রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

পাকিস্তানের গণতন্ত্র উর্দিতন্ত্র ও ভবিষ্যৎ রাজনীতি

কোন পথে যাবে এখন পাকিস্তান? গত ২৬ জুলাই সেখানে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু ওই নির্বাচন সেখানে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করল না, বরং এক ধরনের ‘উর্দিতন্ত্রের’ জন্ম দিয়েছে, যেখানে এখন পর্দার অন্তরালে থেকে সেনাবাহিনী আগামী পাঁচ বছর ক্ষমতা পরিচালনা করবে। একটি সংসদ সেখানে গঠিত হবে বটে; কিন্তু মূল ক্ষমতা থাকবে সংসদের হাতে নয়, বরং শীর্ষস্থানীয় জেনারেলদের হাতে। তাঁরা এমনটাই চেয়েছিলেন। তাঁদের এটা প্রয়োজন ছিল। এবং শেষ পর্যন্ত তাঁরা সফলও হলেন।
পাকিস্তানের এই নির্বাচন নতুন একটি ‘মডেল’ উপহার দিল পাকিস্তানবাসীকে। এত দিন সেনাবাহিনী সরাসরিই ক্ষমতা নিয়েছে। কখনো প্রেসিডেন্টকে ব্যবহার করে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে, কখনো উচ্চ আদালতকে ব্যবহার করে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচনপ্রক্রিয়ার বাইরে রেখেছে। পাকিস্তানের গত ৭১ বছরের ইতিহাসে একটা দীর্ঘ সময় সেনাবাহিনী সরাসরি দেশটি শাসন করেছে। কখনো কখনো বিরতি দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে; কিন্তু বেশির ভাগই তাদের নিজ নিজ টার্ম পূরণ করতে পারেনি। নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীরা প্রেসিডেন্ট কর্তৃক কখনো উত্খাত হয়েছেন, কখনো বা সরাসরি সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিয়েছে। বেনজির ভুট্টো কিংবা নওয়াজ শরিফ বারবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিন-তিনবার জনগণ তাঁদের ভোট দিয়ে সরকার পরিচালনা করার জন্য পাঠিয়েছিল। কিন্তু তাঁদের উত্খাত করা হয়েছিল। এমনকি সেনা শাসকরা জুলফিকার আলী ভুট্টোর মতো জনপ্রিয় নেতাদের ফাঁসিতে পর্যন্ত ঝুলিয়েছিল।
সেই স্ট্র্যাটেজিতে এবার কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। এবার সরাসরি ক্ষমতা দখল নয়, বরং এমন একটি দল ও তার নেতাকে তারা সামনে নিয়ে এসেছে, যাঁরা বাহ্যত ‘সিভিলিয়ান’ কিন্তু কার্যত সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি, বেসামরিক পোশাকে যাঁরা সেনাবাহিনীর হয়েই কাজ করবেন। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে সংসদই সব ক্ষমতার উৎস। জনগণের প্রতিনিধিরা জনগণের হয়ে সেখানে আইন প্রণয়ন করেন এবং তা প্রয়োগ করেন। এবার পার্লামেন্ট বা সংসদ এবং একটি ক্যাবিনেট গঠিত হতে যাচ্ছে বটে; কিন্তু রাওয়ালপিন্ডির সেনা সদর দপ্তরের হাতে থাকবে মূল ক্ষমতা, যাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা বাস্তবায়িত হবে সংসদে গৃহীত আইনের মধ্য দিয়ে। এটা উর্দিতন্ত্রের নতুন রূপ। সরাসরি ক্ষমতা গ্রহণ নয়, বরং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের এবং তাঁদের দলকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করা। সরাসরি নয়, বরং পর্দার অন্তরালে থেকে সেনাবাহিনীই এখন দেশকে পরিচালনা করবে! ইমরান খান ও তাঁর দল তেহরিক-ই-ইনসাফ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়েছে। সেনাবাহিনী তাঁকে ব্যবহার করেছিল অনেক আগে থেকেই। তাঁর একটি ব্যক্তিগত ইমেজ ছিল। ক্রিকেটে পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দেওয়া, বিশ্বক্রিকেটে পাকিস্তানকে বিজয়ী করা, মায়ের নামে ক্যান্সার হাসপাতাল করে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা, হঠাৎ করে পশ্চিমা লেবাস ছেড়ে ইসলামপন্থী হয়ে যাওয়া, পীরতন্ত্রের ভক্ত ও একজন পীরানিকে (ধর্মগুরু) বিয়ে করা—সবই ছিল পরিকল্পিত। ইমরান খান সেই ছকে পা দিয়েছিলেন। আর এখন ‘বিজয়ী’ হলেন!
পাকিস্তানের যে রাজনীতির ধারা, তাতে পর্দার অন্তরালে থেকেই সেনাবাহিনী ও বিচার বিভাগ বাহ্যত ক্ষমতা পরিচালনা করে আসছিল। শেষ পর্যন্ত তাদের হাতেই ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন নওয়াজ শরিফ। প্রথমে বিচার বিভাগ তাঁকে চলতি নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করেন এবং পরে ন্যাশনাল অ্যাকাউন্ট্যাবিলিটি ব্যুরোর মামলায় তিনি দণ্ডপ্রাপ্ত হন। নওয়াজ শরিফ শেষের দিকে তাঁর সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে কন্যা মরিয়মকে সামনে নিয়ে এসেছিলেন। অনেকটা জুলফিকার আলী ভুট্টো কর্তৃক কন্যা বেনজিরকে যেভাবে রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী হিসেবে ‘তৈরি’ করেছিলেন, নওয়াজ শরিফও মরিয়মকে সেভাবেই তৈরি করেছিলেন। মরিয়মেরও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা ছিল; কিন্তু এবার তিনি তা আর পারলেন না। মুসলিম লীগ এবার তাঁর আসনে নওয়াজের নাতি ও মরিয়মের জ্যেষ্ঠ সন্তানকে মনোনয়ন দিয়েছিল।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিচার বিভাগের ‘সখ্য’ নতুন কিছু নয়। নওয়াজের সঙ্গে সেনাবাহিনীর দ্বন্দ্বও অনেক পুরনো। তিন-তিনবার তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু কোনোবারই তিনি টার্ম পূরণ করতে পারেননি। এবারও পারলেন না। তবে এবারের প্রেক্ষাপটটা ছিল কিছুটা ভিন্নতর। নওয়াজের সঙ্গে সাবেক সেনাপ্রধান ও পরবর্তীকালে প্রেসিডেন্ট মোশাররফের দ্বন্দ্ব ছিল কাশ্মীর নিয়ে। ১৯৯০ ও ১৯৯৭—দু-দুবারই তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। পাকিস্তানের অন্যতম ‘রাজনৈতিক শক্তি’ সেনাবাহিনীর কাছে তিনি কখনোই গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন না। ১৯৯৩ সালের ১৮ এপ্রিল তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইসহাক খান তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করলেও পেছনে ছিল সেনাবাহিনী। ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর সেনাপ্রধানের সঙ্গে দ্বন্দ্বের পরিণতিতে তিনি সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। ২০১৩ সালের ১১ মের নির্বাচনে মুসলিম লীগ (নওয়াজ) বিজয়ী হলে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। কিন্তু এবারও পর্দার অন্তরালে সেনাবাহিনীই তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে। তবে সেনাবাহিনী এবার ব্যবহার করে বিচার বিভাগকে। সেনাবাহিনী তাঁকে সরাসরি ক্ষমতাচ্যুত করেনি কিংবা কোনো প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশে তিনি ক্ষমতা হারাননি।
পর্দার অন্তরালে থাকলেও এই অসাংবিধানিক শক্তিই মূলত ‘ডিপ স্টেট’ নামে পরিচিত। ‘ডিপ স্টেট’ বলতে বোঝায় ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা, গোয়েন্দা কর্মকর্তা, প্রশাসনিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিচার বিভাগের কিছু ব্যক্তি সরকারি নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় প্রচলিত যে রীতিনীতি তার বাইরে গিয়ে সরকারি নীতিতে প্রভাব খাটাতে চেষ্টা করেন। ‘ডিপ স্টেট’ কোনো একক ব্যক্তি নন, বরং প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন ব্যক্তির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি চক্র, যারা নীতি প্রণয়নে ও গ্রহণে প্রভাব খাটায় (২০১৬ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট শিবিরের বাইরে প্রভাবশালী একটি চক্র সক্রিয় ছিল)। পাকিস্তানে, বিশেষ করে আফগান সংকটের পর থেকেই সেনা আমলা, গোয়েন্দা আমলারা রাজনীতিতে বেশি মাত্রায় প্রভাব খাটাচ্ছেন। আর তাঁদের সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছেন বিচার বিভাগের কিছু বিচারপতি। তাঁদের কারণেই শেষ পর্যন্ত নওয়াজ শরিফ ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন। তবে তাঁর বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল তার কোনো সুস্পষ্ট জবাব তিনি কখনো দিতে পারেননি। পানামা কেলেঙ্কারিতে তিনি নিজে ও তাঁর সন্তানরা অভিযুক্ত হয়েছিলেন। তবে এবার একটি পার্থক্য লক্ষ করা যায়, আর তা হচ্ছে বিকল্প শক্তি হিসেবে ইমরান খান ও তাঁর দল তেহরিক-ই-ইনসাফকে (পিটিআই) সামনে নিয়ে আসা। সেনাবাহিনী যে ইমরান খানকে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাইছে, এটা ছিল দিবালোকের মতো স্পষ্ট।
পাঠক স্মরণ করতে চেষ্টা করুন, পাকিস্তানের রাজনীতিতে হঠাৎ করেই ইমরান খানের আবির্ভাব ঘটেছে। একজন সাবেক ক্রিকেটার, যিনি নিজে নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত এবং যৌন কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে নানা অভিযোগে অভিযুক্ত, তিনি হঠাৎ করে রাজনীতির মাঠে আবির্ভূত হয়েছিলেন একজন ‘রাজনীতিবিদ’ হিসেবে। ২০১৩ সালের নির্বাচনের আগে তাঁকে তৎপর দেখা যায়। এমনকি ২০১৩ সালে নওয়াজ শরিফের ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই পিটিআই ও তাহিরুল কাদরির নেতৃত্বে ইসলামাবাদ ঘেরাও করে সরকার পতনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন ইমরান খান, যদিও তাতে তিনি সফল হননি। কিন্তু সেনাবাহিনী তখন থেকেই ইমরান খানকে ব্যবহার করে নওয়াজ শরিফ সরকারকে চাপে রেখেছিল। শরিফের অবর্তমানে তাঁর ছোট ভাই শাহবাজ শরিফ মুসলিম লীগকে এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দলটি নির্বাচনে জিতলে তিনি হতেন পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী! কিন্তু সেনাবাহিনী তা মানেনি। এবং তাই ইমরান খানই হতে যাচ্ছেন পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। একসময়ে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) জনপ্রিয়তা ছিল। মূলত পিপিপি আর মুসলিম লীগ (নওয়াজ) পাকিস্তানে একটি দ্বি-দলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্ম দিয়েছিল। বেনজির ভুট্টোও তিন-তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনিও কখনো তাঁর টার্ম পূরণ করতে পারেননি। আত্মঘাতী বোমা হামলায় তাঁর মৃত্যু, স্বামী আসিফ জারদারির দুর্নীতি ও নেতৃত্বের ব্যর্থতা পিপিপিকে আজ তৃতীয় রাজনৈতিক দলে পরিণত করেছে। চলতি নির্বাচনে দলটির আসন বাড়েনি, তৃতীয় অবস্থানে আছে। বেনজিরের জ্যেষ্ঠ সন্তান বিলাওয়াল বর্তমানে পিপিপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন বটে; কিন্তু মায়ের মতো ক্যারিসমেটিক নেতৃত্ব তিনি সৃষ্টি করতে পারেননি। বয়সের কারণে ২০১৩ সালে তিনি প্রার্থী হতে পারেননি। এবার বিজয়ী হয়েছেন। কিন্তু গণজোয়ার তিনি সৃষ্টি করতে পারেননি। মি. টেন পারসেন্ট হিসেবে ‘খ্যাত’ আসিফ জারদারিও মাঠে আছেন। কিন্তু তাঁর জনপ্রিয়তাও শূন্যের কোঠায়। তবে তিনিও নির্বাচিত হয়েছেন।
ফলে পাকিস্তানের এই নির্বাচন নিয়ে একটা প্রশ্ন থাকলই। নওয়াজ শরিফ কারাদণ্ডাদেশ মাথায় নিয়েই মৃত্যুশয্যায় শায়িত স্ত্রীকে লন্ডনে রেখে পাকিস্তানে ফিরে এসে কারাজীবন বেছে নিয়েছেন। এতে তাঁর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে সন্দেহ নেই। কিন্তু তাঁর দল নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় ভবিষ্যতে নওয়াজ শরিফ আর ক্ষমতা ফিরে পাবেন বলে মনে হয় না। অন্যদিকে পিপিপি সিন্ধু প্রদেশভিত্তিক একটি আঞ্চলিক দলে পরিণত হয়েছে। সর্বপাকিস্তানভিত্তিক দলটির গণভিত্তি নেই। ফলে সেনাবাহিনীর স্ট্র্যাটেজি ছিল একটাই—ইমরান খান। ‘ডিপ স্টেট’ তাঁকেই বেছে নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে একটা কোয়ালিশন সরকার গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাঁর দলে যোগ দিতে পারেন। ২০১৩ সালের নির্বাচনের দিকে যদি তাকাই, তাহলে দেখতে পাব মুসলিম লীগ (নওয়াজ) পেয়েছিল ১২৬ আসন (নির্বাচনী আসন ২৭২), পিপলস পার্টি ৩৩ আর তেহরিক-ই-ইনসাফ ২৮ আসন। ১৭২ আসনের দরকার হয় সরকার গঠন করার জন্য। আঞ্চলিক ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি দল রয়েছে, যারা নওয়াজ শরিফের সঙ্গে মিলে সরকার গঠন করেছিল। সাধারণত ২৭২ আসনে নির্বাচন হয়। ৭০ আসন রিজার্ভ থাকে মহিলা ও ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর জন্য। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে এসব আসন বণ্টন করা হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে পিপিপি পেয়েছিল ১১৯ আসন, মুসলিম লীগ (নওয়াজ) পেয়েছিল ৮৯ আসন আর মুসলিম লীগ (কায়েদে আজম) পেয়েছিল ৫০ আসন।
এবার মুসলিম লীগের (কায়েদে আজম) বড় পরাজয় ঘটেছে। তার জায়গায় এসেছে ইমরান খানের  তেহরিক-ই-ইনসাফ। একসময় সেনাবাহিনীর দল ছিল ওই মুসলিম লীগ (কায়েদে আজম)। এখন পিটিআই বা তেহরিক-ই-ইনসাফ তাদের স্বার্থ রক্ষা করছে।
এই নির্বাচন পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করল না। মুসলিম লীগ (নওয়াজ) ও পিপলস পার্টি এবং সেই সঙ্গে একটি বড় ইসলামী অ্যালায়েন্স (মুত্তাহিদা মজলিস-ই-আমল) এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। ভোট কারচুপির অভিযোগ এনেছেন শাহবাজ শরিফ। কিন্তু এতে নির্বাচনী ফলাফলে কোনো পরিবর্তন আসবে না। তাঁরা সংসদে যাবেন। এর ফলে পাকিস্তানের রাজনীতিতে পরিবর্তন আসবে কতটুকু? ইমরান খান বলছেন, তিনি নতুন এক পাকিস্তান গড়বেন! কিন্তু নতুন এই পাকিস্তান কেমন হবে তার ব্যাখ্যা তিনি দেননি। সেনাবাহিনী এখন পর্দার অন্তরালে থেকে পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করবে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন নওয়াজ শরিফ। সেই সম্পর্ক এখন ‘স্ট্যাটাস কো’ অবস্থায় থাকবে। অর্থাৎ সম্পর্ক যেমন ছিল, তেমনই থাকবে! উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ, বরং অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে ভারতের সম্পৃক্ততার অভিযোগ(?), চাহবারে (ইরানের সিসতান বেলুচিস্তানে) একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, চাহবার-কাবুল সড়ক নির্মাণ, আফগানিস্তানে ভারতের বড় ভূমিকা (যা ট্রাম্প প্রশাসন চাইছে) ইত্যাদি কারণে পাকিস্তান-ভারত সম্পর্ক উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। আফগানিস্তানে শান্তিপ্রক্রিয়া এখন আরো পিছিয়ে গেল। সেখানে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার (আইএসআই) ভূমিকা আরো বাড়বে। অর্থনীতির বেহাল অবস্থার উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। চীনের ওপর নয়া সরকারের নির্ভরশীলতা আরো বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। তবে ইমরান খানের সঙ্গে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর সম্পর্ক (হাক্কানি নেটওয়ার্ক) এখন কোন পর্যায়ে যায়, সেটা দেখার বিষয়। ৯০০ কোটি রুপি খরচ করে যে নির্বাচনটি সম্পন্ন হলো, তা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করবে না, বরং আরো উন্নত গণতন্ত্রে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা পিছিয়ে গেল। পাকিস্তান একজন নয়া প্রধানমন্ত্রী পেতে যাচ্ছে বটে; কিন্তু এতে উত্ফুল্ল হওয়ার কোনো কারণ নেই।
Daily Kalerkontho
29.07.2018

0 comments:

Post a Comment