রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

পররাষ্ট্রনীতির চ্যালেঞ্জগুলো




পররাষ্ট্রনীতির চ্যালেঞ্জগুলো
আগামী ২৬ মার্চ বাংলাদেশ যখন তার স্বাধীনতার ৫০ বছরে পা দেবে তখন চারটি বিষয় গুরুত্ব পাবে বেশি, যা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমটি ভারতের এনআরসি ও সিএএ নিয়ে বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়া ও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক। দ্বিতীয়টি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজের রায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্ক। তৃতীয়টি জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ক্ষতিপূরণ আদায়ে ব্যর্থতা। চতুর্থটি হচ্ছে করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণে বাংলাদেশের উদ্যোগ। ভারতে এনআরসি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস) ও সিএএর (সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট) কারণে ভারতজুড়ে যে বড় ধরনের গণ-আন্দোলন গড়ে উঠছে তার প্রভাব বাংলাদেশে এসেও লেগেছে। আসামে এনআরসির কারণে প্রায় ১৯ লাখ মানুষ (বিবিসির মতে) ভারতের নাগরিক অধিকার হারিয়েছে। ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট আসামের নাগরিকপঞ্জির যে তালিকা প্রকাশ করা হয়, তাতে বাংলাভাষী পাঁচ লাখ হিন্দু ও সাত লাখ মুসলমান ভারতের নাগরিকত্ব হারায়। এই নাগরিকপঞ্জি পশ্চিমবঙ্গে বড় বিতর্ক তোলে এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এনআরসির বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা যায়। চলতি ২০২০ সালে এই এনআরসি পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে অন্যতম একটি ইস্যু হয়ে থাকবে। বাংলাদেশে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এ কারণে, বলা হচ্ছে নাগরিকত্ব হারানো প্রায় ১৯ লাখ মানুষের সবাই বাংলাদেশি এবং তারা বাংলাদেশ থেকে গিয়ে আসামে অবৈধভাবে বসবাস করে আসছিল। কিছু ক্ষেত্রে ২০১৯ সালে ‘পুশ ইনে’র ঘটনাও ঘটেছে। কিছু বাংলাভাষী মানুষ যশোরের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে—এমন খবরও বিদেশি গণমাধ্যমে পরিবেশিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি ‘দুর্বল’ অবস্থানে গেছে বলে মনে হয়। এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশকে কোনো চিন্তা না করতে আশ্বাস দিলেও ২০১৯ সালে বাংলাদেশ বেশ বড় ধরনের অস্বস্তিতেই ছিল। একপর্যায়ে বাংলাদেশের দুজন মন্ত্রী তাঁদের ভারত সফর স্থগিত করেন। তখন এর সঙ্গে এনআরসির একটি যোগসূত্র আছে বলেও কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেছেন, যদিও সরকারের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে। এনআরসির বিষয়টি একটু পুরনো। ২০১৩ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এই নাগরিকপঞ্জি নিয়ে একটি রায় দেন। ওই রায় অনুসরণ করেই আসামে নাগরিক তালিকা তৈরি করা হয়। তবে এটি বিতর্ক বাড়ায় যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর লোকসভায় ঘোষণা করেন, ভারতের সব রাজ্যে এনআরসি করা হবে। এর পরই পশ্চিমবঙ্গে এনআরসিবিরোধী বড় আন্দোলন গড়ে ওঠে। এনআরসি নিয়ে বিতর্কের রেশ ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই ভারতের সংসদে সিএএ পাস হয়। এটি বর্তমানে একটি আইন। এই আইনবলে উপমহাদেশের তিনটি দেশের (বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান) মুসলমান বাদে অন্যান্য ধর্মের নাগরিকদের ভারতীয় নাগরিকত্ব অর্জনের পথ সহজ করা হয়। মুসলমানদের নাগরিকত্ব অর্জনে বঞ্চিত রাখা হয়। এই আইনও ভারতে বড় বিতর্ক তৈরি করে।
এনআরসি ও সিএএ ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা নেই এবং বাংলাদেশ কোনো মন্তব্যও করতে পারে না। তবে অত্যন্ত ক্ষমতাবান অমিত শাহ যখন বাংলাদেশিদের ‘ছারপোকা’র সঙ্গে তুলনা করেন এবং প্রকাশ্যে জনসভায় বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য দেন তখন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে তা প্রভাব ফেলে বৈকি। চলতি বছর এই ইস্যু দুটি দুই দেশের সম্পর্কের জন্য একটি ‘টেস্ট কেস’। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি এনআরসি ও সিএএর ব্যাপারে শক্ত অবস্থানে না যায়, তাহলে তা এক ভুল ‘সিগন্যাল’ দেবে। বাংলাদেশ ‘দ্বিতীয় আরেকটি রোহিঙ্গা সংকটের’ মুখোমুখি হতে যাচ্ছে কি না সে ভাবনা এখন অনেকের। ভারতকে আস্থায় নিতে খোদ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের উদ্যোগটিই এখন বড়। এ ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎপরতা নেই বললেই চলে। বাংলাদেশের জন্য আরো চিন্তার কারণ দুটি—রোহিঙ্গা সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যা। এ সমস্যা দুটি ২০২০ সালে আলোচিত হতে থাকবে বারবার। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অর্থায়নের ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ কপ-২৫ সম্মেলনও শেষ হলো গত ডিসেম্বরে কোনো রকম অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি ছাড়াই। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা।
অক্সফামের এক প্রতিবেদনে একটি উদ্বেগজনক সংবাদ ছাপা হয়েছিল কয়েক দিন আগে। এতে বলা হয়েছে, প্রতি দুই সেকেন্ডে একজন মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। এটি একটি উদ্বেগের বিষয়। বাংলাদেশ বারবার ‘কপ’ সম্মেলনে এই বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের ব্যাপারে তার উদ্বেগের কথা বিশ্ব কমিউনিটিকে জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর শত শত মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হয়ে রাজধানীতে বস্তিবাসী হচ্ছে। সাগরে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় তারা গৃহহীন হয়েছে। তাদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল বাংলাদেশ। স্পেনে প্রধানমন্ত্রী আবারও সেই আহ্বান জানিয়েছিলেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এটিই হচ্ছে আসল কথা। যুক্তরাষ্ট্র মূলধারায় না থাকলেও আজ বিশ্বসম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। কপ-২১ সম্মেলনে যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল, তা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত আজ বিশ্ববাসীর। বাংলাদেশের একার পক্ষে বিশ্বের উষ্ণতা রোধকল্পে একক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। তবে বাংলাদেশ কতগুলো দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ২০ কোটি গাছ লাগানো, সোলার এনার্জি বাধ্যতামূলক করা। নবায়নযোগ্য এনার্জির ব্যবহার বাড়ানো, কয়লাচালিত বিদ্যুতের ব্যবহার হ্রাস করা। পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখার স্বার্থে যানবাহন চলাচল সীমিত করা এবং রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহরে ‘দিল্লি মডেল’ অনুসরণ করা ইত্যাদির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশ একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। দুঃখজনক হলেও সত্য, পরিবেশ বিপর্যয় রোধকল্পে পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের কোনো উদ্যোগ চোখে লাগার মতো নয়।
রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ আইসিজের একটি রায় পেয়েছে। রায়টি প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার। চূড়ান্ত রায়টি কী হবে, আমরা তা জানি না। তবে সেই সিদ্ধান্ত যে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে এই মুহূর্তে কোনো সাহায্য করবে না, তা বলাই যায়। এই সমস্যার সমাধান নিহিত রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দানের মধ্য দিয়ে। ১৯৮২ সালে মিয়ানমার যে আইন প্রণয়ন করেছিল, তাতে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। গেল প্রায় তিন বছর রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যায়নি। এ ক্ষেত্রে আমরাও বহির্বিশ্বে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো শক্ত অবস্থানে যেতে পারিনি।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কয়েক বছর ধরে আলোচনা চলে এলেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। চীনের মধ্যস্থতায় একটি উদ্যোগও আমরা লক্ষ করেছি। কিন্তু মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছে না। আলোচনার নামে মিয়ানমার সময়ক্ষেপণ করছে। মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় কিংবা চীনের মধ্যস্থতা সত্ত্বেও বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা একটি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফেরত যেতে চাচ্ছে না। কিন্তু মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। মিয়ানমারের কোনো ডকুমেন্টে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি পর্যন্ত নেই। তারা এদের বলছে ‘বাস্তুচ্যুত নাগরিক’। বাংলাদেশের সঙ্গে যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, তাতেও উল্লেখ আছে বাস্তুচ্যুত নাগরিক হিসেবে। চীন একটি মধ্যস্থতার সুযোগ নিলেও এখন পর্যন্ত মিয়ানমারকে এ ব্যাপারে রাজি করাতে পারেনি। ফলে বিষয়টি ঝুলে আছে। এদিকে ভারতও মিয়ানমারের ওপর বড় কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। মিয়ানমারের স্ট্র্যাটেজি পরিষ্কার—তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া সব রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে না। একটি বড় অংশকেই তারা ফেরত নেবে না। উপরন্তু রোহিঙ্গারা নিজ বাসভূমিতেও ফেরত যেতে পারবে না। কেননা ওই সব বাসভূমির আদৌ কোনো অস্তিত্ব নেই। ওই সব বাড়িঘর এখন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই সব এলাকা এখন বিদেশিদের কাছে ইজারা দেওয়া হচ্ছে। গত ২২ নভেম্বর (২০১৯) মিয়ানমার টাইমসের খবর : চীন রাখাইনসহ কয়েকটি অঞ্চলে কৃষিক্ষেত্রে ১৩০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। উত্খাতকৃত রোহিঙ্গা বসতিতেই এসব কৃষি খামার গড়ে তোলা হবে। আর প্রত্যাগত রোহিঙ্গাদের রাখা হবে ক্যাম্পে। তাদের বেছে নিতে হবে ক্যাম্প জীবন। সুতরাং রোহিঙ্গারা নিজ বাসভূমি ছাড়া অন্যত্র, বিশেষ করে ক্যাম্প জীবন বেছে নেবে কি না, তাতে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। বলা ভালো, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে যে কমিটি গঠিত হয়েছিল, সেই কমিটির সুপারিশে রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমে পুনর্বাসনের কথা বলা হয়েছিল। সে সম্ভাবনাও এখন ক্ষীণ।
এই যখন পরিস্থিতি তখন এলো করোনাভাইরাসের খবরটি। গত ৮ মার্চের খবর, বাংলাদেশে তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর খবর পাওয়া গেছে। করোনাভাইরাস নিয়ে বাংলাদেশ বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এডিবির মতে, এ ভাইরাসের আঘাতে বিশ্বজুড়ে সর্বনিম্ন ক্ষতির পরিমাণ ৭৭ মিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশের ক্ষতি হয়েছে ৮৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এতে বাংলাদেশের জিডিপি কমবে ০.০১ শতাংশের মতো। করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের বাণিজ্যে এর প্রভাব পড়ছে। করোনাভাইরাস দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
ফলে বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়ে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। জনশক্তি খাতে আয় কমছে। আরএমজি সেক্টরও রয়েছে ঝুঁকির মুখে। এ সংকট মোকাবেলায় পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কী ভূমিকা নেয়, সেটিই দেখার বিষয়।
স্পষ্টতই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির জন্য বিষয়গুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। জাতি যখন মুজিব জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, ঠিক তখনই ওপরে উল্লিখিত বিষয়গুলো আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক বেশি। দায়িত্ব পালনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা যদি শৈথিল্য প্রদর্শন করেন, তাহলে উন্নত রাষ্ট্র গঠনের যে প্রত্যাশা, সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে আমরা ব্যর্থ হব।
Kalerkontho
12.03.2020

0 comments:

Post a Comment