কাজ চালানোর জন্য কিছু ‘সিম্বল’ ব্যবহার করে- যেমন কালো কাপড়, কালো পাঞ্জাবি, আরবি শব্দ ইত্যাদি।
হলি আর্টিজান হত্যাকাণ্ডের সময় যে ভিডিও বার্তা প্রচারিত হয়েছিল, তাতে এসব সিম্বল ব্যবহার করা হয়েছিল। কল্যাণপুরের ঘটনায়ও আমরা তা দেখেছি। এমনকি শ্রীলংকায় ইস্টার সানডের হত্যাকাণ্ডের সময়ও একই ধরনের সিম্বল আমরা দেখেছি। কাজেই এ ধরনের সিম্বল ব্যবহার করে তারা যে কৌশলে তাদের প্রচারকার্য চালায়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ পেয়েও তারা কৌশলে আইএসের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে গেল! বাংলাদেশ যখন তার জঙ্গিবিরোধী অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে ও বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে, তখন কৌশলে অপরাধীরা আইএসের নাম ব্যবহার করল। যদিও তাদের এ ‘কৌশল’ সাধারণ মানুষ গ্রহণ করে নেবে না। তাদের প্রতি সাধারণ মানুষের ঘৃণা বেড়ছে বৈ কমেনি।
২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজানের ঘটনা বাংলাদেশের জন্য একটি কালো অধ্যায়। কিছু বিপথগামী তরুণ ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করে নিরীহ মানুষদের। তরুণদের এ হত্যাকাণ্ড ছিল পরিকল্পিত। দীর্ঘদিন ধরে তারা এ পরিকল্পনা করেছিল। এজন্য তাদের আগে প্রশিক্ষণ পর্যন্ত দেয়া হয়েছিল। তারা হলি আর্টিজান বেকারিকে বেছে নিয়েছিল একটাই কারণে- আর তা হচ্ছে, সেখানে বিদেশিদের যাওয়া-আসা ছিল। সেখানে বিদেশিরা নিয়মিত ডিনার করতে যেতেন।
বিদেশিদের জিম্মি করে ও তাদের হত্যা করে তারা অন্তত একটি মেসেজ দিতে চেয়েছিল- অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চরিত্র নষ্ট করা। বাংলাদেশ যে একটি শান্তি ও সম্প্রীতির দেশ, তা তারা নষ্ট করতে চেয়েছিল। বিদেশিদের হত্যা করলে খুব সহজেই বিদেশি মিডিয়ায় স্থান পাওয়া যাবে, তাদের নাম ছড়িয়ে পড়বে, এ বিষয়টি তাদের বিবেচনায় ছিল। বিদেশিদের হত্যা করলে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে, মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন এবং বাংলাদেশে আসতে চাইবেন না। ফলে জঙ্গিরা সুবিধা পাবে।
এসব তরুণ (মোবাশ্বের, খায়রুল, রোহান, নিবরাস, শফিকুল) ছিল নব্য জেএমবির সদস্য। তাদের সংগঠিত করেছিল তামিম চৌধুরী। উদ্দেশ্য পরিষ্কার- হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ। হত্যাকাণ্ড তারা সংঘটিত করেছিল বটে; কিন্তু সাধারণ মানুষ তাদের ঘৃণা করেছে। ধর্মভীরু সাধারণ মানুষ ঘৃণাভরে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রত্যাখ্যান করেছে।
ওই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রায় সাড়ে তিন বছর পর তদন্ত সম্পন্ন করে দোষীদের বিচারিক প্রক্রিয়ায় শাস্তি দিয়ে বাংলাদেশ তার জঙ্গিবিরোধী অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করল। হলি আর্টিজান হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশে আর বড় ধরনের কোনো সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেনি। জঙ্গিবাদ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবশ্যই তাদের কৃতিত্ব দাবি করতে পারে। কিন্তু আমরা যেন আত্মতুষ্টিতে না ভুগি।
‘আইএসের কোনো টুপি নেই’- এ ধরনের বক্তব্যও কোনো ‘ম্যাচির্ওড’ বক্তব্য নয়। কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের বড় কর্তৃত্ব তারা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিস্তার হতে দেয়নি। তারা কেন বলবে, ‘আইএসের কোনো টুপি নেই?’ বরং তারা এর ব্যাখ্যা দিতে পারত।
একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, আসামি রিগানকে প্রিজনভ্যান থেকে গারদে নেয়ার সময় তার মাথায় টুপি ছিল না। তবে গারদ থেকে এজলাসে হাজিরের সময় মাথায় কালো টুপি ছিল। অপর জঙ্গি রাজীব গান্ধীর মাথায়ও টুপি ছিল না; কিন্তু প্রিজনভ্যানে ওঠার সময় তার মাথায় আইএসের টুপি দেখা যায়।
তাহলে ধারণা করা স্বাভাবিক- কোর্টে, গারদে এই ‘টুপি’ সরবরাহ করা হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা জানত কখন ও কোথায় এ টুপি পরতে হবে। তারা তা পরেছে। নব্য জেএমবির সদস্যরা নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভেতরে ঢুকে পড়েছে কিনা, এটাই চিন্তার কারণ।
জঙ্গিবিরোধী অবস্থানের একটা অধ্যায় পার হল। এখন বাকি প্রক্রিয়াগুলোও দ্রুত সম্পন্ন হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। হলি আর্টিজানের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও খর্ব হয়েছিল। এখন দোষীদের বিচার সম্পন্ন করে কিছুটা হলেও বাংলাদেশ তার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে পারল।
Daily Jugantor
30.11.2019

গোতাবায়া ও শ্রীলঙ্কার রাজনীতি

গোতাবায়া রাজাপাকসে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তিনি বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। মাহিন্দা রাজাপাকসে সাবেক প্রেসিডেন্ট। যদিও রনিল বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বে যে সরকার ছিল, সেই সরকারের মেয়াদ ছিল আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত। কিন্তু তার আগেই বিক্রমাসিংহে পদত্যাগ করলেন। এর মধ্য দিয়ে রাজাপাকসে পরিবারের কাছে আবার শ্রীলঙ্কার শাসনভার চলে গেল। মাহিন্দা রাজাপাকসে ২০০৫ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। এরপর ২০১০ সালেও তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিজয়ী হন। কিন্তু তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হতে চাইলে (২০১৫) দলীয় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন এবং মাইথ্রিপালা সিরিসেনার কাছে হেরে যান।
সিরিসেনা দলীয় ফ্রিডম পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হন। দলীয় কোন্দলের কারণে মাহিন্দা রাজাপাকসে আলাদা দল পর্যন্ত গঠন করেন। তার বর্তমান দলের নাম শ্রীলঙ্কা পাদুজানা পেরাসুনা। এই দলের প্রার্থী হিসেবেই ছোট ভাই গোতাবায়া রাজাপাকসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হন। মাহিন্দা রাজাপাকসে দুই টার্ম প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকলেও, রাজনীতি থেকে তিনি অবসর নেননি। বরং প্রথমে একজন সংসদ সদস্য ও পরে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা ২০১৮ সালে তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগও দিয়েছিলেন। কিন্তু উচ্চ আদালতের রায়ে রনিল বিক্রমাসিংহে তার প্রধানমন্ত্রীর পদ ফিরে পেয়েছিলেন। মাহিন্দা রাজপাকসে তাই বরাবরই আলোচিত। মাহিন্দা রাজাপাকসের একটা বড় অবদান হচ্ছে তামিল বিদ্রোহীদের তিনি নিমূ©ল করে (২০০৯) শ্রীলঙ্কার ঐক্য নিশ্চিত করেছিলেন। তামিল বিদ্রোহীরা ১৯৮৩ সালে স্বাধীন একটি তামিল রাষ্ট্রের জন্য সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু করেছিল। পরে তামিল টাইগারদের নাম সারা বিশে^ ছড়িয়ে পড়ে। বিশে^র অন্যতম জঙ্গি সংগঠনে পরিণত হয়েছিল তামিল টাইগাররা। ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ ছিলেন এর নেতা। তামিল টাইগাররা আত্মঘাতী বোমার রাজনীতি অবলম্বনে অগ্রগণ্য। এদের হাতে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী, শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রেমাদাসা পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছিলেন। মাহিন্দা রাজাপাকসে এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করে সেই যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছিলেন। ছোট ভাই ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ছিলেন তখন দেশরক্ষামন্ত্রী। শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের শেষের দিকে শ্রীলঙ্কার তামিলদের হত্যা, অত্যাচার ও তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ আছে। এ ধরনের ‘অপরাধের’ জন্য জাতিসংঘ কয়েকজন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল। পরোক্ষভাবে মাহিন্দা রাজাপাকসেও অভিযুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।
অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে হলেও গোতাবায়া রাজপাকাসে ওই নির্বাচনে ‘বৌদ্ধ কার্ড’ ব্যবহার করেছেন। নির্বাচন ফলাফলে দেখা গেছে, তামিল ও মুসলমান সংখ্যাগুরু উত্তর ও পূর্বাঞ্চল ছাড়া প্রতিটি জেলায় শ্রীলঙ্কা পিপলস ফ্রন্টের (এসএলপিপি) প্রার্থী গোতাবায়া জয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে তামিল ও মুসলমান এলাকাগুলোতে ব্যাপক ভোট পেয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী সাজিথ প্রেমাদাসা। মূলত তামিল ও মুসলমান দলগুলোকে নিয়েই গঠিত হয়েছিল ‘নিউ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)। এনডিএফ থেকেই প্রার্থী হয়েছিলেন সাজিথ প্রেমাদাসা। এই নির্বাচনই প্রমাণ করল শ্রীলঙ্কার সমাজ জাতিগত প্রথায় ধর্মীয়ভাবে বিভক্ত। জাতিগত ও ধর্মীয়ভাবে এই বিভক্তি এত বেশি ছিল যে, নির্বাচনের পরপরই দেশটির উত্তরাঞ্চলে তামিল সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় সারা দিনই আতঙ্ক বিরাজ করছিল। রাস্তাঘাট ছিল জনশূন্য এবং জনগণ তাদের বাড়িঘরে থেকেছে। ২১ এপ্রিল ইস্টার সানডেতে চার্চে সন্ত্রাসী হামলা ও মুসলমানবিদ্বেষ এই নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলেছিল। তারা সিংহলি সেন্টিমেন্টকে প্রাধান্য দিয়েছে। আর গোতাবায়া এই সিংহলি সেন্টিমেন্টকে পুঁজি করেই নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। গোতাবায়ার এই বিজয় এখন অনেকগুলো প্রশ্নকে সামনে আনল। সরকার পরিচালনার ড়্গেত্রে গোতাবায়ার বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসের ওপর বেশি নির্ভর করবেন। শ্রীলঙ্কা একটি প্রেসিডেন্টশাসিত রাষ্ট্র। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সেখানে সাংবিধানিকভাবে কিছু সুবিধা পেয়ে থাকেন। ফলে রাজাপাকসে পরিবার সেখানে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করায় কোনো বড় ধরনের সংকটের জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এখন যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে নতুন সরকারের পররাষ্ট্রনীতি কী হবে? মাহিন্দা রাজাপাকসেকে চীনাপন্থি হিসেবে গণ্য করা হয়। অন্যদিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট ‘সিরিসেনা একসময় মাহিন্দা রাজাপাকসের খুব ঘনিষ্ঠ থাকলেও, ২০১৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে তিনি কিছুটা ভারতের দিকে ঝুঁকেছিলেন। অভিযোগ আছে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা তার প্রার্থীপদকে সমর্থন করেছিল। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি শ্রীলঙ্কাকে চীনের প্রভাব থেকে বের করে আনতে চেষ্টা করেছিলেন। ভারত ও চীন উভয় দেশের কাছেই শ্রীলঙ্কার স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব অনেক বেশি। এই স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্বের কারণেই চীন, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের শ্রীলঙ্কার ব্যাপারে আগ্রহ বেশি।
চীন যে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’-এর এক মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, তাতে শ্রীলঙ্কার অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীন হামবানতোতায় একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করে দিয়েছে, যা ভারতের জন্য একটি চিন্তার কারণ। ভারত এটাকে দেখছে তার নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে। ২০১৪ সালে হামবানতোতায় চীনা সাবমেরিন ডকিং করেছিল, যা ভারতীয় নিরাপত্তা বিশেস্নষকদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল। হামবানতোতা রাজাপাকসের এলাকা। এই এলাকাকে তিনি চীনা ঋণে পরিপূর্ণ একটি আধুনিক শহরে পরিণত করেছেন। চীনা ঋণ শ্রীলঙ্কাকে এক ধরনের ‘ডেব্‌ট ট্রাপ’ বা ঋণের ফাঁদে ফেলেছে। হামবানতোতা সমুদ্রবন্দরটি এখন শ্রীলঙ্কা ৯৯ বছরের জন্য চীনের কাছে ‘লিজ’ দিয়েছে।
শ্রীলঙ্কাকে ঘিরে চীন-ভারত দ্বন্দ্ব এখন স্পষ্ট। মাহিন্দা রাজাপাকসে প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ২০১২ সালে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী শ্রীলঙ্কা সফর করেন। ওই সময় সেনাবাহিনীর ক্যাম্প নির্মাণের জন্য শ্রীলঙ্কাকে ১০০ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়। শ্রীলঙ্কার অফিসারদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করে চীন। শুধু চীনা সাবমেরিনের উপস্থিতিই ভারতের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি, বরং বন্দর নগরী ত্রিনকোমালিতে চীনারা একটি বিমান রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলছে। কৌশলগত অবস্থানে ভারতের জন্য কেন্দ্রটি তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের কারণ। এই ঘটনা দুদেশের মধ্যকার বৃহত্তর নিরাপত্তা সংকটকে আরও বাড়িয়ে দেয়। ফলে ভারতীয় মহাসাগরে শক্তি জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। আর চীনা অস্ত্র ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে, এমন আশঙ্কাও ভয়ের আরেকটি কারণ। এটি বিবেচনায় নিয়েই ভারত সাম্পªতিক সময়ে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তার সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করেছে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তিন ধরনের যৌথ মহড়া চালিয়েছে ভারত। ২০১৩ সাল থেকে মিত্রশক্তি নামের দ্বিপক্ষীয় মহড়া চলছে। ২০১৭ সালের মহড়ায় সন্ত্রাসবাদের দিকে নজর দেওয়া হয়। দুই নৌবাহিনীর মধ্যেও যৌথ মহড়া হচ্ছে। এ ছাড়া মালদ্বীপকে নিয়ে হয়েছে ‘দোস্তি মহড়া’। ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ভারত ১৭০০ শ্রীলঙ্কান অফিসারকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আর প্রায় ৮০ ভাগ শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীর অফিসার ভারত থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীর সাদার্ন কমান্ড হামবানতোতা সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে চীনা নৌবাহিনীর সঙ্গে একটা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে পারে– এ ধরনের একটি সম্ভাবনা কোনো কোনো মহলে আলোচিত হচ্ছে। কেন না, হামবানতোতা পরিপূর্ণভাবে এখন চীনাদের নিয়ন্ত্রণে। এখানে চীনা নৌবাহিনীর জাহাজ আসাটা অস্বাভাবিক নয়। সুতরাং এই বন্দরের দিকে ভারতের যে দৃষ্টি থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এদিকে হামবানতোতায় চীন যখন ঘাঁটি গেড়েছে, তখন মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মাত্তালা রাজাপাকসে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিচালনার ভার গ্রহণ করেছে ভারত। এই বিমানবন্দরটি এক রকম পরিত্যক্ত। তেমন যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। ভারতের ভয় ছিল এই বিমানবন্দরটিও চীন ‘লিজ’ নিতে পারে। আর তাহলে ভারত মহাসাগরে চীনের স্ট্র্যাটেজিক অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে।
ভারত মহাসাগরে জিবুতিতে চীন তার প্রথম সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছে। সেখানে প্রায় ১০ হাজার চীনা সৈন্য নিয়োজিত রয়েছে। বেলুচিস্তানের (পাকিস্তান) গাওদারে চীন যে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ শেষ করেছে, সেখানে চীন একটি নৌঘাঁটি নির্মাণ করছে বলেও মার্কিন পত্রপত্রিকাগুলো রিপোর্ট করেছে। জিবুতিতে চীনা ঘাঁটি থাকায় ভারতও এখন চেষ্টা করছে সিসেলিস, ওমান ও সিঙ্গাপুরে একটি নৌঘাঁটি নির্মাণ করার (সিএনসিসি, ২৮ ফেব্রম্নয়ারি ২০১৮)। সুতরাং বোঝাই যায়, ভারত মহাসাগরে চীনা নৌবাহিনীর কর্মকাণ্ডে ভারত সন্তুষ্ট নয়। এক ধরনের প্রতিযোগিতা দেশ দুটির মধ্যে আছে। সর্বশেষ ঘটনায় চীন ভারতের অরুণাচল প্রদেশকে নিজেদের দাবি করে এবং তা ‘দক্ষিণ তিব্বত’ হিসেবে উল্লেখ করে একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে। ভারত এটাকে সহজভাবে নেবে বলে মনে হয় না। ফলে ‘চেন্নাই-কানেক্ট’ (চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের চেন্নাই সফর, ২০১৯) দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধি করার একটা সম্ভাবনা জাগালেও এক ধরনের আস্থাহীনতা রয়ে গেছে দুদেশের মধ্যে। এরই মধ্যে এখন যোগ হলো শ্রীলঙ্কার সরকার পরিবর্তনের খবরটি। শ্রীলঙ্কা আবারও চীনের দিকে ঝুঁকে পড়বে কি না– সেটাই দেখার বিষয়। এ অঞ্চলের দেশগুলোতে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে চীন ও ভারত উভয়ই জড়িত। সরকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এই দুই শক্তি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত না থাকলেও দেখা গেছে যে, সরকারই ক্ষমতাসীন হয়েছে, তারা ভারত অথবা চীনের সহযোগিতার দিকে হাত বাড়িয়েছে। আমরা মালদ্বীপ ও নেপালের কথা বলতে পারি। মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন ছিলেন চীনাপন্থি। তার আমলে (২০১৩-১৮) মালদ্বীপে ব্যাপক চীনা বিনিয়োগ হয়। ওই সময় একটা গুজব ছিল যে, চীন মালদ্বীপে একটি নৌঘাঁটি নির্মাণ করতে পারে। কিন্তু ২০১৮ সালের শেষের দিকে সেখানে যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাতে বিজয়ী হন ইব্রাহিম সলিহ। ইব্রাহিম সলিহকে ভারতপন্থি হিসেবে মনে করা হয়। তিনি অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য চীনের বদলে ভারতকে বেছে নিয়েছেন। এদিকে নেপালের কমিউনিস্ট সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। দু-দশকের মধ্যে প্রথম একজন চীনা প্রেসিডেন্ট সম্পªতি নেপাল সফর করেছেন। এর মধ্য দিয়ে নেপাল কিছুটা চীনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। চীন নেপালি কমিউনিস্ট পার্টির প্রায় কয়েক হাজার কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। কমিউনিস্ট পার্টি এখন নেপালে ক্ষমতায়।
দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে এখন শ্রীলঙ্কা নিয়ে প্রশ্ন থাকবে অনেকের– ‘শ্রীলঙ্কা কি আবারও চীনের দিকে ঝুঁকে পড়বে? ইতিমধ্যে নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া ঘোষণা করেছেন, তিনি শিগগিরই ভারত সফরে যাবেন। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট সলিহও দায়িত্ব নেওয়ার পর ছুটে গিয়েছিলেন ভারতে। এখন গোতাবায়াও যাচ্ছেন। মেসেজটি পরিষ্কার। ভারত নিশ্চিত হতে চায় নয়া শ্রীলঙ্কা সরকারের পররাষ্ট্রনীতি কী হবে? প্রভাবশালী সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট ২১ নভেম্বর তাদের এক প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছে, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া চীনের প্রশ্নে ‘low key’’ অর্থাৎ নিচুস্তরের একটা অবস্থান গ্রহণ করবেন। আর নিক্কি এশিয়ান রিভিউর মন্তব্য ‘India seeks to contain china presence in new Srilanka Governmen’– অর্থাৎ ভারত শ্রীলঙ্কায় চীনের প্রভাব কমানোর উদ্যোগ নেবে। এটাই হচ্ছে আসল কথা। চীন ও ভারতের উভয়েরই আগ্রহ রয়েছে শ্রীলঙ্কার নয়া সরকারের ওপর প্রভাব ফেলার। এখন রাজাপাকসে ভ্রাতৃদ্বয় শ্রীলঙ্কাকে কোথায় নিয়ে যাবেন– সেটাই দেখার বিষয়।
Daily Desh Rupantor
28.11.2019

আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা ও সু চি

:০০ | পড়া যাবে ১০ মিনিটে 


আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা ও সু চি
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি জানিয়েছেন, হেগে অবস্থিত আইসিজেতে মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটে গণহত্যার জন্য যে মামলা দায়ের করা হয়েছে, ওই মামলা লড়তে তিনি নিজে আদালতে যাচ্ছেন। সু চি দীর্ঘদিন লন্ডনে ছিলেন। তাঁর প্রয়াত স্বামী একজন ব্রিটিশ নাগরিক। তিনি নিজে ভালো ইংরেজি বলেন। কিন্তু আইনশাস্ত্রে তাঁর কোনো ডিগ্রি নেই। তার পরও মিয়ানমারের পক্ষে লড়াই করার জন্য তিনি হেগে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস বা আইসিজেতে যাচ্ছেন। ৫৭ জাতির জোট ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসির পক্ষ হয়ে গাম্বিয়া আইসিজেতে এই মামলা করেছে। ডিসেম্বরের ১২ কিংবা ১৩ তারিখ এই মামলার কার্যক্রম শুরু হবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, অং সান সু চি নিজে মামলা পরিচালনা করার জন্য হেগে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও এর আগে মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধি এক সংবাদ সম্মেলনে এই মামলা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং জানিয়ে দিয়েছিলেন আইসিজের কোনো অধিকার নেই মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় হস্তক্ষেপ করার। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত পাল্টে সু চি এখন নিজেই যাচ্ছেন ওই মামলা লড়তে। এর অনেক ব্যাখ্যা হতে পারে। এক. মিয়ানমার যে আন্তর্জাতিক কমিউনিটির বাইরে যেতে পারে না, এটি তার উদাহরণ। মিয়ানমার আইসিজেতে যোগ দিয়েছিল ১৯৪৮ সালের ১৯ এপ্রিল (বাংলাদেশ যোগ দেয় ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর)। আইসিজে জাতিসংঘের একটি সংস্থা। এটি ১৯৪৫ সালের ২৬ জুন প্রতিষ্ঠিত হয়। মিয়ানমার যেহেতু জাতিসংঘের সদস্য, সেহেতু এই আদালতকে অস্বীকার করতে পারে না। দ্বিতীয়ত, অং সান সু চির সঙ্গে মিয়ানমারের অত্যন্ত ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল অং মিন হ্লিয়াংয়ের  (Aung Min Hlaing) যে দ্বন্দ্ব রয়েছে, তা আবারও প্রমাণিত হলো। ধারণা করা হয়, সু চির হেগে যাওয়ার সিদ্ধান্তের আগে সরকারি মুখপাত্র জ টয়ে (Zaw Htay) যে সংবাদ সম্মেলন করে আইসিজের বিচারপ্রক্রিয়া প্রত্যাখ্যান করেন (u.s.news. 16 November 2019), তাতে জেনারেল অং মিন হ্লিয়াংয়ের একটা ইন্ধন ছিল! মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী অং সান সু চি সে দেশের প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। এবং এটি অনেকেই জানেন জেনারেল অং মিনের আগ্রহ রয়েছে সে দেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়ার। অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি এখন ক্ষমতায়। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায় তাঁর দলের প্রতিনিধি (উইন সাইয়ান্ট) এখন সে দেশের প্রেসিডেন্ট; যদিও সু চির দল সংবিধানে পরিবর্তন আনার একটি উদ্যোগ নিচ্ছে। কিন্তু তা সফল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ফলে আইসিজের শুনানিতে সু চির অংশগ্রহণ পরোক্ষভাবে সেনাবাহিনীর ওপর এক ধরনের ‘চাপ’ প্রয়োগের একটি অংশ হতে পারে। রায়ে রাখাইনে গণহত্যার জন্য যদি সেনাবাহিনীকে অভিযুক্ত করা হয় (অনেকটা বসনিয়ার মতো), তাহলে সু চি এই রায়কে ব্যবহার করে তাঁর প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ প্রশস্ত করতে পারেন।
গাম্বিয়া আইসিজেতে যে মামলা করেছে, সে ব্যাপারে মিয়ানমারের আপত্তি কিংবা মিয়ানমার প্রথম দিকে তা প্রত্যাখ্যান করলেও আমরা বসনিয়া-হারজেগোভিনায় গণহত্যার দায়ে যে মামলা হয়েছিল, তার দৃষ্টান্ত দিতে পারি। বসনিয়ার মুসলমান, যারা বসনীয় হিসেবে পরিচিত, একসময় সাবেক যুগোস্লাভিয়ার অংশ ছিল। বসনিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় হাজার হাজার মুসলমানকে হত্যার জন্য সার্বিয়ার খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী সার্বদের দায়ী করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে আইসিজেতে অভিযোগ দায়ের করা হলে (বসনিয়ার পক্ষ থেকে দায়ের করা অভিযোগ) ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আইসিজে তাদের রায়ে ১৯৯৫ সালের ১৩ জুলাই স্রেব্রেনিচার হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। তবে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য সার্বিয়াকে আইসিজে দায়ী করেনি। আইসিজে তাদের রায়ে বলেছে, সার্বিয়া এই গণহত্যা এড়াতে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারত; কিন্তু তারা তা নেয়নি। এমনকি যারা যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করেছিল, তাদের শাস্তি দিতেও পারেনি। স্রেব্রেনিচায় আট হাজার মুসলমান নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করেছিল সার্বিয়ার আধামিলিশিয়া বাহিনী। ওই সময় মুসলমানদের রক্ষায় সেখানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী ছিল। সার্বিয়া তাদের সেখান থেকে উত্খাত করে স্রেব্রেনিচায় গণহত্যা চালায় (নিউ ইয়র্ক টাইমস, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৭)। এখন গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় কী হবে বলা মুশকিল। মিয়ানমার এই আদালতের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুললেও এখন আদালতের শুনানিতে মিয়ানমার অংশ নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। তবে এই মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি প্রশ্ন থাকলই।
আদালতের বিবেচ্য বিষয় কী হবে—এটি একটি প্রশ্ন। সাধারণত দুই দেশের মাঝে যদি কোনো ‘বিরোধ’ দেখা দেয়, আইসিজে তার সমাধান দেয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের কোনো বিরোধ নেই। একটি সংকট তৈরি হয়েছে মিয়ানমারের নাগরিকদের ফেরত নেওয়া নিয়ে। এটি আইসিজের কর্মপরিধির মধ্যে পড়ে না। আবার বসনিয়ার গণহত্যার ব্যাপারটি আইসিজে বিবেচনায় নিয়েছিল। এ ক্ষেত্রে আইসিজে তা বিবেচনায় নিতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত জায়গা হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট বা আইসিটি। রোম স্ট্যাটিউট  (Rome statute) অনুযায়ী ২০০২ সালের জুলাই মাসে আইসিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১২২টি দেশ আইসিটির সদস্য হয়েছে। বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালে চুক্তি স্বাক্ষর (২০১০ সাল থেকে কার্যকর) করলেও মিয়ানমার আইসিটিতে যোগ দেয়নি। আইসিটি গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে কিংবা যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচার করে থাকে। যেমন বলা যেতে পারে, সুদানের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ওমর আল বসির, উগান্ডার বিদ্রোহী নেতা জোসেফকনি, কঙ্গোর ভাইস প্রেসিডেন্ট জ্যা-পিয়োরে বেমবার মতো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে আইসিটি। এযাবৎ ৪৪ ব্যক্তির বিচার করেছে আইসিটি। তবে আইসিটি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার করলেও শাস্তি দেওয়া এবং বিচার নিশ্চিত করতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছিল। ওমর আল বসিরের ক্ষেত্রে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও বসির কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন কিংবা সৌদি আরব সফর করলেও তাঁকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। এমনকি আইভরি কোস্টের সাবেক ফার্স্ট লেডি সিমন গাবাগবোকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করে তাঁকে আদালতের কাছে সোপর্দ করার দাবি জানালেও আইভরি কোস্ট তাঁকে আদালতের কাছে সোপর্দ করেনি। ফলে আইসিটির সীমাবদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। রাখাইনে গণহত্যার জন্য কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে তাঁদের বিচারের কথাও বলা হয়েছে ওই তদন্ত প্রতিবেদনে। আন্তর্জাতিকভাবে এটি এখন প্রমাণিত যে রাখাইনে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে; কিন্তু অপরাধীদের বিচার হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে যা গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে নিজ দেশে ফেরত যাওয়া।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কয়েক বছর ধরে আলোচনা চলে এলেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। চীনের মধ্যস্থতায় একটি উদ্যোগও আমরা লক্ষ করেছি। কিন্তু মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছে না। আলোচনার নামে মিয়ানমার সময়ক্ষেপণ করছে। মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় কিংবা চীনের মধ্যস্থতার মাঝেও বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা একটি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফেরত যেতে চাচ্ছে না। কিন্তু মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। মিয়ানমারের কোনো ডকুমেন্টে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি পর্যন্ত নেই। তারা এদের বলছে ‘বাস্তুচ্যুত নাগরিক’। বাংলাদেশের সঙ্গে যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, তাতেও উল্লেখ আছে ‘বাস্তুচ্যুত নাগরিক’ হিসেবে। চীন একটি মধ্যস্থতার সুযোগ নিলেও এখন পর্যন্ত মিয়ানমারকে এ ব্যাপারে রাজি করাতে পারেনি। ফলে বিষয়টি ঝুলে আছে। এমনকি ভারতও মিয়ানমারের ওপর বড় কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। মিয়ানমারের স্ট্র্যাটেজি পরিষ্কার—তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া সব রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে না। একটি বড় অংশকেই তারা ফেরত নেবে না। উপরন্তু রোহিঙ্গারা নিজ বাসভূমিতে ফেরত যেতেও পারবে না। কেননা ওই সব বাসভূমির আদৌ কোনো অস্তিত্ব নেই। ওই সব বাড়িঘর এখন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই সব এলাকা এখন বিদেশিদের কাছে ইজারা দেওয়া হচ্ছে। গত ২২ নভেম্বর মিয়ানমার টাইমসের খবর, চীন রাখাইনসহ কয়েকটি অঞ্চলে কৃষিক্ষেত্রে ১৩০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। উত্খাতকৃত রোহিঙ্গা বসতিতেই এসব কৃষি খামার গড়ে তোলা হবে। আর প্রত্যাগত রোহিঙ্গাদের রাখা হবে বিভিন্ন ক্যাম্পে। তাদের বেছে নিতে হবে ক্যাম্পজীবন। সুতরাং রোহিঙ্গারা নিজ বাসভূম ছাড়া অন্যত্র, বিশেষ করে ক্যাম্পজীবন বেছে নেবে কি না, তাতে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। বলা ভালো, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে যে কমিটি গঠিত হয়েছিল, সেই কমিটির সুপারিশে রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমে থাকার কথা বলা হয়েছিল। ১৯৮২ সালের আইন অনুযায়ী  (The 1982 Citizenship Law) রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে অস্বীকার করা হয়েছে। রোহিঙ্গারা ওই আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে। আরো একটি কথা, আইসিজেতে যে ১৫ জন বিচারক রয়েছেন, তার মাঝে একজন ঝুয়ে হানকিন (Xue Hanqin) চীনের নাগরিক। তিনি কোর্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট। চীনের বিচার বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে হল্যান্ডে চীনের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বও তিনি পালন করেন। ফলে একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তিনি চীনের সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে কতটুকু যেতে পারবেন, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। আইসিজের বর্তমান প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন সোমালি নাগরিক আবদুল কাভি আহমেদ ইউসুফ।
সু চি নিজে আইসিজেতে মিয়ানমারের পক্ষে লড়াই করার কথা ঘোষণা করলেও খোদ তাঁর বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনায় একটি মামলা হয়েছে। গেল সপ্তাহেই আর্জেন্টিনার একটি আদালতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর হুমকি সৃষ্টির অভিযোগে অং সান সু চি, সেনাপ্রধান জেনারেল অং মিন হ্লিয়াংসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো। এর মধ্য দিয়ে খোদ অং সান সু চির ভাবমূর্তি যথেষ্ট ক্ষুণ্ন হয়েছে। এটি সত্য, রোহিঙ্গা গণহত্যা চালানোর সময় সরকারের মূল ব্যক্তি ছিলেন সু চি। ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে অং সান সু চির দল বিজয়ী হয়। তিনি ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির মূল ব্যক্তি। তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা কিংবা আইসিসির প্রসিকিউরেটর ফাতুউ বেনসৌদার প্রতিবেদন—সব মিলিয়ে মিয়ানমারের শীর্ষ নেতৃত্ব এখন অনেকটা দিশাহারা। তিন দিনের ব্যবধানে আলাদা আদালতে তিনটি সম্পর্কহীন মামলা দায়ের করা হয়েছে। সব কটিতেই ২০১৬ সালের অক্টোবরের পর থেকে সামরিক অভিযানের সময় সংঘাতপীড়িত রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের জন্য মিয়ানমারের সরকার ও সামরিক নেতৃত্বকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। মামলা দায়ের করার সঙ্গে সঙ্গেই যে রায় পাওয়া যাবে, তেমনটি নয়। এতে সময় লাগতে পারে। তবে মিয়ানমার যদি তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে ও তাদের যথাযথ পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়, তাহলে আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশটির ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও ফিরে পাওয়া যাবে। উদ্যোগটি তাই নিতে হবে মিয়ানমারকেই।
Daily Jugantor

২৬ নভেম্বর, ২০১৯ ০০




মন্তব্য