রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

শিক্ষা সংক্রান্ত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ

শিক্ষা সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ ছাপা হয়েছে চলতি সপ্তাহে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন নারী ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে একমাত্র তিনিই নারী ভিসি। যদিও এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (এবং বর্তমানেও) একজন নারী প্রো-ভিসির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। নিঃসন্দেহে নারী উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে এটা একটা অগ্রগতি। তবে নারী হিসেবে নয়, একজন ভিসি হিসেবেই তাকে দেখতে চাইবে শিক্ষা সমাজ। যেদিন তিনি দায়িত্ব নেন, সেদিন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের মধ্যকার দ্বন্দ্ব আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এবং সংঘর্ষে বেশ কজন ছাত্রও আহত হয়েছে। ছাত্র রাজনীতির কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে। ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ও ছাত্র রাজনীতির কারণে আবার অশান্ত। আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রাজনীতি নতুন একটি মাত্রা পেয়েছে। যদিও তাদের আন্দোলন সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে নয়, তাদের আন্দোলন 'ছাত্রাবাস পুনরুদ্ধার'_ যা কিনা দখল হয়ে আছে অনেক দিন ধরে। শিক্ষা সংক্রান্ত আরেকটি উদ্বেগজনক খবর হচ্ছে লন্ডনের বিখ্যাত ইকোনমিস্ট পত্রিকার 'ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিট' তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষিতদের মাঝে ৪৭ ভাগ বেকার। একমাত্র আফগানিস্তান বাদে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারদের হার বেশি। শ্রীলঙ্কায় যেখানে এই হার মাত্র ৭, নেপালে ২০, পাকিস্তানে ২৮, আর ভারতে ৩ ভাগ সেখানে বাংলাদেশে এই হার ৪৭ ভাগ। এটা নিঃসন্দেহে একটা উদ্বেজনক বিষয়। যেখানে প্রতি বছর ১৩ থেকে ১৬ লাখ জনশক্তি চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে, সেখানে বিভিন্ন কারণে (রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অন্যতম) এ দেশে বিনিয়োগ কম হচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে বেকারত্ব। এই বেকারত্বের মাঝে আবার আছে কিছু 'ছায়া বেকারত্ব'। তাদের দেখা যায় না বটে। কিংবা কোনো পরিসংখ্যানেও তারা আসেন না। কিন্তু ছোটখাটো, আধাবেলা কাজ করে এরা জীবিকা নির্বাহ করছেন। আমরা দেশে এরই মধ্যে ৩৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৯টি। সব মিলিয়ে ১১৪টি বিশ্ববিদ্যালয় এ দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু কটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানসম্মত দক্ষ গ্রাজুয়েট আমরা তৈরি করেছি? এর জবাব অত্যন্ত হতাশাজনক। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এখন অনেকটা সার্টিফিকেট-সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা ব্যবস্থার এই হাল-হকিকত নিয়ে সময় টিভি ২ মার্চ রাতে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। সময় টিভি সব সময় সাম্প্রতিক ঘটনাবলিকে গুরুত্ব দেয়। তুষার আবদুল্লাহর উপস্থাপনায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো বিশেষজ্ঞ উপস্থিত থাকেন ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলেন। তার এই দিকটি আমার ভালো লাগে। আমরা ওই রাতে উচ্চ শিক্ষায়ন বেকারত্ব, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হালচাল ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য থাকার সুবাদে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারণা রয়েছে। আমি আমার অভিজ্ঞতা তুষার আবদুল্লাহর সঙ্গে শেয়ার করেছি। কিছু কিছু সমাধানের কথাও আমরা বলেছি, যা থেকে সরকারের নীতিনির্ধারকরা কিছুটা 'শিখতে' পারেন। >একুশ শতকে একটি দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হলে শিক্ষার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরকে শক্তিশালী করতে হবে। সনাতন শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি জোর দিতে হবে প্রযুক্তিগত তথা আইটি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থার। এই আইটি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা একদিকে যেমনি বেকার সমস্যা সমাধানে বড় ভূমিকা রাখবে, ঠিক তেমনি বহির্বিশ্বে মানবসম্পদের একটা সুষ্ঠু ব্যবহারও হবে। আর তাই শিক্ষার মাধ্যমিক স্তরকে ঢেলে সাজাতে হবে, সিলেবাসে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে এবং শিক্ষা কাঠামোতেও আনতে হবে পরিবর্তন। এজন্যই গ্রাম পর্যায়ে স্কুল বাড়িয়ে, সরকারি অনুদান বাড়িয়ে প্রতিটি স্কুলকে মানবসম্পদ গড়ার একেকটি 'কারখানা' হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সিঙ্গাপুর এ কাজটি করেছিল বিধায়, ছোট্ট এই দেশটি আজ উন্নয়নশীল বিশ্বের একটি আদর্শ। আমাদের ব্যর্থতা এখানেই যে, আমরা এই বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়েছি কম। এখন শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ নিয়ে কিছু কথা বলা যাক। আমাদের দীর্ঘ প্রায় ছয় বছরের অর্থমন্ত্রী এমএ মুহিত ২০১৩-১৪ সালের জাতীয় বাজেট সংসদে উপস্থাপন করেছিলেন। একটি বিশাল অংকের বাজেট তিনি উপস্থাপন করেছিলেন। ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ২৫ হাজার ১১ কোটি ৬০ লাখ টাকা অর্থাৎ শতকরা ১১ দশমিক ৩ ভাগ। এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ। সুদের জন্য যে টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, সেটাও সর্বোচ্চ, শতকরা ১২ দশমিক ৫ ভাগ। সঙ্গতকারণেই যে প্রশ্নটি ওঠে, তা হচ্ছে এই বিশাল ব্যয় দিয়ে আমরা উচ্চশিক্ষার কতটুকু মানোন্নয়ন করতে পেরেছি? বাস্তবতা হচ্ছে শিক্ষার মানোন্নয়ন, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষায় গবেষণা, আইটি সেক্টরের উন্নয়ন_ এই বরাদ্দ দিয়ে আদৌ সম্ভব নয়। কেননা এই অর্থের মাঝে ১১ হাজার ৯৩৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয় হবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পেছনে। আর ১৩ হাজার ১৭৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয় হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পেছনে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য যে বরাদ্দ, তাতে করে আমাদের উৎফুলি্লত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, এই টাকার খুব সামান্যই ব্যয় হয় উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে। শিক্ষা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের একটা অংশ বরাদ্দ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। ২০০১-০২ সালে এর পরিমাণ ছিল ২৯৩.২৪ কোটি টাকা, আর ২০১০-১১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১০২.২৪ কোটি টাকা। জাতীয় বাজেটের মাত্র ০.৭৫ ভাগ ২০১০-১১ সালে। আবার যদি শুধু শিক্ষা খাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বরাদ্দের দিকে তাকানো যায়, তাহলে দেখা যাবে, এ বরাদ্দ মাত্র ৭.৮৫ ভাগ (২০০১-০২) থেকে ৮.২২ ভাগ (২০১০-১১)। অর্থাৎ পরিসংখ্যানই বলে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে বরাদ্দ দেয়া হয়, তার পরিমাণ খুব বেশি নয়। সাম্প্রতিক শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে, বেড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও। যদিও তুলনামূলক বিচারে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বাজেট শিক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ খুবই কম। তারপরও কথা থেকে যায়। রাষ্ট্রের পক্ষে এর চেয়ে বেশি বরাদ্দ দেয়া সম্ভব নয়। এখন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ভেবে দেখতে হবে কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয় বাড়ানো যায় এবং সরকারের ওপর পূর্ণ নির্ভরশীলতা কমানো যায়। এখানে আরও একটা বিষয় বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন, আর তা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে টাকা বরাদ্দ করা হয়, তার খুব কম অংশই ব্যয় হয় গবেষণার কাজে। বরাদ্দকৃত টাকার একটি সিংহ ভাগ চলে যায় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাবদ। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ভিসি মহোদয়রা উন্নয়ন খাতে কিংবা গবেষণায় যে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল, সেই টাকা শিক্ষকদের বেতন দিতে ব্যয় করেছেন। প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা দলীয় কোটায়, স্থানীয় কোটায় অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। কিছুদিন আগে একটি জাতীয় দৈনিকে ৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগের ওপর একটি প্রতিবেদন ছেপেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন পরিণত হয়েছে পারিবারিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি নিজের মেয়ে, ভাই, আপন ভায়রা, শ্যালিকার মেয়ে, ভাইয়ের মেয়ে, বোনের মেয়েকে শিক্ষক তথা কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে একটা রেকর্ড সৃষ্টি করেছিলেন। এই প্রবণতা প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই আছে। জাহাঙ্গীরনগর এরই মধ্যে একটি পারিবারিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। ফলে অতিরিক্ত শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাজেট ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে। উন্নয়ন বাজেট থেকে টাকা এনে শিক্ষক তথা কর্মচারীদের বেতন দিতে হচ্ছে। একটা পরিসংখ্যান দিলে বিষয়টি বুঝতে সহজ হবে। ২০১১-১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মঞ্জুরি কমিশন (বিসক) কর্তৃক বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২২২.৪০ কোটি টাকা। এর মাঝে ১৬৫.১০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে শুধু শিক্ষকদের বেতন দিতে। বিসক যে টাকা বরাদ্দ করে, তা দিয়ে বেতন, পেনশন, সাধারণ খরচ, শিক্ষা খরচ, যানবাহন মেরামত ও মূলধনের চাহিদা মেটানো হয়। এক্ষেত্রে দেখা যায়, বেতন পরিশোধের পর যা থাকে, তা দিয়ে অন্যকিছু করা আর সম্ভব হয় না। ছাত্রদের আবাসিক সমস্যার সমাধান হয় না। তাদের নূ্যনতম চাহিদাও মেটাতে পারে না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা আরও খারাপ। তারা অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের পেনশন দিতে পারে না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র নয়। বাংলাদেশের অর্থনীতি কল্যাণকামী অর্থনীতি নয়। অর্থাৎ পশ্চিম ইউরোপের কোনো কোনো রাষ্ট্রে (যেমন জার্মানি) কিংবা নরডিকভুক্ত রাষ্ট্রগুলোতে রাষ্ট্র সব নাগরিকের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। বাংলাদেশ সেই পর্যায়ে যেতে পারেনি। ওইসব রাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা একদম ফ্রি। আমরা সেখানে পড়াশোনা করেছি কোনো রকম টিউশন ফি ছাড়াই (শুধু ছাত্র সংসদের জন্য কিছু অর্থ দিতে হয়)। স্বাস্থ্যসেবা পুরোপুরিভাবে ফ্রি না হলেও বেকার ভাতা সেখানে রয়েছে। জার্মানি বা সুইডেনের অর্থনীতির পক্ষে সম্ভব সাধারণ নাগরিকের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু আমাদের অর্থনীতি সে পর্যায়ে নেই। তবে যে পর্যায়ে রাষ্ট্র শিক্ষা খাতকে প্রমোট করে, তা ঠিক আছে। রাষ্ট্র শিক্ষা খাতে ব্যয় বরাদ্দ দেবে। তবে এখানে উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি খাতকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে। একুশ শতকে এসে একটা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু সরকারি অনুদানের ওপর নির্ভর করে চলতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব আয় বাড়াতে হবে। ছাত্র বেতন না বাড়িয়েও আয় বাড়ানো যায়। এজন্য কতগুলো বিকল্প নীতিনির্ধারকরা ভেবে দেখতে পারেন। প্রয়োজন পিপিপি অথবা বেসরকারি খাতকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা। যেমন ব্যবসা প্রশাসন, অর্থনীতি, প্রযুক্তিবিদ্যা, ফার্মেসিতে বেসরকারি বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। বেসরকারি পুঁজিতে ল্যাব হতে পারে, ছাত্রাবাস নির্মিত হতে পারে, ট্রেনিং প্রোগ্রাম হতে পারে। বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী রয়েছেন। প্রয়োজন একটি নীতি প্রণয়ন ও যোগাযোগ, একই সঙ্গে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেকেন্ড ক্যাম্পাস কিংবা সান্ধ্যকালীন প্রোগ্রাম (শুধু ব্যবসা প্রশাসন কোর্সই নয়) চালু করে তাদের আয় বাড়াতে পারে। প্রতিটি বড় বিশ্ববিদ্যালয় এ উদ্যোগ নিতে পারে। গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা তেজগাঁওয়ে অবস্থিত টেঙ্টাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনিয়োগ করতে পারে। আর সেই বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে দক্ষ জনশক্তি পেতে পারে বড় বড় গার্মেন্ট ব্যবসায়ী। গার্মেন্টের পর আমাদের একটা সম্ভাবনার খাত হচ্ছে ওষুধ শিল্প। প্রতিটি বড় বিশ্ববিদ্যালয়েই ফার্মেসি, বায়োটেকনোলজি বিভাগ রয়েছে। এক্ষেত্রে ওষুধ কোম্পানিগুলো বড় বিনিয়োগ করতে পারে। মোট কথা, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে হবে। সরকারি অর্থেই বিশ্ববিদ্যালয় চলবে; কিন্তু এখানে বিনিয়োগে বেসরকারি খাতকে আমরা উৎসাহিত করতে পারি। বেসরকারি উদ্যোক্তারা এরই মধ্যে বেশ ক'টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করছে। ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো ভালো শিক্ষকও রয়েছেন। উদ্যোক্তারা যদি সেখানে বিনিয়োগ করতে পারেন, তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনিয়োগ করবেন না কেন? আসলে এজন্য দরকার একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা। এই নীতিমালাটি প্রণয়ন করতে হবে সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে সামনে রেখে। আর গুরুত্বটা আরোপ করতে হবে শিক্ষার মাধ্যমিক স্তরে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থাকবে শুধু গবেষণার জন্য। মাধ্যমিক স্তরটাই আসল। এখানেই দক্ষ জনশক্তি গড়ার ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। আমাদের রয়েছে প্রচুর জনসম্পদ। এখন প্রয়োজন এই জনসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার। এখন শুধু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে পরিকল্পনাহীনভাবে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। 'নাম কা ওয়াস্তে' তারা উচ্চশিক্ষার একটি ডিগ্রি নিয়ে 'জব মার্কেটে' প্রবেশ করছে। কিন্তু প্রতিযোগিতায় তারা টিকতে পারছে না। আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই আগামী ১০ বছর আমাদের কত গ্রাজুয়েটের প্রয়োজন হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, চাকরির জন্য গ্রাজুয়েশনই যথেষ্ট। কিন্তু আমরা তা পারিনি। তখন চার বছরের কোর্স শেষ করার পর আরও এক বছরে মাস্টার্স করছি। বাস্তব ক্ষেত্রে এর আদৌ কোনো প্রয়োজন নেই। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ কোর্স চালু হয়েছে। তাতেও আবার রকমভেদ আছে_ এঙ্িিকউটিভ এমপিও, ইভিনিং এমপিও ইত্যাদি। যে শিক্ষার্থী কোনো দিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পায়নি, সেই শিক্ষার্থী এখন শুধু টাকার বিনিময়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একখানা সার্টিফিকেট নিচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার সুবিধা আছে, তারা শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাচ্ছে। কিন্তু কতটুকু দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে পারছে? বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা আমি অস্বীকার করতে পারি না। কিন্তু এক্ষেত্রে শিক্ষার মান নির্ণয় করা প্রয়োজন। সরকার রেটিংও করতে পারে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুবিধা একটাই_ এখানে 'হরতাল' নেই। ছাত্র তথা শিক্ষক রাজনীতি নেই। কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মানসম্মত এটা আমাদের স্বীকার করতেই হবে। শিক্ষিত জনগোষ্ঠী আমাদের প্রয়োজন। বিদেশে এদের কর্মসংস্থান সম্ভব। তাই একটি পরিকল্পনার আওতায় একটি সুষ্ঠু নীতিমালা প্রয়োজন। না হলে ঘরে ঘরে লাখ লাখ মাস্টার্স ডিগ্রিধারী তৈরি হবে। রাষ্ট্র তাদের জন্য (অদক্ষ বিধায়) কোনো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে না Daily ALOKITO BANGLADESH 11.03.14

1 comments: