রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ইরান বিপ্লব কি ব্যর্থ হতে যাচ্ছে



অনেক নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে ইরান গত ১৬ জানুয়ারি ইসলামি বিপ্লবের ৪১তম বর্ষপূর্তি পালন করেছে। ১৯৭৯ সালের ১৬ জানুয়ারি ইরানের তৎকালীন শাসক রেজা শাহ পাহলভির দেশ ত্যাগের মধ্য দিয়ে ইরানি বিপ্লবের প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়েছিল। ইরানি বিপ্লবের ৪০ বছর পর বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়েছে ইরান। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি, অন্যদিকে অর্থনীতিতে ভঙ্গুর অবস্থা ইরানের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।


ইউক্রেনের যাত্রীবাহী বিমানকে ধ্বংস করে দেওয়ার প্রতিবাদে ইরান জুড়ে যে প্রতিবাদ হয়েছে, তা শুধু ইরানের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা খামেনির বিরুদ্ধেই ছিল না, তা ছিল ধর্মীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রতিবাদ। খামেনির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হবে, এটা ছিল অকল্পনীয় ব্যাপার। কিন্তু তা হয়েছে। এই বিক্ষোভ কি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ইরানি বিপ্লব তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে?
ইরানি বিপ্লবের পূর্তি উপলক্ষে চলতি জানুয়ারি মাসে ইরানকে ঘিরে যেসব ঘটনা ঘটেছে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘ভূমিকা’ অনেকগুলো প্রশ্নকে সামনে নিয়ে এসেছে। এক. মার্কিন অর্থনীতিকে বলা হয় যুদ্ধ অর্থনীতি। অর্থাৎ যুদ্ধ বাধলেই মার্কিন অর্থনীতি চাঙ্গা হয়। অতীতে দেখা গেছে, যখনই যুক্তরাষ্ট্র কোনো আঞ্চলিক যুদ্ধে জড়িয়ে গেছে (আফগানিস্তান, ইরাক ও লিবিয়া) তখনই অর্থনীতি সচল হয়েছে। অস্ত্র উৎপাদনকারীদের একটি ‘চাপ’ও থাকে। তাহলে এবার যুক্তরাষ্ট্র তার দীর্ঘদিনের ‘শত্রু’ ইরানকে বাগে পেয়েও এবং ইসরায়েলি লবির ‘চাপ’ থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্প কোনো যুদ্ধের নির্দেশ দিলেন না কেন? বললেন, তিনি শান্তি চান! এর পেছনে কী উদ্দেশ্য কাজ করছে? দুই. পশ্চিমা সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী দুই ঘণ্টা আগেই ইরাকে অবস্থিত মার্কিন সেনারা জানত যে মিসাইল আক্রমণ হবে।
যে করণে তারা নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে পেরেছিল। আর তাতে করেই মার্কিন সেনাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। প্রশ্ন হচ্ছে, মিসাইল আক্রমণের আগাম তথ্য পাওয়া সত্ত্বেও মার্কিন বাহিনী কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিল না কেন? তিন. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী (THAAD (Tirminal High Attitude Area Defense) জগদ্বিখ্যাত। শত্রুপক্ষের মিসাইল আঘাত হানার আগেই মহাশূন্যে THAAD তা ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। এক-একটা THAAD ব্যাটারির মূল্য প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার উদ্দেশে দক্ষিণ কোরিয়ায় এই THAAD ব্যাটারি স্থাপন করেছে। তাহলে সম্ভাব্য ইরানি মিসাইল ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকসহ এই অঞ্চলে THAAD বসাল না কেন? যারা ‘ষড়যন্ত্রতত্ত্ব’ নিয়ে কাজ করেন, তারা এ ব্যাপারে নানা বিশ্লেষণ দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে অর্থ নিঃসন্দেহে কোনো ফ্যাক্টর নয়। তাহলে এ কাজটি যুক্তরাষ্ট্র করল না কেন? সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন যে থাকবে তা বলাই বাহুল্য।
চলতি জানুয়ারি মাসটি ইরানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। এই জানুয়ারি মাসের ১৬ তারিখ (১৯৭৯) বিপ্লবপূর্ব ইরানের শাসক মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভি ইরানে প্রচন্ড গণবিক্ষোভের মুখে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তার অবর্তমানে শাসনকার্য পরিচালনার দায়িত্ব তিনি দিয়ে যান রিজেন্সি কাউন্সিল ও বিরোধী দলের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত শাহপুর বখতিয়ারের কাছে। মূলত তখন থেকেই ইরানি বিপ্লবের প্রক্রিয়া শুরু হয় আর তা সম্পন্ন হয় আয়াতুল্লাহ খোমেনির তেহরানে পা রাখার মধ্য দিয়ে। ফ্রান্সের নির্বাসিত জীবন থেকে আয়াতুল্লাহ খোমেনি ইরানে ফিরে আসেন ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ সালে। তার ফিরে আসার মধ্য দিয়ে ইরানি ইসলামিক বিপ্লব সম্পন্ন হয় এবং ইরান একটি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ইরানি বিপ্লবের প্রায় ৪১ বছর পর এই জানুয়ারি মাসের (২০২০) ৭ তারিখে মার্কিন ড্রোন বিমান হামলায় নিহত হন ইরানি রেভ্যুলুশনারি গার্ডের শীর্ষ কমান্ডার মেজর জেনারেল কাসেম সুলেইমানি। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান ইরাকে অবস্থিত দুটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে মিসাইল হামলা চালায়। একটি মিসাইল হামলায় ‘ভুলবশত’ তেহরান ত্যাগ করা ইউক্রেনের একটি যাত্রীবাহী বিমানকে টার্গেট করে তা ধ্বংস করে। তাতে মারা যান ১৭৬ জন সাধারণ মানুষ। ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা যখন তুঙ্গে, সম্ভাব্য তৃতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধের জন্য সবাই যখন অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখন অনেকটা নাটকীয় কায়দায় হোয়াইট হাউজে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বললেন, তিনি শান্তি চান! পেন্টাগনের যুদ্ধবাজ জেনারেলরা চাচ্ছিলেন ‘প্রতিশোধ’ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের রেভ্যুলুশনারি গার্ডের সদর দপ্তরে হামলা চালাক। কিন্তু যুদ্ধ হলো না।
এদিকে, সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিশ্ব প্রত্যক্ষ করল খামেনির বিরুদ্ধে বড় বিক্ষোভ। এটাও এই জানুয়ারি মাসে। ইরানের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা খামেনিই। তিনি ইরানের সুপ্রিম লিডার। তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হবে এটা ছিল অকল্পনীয় একটা ব্যাপার। মাত্র কয়েক দিন আগেই ৭০ লাখ মানুষ মেজর জেনারেল সুলেইমানির জানাজায় শরিক হয়ে প্রমাণ করেছিল ইরানের ধর্মীয় নেতাদের প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন এখনো আছে। ইরান বিপ্লবের ৪১ বছর পূর্তি উপলক্ষে লাখ লাখ মানুষের শোকযাত্রায় অংশগ্রহণ একটি বড় ধরনের ঘটনা। এরপরই ঘটল খামেনির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। তাহলে কি ইরান তৈরি হচ্ছে আরেকটি ‘বিপ্লবের’ জন্য? ট্রাম্প খামেনিবিরোধী বিক্ষোভকে সমর্থন করে একটা সম্ভাবনাকেই উসকে দিলেন আর তা হচ্ছে তিনি ইরানে পরিবর্তন চান। ইরানের রেভ্যুলুশনারি গার্ডের শীর্ষ কর্মকর্তা মেজর জেনারেল সুলেইমানিকে হত্যা এবং পরবর্তী ঘটনাবলি প্রমাণ করে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ক্ষেত্রে আর ‘রেজিম চেঞ্জ’-এর ধারণাটি কার্যকর করতে তৎপর হবে। অর্থাৎ ইরানের শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন। ‘রেজিম চেঞ্জ’-এর ধারণাটি একেবারে নতুন নয়। যুক্তরাষ্ট্র অনেক দিন ধরেই এই ধারণাটি বাস্তবায়ন করে আসছে। অর্থাৎ কোনো একটি সরকারকে যদি যুক্তরাষ্ট্র তার ‘নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ মনে করে, সেই সরকারকে উৎখাত করার উদ্যোগ নেয়। সাধারণত ওই সরকারের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থানকে উসকে দেয় অথবা কখনো কখনো সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনেরও উদ্যোগ নেয়। কোথাও সামরিকভাবে হস্তক্ষেপ করে সরকারের পরিবর্তন ঘটায়।
অতীতের দিকে যদি আমরা নাও তাকাই, বিংশ শতাব্দীতে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ‘রেজিম চেঞ্জ’-এর একাধিক ঘটনা ঘটেছে। ১৯৫৩ সালে ইরানের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক তেলশিল্পে জাতীয়করণ করলে সিআইএ সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মোসাদ্দেককে ক্ষমতাচ্যুত করে। এর মধ্য দিয়ে রেজা শাহ পাহলভি অত্যন্ত ক্ষমতাধর শাসকে পরিণত হন। ১৯৫৪ সালে গুয়াতেমালা, ১৯৫৬-৫৭ সালে সিরিয়ায়, ১৯৬৭ সালে গ্রিসে, ১৯৭৩ সালে চিলি, ১৯৮৩ সালে গ্রানাডায়, ১৯৮৯ সালে পানামা কিংবা সাম্প্রতিককালে ২০০৩ সালে ইরাকে আর ২০১১ সালে লিবিয়ায় এই ‘রেজিম চেঞ্জ’-এর ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে। এই উৎখাতের জন্য কখনো-সখনো সেসব দেশের সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়েছে (চিলি, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রাজিল)। কোথাও আবার সরাসরি সামরিকভাবে হস্তক্ষেপ করে সেখানকার বামপন্থি সরকার (গ্রানাডা) কিংবা বন্ধু নয় এমন সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে (ইরাক, ২০০৩)। লিবিয়ার ক্ষেত্রে সামরিক হস্তক্ষেপ (২০১১) গাদ্দাফিকে উৎখাত করা হয়েছে। এখন ইরানের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ‘রেজিম চেঞ্জ’-এর ধারণাটিকে নিয়ে এগিয়ে যাবে? এ ক্ষেত্রে ইরাক ও লিবিয়ার ক্ষেত্রে যা সম্ভব হয়েছিল, ইরানে কি তা সম্ভব হবে?
একটি যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। সেই আশঙ্কা  একেবারেই যে নেই, তা বলা যাবে না। পেন্টাগনে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতরে অনেকেই আছেন যারা ইরানের বিরুদ্ধে ‘একটি যুদ্ধ’ চান। একটি ‘যুদ্ধ’ ট্রাম্প তথা ইসরায়েলি স্বার্থরক্ষা করবে বেশি। মার্চে ইসরায়েলে নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিজয়ী হতে চান ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। আর নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রে। ওই নির্বাচনেও বিজয়ী হতে চান ট্রাম্প। চলতি জানুয়ারি মাসেই তার ভাগ্য নির্ধারিত হবে। ইরান প্রশ্নে তিনি ‘যুদ্ধে’ গেলেন না বটে, কিন্তু এই অঞ্চলে উত্তেজনা বজায় রেখে তিনি ‘বিজয়ী’ হতে চান। এ কারণেই ট্রাম্পের স্ট্র্যাটেজি এখন ‘রেজিম চেঞ্জ’। ইরানের আর্থসামাজিক ব্যবস্থাকে তিনি নিজ স্বার্থে ব্যবহার করতে চান। পরোক্ষভাবে তিনি ও তার প্রশাসন খামেনিবিরোধী বিক্ষোভকে উসকে দিয়েছেন।
ইরানের ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর এটি একটি বড় ধরনের ঘটনা। সরকারবিরোধী এত বড় বিক্ষোভ এর আগে আর দেখা যায়নি। এটা ঠিক, ইরানের আর্থসামাজিক অবস্থা খুব ভালো না। মানুষের প্রত্যাশা, পূরণ হয়নি। এর জন্য মূলত পশ্চিমা, বিশেষ করে মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা অনেকাংশে দায়ী। ইরান বারবার অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে। ফলে প্রত্যাশিত উন্নয়নে ব্যর্থ হয়েছে ইরান। যদিও জ্বালানি সম্পদের রিজার্ভে ইরান শীর্ষে থাকা সত্ত্বেও মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি হয়েছে, তা বলা যাবে না। কিছু পরিসংখ্যান দিই তাতে বোঝা যাবে বিপ্লবের দীর্ঘ ৪০ বছর পার হওয়ার পরও অনেক ক্ষেত্রে উন্নতি তেমন আশাব্যঞ্জক নয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি তো হয়েছে।
১৯৭৭ সালে ইরানের জিডিপির পরিমাণ ছিল মাত্র ৮০ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার, ২০১৭ সালে জিডিপির পরিমাণ ৪৫৪ বিলিয়ন। মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ ছিল (১৯৭৭) শতকরা ২৭ দশমিক ৩ ভাগ, ২০১৭ সালে তা নেমে আসে শতকরা ১০ দশমিক ৫ ভাগে। বয়স্ক শিক্ষার হার ছিল শতকরা ৩৬ দশমিক ৫ ভাগ, বর্তমানে তা শতকরা ৮৪ দশমিক ৭ ভাগ। ১৯৭৭ সালে দারিদ্র্যের নিচে বসবাসকারীর সংখ্যা ছিল শতকরা ৪৬ ভাগ, ২০১৪ সালে তা কমে এসে দাঁড়ায় শতকরা ১০ দশমিক ৫ ভাগে। শিশুমৃত্যুর হার ছিল শতকরা ৯৩ দশমিক ৩ ভাগ, ২০১৭ সালে এ সংখ্যা শতকরা ১২ দশমিক ৮ ভাগ (গ্লোবালিস্ট, ৮ জানুয়ারি ২০২০)। পরিসংখ্যানই বলে, বিপ্লবের পর ইরানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু বারবার অর্থনৈতিক অবরোধের কারণে কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়নি। পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৫ সালে যেখানে প্রবৃদ্ধি ছিল শতকরা ৫ ভাগ। ২০১৫ সালে তা নেমে আসে মাইনাস-২-এ। কেননা, ওই সময় ইরানের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হয়েছিল। ২০১৯ সালের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, সেখানে প্রবৃদ্ধির হার মাইনাস ৯ দশমিক ৫। কেননা, ইরান পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র (২০১৮), আবার নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এতে করে প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। অথচ পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর প্রবৃদ্ধি ২০১৬ সালে বৃদ্ধি পেয়েছিল শতকরা ১৩ ভাগে। ইরানি মুদ্রা রিয়েলের মান কীভাবে কমে গেছে, তারও পরিসংখ্যান আমরা দিতে পারি। ২০১৭ সালে এক ডলারে পাওয়া যেত ৪০ হাজার রিয়েল, তা কমে যায় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে (১ ডলারে ১ লাখ ৬০ হাজার রিয়েলে)। ২০১৯ সালের নভেম্বরে এর বিনিময় মূল্য ১ লাখ ২০ হাজার রিয়েল। তেল রপ্তানি ইরানের অন্যতম আয়ের উৎস (শতকরা ২৬ ভাগ তেল কেনে চীন। ইইউ কেনে ২০ ভাগ)। তাতে ভাটা এসেছে অর্থনৈতিক অবরোধের কারণে।
আরও একটি কথা বিশ্বের চতুর্থ তেলের রিজার্ভ রয়েছে ইরানে (১৫৮,৪০০ মিলিয়ন ব্যারেল)। আর গ্যাসের রিজার্ভে দ্বিতীয় (১১৮৭ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট)। এই তেল ও গ্যাস রিজার্ভ নিয়ন্ত্রণে নিতে চাইবে পশ্চিমা বিশ্ব। ইরান সংকটের এটাও একটা দিক। ইরানে যে গণ-অসন্তোষ রয়েছে, তার পেছনে কাজ করছে ইরানের অর্থনৈতিক দুরবস্থা, বেকারত্ব ইত্যাদি। এটা ঠিক অর্থনৈতিক অবরোধের কারণে ইরান এসব সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে তরুণ প্রজন্মের কাছে ইসলামিক বিপ্লবের আবেদন ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে আসছে। ইরান যদি সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে যেত, তাতে দেশটির আরও ক্ষতি হতো। এখন আপাতত যুদ্ধ হচ্ছে না। কিন্তু ইরানি নেতৃত্ব যদি অভ্যন্তরীণ বিষয়ের দিকে নজর না দেয়, তাহলে ‘ইরানি বসন্ত’ ইরানে আসতে বাধ্য।

1 comments:

  1. দুই ঘণ্টায় মনে হয় না THAAD ইন্সটল করা যেত। আমেরিকার আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন ছিল।

    ReplyDelete