রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সংকটকে তীব্র করবে

তারেক শামসুর রেহমান
গত ২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের যৌথ সভায় যে বক্তব্য দিয়েছেন এবং যা পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে, তা চলমান সংকটকে আরও গভীরতর করবে। এ দেশের প্রায় ৩৭ শতাংশ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে চারদলীয় জোট। চারদলীয় জোটের যে কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের যেমন অধিকার রয়েছে, তেমনি সরকারেরও উচিত তাদের বক্তব্য শোনা। সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির আলোকে বিরোধী দল আগামী ১২ মার্চ ‘ঢাকা চলো কর্মসূচি’ পালন করবে বলে পত্রপত্রিকায় খবর ছাপা হয়েছে। বিরোধী দল বারবার বলে আসছে ২০১৩ সালে অনুষ্ঠেয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। এ বক্তব্য আজ আর শুধু বিরোধী দলের পক্ষ থেকেই উচ্চারিত হচ্ছে না, এ দেশের অনেক রাজনীতিবিদ, সুশীলসমাজ এবং দাতাগোষ্ঠীর পক্ষ থেকেও এ দাবি উচ্চারিত হচ্ছে। এমনকি সরকারের শরিক দলের কারও কারও পক্ষ থেকেও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে। সরকারের উচিত এ ব্যাপারে বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ করা। এ সংলাপ সংসদে অথবা সংসদের বাইরেও হতে পারে। সরকারের যে কোন শরিক দলও এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারে।
বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন করার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশের রাজনীতির স্থিতিশীলতা, গ্রহণযোগ্যতা এবং গণতন্ত্রকে আরও উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিকল্প নেই।
আমি যতদূর জানি, বিএনপি কর্তৃক আহূত ১২ মার্চের কর্মসূচিতে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর কোন কর্মসূচি নেই। পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী বিএনপিও চায় প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক। আমরাও তেমনটি চাই।
‘হানাদার বাহিনীর মতো গণহত্যা চালানোর ষড়যন্ত্র’ বলে প্রধানমন্ত্রী যে অভিযোগ এনেছেন তার পেছনে সত্যতা কতটুকু আছে, আমরা জানি না। তবে প্রধানমন্ত্রীর উল্লিখিত বক্তব্য আমাদের মনে নানা উৎকণ্ঠার জš§ দেবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য গণতন্ত্র বিকাশের ধারাকে ব্যাহত করতে পারে। বাংলাদেশের জন্য এটা কোন শুভ সংবাদ হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে যে অভিযোগ করেছেন, আমি ধারণা করছি তার কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনে এসব তথ্য জনসমক্ষে উপস্থাপন করতে পারেন।
স্বাধীনতার এ মাস আমাদের জন্য গর্বের। স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও এ মার্চ মাসে যখন বিরোধী দল কোন কমর্সূচি দেয়, তখন বুঝতে হবে সরকার ও বিরোধী দলের মাঝে আস্থার কত অভাব। তবে মার্চ মাস আমাদের জন্য শিক্ষার একটি মাসও বটে। ১৯৭১ সালের এ মার্চ মাসে আমরা পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেছিলাম। আর বিএনপির ‘ঢাকা চলো’ কর্মসূচির সঙ্গে সেই অসহযোগ আন্দোলনের কোন মিল নেই সত্য, কিন্তু শোষণ-অত্যাচার আর কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের মার্চের অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে বর্তমান অবস্থার একটি মিল কেউ কেউ খুঁজে পেতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, মার্চে আন্দোলন কেন? আসলে আন্দোলন কখনও দিন-ক্ষণ দেখে হয় না। বিএনপি ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১২ মার্চের কর্মসূচি দিয়েছে। এটা হঠাৎ ঘোষিত কোন কর্মসূচি নয়। এর পেছনে অন্য কিছুর গন্ধ খোঁজা ঠিক হবে না। বরং সরকার যদি সত্যিকার অর্থে আন্দোলনের কারণ অনুসন্ধান করত, আমার বিশ্বাস আমরা এ মার্চে এ ধরনের আন্দোলন দেখতাম না। উদ্যোগটি নিতে হবে সরকারকেই। সে সুযোগ এখনও আছে। দেশ আজ নানা সমস্যায় আক্রান্ত।
বিএনপি আজ আন্দোলন করছে। অতীতে আওয়ামী লীগও এ রকম ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করেছে। আমরা চাই সরকারি দল ও বিরোধী দলের সমন্বয়ে এ দেশের রাজনীতি বিকশিত হোক। বিরোধী দলকে বাদ দিয়ে যে রাজনীতি, প্রকৃতপক্ষ সে রাজনীতি এ দেশের গণতন্ত্র বিকাশে সাহায্য করবে না। গণতন্ত্রের স্বার্থেই দুই পক্ষের সহাবস্থান প্রায়োজন।

ড. তারেক শামসুর রেহমান : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
http://jugantor.us/enews/issue/2012/03/04/news0438.htm

0 comments:

Post a Comment