রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

সার্ক কোন পথে?

দু’দিনব্যাপী সার্ক শীর্ষ সম্মেলন শেষ হয়েছে গত ১১ নভেম্বর আদ্দু ঘোষণার মধ্য দিয়ে। মালদ্বীপ তার রাজধানী মালেতে দু’দুবার সার্ক শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করলেও এবার তারা বেছে নিয়েছিল সাগরঘেঁষা ছোট্ট শহর আদ্দুকে। সেই শহরকে তারা শীর্ষ সম্মেলনের জন্য তৈরী করেছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা অবস্থান করেছিলেন অপর আরেকটি দ্বীপে। কিন্তু সম্মেলন শেষ হওয়ার পর যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে সার্ক দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি ও এ অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য কতটুকু কাজ করতে পেরেছে? সার্ক-এর বয়স একেবারে কম নয়। ১৯৮৫ সালে ঢাকায় যে সংগঠনটির জন্ম, তার বয়স ২৬ বছর। এই ২৬ বছরে মোট ১৭টি সম্মেলন করেছে সার্ক। পরবর্তী ১৮তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হবে নেপালে। এই যে ১৭টি সম্মেলন, তাতে অর্জন কতুটুকু? ২০ দফা ঘোষণাপত্রের মধ্য দিয়ে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন থেকে তেমন কিছুই হয়নি। মালদ্বীপ জলবায়ু পরিবর্তনে বড় ধরনের ঝুঁকির মাঝে রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবেই বলা হচ্ছে, বিশ্বের উষ্ণতা যেভাবে বাড়ছে তা যদি রোধ করা সম্ভব না হয় তাহলে এ শতাব্দীর শেষের দিকে দেশটি সাগরের বুকে হারিয়ে যাবে। এ ব্যাপারে বিশ্ব জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ সমুদ্রের নীচে কেবিনেট মিটিং পর্যন্ত করেছিলেন, যা সারা বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল। কিন্তু আদ্দু সিটিতে যখন শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করা হয় তখন মালদ্বীপের এই ভূমিকার সাথে দেশটির আগের ভূমিকাকে আমি মেলাতে পারি না। কেননা ৮টি দেশের সরকার তথা রাষ্ট্রপ্রধানদের সম্মেলনে অংশ নেয়া ও তাদের সাথে আসা শত শত সরকারি কর্মচারী তথা গণমাধ্যম কর্মীদের বিমানে আসা ও যাতায়াতের জন্য যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হয়েছে, তা দেশটির জন্য ভালো নয়। এমনকি তা জলবায়ু পরিবর্তনে মালদ্বীপের অবস্থানের পরিপন্থী। পাঠক আপনাদের ২০০৯ সালে কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত Cop 15 (15th Conference of the parties)-এর কথা একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। কিয়োটো প্রটোকল পরবর্তী জলবায়ু সম্মেলনগুলো জাতিসংঘ কর্তৃক Cop নামে অভিহিত করা হয়। উন্নত ও অনুন্নত দেশগুলো আগামীতে কী পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ কমাবে, সে লক্ষ্যেই Cop সম্মেলনগুলো হচ্ছে (চলতি বছরের ডিসেম্বরে Cop 17-এ একটি চুক্তি হবার কথা)। এটা এখন স্বীকৃত যে, বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণের ফলে বিশ্বের উষ্ণতা বাড়ছে। কোপেনহেগেন সম্মেলনে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে ১৫ হাজার প্রতিনিধি অংশ নিয়েছিলেন। খরচ হয়েছিল ১২২ মিলিয়ন ডলার (সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের থাকা-খাওয়ার খরচ আলাদা)। মজার ব্যাপার হাজার হাজার প্রতিনিধি গেলেন কার্বনের নিঃসরণ কমাতে একটি চুক্তি করতে। কিন্তু তাদের আনা-নেয়া, গাড়ি ব্যবহার করে তারা নিজেরাই বায়ুমণ্ডলে ১২ দিনে ৪০ হাজার ৫০০ টন কার্বন ছড়িয়েছেন। এই তথ্যটি জাতিসংঘের এবং যা টাইম সাময়িকীতে ৮ ডিসেম্বর ছাপা হয়েছিল। আদ্দু সিটিতে প্রতিনিধিরা কী পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করেছেন বা মালদ্বীপ সম্মেলন আয়োজনের পেছনে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে, তার পুরো হিসাব আমার কাছে জানা নেই। কোন সাংবাদিকের লেখনিতেও আমি তা পাইনি। শুধু জলবায়ু পরিবর্তনই নয়, বিশ্বব্যাপী যেখানে অর্থনীতিতে মন্দাভাব বিরাজ করছে, সেখানে এ ধরনের শীর্ষ সম্মেলন ও ‘ফটোসেশন’ করার মধ্যে কোন ধরনের যৌক্তিকতা আছে বলে আমার মনে হয় না।
অতীতের প্রতিটি সম্মেলনের মত আদ্দু সম্মেলনেও ২০ দফার একটি ঘোষণা আছে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়া যেসব সমস্যার সম্মুখীন, সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোন দিক-নির্দেশনা এই ঘোষাণাপত্রে নেই। কোন সুস্পষ্ট কর্মসূচীও গ্রহণ করা হয়নি। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে যখন এ ধরনের একটি সম্মেলন হয়, তখন আমাদের প্রত্যাশা থাকে মন্দা মোকাবিলায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো যৌথভাবে একটি কর্মসূচী নেবে। কিন্তু কোন কর্মসূচীর কথা বলা নেই ২০ দফায়। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো মন্দায় আক্রান্ত। বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমছে ৩৯ ভাগ। বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ২৩ ভাগ। বর্তমান হিসাব অনুযায়ী সরকার প্রতিদিন ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিচ্ছে ১৩৩ কোটি টাকা। ফলে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে। এই চিত্র নেপাল, শ্রীলংকা কিংবা মালদ্বীপের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মালদ্বীপের একমাত্র আয় পর্যটন খাত। তাতে মন্দার কারণে ধস নেমেছে। এখন করণীয় কী, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া যেত। কিন্তু তা নেয়া হয়নি। দ্বিতীয়ত, একটি দক্ষিণ এশীয় ইউনিয়ন গড়ার লক্ষ্যে ভিশন স্টেটমেন্ট তৈরী করার কথা বলা হয়েছে। যেখানে ১৯৫৭ সালে যাত্রা শুরু করা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইসি থেকে) এখন ভেঙে যাবার মুখে, সেখানে আমরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি দক্ষিণ এশীয় ইউনিয়ন গড়ার। গ্রীস ও ইতালীর অর্থনৈতিক সংকট প্রমাণ করেছে ছোট্ট ও বড় অর্থনীতি নিয়ে গড়া ঐক্য সাময়িক, দীর্ঘস্থায়ী হয় না। জার্মানী ও ফ্রান্স আজ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভক্তির কথা বলছে। এমনি এক পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে থাকবেই। ভারত বড় অর্থনীতির দেশ হতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং গ্র“প সিটির এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০৫০ সালে ভারত হবে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি। ওই সময় ভারতের জিডিপির (ক্রয়ক্ষমতার সক্ষমতার ভিত্তিতে) পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে ৮৫ দশমিক ৯৭ ট্রিলিয়ন ডলার। চীন থাকবে দ্বিতীয় অবস্থানে। মানুষের মাথাপিছু আয় হবে ৫৩ হাজার ডলার। এমনকি বর্তমান অবস্থা দিয়েও যদি বিচার করি, তাহলেও ভারতের অর্থনীতির সাথে ভুটান বা নেপালের অর্থনীতিকে মেলান যাবে না। বিশাল একটি পার্থক্য রয়ে গেছে। বড় অর্থনীতি ছোট অর্থনীতিকে গ্রাস করে। ফলে রাজনৈতিক ঐক্য এক ধরনের অর্থনৈতিক আধিপত্যে পরিণত হয়, যেমনটি হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে। তৃতীয়ত, জলবায়ু পরিবর্তন, বিশেষ করে হিমালয়ের হিমবাহগুলো যে গলে যাচ্ছে, সে ব্যাপারে কী কর্মসূচী নেয়া যায়, তার কোন উল্লেখ নেই। হিমালয়ের গাঙ্গোত্রী হিমবাহ গত ৩০ বছরে ১.৫ কিলোমিটার দূরে সারে গেছে। হিমালয়ে উষ্ণতা বাড়ছে। অন্যদিকে সমুদ্রের পানি এক মিটার বাড়লে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী ১৭ ভাগ এলাকা সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। ২০ মিলিয়ন মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে বড় শহরগুলোতে আশ্রয় নেবে। মালদ্বীপের কথা উল্লেখ না-ই করলাম। এক্ষেত্রে করণীয় কী? আদ্দু ঘোষণায় কোন কর্মসূচী নেই এ ব্যাপারে। অথচ এ অঞ্চলের উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ আদৌ দায়ী নয়। বাংলাদেশ বছরে কার্বন নিঃসরণ করে মাত্র ০.২ টন। কিন্তু ভারত করে অনেক বেশি। জলবায়ু আলোচনায় বাংলাদেশ ও ভারতের অবস্থান এক নয়। ভারত উন্নয়নশীল বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশের গ্র“পে (ব্রাজিল, চীনসহ) আন্তর্ভুক্ত। মূলত ভারতের কারণেই এ অঞ্চলে কার্বন নিঃসরণ কমানোর ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ দ্বীপ রাষ্টগুলোর সমন্বয়ে গঠিত গ্র“পে তার অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করেছে। এই দেশগুলো ২০২০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ৮৫ ভাগ কমাতে চায়। ভারতের অবস্থান এটা নয়। চতুর্থত, দারিদ্র্য এ অঞ্চলের বড় সমস্যা। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর ৫৬ ভাগ এখনও দরিদ্র। ভারতে ২০০৪ সালে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ছিল ২৭ দশমিক ৫ ভাগ, ২০১০ সালে তা বেড়েছে ৩৭ দশমিক ০২ ভাগে। প্রতিদিন ভারতে ৫ হাজার শিশু মারা যায় অপুষ্টিজনিত আর দারিদ্র্যের কারণে। ভারতে কোন কোন রাজ্যে দারিদ্র্য অনেক বেশি। ১৯৯১ সালের কলম্বোর সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছিল। ১৯৯২ সালে কমিশনের রিপোর্ট গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমেনি। কমিশন সামরিক খাতে ব্যয় বাড়ছে কমানোর কথা বললেও, ভারত ও পাকিস্তান ব্যয় বরাদ্দ কমায়নি। ওই রিপোর্ট কাগজ-কলমেই থেকে গেছে। পঞ্চমত, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃবাণিজ্য সম্পর্ক বাড়েনি। এ অঞ্চলের দেশগুলোর বাণিজ্যের একটা ক্ষুদ্র অংশ পরিচালিত হয় নিজেদের মধ্যে। বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়েনি। দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। বাংলাদেশী পণ্য রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেড়েছে প্রায় ৮ গুণ। একমাত্র শ্রীলংকা ছাড়া প্রতিটি দেশের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। অথচ সার্কের এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেই। ষষ্ঠত, ভারত বড় অর্থনীতির দেশ হওয়ায় এ অঞ্চলে দেশটি এক ধরনের অর্থনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে, যা আঞ্চলিক সহযোগিতার পথে প্রধান অন্তরায়। সপ্তমত, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভিসামুক্ত যাতায়াতের প্রস্তাব করা হলেও এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। অথচ সেভেন চুক্তি অনুযায়ী ইউরোপ যাতায়াত অবাধ করেছে (সব দেশ অবশ্য তাতে রাজি হয়নি। ২৭টির মাঝে ১৫টি দেশ সেভেন চুক্তি স্বাক্ষর করে)। অষ্টমত, আদ্দু ঘোষণায় সাফটা চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে (২০০৬ সাল থেকে কার্যকর)। কিন্তু ভারতের নানাবিধ শুল্ক বাধার কারণে সাফটা পূর্ণ কার্যকর হচ্ছে না। ভারত অনেক পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের ঘোষণা দিলেও সেখানে রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। অনেক পণ্যই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো উৎপাদন করে না। এমনকি নিগেটিভ লিস্টের কারণেও অনেক পণ্যের ভারতে প্রবেশাধিকার সীমিত। নবমত, দক্ষিণ এশিয়ার একটি বড় সমস্যা জ্বালানি সংকট। বাংলাদেশ কিংবা শ্রীলংকার মত দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। আদ্দু ঘোষণায় বিদ্যুতের বাজার খোঁজার জন্য একটি সমীক্ষা চালানোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা থাকলেও বিতরণ ব্যবস্থার উপরই নির্ভর করছে বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের একমাত্র পথ। নেপাল ও ভুটানে প্রচুর বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এই দুটো দেশ থেকে বিদ্যুৎ আনতে হলে বাংলাদেশকে ভারতের মর্জির উপর নির্ভর করতে হবে। আর ভারত বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে দেখে। সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেপালের সপ্তকেয়সি হাই ড্যাম থেকে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার প্রস্তাব দিয়েছেন। এই বাঁধটি বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরে নেপালের অভ্যন্তরে নির্মিত হবে। সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে ভাল। কিন্তু ভারতের উপর দিয়ে বিদ্যুৎ আনতে হবে। সমস্যাটা এখানেই। ভারত নিজে নেপাল ও ভুটানের সাথে যৌথভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। কিন্তু ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে ভারতের আপত্তি রয়েছে। ভারতের বৈদেশিক নীতিতে বহুপাক্ষিকতা নেই, যা বাংলাদেশ বিশ্বাস করে। ফলে বিদ্যুতের বিতরণ নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। দশমত, সার্ক ফুড ব্যাংক, বীজ ব্যাংক, দুর্যোগ মোকাবিলায় ও সন্ত্রাস দমনে সমন্বিত প্রচেষ্টার যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, তা ভালো। তবে আগামী দিনগুলোই বলবে এ ব্যাপারে সার্কের সফলতা কতটুকু। সীমিত পর্যায়ে হলেও সার্কের সফলতা কিছুটা রয়েছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সার্ককে নতুন করে চিন্তা করতে হবে।
চীনকে সার্কের কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি উঠেছে। এটা নিয়ে চিন্তভাবনা করা যেতে পারে। আফগানিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার অন্তর্ভুক্ত না হলেও সার্কের সদস্য। এটা সম্ভব হয়েছে শুধু ভারতের কারণে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে চীন খুব বেশি দূরে নয়। বাংলাদেশের সীমান্ত থেকেও চীন খুব বেশি দূরে নয়। চীন নিকট প্রতিবেশী। এখন চীন সার্কের সদস্য হলে বিশ্ব আসরে সার্কের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। তবে এক্ষেত্রে সার্কের নামের পরিবর্তন হতে পারে। অতীতে বিমসটেকও পরিবর্তিত হয়ে BBIMSTEC (Bay of Bengal Initiative for Multi Sectoral Technnical and Economic Cooperation) হয়েছে।
সার্ক সম্মেলন এলেই সার্ক সম্পর্কে ভালো ভালো কথা বলা হয়। ফটো সেশন হয়। এবারও হয়েছে। অনেক সিদ্ধান্ত কাগজ-কলমেই থেকে গেছে। বাস্তবায়ন হয়নি। সার্ক তৃতীয় দশকে পা দিয়ে এখন সার্ককে নতুন করে মূল্যায়ন করতে হবে। সার্ককে একটি কার্যকরী আঞ্চলিক সহযোগিতামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হলে চীনকে এই সংস্থায় অন্তর্ভুক্ত করে এর একটি নতুন কাঠামো দেয়া যেতে পারে। একই সাথে সার্ক-আসিয়ান সম্পর্ক ও যোগাযোগ বাড়াতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব ,  নভেম্বর ২০১১। ড. তারেক শামসুর রেহমান আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক,  অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ,
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

0 comments:

Post a Comment