রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

নেপালের নির্বাচন ও অনেকগুলো প্রশ্ন

 
 

সম্প্রতি দুই দফায় নেপালের জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। প্রথম পর্যায়ের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল গেল ২৬ নভেম্বর, আর দ্বিতীয় পর্যায়ে ভোটাভুটি হয়ে গেল ৭ ডিসেম্বর। নেপালের রাজনীতির জন্য এটা একটা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। কেননা গেল ১০ বছরে সেখানে একের পর এক সরকার গঠিত হয়েছিল; কিন্তু কোনো সরকারই স্থিতিশীলতা পাচ্ছিল না। তবে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছিল ২০১৫ সালে, যখন একটি সংবিধান রচনা করা সম্ভব হয়েছিল। ওই সংবিধানের আলোকেই এবার নির্বাচনটি সম্পন্ন হলো। কিন্তু ওই নির্বাচন সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছে, তা বলা যাবে না। এরই মধ্যে অনেক শঙ্কার জন্ম দিয়েছে এবং নেপালের ভবিষ্যৎ রাজনীতিকে একটি প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। প্রথমত যে প্রশ্নটি উঠেছে, তা হচ্ছেÑ এ নির্বাচন নেপালে একটি স্থিতিশীল সরকার উপহার দিতে পারবে কিনা, অর্থাৎ নির্বাচিত সরকার ৫ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারবে কিনা? দ্বিতীয়ত, এ নির্বাচনকে ভারত কোন দৃষ্টিতে দেখছে? নেপাল সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে গিয়ে উন্নীত হবে, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন এখন। তৃতীয়ত, নেপালের রাজনীতিতে বামপন্থীদের উত্থান দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য আদৌ কোনো মেসেজ কিনা? এখানে বলা ভালো, নির্বাচনের পর এখন পর্যন্ত নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেনি। এ নির্বাচনে বামপন্থী জোট বিজয়ী হয়েছে। এ বাম জোটে আছে নেপালি কমিউনিস্ট পার্টি ও মাওবাদীরা। এদের সঙ্গে আরও দুই-একটি দল আছে। ১৬৫ আসনে সরাসরি নির্বাচন হয়েছে। এর মাঝে বাম জোট ৮১টি আসন পেয়েছে। নেপালি পার্লামেন্ট দ্বিকক্ষবিশিষ্টÑ প্রতিনিধিসভা ও রাষ্ট্রীয় সভা। প্রতিনিধিসভার সদস্যসংখ্যা ২৭৫। এর মাঝে ১৬৫ জন সরাসরি নির্বাচিত হবেন, আর বাকি ১১০ জন নির্বাচিত হবেন আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের হারে। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় সভার সদস্য হচ্ছেন ৫৯ জন। প্রতিনিধিসভায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের হারটি নতুন। পৃথিবীর অনেক দেশের সংসদে এ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারা রয়েছে। যদিও ভারত, বাংলাদেশ কিংবা শ্রীলঙ্কার গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে এ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নেই। ভারত পৃথিবীর বড় গণতান্ত্রিক দেশ। তারা গণতন্ত্র বিনির্মাণ করেছে সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে। কিন্তু নেপাল এটা প্রচলন করল। এখন ১৬৫ আসনে সরাসরি নির্বাচন সম্পন্ন হলো। বাকি ১১০ আসনের মধ্য থেকে জোটপ্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে তারা। এর অর্থ হচ্ছে, সংসদে ২৭৫ আসনে বাম জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতাই থাকবে। প্রতিটি দল নির্বাচনে শতকরা যত ভোট পাবে, তাদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব সেভাবে নির্ধারিত হবে। আর এভাবেই ১১০ জন ‘নির্বাচিত’ হবেন। আর এভাবেই হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ বা প্রতিনিধি পরিষদে মোট ২৭৫ সংসদ সদস্য প্রতিনিধিত্ব করবেন। এরা ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন। অন্যদিকে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বা রাষ্ট্রীয় সভা ৫৯ সদস্য নিয়ে গঠিত হবে। এর মাঝে ৫৬ জন নির্বাচিত হবেন প্রাদেশিক অ্যাসেম্বলি, গ্রাম্য কাউন্সিল, মেয়র কিংবা ডেপুটি মেয়রদের পক্ষ থেকে। বাকি তিনজনকে সরকারের পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেবেন। নেপালে প্রদেশ রয়েছে সাতটি।
নেপালে একসময় রাজতন্ত্র ছিল। দীর্ঘদিন দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলে। ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নেপালে রাজতন্ত্র পতনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। ওই গণঅভ্যুত্থানে নেপালে রাজার একচ্ছত্র ক্ষমতা হ্রাস করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০০১ সালের ১ জুন তৎকালীন রাজা বীরেন্দ্র বীর বিক্রম শাহদেব ও তার পরিবারের সদস্যরা যুবরাজ দীপেন্দ্র কর্তৃক ব্রাশফায়ারে নিহত হন। এরপর রাজা হিসেবে নিযুক্ত হন রাজার ভাই জ্ঞানেন্দ্র। কিন্তু রাজা জ্ঞানেন্দ্র কখনোই জনপ্রিয় ছিলেন না। তিনি ধীরে ধীরে সব ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। সরকার মাওবাদীদের দমনে ব্যর্থ এ অভিযোগ তুলে ২০০৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজা জ্ঞানেন্দ্র বীর বিক্রম শাহদেব নির্বাচিত সরকারকে বরখাস্ত করে সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিলেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ তার এ ক্ষমতা করায়ত্ত করার প্রক্রিয়াকে সমর্থন করেনি। ফলে প্রচ- বিক্ষোভের মুখে তিনি তৎকালীন সাত দলীয় জোটের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। শেষ পর্যন্ত নেপালে রাজতন্ত্র বাতিল ঘোষিত হয়েছিল। বলা ভালো, ১৭৬৯ সালে হিমালয়ের পাদদেশের এ দেশটিতে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
নেপালে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত ঘোষিত হলেও সেখানে একটা বড় সমস্যা ছিল সরকারের স্থিতিশীলতা নিয়ে। গেল ১০ বছরে সেখানে একাধিক সরকার গঠিত হয়েছিল। কিন্তু কোনো সরকারই স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারেনি। এমনকি দলগুলোর মধ্যে নেতৃত্বের দ্বন্দ্বও ছিল প্রবল। একটি খসড়া সংবিধান প্রণয়ন করা নিয়েও সমস্যা ছিল। সংখ্যালঘুদের অধিকার কীভাবে নিশ্চিত হবে, তা নিয়েও সমস্যা ছিল। তবে নেপালের রাজনীতির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ছিল চীনপন্থী কমিউনিস্ট পার্টি হিসেবে পরিচিত মাওবাদীদের সশস্ত্র বিপ্লবের ধারণা পরিত্যাগ করা ও স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসা। মাওবাদীরা সেখানে দীর্ঘদিন ধরে একটি গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করে আসছিল। ২০০৬ সালের ২১ নভেম্বর ওই সময়ের ক্ষমতাসীন সাত দলীয় জোটের প্রধানমন্ত্রী গিরিজা প্রসাদ কৈরালার সঙ্গে মাওবাদী নেতা প্রচ- একটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। ওই চুক্তি হলে মাওবাদীরা মূল ধারায় ফিরে এসেছিল। পরে প্রচ- দেশটির প্রধানমন্ত্রীও হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেননি। একটি সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে সেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৮ সালে। কিন্তু দীর্ঘ সময় লেগেছিল একটি সংবিধান প্রণয়ন করতে।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব নেপালি রাজনীতির অন্যতম সমস্যা। ১৯৯১ সালের ৭ মে সাধারণ ভোটে দীর্ঘ ৩২ বছর পর নেপালে যে পার্লামেন্ট গঠিত হয়েছিল, জুলাই ১৯৯৪ সালে সে পার্লামেন্ট ভেঙে গিয়েছিল মূলত নেপালি কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে। নেপালি কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্ব ছিল মূলত দুই ব্যক্তিকে নিয়ে। একদিকে ছিলেন গিরিজা প্রসাদ কৈরালা, অন্যদিকে ছিলেন কৃষ্ণ প্রসাদ ভট্টরাই। এ দ্বন্দ্বের কারণে দেউবাও এর আগে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। পার্টি ফোরামে সিদ্ধান্ত হয়েছিল কৈরালা এবং ভট্টরই কেউই প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী হতে পারবেন না। তখন তৃতীয় প্রার্থী হিসেবে শের বাহাদুর দেউবা উঠে এসেছিলেন। দ্বন্দ্ব ছিল মাওবাদীদের মধ্যেও। প্রচ- (পুষ্প কমল দাহাল) ও বাবুরাম ভট্টরাইয়ের মধ্যকার দ্বন্দ্বে সেখানে মাওবাদীরাও শক্ত অবস্থানে যেতে পারেনি। প্রচ- ও বাবুরাম দুইজনই সীমিত সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। মাওবাদীদের বাইরে ইউনাইটেড মার্কসিস্ট লেনিনিস্ট পার্টিও (ইউএমএল) নেপালে অন্যতম একটি রাজনৈতিক শক্তি। এর পাশাপাশি মাদেশি ফ্রন্টও স্থানীয়ভাবে শক্তিশালী। জাতীয় পর্যায়ে তাদের সাংগঠনিক ভিত্তি না থাকলেও স্থানীয়ভাবে এরা শক্তিশালী।
মূলত চার ব্যক্তিকে ঘিরে এখন নেপালের রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে  শের বাহাদুর দেউবা, খাদগা প্রসাদ অলি, পুষ্প কমল দাহাল ও কামাল থাপা। দেউবা নেপালি কংগ্রেসের নেতা, খাদগা প্রসাদ অলি ইউএমএল নেতা, পুষ্প কমল দাহাল (প্রচ-) মাওবাদীদের নেতা, আর কামাল থাপা রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টির নেতা। এদের একজন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। কোনো একটি দলের পক্ষে এককভাবে সরকার গঠন সম্ভব নয়। তাই দলগুলো জোটবদ্ধ হয়েছিল। বামপন্থী জোটে আছে কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (ইউএমএল), কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাওবাদী), নয়া শক্তি পার্টি। নয়া শক্তি পার্টির নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক মাওবাদী নেতা বাবুরাম ভট্টরাই। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি আর বাম জোটে থাকেননি গোরকা নির্বাচনী এলাকায় জোটের প্রার্থী হতে না পারায়। পরবর্তীতে তিনি জোটবদ্ধ হয়েছেন, আবার দুইটি বাম সংগঠন রাষ্ট্রীয় জনমোর্চা ও কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপালের (এমএল) সঙ্গে। অপরদিকে নেপালি কংগ্রেস জোটবদ্ধ হয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি, রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি (গণতান্ত্রিক) এবং মাদেশি রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে। মোট ৮৮টি রাজনৈতিক দল এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।
নির্বাচনের পরও নেপালে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে কিনা, সেটা একটা মৌলিক প্রশ্ন এখন। বাম জোটে মাওবাদীরা ইউএমএলের সঙ্গে ঐক্য করলেও এ ঐক্য নির্বাচনের পর আদৌ থাকবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ আছে অনেকের মধ্যে। অতীতে খাদগা প্রসাদ অলি যখন প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, সে সরকার পদত্যাগ করেছিল মাওবাদীরা সমর্থন প্রত্যাখ্যান করে নেয়ার কারণে। এমনটি এবারও হতে পারে। বামজোট নির্বাচনে ভালো করলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, তা নিয়ে অলি-প্রচ- আবারও ক্ষমতার দ্বন্দ্বে লিপ্ত হতে পারেন। এ নির্বাচনের ব্যাপারে চীন ও ভারতের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। এ দেশ দুইটি নেপালি রাজনীতিতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। দুইটি দেশের সঙ্গেই নেপালের সীমান্ত রয়েছে। চীন অলির নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থন করেছিল। ভারতের একচ্ছত্র বাণিজ্যিক প্রভাব কমাতে চীন নেপালের সঙ্গে একাধিক বাণিজ্যিক চুক্তি করেছিল। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে ভারত চেয়েছিল অলি সরকারের পতন (ডিপ্লোম্যাটি, ২৬ জুলাই ২০১৬)। অনেকেই মনে করেন, নেপালি কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন একটি সরকার সেখানে ভারতের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে বেশি। সুতরাং এ নির্বাচনে দেশ দুইটি কোনো না কোনোভাবে প্রভাব খাটাতে চাইবে। নির্বাচনে বাম জোটই ভালো ফল করেছে। এখন সবার দৃষ্টি থাকবে প্রধানমন্ত্রী পদটির দিকে। অলি ও প্রচ- এখন ক্ষমতা ভাগাভাগি করবেন। হয়তো কে পি অলি আগামীতে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন। দেউবা হবেন বিরোধী নেতা। তিনি এখন অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ১৯৯৫-৯৭, ২০০১, ২০০২, ২০০৪-০৫ সময়সীমায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সঙ্গে অলি ও প্রচ-ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। একজন নারী নেত্রী বিদ্যাদেবী ভা-ারি নেপালের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হলেও নেপালের রাজনীতিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ তেমন একটা নেই। পার্লামেন্টে মহিলাদের জন্য কোনো ‘কোটা’ ব্যবস্থাও নেই। মিসেস ভা-ারি মাওবাদী নেতা ও সাবেক দেশরক্ষামন্ত্রী। তার প্রয়াত স্বামী মদন কুমার ভা-ারিও ছিলেন মাওবাদীদের নেতা। সংসদে তিনি মাওবাদী গ্রুপের ডেপুটি লিডার ছিলেন। ২০১৫ সালের অক্টোবরে তিনি পার্লামেন্ট কর্তৃক ৫ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
কমিউনিস্ট নেতা কে পি অলির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণে চীন খুশি হলেও ভারতের খুশি হওয়ার কোনো কারণ নেই। এতে নেপাল বেশি মাত্রায় চীনের দিকে ঝুঁকে যেতে পারে, নেপালে চীনের প্রভাব বাড়তে পারেÑ এমন আশঙ্কা ভারতের থাকবে। এ অঞ্চলজুড়ে চীন-ভারত দ্বন্দ্বের খবর আমরা জানি। শ্রীলঙ্কায় সাবেক প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের সময় শ্রীলঙ্কা বেশি মাত্রায় চীনের প্রতি ঝুঁকে পড়েছিল। একসময় ভারত সেখানে সরকার পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয় ও সফল হয়। এখন মালদ্বীপেও চীনের প্রভাব বাড়ছে। তাই দেখতে হবে, নেপালে একটি চীনাবাহু সরকারকে ভারত কোন দৃষ্টিতে দেখে। তাই ভাবি প্রধানমন্ত্রী কে পি অলির ওপর এখন অনেক কিছু নির্ভর করছে তিনি কীভাবে তার পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করেন।
থাকবে। এ অঞ্চলজুড়ে চীন-ভারত দ্বন্দ্বের খবর আমরা জানি। শ্রীলঙ্কায় সাবেক প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের সময় শ্রীলঙ্কা বেশি মাত্রায় চীনের প্রতি ঝুঁকে পড়েছিল। একসময় ভারত সেখানে সরকার পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয় ও সফল হয়। এখন মালদ্বীপেও চীনের প্রভাব বাড়ছে। তাই দেখতে হবে, নেপালে একটি চীনাবাহু সরকারকে ভারত কোন দৃষ্টিতে দেখে
সম্প্রতি দুই দফায় নেপালের জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। প্রথম পর্যায়ের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল গেল ২৬ নভেম্বর, আর দ্বিতীয় পর্যায়ে ভোটাভুটি হয়ে গেল ৭ ডিসেম্বর। নেপালের রাজনীতির জন্য এটা একটা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। কেননা গেল ১০ বছরে সেখানে একের পর এক সরকার গঠিত হয়েছিল; কিন্তু কোনো সরকারই স্থিতিশীলতা পাচ্ছিল না। তবে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছিল ২০১৫ সালে, যখন একটি সংবিধান রচনা করা সম্ভব হয়েছিল। ওই সংবিধানের আলোকেই এবার নির্বাচনটি সম্পন্ন হলো। কিন্তু ওই নির্বাচন সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছে, তা বলা যাবে না। এরই মধ্যে অনেক শঙ্কার জন্ম দিয়েছে এবং নেপালের ভবিষ্যৎ রাজনীতিকে একটি প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। প্রথমত যে প্রশ্নটি উঠেছে, তা হচ্ছেÑ এ নির্বাচন নেপালে একটি স্থিতিশীল সরকার উপহার দিতে পারবে কিনা, অর্থাৎ নির্বাচিত সরকার ৫ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারবে কিনা? দ্বিতীয়ত, এ নির্বাচনকে ভারত কোন দৃষ্টিতে দেখছে? নেপাল সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে গিয়ে উন্নীত হবে, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন এখন। তৃতীয়ত, নেপালের রাজনীতিতে বামপন্থীদের উত্থান দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য আদৌ কোনো মেসেজ কিনা? এখানে বলা ভালো, নির্বাচনের পর এখন পর্যন্ত নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেনি। এ নির্বাচনে বামপন্থী জোট বিজয়ী হয়েছে। এ বাম জোটে আছে নেপালি কমিউনিস্ট পার্টি ও মাওবাদীরা। এদের সঙ্গে আরও দুই-একটি দল আছে। ১৬৫ আসনে সরাসরি নির্বাচন হয়েছে। এর মাঝে বাম জোট ৮১টি আসন পেয়েছে। নেপালি পার্লামেন্ট দ্বিকক্ষবিশিষ্টÑ প্রতিনিধিসভা ও রাষ্ট্রীয় সভা। প্রতিনিধিসভার সদস্যসংখ্যা ২৭৫। এর মাঝে ১৬৫ জন সরাসরি নির্বাচিত হবেন, আর বাকি ১১০ জন নির্বাচিত হবেন আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের হারে। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় সভার সদস্য হচ্ছেন ৫৯ জন। প্রতিনিধিসভায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের হারটি নতুন। পৃথিবীর অনেক দেশের সংসদে এ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ধারা রয়েছে। যদিও ভারত, বাংলাদেশ কিংবা শ্রীলঙ্কার গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে এ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নেই। ভারত পৃথিবীর বড় গণতান্ত্রিক দেশ। তারা গণতন্ত্র বিনির্মাণ করেছে সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে। কিন্তু নেপাল এটা প্রচলন করল। এখন ১৬৫ আসনে সরাসরি নির্বাচন সম্পন্ন হলো। বাকি ১১০ আসনের মধ্য থেকে জোটপ্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে তারা। এর অর্থ হচ্ছে, সংসদে ২৭৫ আসনে বাম জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতাই থাকবে। প্রতিটি দল নির্বাচনে শতকরা যত ভোট পাবে, তাদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব সেভাবে নির্ধারিত হবে। আর এভাবেই ১১০ জন ‘নির্বাচিত’ হবেন। আর এভাবেই হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ বা প্রতিনিধি পরিষদে মোট ২৭৫ সংসদ সদস্য প্রতিনিধিত্ব করবেন। এরা ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন। অন্যদিকে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বা রাষ্ট্রীয় সভা ৫৯ সদস্য নিয়ে গঠিত হবে। এর মাঝে ৫৬ জন নির্বাচিত হবেন প্রাদেশিক অ্যাসেম্বলি, গ্রাম্য কাউন্সিল, মেয়র কিংবা ডেপুটি মেয়রদের পক্ষ থেকে। বাকি তিনজনকে সরকারের পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেবেন। নেপালে প্রদেশ রয়েছে সাতটি।
নেপালে একসময় রাজতন্ত্র ছিল। দীর্ঘদিন দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলে। ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নেপালে রাজতন্ত্র পতনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। ওই গণঅভ্যুত্থানে নেপালে রাজার একচ্ছত্র ক্ষমতা হ্রাস করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০০১ সালের ১ জুন তৎকালীন রাজা বীরেন্দ্র বীর বিক্রম শাহদেব ও তার পরিবারের সদস্যরা যুবরাজ দীপেন্দ্র কর্তৃক ব্রাশফায়ারে নিহত হন। এরপর রাজা হিসেবে নিযুক্ত হন রাজার ভাই জ্ঞানেন্দ্র। কিন্তু রাজা জ্ঞানেন্দ্র কখনোই জনপ্রিয় ছিলেন না। তিনি ধীরে ধীরে সব ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। সরকার মাওবাদীদের দমনে ব্যর্থ এ অভিযোগ তুলে ২০০৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজা জ্ঞানেন্দ্র বীর বিক্রম শাহদেব নির্বাচিত সরকারকে বরখাস্ত করে সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিলেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ তার এ ক্ষমতা করায়ত্ত করার প্রক্রিয়াকে সমর্থন করেনি। ফলে প্রচ- বিক্ষোভের মুখে তিনি তৎকালীন সাত দলীয় জোটের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। শেষ পর্যন্ত নেপালে রাজতন্ত্র বাতিল ঘোষিত হয়েছিল। বলা ভালো, ১৭৬৯ সালে হিমালয়ের পাদদেশের এ দেশটিতে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
নেপালে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত ঘোষিত হলেও সেখানে একটা বড় সমস্যা ছিল সরকারের স্থিতিশীলতা নিয়ে। গেল ১০ বছরে সেখানে একাধিক সরকার গঠিত হয়েছিল। কিন্তু কোনো সরকারই স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারেনি। এমনকি দলগুলোর মধ্যে নেতৃত্বের দ্বন্দ্বও ছিল প্রবল। একটি খসড়া সংবিধান প্রণয়ন করা নিয়েও সমস্যা ছিল। সংখ্যালঘুদের অধিকার কীভাবে নিশ্চিত হবে, তা নিয়েও সমস্যা ছিল। তবে নেপালের রাজনীতির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ছিল চীনপন্থী কমিউনিস্ট পার্টি হিসেবে পরিচিত মাওবাদীদের সশস্ত্র বিপ্লবের ধারণা পরিত্যাগ করা ও স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসা। মাওবাদীরা সেখানে দীর্ঘদিন ধরে একটি গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করে আসছিল। ২০০৬ সালের ২১ নভেম্বর ওই সময়ের ক্ষমতাসীন সাত দলীয় জোটের প্রধানমন্ত্রী গিরিজা প্রসাদ কৈরালার সঙ্গে মাওবাদী নেতা প্রচ- একটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। ওই চুক্তি হলে মাওবাদীরা মূল ধারায় ফিরে এসেছিল। পরে প্রচ- দেশটির প্রধানমন্ত্রীও হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেননি। একটি সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে সেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৮ সালে। কিন্তু দীর্ঘ সময় লেগেছিল একটি সংবিধান প্রণয়ন করতে।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব নেপালি রাজনীতির অন্যতম সমস্যা। ১৯৯১ সালের ৭ মে সাধারণ ভোটে দীর্ঘ ৩২ বছর পর নেপালে যে পার্লামেন্ট গঠিত হয়েছিল, জুলাই ১৯৯৪ সালে সে পার্লামেন্ট ভেঙে গিয়েছিল মূলত নেপালি কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে। নেপালি কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্ব ছিল মূলত দুই ব্যক্তিকে নিয়ে। একদিকে ছিলেন গিরিজা প্রসাদ কৈরালা, অন্যদিকে ছিলেন কৃষ্ণ প্রসাদ ভট্টরাই। এ দ্বন্দ্বের কারণে দেউবাও এর আগে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। পার্টি ফোরামে সিদ্ধান্ত হয়েছিল কৈরালা এবং ভট্টরই কেউই প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী হতে পারবেন না। তখন তৃতীয় প্রার্থী হিসেবে শের বাহাদুর দেউবা উঠে এসেছিলেন। দ্বন্দ্ব ছিল মাওবাদীদের মধ্যেও। প্রচ- (পুষ্প কমল দাহাল) ও বাবুরাম ভট্টরাইয়ের মধ্যকার দ্বন্দ্বে সেখানে মাওবাদীরাও শক্ত অবস্থানে যেতে পারেনি। প্রচ- ও বাবুরাম দুইজনই সীমিত সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। মাওবাদীদের বাইরে ইউনাইটেড মার্কসিস্ট লেনিনিস্ট পার্টিও (ইউএমএল) নেপালে অন্যতম একটি রাজনৈতিক শক্তি। এর পাশাপাশি মাদেশি ফ্রন্টও স্থানীয়ভাবে শক্তিশালী। জাতীয় পর্যায়ে তাদের সাংগঠনিক ভিত্তি না থাকলেও স্থানীয়ভাবে এরা শক্তিশালী।
মূলত চার ব্যক্তিকে ঘিরে এখন নেপালের রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে  শের বাহাদুর দেউবা, খাদগা প্রসাদ অলি, পুষ্প কমল দাহাল ও কামাল থাপা। দেউবা নেপালি কংগ্রেসের নেতা, খাদগা প্রসাদ অলি ইউএমএল নেতা, পুষ্প কমল দাহাল (প্রচ-) মাওবাদীদের নেতা, আর কামাল থাপা রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টির নেতা। এদের একজন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। কোনো একটি দলের পক্ষে এককভাবে সরকার গঠন সম্ভব নয়। তাই দলগুলো জোটবদ্ধ হয়েছিল। বামপন্থী জোটে আছে কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (ইউএমএল), কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাওবাদী), নয়া শক্তি পার্টি। নয়া শক্তি পার্টির নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক মাওবাদী নেতা বাবুরাম ভট্টরাই। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি আর বাম জোটে থাকেননি গোরকা নির্বাচনী এলাকায় জোটের প্রার্থী হতে না পারায়। পরবর্তীতে তিনি জোটবদ্ধ হয়েছেন, আবার দুইটি বাম সংগঠন রাষ্ট্রীয় জনমোর্চা ও কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপালের (এমএল) সঙ্গে। অপরদিকে নেপালি কংগ্রেস জোটবদ্ধ হয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি, রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি (গণতান্ত্রিক) এবং মাদেশি রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে। মোট ৮৮টি রাজনৈতিক দল এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।
নির্বাচনের পরও নেপালে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে কিনা, সেটা একটা মৌলিক প্রশ্ন এখন। বাম জোটে মাওবাদীরা ইউএমএলের সঙ্গে ঐক্য করলেও এ ঐক্য নির্বাচনের পর আদৌ থাকবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ আছে অনেকের মধ্যে। অতীতে খাদগা প্রসাদ অলি যখন প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, সে সরকার পদত্যাগ করেছিল মাওবাদীরা সমর্থন প্রত্যাখ্যান করে নেয়ার কারণে। এমনটি এবারও হতে পারে। বামজোট নির্বাচনে ভালো করলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, তা নিয়ে অলি-প্রচ- আবারও ক্ষমতার দ্বন্দ্বে লিপ্ত হতে পারেন। এ নির্বাচনের ব্যাপারে চীন ও ভারতের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। এ দেশ দুইটি নেপালি রাজনীতিতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। দুইটি দেশের সঙ্গেই নেপালের সীমান্ত রয়েছে। চীন অলির নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থন করেছিল। ভারতের একচ্ছত্র বাণিজ্যিক প্রভাব কমাতে চীন নেপালের সঙ্গে একাধিক বাণিজ্যিক চুক্তি করেছিল। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে ভারত চেয়েছিল অলি সরকারের পতন (ডিপ্লোম্যাটি, ২৬ জুলাই ২০১৬)। অনেকেই মনে করেন, নেপালি কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন একটি সরকার সেখানে ভারতের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে বেশি। সুতরাং এ নির্বাচনে দেশ দুইটি কোনো না কোনোভাবে প্রভাব খাটাতে চাইবে। নির্বাচনে বাম জোটই ভালো ফল করেছে। এখন সবার দৃষ্টি থাকবে প্রধানমন্ত্রী পদটির দিকে। অলি ও প্রচ- এখন ক্ষমতা ভাগাভাগি করবেন। হয়তো কে পি অলি আগামীতে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন। দেউবা হবেন বিরোধী নেতা। তিনি এখন অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ১৯৯৫-৯৭, ২০০১, ২০০২, ২০০৪-০৫ সময়সীমায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সঙ্গে অলি ও প্রচ-ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। একজন নারী নেত্রী বিদ্যাদেবী ভা-ারি নেপালের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হলেও নেপালের রাজনীতিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ তেমন একটা নেই। পার্লামেন্টে মহিলাদের জন্য কোনো ‘কোটা’ ব্যবস্থাও নেই। মিসেস ভা-ারি মাওবাদী নেতা ও সাবেক দেশরক্ষামন্ত্রী। তার প্রয়াত স্বামী মদন কুমার ভা-ারিও ছিলেন মাওবাদীদের নেতা। সংসদে তিনি মাওবাদী গ্রুপের ডেপুটি লিডার ছিলেন। ২০১৫ সালের অক্টোবরে তিনি পার্লামেন্ট কর্তৃক ৫ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
কমিউনিস্ট নেতা কে পি অলির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণে চীন খুশি হলেও ভারতের খুশি হওয়ার কোনো কারণ নেই। এতে নেপাল বেশি মাত্রায় চীনের দিকে ঝুঁকে যেতে পারে, নেপালে চীনের প্রভাব বাড়তে পারেÑ এমন আশঙ্কা ভারতের থাকবে। এ অঞ্চলজুড়ে চীন-ভারত দ্বন্দ্বের খবর আমরা জানি। শ্রীলঙ্কায় সাবেক প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের সময় শ্রীলঙ্কা বেশি মাত্রায় চীনের প্রতি ঝুঁকে পড়েছিল। একসময় ভারত সেখানে সরকার পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয় ও সফল হয়। এখন মালদ্বীপেও চীনের প্রভাব বাড়ছে। তাই দেখতে হবে, নেপালে একটি চীনাবাহু সরকারকে ভারত কোন দৃষ্টিতে দেখে। তাই ভাবি প্রধানমন্ত্রী কে পি অলির ওপর এখন অনেক কিছু নির্ভর করছে তিনি কীভাবে তার পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করেন।
Daily Alokito Bangladesh
24.12.2017

0 comments:

Post a Comment