Prof Dr Tareque Shamsur Rehman
In his Office at UGC Bangladesh
Prof Rahman With US Congressman Joseph Crowley
here you go!!!
Prof Dr Tareque Shamsur Rahman
During his stay in Germany
Prof Dr Tareque Shamsur Rahman
At Fatih University, Turkey during his recent visit.
Prof Dr Tareque Shamsur Rehman
In front of an Ethnic Mud House in Mexico
কতদূর যেতে পারবেন পুতিন?
18:17
No comments
আবার মমতার মিথ্যাচার
19:49
No comments
মমতা ব্যানার্জি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। বাংলাদেশবিদ্বেষী মমতা ব্যানার্জি আবারো একটি মিথ্যাচার করলেন। বললেন, 'পশ্চিমবঙ্গকে না জানিয়ে ফারাক্কায় জল দেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়_ তিস্তায় যে পানি দেবেন না, সে কথাটা জানাতেও ভোলেননি তিনি। বলেছেন নিজের ঘরে জল নেই, প্রতিবেশীকে জল দিই কীভাবে।' মমতার এই কথাবার্তা পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী জনসভায় বললেও, তা বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে। ৭ এপ্রিল শুরু হচ্ছে ভারতের লোকসভার নির্বাচন। এ ধরনের হালকা ও চটুল কথাবার্তা বলে বাহবা পাওয়া যায়। কিন্তু এ ধরনের চটুল কথাবার্তার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে তিনি অতীতেও মিথ্যাচার করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এখনো দিচ্ছেন। এতে তিনি একদিকে অবশ্য সফল_ ভোট পেয়েছেন। মানুষ ভোট দিয়ে তাকে মুখ্যমন্ত্রী করেছে। কিন্তু বাস্তবতা বলে ভিন্ন কথা_ তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী। এই নদীর পানিবণ্টন আন্তর্জাতিক নীতিমালার ভিত্তিতে হতে হবে। মমতার 'পাগলামো'র জন্য পানিবণ্টন বন্ধ থাকতে পারে না। পানি দেয়া, না দেয়ার সঙ্গে তার বা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। বাংলাদেশ পানি পাবে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে। আর পশ্চিমবঙ্গ যদি বাধা দেয়, তার দায়ভার গিয়ে বর্তাবে ভারত সরকারের ওপর। এতে আন্তর্জাতিক আসরে ভারতের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে থাকবে। ভারত বিশ্বসভায়, বিশেষ করে জাতিসংঘের স্থায়ী পরিষদ স্থায়ী সদস্য হতে চায়। এ ক্ষেত্রে প্রতিবেশীর প্রতি তার আচরণ যদি ন্যায়সঙ্গত না হয়, যা জাতিসংঘের আইনে বলা আছে, তাহলে তার 'নেতৃত্ব' প্রশ্নের মুখে থাকবে। এমনিতেই ভারতের আচরণ নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলো এ ধরনের অস্বস্তিতে থাকে। এ ক্ষেত্রে তিস্তায় পানি না দিয়ে উজানে পানি প্রত্যাহার করা হলে, তা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে ঠেলে দেবে মরুময়তার দিকে। পানির অভাবে যে সঙ্কটের সৃষ্টি হবে, তা বাংলাদেশকে ঠেলে দেবে দীর্ঘস্থায়ী অস্থিতিশীলতার দিকে।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে তিস্তার পানিবণ্টনের বিষয়টি আমাদের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। আমাদের নীতিনির্ধারকরা যদি বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখেন, তাহলে এ দেশ, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ একটি বড় ধরনের সঙ্কটে পড়বে। খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে থাকবে। এমনকি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এতে বাড়বে। মনে রাখতে হবে তিস্তায় পানি প্রাপ্তি আমাদের ন্যায্য অধিকার। আন্তর্জাতিক আইন আমাদের পক্ষে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব আমাদের অধিকারকে নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে মমতা ব্যানার্জির আপত্তি এটা আমাদের বিষয় নয়। আমরা এটা বিবেচনায় নিতে চাই না। আমাদের অধিকার, যা আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত, তা নিশ্চিত করবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এখানে বলা ভালো সিকিম হয়ে ভারতের দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি হয়ে পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ারের সমভূমি দিয়ে চিলাহাটি থেকে চার-পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার উত্তর গাড়িবাড়ির কাছে ডিমলা উপজেলার ছাতনাই দিয়ে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। ছাতনাই থেকে এ নদী নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, লালমনিরহাটের সদর, পাটগ্রাম, হাতিবান্দা, কালীগঞ্জ, রংপুরের কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের বাজারহাট, উলিপুর হয়ে চিলমারীতে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে। ডিমলা থেকে চিলমারী এ নদীর বাংলাদেশ অংশের মোট ক্যাচমোট এরিয়া প্রায় ১ হাজার ৭১৯ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী কমিশন গঠনের পর তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টনে শতকরা ৩৬ ভাগ বাংলাদেশ ও ৩৯ ভাগ ভারত ও ২৫ ভাগ নদীর জন্য সংরক্ষিত রাখার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু কোনো চুক্তি হয়নি। পরে ২০০৭ সালের ২৫, ২৬, ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ তিস্তার পানির ৮০ ভাগ দুই দেশের মধ্যে বণ্টন করে বাকি ২০ ভাগ নদীর জন্য রেখে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। ভারত সে প্রস্তাবে রাজি হয়নি। এখন যুক্ত হয়েছে মমতার আপত্তি। বাংলাদেশের কোনো প্রস্তাবের ব্যাপারেই মমতার সম্মতি পাওয়া যায়নি। এখানে আরো একটা বিষয় বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। তিস্তার পানিবণ্টনে সিকিমকে জড়িত করারও প্রয়োজনীয়তা পড়েছে। কেননা সিকিম নিজে উজানে পানি প্রত্যাহার করে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। ফলে তিস্তায় পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে দিন দিন। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে কৃষকদের কাছে তিস্তার পানির চাহিদা বেশি। সেচ কাজের জন্য তাদের প্রচুর পানি দরকার। এটা মমতার জন্য একটি 'রাজনৈতিক ইস্যু'।
তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী। এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ এককভাবে পানি প্রত্যাহার করতে পারে না। আন্তর্জাতিক নদীর পানি ব্যবহারসংক্রান্ত ১৯৬৬ সালের আন্তর্জাতিক আইন সমিতির হেলসিংকি নীতিমালার ৪ ও ৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে প্রতিটি অববাহিকাভুক্ত রাষ্ট্র অভিন্ন নদীগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই অন্য রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রয়োজনকে বিবেচনায় নেবে। এখন পশ্চিমবঙ্গের পানি প্রত্যাহার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রয়োজনকে বিবেচনায় নেয়নি। হেলসিংকি নীতিমালার ১৫ নাম্বার অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে প্রত্যেকটি তীরবর্তী রাষ্ট্র তার সীমানায় আন্তর্জাতিক পানিসম্পদের ব্যবহারের অধিকার ভোগ করবে যুক্তি ও ব্যয়ের ভিত্তিতে। কিন্তু এই 'যুক্তি ও ব্যয়ের' ভিত্তিটি উপেক্ষিত থাকে যখন পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। ১৯৯২ সালের ডাবলিন নীতিমালার ২ নাম্বার নীতিতে বলা হয়েছে পানি উন্নয়নের ও ব্যবস্থাপনায় অবশ্যই সবার অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। তিস্তার পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এটা হয়নি। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ 'জলপ্রবাহ কনভেনশন' নামে একটি নীতিমালা গ্রহণ করে। এই নীতিমালার ৬ নাম্বার অনুচ্ছেদে পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে 'যুক্তি ও ন্যায়পরায়ণতার' কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ব্যবহার, অর্থাৎ এমনভাবে তিস্তার পানির ব্যবহার এই 'যুক্তি ও ন্যায়পরায়ণতা'র ধারণাও সমর্থন করে না। আমরা আরো আন্তর্জাতিক আইনের ব্যাখ্যা দিতে পারব, যেখানে বাংলাদেশের অধিকারকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিশেষ করে পরিবেশসংক্রান্ত জীববৈচিত্র্য কনভেনশনের ১৪ নাম্বার অনুচ্ছেদ, জলভূমিবিষয়ক রামসার কনভেনশনের ৫ নাম্বার অনুচ্ছেদ প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবেশের প্রভাব এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীগুলোর সংরক্ষণের যে কথা বলা হয়েছে, তা রক্ষিত হচ্ছে না। এখানে সমস্যাটা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের। ভারতের ফেডারেল কাঠামোয় রাজ্য কিছু সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। কিন্তু কোনো রাজ্য (এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ) এমন কিছু করতে পারে না, যা আন্তর্জাতিক আইনের বরখেলাপ ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে। সমস্যাটা ভারতের। পশ্চিমবঙ্গকে আশ্বস্ত করার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। আমরা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ীই আমাদের পানির হিস্যা নিশ্চিত করতে চাই।
তিস্তায় পানির প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ায়, বাংলাদেশ এখন বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে থাকল। গত এক সপ্তাহে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে নানা সংবাদ ছাপা হয়েছে। এখানে পানি পাওয়ার কথা ৫ হাজার কিউসেক তা এখন এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫০০ কিউসেক অর্থাৎ দশ ভাগের এক ভাগ পানি পেয়েছে। এর ফলে উত্তরবঙ্গের ১২ উপজেলার ৬০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির বোরো ধান পানির অভাবে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাবে। আর তিস্তায় যে বাংলাদেশ পানি পাবে না, তা স্পষ্ট করেছেন ভারতের নেতারা। ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে ২১ মার্চ নয়াদিলি্ল গিয়েছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক। সেখানে তিনি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী থেকে শুরু করে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র সচিব সবার সঙ্গেই তার কথা হয়েছে। তারা স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন 'লোকসভা নির্বাচনের আগে আর তিস্তা নিয়ে আলোচনা নয়। এটা কূটনৈতিক ভাষা। আদৌ তিস্তা নিয়ে কোনো চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ১. নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিজেপির নেতৃত্বে একটি কোয়ালিশন সরকার গঠিত হতে পারে, যারা বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল থাকবে আঞ্চলিক দলগুলোর ওপর, ২. মমতার তৃণমূল কংগ্রেস তাই ফ্যাক্টর হবে। তাদের পক্ষে কেন্দ্রীয় সরকারে যোগ দেয়া নিশ্চিত নয়, ৩. বিকল্প সম্ভাবনা হচ্ছে তৃতীয় জোটের (ফেডারেলিস্ট ফ্রন্ট) নেতৃত্বে একটি সংখ্যালঘু সরকার, যেমনটি অতীতে হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে মমতা হবেন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
২০১১ সালে মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও শুধু মমতার আপত্তির কারণে কোনো চুক্তি হয়নি। আগামীতেও তাই হবে। মমতা কোনো চুক্তি করতে দেবেন না। সুতরাং বাংলাদেশের জন্য পথ একটিই_ আন্তর্জাতিক আসরে বিষয়টি তুলে ধরা। শুধু ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ যদি নিশ্চুপ থাকে এবং যদি উত্তরবঙ্গের কৃষকদের পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, তা হবে আমাদের সরকারের চরম ব্যর্থতা। সরকার নিশ্চয়ই উত্তরবঙ্গের কৃষকদের বিষয়টি বিবেচনায় নেবে। Daily JAI JAI DIN28.03.14
তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি ও আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা
18:27
No comments
গেল সপ্তাহে তিস্তা নিয়ে অনেক সংবাদ ছাপা হয়েছে পত্রপত্রিকায়। দুটি উদ্বেগের খবর আমরা জেনেছি পত্রপত্রিকা থেকে। প্রথমটিতে বলা হয়েছে, যেখানে তিস্তায় পাঁচ হাজার কিউসেক পানি পাওয়ার কথা, সেখানে পাওয়া গেছে মাত্র ৫০০ কিউসেক। ফলে তিস্তা ব্যারাজ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ১২ উপজেলার ৬০ হাজার ৫০০ হেক্টরে যে বোরো আবাদ হয়, সেচের অভাবে তা এখন মরতে বসেছে। কেননা কৃষকরা সেচের জন্য পানি পাচ্ছে না। দ্বিতীয় উদ্বেগের বিষয়টি হচ্ছে তিস্তা থেকে আরো পানি সরিয়ে নিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। এ খবর দিয়েছে ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া, যার সূত্র ধরে বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় খবরটি ছাপা হয়েছে গত ১৩ মার্চ। সংবাদে বলা হয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন এই পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারতের উত্তরবঙ্গে কৃষকদের কাছে তারা সেচের পানি পৌঁছে দেবে।
তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি ও আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা
তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে যে আদৌ কোনো চুক্তি হচ্ছে না, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। সদ্য সমাপ্ত বিমসটেকের নেপিডো সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে এটা স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন, তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না। এমনকি সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের ৫৭তম বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়নি। বলার অপেক্ষা রাখে না, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণেই এই চুক্তি হচ্ছে না এবং ভবিষ্যতে যে হবে, সে সম্ভাবনাও ক্ষীণ। কেননা ভারতে ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনে যে একটি দুর্বল সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে, তাদের পক্ষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপেক্ষা করে কোনো চুক্তি করা সম্ভব নয়। নির্বাচনী জরিপের ফলাফল যদি সত্যি হয়, তাহলে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার ক্ষমতা হারাচ্ছে! এ ক্ষেত্রে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের ক্ষমতা পাওয়ার একটি সম্ভাবনা, কিংবা মমতা-জয়ললিতার নেতৃত্বাধীন একটি তৃতীয় জোটের (ফেডারেলিস্ট ফ্রন্ট) নেতৃত্বে একটি দুর্বল সরকার যদি ক্ষমতা পায়, তাহলে তিস্তা চুক্তির সম্ভাবনা যে 'ডিপ ফ্রিজে' চলে যাবে, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ক্ষেত্রে তাই যে প্রশ্নটি চলে আসে, তা হচ্ছে বাংলাদেশের করণীয় তাহলে কী?
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি আমাদের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। আমাদের নীতিনির্ধারকরা যদি বিষয়টি হালকাভাবে দেখেন, তাহলে এ দেশ, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ একটি বড় ধরনের সংকটে পড়বে। খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে থাকবে, এমনকি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এতে বাড়বে। মনে রাখতে হবে, তিস্তায় পানিপ্রাপ্তি আমাদের ন্যায্য অধিকার। আন্তর্জাতিক আইন আমাদের পক্ষে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব আমাদের অধিকারকে নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তি- এটা আমাদের বিষয় নয়। আমরা এটা বিবেচনায় নিতে চাই না। আমাদের অধিকার, যা আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত, তা নিশ্চিত করবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এখানে বলা ভালো, সিকিম হয়ে ভারতের দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি হয়ে পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ারের সমভূমি দিয়ে চিলাহাটি থেকে চার-পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার উত্তর খড়িবাড়ির কাছে ডিমলা উপজেলার ছাতনাই দিয়ে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। ছাতনাই থেকে এ নদী নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, রংপুরের কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর হয়ে চিলমারীতে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে। ডিমলা থেকে চিলমারী এ নদীর বাংলাদেশ অংশের মোট ক্যাচমেন্ট এরিয়া প্রায় এক হাজার ৭১৯ বর্গকিলোমিটার। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী কমিশন গঠনের পর তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠকে তিস্তার পানি বণ্টনে ৩৬ শতাংশ বাংলাদেশ, ৩৯ শতাংশ ভারত ও ২৫ শতাংশ নদীর জন্য সংরক্ষিত রাখার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু কোনো চুক্তি হয়নি। পরবর্তী সময়ে ২০০৭ সালের ২৫, ২৬, ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ তিস্তার পানির ৮০ শতাংশ দুই দেশের মধ্যে বণ্টন করে বাকি ২০ শতাংশ নদীর জন্য রেখে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। ভারত সে প্রস্তাবে রাজি হয়নি। এখন যুক্ত হয়েছে মমতার আপত্তি। বাংলাদেশের কোনো প্রস্তাবের ব্যাপারেই মমতার সম্মতি পাওয়া যায়নি। এখানে আরো একটা বিষয় বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। তিস্তার পানি বণ্টনে সিকিমকে জড়িত করারও প্রয়োজনীয়তা পড়েছে। কেননা সিকিম নিজে উজানে পানি প্রত্যাহার করে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। ফলে তিস্তায় পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে দিন দিন। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে কৃষকদের কাছে তিস্তার পানির চাহিদা বেশি। সেচকাজের জন্য তাদের প্রচুর পানি দরকার। এটা মমতার জন্য একটি 'রাজনৈতিক ইস্যু'।
তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী। এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ এককভাবে পানি প্রত্যাহার করতে পারে না। আন্তর্জাতিক নদীর পানি ব্যবহার সংক্রান্ত ১৯৬৬ সালের আন্তর্জাতিক আইন সমিতির হেলসিংকি নীতিমালার ৪ ও ৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রতিটি অববাহিকাভুক্ত রাষ্ট্র, অভিন্ন নদীসমূহ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই অন্য রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রয়োজনকে বিবেচনায় নেবে। এখন পশ্চিমবঙ্গের পানি প্রত্যাহার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রয়োজনকে বিবেচনায় নেয়নি। হেলসিংকি নীতিমালার ১৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রতিটি তীরবর্তী রাষ্ট্র তার সীমানায় আন্তর্জাতিক পানি সম্পদের ব্যবহারের অধিকার ভোগ করবে যুক্তি ও ন্যায়ের ভিত্তিতে। কিন্তু এই 'যুক্তি ও ন্যায়ের ভিত্তি'টি উপেক্ষিত থাকে যখন পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। ১৯৯২ সালের ডাবলিপ নীতিমালার ২ নম্বর নীতিতে বলা হয়েছে, পানি উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা অবশ্যই সবার অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। তিস্তার পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এটা হয়নি। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ 'জলপ্রবাহ কনভেনশন' নামে একটি নীতিমালা গ্রহণ করে। এই নীতিমালার ৬ নম্বর অনুচ্ছেদে পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে 'যুক্তি ও ন্যায়পরায়ণতার' কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ব্যবহার, অর্থাৎ এককভাবে তিস্তার পানির ব্যবহার এই 'যুক্তি ও ন্যায়পরায়ণতা'র ধারণাকে সমর্থন করে না। আমরা আরো আন্তর্জাতিক আইনের ব্যাখ্যা দিতে পারব, যেখানে বাংলাদেশের অধিকারকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিশেষ করে পরিবেশসংক্রান্ত জীববৈচিত্র্য কনভেনশনের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদ, জলাভূমিবিষয়ক রামসার কনভেনশনের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদ প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবেশের প্রভাব এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীসমূহের সংরক্ষণের যে কথা বলা হয়েছে, তা রক্ষিত হচ্ছে না। এখানে সমস্যাটা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের। ভারতের ফেডারেল কাঠামোয় রাজ্য কিছু সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। কিন্তু কোনো রাজ্য (এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ) এমন কিছু করতে পারে না, যা আন্তর্জাতিক আইনের বরখেলাপ ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে। সমস্যাটা ভারতের। পশ্চিমবঙ্গকে আশ্বস্ত করার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। আমরা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ীই আমাদের পানির হিস্যা নিশ্চিত করতে চাই।
তিস্তায় পানির প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ এখন মরুকরণের ঝুঁকির মুখে থাকল। আমাদের একটা বড় দুর্বলতা হচ্ছে দরকষাকষিতে আমরা কোনো শক্ত অবস্থানে যেতে পারি না। আমাদের যে পানি বিশেষজ্ঞ নেই, তা নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাঁদের শক্ত অবস্থানে যেতে দেখা যায়নি। অতি সম্প্রতি শেষ হয়েছে যৌথ নদী কমিশনের ৫৭তম অধিবেশন। ভারতের সঙ্গে যৌথ কমিশনের বৈঠকে বাংলাদেশ তিস্তার প্রশ্নে শক্ত অবস্থান নিয়েছে, তেমনটি জানা যায় না। সুতরাং একটা প্রশ্ন থেকেই গেল, ভারত একদিকে তিস্তার পানি বণ্টনের আশ্বাস দেবে, অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গকে সুযোগ করে দেবে পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ার, তখন বাংলাদেশ কী করবে?
এটা এখন স্পষ্ট যে মে মাসের শেষ সপ্তাহে সেখানে যে সরকারই গঠিত হোক না কেন, তিস্তার পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে কোনো বড় উদ্যোগ নেবে না। বিজেপি যদি এককভাবে সরকার গঠন করতে না পারে, সরকার গঠন করার জন্য তাদের নির্ভর করতে হবে আঞ্চলিক দলগুলোর ওপর। এ ক্ষেত্রে মমতা যে আবার বিজেপি বলয়ে ফিরে যাবে না, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। অতীতে তো মমতা বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকারে রেলমন্ত্রী হয়েছিলেন। মমতা কংগ্রেসের সঙ্গেও হাত মিলিয়েছিলেন। আবার ফিরেও এসেছিলেন। ভারতের রাজনীতির 'মোস্ট আনপ্রেডিকটেবল ক্যারেকটার' হচ্ছেন এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে বিশ্বাস করা যায় না। মমতার আদি পুরুষের বাড়ি যশোরে। তিনি যখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন, তখন সব প্রটোকল ভেঙে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ফোন করে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের প্রতি এতটুকু শ্রদ্ধা দেখাননি মমতা। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার (মনমোহন সরকার) তিস্তার পানি বণ্টনে একটি চুক্তি করতে চাইলেও শুধু মমতার আপত্তির কারণে ওই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। এমনকি বাংলাদেশে মহাজোট সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলকাতায় গিয়েও মমতাকে রাজি করাতে পারেননি। আমাদের ভারতমুখী পররাষ্ট্রনীতির একটা বড় ব্যর্থতা হচ্ছে তিস্তার পানি বণ্টনসহ বেশ কিছু ইস্যুতে আমরা স্বার্থ আদায় করে নিতে পারিনি। তাই বোধকরি সময় এসেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর পরিপূর্ণ নির্ভরশীল না হয়ে আন্তর্জাতিক আসরে তিস্তার পানি বণ্টনের সমস্যাটি তুলে ধরা।
Daily KALERKONTHO
25.03.14
রাশিয়ার সঙ্গে ক্রিমিয়ার সংযুক্তি ও কিছু মৌলিক প্রশ্ন
17:52
No comments
শেষ
পর্যন্ত যা প্রত্যাশা করা হয়েছিল, তা-ই হয়েছে। ১৬ মার্চ ইউক্রেনের
স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ক্রিমিয়ায় স্বাধীনতা প্রশ্নে একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়।
ওই গণভোটে শতকরা ৯৭ ভাগ ভোট পড়ে স্বাধীনতার পক্ষে। গণভোটের ফলের মাত্র ২৪
ঘণ্টার মধ্যে ক্রিমিয়াকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া। এর
পরপরই ক্রিমিয়া রাশিয়ার সঙ্গে একীভূত করার ব্যাপারে মস্কোর কাছে আবেদন
জানায়। আর ওই আবেদনে সাড়া দিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন
ক্রিমিয়াকে রুশ ফেডারেশনে অন্তর্ভুক্ত করার একটি খসড়া বিলে স্বাক্ষর
করেছেন। রাশিয়ার পার্লামেন্ট 'ডুমা'য় এখন বিলটি অনুমোদিত হবে। প্রায়
দু'সপ্তাহ ধরে ক্রিমিয়ার বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচিত হয়ে
আসছে। এমন কথাও বেশ জোর দিয়ে বলা হচ্ছে যে, ক্রিমিয়ার ব্যাপারে রাশিয়ার
সিদ্ধান্ত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিক্রিয়ার মধ্য
দিয়ে নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা হয়েছে। এটা বাহ্যত পরিণত হয়েছে রাশিয়ার
সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের দ্বন্দ্ব হিসেবে। এখন এ দ্বন্দ্ব ক্রিমিয়া ছাড়িয়ে
বিশ্বের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়বে, যেমনটি আমরা প্রত্যক্ষ করেছিলাম দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী সময়ে। অনেকেই স্মরণ করতে পারেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর
ইউরোপে প্রভাব বলয় বিস্তারের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে জন্ম হয়েছিল
স্নায়ুযুদ্ধের। সেটা ছিল মূলত আদর্শিক দ্বন্দ্ব_ একদিকে ছিল পুঁজিবাদ,
অন্যদিকে সাম্যবাদ।
এক সময় এ সাম্যবাদের প্রভাব ঠেকাতেই পশ্চিম
ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে জন্ম হয়েছিল সামরিক জোট ন্যাটোর। অপরদিকে
পূর্ব ইউরোপে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো নিয়ে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠন করেছিল
সামরিক জোট ওয়ারশ। একপর্যায়ে সেখানে 'যুদ্ধের' সম্ভাবনাও জন্ম নিয়েছিল_
যদিও যুদ্ধ হয়নি। তবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো এ 'যুদ্ধে' জড়িয়ে পড়েছিল। ১৯৯১
সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অবসান ঘটে
স্নায়ুযুদ্ধের। আজ প্রায় ২৩ বছর পর নতুন আঙ্গিকে স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম হচ্ছে!
এখানে আদর্শিক দ্বন্দ্ব নেই বটে, কিন্তু প্রভাব বলয় বিস্তারের এক ধরনের
নগ্ন প্রতিযোগিতা আছে। অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের একক কর্তৃত্ব
করার যে প্রবণতা এবং রাশিয়াকে ঘিরে ফেলার ন্যাটোর যে স্ট্র্যাটেজি, তা
রাশিয়ার সমরনায়কদের অজানা নয়। ভুলে গেলে চলবে না, ক্রিমিয়ার ব্যাপারে
রাশিয়ার স্বার্থ রয়েছে অনেক। ক্রিমিয়ার পার্শ্ববর্তী কৃষ্ণসাগর বা 'ব্ল্যাক
সি'র পশ্চিম পাশে রুমানিয়ার মিহাইল কোগালনাইসেআনুতে রয়েছে ন্যাটোর
বিমানঘাঁটি। এ বিমানঘাঁটির গুরুত্ব অনেক। আফগানিস্তানে সেনা ও রসদ সরবরাহের
জন্য ট্রানজিট রুট হিসেবে এ বিমান ঘাঁটিটি ব্যবহৃত হয়। শুধু তা-ই নয়,
কৃষ্ণ সাগরের গুরুত্ব আরও একটি কারণে। এখানে অবস্থান রয়েছে ন্যাটোর জয়েন্ট
টাস্কফোর্স ইস্টের
কৃষ্ণ সাগরভুক্ত তিনটি দেশ রুমানিয়া,
বুলগেরিয়া আর তুরস্ককে নিয়ে ন্যাটো গেল বছর তাদের তিন মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ
পরিচালনা করেছে। এটা রাশিয়ার ওপর এক ধরনের স্নায়বিক চাপ। ভূরাজনৈতিক
বিশেষজ্ঞরা অনেক দিন থেকেই কৃষ্ণ সাগরভুক্ত এলাকা; সেই সঙ্গে কাস্পিয়ান
সাগরভুক্ত অঞ্চলকে 'হট এরিয়া', অর্থাৎ উত্তেজনাপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত
করে আসছেন। সুতরাং ক্রিমিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ রাশিয়ানদের (জনসংখ্যার ৫৯ ভাগ,
প্রায় ২০ লাখ) নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই যে রাশিয়া 'হস্তক্ষেপ' করেছিল,
তা বিবেচনায় নিলে ঠিক হবে না। রাশিয়ায় 'নয়া জার' নেতৃত্ব রাশিয়ার
নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। ক্রিমিয়ায় বসবাসকারী রাশানদের নিরাপত্তার
পাশাপাশি তাদের নিজেদের ভূখ-গত নিরাপত্তার বিষয়টি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। পুরো
কৃষ্ণ সাগরভুক্ত অঞ্চলে নিজেদের কর্তৃত্ব করার জন্যই ন্যাটোর দরকার
জর্জিয়া ও ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেয়া। তাহলে রাশিয়ার সীমান্তে উপস্থিত
থাকবে ন্যাটোর সেনাবাহিনী। এটা রাশিয়ার ওপর এক ধরনের মনস্তাত্তি্বক চাপ।
রাশিয়ার সমরনায়করা তা যে মেনে নেবেন না, এটাই স্বাভাবিক। উল্লেখ্য, গেল বছর
কৃষ্ণ সাগরে ন্যাটো ও জর্জিয়ার নৌবাহিনী যৌথভাবে একটি সামরিক কার্যক্রমে
অংশ নিয়েছিল, যা রাশিয়া খুব সহজভাবে নেয়নি। এখানে ক্রিমিয়ার বিষয়টিও
আলোচনা করা প্রয়োজন। ক্রিমিয়া সরাসরিভাবে ইউক্রেনের মূল ভূখ-ের অংশ নয়। এ
অংশটি ইউক্রেনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। সাবেক সোভিয়েত নেতা ক্রুশ্চেভ ১৯৫৪
সালে এ অংশটুকু ইউক্রেনকে দেন। এর আগে এটা রাশিয়ার অংশ ছিল। এখানে মূল
জনগোষ্ঠী রাশান। ২৪ ভাগ জনগোষ্ঠী ইউক্রেনিয়ান, আর ১২ ভাগ তাতার। ইউক্রেনের
মোট জনগোষ্ঠীর (৪৫ মিলিয়ন) ১৭ ভাগ হচ্ছে রাশান বংশোদ্ভূত। ইউক্রেন ১৯২২
সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছিল এবং ১৯৯১ সালের
ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
ক্রিমিয়া থেকে যায় রাশিয়ার সঙ্গে। ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার সেনাবাহিনীর 'অভিযান',
সেখানে ইউক্রেনের নৌঘাঁটি দখল পরিস্থিতিকে তখন আরও জটিল করে দেয়।
ক্রিমিয়ার
পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের যথেষ্ট
অবনতি হয়েছে। ক্রিমিয়ার পার্লামেন্ট রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্তির একটি
সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১৬ মার্চ এ লক্ষ্যে সেখানে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। অথচ
প্রেসিডেন্ট ওবামা এ সিদ্ধান্তকে 'অবৈধ ও আন্তর্জাতিক আইনের' পরিপন্থী
হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ৩০০ নৌবাহিনী সজ্জিত ডেসট্রয়ার
ইউএসএস টুস্ক্রটানকে কৃষ্ণ সাগর অঞ্চলে পাঠিয়েছে। পাঁচটি যুদ্ধবিমান
মোতায়েন করেছে বাল্টিক অঞ্চলে। ওবামা পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘ কথা বলেছেন।
কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। তিনি রাশিয়াকে ইউক্রেনের নেতাদের সঙ্গে কথাবার্তা
বলা, আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের ক্রিমিয়ায় যাওয়া ও ক্রিমিয়া থেকে সব রুশ
সৈন্য (১৬ হাজার) প্রত্যাহারের দাবি করেছিলেন। কিন্তু রাশিয়ার মনোভাবের
পরিবর্তন তাতে হয়নি। ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্তিকে তিনি অনুমোদন
দিয়েছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র কিছু রাশান নাগরিকের (যারা
ক্রিমিয়ায় আগ্রাসনের সঙ্গে জড়িত) বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ভিসা বাতিল ও
রাশিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে। প্রায় একই পথ অবলম্বন করেছে ইউরোপীয়
ইউনিয়ন। রাশিয়া-ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংলাপ এখন বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ল।
এখানে একটা কথা বলা প্রয়োজন, ১৯৯৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে 'Budapest
Memorandum on Security Assurances' চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। ওই চুক্তির
বিনিময়ে ইউক্রেনের কাছে যে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, তা রাশিয়াকে ফেরত দেয়া
হয়। ওই সময় ইউক্রেন ক্রিমিয়ায় কর্তৃত্ব ফিরে পেয়েছিল বটে, কিন্তু রাশিয়াকে
তার 'ব্ল্যাক সি ফ্লিট' এ অঞ্চলে (সেবাস্তোপোল) মোতায়েন এবং রাশিয়ার
সেনাবাহিনী মোতায়েনের অধিকার দেয়া হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী এ সেনা মোতায়েন
থাকার কথা ২০৪২ সাল পর্যন্ত। ইউক্রেন অবশ্য এ থেকে একটি 'ফি' পাবে। জুন
মাসে সোচিতে জি-৮ সম্মেলনও এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে।
এখন ১৬ মার্চের
গণভোটে ক্রিমিয়া যে রাশিয়ার অঙ্গ হলো এবং গণভোটে তাদের যে মতামত প্রতিফলিত
হলো, তাতে দ্বিমত করার আর কোনো সুযোগ নেই। ফলে নতুন করে শুরু হবে
'স্নায়ুযুদ্ধ'। যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিকার অর্থেই রাশিয়ার ব্যাপারে এখন আরও
কঠোর হয় (সীমিত অর্থনৈতিক অবরোধের সিদ্ধান্ত), তাহলে রাশিয়াকে বাধ্য করবে
একাধিক সিদ্ধান্ত নিতে। যেমন বলা যেতে পারে, রাশিয়া ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ
বন্ধ করে দিতে পারে। কিংবা আফগানিস্তানে সব ধরনের সরবরাহ লাইনে
প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ধক্ষংসের
ব্যাপারে রাশিয়া বিরোধিতা করতে পারে এখন। ইরানকে অস্ত্র তথা বিমানবিধক্ষংসী
অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে রাশিয়া। চীনের সঙ্গে সামরিক তথা অর্থনৈতিক
সম্পর্ক বৃদ্ধি করবেন পুতিন। এতে করে বিশ্বে উত্তেজনা বাড়বে মাত্র। বলা
ভালো, ক্রিমিয়া সঙ্কটে চীন ও ভারত রাশিয়ার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। চীনের সঙ্গে
সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন নামক একটি সামরিক তথা অর্থনৈতিক ব্লক গড়ে
তুলেছে রাশিয়া (জ্বালানি সম্পদসমৃদ্ধ মধ্য এশিয়ার দেশগুলো এর সদস্য)। একই
সঙ্গে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো নিয়ে রাশিয়া গড়ে তুলছে
একটি সামরিক জোট 'কালেকটিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশন' (সিএসটিও)।
ওয়ারশ'র পরিবর্তিত করে করা হচ্ছে এই সিএসটিও।স্পষ্টই ক্রিমিয়ার
সঙ্কট বিশ্বে অস্থিরতা বাড়াবে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে সত্যিকার অর্থেই যদি কোনো
নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, তাহলে সবচেয়ে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে পশ্চিম ইউরোপ
(বিশেষ করে জার্মানি), যারা রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। একটা
পরিসংখ্যান দিলে বিষয়টি বুঝতে সহজ হবে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গ্যাসের রিজার্ভ
হচ্ছে রাশিয়াতে। মূলত তিনটি পথে এ গ্যাস যায় ইউরোপে। সাবেক পূর্ব ইউরোপের
দেশগুলো, যারা এক সময় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ব্লকে ছিল, তারাও এখন রাশিয়ার
গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। তিনটি পাইপলাইন, নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনের মাধ্যমে
সরবরাহ করা হয় বছরে ৫৫ মিলিয়ন কিউসেক মিটার (বিসিএম), বেলারুশ লাইনে সরবরাহ
করা হয় ৩৬ বিসিএম, আর ইউক্রেন লাইনে সরবরাহ করা হয় ১০৭ বিসিএম। এখন ইইউর
নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে রাশিয়া যদি এ সরবরাহ বন্ধ করে
দেয়, তাহলে বড় ধরনের জ্বালানি সঙ্কটে পড়বে ইউরোপ। যদিও রাশিয়ার বৈদেশিক
আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে এই গ্যাস বিক্রি। এটা সত্য, রাশিয়া অত্যন্ত সস্তায়
বেলারুশ ও ইউক্রেনে গ্যাস সরবরাহ করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই দেশ দুটো
আবার রাশিয়ার গ্যাসের রিজার্ভ গড়ে তুলে সরাসরি পশ্চিম ইউরোপে তা বিক্রি করে
কিছু 'আলাদা অর্থ' আয় করে। অনেকের স্মরণ থাকার কথা, ২০০৯ সালে ইউক্রেন ও
বেলারুশের সঙ্গে রাশিয়ার এক ধরনের সঙ্কট তৈরি হয়েছিল, যাকে বলা হয়েছিল
'গ্যাস ওয়ার' অর্থাৎ গ্যাস যুদ্ধ। ইউক্রেনে অত্যন্ত সহজ মূল্যে গ্যাস
সরবরাহ করত রাশিয়া। কিন্তু ইউক্রেন অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছিল, যা
ইউরোপে একটি সঙ্কট তৈরি করে। শুধু গ্যাস নয়, রাশিয়া বেলারুশকে সস্তা দামে
তেলও দেয়। ওই তেল আবার বেলারুশ অধিক মূল্যে ইউরোপে বিক্রি করে। Druzhba
অথবা Friendship পাইপলাইনের মাধ্যমে এ গ্যাস ও তেল সরবরাহ করা হতো।
বেলারুশের ক্ষেত্রেও একটি সমস্যা হয়েছিল। তারা অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ
হয়েছিল। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছিল। রাশিয়া পাইপলাইনে গ্যাস ও তেল সরবরাহ
বন্ধ করে দিয়েছিল। এখন আবার নতুন আঙ্গিকে এ 'গ্যাস ওয়ার' শুরু হবে।ক্রিমিয়া
এখন রাশিয়ার অংশ হওয়ায় ইউক্রেন এটাকে ভালো চোখে দেখেনি। ক্রিমিয়ায় রাশিয়ান
পতাকা উঠেছে। সেখানে যে ইউক্রেনের নৌ ঘাঁটি রয়েছে তা দখল করে নিয়েছে
রাশিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল একটি গ্রুপ। সম্পর্কের অবনতির প্রেক্ষাপটে
রাশিয়া তার ইউক্রেন পাইপলাইন বন্ধ করে দিতে পারে। আর এটা হলে বুলগেরিয়া,
রুমানিয়া আর সার্বিয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে এই তিন দেশের শিল্প
প্রতিষ্ঠান গ্যাসের অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। পরিসংখ্যান বলছে, রাশিয়ার গ্যাস
সরবরাহ সংস্থা গ্যাসপ্রম (Gasprom) এর ইউক্রেনের কাছে পাওনা রয়েছে দুই
মিলিয়ন ডলার। এ টাকা তখন ইউক্রেন কীভাবে শোধ করবে? এই সঙ্কট এখানে যুদ্ধের
সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছে। রাশিয়া এরই মধ্যে ইউক্রেনকে বাইপাস করে কৃষ্ণ
সাগরের নিচ দিয়ে একটি পাইপলাইন তৈরি করছে। সমগ্র ইইউর গ্যাসের চাহিদার ৩০
ভাগ একা জোগান দেয় রাশিয়া। আর জার্মানির ৪০ ভাগ। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, এই
গ্যাস আগামী দিনে অন্যতম একটি ফ্যাক্টর হবে ইউরোপের রাজনীতিতে। অনেকেই
স্মরণ করতে পারেন, মধ্যপ্রাচ্যে যে যুদ্ধ হয়েছিল, বিশেষ করে ইরাক ও
লিবিয়ায়, তার পেছনের মূল কারণ ছিল তেল। ইরাক ও লিবিয়ার তেলের সহজলভ্যতার
কারণে মার্কিন তেল কোম্পানিগুলোর মদতে সেখানে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। যুদ্ধে
ইরাককে ধক্ষংস করে দিয়ে তখন মার্কিন কোম্পানিগুলোই ওই তেল বিক্রির টাকায়
ইরাক পুনর্গঠনের কাজ করছে। আর লিবিয়ার তেল ও গ্যাস যায় ইতালিতে। গাদ্দাফিকে
প্রাণ দিতে হয়েছিল এ তেল-গ্যাসের কারণেই। সুতরাং রাশিয়ার গ্যাসের ওপর পুরো
ইউরোপের নির্ভরতা সেখানে নতুন করে 'গ্যাস যুদ্ধ'-এর সূচনা করবে। তবে
পার্থক্য একটাই, রাশিয়া ইরাক কিংবা লিবিয়া নয়; পুতিনের পেছনে রয়েছে রাশিয়ার
সেনাবাহিনী।
এখানে আরও একটা বিষয় বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন।
ক্রিমিয়ার ঘটনার পর যে প্রশ্নটি উঠেছে, তা হচ্ছে এ অঞ্চলের অন্যত্র যেখানে
রাশান জনগোষ্ঠী রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে রাশিয়ার ভূমিকা কী হবে? রাশিয়া কী
এসব অঞ্চলকেও উৎসাহিত করবে ক্রিমিয়ার পথ অবলম্বন করতে? ইউক্রেনের
ক্রিমিয়াতেই যে রাশান জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল, তা নয়। বরং ইউক্রেনের
পূর্বাঞ্চলে, যেখানে রুশ ভাষাভাষীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, সেখানে কী হবে?
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় খারকিভ, দনেৎস্ক ও লুগা রুশ জনসংখ্যা অধ্যুষিত
অঞ্চল। আবার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ওদেসা, খেরসন ও মিকোলায়েভ শহরেও রয়েছে রুশ
জনগোষ্ঠীর প্রাধান্য। পুতিন এক্ষেত্রে কী করবেন? ইউক্রেনে আগামী দিনে
বসনিয়ার মতো পরিস্থিতির জন্ম হয় কিনা, সে ব্যাপারেও দৃষ্টি থাকবে অনেকের।
অনেকেই বলার চেষ্টা করেন, পুতিন রাশিয়ার সীমান্ত সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের
সীমানায় নিয়ে যেতে চান। আর এ লক্ষ্যেই রাশিয়া কাজাখস্তান ও বেলারুশের
সমন্বয়ে একটি 'ইউনিয়ন স্টেট' গঠন করেছে। এর মাধ্যমে এক ধরনের 'কাস্টম
ইউনিয়ন' গঠন করে এ দুটো দেশের অর্থনীতি তথা বাণিজ্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল
করে তোলা হয়েছে। এ ইউনিয়ন স্টেটেও এ অঞ্চলের আরও অনেক রাষ্ট্র আগামীতে যোগ
দিতে পারে। সুতরাং রাশিয়ার সঙ্গে ক্রিমিয়ার সংযুক্তিকে হালকাভাবে দেখার
সুযোগ নেই।
ক্রিমিয়ার ঘটনাবলিকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার সঙ্গে
পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। চলতি সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট
বারাক ওবামা ইউরোপ সফরে আসছেন। ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে তার আলোচনায়
ক্রিমিয়ার বিষয়টি যে প্রাধান্য পাবে, তা আর কাউকে বলে দিতে হয় না। এরই
মধ্যে জি-৮ থেকে রাশিয়াকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ন্যাটো রাশিয়ার সীমান্তবর্তী
পোল্যান্ডে যুদ্ধ বিমান মোতায়েন করেছে। সব মিলিয়ে ক্রিমিয়ার ঘটনাবলি
স্নায়ুযুদ্ধ-২ এর সূচনাই করল।
Daily ALOKITO BANGLADESH
23.03.14
উপজেলা নির্বাচন আমাদের কতটুকু আশাবাদী করতে পারছে
17:42
No comments
আজ
উপজেলা নির্বাচনের চতুর্থ পর্ব। এ পর্যন্ত তিন দফা নির্বাচনের পর যে
প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে তা হচ্ছে, এ নির্বাচন আমাদের কতটুকু আশাবাদী
করতে পারছে? সংঘর্ষ, ভোট কেন্দ্র দখল, জালভোট, ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের
রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমরা প্রত্যক্ষ করেছি প্রথম দু’দফা নির্বাচনে। তৃতীয়
দফায় (১৫ মার্চ) সহিংসতা ও অনিয়মের মাত্রা আরও বেড়েছে। তবে একটা পার্থক্য
লক্ষ্য করার মতো- ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা তৃতীয় দফায় চেয়ারম্যান
পদে বিজয়ী হয়েছেন বেশি (৩৫ জন আর বিএনপির ২৭ জন)। অথচ এর আগের দু’দফায়
বিএনপির পাল্লা ভারি ছিল (প্রথম দফায় বিএনপি ৪৩, আওয়ামী লীগ ৩৪। দ্বিতীয়
দফায় বিএনপি ৫৩, আওয়ামী লীগ ৪৪)। তৃতীয় দফায় ভোটের ফলাফলের ‘চিত্র’ পাল্টে
গেল। আমার ধারণা, চতুর্থ ও পঞ্চম দফা নির্বাচনেও আমরা প্রত্যক্ষ করব একই
ফলাফল অর্থাৎ আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিজয়।এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ
বিজয়ী হল, না বিএনপি বিজয়ী হল, আমি এটাকে গুরুত্ব দিই না। আমি গুরুত্ব দিই
যে বিষয়টিকে তা হচ্ছে, আমরা গণতন্ত্রের চর্চাকে পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করে
দিলাম কি-না। একটি হাস্যস্পদ নির্বাচন আমরা প্রত্যক্ষ করেছিলাম ৫ জানুয়ারি।
সেটা ছিল জাতীয় সংসদ নির্বাচন। পৃথিবীর কোথাও এভাবে ১৫৪ জন সংসদ সদস্য
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ইতিহাস নেই। বিরোধী দলকে সরকারে
রেখে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতির আমরা জন্ম দিলাম, তাকে আমরা গণতান্ত্রিক
সংস্কৃতি বলব কি-না, আমি সে ব্যাপারেও সন্দিহান। আগামীতে দেশে গণতন্ত্রের এ
চর্চাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। যারা বিভিন্ন দেশের গণতন্ত্র চর্চা
সম্পর্কে কিছুটা ধারণা রাখেন, তারা ন্যূনতম একটি দেশের দৃষ্টান্ত দিতে
পারেন। সে দেশটি হচ্ছে রাশিয়া। সেখানেও এক ধরনের গণতন্ত্র চর্চা হয়। সংসদ
আছে। রাজনৈতিক দল আছে। ভোটও হয়। কিন্তু যা দৃশ্যমান তা হচ্ছে একটি গোষ্ঠী
ঘুরেফিরে ক্ষমতায় থাকছে। পুতিন প্রথমে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ২০০০ সালে
(প্রধানমন্ত্রী, আগস্ট ১৯৯৯)। সংবিধান অনুযায়ী তৃতীয় টার্ম প্রেসিডেন্ট হতে
না পারায় তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রী (২০০৮)। তারপর আবার প্রেসিডেন্ট। অর্থাৎ
ঘুরেফিরে ক্ষমতায় থাকা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এ গণতন্ত্র চর্চাকে বিভিন্ন
নামে নামকরণ করেছেন। এখন বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চা নিয়ে নতুন করে মূল্যায়ন
করার সময় এসেছে।
৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা না পেলেও উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ এ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাই শুধু বাড়িয়ে দেয়নি, বরং গণতন্ত্র চর্চায় নতুন একটি মাত্রা দিয়েছিল। কারণ গণতন্ত্রের ভিত্তি রচিত হয় তৃণমূল পর্যায়ে। তৃণমূল পর্যায়ে গণতন্ত্র যদি শক্তিশালী হয়, তাহলে তা জাতীয় পর্যায়ে গণতন্ত্র চর্চাকে আরও শক্তিশালী করে। তাই যে কোনো বিবেচনায় তৃণমূল পর্যায়ের এ নির্বাচনের গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি। কিন্তু ‘সব দলের অংশগ্রহণ’ (বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি ও বামমনা দলগুলো) সত্ত্বেও উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে না। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের আচরণ (জাল ভোট, ভোট কেন্দ্র দখল, সহিংসতা) প্রমাণ করল বাংলাদেশ গণতন্ত্র চর্চার নতুন এক ধাপে প্রবেশ করেছে। এখানে জনগণের অধিকার প্রয়োগটাই বড় কথা নয়। বরং যে কোনো উপায়ে ক্ষমতা ধরে রাখাই হল আসল কথা।পাঠক, উপজেলা নির্বাচনের (তৃতীয় পর্যায়ে) পর সংবাদপত্রে যেসব সংবাদ ও ছবি প্রকাশিত হয়েছে, তার কয়েকটি দৃষ্টান্ত দিতে চাই। যুগান্তরের শীর্ষ সংবাদ ছিল : ‘সহিংসতা, জাল ভোট, ব্যালট পেপার ছিনতাই’ (১৬ মার্চ)। আরেকটি দৈনিকের শিরোনাম ছিল : ‘এ যেন চরদখলের লড়াই’। পোলিং অফিসার নিজেই ভোট দিয়েছেন সিন্দুরপুর ইউনিয়নের মাছিমপুর বিদ্যালয় কেন্দ্রে- এ ছবিও আছে সংবাদপত্রে (নির্বাচন কমিশন কি তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে?)। চাঁদপুরে ছাত্রলীগ নেতার হুমকি ‘ক্যামেরা দে, না হলে গুলি করব’- এ সংবাদও আছে কাগজে। এখানে মিনিটে ৬টি ভোটের খবর দিয়েছে সংবাদপত্র। বাবুগঞ্জে ছাত্রলীগের সভাপতি একাই দিয়েছেন ৪০০ ভোট। আর নির্বাচন কমিশনার কী বলেছেন দেখুন। আবদুল মোবারক (তিনি এখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার) বললেন, প্রতি মিনিটে ১৩-১৪টি ভোট স্মার্টনেসের পরিচায়ক। তিনি খুশি হয়েছেন সহিংসতায় ৩ জনের বেশি মারা যায়নি বলে। এ জাতির দুর্ভাগ্য, আবদুল মোবারকের মতো লোকজন নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পান। কোন বিবেচনায় তিনি নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন, জানি না। কিন্তু ইসিতে জমা দেয়া তার জীবনবৃত্তান্ত ঘেঁটে দেখলাম, তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ছিলেন (১৯৯৯-২০০১)। যুগ্ম সচিব হিসেবে অবসরে যান ২০০৩ সালে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের ছাত্র। পাস করেছেন ১৯৭০ সালে। কিন্তু অনেক পর ১৯৮৪ সালে বিসিএস দিয়ে নিয়োগ পান (এর আগে ১০ বছর চাকরি করেছেন টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশনে)। এহেন একজন লোক যখন বলেন, মিনিটে ১৩-১৪টি ভোট স্মার্টনেসের পরিচায়ক, তখন ভাবতে অবাক লাগে, রাষ্ট্র এ ধরনের লোককেও সাংবিধানিক পদে নিয়োগ দেয়! এসব লোকের কারণেই নির্বাচন কমিশন তাদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে পারে না। আরও একটা কথা গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচন রেখে সিইসি ছুটিতে যান কীভাবে? তিনি কি আদৌ ফিরে আসবেন?এখন উপজেলা পরিষদের যে নির্বাচন হয়ে গেল, তার মূল্যায়ন আমরা কীভাবে করব? বলতে দ্বিধা নেই, এক্ষেত্রেও অনেকটা আইনগত বাধ্যবাধকতা ছিল। অনেক উপজেলা চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। সুতরাং নতুন উপজেলা চেয়ারম্যানের নির্বাচন প্রয়োজন ছিল। এরই মধ্যে তিন দফা নির্বাচনের একটি ফলাফল আমরা পেয়ে গেছি। পরপর তিন পর্যায়ের নির্বাচনেই বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীরা ভালো করেছে। এতে করে একটা ধারণা করা স্বাভাবিক যে, স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির ভিত্তি অনেক শক্তিশালী। সুতরাং এটা বিবেচনায় নিতে হবে। স্বীকার করতেই হবে, এ নির্বাচন আবারও প্রমাণ করল বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি দ্বি-দলীয় ব্যবস্থার জন্ম হয়েছে। জাতীয় পর্যায় তো বটেই, স্থানীয় পর্যায়ে এ দুই দলের অবস্থান অনেক শক্তিশালী। যদিও স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনের সঙ্গে জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনকে মেলানো যাবে না, তারপরও বাস্তবতা হচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ে এ দল দুটির গণভিত্তি অনেক শক্তিশালী। আর এ গণভিত্তিই জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়। যেহেতু এ নির্বাচন প্রমাণ করেছে, বিএনপিকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন প্রক্রিয়া চিন্তা করা যাবে না, সেহেতু এ উপজেলা নির্বাচনের ফলাফলকে ধারণ করে একাদশ সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারকে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে।উপজেলা নির্বাচন বিএনপি বয়কট করেনি। এর অর্থ পরিষ্কার। বিএনপি নির্বাচনী প্রক্রিযায় থাকতে চায়। অর্থাৎ জাতীয় পর্যায়ের যে সংসদ নির্বাচন, সে ব্যাপারে বিএনপি একটি মেসেজ দিল যে তারা এখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারেও সিরিয়াস। এ নির্বাচন প্রমাণ করল স্থানীয় পর্যায়ে জামায়াতে ইসলামীরও একটা অবস্থান রয়েছে। জামায়াতের প্রার্থীরা বিএনপির সমর্থন নিয়ে একদিকে আওয়ামী লীগ, অন্যদিকে অন্য দলের সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়েছে। সব ধরনের প্রতিকূলতার বিরুদ্ধেও জামায়াত-সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয়কে হালকাভাবে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। একই সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের ভরাডুবি প্রমাণ করল, জাতীয় পার্টির সাম্প্রতিক ভূমিকায় স্থানীয় পর্যায়ের ভোটাররা অসন্তুষ্ট। এটা জাতীয় পার্টির জন্য একটি মেসেজও বটে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃতীয় একটি শক্তি হিসেবে জাতীয় পার্টি বিকশিত হয়েছিল। ১৯৯১ সালের পর থেকে ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের ফলাফল যদি আমরা পর্যালোচনা করি, তাহলে এ সত্যটাই বেরিয়ে আসে, জাতীয় পার্টি বাংলাদেশে তৃতীয় পার্টি। যদিও এর প্রায় পুরো কৃতিত্বই ব্যক্তি এরশাদের। বাহ্যত বৃহত্তর উত্তরবঙ্গকেন্দ্রিক এ দলটির যাত্রা শুরু হয়েছিল ব্যক্তি এরশাদের কারণে। এর বাইরে অন্যত্র জাতীয় পার্টি কিছুটা হলেও তার প্রভাব বাড়িয়েছিল, এটা স্বীকার করতেই হবে। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যা ঘটল, তা পার্টির জন্য কোনো ‘শুভ’ সংবাদ বয়ে আনেনি। একদিকে সরকারে থাকা, আবার বিরোধী দলেও থাকা- এই যে ‘রাজনীতি’, এ রাজনীতি মানুষ গ্রহণ করেনি। উপজেলা নির্বাচন এর বড় প্রমাণ।উপজেলা নির্বাচনেও সহিংস ঘটনা ঘটেছে। তবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এত ব্যাপকতা ছিল না। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনারের ব্যর্থতা ছিল চোখে পড়ার মতো। নির্বাচন কমিশন সহিংসতা রোধের ব্যাপারে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। যেসব জায়গায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সহিংসতা হয়েছে, সেসব জায়গাতেই উপজেলা নির্বাচনের সময় সহিংসতা বেশি হয়েছে। সুতরাং নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল নির্বাচনের আগে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তা তারা করেনি। বাংলাদশের রাজনীতিতে ‘ব্লেম গেম’ অর্থাৎ পরস্পরকে দোষারোপ করার যে সংস্কৃতি, তা উপজেলা নির্বাচনেও প্রতিফলিত হয়েছে। তৃতীয় দফা নির্বাচনের পরপরই বিএনপির মুখপাত্র বিভিন্ন কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়া, কেন্দ্র দখল ইত্যাদি ঘটনার জন্য সরকারি দল তথা প্রশাসনযন্ত্রকে দায়ী করেছেন। ঠিক তেমনি প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টাও অভিযোগ করেছেন, ‘বিএনপি মিথ্যা কথার জাল বুনছে।’ বিএনপির অভিযোগের পেছনে সত্যতা যে নেই, তা বলা যাবে না। ২০ ফেব্র“য়ারি এক শীর্ষস্থানীয় দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায় একটি ছবি ছাপা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, নির্বাচনের দায়িত্বে নিযুক্ত একজন কর্মকর্তা ব্যালট পেপারে সিল মারছেন। এর কোনো ব্যাখ্যা নির্বাচন কমিশন থেকে দেয়া হয়নি। একই ধরনের ছবি ছাপা হয়েছে ১৬ মার্চের পত্রিকায়। সংবাদপত্রের ভাষায় ‘উনি পোলিং ভোটার’ (আমাদের সময়)। যুগান্তরের প্রথম পৃষ্ঠার ছবি- ছিনতাইয়ের পর পরিত্যক্ত ব্যালট পেপার কুড়াচ্ছে আনসার সদস্যরা। শেরে বাংলা নগরের নির্বাচন কমিশনের কর্তাব্যক্তিদের কাছে এসব ছবির গুরুত্ব কত, আমি জানি না। কিন্তু আমাকে যা শংকায় ফেলেছে তা হচ্ছে, আমরা কি সামনের দিকে এগোচ্ছি, নাকি পেছনের দিকে হাঁটছি? ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচন, সবাই মিলে সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়া, পরবর্তীকালে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন- সবই ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল এবং ২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত আমরা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করতে পেরেছিলাম। কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনী আমাদের সব অর্জনকে পেছনে ফেলে দিল।ভোটারবিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আমরা সহিংসতা লক্ষ্য করেছি। এরই ধারাবাহিকতায় তিন পর্বের উপজেলা নির্বাচনেও আমরা সহিংসতা দেখলাম। ভোট কেন্দ্র দখল, জাল ভোট প্রদান, নির্বাচন কমিশনের নিষ্ক্রিয়তায় পুরো ভোটদান প্রক্রিয়া প্রশ্নের মুখে পড়ল। ভোটাধিকার একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু ভোট কেন্দ্র দখল, জাল ভোট প্রদানের যে চিত্র আমরা দেখলাম, যে কোনো বিবেচনায় তা অগ্রহণযোগ্য। এ সহিংসতা গণতন্ত্রের জন্য কোনো ভালো খবর নয়। সহিংসতার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সুস্থ রাজনৈতিক চর্চা এখন ঝুঁকির মুখে থাকল। আগামীতে শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের রাজনীতিতে আসার যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল, তারা এখন আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। আমাদের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্য এটা কোনো ভালো খবর নয়। নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করেও নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেল না। তৃণমূল পর্যায়ের নির্বাচনেও যখন সুষ্ঠুতা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ, তখন এ কমিশনের কাছ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা প্রত্যাশা করি কীভাবে? এই নির্বাচন কমিশন তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। বিগত নবম জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করতে পারত নির্বাচন কমিশন। সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবি না জানিয়ে ইসি বিতর্কিত হয়েছিল। কমিশন ২৮ জুলাই (২০১৩) নিজের ক্ষমতা খর্ব করার লক্ষ্যে গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে প্রার্থিতা বাতিল সম্পর্কিত আরপিওর ৯১(ই) ধারা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যদিও পরে প্রতিবাদের মুখে ইসি সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। মিথ্যা হলফনামা দিয়ে কেউ নির্বাচিত হলে তার নির্বাচন বাতিল, নির্বাচনে কারচুপি হলে ফলাফল স্থগিত ও বাতিল করার ক্ষমতা ইসির নেই। নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে না, এটা যদি ইসির কাছে প্রতীয়মান হয়, তাহলেও সে নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা ইসির নেই। আর্থিক বিষয়গুলোয় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সম্পূর্ণ অবমুক্তির দাবিরও কোনো সমাধান হয়নি। এর ফলে সরকারের প্রভাব বিস্তার করার একটা সুযোগ থেকে যায়। ইসির বর্তমান কাঠামোয় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা যে সম্ভব নয়, তা আবারও প্রমাণিত হল।উপজেলা নির্বাচনের বিশেষ গুরুত্ব থাকলেও নির্বাচন কমিশন এ নির্বাচনকে আদৌ গুরুত্ব দেয়নি। এর বড় প্রমাণ তৃতীয় দফা নির্বাচন শুরুর আগের দিন বিকাল ৪টা পর্যন্ত কাউকে নির্বাচন কমিশনে খুঁজে পাওয়া যায়নি। যেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি সাংবিধানিক কর্মকাণ্ড উপেক্ষা করে ‘ছুটি’ কাটাতে যান, সেখানে ইসিতে কাউকে খুঁজে না পাওয়া যাওয়াই বুঝি স্বাভাবিক! তাই ধরে নিতেই হবে, নির্বাচন কমিশন এ নির্বাচনের ব্যাপারে আদৌ আগ্রহী নয়! জানি, নির্বাচন কমিশনের কাছে এর ব্যাখ্যা আছে। কিন্তু যখন সাবেক একজন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করেন এবং ‘ব্যর্থ’ বলে মন্তব্য করেন, তখন বুঝতেই হবে নির্বাচন কমিশনারের সংখ্যা পাঁচে উন্নীত করেও ইসির গ্রহণযোগ্যতা আমরা বাড়াতে পারিনি।আরও দু’দফায় এ নির্বাচন সম্পন্ন হবে। কে জিতল, কে হারল- এর হিসাব হতেই পারে। কিন্তু ক্ষমতাসীন সরকার, তার দলের লোকজন যে নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত হতে দেয় না, এটাই প্রমাণিত হল। আর নির্বাচন কমিশন পরিণত হল ‘কাগুজে বাঘে’। উপজেলা নির্বাচন আমাদের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চাকে আরও শক্তিশালী করতে পারল না।বি.দ্র. গত ১৫ মার্চ প্রকাশিত আমার কলামের একা জায়গায় উল্লেখ করেছিলাম, জওহরলাল নেহেরু তার কন্যা ইন্দিরা গান্ধীকে কংগ্রেসের সভাপতি বানিয়েছিলেন ১৯৬৪ সালে। প্রকৃতপক্ষে ইন্দিরা গান্ধী কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন ১৯৫৯ সালে। Daily JUGANTOR 23.03.14
৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা না পেলেও উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ এ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাই শুধু বাড়িয়ে দেয়নি, বরং গণতন্ত্র চর্চায় নতুন একটি মাত্রা দিয়েছিল। কারণ গণতন্ত্রের ভিত্তি রচিত হয় তৃণমূল পর্যায়ে। তৃণমূল পর্যায়ে গণতন্ত্র যদি শক্তিশালী হয়, তাহলে তা জাতীয় পর্যায়ে গণতন্ত্র চর্চাকে আরও শক্তিশালী করে। তাই যে কোনো বিবেচনায় তৃণমূল পর্যায়ের এ নির্বাচনের গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি। কিন্তু ‘সব দলের অংশগ্রহণ’ (বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি ও বামমনা দলগুলো) সত্ত্বেও উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে না। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের আচরণ (জাল ভোট, ভোট কেন্দ্র দখল, সহিংসতা) প্রমাণ করল বাংলাদেশ গণতন্ত্র চর্চার নতুন এক ধাপে প্রবেশ করেছে। এখানে জনগণের অধিকার প্রয়োগটাই বড় কথা নয়। বরং যে কোনো উপায়ে ক্ষমতা ধরে রাখাই হল আসল কথা।পাঠক, উপজেলা নির্বাচনের (তৃতীয় পর্যায়ে) পর সংবাদপত্রে যেসব সংবাদ ও ছবি প্রকাশিত হয়েছে, তার কয়েকটি দৃষ্টান্ত দিতে চাই। যুগান্তরের শীর্ষ সংবাদ ছিল : ‘সহিংসতা, জাল ভোট, ব্যালট পেপার ছিনতাই’ (১৬ মার্চ)। আরেকটি দৈনিকের শিরোনাম ছিল : ‘এ যেন চরদখলের লড়াই’। পোলিং অফিসার নিজেই ভোট দিয়েছেন সিন্দুরপুর ইউনিয়নের মাছিমপুর বিদ্যালয় কেন্দ্রে- এ ছবিও আছে সংবাদপত্রে (নির্বাচন কমিশন কি তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে?)। চাঁদপুরে ছাত্রলীগ নেতার হুমকি ‘ক্যামেরা দে, না হলে গুলি করব’- এ সংবাদও আছে কাগজে। এখানে মিনিটে ৬টি ভোটের খবর দিয়েছে সংবাদপত্র। বাবুগঞ্জে ছাত্রলীগের সভাপতি একাই দিয়েছেন ৪০০ ভোট। আর নির্বাচন কমিশনার কী বলেছেন দেখুন। আবদুল মোবারক (তিনি এখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার) বললেন, প্রতি মিনিটে ১৩-১৪টি ভোট স্মার্টনেসের পরিচায়ক। তিনি খুশি হয়েছেন সহিংসতায় ৩ জনের বেশি মারা যায়নি বলে। এ জাতির দুর্ভাগ্য, আবদুল মোবারকের মতো লোকজন নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পান। কোন বিবেচনায় তিনি নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন, জানি না। কিন্তু ইসিতে জমা দেয়া তার জীবনবৃত্তান্ত ঘেঁটে দেখলাম, তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ছিলেন (১৯৯৯-২০০১)। যুগ্ম সচিব হিসেবে অবসরে যান ২০০৩ সালে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের ছাত্র। পাস করেছেন ১৯৭০ সালে। কিন্তু অনেক পর ১৯৮৪ সালে বিসিএস দিয়ে নিয়োগ পান (এর আগে ১০ বছর চাকরি করেছেন টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশনে)। এহেন একজন লোক যখন বলেন, মিনিটে ১৩-১৪টি ভোট স্মার্টনেসের পরিচায়ক, তখন ভাবতে অবাক লাগে, রাষ্ট্র এ ধরনের লোককেও সাংবিধানিক পদে নিয়োগ দেয়! এসব লোকের কারণেই নির্বাচন কমিশন তাদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে পারে না। আরও একটা কথা গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচন রেখে সিইসি ছুটিতে যান কীভাবে? তিনি কি আদৌ ফিরে আসবেন?এখন উপজেলা পরিষদের যে নির্বাচন হয়ে গেল, তার মূল্যায়ন আমরা কীভাবে করব? বলতে দ্বিধা নেই, এক্ষেত্রেও অনেকটা আইনগত বাধ্যবাধকতা ছিল। অনেক উপজেলা চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। সুতরাং নতুন উপজেলা চেয়ারম্যানের নির্বাচন প্রয়োজন ছিল। এরই মধ্যে তিন দফা নির্বাচনের একটি ফলাফল আমরা পেয়ে গেছি। পরপর তিন পর্যায়ের নির্বাচনেই বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীরা ভালো করেছে। এতে করে একটা ধারণা করা স্বাভাবিক যে, স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির ভিত্তি অনেক শক্তিশালী। সুতরাং এটা বিবেচনায় নিতে হবে। স্বীকার করতেই হবে, এ নির্বাচন আবারও প্রমাণ করল বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি দ্বি-দলীয় ব্যবস্থার জন্ম হয়েছে। জাতীয় পর্যায় তো বটেই, স্থানীয় পর্যায়ে এ দুই দলের অবস্থান অনেক শক্তিশালী। যদিও স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনের সঙ্গে জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনকে মেলানো যাবে না, তারপরও বাস্তবতা হচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ে এ দল দুটির গণভিত্তি অনেক শক্তিশালী। আর এ গণভিত্তিই জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়। যেহেতু এ নির্বাচন প্রমাণ করেছে, বিএনপিকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন প্রক্রিয়া চিন্তা করা যাবে না, সেহেতু এ উপজেলা নির্বাচনের ফলাফলকে ধারণ করে একাদশ সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারকে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে।উপজেলা নির্বাচন বিএনপি বয়কট করেনি। এর অর্থ পরিষ্কার। বিএনপি নির্বাচনী প্রক্রিযায় থাকতে চায়। অর্থাৎ জাতীয় পর্যায়ের যে সংসদ নির্বাচন, সে ব্যাপারে বিএনপি একটি মেসেজ দিল যে তারা এখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারেও সিরিয়াস। এ নির্বাচন প্রমাণ করল স্থানীয় পর্যায়ে জামায়াতে ইসলামীরও একটা অবস্থান রয়েছে। জামায়াতের প্রার্থীরা বিএনপির সমর্থন নিয়ে একদিকে আওয়ামী লীগ, অন্যদিকে অন্য দলের সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়েছে। সব ধরনের প্রতিকূলতার বিরুদ্ধেও জামায়াত-সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয়কে হালকাভাবে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। একই সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের ভরাডুবি প্রমাণ করল, জাতীয় পার্টির সাম্প্রতিক ভূমিকায় স্থানীয় পর্যায়ের ভোটাররা অসন্তুষ্ট। এটা জাতীয় পার্টির জন্য একটি মেসেজও বটে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃতীয় একটি শক্তি হিসেবে জাতীয় পার্টি বিকশিত হয়েছিল। ১৯৯১ সালের পর থেকে ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের ফলাফল যদি আমরা পর্যালোচনা করি, তাহলে এ সত্যটাই বেরিয়ে আসে, জাতীয় পার্টি বাংলাদেশে তৃতীয় পার্টি। যদিও এর প্রায় পুরো কৃতিত্বই ব্যক্তি এরশাদের। বাহ্যত বৃহত্তর উত্তরবঙ্গকেন্দ্রিক এ দলটির যাত্রা শুরু হয়েছিল ব্যক্তি এরশাদের কারণে। এর বাইরে অন্যত্র জাতীয় পার্টি কিছুটা হলেও তার প্রভাব বাড়িয়েছিল, এটা স্বীকার করতেই হবে। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যা ঘটল, তা পার্টির জন্য কোনো ‘শুভ’ সংবাদ বয়ে আনেনি। একদিকে সরকারে থাকা, আবার বিরোধী দলেও থাকা- এই যে ‘রাজনীতি’, এ রাজনীতি মানুষ গ্রহণ করেনি। উপজেলা নির্বাচন এর বড় প্রমাণ।উপজেলা নির্বাচনেও সহিংস ঘটনা ঘটেছে। তবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এত ব্যাপকতা ছিল না। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনারের ব্যর্থতা ছিল চোখে পড়ার মতো। নির্বাচন কমিশন সহিংসতা রোধের ব্যাপারে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। যেসব জায়গায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সহিংসতা হয়েছে, সেসব জায়গাতেই উপজেলা নির্বাচনের সময় সহিংসতা বেশি হয়েছে। সুতরাং নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল নির্বাচনের আগে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তা তারা করেনি। বাংলাদশের রাজনীতিতে ‘ব্লেম গেম’ অর্থাৎ পরস্পরকে দোষারোপ করার যে সংস্কৃতি, তা উপজেলা নির্বাচনেও প্রতিফলিত হয়েছে। তৃতীয় দফা নির্বাচনের পরপরই বিএনপির মুখপাত্র বিভিন্ন কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়া, কেন্দ্র দখল ইত্যাদি ঘটনার জন্য সরকারি দল তথা প্রশাসনযন্ত্রকে দায়ী করেছেন। ঠিক তেমনি প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টাও অভিযোগ করেছেন, ‘বিএনপি মিথ্যা কথার জাল বুনছে।’ বিএনপির অভিযোগের পেছনে সত্যতা যে নেই, তা বলা যাবে না। ২০ ফেব্র“য়ারি এক শীর্ষস্থানীয় দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায় একটি ছবি ছাপা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, নির্বাচনের দায়িত্বে নিযুক্ত একজন কর্মকর্তা ব্যালট পেপারে সিল মারছেন। এর কোনো ব্যাখ্যা নির্বাচন কমিশন থেকে দেয়া হয়নি। একই ধরনের ছবি ছাপা হয়েছে ১৬ মার্চের পত্রিকায়। সংবাদপত্রের ভাষায় ‘উনি পোলিং ভোটার’ (আমাদের সময়)। যুগান্তরের প্রথম পৃষ্ঠার ছবি- ছিনতাইয়ের পর পরিত্যক্ত ব্যালট পেপার কুড়াচ্ছে আনসার সদস্যরা। শেরে বাংলা নগরের নির্বাচন কমিশনের কর্তাব্যক্তিদের কাছে এসব ছবির গুরুত্ব কত, আমি জানি না। কিন্তু আমাকে যা শংকায় ফেলেছে তা হচ্ছে, আমরা কি সামনের দিকে এগোচ্ছি, নাকি পেছনের দিকে হাঁটছি? ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচন, সবাই মিলে সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়া, পরবর্তীকালে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন- সবই ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল এবং ২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত আমরা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করতে পেরেছিলাম। কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনী আমাদের সব অর্জনকে পেছনে ফেলে দিল।ভোটারবিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আমরা সহিংসতা লক্ষ্য করেছি। এরই ধারাবাহিকতায় তিন পর্বের উপজেলা নির্বাচনেও আমরা সহিংসতা দেখলাম। ভোট কেন্দ্র দখল, জাল ভোট প্রদান, নির্বাচন কমিশনের নিষ্ক্রিয়তায় পুরো ভোটদান প্রক্রিয়া প্রশ্নের মুখে পড়ল। ভোটাধিকার একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু ভোট কেন্দ্র দখল, জাল ভোট প্রদানের যে চিত্র আমরা দেখলাম, যে কোনো বিবেচনায় তা অগ্রহণযোগ্য। এ সহিংসতা গণতন্ত্রের জন্য কোনো ভালো খবর নয়। সহিংসতার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সুস্থ রাজনৈতিক চর্চা এখন ঝুঁকির মুখে থাকল। আগামীতে শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের রাজনীতিতে আসার যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল, তারা এখন আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। আমাদের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্য এটা কোনো ভালো খবর নয়। নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করেও নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেল না। তৃণমূল পর্যায়ের নির্বাচনেও যখন সুষ্ঠুতা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ, তখন এ কমিশনের কাছ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা প্রত্যাশা করি কীভাবে? এই নির্বাচন কমিশন তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। বিগত নবম জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করতে পারত নির্বাচন কমিশন। সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবি না জানিয়ে ইসি বিতর্কিত হয়েছিল। কমিশন ২৮ জুলাই (২০১৩) নিজের ক্ষমতা খর্ব করার লক্ষ্যে গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে প্রার্থিতা বাতিল সম্পর্কিত আরপিওর ৯১(ই) ধারা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যদিও পরে প্রতিবাদের মুখে ইসি সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। মিথ্যা হলফনামা দিয়ে কেউ নির্বাচিত হলে তার নির্বাচন বাতিল, নির্বাচনে কারচুপি হলে ফলাফল স্থগিত ও বাতিল করার ক্ষমতা ইসির নেই। নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে না, এটা যদি ইসির কাছে প্রতীয়মান হয়, তাহলেও সে নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা ইসির নেই। আর্থিক বিষয়গুলোয় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সম্পূর্ণ অবমুক্তির দাবিরও কোনো সমাধান হয়নি। এর ফলে সরকারের প্রভাব বিস্তার করার একটা সুযোগ থেকে যায়। ইসির বর্তমান কাঠামোয় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা যে সম্ভব নয়, তা আবারও প্রমাণিত হল।উপজেলা নির্বাচনের বিশেষ গুরুত্ব থাকলেও নির্বাচন কমিশন এ নির্বাচনকে আদৌ গুরুত্ব দেয়নি। এর বড় প্রমাণ তৃতীয় দফা নির্বাচন শুরুর আগের দিন বিকাল ৪টা পর্যন্ত কাউকে নির্বাচন কমিশনে খুঁজে পাওয়া যায়নি। যেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি সাংবিধানিক কর্মকাণ্ড উপেক্ষা করে ‘ছুটি’ কাটাতে যান, সেখানে ইসিতে কাউকে খুঁজে না পাওয়া যাওয়াই বুঝি স্বাভাবিক! তাই ধরে নিতেই হবে, নির্বাচন কমিশন এ নির্বাচনের ব্যাপারে আদৌ আগ্রহী নয়! জানি, নির্বাচন কমিশনের কাছে এর ব্যাখ্যা আছে। কিন্তু যখন সাবেক একজন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করেন এবং ‘ব্যর্থ’ বলে মন্তব্য করেন, তখন বুঝতেই হবে নির্বাচন কমিশনারের সংখ্যা পাঁচে উন্নীত করেও ইসির গ্রহণযোগ্যতা আমরা বাড়াতে পারিনি।আরও দু’দফায় এ নির্বাচন সম্পন্ন হবে। কে জিতল, কে হারল- এর হিসাব হতেই পারে। কিন্তু ক্ষমতাসীন সরকার, তার দলের লোকজন যে নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত হতে দেয় না, এটাই প্রমাণিত হল। আর নির্বাচন কমিশন পরিণত হল ‘কাগুজে বাঘে’। উপজেলা নির্বাচন আমাদের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চাকে আরও শক্তিশালী করতে পারল না।বি.দ্র. গত ১৫ মার্চ প্রকাশিত আমার কলামের একা জায়গায় উল্লেখ করেছিলাম, জওহরলাল নেহেরু তার কন্যা ইন্দিরা গান্ধীকে কংগ্রেসের সভাপতি বানিয়েছিলেন ১৯৬৪ সালে। প্রকৃতপক্ষে ইন্দিরা গান্ধী কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন ১৯৫৯ সালে। Daily JUGANTOR 23.03.14
‘অনিয়ম দমনে নির্বাচন কমিশনের আগ্রহ নেই’
18:18
No comments
স্টাফ রিপোর্টার | ১৭ মার্চ ২০১৪, সোমবার, ১১:১৪ | মতামত: ২ টি রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান বলেছেন, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক সংস্থা। শপথ নিয়ে তারা দায়িত্ব নেন। কিন্তু তারা জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের যে কোন নির্বাচন পরিচালনায় সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। এখন কমিশনের কর্মকান্ডে মনে হচ্ছে তারা সরকারি প্রতিষ্ঠান। এর আগে কমিশনারের সংখ্যা তিনজন থেকে বাড়িয়ে পাঁচজন করা হয়েছে। কিন্তু কোন লাভ হয় নি। নির্বাচনের চিত্র দিন দিন আরও বেশি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে। ব্যাপকভাবে অনিয়ম হচ্ছে নির্বাচনে অথচ কমিশন তা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না। মানবজমিনকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, কমিশনের মধ্যে অনিয়ম দমনের কোন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। কমিশনাররা যে সব বক্তব্য দিচ্ছেন তা হাস্যকর বালখিল্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, এত অনিয়মের মধ্য দিয়ে নির্বাচন হচ্ছে অথচ প্রধান নির্বাচন কমিশনার দেশের বাইরে রয়েছেন। ইচ্ছা মতো নির্বাচনের কেন্দ্র দখল করে ভোট দেয়া গেলে সেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এই প্রতিষ্ঠান দিয়ে একাদশ নির্বাচনের আলোচনা সম্ভব নয়। তার আগে নির্বাচন কমিশনকে সরকারের প্রভাব বলয় থেকে মুক্ত করার উদ্যোগ চান এই বিশ্লেষক। তিনি বলেন, কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে সরকারি প্রভাব থেকে বের হতে হবে, কমিশনের আলাদা আর্থিক ব্যবস্থা থাকতে হবে বাজেটে। জনবল নিয়োগের জন্য কমিশনের আলাদা ক্যাডার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
Daily Manobjamin Interview
17.03.14
তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির অনিশ্চয়তা এবং আমাদের পররাষ্ট্রনীতি
18:02
No comments
শুষ্ক
মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই তিস্তার পানি প্রাপ্তির যে ভয়াবহ চিত্র সংবাদপত্রে
প্রকাশিত হয়েছে, তা আমাদের দুশ্চিন্তাকে শুধু বাড়িয়েই দিচ্ছে না, বরং
আমাদের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতার দিকটাই প্রকট হয়ে ধরা পড়েছে। বিগত জোট
সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের উন্নতি হলেও, আমাদের বড়
ব্যর্থতা ছিল আমরা তিস্তার পানিবণ্টনের ব্যাপারে কোনো চুক্তি করতে পারিনি।
শুধু তাই নয়_ একই সঙ্গে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ব্যাপারে কিছু অমীমাংসিত
বিষয় রয়েছে, যার কোনো সমাধানও হয়নি। ৭ এপ্রিল ভারতে লোকসভার নির্বাচন শুরু
হচ্ছে। মে মাসের শেষ দিকে ভারত একটি নয়া সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করবে। তাতে
তিস্তাসহ অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান হবে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই।
কেননা সম্ভাব্য একটি বিজেপি সরকার বিরাজমান সমস্যাগুলোর ব্যাপারে কখনো
ইতিবাচক মনোভাব দেখায়নি। ফলে বিজেপির নেতৃত্বাধীন একটি কোয়ালিশন সরকার যদি
ক্ষমতা পায় (জনমত জরিপ অনুযায়ী), তাহলেও তিস্তার পানিবণ্টনের সম্ভাবনা
ক্ষীণ। তাই সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশের করণীয় এখন কী হবে? শুধু
তিস্তার পানিবণ্টনই নয়, ফারাক্কা চুক্তি নিয়েও কথা আছে। টিপাইমুখ বাঁধ,
ফুলেরতল ব্যারাজ, ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প ইত্যাদি নানা প্রশ্ন এখন
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। গত ৫ বছরে ভারতের রাষ্ট্রপতি
থেকে শুরু করে একাধিক মন্ত্রী বাংলাদেশ ঘুরে গিয়ে বারেবারে প্রতিশ্রুতি
দিয়ে গেছেন। কিন্তু কোনো প্রতিশ্রুতিই রক্ষিত হয়নি। তাই ভাটির দেশ হিসেবে
বাংলাদেশের পানির যে প্রাপ্যতা, তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক আসরে সমস্যাটি
তুলে ধরা ছাড়া কোনো বিকল্প আছে বলে মনে হয় না। শুধু 'বন্ধুত্বের
নিদর্শনস্বরূপ আমরা ভারতকে ছাড় দেব, আর ভারত আমাদের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে
পারবে না, তাতো হতে পারে না!
অনেক ইস্যুর মধ্যে তিস্তা একটি বড় ইস্যু। বিমসটেক সম্মেলনে মনমোহন সিং
জানিয়ে দিয়েছেন তিস্তা চুক্তি করা সম্ভব নয়। যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক শেষ
হয়েছে। সেখানেও বাংলাদেশ ব্যর্থ। ভারতীয় পক্ষ কোনো ইতিবাচক মনোভাব দেখায়নি।
সংবাদপত্রে খবর বের হয়েছে যেখানে তিস্তায় ৫ হাজার কিউসেক পানি পাওয়ার কথা,
সেখানে আছে মাত্র ৫০০ কিউসেক। কী ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে
উত্তরবঙ্গ, এই পরিসংখ্যান বোঝার জন্য তা যথেষ্ট। সুতরাং পররাষ্ট্রনীতিকে
ঢেলে সাজাতে হবে। ভারতনির্ভর পররাষ্ট্রনীতি থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।
তিস্তা চুক্তি নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। ভারতের সংবিধানে রাজ্যের মতামতের
গুরুত্ব থাকায় কেন্দ্র এককভাবে কোনো চুক্তি করতে পারে না। এই সংবিধান
সংশোধন করাও সহজ নয়। অতীতে বিজেপির সমর্থন এতে পাওয়া যায়নি। এমনকি ভারতের
রাষ্ট্রপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সীমান্ত সমস্যার
সমাধান হবে বলে মন্তব্য করলেও বাস্তব ক্ষেত্রে এটি নিয়েও সমস্যা রয়েছে।
সীমান্ত সমস্যার সমাধানের ব্যাপারেও সংবিধান সংশোধন জরুরি। বাংলাদেশ-ভারত
একটি সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল ১৯৭৪ সালে। বাংলাদেশ ওই চুক্তি
বাস্তবায়ন করতে সংবিধানে সংশোধনী এনেছে (তৃতীয় সংশোধনী ১৯৭৪)। কিন্তু দীর্ঘ
৩৯ বছরেও ভারত তাদের সংবিধানে সংশোধনী এনে চুক্তিটি 'রেটিফাই' করেনি। ফলে
ছিটমহলগুলো নিয়ে যে সমস্যা, তা রয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে বাংলাদেশের ভূখ-ে আছে
১৭ হাজার ১৪৯ একর ভারতীয় ভূমি। আর ভারতের ভূখ-ে আছে ৭ হাজার ১১১ একর
বাংলাদেশি ভূমি। এসব অঞ্চলের মানুষ এক মানবেতর জীবনযাপন করছে। ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রণব মুখার্জি সীমান্ত সমস্যার
সমাধানের কথা বললেও বাস্তবতা ভিন্ন। দীর্ঘদিন পর ভারতীয় মন্ত্রিসভায় ১৯৭৪
সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি অনুমোদিত হয়েছে। কিন্তু সংবিধান সংশোধনের
প্রশ্নটি এর সঙ্গে জড়িত। সংবিধান সংশোধনে কংগ্রেস সমর্থন পায়নি তৎকলীন
প্রধান বিরোধী দল বিজেপির। মন্ত্রিসভায় মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি অনুমোদন ও
কংগ্রেস কর্তৃক অতি সম্প্রতি সংবিধান সংশোধনের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও,
বিজেপি বলেছিল তারা এ সংশোধনীর বিরোধিতা করবে। ফলে সমস্যা যা ছিল, তা রয়ে
গেছে। শেষ পর্যন্ত সংবিধান সংশোধনের বিলটি লোকসভায় ওঠেনি আর। কংগ্রেস
নেতাদের আন্তরিকতা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন নেই। হয়তো তারা সত্যি সত্যিই চান
সমস্যাগুলোর সমাধান হোক! বিজেপির পাশাপাশি সমস্যা ভারতের আমলাতন্ত্র নিয়েও।
সেই সঙ্গে রয়েছে ভারতের নীতিনির্ধারকদের 'মাইন্ড সেটআপ'। তারা বাংলাদেশকে
কখনো সমমর্যাদার দৃষ্টিতে দেখেছে, এটা আমি মনে করি না। ভারত বড় দেশ। আগামী
৩০ বছরের মধ্যে ভারতের অর্থনীতি হবে বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতি। ভারতে
প্রচ- দরিদ্রতা থাকলেও, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে মাথাপিছু আয় গিয়ে দাঁড়াবে ২২
হাজার ডলার। ভারতের এ অর্থনীতি আমাদের অর্থনীতিকেও গ্রাস করবে। আমাদের
উন্নয়নে ভারত একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে তেমনটি হচ্ছে না। দেখা
গেছে দ্বিপক্ষীয়তার বেড়াজালে ভারত এককভাবে সুবিধা নিচ্ছে। বিভিন্ন ইস্যুতে
যে সমস্যা রয়েছে তা সমাধানে ভারতের আগ্রহ কম। সীমান্ত হত্যা বন্ধ না হওয়ায়
তা বাংলাদেশি মানুষকে ভারতবিদ্বেষী করে তুলেছে। ভারতীয় ঋণে ১৩টি প্রকল্প
নির্ধারিত হলেও, গত ২ বছরে মাত্র ৫টি প্রকল্পের কাজ শেষপর্যায়ে হয়েছে।
বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশি পণ্যের আমদানি বাড়ায়নি ভারত। নানা ধরনের
শুল্ক ও অশুল্ক বাধায় বাংলাদেশি পণ্য চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় বাজারে
প্রবেশ করতে পারছে না। বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও, তাতে
ভারতের স্বার্থ বেশি। কানেকটিভিটির আড়ালে ভারতকে ট্রানজিট বা করিডোর দিলেও,
নেপাল ও ভুটানের জন্য তা সম্প্রসারিত হয়নি। পানি ব্যবস্থাপনার কথা
বাংলাদেশি নেতারা বলেছেন বটে, কিন্তু এখানে ভারতের কোনো উদ্যাগ কখনো
পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ২০১১ সালে মালদ্বীপের আদ্দু সিটিতে ১৭তম সার্ক শীর্ষ
সম্মেলন শেষ হয়। ওই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভুটান, ভারত, নেপাল ও
চীনকে নিয়ে 'গঙ্গা নদী অববাহিকা সংস্থা' ও 'ব্রহ্মপুত্র নদ অববাহিকা
সংস্থা' গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সদ্যসমাপ্ত বিমসটেক সম্মেলনেও তিনি
বলেছেন সে কথা। কিন্তু ভারত তাতে সাড়া দেয়নি। বাংলাদেশের প্রচ- বিদ্যুৎ
ঘাটতি কমাতে সিকিম থেকে বিদ্যুৎ আমদানির কথা বাংলাদেশ বললেও, ভারত তাতে
সম্মতি দেয়নি। (ভারতীয় এলাকার ওপর দিয়ে এই বিদ্যুৎ আনতে হবে)। 'কুনমিং
উদ্যাগ'-এর ব্যাপারেও ভারতের সম্মতি (বিসিআইএম) নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প কিংবা টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের যে
শঙ্কা, সে শঙ্কা দূর করতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি ভারত। বরং একটা ধূম্রজাল
সৃষ্টি করা হয়েছে। সমুদ্রসীমা নিয়েও ভারতের সঙ্গে আমাদের বিপদ আছে, যা এখন
হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারাধীন।
তাই ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনের পর যে প্রশ্নটি থেকেই গেল, তা হচ্ছে এই
নির্বাচনের পর সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেসব জটিলতা আছে, তা কি কাটবে? এখানেই
এসে যায় মূল প্রশ্নটি। ভারতীয় 'মাইন্ড সেটআপ'ও যদি পরিবর্তন না আসে, তাহলে
সম্পর্কের ক্ষেত্রে উন্নতি আসবে না। ভারতকে উদার মনোভাব নিয়ে আসতে হবে। আরো
একটা কথা_ তিস্তাসহ বিভিন্ন সমস্যা বাংলাদেশের কোনো দলের সমস্যা নয়। এটা
জাতীয় সমস্যা। এই জাতীয় সমস্যাগুলোর ব্যাপারে দুটি বড় দল আওয়ামী লীগ ও
বিএনপির এক হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু তা হয়নি। দুঃখজনকভাবে হলেও সত্য নবম সংসদে
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যেসব সমস্যা বিদ্যমান, সেসব সমস্যার সমাধানের
ব্যাপারে কিংবা সমস্যাগুলো নিয়ে সংসদে আদৌ আলোচনা হয়নি। একবার একটি সংসদীয়
প্রতিনিধি দল টিপাইমুখ দেখতে গিয়েছিলেন। এর ফলাফল কী ছিল, আমরা সবাই তা
জানি। নয়াদিলি্লতে ভারতীয় পানিসম্পদমন্ত্রীর সঙ্গে চা-পান করা আর
হেলিকপ্টার ভ্রমণ ছাড়া আমাদের প্রাপ্তির খাতায় 'শূন্য'। সুতরাং ভারতনির্ভর
পররাষ্ট্রনীতি থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে, সমস্যাগুলো যা ছিল, সেভাবেই রয়ে
যাবে, বরং সমস্যারগুলোর গভীরতা আরো বাড়বে।
তিস্তার বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, বাংলাদেশকে
এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ভারতের ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনের আগে আমাদের
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা নয়াদিলি্ল গিয়েছিলেন। তার সঙ্গে ভারতের নিরাপত্তা
উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননের বৈঠক হয়েছে। আমার কাছে যে বিষয়টি অস্পষ্ট, তা
হচ্ছে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এ সময়টা বেছে নিলেন কেন? যদি জনমত সমীক্ষা সত্য
প্রমাণিত হয়, তা হলে তার উচিত ছিল জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করা। অথবা এ সফরে
ভারতের বিজেপির নেতাদের সঙ্গে দেখা করা। শিবশঙ্কর মেননের সঙ্গে আলাপ করে
আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থ কতটুকু রক্ষা করতে পারব, জানি না। কেননা
বিরাজমান সমস্যাগুলোর 'চরিত্র' রাজনৈতিক। একটি রাজনৈতিক সরকারই এ ব্যাপারে
সমাধান দিতে পারবে। শিবশঙ্করের মতো একজন আমলা, এ সমাধান দেবেন না। এ
আমলাদের কারণেই সমস্যাগুলো ঝুলে আছে।
তিস্তার পানির প্রাপ্যতা আমাদের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তিস্তার
পানি না থাকায় তিস্তা ব্যারাজ এখন অকার্যকর। নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর
জেলার ১২ উপজেলার ৬০ হাজার ৫০০ হেক্টর বোরো আবাদ এখন সেচের অভাবে মরতে
বসেছে। কৃষকরা পানি পাচ্ছে না। এ এলাকার কৃষকদের সড়ক ও মহাসড়কে বিক্ষোভ,
কিংবা তিস্তার বুকজুড়ে চরের ছবি আমাদের নেতাদের চিন্তার খোরাক কতটুকু
জোগাবে জানি না, বাস্তবতা হচ্ছে_ আমাদের ন্যায্য অধিকারের ব্যাপারে
'লড়াইটা' আমাদেরই করতে হবে। প্রয়োজনে আমাদের আন্তর্জাতিক দরবারেই যেতে হবে।
Daily JAI JAI DIN
18.03.14
অমীমাংসিত কিছু বিষয় এবং বহুবিধ প্রশ্
18:26
No comments
ভারতে
‘ষোড়শ’ লোকসভা নির্বাচন শুরু হচ্ছে ৭ এপ্রিল থেকে। মোট ৯ দফায় এই ভোটগ্রহণ
শেষ হবে ১২ মে। ধারণা করছি মে মাসের শেষ দিকে ভারতে একটি নয়া সরকার গঠিত
হবে। ইতোমধ্যে সংবাদপত্রে নানা খবর, নানা জরিপের খবর বেরিয়েছে। প্রায়
প্রতিটিতেই বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ (ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক
অ্যালায়েন্স) জোটের বিজয়ের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সঙ্গত কারণেই যে প্রশ্নটি
ওঠে, তা হচ্ছে এই নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যেসব ‘সমস্যা’ রয়েছে, তার সমাধানের ব্যাপারে আদৌ
কোনো উদ্যোগ নেবে কি-না নয়া সরকার?বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে
বেশকিছু অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে, যার সমাধান দীর্ঘদিন ধরেই ঝুলে আছে। আওয়ামী
লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হলেও এসব ‘সমস্যার’ কোনো
সমাধান হয়নি। অথচ বাংলাদেশ ওই সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিভিন্ন
ক্ষেত্রে ভারতকে বেশকিছু ছাড় দিয়েছে। তথাকথিত ‘কানেকটিভিটি’র নামে আমরা
ভারতকে ট্রানজিট দিলেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে জটিলতা, তা দূর
করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি নয়াদিল্লি। তবে প্রতিশ্রুতি আছে অনেক। ভারতের
বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনিও প্রতিশ্রুতি
দিয়েছিলেন। এসেছিলেন সালমান খুরশীদ। তিনিও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু
সমস্যাগুলো যা ছিল, তা-ই রয়ে গেছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে নয়া সরকার ক্ষমতা
নিতে যাচ্ছে নয়াদিল্লিতে। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, বাংলাদেশের ব্যাপারে
তাদের মনোভাবের কতটুকু পরিবর্তন আসবে, তা এই মুহূর্তে বলা কঠিন। এর সঙ্গে
অনেক প্রশ্ন জড়িত। আঞ্চলিক দলগুলো এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ভারতীয়
রাজনীতিতে অন্যতম একটি ‘ফ্যাক্টর’ হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে। তাদের
মনোভাবের, বিশেষ করে তৃণমূল কংগ্রেসের মনোভাবের বিষয়টি নিবেচনায় নিতে হবে।
উপরন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিনি ভূমিকা, চীনের সঙ্গে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন
নৌ-উপস্থিতি বৃদ্ধি, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার ইত্যাদি
বিষয় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ‘প্রভাব’ বিস্তার
করবে। সুতরাং সম্ভাব্য একটি বিজেপি সরকার ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে একটি
‘ইউটার্ন’ নেবে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই।তিস্তা চুক্তি নিয়ে অনেক
কথা হয়েছে। ভারতের সংবিধানে রাজ্যের মতামতের গুরুত্ব থাকায় কেন্দ্র কখনো
এককভাবে কোনো চুক্তি করতে পারে না। এই সংবিধান সংশোধন করাও সহজ নয়। অতীতে
বিজেপির সমর্থন এতে পাওয়া যায়নি। এমনকি ভারতের রাষ্ট্রপতি ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সীমান্ত সমস্যার সমাধান হবে বলে
মন্তব্য করলেও বাস্তব ক্ষেত্রে এ নিয়েও সমস্যা রয়েছে। সীমান্ত সমস্যার
সমাধানের ব্যাপারেও সংবিধান সংশোধন জরুরি। বাংলাদেশ-ভারত একটি সীমান্ত
চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল ১৯৭৪ সালে। বাংলাদেশ ওই চুক্তি বাস্তবায়ন করতে
সংবিধানে সংশোধনী এনেছে (তৃতীয় সংশোধনী, ১৯৭৪)। কিন্তু দীর্ঘ ৩৯ বছরেও ভারত
তাদের সংবিধানে সংশোধনী এনে চুক্তিটি ‘রেটিফাই’ করেনি। ফলে ছিটমহলগুলো
নিয়ে যে সমস্যা, তা রয়ে গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আছে ১৭ হাজার
১৪৯ একর ভারতীয় ভূমি। আর ভারতের ভূখণ্ডে আছে ৭ হাজার ১১১ একর বাংলাদেশি
ভূমি। এসব অঞ্চলের মানুষ এক মানবেতর জীবনযাপন করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রবণ মুখার্জি সীমান্ত সমস্যার সমাধানের কথা বললেও
বাস্তবতা ভিন্ন। দীর্ঘদিন পর ভারতীয় মন্ত্রিসভায় ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা
চুক্তি অনুমোদিত হয়েছে। সংবিধান সংশোধনের প্রশ্নটি এর সঙ্গে জড়িত। সংবিধান
সংশোধনে কংগ্রেস সমর্থন পায়নি তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিজেপির।
মন্ত্রিসভায় মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি অনুমোদন ও কংগ্রেস কর্তৃক সংবিধান
সংশোধনের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও, বিজেপি বলছিল তারা এই সংশোধনীর
বিরোধিতা করবে। ফলে সমস্যা যা ছিল তা রয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত সংবিধান
সংশোধনের বিলটি লোকসভায় ওঠেনি। কংগ্রেস নেতাদের আন্তরিকতা নিয়ে আমাদের
প্রশ্ন নেই। হয়তো তারা সত্যি সত্যিই চান সমস্যাগুলোর সমাধান হোক। কিন্তু
সমস্যা ভারতের আমলাতন্ত্র নিয়ে, সেই সঙ্গে রয়েছে ভারতের নীতি-নির্ধারকদের
‘মাইন্ড সেট আপ’। তারা বাংলাদেশকে কখনো সমমর্যাদার দৃষ্টিতে দেখেছে, এটা
আমি মনে করি না। ভারত বড় দেশ। আগামী ৩০ বছরের মধ্যে ভারতের অর্থনীতি হবে
বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতি। ভারতে প্রচণ্ড দরিদ্রতা থাকলেও আগামী ৩০ বছরের
মধ্যে মাথাপিছু আয় গিয়ে দাঁড়াবে ২২ হাজার ডলার। ভারতের এই অর্থনীতি আমাদের
অর্থনীতিকেও গ্রাস করবে। আমাদের উন্নয়নে ভারত একটি বড় ভূমিকা পালন করতে
পারে। তবে তেমনটি হচ্ছে না। দেখা গেছে দ্বিপাক্ষিকতার বেড়াজালে ভারত
এককভাবে সুবিধা নিচ্ছে। বিভিন্ন ইস্যুতে যে সমস্যা রয়েছে তা সমাধানে ভারতের
আগ্রহ কম। সীমান্ত হত্যা বন্ধ না হওয়ায় তা বাংলাদেশি মানুষকে ভারতবিদ্বেষী
করে তুলেছে। ভারতীয় ঋণে ১৩টি প্রকল্প নির্ধারিত হলেও গত ২ বছরে মাত্র ২টি
প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশি পণ্যের আমদানি
বাড়ায়নি ভারত। নানা ধরনের শুল্ক ও অশুল্ক বাধায় বাংলাদেশি পণ্য চাহিদা থাকা
সত্ত্বেও ভারতীয় বাজারে প্রবেশ করতে পারছে না। বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি
স্বাক্ষরিত হলেও তাতে ভারতের স্বার্থ বেশি। কানেকটিভিটির আড়ালে ভারতকে
ট্রানজিট বা করিডর দিলেও নেপাল ও ভুটানের জন্য তা সম্প্রসারিত হয়নি। পানি
ব্যবস্থাপনার কথা বাংলাদেশি নেতারা বলেছেন বটে, কিন্তু এখানে ভারতের কোনো
উদ্যোগ কখনো পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ২০১১ সালে মালদ্বীপের আদ্দু সিটিতে ১৭তম
সার্ক শীর্ষ সম্মেলন শেষ হয়। ওই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভুটান,
ভারত, নেপাল ও চীনকে নিয়ে ‘গঙ্গা নদী অববাহিকা সংস্থা’ ও ‘ব্রহ্মপুত্র নদ
অববাহিকা সংস্থা’ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সদ্য সমাপ্ত বিমসটেক
সম্মেলনেও তিনি বলেছেন সে কথা। কিন্তু ভারত তাতে সাড়া দেয়নি। বাংলাদেশের
প্রচণ্ড বিদ্যুৎ ঘাটতি কমাতে সিকিম থেকে বিদ্যুৎ আমদানির কথা বাংলাদেশ
বললেও ভারত তাতে সম্মতি দেয়নি (ভারতীয় এলাকার ওপর দিয়ে এই বিদ্যুৎ আনতে
হবে)। ‘কুনমিং উদ্যোগ’-এর ব্যাপারেও ভারতের সম্মতি (বিসিআইএম) নানা
প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প কিংবা টিপাইমুখ বাঁধ দিয়ে
বাংলাদেশের মানুষের যে শঙ্কা, সে শঙ্কা দূর করতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি ভারত;
বরং একটা ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হয়েছে। সমুদ্রসীমা নিয়েও ভারতের সঙ্গে আমাদের
বিবাদ আছে, যা এখন হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারাধীন।তাই ষোড়শ
লোকসভা নির্বাচনের পর যে প্রশ্নটি থেকেই গেল তা হচ্ছে এই নির্বাচনের পর
সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেসব জটিলতা আছে, তা কি কাটবে? এখানেই এসে যায় মূল
প্রশ্নটি। ভারতীয় ‘মাইন্ড সেট আপ’-এ যদি পরিবর্তন না আসে, তাহলে সম্পর্কের
ক্ষেত্রে উন্নতি আসবে না। ভারতকে উদার মনোভাব নিয়ে আসতে হবে। আরো একটি কথা
বলা প্রয়োজন। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর একাধিক ভারতীয় মন্ত্রী বাংলাদেশ
সফর করেছেন। বাংলাদেশের একাধিক মন্ত্রী ও উপদেষ্টা একাধিকবার ভারত সফর
করেছেন। এর মধ্য দিয়ে ভারত আমাদের রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে
নানা কারণে। দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে রাজনীতি, তাতে ভারত
একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। ভারত-যুক্তরাষ্ট্র ‘ঐক্য’ দক্ষিণ এশিয়ার
রাজনীতিতে প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশ সেই প্রভাবের বাইরে থাকতে পারে না। আগেই
উল্লেখ করেছি ভারত একটি অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি। বিশ্বব্যাংকের উপদেষ্টা
হরিন্দর কোহলির মতে, আগামী ৩০ বছরে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতির দেশে
পরিণত হবে। তখন মাথাপিছু আয় ৯৪০ ডলার থেকে ২২ হাজার ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে।
২০০৭ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারত যেখানে অবদান রাখত মাত্র ২ ভাগ, তখন অবদান
রাখবে ১৭ ভাগ। সুতরাং এই অর্থনীতির প্রভাব পার্শ্ববর্তী দেশের ওপর পড়বেই।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্ররা জানেন একটি বড় দেশের পাশে যদি একটি ছোট দেশ
থাকে, তাহলে ওই বড় দেশ ছোট দেশের ওপর প্রভাব খাটায়। মেদভেদেভের (সাবেক
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট, বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী) ধারণা ‘Zone of privileged
Interest’ অনেকটা এ ধারণাকেই সমর্থন করে। তাই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে
অতিমাত্রায় ‘ভারতমুখিতা’ সাম্প্রতিককালে বিতর্কের মাত্রা বাড়ালেও বাস্তবতা
হচ্ছে আমরা ভারতের ‘প্রভাব’ থেকে বের হয়ে আসতে পারছি না। তবে এ ক্ষেত্রে
আমাদের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা এক জায়গাতে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় আমরা
দক্ষতার পরিচয় দিতে পারিনি। আমাদের ‘প্রাপ্তি’ এখানে কম, ভারতের ‘প্রাপ্তি’
অনেক বেশি। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের
ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়। ২০১০ সালেই প্রধানমন্ত্রী ভারত গেছেন।
ফিরতি সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে আসেন ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে। এ
ধরনের সফর ও পাল্টা সফরের মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণ হয়ে গেছে যে, বাংলাদেশের
রাজনীতিতে ভারত একটি ‘ফ্যাক্টর’। বেগম জিয়া এটাকে বিবেচনায় নিয়েই ভারতে
গিয়েছিলেন। বলার অপেক্ষা রাখে না বাংলাদেশে পরিবর্তিত রাজনীতির প্রেক্ষাপটে
বেগম জিয়া এই মুহূর্তে বিরোধীদলীয় নেতা নন বটে, কিন্তু মনে রাখতে হবে এ
দেশের জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশকে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন। বেগম জিয়ার
নয়াদিল্লি সফর সফল হয়েছিল, এটা বলা যাবে না। নানা কারণে, বিশেষ করে বিএনপির
সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ককে ভারতীয় নেতারা খুব সহজভাবে নিতে পারেননি।
কংগ্রেস বরাবরই আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে গেছে। রাজনৈতিকভাবে কংগ্রেস আর
আওয়ামী লীগের মাঝে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। এখন অনেকেই বলার চেষ্টা করেন
বিএনপি ক্ষমতায় এলে বিএনপির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে। এটাও ভুল
ধারণা। ভারতে যে জোটই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তারা জাতীয় স্বার্থের বাইরে
কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। এর অর্থ হচ্ছে বিজেপি জোট ক্ষমতাসীন হলেও
(?) বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারতের যে নীতি, তাতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা ক্ষীণ।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের নীতি-নির্ধারকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক বেশি।
তিস্তা চুক্তি থেকে গুরু করে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো প্রতিটি ক্ষেত্রে
বাংলাদেশের স্বার্থ অনেক বেশি। তাই বাংলাদেশের স্বার্থকে বিবেচনায় নিয়ে
ভারতের নয়া সরকারের সঙ্গে দ্রুতই আলাপ-আলোচনা শুরু করতে হবে। দ্বিপাক্ষিক
আলোচনায় আমাদের দক্ষতা দেখাতে হবে। ভারতে নয়া সরকার এলেই আমাদের সব সমস্যার
সমাধান হয়ে যাবে, আমরা যেন এ ধরনের আত্মতুষ্টিতে না ভুগি।
Daily Manobkontho
17.03.14
রাহুল গান্ধীর স্বপ্ন কি ভঙ্গ হতে যাচ্ছে?
17:41
No comments
তিনি
রাজনীতির রাজপুত্র। রাহুল গান্ধী। ভারতের কংগ্রেসের অন্যতম ভাইস
চেয়ারম্যান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং যাকে অভিহিত করেছিলেন
ভারতের ‘ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে। সেই রাহুল গান্ধীর কি স্বপ্নভঙ্গ
হতে যাচ্ছে? ৭ এপ্রিল শুরু হচ্ছে ভারতের ষোড়শ লোকসভার নির্বাচন। মোট ৯ দফায়
এ নির্বাচন শেষ হবে ১২ মে। ১৬ মে জানা যাবে কে হতে যাচ্ছেন ভারতের পরবর্তী
প্রধানমন্ত্রী। আর সেই নামটি যে রাহুল গান্ধী নয়, তা একাধিক জনমত জরিপেই
উঠে এসেছে। একাধিক জরিপে (এপিপি নিউজ ও নিয়েলসন কোম্পানির সমীক্ষা) বিজেপির
নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএকে (ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স) এগিয়ে রাখা
হয়েছে। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এনডিএ জোট পেতে পারে ২২৬টি আসন। আর কংগ্রেসের
নেতৃত্বাধীন ইউপিএ (ইউনাইটেড পিপলস অ্যালায়েন্স) জোটের আসন অনেক কম, মাত্র
১০১। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বামরা পেতে পারে ৩০ আসন, তৃণমূল ২৬, আর অন্যান্য
আঞ্চলিক জোট ১৬০ আসন। লোকসভার মোট আসন সংখ্যা ৫৪৩, আর সরকার গঠন করার জন্য
প্রয়োজন ২৭২টি আসন। বলা ভালো, এনডিএ জোট সর্বশেষ ২০০৯ সালের নির্বাচনে
পেয়েছিল ১৫৯টি আসন, ইউপিএ ২৬২টি, বামমনারা ২৪, তৃণমূল ১৯, অন্যরা ৮২টি আসন।
এখন জনমত জরিপে পিছিয়ে আছে কংগ্রেস। ম্যাজিক ফিগার ২৭২টি আসনের চেয়ে অনেক
পেছনে এখন কংগ্রেস। পরপর কয়েকটি জনমত সমীক্ষায় কংগ্রেস তার জনপ্রিয়তা
বাড়াতে পারেনি।ভারতে এই মুহূর্তে ৪টি জোট দৃশ্যমান। লোকসভা নির্বাচনকে
কেন্দ্র করে এ জোট গঠিত হয়েছে। এনডিএ বা ইউপিএ জোটের বাইরে ১১টি বামমনা দল
নিয়ে গঠিত হয়েছিল তৃতীয় ফ্রন্ট। আর মমতা ব্যানার্জির বরাবরই বামদের
ব্যাপারে আপত্তি। তাই মমতা ও জয়ললিতার নেতৃত্বে জন্ম হয়েছে ‘ফেডারেল
ফ্রন্ট’। মূলত আঞ্চলিক দলগুলো এ ফ্রন্টের সদস্য। এরা একসময় বামদের
নেতৃত্বাধীন তৃতীয় জোটে ছিল। এখন তৃতীয় জোট থেকে বেরিয়ে তারা চতুর্থ জোট
গঠন করেছে। মূলত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা ও পশ্চিমবঙ্গের
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির উদ্যোগেই এ চতুর্থ জোট গঠন। এদের সঙ্গে আছে
উড়িষ্যার হিন্দু জনতা দল, ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা, উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী
পার্টি, বিহারের নীতিশকুমারের সংযুক্ত জনতা দল, অন্ধ্র প্রদেশের জগমোহন
রেড্ডির কংগ্রেস, তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি ও আরও ১০টি দল। জনমত জরিপে
এদের এখন তৃতীয় শক্তি বলা হচ্ছে। তবে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলে এ ফ্রন্ট
যদি দ্বিতীয় অবস্থানে থাকে, তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে এটা ঠিক,
নির্বাচনের পরপর তারা অন্যতম ফ্যাক্টর হিসেবে আবির্ভূত হবে। এ মুহূর্তে
তারা নরেন্দ্র মোদিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চাচ্ছেন না, এটা সত্য। তবে
রাজনীতির হিসাব-নিকাশ বদলে যেতে পারে নির্বাচনের পর। বিজেপিকে ঠেকাতে এরা
যদি শেষ পর্যন্ত ইউপিএ জোটের সঙ্গে ঐক্য করে সরকার গঠন করে, তাহলেও অবাক
হওয়ার কিছু নেই। তবে সঙ্গত কারণেই এ জোটের আসন সংখ্যা যদি ইউপিএ জোটের চেয়ে
বেশি হয়, তো রাহুল গান্ধীকে তারা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নেবেন না।
তাহলে কে হবেন ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী? মমতা ব্যানার্জি নাকি জয়ললিতা? ১২ মার্চ নয়াদিল্লিতে জনসভা করেছেন মমতা। তবে বড় প্রশ্ন তো থাকলই- মাত্র ৩ সপ্তাহের ব্যবধানে ইউপিএ জোট কতটুকুইবা তাদের জনমত বাড়াতে পারবে? তাহলে কি রাহুল গান্ধী ব্যর্থ হলেন? সাম্প্রতিক সময়গুলোতে তিনি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল চষে বেড়িয়েছেন। বারানসিতে গিয়ে সেখানকার রিকশাওয়ালাদের সঙ্গে রাস্তায় এসে বৈঠক করেছেন (একদিন রিকশা চালানোর কথাও বলেছেন তিনি)। দিল্লি রেলস্টেশনে গিয়ে কুলিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ভূপালে নারীদের সঙ্গে বৈঠক করার সময় হিজড়াদেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ফুটপাতের হকারদেরও ডেকেছেন নিজের বাসায়। মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গবাদে উপজাতিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন যেমন, তেমনি বৈঠক করেছেন শিল্পপতিদের সঙ্গেও। এতে করে বোঝা যায়, রাহুল নতুন এক ইমেজ নিয়ে আসছেন। তৃণমূল পর্যায়ে গরিব ও নিুমধ্যবিত্ত শ্রেণীর জীবনমানের উন্নতি করতে চান তিনি। ভারতে এদের সংখ্যাই প্রায় ৭০ কোটি। এদের নিয়েই বিহারের লালুপ্রসাদ, মায়াবতী আর মুলায়েম সিংরা রাজনীতি করেন। মায়াবতী এদের নিয়ে রাজনীতি করে বিশাল এক আর্থিক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। এরা একটি শক্তি। বিশ্বব্যাংকের (২০১৩) প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের ৩ ভাগের ২ ভাগ গরিব মানুষ বাস করে ভারতে। সুতরাং রাহুল গান্ধী এদের টার্গেট করেছেন। কিন্তু তাতেও তিনি নিজের তথা দলের জনপ্রিয়তা বাড়াতে পারেননি। তাই রাহুল গান্ধীর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল।অনেকেই বলার চেষ্টা করেন, কংগ্রেস যদি রাহুলের পরিবর্তে ছোট বোন প্রিয়াংকা ভদ্রকে ‘প্রমোট’ করত, তাহলে বোধ করি ভালো ফলাফল পাওয়া যেত। প্রিয়াংকা বরাবরই মা সোনিয়া গান্ধীর নির্বাচনী এলাকার (রায়বেরলি) দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাচনে কখনও প্রার্থী হন না। তবে ভারতের রাজনীতিতে নেহেরু পরিবার বরাবরই একটি ‘ভোটব্যাংক’। কংগ্রেস নেতারা বরাবরই নেহেরু পরিবারকে ব্যবহার করেছে। রাজনীতিতে এ পরিবারের একক কর্তৃত্ব গড়ে তুলেছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর দাদা মতিলাল নেহেরু। আর রাহুল গান্ধী হচ্ছেন ইন্দিরা গান্ধীর নাতি। মতিলাল নেহেরু ১৯২১ সালে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ইন্দিরা গান্ধীর পিতা জওহরলাল নেহেরুও ছিলেন কংগ্রেসের সভাপতি। জওহরলাল জীবদ্দশায় কন্যা ইন্দিরাকে কংগ্রেসের সভাপতি বানিয়েছিলেন ১৯৬৪ সালে। আর সেই একই প্রক্রিয়ায় রাহুলের পিতা রাজীব গান্ধীও কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন ১৯৮৩ সালে। পরে তিনি কংগ্রেসের সভাপতিও হন। এখন কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। মার নেতৃত্বেই রাহুল প্রথমে একজন সাধারণ সম্পাদক ও পরে অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী, এটা নির্ধারিতই ছিল। মনমোহন সিংও স্পষ্ট করেছিলেন তা। কিন্তু অংকের হিসাবটা কেন যেন বদলে যাচ্ছে! এই ব্যর্থতা কি রাহুলের? মানুষ কি পরিবর্তন চাচ্ছে? শেষ অবধি কি মোদিই প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন? নাকি জন্ম হতে যাচ্ছে একটি ‘ঝুলন্ত পার্লামেন্টের’?ভারতের রাজনীতির যারা কিছুটা খোঁজখবর রাখেন, তারা জানেন একাদশ লোকসভা নির্বাচনের পর একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় যে, সরকার তার স্থায়িত্ব পাচ্ছে না। একাদশ লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯৬ সালের মে মাসে। আর দ্বাদশ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৮ সালের ফেব্র“য়ারিতে। একাদশ লোকসভা নির্বাচনের পর বিজেপির নেতৃত্বে একটি সরকার গঠিত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ী। তার প্রধানমন্ত্রীর বয়স ছিল মাত্র ১৩ দিন। বাজপেয়ী পদত্যাগ করলে জনতা দলের নেতৃত্বে একটি যুক্তফ্রন্ট সরকার সেখানে গঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী হন দেবগৌড়া। দেবগৌড়া সরকারকে সমর্থন করেছিল কংগ্রেস। কংগ্রেসের সমর্থন হারিয়ে আস্থাভোটে হেরে যান দেবগৌড়া। পরে গুজরাল যুক্তফ্রন্টের নেতা নির্বাচিত হলে কংগ্রেস তাকে সমর্থন করে। কিন্তু জৈন কমিশনের রিপোর্ট (রাজীব গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ডিএমকের জড়িত থাকার প্রমাণ) প্রকাশিত হলে পতন ঘটে গুজরাল সরকারের (২৮ নভেম্বর ১৯৯৭)। দ্বাদশ লোকসভা নির্বাচনেও কংগ্রেসের ভরাডুবি ঘটে। তারা আসন পেয়েছিল ১৪২ (১০ম লোকসভায় ২৩২ ও ২৫২, ১১তম লোকসভায় ১৪২), যেখানে বিজেপি পেয়েছিল ১৮২ আসন। ত্রয়োদশ লোকসভা নির্বাচনের পর বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার সেখানে গঠিত হয়েছিল। তাদের শরিক ছিল আঞ্চলিক দলগুলো। আঞ্চলিক দলগুলোর সহযোগিতা নিয়েই বাজপেয়ীর পক্ষে সম্ভব হয়েছিল সরকার গঠন করা। ২০০৪ সালে ১৪তম ও ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত ১৫তম লোকসভা নির্বাচনের পরপর দু’টার্ম ইউপিএ জোট বিজয়ী হয়েছিল এবং দু’দুবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মনমোহন সিং।এখানে বিজেপির উত্থান নিয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। ভারতব্যাপী কংগ্রেসের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী এখন এই বিজেপি। অথচ ১৯৮৪ সালে বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ২টি আসন। ১৯৮৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৮টিতে। আর ১৯৯১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৭টিতে। ১৯৯৬ সালে এ সংখ্যা ১৬২, ১৯৯৮ সালে ১৮২। পর্যায়ক্রমে বিজেপি যে তাদের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে এবং কংগ্রেসের বিকল্প একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের দাঁড় করাতে পেরেছে, পরিসংখ্যানই আমাদের এ কথা বলে। এ ক্ষেত্রে ১৬তম লোকসভা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিজেপি যদি আবার সরকার গঠন করে, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। জনমত জরিপ যদি সত্য হয় এবং কংগ্রেস যদি হেরে যায়, তাহলে রাহুল গান্ধীর জন্য তা হবে একটা বড় ধরনের পরাজয়। একই সঙ্গে তার নেতৃত্বের জন্য সৃষ্টি হবে বড় ধরনের হুমকি।এ নির্বাচন বাংলাদেশকে কী মেসেজ দেবে? এ ক্ষেত্রে যেটা স্পষ্ট করেই বলা যায় তা হচ্ছে, বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতীয় নীতিতে আদৌ কোনো পরিবর্তন আসবে না। নরেন্দ্র মোদির কট্টর ‘হিন্দুত্ববাদ’ এক ধরনের আশংকা সৃষ্টি করলেও আঞ্চলিক দলগুলোর উত্থান এক ধরনের ‘চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স’ হিসেবে কাজ করবে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় যে সমস্যা, বিশেষ করে তিস্তার পানি বণ্টন, ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প, টিপাইমুখ বাঁধ ও ফুলেরতল ব্যারাজ, বাণিজ্য ঘাটতি, ভারতের শুল্ক ও অশুল্ক বাধা, ট্রানজিটের নামে করিডোর, সীমান্ত সমস্যা তথা ছিটমহল বিনিময় ইত্যাদির ক্ষেত্রে চটজলদি কোনো সমাধান আসবে বলেও মনে হয় না। আমাদের একটা বড় সমস্যা হল, দরকষাকষিতে আমরা আমাদের দক্ষতা দেখাতে পারিনি। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অতিমাত্রায় ভারতকেন্দ্রিক হলেও আমরা আমাদের স্বার্থ আদায় করে নিতে পারিনি। আমাদের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যস্ত ছিলেন বিদেশ ভ্রমণে। এখন একজন অভিজ্ঞ কূটনীতিককে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে পেয়েছি। তিনি ‘শাটল ডিপ্লোম্যাসি’তে বিশ্বাস করেন না। এগোতে চাচ্ছেন ধীরে। তাই বাংলাদেশের অনেক স্বার্থ থাকবে ভারতের ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনে। মে মাসের শেষ দিকে নয়াদিল্লিতে নতুন সরকার গঠিত হলেই সংলাপ শুরু করতে হবে। অনেক বিষয় আছে আমাদের অমীমাংসিত। Daily JUGANTOR 15.03.14
তাহলে কে হবেন ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী? মমতা ব্যানার্জি নাকি জয়ললিতা? ১২ মার্চ নয়াদিল্লিতে জনসভা করেছেন মমতা। তবে বড় প্রশ্ন তো থাকলই- মাত্র ৩ সপ্তাহের ব্যবধানে ইউপিএ জোট কতটুকুইবা তাদের জনমত বাড়াতে পারবে? তাহলে কি রাহুল গান্ধী ব্যর্থ হলেন? সাম্প্রতিক সময়গুলোতে তিনি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল চষে বেড়িয়েছেন। বারানসিতে গিয়ে সেখানকার রিকশাওয়ালাদের সঙ্গে রাস্তায় এসে বৈঠক করেছেন (একদিন রিকশা চালানোর কথাও বলেছেন তিনি)। দিল্লি রেলস্টেশনে গিয়ে কুলিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ভূপালে নারীদের সঙ্গে বৈঠক করার সময় হিজড়াদেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ফুটপাতের হকারদেরও ডেকেছেন নিজের বাসায়। মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গবাদে উপজাতিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন যেমন, তেমনি বৈঠক করেছেন শিল্পপতিদের সঙ্গেও। এতে করে বোঝা যায়, রাহুল নতুন এক ইমেজ নিয়ে আসছেন। তৃণমূল পর্যায়ে গরিব ও নিুমধ্যবিত্ত শ্রেণীর জীবনমানের উন্নতি করতে চান তিনি। ভারতে এদের সংখ্যাই প্রায় ৭০ কোটি। এদের নিয়েই বিহারের লালুপ্রসাদ, মায়াবতী আর মুলায়েম সিংরা রাজনীতি করেন। মায়াবতী এদের নিয়ে রাজনীতি করে বিশাল এক আর্থিক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। এরা একটি শক্তি। বিশ্বব্যাংকের (২০১৩) প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের ৩ ভাগের ২ ভাগ গরিব মানুষ বাস করে ভারতে। সুতরাং রাহুল গান্ধী এদের টার্গেট করেছেন। কিন্তু তাতেও তিনি নিজের তথা দলের জনপ্রিয়তা বাড়াতে পারেননি। তাই রাহুল গান্ধীর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল।অনেকেই বলার চেষ্টা করেন, কংগ্রেস যদি রাহুলের পরিবর্তে ছোট বোন প্রিয়াংকা ভদ্রকে ‘প্রমোট’ করত, তাহলে বোধ করি ভালো ফলাফল পাওয়া যেত। প্রিয়াংকা বরাবরই মা সোনিয়া গান্ধীর নির্বাচনী এলাকার (রায়বেরলি) দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাচনে কখনও প্রার্থী হন না। তবে ভারতের রাজনীতিতে নেহেরু পরিবার বরাবরই একটি ‘ভোটব্যাংক’। কংগ্রেস নেতারা বরাবরই নেহেরু পরিবারকে ব্যবহার করেছে। রাজনীতিতে এ পরিবারের একক কর্তৃত্ব গড়ে তুলেছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর দাদা মতিলাল নেহেরু। আর রাহুল গান্ধী হচ্ছেন ইন্দিরা গান্ধীর নাতি। মতিলাল নেহেরু ১৯২১ সালে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ইন্দিরা গান্ধীর পিতা জওহরলাল নেহেরুও ছিলেন কংগ্রেসের সভাপতি। জওহরলাল জীবদ্দশায় কন্যা ইন্দিরাকে কংগ্রেসের সভাপতি বানিয়েছিলেন ১৯৬৪ সালে। আর সেই একই প্রক্রিয়ায় রাহুলের পিতা রাজীব গান্ধীও কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন ১৯৮৩ সালে। পরে তিনি কংগ্রেসের সভাপতিও হন। এখন কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। মার নেতৃত্বেই রাহুল প্রথমে একজন সাধারণ সম্পাদক ও পরে অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী, এটা নির্ধারিতই ছিল। মনমোহন সিংও স্পষ্ট করেছিলেন তা। কিন্তু অংকের হিসাবটা কেন যেন বদলে যাচ্ছে! এই ব্যর্থতা কি রাহুলের? মানুষ কি পরিবর্তন চাচ্ছে? শেষ অবধি কি মোদিই প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন? নাকি জন্ম হতে যাচ্ছে একটি ‘ঝুলন্ত পার্লামেন্টের’?ভারতের রাজনীতির যারা কিছুটা খোঁজখবর রাখেন, তারা জানেন একাদশ লোকসভা নির্বাচনের পর একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় যে, সরকার তার স্থায়িত্ব পাচ্ছে না। একাদশ লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯৬ সালের মে মাসে। আর দ্বাদশ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৮ সালের ফেব্র“য়ারিতে। একাদশ লোকসভা নির্বাচনের পর বিজেপির নেতৃত্বে একটি সরকার গঠিত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ী। তার প্রধানমন্ত্রীর বয়স ছিল মাত্র ১৩ দিন। বাজপেয়ী পদত্যাগ করলে জনতা দলের নেতৃত্বে একটি যুক্তফ্রন্ট সরকার সেখানে গঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী হন দেবগৌড়া। দেবগৌড়া সরকারকে সমর্থন করেছিল কংগ্রেস। কংগ্রেসের সমর্থন হারিয়ে আস্থাভোটে হেরে যান দেবগৌড়া। পরে গুজরাল যুক্তফ্রন্টের নেতা নির্বাচিত হলে কংগ্রেস তাকে সমর্থন করে। কিন্তু জৈন কমিশনের রিপোর্ট (রাজীব গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ডিএমকের জড়িত থাকার প্রমাণ) প্রকাশিত হলে পতন ঘটে গুজরাল সরকারের (২৮ নভেম্বর ১৯৯৭)। দ্বাদশ লোকসভা নির্বাচনেও কংগ্রেসের ভরাডুবি ঘটে। তারা আসন পেয়েছিল ১৪২ (১০ম লোকসভায় ২৩২ ও ২৫২, ১১তম লোকসভায় ১৪২), যেখানে বিজেপি পেয়েছিল ১৮২ আসন। ত্রয়োদশ লোকসভা নির্বাচনের পর বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার সেখানে গঠিত হয়েছিল। তাদের শরিক ছিল আঞ্চলিক দলগুলো। আঞ্চলিক দলগুলোর সহযোগিতা নিয়েই বাজপেয়ীর পক্ষে সম্ভব হয়েছিল সরকার গঠন করা। ২০০৪ সালে ১৪তম ও ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত ১৫তম লোকসভা নির্বাচনের পরপর দু’টার্ম ইউপিএ জোট বিজয়ী হয়েছিল এবং দু’দুবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মনমোহন সিং।এখানে বিজেপির উত্থান নিয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। ভারতব্যাপী কংগ্রেসের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী এখন এই বিজেপি। অথচ ১৯৮৪ সালে বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ২টি আসন। ১৯৮৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৮টিতে। আর ১৯৯১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৭টিতে। ১৯৯৬ সালে এ সংখ্যা ১৬২, ১৯৯৮ সালে ১৮২। পর্যায়ক্রমে বিজেপি যে তাদের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে এবং কংগ্রেসের বিকল্প একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের দাঁড় করাতে পেরেছে, পরিসংখ্যানই আমাদের এ কথা বলে। এ ক্ষেত্রে ১৬তম লোকসভা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিজেপি যদি আবার সরকার গঠন করে, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। জনমত জরিপ যদি সত্য হয় এবং কংগ্রেস যদি হেরে যায়, তাহলে রাহুল গান্ধীর জন্য তা হবে একটা বড় ধরনের পরাজয়। একই সঙ্গে তার নেতৃত্বের জন্য সৃষ্টি হবে বড় ধরনের হুমকি।এ নির্বাচন বাংলাদেশকে কী মেসেজ দেবে? এ ক্ষেত্রে যেটা স্পষ্ট করেই বলা যায় তা হচ্ছে, বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতীয় নীতিতে আদৌ কোনো পরিবর্তন আসবে না। নরেন্দ্র মোদির কট্টর ‘হিন্দুত্ববাদ’ এক ধরনের আশংকা সৃষ্টি করলেও আঞ্চলিক দলগুলোর উত্থান এক ধরনের ‘চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স’ হিসেবে কাজ করবে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় যে সমস্যা, বিশেষ করে তিস্তার পানি বণ্টন, ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প, টিপাইমুখ বাঁধ ও ফুলেরতল ব্যারাজ, বাণিজ্য ঘাটতি, ভারতের শুল্ক ও অশুল্ক বাধা, ট্রানজিটের নামে করিডোর, সীমান্ত সমস্যা তথা ছিটমহল বিনিময় ইত্যাদির ক্ষেত্রে চটজলদি কোনো সমাধান আসবে বলেও মনে হয় না। আমাদের একটা বড় সমস্যা হল, দরকষাকষিতে আমরা আমাদের দক্ষতা দেখাতে পারিনি। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অতিমাত্রায় ভারতকেন্দ্রিক হলেও আমরা আমাদের স্বার্থ আদায় করে নিতে পারিনি। আমাদের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যস্ত ছিলেন বিদেশ ভ্রমণে। এখন একজন অভিজ্ঞ কূটনীতিককে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে পেয়েছি। তিনি ‘শাটল ডিপ্লোম্যাসি’তে বিশ্বাস করেন না। এগোতে চাচ্ছেন ধীরে। তাই বাংলাদেশের অনেক স্বার্থ থাকবে ভারতের ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনে। মে মাসের শেষ দিকে নয়াদিল্লিতে নতুন সরকার গঠিত হলেই সংলাপ শুরু করতে হবে। অনেক বিষয় আছে আমাদের অমীমাংসিত। Daily JUGANTOR 15.03.14
স্নায়ুযুদ্ধের দ্বিতীয় পর্ব শুরু!
17:51
No comments
ইউক্রেনের
সংকটকে কেন্দ্র করে জন্ম হয়েছে স্নায়ুযুদ্ধ-২-এর। বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিক
পরিসরে ব্যাপকভাবে আলোচিত। অনেকেই স্মরণ করতে পারেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের
পরপরই ইউরোপে দুই পরাশক্তির মধ্যে 'প্রভাববলয়' বিস্তারের রাজনীতিকে কেন্দ্র
করে জন্ম হয়েছিল স্নায়ুযুদ্ধের। দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক
সোভিয়েত ইউনিয়ন ইউরোপে নিজেদের কর্তৃত্ব ও প্রভাব বৃদ্ধির লক্ষ্যে যে
প্রতিযোগিতার জন্ম দিয়েছিল, একসময় তা ছড়িয়ে পড়েছিল সারা বিশ্বে। ১৯৯১ সালের
ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তি এবং দেশটি ভেঙে যাওয়ার পরই অবসান ঘটে
এই স্নায়ুযুদ্ধের। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়গুলোতে রাশিয়ার উত্থান ও
বিশ্বরাজনীতিকে প্রভাবিত করার প্রবণতা এবং সর্বশেষ রাশিয়ার সীমান্তবর্তী
দেশ ইউক্রেনের ক্রিমিয়ায় সেনাবাহিনী পাঠানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে রাশিয়ার যে বৈরিতার জন্ম
হয়েছে, তাকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞরা আখ্যায়িত করেছেন
স্নায়ুযুদ্ধ-২ হিসেবে। ক্রিমিয়ায় রুশ সেনা পাঠানোর ঘটনা এ অঞ্চলে বড় ধরনের
উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। শুধু ইউক্রেনই নয়, বরং পার্শ্ববর্তী পোল্যান্ডের
নিরাপত্তাও এখন হুমকির সম্মুখীন। এই নিরাপত্তাহীনতা এখন এই দেশগুলোকে এবং
সেই সঙ্গে জর্জিয়াকে আরো বেশি মাত্রায় ন্যাটোর ওপর নির্ভরশীল করে তুলবে। এই
দেশগুলো, সেই সঙ্গে এক পাশে রুমানিয়া, বুলগেরিয়া; অন্য পাশে জর্জিয়া
কৃষ্ণসাগরভুক্ত অঞ্চল। তুরস্ক রয়েছে অন্য পাশে। ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখলে দেখা
যাবে, এ অঞ্চলে ন্যাটোর যে সম্প্রসারণ ঘটেছে, তার প্রতিক্রিয়া হিসেবেই
ক্রিমিয়ায় সেনা পাঠাল রাশিয়া। এ অঞ্চলজুড়ে ন্যাটোর যে সম্প্রসারণ ঘটেছে, তা
রাশিয়ার নেতারা শুধু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণই করছেন না, বরং এই সম্প্রসারণ যে
তাঁদের নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ, তা তাঁরা একাধিকবার বলেছেন। একসময়
পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন ওয়ারশ সামরিক
জোটের (বিলুপ্ত ১৯৮৮) সদস্য ছিল। এখন এই দেশগুলো (রুমানিয়া, পোল্যান্ড,
হাঙ্গেরি, বাল্টিকভুক্ত দেশগুলো, চেক, বুলগেরিয়া) ন্যাটোর সদস্য।
ঐতিহাসিকভাবেই ক্রিমিয়ার বন্দর সেভাসটোপোলে রয়েছে রাশিয়ার নৌবাহিনীর বিশাল
উপস্থিতি। কৃষ্ণসাগর বা ব্ল্যাক সির পশ্চিম পাশে রুমানিয়ার মিহাইল
কোগালনাইসেআনুতে রয়েছে ন্যাটোর বিমান ঘাঁটি। এই বিমান ঘাঁটির গুরুত্ব অনেক।
আফগানিস্তানে সেনা ও রসদ সরবরাহের জন্য ট্রানজিট রুট হিসেবে এই বিমান
ঘাঁটি ব্যবহৃত হয়।
শুধু
তা-ই নয়, কৃষ্ণসাগরের গুরুত্ব আরো একটি কারণে। এখানে অবস্থান রয়েছে
ন্যাটোর জয়েন্ট টাস্কফোর্স ইস্টের। কৃষ্ণসাগরভুক্ত তিনটি দেশ রুমানিয়া,
বুলগেরিয়া ও তুরস্ককে নিয়ে ন্যাটো গেল বছর তাদের তিন মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ
পরিচালনা করেছে। এটা রাশিয়ার ওপর এক ধরনের স্নায়বিক চাপ। ভূ-রাজনৈতিক
বিশেষজ্ঞরা অনেক দিন থেকেই কৃষ্ণসাগরভুক্ত এলাকা এবং সেই সঙ্গে কাসপিয়ান
সাগরভুক্ত অঞ্চলকে 'হট এরিয়া', অর্থাৎ উত্তেজনাপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত
করে আসছেন। সুতরাং ক্রিমিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ রুশদের (জনসংখ্যার ৫৯ শতাংশ,
প্রায় ২০ লাখ) নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই যে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেছে, তা
বিবেচনায় নিলে ঠিক হবে না। রাশিয়ায় 'নয়া জার' নেতৃত্ব রাশিয়ার নিরাপত্তাকে
অগ্রাধিকার দিয়েছে। ক্রিমিয়ায় বসবাসকারী রুশদের নিরাপত্তার পাশাপাশি তাদের
নিজেদের ভূখণ্ডগত নিরাপত্তার বিষয়টি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। পুরো
কৃষ্ণসাগরভুক্ত অঞ্চলে কর্তৃত্ব করার জন্যই ন্যাটোর দরকার জর্জিয়া ও
ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়া। তাহলে রাশিয়ার সীমান্তে উপস্থিত থাকবে
ন্যাটোর সেনাবাহিনী। এটা রাশিয়ার ওপর এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ। রাশিয়ার
সমরনায়করা এটা যে মেনে নেবেন না, এটাই স্বাভাবিক। উল্লেখ্য, গেল বছর
কৃষ্ণসাগরে ন্যাটো ও জর্জিয়ার নৌবাহিনী যৌথভাবে একটি সামরিক কার্যক্রমে
অংশ নিয়েছিল, যা রাশিয়া খুব সহজভাবে নেয়নি। এখানে ক্রিমিয়ার বিষয়টিও আলোচনা
করা প্রয়োজন। ক্রিমিয়া সরাসরি ইউক্রেনের মূল ভূখণ্ডের অংশ নয়। এই অংশটি
ইউক্রেনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। সাবেক সোভিয়েত নেতা ক্রুশ্চেভ ১৯৫৪ সালে এই
অংশটুকু ইউক্রেনকে দেন। এর আগে এটা রাশিয়ার অংশ ছিল। এখানে মূল জনগোষ্ঠী
রুশ। ২৪ শতাংশ জনগোষ্ঠী ইউক্রেনীয় আর ১২ শতাংশ তাতার। ইউক্রেনের মোট
জনগোষ্ঠীর (৪৫ মিলিয়ন) ১৭ শতাংশ হচ্ছে রুশ বংশোদ্ভূত। ইউক্রেন ১৯২২ সালে
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছিল এবং ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
ক্রিমিয়ায়
রুশ সেনাবাহিনীর 'অভিযান' তথা উপস্থিতিকে ন্যাটোর মহাসচিব রাসমুসেন
আখ্যায়িত করেছেন ন্যাটোর নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ। ন্যাটো চার্টারের ৪
নম্বর ধারা অনুযায়ী যেকোনো দেশ (সদস্য) যদি নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়,
তাহলে তারা আলোচনা তথা তাদের নিজ দেশের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য ন্যাটোর
অধিবেশন আহ্বান করতে পারে এবং সাহায্য চাইতে পারে। চার্টার অনুযায়ী ন্যাটোর
একটি দেশের ওপর 'হামলা' পুরো ন্যাটো দেশগুলোর (২৪টি) ওপর হামলা হিসেবে
গণ্য করা হয়। সুতরাং ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে যে একটি
বড় সংকট তৈরি হলো, তাতে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, ন্যাটো
তথা পশ্চিমা বিশ্ব ক্রিমিয়ায় এই আগ্রাসনের বিষয়টি কিভাবে দেখবে? বলার
অপেক্ষা রাখে না, সংকটের শুরু ইউক্রেনের রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচের
ক্ষমতাচ্যুতির মধ্য দিয়ে। ২০১০ সালের নির্বাচনে ইয়ানুকোভিচ বিজয়ী
হয়েছিলেন। যাঁরা 'কালার রেভল্যুশন' (জর্জিয়া, ইউক্রেন, কিরঘিজস্তান,
থাইল্যান্ড) সম্পর্কে ধারণা রাখেন, তাঁরা জানেন ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে
ইউক্রেনে 'অরেঞ্জ রেভল্যুশন' ভিক্টর ইয়ুশচেংকোকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল।
ইয়ুশচেংকো শান্তিপূর্ণভাবে সেখানে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
আন্দোলনকারীদের গলায় ছিল হলুদ রঙের মাফলার। ফলে ওই আন্দোলনের নামকরণ হলো
'অরেঞ্চ রেভল্যুশন'। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন। তখন তাঁর
প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইয়ানুকোভিচ, যিনি ২০১০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী
হয়েছিলেন। যদিও ২০১০ সালে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী
মিস ইউলিয়া তোমোশেংকো। ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতা গ্রহণ করে প্রথমেই তোমোশেংকোকে
জেলে পাঠিয়েছিলেন। গণ-অভ্যুত্থানে ইয়ানুকোভিচের উৎখাতের পর তোমোশেংকো জেল
থেকে ছাড়া পেয়েছেন। ইউক্রেনের রাজনীতিতে দুটি ধারাই বহমান- একদিকে রুশপন্থী
রাজনীতি। ইয়ানুকোভিচ ছিলেন এই ধারার অনুসারী; অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা
ছিলেন 'প্রো-ওয়েস্ট' অর্থাৎ পশ্চিমা তথা ইউরোপীয় রাজনীতির সমর্থক।
ইয়ানুকোভিচ ইইউয়ের ঋণ অগ্রাহ্য করে রাশিয়া থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। তিনি ইউরোপীয়
ইউনিয়নে ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তিরও বিরোধিতা করেছিলেন। কৃষ্ণসাগরভুক্ত দেশ
রুমানিয়া, বুলগেরিয়া ২০০৭ সালে ইইউতে যোগ দেয়। আর পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক
কিংবা হাঙ্গেরি যোগ দেয় ২০০৪ সালে। ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য নয়। কিন্তু ১৯৯৪
সালে ন্যাটোর পার্টনারশিপ ফর পিস প্রোগ্রামে যোগ দিয়েছে। আর ২০০৯ সালে
ইইউর ইস্টার্ন পার্টনারশিপ প্রোগ্রামেও যোগ দেয় দেশটি। রাশিয়ার ভয়টা এ
কারণেই।
ক্রিমিয়ার পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার সঙ্গে
যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের যথেষ্ট অবনতি হয়েছে। ক্রিমিয়ার পার্লামেন্ট
রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্তির একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ১৬ মার্চ এই লক্ষ্যে
সেখানে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। অথচ প্রেসিডেন্ট ওবামা এই সিদ্ধান্তকে অবৈধ ও
আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ৩০০
নৌবাহিনী সজ্জিত ডেস্ট্রয়ার ইউএসএস টুস্ক্রটানকে কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে
পাঠিয়েছে। ছয়টি যুদ্ধবিমান মোতায়েন রয়েছে বাল্টিক অঞ্চলে। ওবামা পুতিনের
সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলেছেন। তিনি রাশিয়াকে ইউক্রেনের নেতাদের সঙ্গে
কথাবার্তা বলার, আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের ক্রিমিয়ায় যাওয়ার ও ক্রিমিয়া
থেকে সব রুশ সেনা (১৬ হাজার) প্রত্যাহারের দাবি করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে,
আগামী এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে যদি রাশিয়ার মনোভাবে পরিবর্তন না আসে,
তাহলে যুক্তরাষ্ট্র কিছু রুশ নাগরিকের (যারা ক্রিমিয়ায় আগ্রাসনের সঙ্গে
জড়িত) বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ভিসা বাতিল, রাশিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে
পারে। একই পথ অবলম্বন করতে পারে ইইউ। রাশিয়া-ইইউ সংলাপ তখন বড় ধরনের
অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। এখানে একটা কথা বলা প্রয়োজন, ১৯৯৪ সালে রাশিয়া
ইউক্রেনের সঙ্গে Budapest Memorandum on Security Assurances চুক্তি
স্বাক্ষর করেছিল। ওই চুক্তির বিনিময়ে ইউক্রেনের কাছে যে পারমাণবিক অস্ত্র
রয়েছে, তা রাশিয়াকে ফেরত দেওয়া হয়। ইউক্রেন ক্রিমিয়ায় কর্তৃত্ব ফিরে পায়
বটে, কিন্তু রাশিয়াকে তার 'ব্ল্যাক সি ফ্লিট' এ অঞ্চলে (সেভাস টোপোল)
মোতায়েন এবং রুশ সেনাবাহিনী মোতায়েনের অধিকার দেওয়া হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী
এই সেনা মোতায়েন থাকবে ২০৪২ সাল পর্যন্ত। ইউক্রেন অবশ্য এ থেকে একটি ফি
পাবে। জুন মাসে সোচিতে জি-৮ সম্মেলনও এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ল।
এখন
১৬ মার্চের গণভোটে ক্রিমিয়া যে রাশিয়ার অঙ্গ হবে, তাতে দ্বিমত করার আর কোনো
সুযোগ নেই। ফলে নতুন করে শুরু হবে স্নায়ুযুদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিকার
অর্থেই রাশিয়ার ব্যাপারে এখন কঠোর হয় (সীমিত অর্থনৈতিক অবরোধের
সিদ্ধান্ত), তাহলে রাশিয়াকে বাধ্য করবে একাধিক সিদ্ধান্ত নিতে। যেমন- ১.
রাশিয়া ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে, ২. আফগানিস্তানে সব ধরনের
সরবরাহ লাইনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে, ৩. সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র
ধ্বংসের ব্যাপারে রাশিয়া বিরোধিতা করতে পারে, ৪. ইরানকে অস্ত্র তথা
বিমানবিধ্বংসী অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে, ৫. চীনের সঙ্গে সামরিক তথা
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে। এতে বিশ্বে উত্তেজনা বাড়বে মাত্র। বলা
ভালো, ক্রিমিয়া সংকটে চীন রাশিয়ার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। চীনের সঙ্গে সাংহাই
কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন নামের একটি সামরিক তথা অর্থনৈতিক ব্লক গড়ে তুলেছে
রাশিয়া (জ্বালানিসম্পদসমৃদ্ধ মধ্য এশিয়ার দেশগুলো এর সদস্য)। একই সঙ্গে
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে রাশিয়া গড়ে তুলছে একটি
সামরিক জোট- কালেকটিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশন (সিএসটিও)। ওয়ারশর
পরিবর্তিত রূপ হচ্ছে এই সিএসটিও।
স্পষ্টতই ক্রিমিয়ার সংকট বিশ্বে
অস্থিরতা বাড়াবে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে সত্যিকার অর্থেই যদি কোনো নিষেধাজ্ঞা
আরোপ করা হয়, তাহলে সবচেয়ে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে পশ্চিম ইউরোপ (বিশেষ করে
জার্মানি), যারা রাশিয়ার গ্যাসের ওপর পরিপূর্ণভাবে নির্ভরশীল। ক্রিমিয়ার
ঘটনাবলি ২০০৮ সালের জর্জিয়ার অংশ আবখাজিয়া ও দক্ষিন ওশেতিয়ার কথাই স্মরণ
করিয়ে দিল। এখানকার রুশপন্থী জনগোষ্ঠীর সমর্থনে রাশিয়া সেখানে তার সেনা
পাঠিয়ে অঞ্চল দুটি দখল করে নিয়েছিল। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্ররা
মেদভেদেভ (রুশ প্রধানমন্ত্রী) এর Zone of privileged interest-এর তত্ত্ব
সম্পর্কে ধারণা রাখেন (বেলারুশ-রাশিয়া দ্বন্দ্ব গ্যাস সরবরাহ নিয়ে)।
রাশিয়ার নেতৃত্ব মনে করে, তাদের সীমান্তবর্তী দেশগুলোর ওপর তাদের একটি
অলিখিত অধিকার রয়েছে। তাই আবখাজিয়া, দক্ষিণ ওশেতিয়া আর এখন ক্রিমিয়া- এগুলো
মূলত একই সূত্রে গাঁথা। নিশ্চিত করেই বলতে পারি, স্নায়ুযুদ্ধ-২-এর নতুন
রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছি আগামী দিনগুলোতে।
Daily KALER KONTHO
12.03.14
শিক্ষা সংক্রান্ত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ
04:08
1 comment
শিক্ষা
সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ ছাপা হয়েছে চলতি সপ্তাহে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন নারী ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। ৩৫টি
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে একমাত্র তিনিই নারী ভিসি। যদিও এর আগে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে (এবং বর্তমানেও) একজন নারী প্রো-ভিসির দায়িত্ব পালন
করেছিলেন। নিঃসন্দেহে নারী উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে এটা একটা অগ্রগতি। তবে
নারী হিসেবে নয়, একজন ভিসি হিসেবেই তাকে দেখতে চাইবে শিক্ষা সমাজ। যেদিন
তিনি দায়িত্ব নেন, সেদিন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের মধ্যকার
দ্বন্দ্ব আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এবং সংঘর্ষে বেশ কজন ছাত্রও আহত হয়েছে।
ছাত্র রাজনীতির কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে। ইসলামিক
বিশ্ববিদ্যালয়ও ছাত্র রাজনীতির কারণে আবার অশান্ত। আর জগন্নাথ
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রাজনীতি নতুন একটি মাত্রা পেয়েছে। যদিও তাদের আন্দোলন
সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে নয়, তাদের আন্দোলন 'ছাত্রাবাস
পুনরুদ্ধার'_ যা কিনা দখল হয়ে আছে অনেক দিন ধরে। শিক্ষা সংক্রান্ত আরেকটি
উদ্বেগজনক খবর হচ্ছে লন্ডনের বিখ্যাত ইকোনমিস্ট পত্রিকার 'ইকোনমিক
ইনটেলিজেন্স ইউনিট' তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষিতদের
মাঝে ৪৭ ভাগ বেকার। একমাত্র আফগানিস্তান বাদে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর
তুলনায় বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারদের হার বেশি। শ্রীলঙ্কায় যেখানে এই হার
মাত্র ৭, নেপালে ২০, পাকিস্তানে ২৮, আর ভারতে ৩ ভাগ সেখানে বাংলাদেশে এই
হার ৪৭ ভাগ। এটা নিঃসন্দেহে একটা উদ্বেজনক বিষয়। যেখানে প্রতি বছর ১৩ থেকে
১৬ লাখ জনশক্তি চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে, সেখানে বিভিন্ন কারণে (রাজনৈতিক
অস্থিতিশীলতা অন্যতম) এ দেশে বিনিয়োগ কম হচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে
না। ফলে বাড়ছে বেকারত্ব। এই বেকারত্বের মাঝে আবার আছে কিছু 'ছায়া
বেকারত্ব'। তাদের দেখা যায় না বটে। কিংবা কোনো পরিসংখ্যানেও তারা আসেন না।
কিন্তু ছোটখাটো, আধাবেলা কাজ করে এরা জীবিকা নির্বাহ করছেন।
আমরা
দেশে এরই মধ্যে ৩৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৯টি। সব মিলিয়ে ১১৪টি বিশ্ববিদ্যালয় এ দেশে
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু কটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানসম্মত দক্ষ গ্রাজুয়েট
আমরা তৈরি করেছি? এর জবাব অত্যন্ত হতাশাজনক। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এখন
অনেকটা সার্টিফিকেট-সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে, জাতীয়
বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা ব্যবস্থার এই হাল-হকিকত নিয়ে সময় টিভি ২ মার্চ রাতে
একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। সময় টিভি সব সময় সাম্প্রতিক ঘটনাবলিকে
গুরুত্ব দেয়। তুষার আবদুল্লাহর উপস্থাপনায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো
বিশেষজ্ঞ উপস্থিত থাকেন ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলেন। তার এই দিকটি আমার
ভালো লাগে। আমরা ওই রাতে উচ্চ শিক্ষায়ন বেকারত্ব, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের
হালচাল ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের
সদস্য থাকার সুবাদে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারণা রয়েছে। আমি
আমার অভিজ্ঞতা তুষার আবদুল্লাহর সঙ্গে শেয়ার করেছি। কিছু কিছু সমাধানের
কথাও আমরা বলেছি, যা থেকে সরকারের নীতিনির্ধারকরা কিছুটা 'শিখতে' পারেন।
>একুশ
শতকে একটি দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হলে শিক্ষার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরকে
শক্তিশালী করতে হবে। সনাতন শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি জোর দিতে হবে
প্রযুক্তিগত তথা আইটি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থার। এই আইটি নির্ভর শিক্ষা
ব্যবস্থা একদিকে যেমনি বেকার সমস্যা সমাধানে বড় ভূমিকা রাখবে, ঠিক তেমনি
বহির্বিশ্বে মানবসম্পদের একটা সুষ্ঠু ব্যবহারও হবে। আর তাই শিক্ষার
মাধ্যমিক স্তরকে ঢেলে সাজাতে হবে, সিলেবাসে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে এবং
শিক্ষা কাঠামোতেও আনতে হবে পরিবর্তন। এজন্যই গ্রাম পর্যায়ে স্কুল বাড়িয়ে,
সরকারি অনুদান বাড়িয়ে প্রতিটি স্কুলকে মানবসম্পদ গড়ার একেকটি 'কারখানা'
হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সিঙ্গাপুর এ কাজটি করেছিল বিধায়, ছোট্ট এই দেশটি আজ
উন্নয়নশীল বিশ্বের একটি আদর্শ। আমাদের ব্যর্থতা এখানেই যে, আমরা এই বিষয়টির
ওপর গুরুত্ব দিয়েছি কম। এখন শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ নিয়ে কিছু কথা বলা
যাক। আমাদের দীর্ঘ প্রায় ছয় বছরের অর্থমন্ত্রী এমএ মুহিত ২০১৩-১৪ সালের
জাতীয় বাজেট সংসদে উপস্থাপন করেছিলেন। একটি বিশাল অংকের বাজেট তিনি
উপস্থাপন করেছিলেন। ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার বাজেটে শিক্ষা খাতে
বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ২৫ হাজার ১১ কোটি ৬০ লাখ টাকা অর্থাৎ শতকরা ১১ দশমিক ৩
ভাগ। এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ। সুদের জন্য যে টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে,
সেটাও সর্বোচ্চ, শতকরা ১২ দশমিক ৫ ভাগ। সঙ্গতকারণেই যে প্রশ্নটি ওঠে, তা
হচ্ছে এই বিশাল ব্যয় দিয়ে আমরা উচ্চশিক্ষার কতটুকু মানোন্নয়ন করতে পেরেছি?
বাস্তবতা হচ্ছে শিক্ষার মানোন্নয়ন, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষায় গবেষণা, আইটি
সেক্টরের উন্নয়ন_ এই বরাদ্দ দিয়ে আদৌ সম্ভব নয়। কেননা এই অর্থের মাঝে ১১
হাজার ৯৩৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয় হবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের
পেছনে। আর ১৩ হাজার ১৭৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয় হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের
পেছনে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য যে বরাদ্দ, তাতে করে আমাদের উৎফুলি্লত
হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, এই টাকার খুব সামান্যই ব্যয় হয় উচ্চশিক্ষা
ক্ষেত্রে। শিক্ষা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের একটা অংশ বরাদ্দ থাকে
বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। ২০০১-০২ সালে এর পরিমাণ ছিল ২৯৩.২৪ কোটি টাকা, আর
২০১০-১১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১০২.২৪ কোটি টাকা। জাতীয় বাজেটের মাত্র
০.৭৫ ভাগ ২০১০-১১ সালে। আবার যদি শুধু শিক্ষা খাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর
বরাদ্দের দিকে তাকানো যায়, তাহলে দেখা যাবে, এ বরাদ্দ মাত্র ৭.৮৫ ভাগ
(২০০১-০২) থেকে ৮.২২ ভাগ (২০১০-১১)। অর্থাৎ পরিসংখ্যানই বলে দেয়
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে বরাদ্দ দেয়া হয়, তার পরিমাণ খুব বেশি নয়।
সাম্প্রতিক শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে, বেড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও।
যদিও তুলনামূলক বিচারে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বাজেট
শিক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ খুবই কম। তারপরও কথা থেকে যায়। রাষ্ট্রের
পক্ষে এর চেয়ে বেশি বরাদ্দ দেয়া সম্ভব নয়। এখন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন
তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ভেবে দেখতে হবে কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয়
বাড়ানো যায় এবং সরকারের ওপর পূর্ণ নির্ভরশীলতা কমানো যায়। এখানে আরও একটা
বিষয় বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন, আর তা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে টাকা
বরাদ্দ করা হয়, তার খুব কম অংশই ব্যয় হয় গবেষণার কাজে। বরাদ্দকৃত টাকার
একটি সিংহ ভাগ চলে যায় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাবদ। অনেক
ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ভিসি মহোদয়রা উন্নয়ন খাতে কিংবা গবেষণায় যে টাকা
বরাদ্দ করা হয়েছিল, সেই টাকা শিক্ষকদের বেতন দিতে ব্যয় করেছেন। প্রায়
প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা দলীয় কোটায়, স্থানীয় কোটায় অতিরিক্ত শিক্ষক
নিয়োগ দিয়েছেন। কিছুদিন আগে একটি জাতীয় দৈনিকে ৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের
অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগের ওপর একটি প্রতিবেদন ছেপেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
এখন পরিণত হয়েছে পারিবারিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক
ভিসি নিজের মেয়ে, ভাই, আপন ভায়রা, শ্যালিকার মেয়ে, ভাইয়ের মেয়ে, বোনের
মেয়েকে শিক্ষক তথা কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে একটা রেকর্ড সৃষ্টি
করেছিলেন। এই প্রবণতা প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই আছে। জাহাঙ্গীরনগর এরই
মধ্যে একটি পারিবারিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। ফলে অতিরিক্ত শিক্ষক ও
কর্মচারী নিয়োগের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাজেট ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে।
উন্নয়ন বাজেট থেকে টাকা এনে শিক্ষক তথা কর্মচারীদের বেতন দিতে হচ্ছে। একটা
পরিসংখ্যান দিলে বিষয়টি বুঝতে সহজ হবে। ২০১১-১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
মঞ্জুরি কমিশন (বিসক) কর্তৃক বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২২২.৪০ কোটি টাকা। এর
মাঝে ১৬৫.১০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে শুধু শিক্ষকদের বেতন দিতে। বিসক যে টাকা
বরাদ্দ করে, তা দিয়ে বেতন, পেনশন, সাধারণ খরচ, শিক্ষা খরচ, যানবাহন মেরামত ও
মূলধনের চাহিদা মেটানো হয়। এক্ষেত্রে দেখা যায়, বেতন পরিশোধের পর যা থাকে,
তা দিয়ে অন্যকিছু করা আর সম্ভব হয় না। ছাত্রদের আবাসিক সমস্যার সমাধান হয়
না। তাদের নূ্যনতম চাহিদাও মেটাতে পারে না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কোনো কোনো
বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা আরও খারাপ। তারা অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের পেনশন দিতে
পারে না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র নয়। বাংলাদেশের অর্থনীতি কল্যাণকামী অর্থনীতি নয়।
অর্থাৎ পশ্চিম ইউরোপের কোনো কোনো রাষ্ট্রে (যেমন জার্মানি) কিংবা
নরডিকভুক্ত রাষ্ট্রগুলোতে রাষ্ট্র সব নাগরিকের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত
করে। বাংলাদেশ সেই পর্যায়ে যেতে পারেনি। ওইসব রাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা একদম
ফ্রি। আমরা সেখানে পড়াশোনা করেছি কোনো রকম টিউশন ফি ছাড়াই (শুধু ছাত্র
সংসদের জন্য কিছু অর্থ দিতে হয়)। স্বাস্থ্যসেবা পুরোপুরিভাবে ফ্রি না হলেও
বেকার ভাতা সেখানে রয়েছে। জার্মানি বা সুইডেনের অর্থনীতির পক্ষে সম্ভব
সাধারণ নাগরিকের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু আমাদের অর্থনীতি সে
পর্যায়ে নেই। তবে যে পর্যায়ে রাষ্ট্র শিক্ষা খাতকে প্রমোট করে, তা ঠিক
আছে। রাষ্ট্র শিক্ষা খাতে ব্যয় বরাদ্দ দেবে। তবে এখানে উচ্চশিক্ষায়
বেসরকারি খাতকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে।
একুশ শতকে এসে একটা
বিশ্ববিদ্যালয় শুধু সরকারি অনুদানের ওপর নির্ভর করে চলতে পারে না।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব আয় বাড়াতে হবে। ছাত্র বেতন না বাড়িয়েও আয়
বাড়ানো যায়। এজন্য কতগুলো বিকল্প নীতিনির্ধারকরা ভেবে দেখতে পারেন। প্রয়োজন
পিপিপি অথবা বেসরকারি খাতকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা।
যেমন ব্যবসা প্রশাসন, অর্থনীতি, প্রযুক্তিবিদ্যা, ফার্মেসিতে বেসরকারি
বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। বেসরকারি পুঁজিতে ল্যাব হতে পারে, ছাত্রাবাস
নির্মিত হতে পারে, ট্রেনিং প্রোগ্রাম হতে পারে। বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী
রয়েছেন। প্রয়োজন একটি নীতি প্রণয়ন ও যোগাযোগ, একই সঙ্গে পাবলিক
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেকেন্ড ক্যাম্পাস কিংবা সান্ধ্যকালীন প্রোগ্রাম (শুধু
ব্যবসা প্রশাসন কোর্সই নয়) চালু করে তাদের আয় বাড়াতে পারে। প্রতিটি বড়
বিশ্ববিদ্যালয় এ উদ্যোগ নিতে পারে। গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা তেজগাঁওয়ে অবস্থিত
টেঙ্টাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনিয়োগ করতে পারে। আর সেই বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে
দক্ষ জনশক্তি পেতে পারে বড় বড় গার্মেন্ট ব্যবসায়ী। গার্মেন্টের পর আমাদের
একটা সম্ভাবনার খাত হচ্ছে ওষুধ শিল্প। প্রতিটি বড় বিশ্ববিদ্যালয়েই
ফার্মেসি, বায়োটেকনোলজি বিভাগ রয়েছে। এক্ষেত্রে ওষুধ কোম্পানিগুলো বড়
বিনিয়োগ করতে পারে। মোট কথা, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে হবে।
সরকারি অর্থেই বিশ্ববিদ্যালয় চলবে; কিন্তু এখানে বিনিয়োগে বেসরকারি খাতকে
আমরা উৎসাহিত করতে পারি। বেসরকারি উদ্যোক্তারা এরই মধ্যে বেশ ক'টি বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয় সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করছে। ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো
ভালো শিক্ষকও রয়েছেন। উদ্যোক্তারা যদি সেখানে বিনিয়োগ করতে পারেন, তারা
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনিয়োগ করবেন না কেন? আসলে এজন্য দরকার একটি
সুস্পষ্ট নীতিমালা। এই নীতিমালাটি প্রণয়ন করতে হবে সামগ্রিক শিক্ষা
ব্যবস্থাকে সামনে রেখে। আর গুরুত্বটা আরোপ করতে হবে শিক্ষার মাধ্যমিক
স্তরে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থাকবে শুধু গবেষণার জন্য। মাধ্যমিক স্তরটাই আসল।
এখানেই দক্ষ জনশক্তি গড়ার ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। আমাদের রয়েছে প্রচুর
জনসম্পদ। এখন প্রয়োজন এই জনসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার।
এখন শুধু ভুল
সিদ্ধান্তের কারণে পরিকল্পনাহীনভাবে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের
সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। 'নাম কা ওয়াস্তে' তারা উচ্চশিক্ষার একটি ডিগ্রি নিয়ে
'জব মার্কেটে' প্রবেশ করছে। কিন্তু প্রতিযোগিতায় তারা টিকতে পারছে না।
আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই আগামী ১০ বছর আমাদের কত গ্রাজুয়েটের প্রয়োজন
হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, চাকরির জন্য গ্রাজুয়েশনই যথেষ্ট। কিন্তু
আমরা তা পারিনি। তখন চার বছরের কোর্স শেষ করার পর আরও এক বছরে মাস্টার্স
করছি। বাস্তব ক্ষেত্রে এর আদৌ কোনো প্রয়োজন নেই। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে
বিবিএ কোর্স চালু হয়েছে। তাতেও আবার রকমভেদ আছে_ এঙ্িিকউটিভ এমপিও, ইভিনিং
এমপিও ইত্যাদি। যে শিক্ষার্থী কোনো দিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার
সুযোগ পায়নি, সেই শিক্ষার্থী এখন শুধু টাকার বিনিময়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে একখানা সার্টিফিকেট নিচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার সুবিধা আছে,
তারা শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাচ্ছে। কিন্তু কতটুকু দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে
পারছে? বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা আমি অস্বীকার করতে পারি না।
কিন্তু এক্ষেত্রে শিক্ষার মান নির্ণয় করা প্রয়োজন। সরকার রেটিংও করতে পারে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুবিধা একটাই_ এখানে 'হরতাল' নেই। ছাত্র তথা
শিক্ষক রাজনীতি নেই। কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মানসম্মত এটা আমাদের
স্বীকার করতেই হবে। শিক্ষিত জনগোষ্ঠী আমাদের প্রয়োজন। বিদেশে এদের
কর্মসংস্থান সম্ভব। তাই একটি পরিকল্পনার আওতায় একটি সুষ্ঠু নীতিমালা
প্রয়োজন। না হলে ঘরে ঘরে লাখ লাখ মাস্টার্স ডিগ্রিধারী তৈরি হবে। রাষ্ট্র
তাদের জন্য (অদক্ষ বিধায়) কোনো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে না
Daily ALOKITO BANGLADESH
11.03.14
Subscribe to:
Posts (Atom)