রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

কেমন হবে মোদির ভারত

ভারতে ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির বিজয় হাজারটা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে খোদ ভারতের ভেতরে ও বহির্বিশ্বে। কেমন হবে মোদির ভারত? বিজেপি নির্বাচনী ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল, সেসব প্রতিশ্র“তি বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ কি তিনি নেবেন? কিংবা তিনি গুজরাটে যেভাবে হিন্দু ও মুসলমান সম্পত্তি আলাদা করেছিলেন, সেভাবেই কি পুরো ভারতবর্ষে এই সাম্প্রদায়িক বিভক্তি আনবেন? তার পররাষ্ট্রনীতিই বা কী হবে? অর্থনীতির ক্ষেত্রে কতটুকু সংস্কার আনতে পারবেন তিনি? এ ধরনের হাজারটা প্রশ্ন এখন মোদিকে ঘিরে। এটা সত্য, বিশাল এক প্রত্যাশা নিয়ে তিনি এসেছেন। উন্নয়ন, চাকরি, বিনিয়োগ- এসব ক্ষেত্রে তিনি যদি ব্যাপক পরিবর্তন না আনেন, তাহলে অচিরেই তিনি তার জনপ্রিয়তা হারাবেন। ঐতিহ্যগতভাবেই গুজরাটিরা ব্যবসায়ী। ভারত তথা বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় যার নাম রয়েছে সেই মুকেশ আম্বানী নিজে গুজরাটি এবং পত্রপত্রিকায় দেখলাম, তিনি মনে করেন মোদি ভারতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবেন। একটা মোদি ম্যাজিক সারা ভারতে ছেয়ে গেছে- এটা অস্বীকার করার কোনো জো নেই। মোদির রাজনীতি সাম্প্রদায়িক মানসিকতাসম্পন্ন, এটা জেনেও মানুষ তাকে ভোট দিয়েছে। তিনি একটি ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন, সন্দেহ নেই তাতে। তার এ বিশাল জনপ্রিয়তাকে তিনি কতটুকু উন্নয়নের কাজে লাগাবেন, সেটাই দেখার বিষয় এখন। বিশাল ভারতে দারিদ্র্য যেখানে একটি বড় সমস্যা, কিংবা জাতপাতের সমস্যা যেখানে উন্নয়নের পথে প্রধান অন্তরায়, সেখানে মোদির সামনে চ্যালেঞ্জ একাধিক। এক. অর্থনীতিকে বাগে আনা। প্রবৃদ্ধি বাড়ানো। বিনিয়োগের জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করা। তরুণ প্রজন্মের জন্য সৃষ্টি করা চাকরির বাজার এবং শত শত ‘গুজরাল মডেল’ সৃষ্টি করে উন্নয়নের জোয়ারে ‘নয়া ভারত’কে ভাসিয়ে দেয়া। দুই. মুসলমানদের আস্থায় নেয়া। যেখানে ভারতজুড়ে মুসলিম জনগোষ্ঠীর হার শতকরা ১৮ ভাগ, সেখানে লোকসভায় নির্বাচিত মুসলমান সংসদ সদস্যের হার মাত্র ৪ ভাগ। মোদি রামমন্দির নির্মাণ করার প্রতিশ্র“তি দিয়ে মুসলমানদের আস্থা হারিয়েছেন। এ আস্থা তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তিন. তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি মডেল। যে মডেল তরুণ সম্প্রদায়কে শুধু চাকরির নিশ্চয়তাই দেবে না, বরং একটি উন্নত ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দেবে। চার. প্রতিবেশী চীন, পাকিস্তান আর বাংলাদেশ- এই তিনটি দেশের সঙ্গে একটি আস্থা ও পারস্পরিক বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে তোলা। বিশেষ করে চীনের সঙ্গে, যার উন্নয়ন মডেলে তিনি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। শ্রীলংকার সঙ্গেও সম্পর্ক বাড়াতে হবে, যা ইউপিএ সরকারের সময় ছিল উপেক্ষিত। পাঁচ. বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা। নিজেকে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।নতুন সরকারের একটা বড় জায়গা হচ্ছে তার বৈদেশিক সম্পর্ক। পরিবর্তিত বিশ্ব রাজনীতির কারণে, বিশেষ করে ইউক্রেনের পরিস্থিতির পর নতুন করে যে স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা হতে যাচ্ছে, তাতে ভারতের অবস্থান মোদি নিশ্চিত করবেন। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সম্পর্ক থাকলেও ক্রিমিয়া প্রশ্নে ভারতের অবস্থান ছিল রাশিয়ার পক্ষে। সাবেক ইউপিএ জোট আমলে নেয়া এ সিদ্ধান্ত থেকে ভারত সরে আসতে পারবে না। সেক্ষেত্রে ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক আরও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। ভারতের পররাষ্ট্রনীতির একটা বড় জায়গা হচ্ছে ভারত-চীন সম্পর্ক। ইউপিএ জোট সরকারের সময় এ সম্পর্কের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীরা দুই দেশের রাজধানী সফর করেছেন। বাণিজ্য হচ্ছে এ সম্পর্কের মূল ভিত্তি। ২০১১ সালে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৭৪ বিলিয়ন ডলার। ২০১২ সালে ছিল ৭৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন। কিন্তু ২০১৩ সালে এটা কমে এসে দাঁড়ায় ৬৫ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারে। ভারতের পক্ষে ঘাটতি ৩১ বিলিয়ন ডলার। ভারতের রফতানির পরিমাণ কমেছে (১৭ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলার। শতকরা হারে কমেছে ০.৪ ভাগ হারে, আগের বছরের তুলনায়)। এ ঘাটতি কমানো হবে মোদির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। দু’দেশই অর্থনৈতিক জোট ‘ব্রিকসে’র সদস্য। ব্রিকসে রাশিয়াও আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন অর্থনৈতিক বিশ্ব ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করেই ব্রিকসের জন্ম। ব্রিকস আগামীতে অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে এবং মার্কিন আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। ফলে মোদির সময়ে চীন-ভারত সম্পর্ক যে আরও জোরদার হবে, এটাই স্বাভাবিক। তিনি তিন তিনবার (২০০৬, ২০০৭, ২০১১) চীন সফর করেছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মোদির সম্পর্ক কোন পর্যায়ে যাবে, সে ব্যাপারেও দৃষ্টি থাকবে অনেকের। অনেকেই স্মরণ করতে পারেন, মুখ্যমন্ত্রী মোদিকে ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। আসলে ১৯৯৮ সালে মার্কিন কংগ্রেসে একটি আইন পাস হয়। ওই আইনে বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত থাকেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফরে ভিসা পাবেন না। এ আইন অনুযায়ীই মোদিকে ভিসা দেয়া হয়নি। মোদি গুজরাটের দাঙ্গার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে, যে দাঙ্গায় প্রায় দুই হাজার ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছিলেন। কিন্তু এ মুহূর্তে ওবামা প্রশাসনের কাছে ভারতের স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব অনেক বেশি। ভারতে বড় ধরনের মার্কিন বিনিয়োগ রয়েছে। দু’দেশের মধ্যকার বাণিজ্যের পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন ডলারের উপরে। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত সামরিক চুক্তিতে আবদ্ধ। ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১১ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যুদ্ধবিমান ক্রয় করছে। এর বাইরে ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার দিয়ে অস্ত্রশস্ত্র ক্রয় করছে। ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের পারমাণবিক প্রযুক্তির বাজার। অর্থাৎ ভারতে মার্কিন বিনিয়োগ অনেক বেশি। এ বিনিয়োগকে ওবামা প্রশাসন ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেবেন না। তাই ব্যক্তি মোদি এখানে ফ্যাক্টর হবেন না। মোদির ব্যাপারে যে আপত্তি ছিল, মোদিকে ওবামার আমন্ত্রণের পর সেই আপত্তিটি আর থাকছে না। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি না পেলেও সম্পর্কের ক্ষেত্রে অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ২০০৪ সালে ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, পাকিস্তান তাদের নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে সব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নির্মূল করবে। মোদি সরকার এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবে এবং সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক ধরনের ‘স্ট্যাটাস কো’ বজায় রাখবে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেকের। দেশে অনেকেই মনে করেন, বিগত কংগ্রেস সরকার বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকারকে গুরুত্ব দিয়েছিল বেশি। এখন বিজেপি সরকার কোনো দলকে নয়, বরং রাষ্ট্র পর্যায়ে সম্পর্ককে গুরুত্ব দেবে বেশি। এক কথায় বলা যায়, ভারতের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হয় তার জাতীয় স্বার্থের আলোকে। ফলে নতুন সরকার তাদের জাতীয় স্বার্থের আলোকেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পরিচালনা করবে। তাই সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরিবর্তনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। এ মুহূর্তে এটা স্পষ্ট, তিস্তার পানি বণ্টনের চুক্তিটি এখন অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলে গেল। কারণ মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে কোনো ধরনের বিবাদে যাবে না কেন্দ্র। ছিটমহল বিনিময়ের সম্ভাবনাও ক্ষীণ। কেননা এটা করতে গিয়ে সংবিধানে যে সংশোধন প্রয়োজন, তার উদ্যোগ বিজেপি নেবে না। অতীতে এর বিরোধিতা করেছিল বিজেপি। বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর পরিবর্তে বাজার সম্প্রসারণ ঘটবে। নতুন সরকার উদ্যোগ নেবে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বাড়াতে। তবে মোদি নির্বাচনের আগে তথাকথিত ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর যে হুমকি দিয়েছিলেন, এ ব্যাপারে তিনি ইতিমধ্যেই উদ্যোগ নিয়েছেন। দায়িত্ব নেয়ার আগেই স্বরাষ্ট্র সচিবকে ডেকে অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে আলাদা একটি দফতর গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন। এটা করলে পশ্চিমবঙ্গে বড় বিতর্কের সৃষ্টি হবে এবং দেশে এক ধরনের অস্থিতিশীলতার জন্ম হবে। মূলত মমতা ব্যানার্জিকে চাপে রাখার জন্যই তিনি এই উদ্যোগটি নিয়েছেন। কারণ ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধান সভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মোদির টার্গেট মূলত সেই নির্বাচন। ভোট পাওয়ার জন্যই তিনি অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়টি ব্যবহার করেছেন। এখন ক্ষমতায় যাওয়া একজন প্রধানমন্ত্রীর জন্য বিষয়টা বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশে ভারতের বড় স্বার্থ রয়েছে। ভারতের ‘সাতবোন’ রাজ্যের উন্নয়নে বাংলাদেশের সহযোগিতা তার দরকার। উপরন্তু দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়নকে গ্রাম পর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে ‘বিদ্যুৎ কানেকটিভিটি’ তার দরকার। সাতবোন রাজ্যের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ তিনি দারিদ্র্যপীড়িত বিহারে নেবেন বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে। সুতরাং বাংলাদেশকে তার আস্থায় নিতে হবে। অহেতুক ‘অনুপ্রবেশকারী’ বক্তব্য তুলে তিনি দু’দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট করবেন না। তবে তিনি যদি এখন সত্যিকার অর্থে উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেন, তাহলে তাকে বাংলাদেশকেও সঙ্গে নিতে হবে। দ্বিপক্ষীয় নয়, বরং বহুপক্ষীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে তিনি বাংলাদেশেও সমান জনপ্রিয় হবেন। এক্ষেত্রে তিনি চারদেশীয় (ভারত-বাংলাদেশ-নেপাল-ভুটান) একটি পানি ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিতে পারেন। যাতে করে একদিকে তিনি বাংলাদেশের পানি সমস্যার সমাধান, অন্যদিকে দেশটির বিদ্যুৎ ঘাটতি কমানোরও উদ্যোগ নিতে পারেন। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে একটা বড় অন্তরায় হচ্ছে ভারতের ব্যুরোক্রেসি। ভারতের ব্যুরোক্রেসি বাংলাদেশকে সমমর্যাদার দৃষ্টিতে দেখে না। এখন নরেন্দ্র মোদির আমলে ব্যুরোক্রেসি কী ভূমিকা রাখে সেটাই দেখার বিষয়। আমার ধারণা, পুরো ভারতকে একটি ‘গুজরাট মডেলে’ (বিশাল বড় রাস্তা ও সেই সঙ্গে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিল্পায়ন, বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ) পরিণত করার যে প্রতিশ্র“তি মোদি দিয়েছেন, তা বাস্তবায়ন করতে হলে তার বাংলাদেশকে সঙ্গে নিতে হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তো অভিনন্দন বার্তায় জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশ হচ্ছে তার (মোদির) ‘দ্বিতীয় বাড়ি’। এই ‘দ্বিতীয় বাড়ি’র ধারণা মোদি হয়তো গ্রহণ করবেন না। তবে অতীতে ইউপিএ সরকার যেভাবে একটি বিশেষ দলকে ‘প্রমোট’ করত, মোদি বা তার উপদেষ্টারা সেই কাজটি করবেন না। ফলে মোদির পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশ অগ্রাধিকার তালিকায় থাকবে না। রাষ্ট্র পর্যায়ে যে সম্পর্ক থাকে, সে রকম সম্পর্কই থাকবে। বাংলাদেশের ব্যাপারে কোনো বিশেষ আগ্রহ থাকবে না মোদি সরকারের। তেলেগু দেশম পার্টির সভাপতি (বিজেপির মিত্র) চন্দ্রবাবু নাইডু বলেছেন, মোদির নেতৃত্বে ভারত হয়ে উঠবে ‘সুপার পাওয়ার’। মিথ্যা বলেননি নাইডু। মোদির এই ‘ভিশন’ আছে। তিনি ভারতকে বিশ্বশক্তি হিসেবে পরিণত করার উদ্যোগ নেবেন। এজন্য তিনি চীনকে অগ্রাধিকার তালিকায় রাখবেন প্রথমে। অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি একজন দক্ষ প্রশাসক। তিনি জানেন অর্থনীতিই বিশ্ব রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তার কাছে চীনের পর জাপান ও সিঙ্গাপুর মডেল বেশি আকৃষ্ট হয়েছে। চীনের ইপিজেড (রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) মডেলে তিনি বেশি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। এখন ভারতে এই মডেলের প্রয়োগ তিনি করবেন। নতুন নতুন ইপিজেড এখন তৈরি হবে, যাতে করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। মোদি জানেন, ভারত ও চীনের যৌথ জাতীয় আয় ২০১৫ সালে জি-৭-এর একত্রিত জাতীয় আয়কে ছাড়িয়ে যাবে (২০১০ সালে ছিল অর্ধেক)। আর ২০৩০ সালে এই যৌথ আয় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানের যৌথ আয়কে (একত্রিত) ছাড়িয়ে যাবে। ৪২ জাতিভুক্ত ওসিইডির এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্ব অর্থনীতিতে চীন ও ভারতের অবদান দাঁড়াবে যথাক্রমে ২৮ ও ১১ ভাগে (তখন যুক্তরাষ্ট্রের অবদান থাকবে ১৮ ভাগ, জাপানের ৮ ভাগ)। সুতরাং চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে যে তিনি গুরুত্ব দেবেন, এটা এক কথাতেই বলে দেয়া যায়। চীনের সঙ্গে কোনো বৈরিতায় মোদি যাবেন না। ‘হিন্দি-চীন’ ভাই ভাইয়ের যে মডেলের সূত্রপাত ঘটেছিল বান্দুং সম্মেলনে (পশ্চাশের দশকে), এক নতুন আঙ্গিকে তা আবার ফিরে আসছে মোদি জমানায়। ধারণা করছি, মোদি তার প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে চীনকে বেছে নিতে পারেন। অথবা জাপান। তবে অস্ট্রেলিয়ায় জি-২০ দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেখানে তিনি অংশ নিয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে চেনা ও জানার সুযোগ পাবেন প্রথমবারের মতো।মোদি ভালো করেই জানেন, বহির্বিশ্বে তার একটি বাজে ইমেজ আছে। ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতেও নিষিদ্ধ ছিলেন। এখন অবশ্য ওবামাও তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বিশ্ব সম্প্রদায় তাদের মনোভাবে পরিবর্তন আনছেন। বোঝাই যায়, আধুনিক ভারতের অন্যতম রূপকার হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। Daily Jugantor ২২ মে, ২০১৪

0 comments:

Post a Comment