রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

স্নায়ুযুদ্ধের দ্বিতীয় পর্ব শুরু!

ইউক্রেনের সংকটকে কেন্দ্র করে জন্ম হয়েছে স্নায়ুযুদ্ধ-২-এর। বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিক পরিসরে ব্যাপকভাবে আলোচিত। অনেকেই স্মরণ করতে পারেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই ইউরোপে দুই পরাশক্তির মধ্যে 'প্রভাববলয়' বিস্তারের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে জন্ম হয়েছিল স্নায়ুযুদ্ধের। দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ইউরোপে নিজেদের কর্তৃত্ব ও প্রভাব বৃদ্ধির লক্ষ্যে যে প্রতিযোগিতার জন্ম দিয়েছিল, একসময় তা ছড়িয়ে পড়েছিল সারা বিশ্বে। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তি এবং দেশটি ভেঙে যাওয়ার পরই অবসান ঘটে এই স্নায়ুযুদ্ধের। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়গুলোতে রাশিয়ার উত্থান ও বিশ্বরাজনীতিকে প্রভাবিত করার প্রবণতা এবং সর্বশেষ রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দেশ ইউক্রেনের ক্রিমিয়ায় সেনাবাহিনী পাঠানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে রাশিয়ার যে বৈরিতার জন্ম হয়েছে, তাকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞরা আখ্যায়িত করেছেন স্নায়ুযুদ্ধ-২ হিসেবে। ক্রিমিয়ায় রুশ সেনা পাঠানোর ঘটনা এ অঞ্চলে বড় ধরনের উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। শুধু ইউক্রেনই নয়, বরং পার্শ্ববর্তী পোল্যান্ডের নিরাপত্তাও এখন হুমকির সম্মুখীন। এই নিরাপত্তাহীনতা এখন এই দেশগুলোকে এবং সেই সঙ্গে জর্জিয়াকে আরো বেশি মাত্রায় ন্যাটোর ওপর নির্ভরশীল করে তুলবে। এই দেশগুলো, সেই সঙ্গে এক পাশে রুমানিয়া, বুলগেরিয়া; অন্য পাশে জর্জিয়া কৃষ্ণসাগরভুক্ত অঞ্চল। তুরস্ক রয়েছে অন্য পাশে। ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখলে দেখা যাবে, এ অঞ্চলে ন্যাটোর যে সম্প্রসারণ ঘটেছে, তার প্রতিক্রিয়া হিসেবেই ক্রিমিয়ায় সেনা পাঠাল রাশিয়া। এ অঞ্চলজুড়ে ন্যাটোর যে সম্প্রসারণ ঘটেছে, তা রাশিয়ার নেতারা শুধু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণই করছেন না, বরং এই সম্প্রসারণ যে তাঁদের নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ, তা তাঁরা একাধিকবার বলেছেন। একসময় পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন ওয়ারশ সামরিক জোটের (বিলুপ্ত ১৯৮৮) সদস্য ছিল। এখন এই দেশগুলো (রুমানিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, বাল্টিকভুক্ত দেশগুলো, চেক, বুলগেরিয়া) ন্যাটোর সদস্য। ঐতিহাসিকভাবেই ক্রিমিয়ার বন্দর সেভাসটোপোলে রয়েছে রাশিয়ার নৌবাহিনীর বিশাল উপস্থিতি। কৃষ্ণসাগর বা ব্ল্যাক সির পশ্চিম পাশে রুমানিয়ার মিহাইল কোগালনাইসেআনুতে রয়েছে ন্যাটোর বিমান ঘাঁটি। এই বিমান ঘাঁটির গুরুত্ব অনেক। আফগানিস্তানে সেনা ও রসদ সরবরাহের জন্য ট্রানজিট রুট হিসেবে এই বিমান ঘাঁটি ব্যবহৃত হয়। শুধু তা-ই নয়, কৃষ্ণসাগরের গুরুত্ব আরো একটি কারণে। এখানে অবস্থান রয়েছে ন্যাটোর জয়েন্ট টাস্কফোর্স ইস্টের। কৃষ্ণসাগরভুক্ত তিনটি দেশ রুমানিয়া, বুলগেরিয়া ও তুরস্ককে নিয়ে ন্যাটো গেল বছর তাদের তিন মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেছে। এটা রাশিয়ার ওপর এক ধরনের স্নায়বিক চাপ। ভূ-রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা অনেক দিন থেকেই কৃষ্ণসাগরভুক্ত এলাকা এবং সেই সঙ্গে কাসপিয়ান সাগরভুক্ত অঞ্চলকে 'হট এরিয়া', অর্থাৎ উত্তেজনাপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে আসছেন। সুতরাং ক্রিমিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ রুশদের (জনসংখ্যার ৫৯ শতাংশ, প্রায় ২০ লাখ) নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই যে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেছে, তা বিবেচনায় নিলে ঠিক হবে না। রাশিয়ায় 'নয়া জার' নেতৃত্ব রাশিয়ার নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। ক্রিমিয়ায় বসবাসকারী রুশদের নিরাপত্তার পাশাপাশি তাদের নিজেদের ভূখণ্ডগত নিরাপত্তার বিষয়টি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। পুরো কৃষ্ণসাগরভুক্ত অঞ্চলে কর্তৃত্ব করার জন্যই ন্যাটোর দরকার জর্জিয়া ও ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়া। তাহলে রাশিয়ার সীমান্তে উপস্থিত থাকবে ন্যাটোর সেনাবাহিনী। এটা রাশিয়ার ওপর এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ। রাশিয়ার সমরনায়করা এটা যে মেনে নেবেন না, এটাই স্বাভাবিক। উল্লেখ্য, গেল বছর কৃষ্ণসাগরে ন্যাটো ও জর্জিয়ার নৌবাহিনী যৌথভাবে একটি সামরিক কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিল, যা রাশিয়া খুব সহজভাবে নেয়নি। এখানে ক্রিমিয়ার বিষয়টিও আলোচনা করা প্রয়োজন। ক্রিমিয়া সরাসরি ইউক্রেনের মূল ভূখণ্ডের অংশ নয়। এই অংশটি ইউক্রেনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। সাবেক সোভিয়েত নেতা ক্রুশ্চেভ ১৯৫৪ সালে এই অংশটুকু ইউক্রেনকে দেন। এর আগে এটা রাশিয়ার অংশ ছিল। এখানে মূল জনগোষ্ঠী রুশ। ২৪ শতাংশ জনগোষ্ঠী ইউক্রেনীয় আর ১২ শতাংশ তাতার। ইউক্রেনের মোট জনগোষ্ঠীর (৪৫ মিলিয়ন) ১৭ শতাংশ হচ্ছে রুশ বংশোদ্ভূত। ইউক্রেন ১৯২২ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছিল এবং ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ক্রিমিয়ায় রুশ সেনাবাহিনীর 'অভিযান' তথা উপস্থিতিকে ন্যাটোর মহাসচিব রাসমুসেন আখ্যায়িত করেছেন ন্যাটোর নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ। ন্যাটো চার্টারের ৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী যেকোনো দেশ (সদস্য) যদি নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়, তাহলে তারা আলোচনা তথা তাদের নিজ দেশের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য ন্যাটোর অধিবেশন আহ্বান করতে পারে এবং সাহায্য চাইতে পারে। চার্টার অনুযায়ী ন্যাটোর একটি দেশের ওপর 'হামলা' পুরো ন্যাটো দেশগুলোর (২৪টি) ওপর হামলা হিসেবে গণ্য করা হয়। সুতরাং ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে যে একটি বড় সংকট তৈরি হলো, তাতে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, ন্যাটো তথা পশ্চিমা বিশ্ব ক্রিমিয়ায় এই আগ্রাসনের বিষয়টি কিভাবে দেখবে? বলার অপেক্ষা রাখে না, সংকটের শুরু ইউক্রেনের রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচের ক্ষমতাচ্যুতির মধ্য দিয়ে। ২০১০ সালের নির্বাচনে ইয়ানুকোভিচ বিজয়ী হয়েছিলেন। যাঁরা 'কালার রেভল্যুশন' (জর্জিয়া, ইউক্রেন, কিরঘিজস্তান, থাইল্যান্ড) সম্পর্কে ধারণা রাখেন, তাঁরা জানেন ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে ইউক্রেনে 'অরেঞ্জ রেভল্যুশন' ভিক্টর ইয়ুশচেংকোকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। ইয়ুশচেংকো শান্তিপূর্ণভাবে সেখানে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আন্দোলনকারীদের গলায় ছিল হলুদ রঙের মাফলার। ফলে ওই আন্দোলনের নামকরণ হলো 'অরেঞ্চ রেভল্যুশন'। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন। তখন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইয়ানুকোভিচ, যিনি ২০১০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। যদিও ২০১০ সালে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিস ইউলিয়া তোমোশেংকো। ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতা গ্রহণ করে প্রথমেই তোমোশেংকোকে জেলে পাঠিয়েছিলেন। গণ-অভ্যুত্থানে ইয়ানুকোভিচের উৎখাতের পর তোমোশেংকো জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। ইউক্রেনের রাজনীতিতে দুটি ধারাই বহমান- একদিকে রুশপন্থী রাজনীতি। ইয়ানুকোভিচ ছিলেন এই ধারার অনুসারী; অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা ছিলেন 'প্রো-ওয়েস্ট' অর্থাৎ পশ্চিমা তথা ইউরোপীয় রাজনীতির সমর্থক। ইয়ানুকোভিচ ইইউয়ের ঋণ অগ্রাহ্য করে রাশিয়া থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তিরও বিরোধিতা করেছিলেন। কৃষ্ণসাগরভুক্ত দেশ রুমানিয়া, বুলগেরিয়া ২০০৭ সালে ইইউতে যোগ দেয়। আর পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক কিংবা হাঙ্গেরি যোগ দেয় ২০০৪ সালে। ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য নয়। কিন্তু ১৯৯৪ সালে ন্যাটোর পার্টনারশিপ ফর পিস প্রোগ্রামে যোগ দিয়েছে। আর ২০০৯ সালে ইইউর ইস্টার্ন পার্টনারশিপ প্রোগ্রামেও যোগ দেয় দেশটি। রাশিয়ার ভয়টা এ কারণেই। ক্রিমিয়ার পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের যথেষ্ট অবনতি হয়েছে। ক্রিমিয়ার পার্লামেন্ট রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্তির একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ১৬ মার্চ এই লক্ষ্যে সেখানে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। অথচ প্রেসিডেন্ট ওবামা এই সিদ্ধান্তকে অবৈধ ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ৩০০ নৌবাহিনী সজ্জিত ডেস্ট্রয়ার ইউএসএস টুস্ক্রটানকে কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে পাঠিয়েছে। ছয়টি যুদ্ধবিমান মোতায়েন রয়েছে বাল্টিক অঞ্চলে। ওবামা পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলেছেন। তিনি রাশিয়াকে ইউক্রেনের নেতাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার, আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের ক্রিমিয়ায় যাওয়ার ও ক্রিমিয়া থেকে সব রুশ সেনা (১৬ হাজার) প্রত্যাহারের দাবি করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে যদি রাশিয়ার মনোভাবে পরিবর্তন না আসে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র কিছু রুশ নাগরিকের (যারা ক্রিমিয়ায় আগ্রাসনের সঙ্গে জড়িত) বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ভিসা বাতিল, রাশিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে পারে। একই পথ অবলম্বন করতে পারে ইইউ। রাশিয়া-ইইউ সংলাপ তখন বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। এখানে একটা কথা বলা প্রয়োজন, ১৯৯৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে Budapest Memorandum on Security Assurances চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। ওই চুক্তির বিনিময়ে ইউক্রেনের কাছে যে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, তা রাশিয়াকে ফেরত দেওয়া হয়। ইউক্রেন ক্রিমিয়ায় কর্তৃত্ব ফিরে পায় বটে, কিন্তু রাশিয়াকে তার 'ব্ল্যাক সি ফ্লিট' এ অঞ্চলে (সেভাস টোপোল) মোতায়েন এবং রুশ সেনাবাহিনী মোতায়েনের অধিকার দেওয়া হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী এই সেনা মোতায়েন থাকবে ২০৪২ সাল পর্যন্ত। ইউক্রেন অবশ্য এ থেকে একটি ফি পাবে। জুন মাসে সোচিতে জি-৮ সম্মেলনও এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ল। এখন ১৬ মার্চের গণভোটে ক্রিমিয়া যে রাশিয়ার অঙ্গ হবে, তাতে দ্বিমত করার আর কোনো সুযোগ নেই। ফলে নতুন করে শুরু হবে স্নায়ুযুদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিকার অর্থেই রাশিয়ার ব্যাপারে এখন কঠোর হয় (সীমিত অর্থনৈতিক অবরোধের সিদ্ধান্ত), তাহলে রাশিয়াকে বাধ্য করবে একাধিক সিদ্ধান্ত নিতে। যেমন- ১. রাশিয়া ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে, ২. আফগানিস্তানে সব ধরনের সরবরাহ লাইনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে, ৩. সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংসের ব্যাপারে রাশিয়া বিরোধিতা করতে পারে, ৪. ইরানকে অস্ত্র তথা বিমানবিধ্বংসী অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে, ৫. চীনের সঙ্গে সামরিক তথা অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে। এতে বিশ্বে উত্তেজনা বাড়বে মাত্র। বলা ভালো, ক্রিমিয়া সংকটে চীন রাশিয়ার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। চীনের সঙ্গে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন নামের একটি সামরিক তথা অর্থনৈতিক ব্লক গড়ে তুলেছে রাশিয়া (জ্বালানিসম্পদসমৃদ্ধ মধ্য এশিয়ার দেশগুলো এর সদস্য)। একই সঙ্গে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে রাশিয়া গড়ে তুলছে একটি সামরিক জোট- কালেকটিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশন (সিএসটিও)। ওয়ারশর পরিবর্তিত রূপ হচ্ছে এই সিএসটিও। স্পষ্টতই ক্রিমিয়ার সংকট বিশ্বে অস্থিরতা বাড়াবে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে সত্যিকার অর্থেই যদি কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, তাহলে সবচেয়ে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে পশ্চিম ইউরোপ (বিশেষ করে জার্মানি), যারা রাশিয়ার গ্যাসের ওপর পরিপূর্ণভাবে নির্ভরশীল। ক্রিমিয়ার ঘটনাবলি ২০০৮ সালের জর্জিয়ার অংশ আবখাজিয়া ও দক্ষিন ওশেতিয়ার কথাই স্মরণ করিয়ে দিল। এখানকার রুশপন্থী জনগোষ্ঠীর সমর্থনে রাশিয়া সেখানে তার সেনা পাঠিয়ে অঞ্চল দুটি দখল করে নিয়েছিল। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্ররা মেদভেদেভ (রুশ প্রধানমন্ত্রী) এর Zone of privileged interest-এর তত্ত্ব সম্পর্কে ধারণা রাখেন (বেলারুশ-রাশিয়া দ্বন্দ্ব গ্যাস সরবরাহ নিয়ে)। রাশিয়ার নেতৃত্ব মনে করে, তাদের সীমান্তবর্তী দেশগুলোর ওপর তাদের একটি অলিখিত অধিকার রয়েছে। তাই আবখাজিয়া, দক্ষিণ ওশেতিয়া আর এখন ক্রিমিয়া- এগুলো মূলত একই সূত্রে গাঁথা। নিশ্চিত করেই বলতে পারি, স্নায়ুযুদ্ধ-২-এর নতুন রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছি আগামী দিনগুলোতে। Daily KALER KONTHO 12.03.14

0 comments:

Post a Comment