রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

শিক্ষকতায় একাল সেকাল

৯ সেপ্টেম্বর প্রতিটি সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ছবি- তিনি অস্ত্র হাতে নিশানা প্র্যাকটিস করছেন। তাকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ছাত্রলীগের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক। 'ছাত্রলীগ নেতা যখন অস্ত্র প্রশিক্ষক' শীর্ষক সংবাদটি আমার ধারণা সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে আহত করে থাকবে। ওই শিক্ষক, যিনি একসময় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন এবং এখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক। ওই ঘটনায় আরও একজন শিক্ষকের পরিচয় পাওয়া গেছে। যিনি এখন বিসিএস ইকোনমিক ক্যাডার। একজন শিক্ষকের হাতে থাকার কথা বই। তার হাতে যখন পিস্তল থাকে, যখন ছাত্র অবস্থায় পিস্তলের প্রশিক্ষণ নেয়, তখন তার সামাজিক অবস্থান বুঝতে আমাদের কষ্ট হয় না। সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রলীগ ওই নেতাকে বহিষ্কার করেছে। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়নি। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত যা হয় তা হচ্ছে, শিক্ষককে 'বাধ্যতামূলক ছুটিতে' পাঠিয়ে কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। হয়তো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এ কাজটিই করবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক সমিতির একটি বক্তব্য থাকা উচিত ছিল। গতকাল পর্যন্ত কোনো বিবৃতি আমার চোখে পড়েনি। তবে অভিযুক্ত ওই শিক্ষক দাবি করেছেন, প্রকাশিত সংবাদটি বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তার দাবি, সাবেক ইবি সহকর্মীদের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভ্রমণ অনুষ্ঠানের একটি ছবি জিম্মি করে কাট-কপি-পেস্টের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে সাজিয়ে একটি ভুল ও বানোয়াট, ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। শিক্ষক হিসেবে আমি এ ঘটনায় মর্মাহত, লজ্জিত ও দুঃখিত। অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হোক, এটা আমি দেখতে চাই। আমি এ সংবাদটির জন্য অপেক্ষায় থাকলাম; কিন্তু বাস্তবতা কী বলে? ৫ থেকে ৭ বছরে কারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন? কী তাদের পরিচয়? কোন পরিচয়টি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের কাছে মুখ্য হয়ে উঠেছিল? এসব আমরা সবাই জানি। তবে কষ্ট লাগে এই ভেবে যে, একজন শিক্ষক যখন দোষী সাব্যস্ত হন, ওই দোষের ভাগিদার আমরা সবাই। অভিযুক্ত ওই শিক্ষক যখন ছাত্র ছিলেন, তখন তিনি কারও না কারও ছাত্র ছিলেন। কীভাবে বদলে যাচ্ছে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক! আমি এ সম্পর্কে গুরুত্ব দিতে চাই। আমার অনেক ছাত্র আজ শিক্ষক, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা পড়ান। শিক্ষক-ছাত্রের সেই আন্তরিকতা আমি আজকাল আর খুঁজে পাই না। প্রসঙ্গক্রমেই আমার দুই শিক্ষকের কথা এখানে মনে পড়ে গেল। অধ্যাপক রওনক জাহান ও অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। অধ্যাপক রওনক জাহান রাশভারী মানুষ। বিশাল পা-িত্যের অধিকারী। আমি তার প্রিয় ছাত্র ছিলাম কখনোই বলব না। কিন্তু ছাত্রকে কীভাবে সন্তানের মতো ভালোবাসতে হয়, তা তিনি প্রমাণ করেছিলেন। তখন তিনি ঢাকাতেই থাকেন। কালেভদ্রেও দেখা হয় না। জানি, তিনি গবেষণা করছেন সিপিডিতে। দীর্ঘদিন যোগাযোগ ছিল না, এমনকি এখনও নেই। আশির দশকের মাঝামাঝি আমার পিএইচডি প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে আমি যখন জেনেভায় গিয়েছিলাম অধ্যাপক রওনক জাহান তখন আইএলওতে। আমি যোগাযোগ করলাম। তিনি আমাকে আমন্ত্রণ জানালেন। আইএলওর ক্যান্টিনে নিজে লাইনে দাঁড়িয়ে আমার জন্য খাবার কিনলেন। আমরা খেলাম। দ্বিতীয় ঘটনার কথা বলি। রওনক ম্যাডাম তখন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমি তখন নিউইয়র্কে। ফোন করলাম। সেই একই কণ্ঠ, আসতে বললেন। কলম্বিয়ার স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল ও পাবলিক অ্যাফেয়ার্স বিল্ডিংয়ের খুব সম্ভবত ১১ তলায় তার সঙ্গে যখন দেখা করতে গিয়েছিলাম, তখন নিজ হাতে কফি বানিয়ে তিনি আমাকে দিয়েছিলেন। একজন শিক্ষকের তার একজন ছাত্রের প্রতি কতটুকু ভালোবাসা থাকে, কতটুকু আন্তরিক তিনি, অধ্যাপক রওনক জাহান তার বড় উদাহরণ। দ্বিতীয় আরেকটি দৃষ্টান্ত দিই। তিনি আমার শিক্ষক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। এখন ইসলামাবাদ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন। আমি ইসলামাবাদ গেছি। স্যারের ফোন জোগাড় করে একটি ক্যাব নিয়ে রাতে তার বাসায় গেলাম। মনে আছে, রাত প্রায় ১১টার দিকে তিনি অনেকদূর হেঁটে এসে মেইন রাস্তায় আমাকে একটি ট্যাঙ্কি্যাবে তুলে দিয়েছিলেন। একজন শিক্ষক তার ছাত্রকে কতটুকু ভালোবাসতে পারেন, নজরুল ইসলাম স্যার ছিলেন তার একটি প্রমাণ। তৃতীয় আরেকটি দৃষ্টান্ত নেই। অধ্যাপক আসাদুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমানে প্রয়াত। ২০০৬ সালে আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্যপদে নিয়োগ পেলাম, যেদিন আগারগাঁও অফিসে যোগ দিতে গেলাম, সেদিন আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। তার চোখে সেদিন আমি অশ্রু দেখেছিলাম। ধানমন্ডির ৩নং রোডে তার সরকারি কোয়ার্টারের পাশেই ছিল আমার সরকারি অ্যাপার্টমেন্ট। কতদিন যে ফোন করে তার বাসায় ডেকে নরসিংদীর মিষ্টি খাইয়েছেন, আমি বলতে পারব না। আমাকে অনেক স্নেহ করতেন। আমার অবর্তমানে অন্যদের কাছে প্রশংসাও করতেন। একজন শিক্ষক কত আন্তরিক হলে ছাত্রের প্রশংসা করে, অধ্যাপক আসাদুজ্জামান এর বড় প্রমাণ। শুধু বাংলাদেশের কথা বলি কেন? জার্মানিতে আমার পিএইচডির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন অধ্যাপক ডিটসার রথারমুন্ড। বিখ্যাত হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের অধ্যাপক ও দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ। বাংলাদেশে আমরা অনেকে অধ্যাপক রথারমুন্ডের ছাত্র ছিলাম। আমাদের এক সহকর্মী যখন তার ছোট্ট বাচ্চাকে রেখে সমস্যায় পড়েছিলেন, তখন পিতার মতো তার ছাত্রের প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তার গবেষণার কাজটি দ্রুত দেখে দিয়েছিলেন। আমি নিজে কীভাবে তার কাছে উপকৃত হয়েছি, তা আজ নাই বা বললাম। আমার প্রথম তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন এর্গবাট ইয়ান (জার্মানিতে দুজন তত্ত্বাবধায়কের প্রয়োজন হয়)। আমরা প্রায় প্রতি রোববার তার বাসায় ঘরোয়া আলোচনায় মিলিত হতাম। তার উদ্যোগেই তিনি আমাকে মস্কো ও পূর্ব ইউরোপের কয়েকটি দেশে পাঠিয়েছিলেন। সেটা প্রয়োজন ছিল আমার গবেষণার জন্যই। মিসেস ইয়ান, যিনি ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা, আমাদের জন্য রান্না করতেন প্রতি রোববার। এ দৃষ্টান্তগুলো দিলাম এটা বোঝানোর জন্য যে, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক কেমন হয়, কেমন হওয়া উচিত। কিন্তু আজ যারা শিক্ষকতায় আসছেন, তাদের মধ্যে এ উপলব্ধিবোধটুকু কি আছে? আজ আমার ছাত্র, যারা শিক্ষক হয়েছেন, তাদের মধ্যে সে সৌজন্যবোধটুকুও নেই। এতটা বছর শিক্ষকতা করলাম, দুই যুগেরও বেশি- আমার প্রাপ্য 'শূন্য'। আমার ছাত্রদের কাছ থেকে আমরা কী শিখছি? পরিসংখ্যানের যে শিক্ষক, হাতে অস্ত্র, সংবাদপত্রে যে এখন অন্যতম আলোচিত ব্যক্তি, শিক্ষকদের তিনি কী 'উপহার' দিলেন? ইবির আমার সহকর্মীরা বিষয়টি কীভাবে নিয়েছেন জানি না। কিন্তু শিক্ষকতার ওপর আস্থা আমার আর নেই। আমি বা আমার সহকর্মীরা কী অস্ত্রবাজদের তৈরি করছি? একজন ভালো শিক্ষক আমরা তৈরি করতে পারলাম না। অধ্যাপক আসাদুজ্জামানের সঙ্গে আমি মঞ্জুরি কমিশনে কাজ করেছি। তার মতো শিক্ষক আমি নই। কিন্তু আমি আমার ছাত্রদের নিয়েও এরকমটি আশা করেছিলাম। কী জানি, হয়তো ওদের সৌজন্যবোধটুকু যে কী, তা বোঝাতে পারিনি। শেখাতে পারিনি। আমি ক্লাসে বলি, আমার ছাত্ররাই আমার সন্তান, আমার প্রাণ। ওরা আমার চেয়েও আরও বড় প-িত হোক; কিন্তু এ কোন জগতে বাস করছি? যেখানে অস্ত্রবাজরা এখন শিক্ষকতায় আসছেন! তারা কী শিক্ষা দেবেন তাদের ছাত্রদের? কারা আগামী দিনের শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণ করবে? শিক্ষাঙ্গনে যিনি বা যারা ক্যাডার হিসেবে পরিচিত কিংবা যারা রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান, আমরা তাদের কাছ থেকে কি-ই বা আশা করতে পারি! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি শিক্ষকদের অবসরের বয়সসীমা ৬৫-এ নির্ধারণ করেছেন। এ ৬৫ হতে আমার এখনও অনেক সময় বাকি। কিন্তু তার আগেই আমি অবসরে যাব। শিক্ষকতার প্রতি আমার আর মোহ নেই। ভালোবাসাও নেই। যে ৩৫টি বই লিখেছি, আমার মনে হয় ওখানে আমার ভুল হয়েছে। আমার বই লেখার কোনো প্রয়োজন ছিল না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্যাবাটিকাল ছুটি নিয়ে যে গবেষণা করেছি, তা বই আকারে প্রকাশও করেছি (অন্যরা করেছেন কিনা, তা আমার জানা নেই)। আমার অনেক সিনিয়র সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের সবার মাঝেই দেখেছি এক ধরনের হতাশা। কেন ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে? কেন? এ কেনর জবাব কে দেবে? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে অতীতে, যেখানে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক জড়িত। নৃ-বিজ্ঞান বিভাগে একজন সিনিয়র শিক্ষক কর্তৃক একজন জুনিয়র শিক্ষক (যে তার ছাত্র) প্রহৃত হয়েছিলেন। সেটা এখন অতীত। কিন্তু একজন সিনিয়র শিক্ষক কোন পর্যায়ে গেলে তার অসহিষ্ণুতা প্রকাশ পায় তা ভেবে দেখা দরকার। তবুও তিনি যে 'কা-টি' ঘটিয়েছিলেন তা সমর্থনযোগ্য নয়। তারপরও বলি, নতুন প্রজন্মের অনেক কিছু শেখার আছে সিনিয়রদের কাছ থেকে। তারা পিতৃতুল্য। পিতাকে অসম্মান করলে নিজেও অসম্মানিত হতে হয়। দ্বিতীয় ঘটনায় একজন তরুণ শিক্ষক 'অভিযুক্ত' হয়েছিলেন ছাত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখার অভিযোগে। সেসব এখন অতীত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এখন তুলনামূলকভাবে অনেক 'ভালো'। নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে। ছাত্ররাজনীতির প্রভাব তেমন একটা পড়েনি। এজন্য নিশ্চয়ই উপাচার্য ধন্যবাদ পেতেই পারেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, 'রাজনীতির' ঊধর্ে্ব থেকে প্রশাসন পরিচালনা করা যায়। বিরোধী দলের রাজনীতির সমর্থক শিক্ষকরাও তাকে সহযোগিতা করছেন। এমনটাই হওয়া উচিত। ক্যাম্পাসে জাতীয় রাজনীতির কোনো প্রভাব না থাকাটাই মঙ্গলের। জাহাঙ্গীরনগর সেটা প্রমাণ করেছে। দুই-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে বটে; কিন্তু তা বড় ধরনের কোনো 'প্রশ্নের' জন্ম দেয়নি। কিংবা ইবির ওই ছাত্র, যিনি এখন শিক্ষক, এমন কোনো শিক্ষকও আমরা পাইনি এ ক্যাম্পাসে। ওই ঘটনায় ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তথা ছাত্রদেরও সম্মানহানি হয়েছে। আমরা অবশ্যই একটি ঘটনা দিয়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারকে দোষী করব না। ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনেক অবদান আছে। তাদের অবদানকে খাটো করা যাবে না। বেশ কিছু দিন আগে ঢাকার বাইরে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছিল। ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মৌন মিছিলকে উদ্দেশ করে কটূক্তি করেছিল ছাত্রলীগের চার কর্মী। তাদের পুলিশে দেয়া হলে ছাত্রলীগের কর্মীরা শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়েছিল। তখন শিক্ষক সমিতির ডাকে শিক্ষকরা ক্লাস বর্জন করে। ওই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও তদন্ত কমিটি থেকে রিপোর্ট দেয়নি। ছাত্ররা শিক্ষকদের ওপর হামলা চালাবে, এটা চিন্তাও করা যায় না। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা তাহলে কাদের পড়াচ্ছেন? ছাত্র মানেই তো সন্তান। এ 'সন্তান' এখন 'পিতার' গায়ে হাত তুলল? আর এ সন্তান এখন অস্ত্র হাতে বীরদর্পে দাঁড়িয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে! সবকিছু মিলিয়েই শিক্ষাঙ্গনে এখন অস্থিরতা বিরাজ করছে। জুনিয়র শিক্ষকরা সম্মান রাখতে পারছেন না। সিনিয়ররা এক ধরনের হতাশা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এর কারণ একটাই, রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, যাদের কাছে 'রাজনৈতিক আনুগত্যটাই' বেশি, শিক্ষক সুলভ আচরণ তাদের মধ্যে গড়ে ওঠেনি। যে কারণে শিক্ষক তার যে 'সম্মান' বা শিক্ষক সংস্কৃতি, এ সংস্কৃতি তারা ধারণ করছেন না। একজন জুনিয়র শিক্ষক সরাসরি অস্ত্রবাজদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন কিংবা ভিসি তাদের 'নানা কাজে' ব্যবহার করবেন এটা কাম্য নয়। তাদের কাছে একাডেমির বিষয়গুলো 'মুখ্য' নয়, মুখ্য 'রাজনৈতিক আনুগত্য'। আমি জানি না, একুশ শতকে কোন ধরনের শিক্ষাঙ্গন আমরা পাব। তবে উচ্চশিক্ষা এক ধরনের ঝুঁকির মাঝেই আছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় যতদিন শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ না হবে, ততদিন জুনিয়র শিক্ষকরা 'রাজনৈতিক কর্মীর' মতোই আচরণ করবেন, তারা অসম্মানিত করবেন পুরো শিক্ষক সমাজকে। আজকে যারা বিশ্ববিদ্যালয় চালান, তারা যদি বিষয়টিকে গুরুত্ব না দেন, তাহলে ওই শিক্ষকের মতো একের পর এক ঘটনা প্রকাশিত হতে থাকবে। ওই ঘটনার এখানেই শেষ হওয়া উচিত। একটি তদন্ত কমিটি দ্রুত গঠন করা হোক। ওই শিক্ষকের অভিযোগটিও তদন্ত করে দেখা হোক। তার অভিযোগের পেছনে সত্যতাও থাকতে পারে! অপর পক্ষ তাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এ কাজটি করতে পারে! ওই ঘটনায় পুরো শিক্ষক সমাজকে অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো ঠিক হবে না। এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তবে নিঃসন্দেহে তা সম্মানহানিকর। আমি নিজে বিব্রত ও লজ্জিত। জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আমার কি-ই বা করার আছে? Daily ALOKITO BANGLADESH 11.09.14

0 comments:

Post a Comment