রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ইতিবাচক কিছু ঘটবে কি?

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ঢাকায় আসছেন আজ। এককভাবে এটা তার প্রথম বিদেশ সফর। এর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তিনি ভুটানে গিয়েছিলেন। যে প্রশ্নটি এখন অনেকের মনেই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে তা হচ্ছে, সুষমা স্বরাজের এ সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিদ্যমান জটিলতা কতটুকু কাটবে? আমরা, বাংলাদেশের আমজনতা তার এই সফরের মধ্য দিয়ে কতটুকু আশাবাদী হতে পারি? এখানে কতগুলো বিষয় আমাদের বিবেচনায় নেয়া উচিত। এক. সুষমা স্বরাজের সঙ্গে আমাদের জাতীয় নেতাদের একটি ব্যক্তিগত পরিচয় রয়েছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত পরিচয় আছে। আমাদের জাতীয় নেতাদের তিনি চেনেন, জানেন এবং তাদের রাজনীতি সম্পর্কে তিনি ভালো ধারণা রাখেন। কিন্তু আমরা যেন ভুলে না যাই, ব্যক্তিগত সখ্য বা পরিচয় সমস্যা সমাধানের প্রশ্নে কোনো বড় ভূমিকা পালন করে না। দুই. জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে ভারতীয় নেতাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রশ্নে সাবেক ইউপিএ সরকারের প্রণীত নীতি থেকে মোদি সরকার ইউটার্ন নেবে- যারা এই মনোভাব পোষণ করেন, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। তিন. সুষমা স্বরাজের এই সফর মূলত একটি রুটিন ওয়ার্ক। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তার পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মনোভাব জানার প্রয়োজন রয়েছে। তবে এটাও বিবেচনায় নিতে হবে যে, মোদি সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে দক্ষিণ এশিয়া। যে কারণে আমরা দেখি মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার সরকার তথা রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। মোদি নিজে ভুটান প্রথম সফর করে এই মেসেজটাই দিলেন যে, তিনি দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে গুরুত্ব দিতে চান। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ সম্পর্কের ভিত্তি কী? শুধু ভারতের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা? নাকি দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়ন? তাই খুব সঙ্গত কারণেই দক্ষিণ এশিয়ায় আগামী দিনে ভারতের ভূমিকা কী হবে, সে ব্যাপারে লক্ষ্য থাকবে অনেকের। সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরের আগেই কোনো কোনো সংবাদ বাংলাদেশে যে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। লক্ষ্য করা যাচ্ছে, মোদি ক্ষমতাসীন হয়ে আসাম থেকে তথাকথিত বাংলাদেশীদের খেদাও অভিযান শুরু করেছেন। বিষয়টি আমাদের জন্য উদ্বেগের। এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ ছাপা হয়েছিল ভারতের ডেকান হেরাল্ড পত্রিকায়। বাংলাদেশের একটি টেবলয়েড পত্রিকাও সংবাদটি ছেপেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, ভারত সরকারের একজন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতায় আগামী কিছুদিনের মধ্যে অবৈধ বাংলাদেশীদের আসাম ছাড়তে আলটিমেটাম দিয়েছে আসামের রাজ্য বিজেপি। যদিও কেন্দ্রে মোদি সরকারের এতে সমর্থন রয়েছে কি-না তা স্পষ্ট নয়। ভারতের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী সর্বানন্দ সান্যাল ডেকান হেরাল্ডকে বলেছেন, আসাম থেকে অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়নে নতুন করে আরও ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল বসবে। তিনি ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরন রিজুর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সর্বানন্দ সান্যাল নিজে আসাম বিজেপির সভাপতি আর কিরণ রিজু অরুণাচল প্রদেশ থেকে নির্বাচিত লোকসভার সদস্য ও বিজেপির ন্যাশনাল সেক্রেটারি। সুষমার ঢাকা সফরের আগে এ ধরনের সংবাদ যখন প্রকাশিত হয়, তখন দুদেশের মধ্যকার সম্পর্ক প্রশ্নবিদ্ধ হয় বৈকি! আসাম রাজ্য বিজেপির এ হুমকিটি এসেছিল নয়াদিল্লিতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার গঠন করার এক সপ্তাহের মধ্যে। অথচ মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী। মোদির সঙ্গে তিনি দেখাও করেছিলেন। ঢাকায় ফিরে এসে তিনি এমন আশাবাদও ব্যক্তি করেছিলেন যে, মোদির শাসনামলে দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও উন্নত হবে। কিন্তু এখন বিজেপি সরকার যদি সত্যি সত্যিই বাংলাদেশী খেদাও অভিযান শুরু করে, তাহলে তা দুদেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে বাধ্য। শপথ গ্রহণ করার আগেই মোদি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবকে ডেকে (২০ মে) তথাকথিত বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকাতে পৃথক একটি দফতর গঠন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এখন মোদির সেই নির্দেশ আসাম বিজেপি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে কি-না সেটাই দেখার বিষয়। নির্বাচনের আগেও মোদি এ ধরনের কথাবার্তা বলেছিলেন। এ নিয়ে খোদ পশ্চিমবঙ্গে বড় বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এর কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। বাংলায় কথা বললেই যে তিনি বাংলাদেশী হবেন, তেমনটি নয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বাংলাভাষী রাজ্য। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, আসাম, ত্রিপুরা, উড়িষ্যা ও ঝাড়খণ্ডের একটা অংশের মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন। সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরের সময় দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় এ প্রশ্নে বাংলাদেশের শক্ত অবস্থান নেয়া উচিত। ইতিমধ্যে বেশ কিছু ইস্যুতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আটকে আছে। তিস্তার পানি চুক্তি ও সীমান্ত চুক্তির ব্যাপারে বিজেপির অবস্থান আমরা মোটামুটি জানি। চূড়ান্ত বিচারে নরেন্দ্র মোদিকে যদি মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে বিভিন্ন জাতীয় প্রশ্নে কোনো কমপ্রোমাইজ করতে হয়, তাহলে মোদি মমতার সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারবেন না। এতে করে তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি চলে যাবে ডিপ ফ্রিজে। আন্তঃনদী সংযোগের কথাও তিনি বলেছেন। মনে রাখতে হবে, ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার নির্বাচন। তিস্তা একটা ইস্যু সেখানে। সীমান্ত চুক্তির ব্যাপারেও বিজেপির প্রচণ্ড আপত্তি রয়েছে। বিজেপির বিরোধিতার কারণেই কংগ্রেস সরকারের আমলে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়নি। চুক্তিটি ভারতীয় মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছিল। একটি বিল লোকসভায় উপস্থাপিতও হয়েছিল। কিন্তু বিজেপির আপত্তির কারণে এ নিয়ে আর আলোচনা হয়নি। এখন বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার এ বিষয়ে গুরুত্ব দেবে, এটা আমার মনে হয় না। এর বাইরে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং ট্রানজিট প্রশ্নেœ দুদেশের মাঝে আস্থার যে ঘাটতি রয়েছে, সে ব্যাপারে নতুন সরকার কোনো উদ্যোগ নেবে বলে মনে হয় না। আমাদের পররাষ্ট্র সচিব মার্চের শেষদিকে নয়াদিল্লি গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। নির্বাচনের আগে আমাদের পররাষ্ট্র সচিব যখন নয়াদিল্লি যান, তখন বুঝতে হবে বাংলাদেশ সরকার পরিস্থিতি যাচাই করছে। স্পষ্টতই তিনি কোনো সুখবর নিয়ে আসতে পারেননি। এটা মোটামুটিভাবে আমরা সবাই জানি, কংগ্রেসের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। যে কারণে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ বেশ কিছু চুক্তি করেছিল। ভারত গেল পাঁচ বছর বাংলাদেশের কাছ থেকে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সে অর্থে তেমন সুবিধা পায়নি। এখন নয়াদিল্লিতে সদ্য গঠিত মোদি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায়, সেটা দেখার বিষয়। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট করেই বলা যায়, জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে ভারতের নীতির পরিবর্তনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না। ইতিমধ্যে খবর বেরিয়েছে, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালনে করিডোর পেতে যাচ্ছে ভারত। অরুণাচল থেকে বাংলাদেশের দিনাজপুরের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ যাবে বিহারে। একই সঙ্গে চলতি বছরেই বহুল বিতর্কিত রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করবে ভারত। প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারতের স্বার্থ রয়েছে। সুতরাং নয়াদিল্লিতে মোদি সরকার এসব প্রকল্প বাতিল করবে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশ এখন তার স্বার্থ আদায়ে কতটুকু উদ্যোগ নেয়, সেটাই দেখার বিষয়। চূড়ান্ত বিচারে মোদি ক্ষমতা পেয়েছেন। অনেক কিছুই তার পক্ষে করা সম্ভব হবে না। কারণ সরকার পরিচালনা করতে হলে তাকে আঞ্চলিক দলগুলোর সহযোগিতা নিতে হবে। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক দলগুলো এক ধরনের চেকস ব্যান্ড ব্যালেন্স হিসেবে কাজ করবে। ক্ষমতায় আসার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অনেক কথা বলতে হয়। বিজেপিও বলেছে। ভারত একটি বিশ্বশক্তি হতে চলেছে। ২০৩০ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের অবস্থান হবে দ্বিতীয়। ভারত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হতে চায়। ভারতের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিশ্বে একটি মডেল। কিন্তু প্রতিবেশীর ব্যাপারে ভারতের যে মনোভাব, যাকে অনেকে সম্প্রসারণবাদী নীতি বলে মনে করেন, সেই নীতিতে যদি পরিবর্তন না আসে, তাহলে বহির্বিশ্বে ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে বাধ্য। এখানে সুষমা স্বরাজের একটি বক্তব্য আমরা উল্লেখ করতে পারি। ভুটানে মোদির সফরসঙ্গী হওয়ার সময় সাংবাদিকদের (যাদের কেউ কেউ বাংলাদেশী পত্রিকাগুলোর প্রতিনিধি) বলেছেন, মোদি সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে অমীমাংসিত স্থল সীমান্ত ও তিস্তার পানি সমস্যার সমাধান করবে। একই সঙ্গে নতুন একটি প্রস্তাবের কথাও তিনি বলেছেন- সেটা হচ্ছে তেঁতুলিয়া করিডোর। উত্তর-পূর্ব ভারতে পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে ভারত এই করিডোর চাইবে। বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে চার কিলোমিটার তেঁতুলিয়া করিডোর ভারত অনুমতি পেলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার কমে যাবে। গত ১৮ জুন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রভাবশালী পত্রিকা দৈনিক যুগশঙ্খ এ খবরটি দিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে বাংলাদেশের মনোভাব জানা যায়নি। আসলে ভারত একের পর এক সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে। এর আগে প্রথমে আমরা ত্রিপুরায় একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ভারতকে ট্রানজিট (করিডোর) দিয়েছিলাম। এটা করতে গিয়ে আমরা নদীতে বাঁধ পর্যন্ত দিয়েছিলাম। যেখানে সারা বিশ্বে নদীর প্রবাহকে সংরক্ষণ করা হয়, সেখানে ২৪ চাকার ভারতীয় হেভি ট্রাকগুলো পার করার সুবিধার্থে আমরা নদীতে বাঁধ দিয়েছিলাম। এরপর অনেকটা একই প্রক্রিয়ায় ত্রিপুরায় খাদ্যশস্য পরিবহনের অনুমতি আমরা দিয়েছি। কিন্তু ট্রানজিটের জন্য কোনো ফি নির্ধারিত হয়নি। বিদ্যুতের জন্য করিডোর দিতেও আমরা সম্মত হয়েছি। কিন্তু আমাদের প্রাপ্তির খাতা শূন্য। আমাদের অনেক ন্যায্য দাবিও পূরণ করা হয়নি। আমরা অতীতেও দেখেছি, আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়া ভারত বাংলাদেশকে এতটুকু ছাড় দেয়নি। অনেকের স্মরণ থাকার কথা- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ভারত একতরফাভাবে ফারাক্কায় পানি প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। ফলে বাংলাদেশ বাধ্য হয় ফারাক্কা প্রসঙ্গ আন্তর্জাতিক আসরে তুলে ধরতে। ১৯৭৬ সালে ইস্তাম্বুলে ইসলামী দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে প্রসঙ্গটি বাংলাদেশ উত্থাপন করায় সদস্য দেশগুলো তা সমর্থন করে। একই বছরের আগস্টে কলম্বোতে অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের সম্মেলনে বাংলাদেশ ফারাক্কা প্রসঙ্গ আবারও উত্থাপন করে। পরে বাংলাদেশ জাতিসংঘের ৩১তম অধিবেশনে প্রসঙ্গটি উত্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সেনেগাল, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলংকার অনুরোধে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের রাজনৈতিক কমিটি বাংলাদেশ ও ভারতকে অনুরোধ করে বিষয়টি নিজেরাই মীমাংসা করে ফেলার জন্য। পরে সিরিয়া, মিসর, শ্রীলংকা, আলজেরিয়া ও গায়ানার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারত ফারাক্কা প্রশ্নে জরুরি আলোচনার জন্য ঢাকায় একটি বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছিল। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এক বিবৃতিতে ওই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছিল। ১৯৭৭ সালে ঢাকায় ফারাক্কায় পানি বণ্টন সংক্রান্ত প্রথম চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। পরবর্তীকালে ফারাক্কা প্রশ্নে আরও দুটো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু তাতে করে পানির প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়নি। কারণ ফারাক্কা পয়েন্টে পানি প্রবাহের গড় ধরে পানির হিস্যা নিশ্চিত করা হয়েছিল। কিন্তু ফারাক্কায় পানির প্রবাহ বাড়েনি। চুক্তি অনুযায়ী যতটুকু পানি পাওয়ার কথা, তাও আমরা পাচ্ছি না। ইতিমধ্যে সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে, পানি না থাকার কারণে শুকিয়ে গেছে পদ্মাসহ এর ৪টি শাখা নদী। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ওপর। বেকার হয়ে পড়েছেন নদীর উপকূলবর্তী অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। এছাড়া পানিতে লবণাক্ততার আশংকায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা হচ্ছে গড়াই নদী। সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী পদ্মা নদীর শাখা নদী হিসেবে গড়াই, হিসনা, কালীগঙ্গা ও মাথাভাঙ্গা নদী প্রায় পুরোপুরি শুকিয়ে গেছে (যায়যায়দিন, ১৪ এপ্রিল ২০১৪)। আজ তিস্তার ক্ষেত্রেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রসঙ্গ আবারও উত্থাপন করেছেন মোদি। নির্বাচন প্রচারণায় তিনি বলেছিলেন, ক্ষমতায় গেলে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন। তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন, আন্তঃনদী সংযোগের কারণে গুজরাট খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। সুতরাং বাংলাদেশের মানুষ যে একটা শংকার মধ্যে থাকবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন সুষমা স্বরাজের ঢাকা আগমনের মধ্য দিয়ে এ শংকা কতটুকু দূর হবে বলা মুশকিল। ধারণা করছি, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরের মধ্য দিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নয়াদিল্লি সফরের পথ প্রশস্ত হবে। বাংলাদেশ এটাই চাইছে। চলতি বছর প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করতে পারেন। ভারতীয় নেতারা আমাদের বারবার আশার বাণী শোনাচ্ছেন। কিন্তু সমস্যাগুলো ঝুলে থাকছে। সমাধান হচ্ছে না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ যদি শক্ত অবস্থানে যেতে না পারে, তাহলে সেটা আমাদের দুর্বলতারই লক্ষণ হবে। বিগত ইউপিএ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো সুষমা স্বরাজও বলেছেন, শিগগিরই সীমান্ত ও তিস্তা সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এতে আশ্বস্ত হবে না। বাংলাদেশের মানুষ দেখতে চায় বাস্তব সমাধান। সুতরাং সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে আমি তেমন কোনো আশার আলো দেখতে পাচ্ছি না। ভারতীয় নেতাদের মানসিকতার পরিবর্তন না হলে কোনো সমস্যারই সমাধান হবে না। Daily Jugantor 25.06.14

0 comments:

Post a Comment