তার পুরো নাম ইমরান আহমাদ খান নিয়াজী। জন্ম ১৯৫২ সালের ৫
অক্টোবর। তিনি হতে যাচ্ছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। ২০১৮ সালের ১৪ আগস্ট
পাকিস্তানের ৭১তম স্বাধীনতা দিবসের আগেই তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ
নেবেন এবং তার ভাষায়Ñ ‘এক নতুন পাকিস্তানের তিনি জন্ম দিতে যাচ্ছেন! একজন
ইমরান খান ক্রিকেটার ছিলেন। ১৯৮২-৯২ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন পাকিস্তান
ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন। ১৯৯২ সালে তার নেতৃত্বেই পাকিস্তান ক্রিকেট টিম
বিশ্বকাপ জয়লাভ করে। এরপর তিনি সমাজসেবায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন এবং ১৯৯৬
সালে গঠন করেন রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ, সংক্ষেপে পিটিআই। ২৫
জুলাইয়ের সাধারণ নির্বাচনে তার দল বিজয়ী হয়েছে। যদিও নিরঙ্কুশ
সংখ্যাগরিষ্ঠতা তিনি পাননি। একক সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে (১১৮টি) তার দল বিজয়ী
হয়েছে। সরকার গঠন করার জন্য তার দরকার ১৩৭টি আসন। এখন স্বতন্ত্র এবং ছোট
ছোট দুই-একটি দলের সমর্থন তিনি পাবেন। এমনকি স্বতন্ত্র সদস্যরা তার দলেও
যোগ দিতে পারেন। ফলে সরকার গঠন করা তার জন্য কোনো সমস্যা হবে না।
পাকিস্তানের রাজনীতি বরাবরই নিয়ন্ত্রণ করেছেন ভূস্বামী তথা জমিদাররা, পরে আশির দশকে বড় ব্যবসায়ীরা রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন। সিন্ধুর জমিদার আর পাঞ্জাবের ধনী ব্যবসায়ীদের হাতেই ছিল রাজনীতির চাবিকাঠি। পাকিস্তানি রাজনীতিতে এ পাঞ্জাবি প্রাধান্য সেখানে নানা বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। পাঞ্জাবের রাজনীতিবিদরাই যে শুধু রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন, তেমনটি নয়। এমনকি সেনাবাহিনীও নিয়ন্ত্রণ করত পাঞ্জাবি জেনারেলরা। বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া পাঞ্জাবের জাট পরিবারের সন্তান হলেও তার জন্ম করাচিতে। একজন পাঞ্জাবি জেনারেলকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ সেনাপ্রধান হিসেবে বেছে নিলেও এই সেনাবাহিনীর সঙ্গে দ্বন্দ্বে তিনি ক্ষমতা হারিয়েছিলেন। সেনাবাহিনীর করপোরেট স্বার্থে তিনি আঘাত করেছিলেন, যা ছিল তার ক্ষমতা হারানোর অন্যতম কারণ। সেদিন পাঞ্জাবি জেনারেল বাজওয়া আরেকজন পাঞ্জাবি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পক্ষে দাঁড়াননি। পাঞ্জাবি প্রভাবাধীন রাজনীতি ও সেনাবাহিনীর বাইরে ইমরান খান কি শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারবেন? ইমরান খান একজন পাঠান; কিন্তু জন্ম লাহোরে। তার বেড়ে ওঠা পাঞ্জাবেই, লাহোরে। ফলে পাঞ্জাবি এলিটদের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে। অনেক পর্যবেক্ষকই এটা বলার চেষ্টা করছেন যে, দুই পরিবারের (ভুট্টো ও নওয়াজ শরিফ) বাইরে সেনাবাহিনী চেয়েছে এমন একজন ব্যক্তিকে, যার গ্রহণযোগ্যতা আছে, জনপ্রিয়তাও আছে। ইমরান খান এ কারণেই ছিলেন তাদের পছন্দের তালিকায়। পর্দার অন্তরালে থেকেই তাকে সেনাবাহিনী তৈরি করেছিল। একজন প্লে-বয় ইমেজের মানুষ ইমরান খান নিজেকে বদলে ফেলেছিলেন, ইসলামকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছিলেনÑ এসবই তিনি করেছিলেন ‘বিশেষ গোষ্ঠীর’ স্বার্থে। উদ্দেশ্য ছিল একটাইÑ পাকিস্তানি সমাজের উপযোগী করে তাকে তৈরি করা। ধর্ম যে পাকিস্তানের রাজনীতিতে একটি ফ্যাক্টর, এটা ইমরান খান উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই এক পর্যায়ে তিনি ধর্মীয় নেতা তথা পিরদের শরণাপন্ন হন। এ কথা পাকিস্তানে বহুল প্রচলিত যে, এই ধর্মীয় গুরুরাই তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন একজন মহিলা পির বুশরা মানিকাকে বিয়ে করার। পাঁচ সন্তানের জননী বুশরা মানিকা ছিলেন তার ধর্মীয় উপদেষ্টা। এমন কথাও শোনা যায় বুশরা নাকি ইমরান খানকে বলেছিলেন তিনি যদি তাকে বিয়ে করেন তাহলে তিনি অর্থাৎ ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন! এর পেছনে সত্যতা কতটুকু আছে বলা মুশকিল। তবে ২০১৮ সালে তার দলের পক্ষ থেকে এটা স্বীকার করা হয়েছিল যে, ইমরান বুশরা মানিকাকে বিয়ে করেছেন। বুশরার বোরকা পড়া ছবি (সম্ভবত পারিবারিক বিয়ে), যেখানে ইমরানও আছেন, এমন একটি ছবি ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া যায়। কোনো কোনো সংবাদে আমি এমনটাও দেখেছি যে, ইমরানকে বিয়ে করার জন্যই বুশরা মানিকা তার স্বামীকে তালাক পর্যন্ত দিয়েছিলেন!
ইমরান খানের জীবন কখনোই ধর্মীয় জীবন ছিল না। ১৯৯৫ সালে তিনি একজন ইহুদি ব্যবসায়ীর মেয়ে জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেছিলেন। তখন ইমরানের বয়স ৪৩, আর জেমিমার মাত্র ২১। এ বিয়ে টেকেনি। ২০০৪ সালে তাদের বিয়েবিচ্ছেদ ঘটে। এরপর তিনি বিয়ে করেন ব্রিটিশ পাকিস্তানি সাংবাদিক রেহাম খানকে। এ বিয়েও টেকেনি। রেহাম সম্প্রতি একটি বই লিখেছেন, যেখানে তিনি ইমরান খানের নানা অপকর্ম, বিশেষ করে বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার একাধিক সন্তান রয়েছে বলেও জানান রেহাম। এরপর তিনি যখন বুশরা মানিকাকে বিয়ে করেন, তখন নানা কথাবার্তা আকাশে-বাতাসে ভাসতে থাকে। ইমরান খানের যে ব্যক্তি ইমেজ, তার সঙ্গে বুশরা মানিকার ব্যক্তি ইমেজ মেলে না। বুশরা একজন পির, তার আসলে মুরিদ আছে, সেই পির ইমরানের স্ত্রী! এটা কোনোভাবেই মেলে না। কিন্তু তার দল পিটিআই যখন এই বিয়ের কথা স্বীকার করে (ডন, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮), তখন এ নিয়ে আর প্রশ্ন করার সুযোগ থাকে না।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনী একটি ফ্যাক্টর। একই সময় স্বাধীন হওয়া ভারত যখন একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্ম দেয়, সেখানে পাকিস্তানে এই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি কখনোই বিকশিত হয়নি। মাঝে মধ্যে একটি নির্বাচিত সরকার একটি আস্থার জায়গা তৈরি করলেও অসাংবিধানিক শক্তিগুলো সবসময়ই পর্দার অন্তরালে থেকে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এই অগণতান্ত্রিক শক্তিই ‘ডিপ স্টেট’ হিসেবে পরিচিত। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমরা এর একটি নতুন রূপ দেখলাম মাত্র। ইতিহাসের দিকে যদি তাকানো যায়, তাহলে দেখা যাবে, ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হয়েছিলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। জিন্নাহ একাধারে ছিলেন গভর্নর জেনারেল, মুসলিম লীগ সভাপতি ও সর্বোপরি জাতির পিতা। গভর্নর জেনারেল হয়েও তিনি মন্ত্রিপরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করতেন। পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন লিয়াকত আলী খান। স্বাধীনতার পর (১৯৪৭) পাকিস্তানে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও প্রধানমন্ত্রী বাহ্যত কোনো ক্ষমতা পরিচালনা করতে পারতেন না। জিন্নাহর আমলেই সরকারি কর্মকর্তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় ও জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা হ্রাস করা হয়। জিন্নাহর মৃত্যুর পর খাজা নাজিমুদ্দিন গভর্নর জেনারেল হন। ১৯৫১ সালে লিয়াকত আলী খানের মৃত্যুর পর খাজা নাজিমুদ্দিন প্রধানমন্ত্রী হন এবং গভর্নর জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হন গোলাম মোহাম্মদ। তখন থেকেই শুরু হয় ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। গোলাম মোহাম্মদ ছিলেন সরকারি আমলা ও অত্যন্ত উচ্চাকাক্সক্ষী। ১৯৫৩ সালের এপ্রিলে তিনি খাজা নাজিমুদ্দিনকে পদচ্যুত করেন। তিনি গণপরিষদ ভেঙেও দিয়েছিলেন (১৯৪৭ সালের ১০ আগস্ট গঠিত)। বিষয়টি শেষ অবধি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ালে, আদালত গোলাম মোহাম্মদের সিদ্ধান্তকে বৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন। ১৯৫৫ সালে দ্বিতীয় গণপরিষদ গঠনের পর ইসকান্দার মির্জা হন গভর্নর জেনারেল ও চৌধুরী মোহাম্মদ আলী হন প্রধানমন্ত্রী। এই ইসকান্দার মির্জাই পাকিস্তানে সামরিক শাসন আনেন। কিন্তু আইয়ুব খানের হাতেই তিন ক্ষমতাচ্যুত হন। তারপরের ইতিহাস তো সেনা শাসকদের ইতিহাস। আইয়ুব খান মৌলিক গণতন্ত্রের জন্ম দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৬৮ সালে গণঅভ্যুত্থানে তিনি ক্ষমতা ছেড়ে দেন আরেক জেনারেল ইয়াহিয়ার কাছে (১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ)। ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানে ১৯৭০ সালে নির্বাচন দিয়েছিলেন বটে; কিন্তু নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে না দেওয়ায় ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান গণহত্যা শুরু করায় পাকিস্তান ভেঙে যায়! মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করে। বাংলাদেশে গণহত্যায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে ছিলেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। তাকেও সেনাবাহিনী ফাঁসিতে চড়িয়েছিল। যে জিয়াউল হককে ভুট্টো সেনাপ্রধান করেছিলেন, সেই জিয়াউল হকের ক্ষমতার লোভ তাকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় রেখেছিল ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত। এই জিয়াউল হকের সময়ই ব্যবসায়ী নওয়াজ শরিফের আত্মপ্রকাশ ঘটে ‘রাজনীতিবিদ’ হিসেবে। ১৯৮৮ সালে বিমান দুর্ঘটনায় জিয়াউল হকের মৃত্যুর পর পাকিস্তানে কিছুদিনের জন্য হলেও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চালু হয়েছিল (১৯৮৮, ১৯৯০, ১৯৯৩, ২০১৩ সালের নির্বাচন)। কিন্তু অসাংবাধিক শক্তির কাছে গণতন্ত্র বারবার পরাজিত হয়েছে। বেনজির ভুট্টো কিংবা নওয়াজ শরিফ তিন-তিনবার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হলেও তারা কেউই পূর্ণ টার্ম শেষ করতে পারেননি। তবে ২০১৩ সালে কিংবা ২০০৮ সালের সরকার তাদের ৫ বছরের ম্যান্ডেট পূরণ করতে পেরেছিল। সেনাশাসক জেনারেল জিয়া নেওয়াজ শরিফকে ‘তৈরি’ করলেও সেই সেনাবাহিনীর করপোরেট স্বার্থের কারণেই ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর সেনাবাহিনী কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল ২০১৮ সালে। এবার সমতাচ্যুত হয়েছিলেন বিচার বিভাগ দ্বারা। শরিফ সেনাবাহিনীর কর্পোরেট স্বার্থে আঘাত করেছিলেন। তাই তাকে চলে যেতে হয়েছিল। এটা ইমরান খানের জন্যও একটা ভবিষ্যৎ শিক্ষা বটে। সেনাবাহিনী ইমরান খানকে ব্যবহার করেছে। তাকে ক্ষমতায় বসাতে যাচ্ছে। একসময় ‘প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে’ ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতেও দ্বিধাবোধ করবে না সেনাবাহিনী।
এখন ইমরান খানের সরকার গঠনের আগেই যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে কেমন হবে নয়া সরকার? কেমন হবে নয়া সরকারের পররাষ্ট্রনীতি? পাকিস্তানের জন্য কয়েকটি বিষয় বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এক. ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কী হবে? এ বিষয়ে ইমরান খান যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, কাশ্মীর হবে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ভিত্তি! অর্থাৎ তিনি স্পষ্ট করেছেন, কাশ্মীর প্রশ্নে তিনি ভারতকে কোনো ছাড় দেবেন না। এর অর্থ ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ব্যাপারে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে না। দুই. আফগানিস্তানে একটি শান্তি প্রক্রিয়া ও তালেবানদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা। সেনাবাহিনী আফগান ইস্যুতে একটি ভূমিকা রাখতে চায়। এই ইস্যুতে ইমরান খান নির্ভরশীল থাকবেন তাদের ওপর। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মনে করে, ভারত আফগান সরকারের ওপর প্রভাব খাটাচ্ছে। ফলে আগামীতে তালেবানদের সঙ্গে আদৌ কোনো আলোচনা হবে কি না, সে প্রশ্ন থাকলোই। এখানে আইএসও একটি ফ্যাক্টর। তিন. যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক কী হবে? অনেকেই স্মরণ করতে পারেন ইরামন খান একবার বলেছিলেন, পাকিস্তান সীমান্তে প্রবেশ করা যে-কোনো মার্কিন ড্রোন তিনি গুলি করে নামাবেন। তার বিভিন্ন বক্তব্যে একটি মার্কিন বিরোধিতা রয়েছে। ফলে মার্কিন প্রশাসন যে খুব খুশি হবে, তা মনে করার কোনো কারণ নেই। চার. ইমরান বলেছেন, তিনি চীনকে গুরুত্ব দেবেন। চীনের বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে পাকিস্তানে। পাকিস্তান তার অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে চীনের ওপর পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর পাকিস্তানের জন্য বিশাল সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। পাকিস্তানের অতিরিক্ত চীনের ওপর নির্ভরশীলতা ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রে ভিন্ন মেসেজ দেবে।
এটা স্পষ্ট, ইমরান খান তার পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা ইস্যুতে বেশিমাত্রায় সেনাবাহিনীর ওপর নির্ভরশীল থাকবেন। সেনাবাহিনীর স্বার্থহানি হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন না। এর অর্থ হচ্ছে, আগামী ৫ বছর পর্দার অন্তরালে থেকে সেনাবাহিনীই দেশটি চালাবে। একজন রাজনীতিবিদ ইমরান খান সেনাবাহিনীর এই প্রভাব থেকে কতটুকু বেরিয়ে আসতে পারবেন, সেটাই দেখার বিষয়। দুটি বড় দলকে তার আস্থায় নিতে হবে। এখানে আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলা দরকার। সেদিকে কতটুকু তিনি যাবেন, সেদিকেও লক্ষ থাকবে অনেকের। একজন ইমরান খানের ওপর পাকিস্তানের মানুষ আস্থা রেখেছে। তারা পরিবারতন্ত্রের বাইরে গিয়ে একজন সৎ মানুষের ওপর আস্থা রেখেছে। এখন দেখার পালা ইমরান খান সাধারণ মানুষের আস্থার কী প্রতিদান দেন
Daily Alokito Bangladesh
29.07.2018
পাকিস্তানের রাজনীতি বরাবরই নিয়ন্ত্রণ করেছেন ভূস্বামী তথা জমিদাররা, পরে আশির দশকে বড় ব্যবসায়ীরা রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন। সিন্ধুর জমিদার আর পাঞ্জাবের ধনী ব্যবসায়ীদের হাতেই ছিল রাজনীতির চাবিকাঠি। পাকিস্তানি রাজনীতিতে এ পাঞ্জাবি প্রাধান্য সেখানে নানা বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। পাঞ্জাবের রাজনীতিবিদরাই যে শুধু রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন, তেমনটি নয়। এমনকি সেনাবাহিনীও নিয়ন্ত্রণ করত পাঞ্জাবি জেনারেলরা। বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া পাঞ্জাবের জাট পরিবারের সন্তান হলেও তার জন্ম করাচিতে। একজন পাঞ্জাবি জেনারেলকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ সেনাপ্রধান হিসেবে বেছে নিলেও এই সেনাবাহিনীর সঙ্গে দ্বন্দ্বে তিনি ক্ষমতা হারিয়েছিলেন। সেনাবাহিনীর করপোরেট স্বার্থে তিনি আঘাত করেছিলেন, যা ছিল তার ক্ষমতা হারানোর অন্যতম কারণ। সেদিন পাঞ্জাবি জেনারেল বাজওয়া আরেকজন পাঞ্জাবি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পক্ষে দাঁড়াননি। পাঞ্জাবি প্রভাবাধীন রাজনীতি ও সেনাবাহিনীর বাইরে ইমরান খান কি শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারবেন? ইমরান খান একজন পাঠান; কিন্তু জন্ম লাহোরে। তার বেড়ে ওঠা পাঞ্জাবেই, লাহোরে। ফলে পাঞ্জাবি এলিটদের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে। অনেক পর্যবেক্ষকই এটা বলার চেষ্টা করছেন যে, দুই পরিবারের (ভুট্টো ও নওয়াজ শরিফ) বাইরে সেনাবাহিনী চেয়েছে এমন একজন ব্যক্তিকে, যার গ্রহণযোগ্যতা আছে, জনপ্রিয়তাও আছে। ইমরান খান এ কারণেই ছিলেন তাদের পছন্দের তালিকায়। পর্দার অন্তরালে থেকেই তাকে সেনাবাহিনী তৈরি করেছিল। একজন প্লে-বয় ইমেজের মানুষ ইমরান খান নিজেকে বদলে ফেলেছিলেন, ইসলামকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছিলেনÑ এসবই তিনি করেছিলেন ‘বিশেষ গোষ্ঠীর’ স্বার্থে। উদ্দেশ্য ছিল একটাইÑ পাকিস্তানি সমাজের উপযোগী করে তাকে তৈরি করা। ধর্ম যে পাকিস্তানের রাজনীতিতে একটি ফ্যাক্টর, এটা ইমরান খান উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই এক পর্যায়ে তিনি ধর্মীয় নেতা তথা পিরদের শরণাপন্ন হন। এ কথা পাকিস্তানে বহুল প্রচলিত যে, এই ধর্মীয় গুরুরাই তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন একজন মহিলা পির বুশরা মানিকাকে বিয়ে করার। পাঁচ সন্তানের জননী বুশরা মানিকা ছিলেন তার ধর্মীয় উপদেষ্টা। এমন কথাও শোনা যায় বুশরা নাকি ইমরান খানকে বলেছিলেন তিনি যদি তাকে বিয়ে করেন তাহলে তিনি অর্থাৎ ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন! এর পেছনে সত্যতা কতটুকু আছে বলা মুশকিল। তবে ২০১৮ সালে তার দলের পক্ষ থেকে এটা স্বীকার করা হয়েছিল যে, ইমরান বুশরা মানিকাকে বিয়ে করেছেন। বুশরার বোরকা পড়া ছবি (সম্ভবত পারিবারিক বিয়ে), যেখানে ইমরানও আছেন, এমন একটি ছবি ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া যায়। কোনো কোনো সংবাদে আমি এমনটাও দেখেছি যে, ইমরানকে বিয়ে করার জন্যই বুশরা মানিকা তার স্বামীকে তালাক পর্যন্ত দিয়েছিলেন!
ইমরান খানের জীবন কখনোই ধর্মীয় জীবন ছিল না। ১৯৯৫ সালে তিনি একজন ইহুদি ব্যবসায়ীর মেয়ে জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেছিলেন। তখন ইমরানের বয়স ৪৩, আর জেমিমার মাত্র ২১। এ বিয়ে টেকেনি। ২০০৪ সালে তাদের বিয়েবিচ্ছেদ ঘটে। এরপর তিনি বিয়ে করেন ব্রিটিশ পাকিস্তানি সাংবাদিক রেহাম খানকে। এ বিয়েও টেকেনি। রেহাম সম্প্রতি একটি বই লিখেছেন, যেখানে তিনি ইমরান খানের নানা অপকর্ম, বিশেষ করে বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার একাধিক সন্তান রয়েছে বলেও জানান রেহাম। এরপর তিনি যখন বুশরা মানিকাকে বিয়ে করেন, তখন নানা কথাবার্তা আকাশে-বাতাসে ভাসতে থাকে। ইমরান খানের যে ব্যক্তি ইমেজ, তার সঙ্গে বুশরা মানিকার ব্যক্তি ইমেজ মেলে না। বুশরা একজন পির, তার আসলে মুরিদ আছে, সেই পির ইমরানের স্ত্রী! এটা কোনোভাবেই মেলে না। কিন্তু তার দল পিটিআই যখন এই বিয়ের কথা স্বীকার করে (ডন, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮), তখন এ নিয়ে আর প্রশ্ন করার সুযোগ থাকে না।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনী একটি ফ্যাক্টর। একই সময় স্বাধীন হওয়া ভারত যখন একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্ম দেয়, সেখানে পাকিস্তানে এই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি কখনোই বিকশিত হয়নি। মাঝে মধ্যে একটি নির্বাচিত সরকার একটি আস্থার জায়গা তৈরি করলেও অসাংবিধানিক শক্তিগুলো সবসময়ই পর্দার অন্তরালে থেকে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এই অগণতান্ত্রিক শক্তিই ‘ডিপ স্টেট’ হিসেবে পরিচিত। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমরা এর একটি নতুন রূপ দেখলাম মাত্র। ইতিহাসের দিকে যদি তাকানো যায়, তাহলে দেখা যাবে, ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হয়েছিলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। জিন্নাহ একাধারে ছিলেন গভর্নর জেনারেল, মুসলিম লীগ সভাপতি ও সর্বোপরি জাতির পিতা। গভর্নর জেনারেল হয়েও তিনি মন্ত্রিপরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করতেন। পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন লিয়াকত আলী খান। স্বাধীনতার পর (১৯৪৭) পাকিস্তানে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও প্রধানমন্ত্রী বাহ্যত কোনো ক্ষমতা পরিচালনা করতে পারতেন না। জিন্নাহর আমলেই সরকারি কর্মকর্তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় ও জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা হ্রাস করা হয়। জিন্নাহর মৃত্যুর পর খাজা নাজিমুদ্দিন গভর্নর জেনারেল হন। ১৯৫১ সালে লিয়াকত আলী খানের মৃত্যুর পর খাজা নাজিমুদ্দিন প্রধানমন্ত্রী হন এবং গভর্নর জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হন গোলাম মোহাম্মদ। তখন থেকেই শুরু হয় ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। গোলাম মোহাম্মদ ছিলেন সরকারি আমলা ও অত্যন্ত উচ্চাকাক্সক্ষী। ১৯৫৩ সালের এপ্রিলে তিনি খাজা নাজিমুদ্দিনকে পদচ্যুত করেন। তিনি গণপরিষদ ভেঙেও দিয়েছিলেন (১৯৪৭ সালের ১০ আগস্ট গঠিত)। বিষয়টি শেষ অবধি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ালে, আদালত গোলাম মোহাম্মদের সিদ্ধান্তকে বৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন। ১৯৫৫ সালে দ্বিতীয় গণপরিষদ গঠনের পর ইসকান্দার মির্জা হন গভর্নর জেনারেল ও চৌধুরী মোহাম্মদ আলী হন প্রধানমন্ত্রী। এই ইসকান্দার মির্জাই পাকিস্তানে সামরিক শাসন আনেন। কিন্তু আইয়ুব খানের হাতেই তিন ক্ষমতাচ্যুত হন। তারপরের ইতিহাস তো সেনা শাসকদের ইতিহাস। আইয়ুব খান মৌলিক গণতন্ত্রের জন্ম দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৬৮ সালে গণঅভ্যুত্থানে তিনি ক্ষমতা ছেড়ে দেন আরেক জেনারেল ইয়াহিয়ার কাছে (১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ)। ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানে ১৯৭০ সালে নির্বাচন দিয়েছিলেন বটে; কিন্তু নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে না দেওয়ায় ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান গণহত্যা শুরু করায় পাকিস্তান ভেঙে যায়! মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করে। বাংলাদেশে গণহত্যায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে ছিলেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। তাকেও সেনাবাহিনী ফাঁসিতে চড়িয়েছিল। যে জিয়াউল হককে ভুট্টো সেনাপ্রধান করেছিলেন, সেই জিয়াউল হকের ক্ষমতার লোভ তাকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় রেখেছিল ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত। এই জিয়াউল হকের সময়ই ব্যবসায়ী নওয়াজ শরিফের আত্মপ্রকাশ ঘটে ‘রাজনীতিবিদ’ হিসেবে। ১৯৮৮ সালে বিমান দুর্ঘটনায় জিয়াউল হকের মৃত্যুর পর পাকিস্তানে কিছুদিনের জন্য হলেও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চালু হয়েছিল (১৯৮৮, ১৯৯০, ১৯৯৩, ২০১৩ সালের নির্বাচন)। কিন্তু অসাংবাধিক শক্তির কাছে গণতন্ত্র বারবার পরাজিত হয়েছে। বেনজির ভুট্টো কিংবা নওয়াজ শরিফ তিন-তিনবার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হলেও তারা কেউই পূর্ণ টার্ম শেষ করতে পারেননি। তবে ২০১৩ সালে কিংবা ২০০৮ সালের সরকার তাদের ৫ বছরের ম্যান্ডেট পূরণ করতে পেরেছিল। সেনাশাসক জেনারেল জিয়া নেওয়াজ শরিফকে ‘তৈরি’ করলেও সেই সেনাবাহিনীর করপোরেট স্বার্থের কারণেই ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর সেনাবাহিনী কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল ২০১৮ সালে। এবার সমতাচ্যুত হয়েছিলেন বিচার বিভাগ দ্বারা। শরিফ সেনাবাহিনীর কর্পোরেট স্বার্থে আঘাত করেছিলেন। তাই তাকে চলে যেতে হয়েছিল। এটা ইমরান খানের জন্যও একটা ভবিষ্যৎ শিক্ষা বটে। সেনাবাহিনী ইমরান খানকে ব্যবহার করেছে। তাকে ক্ষমতায় বসাতে যাচ্ছে। একসময় ‘প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে’ ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতেও দ্বিধাবোধ করবে না সেনাবাহিনী।
এখন ইমরান খানের সরকার গঠনের আগেই যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে কেমন হবে নয়া সরকার? কেমন হবে নয়া সরকারের পররাষ্ট্রনীতি? পাকিস্তানের জন্য কয়েকটি বিষয় বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এক. ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কী হবে? এ বিষয়ে ইমরান খান যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, কাশ্মীর হবে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ভিত্তি! অর্থাৎ তিনি স্পষ্ট করেছেন, কাশ্মীর প্রশ্নে তিনি ভারতকে কোনো ছাড় দেবেন না। এর অর্থ ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ব্যাপারে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে না। দুই. আফগানিস্তানে একটি শান্তি প্রক্রিয়া ও তালেবানদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা। সেনাবাহিনী আফগান ইস্যুতে একটি ভূমিকা রাখতে চায়। এই ইস্যুতে ইমরান খান নির্ভরশীল থাকবেন তাদের ওপর। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মনে করে, ভারত আফগান সরকারের ওপর প্রভাব খাটাচ্ছে। ফলে আগামীতে তালেবানদের সঙ্গে আদৌ কোনো আলোচনা হবে কি না, সে প্রশ্ন থাকলোই। এখানে আইএসও একটি ফ্যাক্টর। তিন. যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক কী হবে? অনেকেই স্মরণ করতে পারেন ইরামন খান একবার বলেছিলেন, পাকিস্তান সীমান্তে প্রবেশ করা যে-কোনো মার্কিন ড্রোন তিনি গুলি করে নামাবেন। তার বিভিন্ন বক্তব্যে একটি মার্কিন বিরোধিতা রয়েছে। ফলে মার্কিন প্রশাসন যে খুব খুশি হবে, তা মনে করার কোনো কারণ নেই। চার. ইমরান বলেছেন, তিনি চীনকে গুরুত্ব দেবেন। চীনের বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে পাকিস্তানে। পাকিস্তান তার অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে চীনের ওপর পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর পাকিস্তানের জন্য বিশাল সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। পাকিস্তানের অতিরিক্ত চীনের ওপর নির্ভরশীলতা ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রে ভিন্ন মেসেজ দেবে।
এটা স্পষ্ট, ইমরান খান তার পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা ইস্যুতে বেশিমাত্রায় সেনাবাহিনীর ওপর নির্ভরশীল থাকবেন। সেনাবাহিনীর স্বার্থহানি হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন না। এর অর্থ হচ্ছে, আগামী ৫ বছর পর্দার অন্তরালে থেকে সেনাবাহিনীই দেশটি চালাবে। একজন রাজনীতিবিদ ইমরান খান সেনাবাহিনীর এই প্রভাব থেকে কতটুকু বেরিয়ে আসতে পারবেন, সেটাই দেখার বিষয়। দুটি বড় দলকে তার আস্থায় নিতে হবে। এখানে আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলা দরকার। সেদিকে কতটুকু তিনি যাবেন, সেদিকেও লক্ষ থাকবে অনেকের। একজন ইমরান খানের ওপর পাকিস্তানের মানুষ আস্থা রেখেছে। তারা পরিবারতন্ত্রের বাইরে গিয়ে একজন সৎ মানুষের ওপর আস্থা রেখেছে। এখন দেখার পালা ইমরান খান সাধারণ মানুষের আস্থার কী প্রতিদান দেন
Daily Alokito Bangladesh
29.07.2018