রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ভারতে লোকসভা নির্বাচনের ফল ও আমাদের প্রত্যাশা


নির্বাচনে জয়ের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি প্রধান অমিত শাহ
নির্বাচনে জয়ের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি প্রধান অমিত শাহ
ভারতের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে ২৩ মে। বুথফেরত জনমত জরিপকে সত্য প্রমাণ করে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়েছে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের চেয়েও এবার এনডিএ জোট ভালো করেছে।
২০১৪ সালে তাদের প্রাপ্ত আসন ছিল ৩৩৬, এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫০-এ। ইউপিএ জোটের আসন সংখ্যাও বেড়েছে। ২০১৪ সালে যেখানে ইউপিএ জোটের আসন ছিল ৬০, এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩টিতে। নরেন্দ্র মোদি এখন দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করবেন।
এ নির্বাচন অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এক. নরেন্দ্র মোদি অর্থনীতি ও উন্নয়নকে একত্রিত করে যে রাজনীতি উপস্থাপন করেছিলেন, যা কোনো কোনো বিশ্লেষক ‘মোদিনোমিক্স’ (Modinomics) হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, তাতে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস স্থাপন করেছে। মানুষ চেয়েছে উন্নয়ন। ভারতের মানুষ নরেন্দ্র মোদির ওপর আবারও আস্থা রেখেছে।
দুই. ২০১৪ সালে এক কঠোর ‘হিন্দুত্ববাদী’ নীতি সারা ভারতে ছড়িয়ে গিয়েছিল। সেই স্রোত এখনও বহমান। ভারতে ধর্মনিরপেক্ষ ট্রেডিশনাল রাজনীতির ‘মৃত্যু’ হতে যাচ্ছে! সেখানে স্থান পেয়েছে কট্টর হিন্দুত্ববাদ!
তিন. সারা বিশ্বেই কট্টর দক্ষিণপন্থী রাজনীতির উত্থান ঘটেছে। এ উত্থানপর্ব শুরু হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিজয়ের মধ্য দিয়ে। এখন ইউরোপ ছাড়িয়ে তা ভারতের মতো বড় গণতান্ত্রিক দেশেও আঘাত করল।
চার. মোদি প্রমাণ করলেন তিন একাই একশ’। মোদির ব্যক্তিগত ইমেজের কারণে দীর্ঘদিনের সংগঠন কংগ্রেসের ভরাডুবি ঘটল। কংগ্রেসের নেতৃত্বে রাহুল গান্ধীর ভূমিকা এখন প্রশ্নের মুখে থাকবে। ব্যক্তিগতভাবে আমেথিতে তার পরাজয় পারিবারিক রাজনীতির বৃত্ত ভাঙল। কংগ্রেসকে এখন বিকল্প নেতৃত্বের কথা ভাবতে হবে।
পাঁচ. ভারতীয় রাজনীতিতে বামরা এক রকম ‘উচ্ছেদের’ মুখে। হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির কারণে বাম রাজনীতি আদৌ কোনো ভূমিকা রাখতে পারল না।
ছয়. আঞ্চলিক দলগুলোর প্রভাব-প্রতিপত্তিও কমেছে (২০১৪ সালে ১৪৭, এবার ১০০)।
সাত. পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের আবেদন এখন কমতির দিকে (২০১৪ সালে ৩৪, ২০১৯ সালে ২২)। গেরুয়া সেখানে আঘাত হেনেছে। ২০২১ সালে (বিধানসভার নির্বাচন) রাজ্যের রাজনীতিতে সম্ভাব্য একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিল এই লোকসভা নির্বাচন।
বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্বাচনের গুরুত্ব রয়েছে। আমরা চাই নয়াদিল্লির নয়া সরকার যখন গঠিত হবে, তখন সেই সরকার দ্বিপাক্ষিক সমস্যা সমাধানে আরও আন্তরিক হবে। এটি সত্য, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। তার শাসনামলেই ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে।
১৯৭৪ সালের ১৬ মে মুজিব-ইন্দিরা স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও ভারত দীর্ঘদিন ওই চুক্তিটি অনুমোদন করেনি। কিন্তু বাংলাদেশ সংবিধান সংশোধন করে ওই চুক্তিটি অনুমোদন করেছিল। এর জন্য ভারতের সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন ছিল। ৫ মে (২০১৫) ভারতের মন্ত্রিসভায়, ৬ মে রাজ্যসভায়, ৭ মে লোকসভায় বিলটি অনুমোদিত হয়েছিল।
স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের অগ্রগতি। ১১১টি ছিটমহলের ৪০ হাজার ৪৭০ নাগরিক এখন বাংলাদেশের নাগরিক। এতে ১৭,১৬০ দশমিক ৬৩ একর জমি বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আর ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ৭,১১০ দশমিক ০২ একর জমি। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।
কিন্তু কিছু কিছু সমস্যা যা ছিল, তা রয়ে গেছে। এ ব্যাপারে আদৌ কোনো অগ্রগতি হয়নি। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে আসামের তথাকথিত নাগরিকত্ব তালিকা (এনআরসি), যে তালিকায় আসামে বসবাসকারী বেশকিছু মুসলমানকে বাংলাদেশি হিসেবে ‘চিহ্নিত’ করে তাদের বাংলাদেশে জোর করে ফেরত পাঠানোর হুমকি দেয়া হচ্ছে।
মোদি নিজে পশ্চিমবঙ্গেও এনআরসি করতে চান। বাংলাদেশ-ভারত উষ্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া বড় ধরনের অন্তরায়। এ ক্ষেত্রে বিজেপি সরকারের একটি সাম্প্রদায়িক মনোভাব লক্ষ করা যায়, যখন অমিত শাহ প্রকাশ্যেই বলেন, তারা পশ্চিমবঙ্গেও এ তালিকা করবেন। তবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তারা থাকতে দেবেন।
আসামে তারা এই তালিকা করলেও পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির আপত্তির মুখে তারা এ তালিকা করতে পারেননি। মমতা প্রকাশ্যেই বলেছেন, তিনি পশ্চিমবঙ্গে এ তালিকা করতে দেবেন না।
অনেকেই জানেন, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে (সাত বোন রাজ্য) বিধানসভার নির্বাচনে বিজেপি ভালো ফলাফল করেছে। ত্রিপুরাসহ বেশ ক’টি রাজ্যে বিজেপি সরকারও গঠন করেছে। এখন তাদের টার্গেট ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ। মমতাকে হটিয়ে তারা সেখানে সরকার গঠন করতে চায়। সুতরাং তারা যে নাগরিকত্ব তালিকাকে ইস্যু করবে এটাই স্বাভাবিক।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বড় অন্তরায় হচ্ছে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি না হওয়া। যতদূর জানা যায়, মমতার আপত্তির কারণেই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিটি করতে পারেনি। তিস্তা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একটি ইস্যু।
মমতা তখন প্রকাশ্যেই বলেছেন, পশ্চিম বাংলার উত্তরবঙ্গের মানুষদের পানি না দিয়ে তিনি বাংলাদেশকে পানি দিতে পারবেন না! অথচ তার নিয়োগকৃত কল্যাণ রুদ্র কমিশনের অভিমত হচ্ছে, উত্তরবঙ্গকে পর্যাপ্ত পানি দিয়েও বাংলাদেশের প্রাপ্ত পানি দেয়া সম্ভব।
তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী। আন্তর্জাতিক নদীর পানির ব্যবহার সংক্রান্ত যেসব আইন রয়েছে (১৯৬৬ সালের হেলসিংকি নীতিমালা, ১৯৯২ সালের ডাবলিন নীতিমালা, ১৯৯৭ সালের জাতিসংঘের জলপ্রবাহ কনভেনশন কিংবা জীববৈচিত্র্য কনভেশন)- প্রতিটি আইন বাংলাদেশের পানিপ্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে।
এখন মমতা ব্যানার্জি যদি উজানে পানি প্রত্যাহার করে নেন, সেটি হবে আন্তর্জাতিক পানি সংক্রান্ত আইনের বরখেলাপ। এক্ষেত্রে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে বাংলাদেশের পানিপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে। ফারাক্কা চুক্তি নিয়েও চিন্তা করার সময় এসেছে।
১৯৯৬ সালে এ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী যে পরিমাণ পানি বাংলাদেশের পাওয়ার কথা, বাংলাদেশ তাও পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৭ সালে, অর্থাৎ ১৯৭৭ থেকে ৫০ বছর পর। এ ৫০ বছরে জনসংখ্যা বাড়বে তিনগুণ। মোটামুটি হিসাবে পানির প্রয়োজনও বাড়বে তিনগুণ।
কিন্তু ১৯৯৬ সালের চুক্তিতে আমরা যে পানি পেয়েছি, ২০২৭ সাল পর্যন্ত পেতে থাকব আরও কম। সুতরাং বিষয়টির গভীরতা উপলব্ধি করে এখন থেকেই আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন। গঙ্গার এ পানি সংকট মোকাবেলায় ভারতের পানি বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, যে ১১টি রাজ্যে গঙ্গার অববাহিকা বিস্তৃত সেখানে গঙ্গা বা উপনদীর উপর জলাধার নির্মাণ ও সেচের প্রয়োজনে নদী থেকে পানি টেনে নেয়া এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যাতে নদীর কোনো অংশ সম্পূর্ণ শুকিয়ে না যায়।
সেই সঙ্গে তিনি এও বলেছেন, ভূগর্ভের পানি স্তর থেকে নদীর দিকে বেইস ফ্লো অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য নদীপাড় থেকে ৫০০ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত গভীর ও অগভীর নলকূপের সাহায্যে সেচের পানি তোলা নিষিদ্ধ করা দরকার। সেই সঙ্গে গঙ্গা চুক্তির পুনঃমূল্যায়নের কথাও বলছেন তিনি।
বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরেকটি অন্তরায়। বাংলাদেশ ভারতে রফতানি করে কম, আমদানি করে বেশি। বাংলাদেশ ভারতের অন্যতম বাজারে পরিণত হয়েছে। বাণিজ্য রেশিও ১:৭.৯। অর্থাৎ ৭.৯ শতাংশ বেশি আমদানি করে বাংলাদেশ। বাণিজ্য ভারসাম্যের অন্যতম কারণ হচ্ছে ভারতের সরকারি নীতি।
সাম্প্রতিক সময়গুলোতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি পেলেও কিছু অশুল্ক বাধার কারণে দু’দেশের কাক্সিক্ষত বাণিজ্য বাড়ছে না। বাংলাদেশ থেকে ভারতে রফতানির ক্ষেত্রে বন্দর, পণ্য পরীক্ষা ও বকেয়াসহ প্রতিবন্ধকতার ফলে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। এদিকে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট এবং চট্টগ্রাম-মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার নিয়েও কথা আছে।
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ আয় মিলিয়ে বন্দরভিত্তিক কার্যক্রমে বার্ষিক মোট ৩৭ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরিত হচ্ছে। এখন চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে পণ্য প্রবাহের ১০ শতাংশও যদি ভারতের ট্রানজিট বা ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্যসামগ্রী পরিবহন করা হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে বছরে প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা (ফি বাবদ) ট্যারিফ, চার্জ, মাশুল বাবদ নিশ্চিত আয় হওয়ার কথা। এটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
ভারত বড় অর্থনীতির দেশ। নরেন্দ্র মোদির প্রথম টার্মের বৈদেশিক নীতির একটি অন্যতম দিক ছিল তার ‘নেইবারহুড ফার্স্ট’ পলিসি। অর্থাৎ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধিকে তিনি তার অগ্রাধিকার তালিকায় রেখেছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি এ আলোকেই রচিত হয়েছে। তার শাসনামলে বিবিআইএন (বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল) উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তি রচিত হয়েছে।
এ উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা বাংলাদেশের পানি ও জ্বালানি সংকট সমাধানে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ভারত থেকে বিদ্যুৎ পাচ্ছে। একই সঙ্গে নেপাল ও ভুটানে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করে বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটানো সম্ভব। একইসঙ্গে শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকটেরও সমাধান সম্ভব।
এ ক্ষেত্রে ভারতকে আরও উদার হতে হবে। ভুটান কিংবা নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে হলে তা ভারতীয় এলাকার উপর দিয়ে আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভারত না চাইলে আমরা তা পাব না। আশার কথা, মোদি সরকার এ ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছিল।
মোদি সরকার একদিকে বিবিআইএন উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার ধারণাকে এগিয়ে নিয়ে যেমন বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সাত বোন রাজ্যের সম্পর্ককে আরও উন্নততর পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে; ঠিক তেমনি সার্ককে পাশে রেখে, অনেকটা নিষ্ক্রিয় করে বিমসটেক জোটকে (বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, নেপাল ও ভুটান) শক্তিশালী করতে চায় ভারত।
শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ বিআরআই (চীনের প্রস্তাবিত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ) জোটে আছে। চীন থেকে আর্থিক সহযোগিতা নিচ্ছে। এটাও ভারতের পছন্দ নয়। ভারত মনে করে, এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে চীনের প্রভাব বাড়বে। বাংলাদেশ প্রতিবেশী এ দুটি বড় দেশের সঙ্গে (চীন ও ভারত) এক ধরনের ভারসাম্যমূলক নীতি গ্রহণ করে আসছে। এটাই আমাদের পররাষ্ট্রনীতির বৈশিষ্ট্য।
ইতিমধ্যে ঢাকায় একটি ‘সিল্করোড ফোরাম’ গঠিত হয়েছে। যে অনুষ্ঠানে এ ফোরামটি গঠিত হয়, সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। এর অর্থ, এ ফোরামের ব্যাপারে সরকারের সমর্থন রয়েছে। ভারত বিষয়টিকে ‘ভালো চোখে’ দেখবে বলে মনে হয় না। সুতরাং নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয় সরকার বিষয়টিকে কোন্ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে, সেটাই দেখার বিষয়।
সরকার গঠনের আগেই নরেন্দ্র মোদি ২১ মে তার আগামী সরকারের ব্লুপ্রিন্ট উন্মোচন করেছেন। এতে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে- জাতীয় নিরাপত্তা, জাতীয়তাবাদ ও উন্নয়ন। অর্থাৎ এনডিএ-২ সরকারের সময় পররাষ্ট্রনীতি হয়তো কম গুরুত্ব পাবে। এখন দেখার বিষয় মোদি সরকার আগামী ৫ বছর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে কোন পর্যায়ে নিয়ে যাবে।
২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার নির্বাচন। লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদি-মমতা ব্যানার্জি যেভাবে বাকযুদ্ধে জড়িয়ে গিয়েছিলেন, তা বিধানসভা নির্বাচনেও প্রভাব ফেলবে। তিস্তার পানিবণ্টনের বিষয়টি একটি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে তখন। ভারতে নয়া সরকারের জন্য ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কটি যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
Daily Jugantor
25.05.2019

0 comments:

Post a Comment