মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন স্থাপন বিষয়কমন্ত্রী উইন মিয়াত আইয়ের বাংলাদেশ সফরের পর যে প্রশ্ন এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান কি আদৌ হবে? মন্ত্রী মিয়াত বাংলাদেশে এসেছিলেন গত ১১ এপ্রিল। তিনি ফিরেও গেছেন। কিন্তু রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা আমরা পাইনি। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, গত ২৩ নভেম্বর (২০১৭) মিয়ানমারের প্রশাসনিক রাজধানী নেপিদোয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছিল। পরবর্তী সময়ে ১৯ ডিসেম্বর দেশ দু’টি একটি ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠন করে। এর মধ্য দিয়ে একটা ধারণার জন্ম হয়েছিল যে, বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গারা শেষ পর্যন্ত বোধ হয় নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু ২৩ জানুয়ারি একটি তারিখ নির্ধারিত হলেও প্রত্যাবাসনের কাজটি শুরু হয়নি। আমরা বার বার বলে আসছি, মিয়ানমারের ওপর আস্থা রাখাটা সত্যিকার অর্থেই কঠিন। মিয়ানমার সনাতন কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চলে না। আমরা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, মিয়ানমার এর আগে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও, সেই প্রতিশ্রুতি তারা পালন করেনি। এ নিয়ে দু’দেশের মধ্যে একাধিক বৈঠক হলেও, তা কোনো ফল বয়ে আনেনি। কিছু রোহিঙ্গাকে তারা ফেরত নিয়ে গেছে বটে, কিন্তু ব্যাপকসংখ্যক রোহিঙ্গা- যারা নিবন্ধিত নয়, তারা বাংলাদেশের মাটিতে রয়ে গিয়েছিল। এখন এর সঙ্গে যোগ হলো আরো সাড়ে ছ’ লাখ রোহিঙ্গা। বাংলাদেশ এদের আশ্রয় দিয়ে নিঃসন্দেহে মানবতার পরিচয় দিয়েছিল। বাংলাদেশের এই ভূমিকা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছিল। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে একটি চুক্তি অথবা সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করা জরুরি ছিল। বাংলাদেশ সেটা করেছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের মানসিকতার যদি পরিবর্তন না হয়, তাহলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের মাটিতে থেকে যেতে পারে! সুতরাং মিয়ানমার সরকারের মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে, এটা আমরা বলতে পারি না। তাদের কোনো কার্যকলাপে তা প্রমাণিত হয় না। সেজন্য একটা আশঙ্কা ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে যে, মিয়ানমার তথাকথিত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে কালক্ষেপণ করতে পারে! এই কালক্ষেপণের স্ট্র্যাটেজি তাদের অনেক পুরনো। এবারো এমনটি হতে পারে। গত ২১ জানুয়ারি পরাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফিং করেছিলেন। তিনি নিজে মিডিয়ার সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াং ঝি লিও গত ২১ জানুয়ারি উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। এদের সবার বক্তব্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে ব্রিফিং করেছেন, সেখানে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূতও। তার বক্তব্যও গুরুত্বের দাবি রাখে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেছিলেন ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ঠিক কোনদিন থেকে শুরু হবে, সে রকম তারিখ-টারিখ বলা মুশকিল।’ তিনি আরো বলেছিলেন, ‘যেতে না চাইলে তো জোর করে পাঠিয়ে দেওয়া যাবে না। আমাদের চুক্তির সব জায়গায়ই স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কফি আনানের কমিশনের রিপোর্টেও তা আছে। যখন রোহিঙ্গারা জানতে পারবে মিয়ানমারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। তাদের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে। এসব বিষয় দেখলে তখন তারা নিজেরাই যেতে উৎসাহী হবে’ (যুগান্তর, ২২ জানুয়ারি)। অনেকটা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের বক্তব্যের একটা ‘মিল’ খুঁজে পাওয়া যায়। বার্নিকাট বলেছিলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অবশ্যই নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় হতে হবে।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্পষ্টতই কয়েকটি বিষয়কে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। এক. রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি কতটুকু নিহিত হয়েছে? দুই. রোহিঙ্গারা সেখানে কতটুকু নিরাপদ? তিন. রোহিঙ্গারা নিজ বাসভূমে ফিরে যেতে পারবে কি না? চার. রোহিঙ্গারা ফিরে গেলে তাদের জীবন-জীবিকার কী হবে? মিয়ানমারের সঙ্গে যে সমঝোতা স্মারক ও পরবর্তী সময়ে ‘বাস্তুচ্যুত রাখাইনের বাসিন্দাদের প্রত্যাবাসন’ সংক্রান্ত যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, তাতে নাগরিকত্বের বিষয়টি আদৌ নেই। মিয়ানমার এদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। রোহিঙ্গা নামেরও আপত্তি রয়েছে তাদের। এমনকি কফি আনান কমিশনের রিপোর্টেও রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। মিয়ানমার এদের ‘বাঙালি’ হিসেবে স্বীকার করে। সাম্প্রতিক মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় এবং ডকুমেন্টে কোথাও রোহিঙ্গা শব্দটি নেই। গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে রোহিঙ্গা খেদাও অভিযান শুরু হওয়ার পর মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত থাকলেও নাগরিকত্বের প্রশ্নে তাদের অবস্থানে পরিবর্তন হয়েছে- এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। এক্ষেত্রে যে প্রশ্ন উঠবে, তা হচ্ছে নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা ছাড়া রোহিঙ্গারা আদৌ ফেরত যেতে চাইবে কি না? মিয়ানমারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে এটা একটা বড় দুর্বলতা। আমাদের ব্যর্থতা এখানেই যে, আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় এই নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারিনি। দ্বিতীয় প্রশ্নটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ- এটি হলো নিরাপত্তা। এই নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে কীভাবে? নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসেছে। অনেকে তার স্ত্রী, স্বামী, সন্তানকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক হত্যা করতে দেখেছে। অনেক দেরিতে হলেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীপ্রধান ‘সীমিত হত্যাকাণ্ডের’ কথা স্বীকার করেছেন। তাহলে তাদের নিরাপত্তা যদি নিশ্চিত না হয়, তাহলে তারা নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে চাইবে না, এটাই স্বাভাবিক। এখন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কে? যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের নিজ বাসভূম থেকে উৎখাত করেছে, রোহিঙ্গারা তাদের বিশ্বাস করবে না।
ইতোমধ্যে মার্কিন রাষ্টদূত এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনার নিরাপত্তার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তারা সুস্পষ্ট করেই বলেছেন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া তাদের ফেরত পাঠানো যাবে না!
রোহিঙ্গারা এই ধরনের বক্তব্যে উৎসাহিত হবে নিঃসন্দেহে। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো নিজেই বলেছেন, জোর করে কোনো রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো যাবে না। এ ধরনের বক্তব্য রোহিঙ্গাদের এ দেশে থেকে যেতে উৎসাহ জোগাতে পারে। আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে আরো ম্যাচুরড বক্তব্য আশা করেছিলাম। তৃতীয় প্রশ্নটিকেও আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। রোহিঙ্গারা কি আদৌ নিজ বাসভূমে ফেরত যেতে পারবে? এর সরাসরি জবাব হচ্ছে ‘না’। যে চুক্তি হয়েছে, তাতে মিয়ানমার দু’টো ক্যাম্প করবে। প্রথমটা অভ্যর্থনা ক্যাম্প, দ্বিতীয়টা অন্তর্বর্তীকালীন ক্যাম্প। অর্থাৎ যারা বাংলাদেশ থেকে ফেরত যাবে, তাদের প্রথমে অভ্যর্থনা ক্যাম্পে রাখা হবে। তারপর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য অপর একটি অন্তর্বর্তীকালীন ক্যাম্পে পাঠানো হবে। এখানেই সমস্যাটা তৈরি হবে। এই ক্যাম্পে তারা বছরের পর বছর থেকে যেতে বাধ্য হবে! এটা এক ধরনের কনসেনট্রেশন ক্যাম্প! এখানে রেখেই তথাকথিত যাচাই-বাছাইয়ের কাজটি হবে। আমার শঙ্কা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ভাগ্য ফিলিস্তিনিদের মতো হতে পারে! পাঠক স্মরণ করতে পারেন ফিলিস্তিনিরা নিজ বাসভূম থেকে উৎখাত হয়ে বছরের পর বছর, জেনারেশনের পর জেনারেশন তারা থেকে যাচ্ছেন ক্যাম্পে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র আজো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ যুগে হোমল্যান্ডগুলোর কথা স্মরণ করতে পারেন। বর্ণবাদ যুগের অবসানের আগে কৃষ্ণাঙ্গদের নিয়ে ৭টি হোমল্যান্ডে রাখা হয়েছিল। আমার আশঙ্কাটা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের অবস্থা অনেকটা হোমল্যান্ডগুলোতে থাকা কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর অথবা ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর মতো হতে পারে। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় নীতি এটাই- রোহিঙ্গাদের অস্বীকার করা। আন্তর্জাতিক চাপের কারণে তারা রোহিঙ্গাদের নিতে চাচ্ছে বটে, কিন্তু বাস্তবতাই বলে তারা রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করে নিতে চাইছে না। উপরন্তু তারা কোনোদিনই তাদের স্ব স্ব বসতবাটিতে ফেরত নেবে না। কেননা ওইসব বসতবাটির আদৌ কোনো অস্তিত্ব নেই। রাখাইনে কয়েকশ’ গ্রামে রোহিঙ্গাদের বসতবাটি মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওইসব গ্রাম এখন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ‘লিজ’ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ফলে রোহিঙ্গারা নিজ বাসভূমে থাকতে পারছে না। রোহিঙ্গারা কোনো মতেই অন্যত্র থাকতে চাইবে না। বংশ পরম্পরায় তারা নিজ বাসভূমে বসবাস করে আসছে। জমিজমা চাষ করে আসছে। কেউ কেউ ব্যবসায় নিয়োজিত ছিল। এখন তাদের যদি অন্যত্র রাখা হয়, তারা তা মানতে চাইবে না। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে এটা একটা অন্যতম সমস্যা। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে এসব প্রশ্নের জবাব থাকা বাঞ্ছনীয়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে বাংলাদেশ খুব শক্ত অবস্থানে গিয়েছে, এটা আমার মনে হয় না। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য এবং তার ‘বডি ল্যাঙ্গুয়েজ’ বলে দেয় বাংলাদেশ একটি চুক্তি করতে চেয়েছিল! কিন্তু মিয়ানমারের ওপর ‘চাপ’ প্রয়োগ করার কোনো কৌশল অবলম্বন করেনি। জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞ হয়েছে। জাতিগত উচ্ছেদ অভিযান একটি ঘৃণিত অপরাধ। আন্তর্জাতিক আইনে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য। ইতোমধ্যে বসনিয়া-হারজেগোভিনা, কঙ্গো, লাইবেরিয়া কিংবা রুয়ান্ডাতে যারা জাতিগত উচ্ছেদ অভিযানে জড়িত ছিলেন, সেইসব সেনা কর্মকর্তাদের বিচার হয়েছে। রায়ও দেওয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র একাধিক সেনা কর্মকর্তাকে মিয়ানমারের গণহত্যার জন্য চিহ্নিত করেছে। বাংলাদেশ এদের বিচারের দাবি করতে পারত। তাহলে অন্তত মিয়ানমার সরকার একটা ‘চাপ’ এর মুখে থাকত। কিন্তু বাংলাদেশ তা করেনি। এর অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রশ্নে একটি ‘সফট ডিপ্লোম্যাসি’র আশ্রয় নিয়েছে। ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা গণহত্যা ও রোহিঙ্গা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলেও, বাংলাদেশ নিকট প্রতিবেশী, বিশেষ করে চীন ও ভারতের সাহায্য নিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসা বন্ধ করার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। শেষ অব্দি চীন স্ব উদ্যোগে একটি প্রস্তাব দিয়েছিল এবং সেই প্রস্তাব অনুসরণ করেই মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে। আগস্টের পর থেকে সঙ্কটের গভীরতা বাড়লেও, বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি ওই সময় চীন, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা যুক্তরাষ্ট্র সফর করেননি। এমনকি ওইসব দেশের সাহায্যও চায়নি। অথচ প্রতিটি দেশের সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ভালো। এইসব দেশকে দিয়ে আমরা মিয়ানমারের ওপর প্রভাব খাটাতে পারতাম। এখনই যে সেই সুযোগটি শেষ হয়ে গেছে, তা বলা যাবে না। বাংলাদেশ দু’ভাবে তার পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করতে পারে। দ্বিপক্ষীয়ভাবে মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ এবং একই সঙ্গে বহুপক্ষীয়ভাবে মিয়ানমারের ওপর ‘চাপ’ প্রয়োগ করা। আমাদের ভুললে চলবে না আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিরুদ্ধে। অতীতে যারা এসেছিল, তাদের ক্ষেত্রেও ইউএনএইচসিআর একই নীতি অবলম্বন করেছিল। প্রকারান্তরে এই নীতি মিয়ানমারের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। বাংলাদেশ একটি ছোট্ট দেশ। এত বিপুলসংখ্যক বিদেশি নাগরিকের উপস্থিতি আমাদের নিরাপত্তাকে নানাবিধ ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ডিপথেরিয়ার মতো রোগ আবার ফিরে এসেছ উখিয়ায়। রোহিঙ্গা উগ্রপন্থিরা (এআরএস) বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে- এমন একটি তালিকা (১৫০ জন) মিয়ানমার বাংলাদেশকে দিয়েছে। এরা বাংলাদেশেও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ডিপথেরিয়া ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় বিদেশের কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশি ছাত্রদের উচ্চশিক্ষায় ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছে। প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এক ধরনের ‘চাপ’ এর মুখে রেখেছে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে (৬ এপ্রিল) রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। প্রতিউত্তরে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বাস্তবায়নের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এরই মধ্যে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বাস্তবতা এটাই- রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকার সিরিয়াস নয়। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি সত্যিকার অর্থেই মিয়ানমারের ওপর ‘চাপ’ না দেয়, তাহলে মিয়ানমার কোনো শরণার্থীকেই ফেরত নেবে না। আর ‘চাপ’ প্রয়োগ করার কৌশল একটাই- পুনরায় অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ। এ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
Bangladesher Khobor
29.04.2018