রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

করোনা ভাইরাস নিয়ে নানা কথা


advertisement
করোনা ভাইরাস বা কভিড-১৯ এখন বিশ্ব মিডিয়ায় অন্যতম আলোচিত একটি বিষয়। এটি ভাইরাসজনিত একটি মারাত্মক রোগ, যা চীনের উহান শহরে প্রাদুর্ভাব ঘটালেও ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দুটি সম্ভাবনাকে সামনে নিয়ে আসছে। এক. এটা এক ধরনের জীবাণু অস্ত্র, যা বিশেষ ল্যাবে তৈরি হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা ল্যাব থেকে ‘লিক’ হয়ে যায়। অভিযোগ আছে, চীন উহান শহরের কোনো একটি ল্যাবে এ ধরনের জীবাণু অস্ত্র তৈরি করছিল। দুই. আবার এমন আশঙ্কার কথাও বলা হচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের জীবাণু অস্ত্র তৈরি করে তা কৌশলে চীনে ছড়িয়ে দেয়। উদ্দেশ্য পরিষ্কারÑ চীনের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করা। গেল ডিসেম্বরে চীনের হুবাই প্রদেশের রাজধানী উহানে প্রথম করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। এর পর দুমাসের বেশি সময় পার হয়ে যাওয়ার পর এবং দুহাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর জানা গেলেও এখন অবধি করোনা ভাইরাসকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। এখনো নতুন নতুন আক্রান্ত রোগীর খবর ছাপা হচ্ছে সংবাদপত্রে। করোনা ভাইরাসে বিদেশিদের মৃত্যুর খবরও পত্রিকায় এসেছে। চীনের ভূখ- ছাড়িয়ে এ ভাইরাসটি এখন ছড়িয়ে পড়ছে অন্যান্য দেশে।
করোনা ভাইরাস এখন এক আতঙ্কের নাম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। এই মুহূর্তে এটা এখন আর শুধু চীনের কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা নয়, এটা একটা বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। অক্সফোর্ডের একজন গবেষকের মতে, চলতি বছরের শেষের দিকে এর কারণে বিশ্ব জিডিপি ১ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হবে (এশিয়া টাইমস, ২০ ফেব্রুয়ারি)। আর ‘গ্লোবাল ভয়েজ’-এর মতে, উহানের একটি কাঁচা ও মৎস্যবাজার থেকে যে ভাইরাসের জন্ম হয়েছে বলে ধরা হয়, তা শুধু চীনই নয়, পুরো বিশ্বব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। কভিড-১৯ এর ব্যাপক প্রাদুর্ভাব এবং তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা খোদ চীনের রাজনৈতিক কাঠামোয় বড় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। ২০০২-২০০৩ সালে চীনে সার্সের প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছিল। এখন কভিড-১৯ তাকেও ছাড়িয়ে গেছে। একটি বড় সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব।
করোনা ভাইরাসের কারণে আজ যে চীনেরই ক্ষতি হলো তেমনটি নয়, বরং দেখা যাবে বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়ও এর একটা প্রভাব পড়বে। যেসব দেশের সঙ্গে চীনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে, প্রতিটি দেশে এর প্রভাব পড়বে। বিশ্ব জিডিপির পাঁচ ভাগের এক ভাগ চীনের। চীন বিশ্বের অন্যতম রপ্তানিকারক দেশ। চীনা পণ্যের ওপর, চীনা কাঁচামালের ওপর অনেক দেশ নির্ভরশীল। বাংলাদেশের মতো দেশও তার গার্মেন্টসশিল্পের কাঁচামালের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল। এখন সেই সরবরাহে যদি বিঘœ ঘটে, তা হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পে বিপর্যয় আসতে বাধ্য। বাংলাদেশের রপ্তানি খাতও এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গত এক মাসের ওপরে চীনের উৎপাদন ব্যবস্থায় বিপর্যয় ঘটেছে, রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যা বিশ্ব অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও আঘাত হানবে। আমরা একটা পরিসংখ্যান দিয়ে বোঝাতে চেষ্টা করব যে, চীনের রপ্তানি খাত কীভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে। ২০১৮ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক (চীন থেকে আমদানির হিসাবে) নিম্নরূপ : যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির ১৯ দশমিক ২ ভাগ সম্পন্ন হয় চীনের সঙ্গে (৪৭৯.৭ বিলিয়ন ডলার)। পরের অবস্থান হংকংয়ের। হংকং আমদানি করে (চীন থেকে) ৩০৩ বিলিয়ন ডলার (১২.১ ভাগ)। তৃতীয় অবস্থানে আছে জাপান, ১৪৭.২ বিলিয়ন ডলার, ৫.৯ ভাগ। চতুর্থ অবস্থানে দক্ষিণ কোরিয়া, ১০৯ বিলিয়ন (৪.৪ ভাগ)। পঞ্চম অবস্থানে ভিয়েতনাম, ৮৪ বিলিয়ন (৩.৪ ভাগ)। ষষ্ঠ অবস্থানে জার্মানি ৭৭.৯ বিলিয়ন (৩.১ ভাগ)। 
করোনা ভাইরাসের কারণে চীনের রপ্তানি খাত এখন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যে ছয়টি দেশ চীনের ওপর নির্ভরশীল, তাদের এখন চীনের বিকল্প দেশ খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু কাজটি সহজ নয়। আরও একটি তথ্য দিই। ইতোমধ্যে কোনো কোনো গণমাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে শ্লথ গতি আসবে, তার একটি পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে। প্রথম চার মাসের বিশ্ব জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে প্রাক্কলন করা হয়েছে তা অনেকটা এ রকম : হংকং : মাইনাস ১.৭৩ ভাগ, বিশ্ব : মাইনাস ০.৪১৬ ভাগ, দক্ষিণ কোরিয়া : মাইনাস ০.৪০৮ ভাগ, যুক্তরাষ্ট্র : মাইনাস ০.১১৬ ভাগ, জাপান : মাইনাস ০.২২৩ ভাগ, জার্মানি : মাইনাস ০.১৬৭ ভাগ। অর্থাৎ বিশ্বের শীর্ষ শিল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতিটির ক্ষেত্রে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ‘মাইনাস’ প্রাক্কলন করা হয়েছে (ছতঊজঙ ১০ ফেব্রুয়ারি)। অভিযোগ আছে, করোনা ভাইরাসটি একটি জাতিগত বায়ো উইপন। উহানে যারা মারা গেছে তারা সবাই চৈনিক। তবে সেখানে একজন মার্কিন নাগরিকের মৃত্যুর খবরও ছাপা হয়েছে। এখন ওই মার্কিন নাগরিকের মাধ্যমেই কী এই ভাইরাসটি ছড়াল? যদিও বলা হচ্ছে, ৩১ ডিসেম্বর (২০১৯) চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের একটি সামুদ্রিক বাজারে প্রথম করোনা ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। আবার বলা হচ্ছে, বাদুড়জাতীয় প্রাণী থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি। এর পেছনে আদৌ কোনো ‘ষড়যন্ত্র’ আছে কিনা কিংবা বাইরের কোনো ‘শক্তি’র কোনো ইন্ধন আছে কিনা তা কোনো চীনা সংবাদপত্রে এখনো প্রকাশিত হয়নি। কিংবা চীনের পক্ষ থেকেও এ ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করা হয়নি। তবে এটা তো বলতেই হবে, চীন একটি বড় শক্তি। ভাইরাস চিহ্নিত করার ব্যর্থতা কিংবা তথাকথিত ‘ষড়যন্ত্র’ রোধ করার ব্যর্থতা বিশ্বে চীনের গ্রহণযোগ্যতা অনেকাংশে হ্রাস করবে। হয়তো চীন এটা বিবেচনায় নিতে পারে! তবে কতগুলো বিষয় এখানে বিবেচনায় নিতে হবে। এক. চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ এবং শেষ মুহূর্তে এই বাণিজ্যযুদ্ধ এড়াতে চীন-যুক্তরাষ্ট্র একটি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের পর পরই চীনের উহানে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটল। চীনের অর্থনীতিকে দুর্বল করা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আরও বেশি নির্ভরশীল করতে চীনকে বাধ্য করার উদ্দেশ্যেই এই ভাইরাস তথা জৈব অস্ত্র ব্যবহার করাÑ ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্বের’ সমর্থকরা এভাবে এর ব্যাখ্যা করতে পারেন। দুই. উহান কেন? উহানকে (হুবাই প্রদেশের রাজধানী) বলা হয় ‘চিকাগো অব দি ইস্ট’। শিল্প তথা গাড়ির খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহের কেন্দ্রস্থল হচ্ছে উহান। ‘হাইটেক’শিল্পের যন্ত্রাংশও জোগান দেয় উহান। ঞংরহমযঁধ টহরমৎড়ঁঢ় (একটি সেমিকনডাক্টর কোম্পানি) ইঙঊ ঞবপযহড়ষড়মু মৎড়ঁঢ়-এর মতো বিশ্ব বিখ্যাত কোম্পানির কারখানা উহানে অবস্থিত। স্মার্টফোন ঢরধড়সর’র নিজস্ব অৎঃরভরপরধষ ওহঃবষষরমবহপব উবাবষড়ঢ়সবহঃ সেন্টার রয়েছে উহানে। চীনের অটো শিল্পের সদর দপ্তর এই উহানে। অত্যাধুনিক বাস ও যানবাহন এখানে তৈরি হয়। টেসলার (ইলেকট্রিক কার) যন্ত্রাংশ এখানে তৈরি হয়। নিক্কি এশিয়ার রিভিউর মতে, হুবাই প্রদেশে যেসব কারখনা আছে, সেখানে ২০১৮ সালে ২.৪২ মিলিয়ন অর্থাৎ ২৪ লাখ ২ হাজার গাড়ি তৈরি হয়েছিল, যা কিনা ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও থাইল্যান্ডে যে গাড়ি তৈরি হয়, তার চেয়ে বেশি। অর্থাৎ মেসেজটি পরিষ্কারÑ অর্থনীতিতে বিপর্যয় আসছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই বিপর্যয় মোকাবিলায় বিশ্ব কতটুকু কী করতে পারবে? বিশ্ব এর জন্য প্রস্তুত ছিল না। একটা ভাইরাস (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যার নামকরণ করেছে ঈঙঠওউ-১৯) যে কত বড় বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, নভেল করোনা ভাইরাস এর বড় প্রমাণ। শিল্পোন্নত দেশগুলো হয়তো এ বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারবে। তাদের সেই প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক সামর্থ্য রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ? বাংলাদেশের আরএমজি সেক্টর এর মোকাবিলা কীভাবে করবে, সে ব্যাপারে দ্রুত একটি টাস্কফোর্স গঠন করা জরুরি। করোনা ভাইরাসকে একটি সাধারণ রোগ বা ভাইরাসজনিত রোগ ভাবলে আমরা ভুল করব। এতে মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়বে। আর এই ভাইরাসের কারণে চীনের পর আঘাত হেনেছে সিঙ্গাপুরেও। ফলে এই ভাইরাসটি একটি জৈব মারণাস্ত্র, কৃত্রিমভাবে জর্জিয়ার এক ল্যাবে এটি তৈরি করা হয়েছে, যা শুধু এশিয়ার মানুষদেরই আক্রান্ত করতে পারেÑ এই ধারণাটি শক্তিশালী হবে এখন।
বলা ভালো, জীবাণু অস্ত্র মানবসভ্যতার জন্য এক ধরনের হুমকি। এই হুমকি পারমাণবিক বিপর্যয়ের চেয়েও ভয়াবহ। জীবাণু অস্ত্রের মাধ্যমে মানবশরীরে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া ফাংগি প্রবেশ করিয়ে তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়। এটা এতই মারাত্মক যে, এর মাধ্যমে পুরো মানবসভ্যতা ধ্বংস বা বিলুপ্ত করা সম্ভব! এর ভয়াবহতা উপলব্ধি করেই বিশ্ব ১৯৭২ সালে ইরড়ষড়মরপধষ বিধঢ়ড়হং পড়হাবহঃরড়হ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। ১০৯টি দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল যা ১৯৭৫ সালের মার্চ থেকে কার্যকর রয়েছে (বর্তমানে ১৮২টি দেশ এই চুক্তিভুক্ত)। যুক্তরাষ্ট্র ওই চুক্তির স্বাক্ষরকারী দেশ এবং ১৯৭৫ সালে চুক্তিটি অনুমোদনও করে। চীন অনুমোদন করে ১৯৮৪ সালে আর বাংলাদেশ ১৯৮৫ সালে। কিন্তু তার পরও অনেক অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে, যুক্তরাষ্ট্র গোপনে বিভিন্ন ল্যাবে এই জীবাণু অস্ত্র তৈরি করছে। চুক্তির ১নং ধারা অনুযায়ী কোনো দেশ যে কোনো অবস্থাতেই হোক না কেন, জীবাণু অস্ত্র সংগ্রহ করতে পারবে না। ধারা ২-এ এ ধরনের অস্ত্র ধ্বংস কিংবা ধারা ৩-এ অস্ত্রের ট্রান্সফার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একটি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এ ধরনের অস্ত্র উৎপাদন, গবেষণা, ট্রান্সফার যখন নিষিদ্ধ তখন যুক্তরাষ্ট্র গোপনে এই ধরনের অস্ত্র উৎপাদন ও গবেষণায় নিজেদের নিয়োজিত করেছে। ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ‘দি প্রজেক্ট ফর অ্যা নিউ অ্যামেরিকান সেঞ্চুরি (চঘঅঈ) বলেছে, advanced forms of biological warfare that can target specific genotypes may transform biological warfare from the realm of teror to a politically useful tool পরিষ্কার বোঝা যায়, মার্কিন কনজারভেটিভদের উদ্দেশ্য কী। তাই পেপে এসকোবার (চবঢ়ব ঊংপড়নধৎ) ংঃৎধঃবমরপ পঁষঃঁৎব-এ একটি প্রবন্ধে (No weapons left behind : the american Hybrid War on China February 21, 2020) মন্তব্য করেছেন এভাবে Theres no question coronavirus so far has been a heaven sent politically useful tool, reaching with minimum investment the desired targets of maximized U.S global power-even it fleetingly enhanced by a non-stop propaganda offensive- and china relatively isolated with its economy semi paralyzed. এই মন্তব্যের পেছনে সত্যতা কতটুকু আছে তা হয়তো ভবিষ্যৎই বলতে পারবে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা বিশ্ব উপলব্ধি করতে পারছে। চীনের অর্থনীতিতে শ্লথগতি এসেছে। ঝুঁকির মুখে আছে চীনের অর্থনীতি 

Dainik Amader Somoy
24.02.2020

1 comments:

  1. In this manner my friend Wesley Virgin's adventure begins in this SHOCKING AND CONTROVERSIAL video.

    Wesley was in the military-and soon after leaving-he found hidden, "self mind control" tactics that the government and others used to get anything they want.

    THESE are the exact same secrets lots of famous people (notably those who "became famous out of nowhere") and the greatest business people used to become wealthy and successful.

    You've heard that you utilize only 10% of your brain.

    Mostly, that's because most of your brain's power is UNCONSCIOUS.

    Maybe this thought has even occurred INSIDE OF YOUR very own brain... as it did in my good friend Wesley Virgin's brain about 7 years back, while riding a non-registered, beat-up bucket of a car without a driver's license and with $3 in his bank account.

    "I'm absolutely frustrated with living check to check! When will I finally succeed?"

    You've taken part in those conversations, ain't it so?

    Your success story is going to be written. You need to start believing in YOURSELF.

    WATCH WESLEY SPEAK NOW

    ReplyDelete