রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কোন পথে


আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির প্রেসিডেন্ট পিটার মাউরা একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন ৩ জুলাই। ঢাকায় আইসিআরসি দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার পরিবেশ তৈরি হয়নি। মাউরা মিয়ানমারের রাখাইনে কয়েকটি এলাকা ঘুরে বাংলাদেশে আসেন। প্রায় একই সময়ে বাংলাদেশে আসেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ও বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। এরাও সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। গুতেরেস রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আর বিশ্বব্যাংক ৪৮ কোটি ডলার সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। কিন্তু রোহিঙ্গারা কবে নাগাদ ফিরে যাবেন, এ ব্যাপারে কোনো সুস্পষ্ট আভাস পাওয়া যায়নি। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, গেল ২৩ নভেম্বর (২০১৭) মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছিল। পরবর্তী সময়ে ১৯ ডিসেম্বর দেশ দুটি একটি ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠন করে। এর মধ্য দিয়ে একটা ধারণার জন্ম হয়েছিল যে, বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গারা শেষ পর্যন্ত বোধ হয় নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন! কিন্তু ২৩ জানুয়ারি একটি তারিখ নির্ধারিত হলেও প্রত্যাবাসনের কাজটি শুরু হয়নি। আমরা বারবার বলে আসছি, মিয়ানমারের ওপর আস্থা রাখাটা সত্যিকার অর্থেই কঠিন। মিয়ানমার সনাতন কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চলে না। আমরা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, মিয়ানমার এর আগে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও সে প্রতিশ্রুতি তারা পালন করেনি। এ নিয়ে দুই দেশের মাঝে একাধিক বৈঠক হলেও তা কোনো ফল বয়ে আনেনি। কিছু রোহিঙ্গা তারা ফেরত নিয়ে গেছে; কিন্তু ব্যাপকসংখ্যক রোহিঙ্গা, যারা নিবন্ধিত নয়, তারা বাংলাদেশের মাটিতে রয়ে গিয়েছিলেন। এখন এর সঙ্গে যোগ হলো আরও সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গা। বাংলাদেশ এদের আশ্রয় দিয়ে নিঃসন্দেহে মানবতার পরিচয় দিয়েছিল। বাংলাদেশের এ ভূমিকা বিশ্বে প্রশংসিত হয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে একটি চুক্তি অথবা সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করা জরুরি ছিল। বাংলাদেশ সেটা করেছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের মানসিকতার যদি পরিবর্তন না হয়, তাহলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের মাটিতে থেকে যেতে পারে! সুতরাং মিয়ানমার সরকারের মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে, এটা আমরা বলতে পারি না। তাদের কোনো কার্যকলাপে তা প্রমাণিতও হয় না। সেজন্য একটা আশঙ্কা এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে যে, মিয়ানমার তথাকথিত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে কালক্ষেপণ করছে! এই কালক্ষেপণের স্ট্র্যাটেজি তাদের অনেক পুরানো। এবারও এমনটি হতে যাচ্ছে! ২৩ জানুয়ারি একটি তারিখ নির্ধারিত হলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আজ অবধি শুরু হয়নি। রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার পর ১১ মাস পার হয়েছে। এ ১১ মাসে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আন্তর্জাতিক ভিআইপি বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। তুরস্কের ফার্স্টলেডি, পোপ ফ্রান্সিস, মার্কিন কংগ্রেস প্রতিনিধি দলসহ একাধিক ব্রিটিশমন্ত্রী বাংলাদেশে এসেছিলেন। সবাই আশা করেছিলেন রোহিঙ্গারা ফিরে যাবেন। আন্তর্জাতিক কমিউনিটির চাপে শেষ অবধি এপ্রিলে একজন মিয়ানমারের মন্ত্রীও বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনিও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া হবে। কিন্তু এ ব্যাপারে আদৌ কোনো অগ্রগতি নেই। আর এখন এলেন তিনজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তারা ঢাকায় এসে রোহিঙ্গা প্রশ্নে যেসব মন্তব্য করেছেন, তা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আইসিআরসির প্রেসিডেন্ট যখন বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরার কোনো পরিবেশ নেই, তখন এটা স্পষ্ট হয়ে যায়, মিয়ানমারের আসল উদ্দেশ্যটি কী। তারা কালক্ষেপণ করছে এবং আন্তর্জাতিক কমিউনিটিকে বিভ্রান্ত করছে। এখন জাতিসংঘের মহাসচিব বলছেন, ‘চাপ’ প্রয়োগের কথা। কিন্তু এই ‘চাপ’ প্রয়োগ কীভাবে হবে? নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হবে বলেও মনে হয় না। কেননা চীন ও রাশিয়ার সমর্থন তাতে পাওয়া যাবে না। উত্তর কোরিয়া ও ইরানের ব্যাপারে নিরাপত্তা পরিষদ অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারের ওপর একটা ‘চাপ’ আছে। উপরন্তু পোপ ফ্রান্সিস ‘রাখাইনের নির্যাতিত ভাইবোনের’ পক্ষে কথা বলেছিলেন। সেক্ষেত্রে মিয়ানমারের পক্ষে রোহিঙ্গাদের আবিষ্কার করা সহজ হবে না। তারা রাখাইন স্টেটের নির্যাতনের খবর অস্বীকার করবেন কীভাবে? অ্যান্তোনিও গুতেরেসের ঢাকা সফরের পর রোহিঙ্গা সংকটের আন্তর্জাতিক মাত্রাটা আরও বাড়ল। আমাদের কাজটি হবে এখন আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারের ওপর ‘চাপ’ প্রয়োগ আরও দ্রুত করা। আন্তর্জাতিক কমিউনিটি আমাদের পক্ষে। এখন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টও আমাদের পক্ষে দাঁড়ালেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এর মাধ্যমে তারা উভয়েই অন্তত একটি মেসেজ দিলেন বিশ্ব সম্প্রদায়কে। আমাদের কাজটিই হবে এখন তাদের এ মেসেজটি ধারণ করে আন্তর্জাতিক আসরে রোহিঙ্গা প্রশ্নে জনমত গড়ে তোলা। রাষ্ট্রদূতদের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীও এ রকম আহ্বান জানিয়েছিলেন। একদিকে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা অব্যাহত রাখা, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক আসরে মিয়ানমারের ওপর ‘চাপ’ প্রয়োগ অব্যাহত রাখাÑ এভাবেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশ সফর করে গেলেন। এ সফরের অনেক ইতিবাচক দিক আছে। বাংলাদেশ যে একটি শান্তি ও সম্প্রীতির দেশ, সেই মেসেজটি তিনি বিশ্ববাসীকে দিলেন। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের ফেরত নেবে। এ স্বীকারোক্তি তাদের আছে। কমিটমেন্টও আছে। এখন তথাকথিত ‘ভেরিফিকেশন’ এর নামে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন প্রক্রিয়া যেন আটকে না যায়! এক্ষেত্রে মিয়ানমারের আন্তরিকতাই হলো আসল। মিয়ানমার যেন তাদের আন্তরিকতা প্রদর্শন করে, সে ব্যাপারে আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে আমাদের স্বার্থে ‘ব্যবহার’ করতে হবে। এজন্য কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো জরুরি। পোপ, গুতেরেস আর কিমের ঢাকা সফরের পর আন্তর্জাতিক আসরে আমাদের অবস্থান এখন অনেক শক্তিশালী। তাই ওয়াশিংটন, ব্রাসেলস ও বেইজিংয়েও আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। আমাদের প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ে রোহিঙ্গা প্রশ্নে নীতিগতভাবে কিছুু পরিবর্তন এসেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা নির্যাতনকে গণহত্যার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। দু-একজন মার্কিন সিনেটরের বক্তব্যেও এমনটি ফুটে উঠেছে। এখন মিয়ানমার যদি দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় কালক্ষেপণের উদ্যোগ নেয়, আমরা মার্কিন আইন, প্রণেতা ও প্রশাসনকে ব্যবহার করতে পারব। চীনের নীতিতেও ‘কিছু পরিবর্তন’ লক্ষণীয়। চীন এখন দ্বিপক্ষীয় আলোচনাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় এসে বলে গিয়েছিলেন, প্রয়োজনে চীন মধ্যস্থতা করতে পারে! বাংলাদেশে চীনের প্রচুর বিনিয়োগ রয়েছে। বাংলাদেশ বরাবরই বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়। মিয়ানমারের বহুল আলোচিত সেনাবাহিনীপ্রধান রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পরপরই বেইজিং সফর করেছিলেন। এর পরপরই মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বেইজিং সফর করেছেন। গুতেরেসের ঢাকা সফরের পর বিশ্বমিডিয়া রোহিঙ্গাদের করুণ কাহিনি আরও প্রকাশ করেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এর আগে জানিয়েছিল, রোহিঙ্গা ইতিহাস মুছে ফেলতে চাইছে মিয়ানমার। টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, মিয়ানমারের স্বাধীনতার শুরুর দিকে বিশিষ্ট রোহিঙ্গারা বেড়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছিলেন। দেশটির শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ে রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীদের আলাদা একটি ইউনিয়নও ছিল। স্বাধীনতার পর দেশটির প্রথম নেতা উনুর মন্ত্রিসভাতেও একজন সদস্য ছিলেন রোহিঙ্গা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করা সেই মন্ত্রীও নিজে আরাকান মুসলিম হিসেবেই পরিচয় দিতেন। এমনকি জেনারেল নে উইনের সময়ও মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় বেতার থেকে রোহিঙ্গা ভাষায় অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হতো। সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্ব ছিল(No such Thing as Rohingya : Myanmar Erases a History, New York Times, 2 December 2017)। নিউইয়র্ক টাইমসের ওই প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের বাস্তব ইতিহাসটিই ফুটে উঠেছিল। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ইতিহাস কতটুকু মুছে ফেলতে পারবে, তা হয়তো আগামী দিনের ইতিহাস বলবে। কিন্তু এভাবে একটি জনগোষ্ঠীকে পরিপূর্ণভাবে উচ্ছেদ করে নতুনভাবে ইতিহাস লেখা যায় না। হিটলার জামার্নিতে পারেননি। মিলোসোভিচ বসনিয়ায় পারেননি। টালর্স টেলরও পারেননি লাইবেরিয়াতে। দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা আফ্রিকার রুয়ান্ডাতেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেখানেও শাসকরা ব্যর্থ হয়েছিলেন। তাই যত দ্রুত মিয়ানমারের নেতাদের মাঝে এ উপলব্ধিবোধটুকু আসবে, ততই মিয়ানমারের জন্য মঙ্গল। গুতেরেসের সাম্প্রতিক ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে তিনি আরও একবার এ মেসেজটিই দিয়ে গেলেন। বাংলাদেশের উচিত হবে এখন আন্তর্জাতিক আসরে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো। মিয়ানমার যে কালক্ষেপণ করছে, এটা বোঝানোই হবে আমাদের প্রধান কূটনীতি। বিশ্ব সম্প্রদায়কে এটা বোঝানো যে, রোহিঙ্গাদের মাঝে ক্ষোভ আছে। এখন এ ক্ষোভকে যদি প্রশমিত করা না যায়, তাহলে এ অঞ্চল ক্রমেই অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। এখানে জঙ্গিবাদ বিস্তার করবে। এ ধরনের সম্ভাবনা আছে বলে পশ্চিমা পর্যবেক্ষকরা আভাস দিয়েছেন। সিরিয়া থেকে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস উৎখাত হয়েছে। এরা আশ্রয় নিয়েছে ফিলিপাইনসের মিন্দানাওয়ে। সেখানকার ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে একত্রিত হয়ে তারা ‘ইসলামি খেলাফত’ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সুতরাং আমাদের যেমন সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, ঠিক তেমনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটা একধরনের সতর্কবার্তা। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা বাড়ছে। এ অঞ্চল ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। একদিকে দক্ষিণ চীন সাগর, অন্যদিকে ভারত মহাসাগর, যেখানে চীনের নৌবাহিনীর তৎপরতা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চিন্তার কারণ। সম্ভাব্য চীনের ভূমিকাকে সামনে রেখে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র স্ট্রাটেজিক অ্যালায়েন্স গড়ে উঠছে। এক্ষেত্রে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার এ অঞ্চলে উপস্থিতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। মিয়ানমারে চীনের স্বার্থ রয়েছে, এটা যেমন সত্য, তেমনি এটাও সত্য, রাখাইন উপকূল অঞ্চল থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে চীন ইউনান প্রদেশে যে গ্যাস নিয়ে যাচ্ছে, সে পাইপলাইনও ঝুঁকির মাঝে থাকতে পারে। স্মরণ করা প্রয়োজন, চীন মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে যে বিশাল একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করেছিল (জলবিদ্যুৎ), তা স্থানীয় আদিবাসীদের বিক্ষোভের মুখে বাতিল হয়েছে। এখন রোহিঙ্গা অসন্তোষে যদি এ পাইপলাইন প্রজেক্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তা চীনের অর্থনীতিতে আঘাত হানবে। উপরন্তু চীনের উইঙ্গোর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে স্থানীয় মুসলমানদের নিয়ে সমস্যায় আছে চীন। রোহিঙ্গা মুসলমানদের ব্যাপারে একধরনের সহমর্মিতা আছে উইঙ্গোর মুসলমানদের। এতে করে সেখানেও অসন্তোষ বাড়তে পারে। এ কারণেই রোহিঙ্গা প্রশ্নে চীনের মনোভাবের কিছু পরিবর্তন এসেছে।সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বসছে। বাংলাদেশের জন্য এটা একটা সুযোগ। জাতিসংঘের মহাসচিবের বক্তব্য অনুসরণ করে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সদস্যদের মাঝে রোহিঙ্গা প্রশ্নে একটি জনমত তৈরি করতে পারে। এখন থেকে তাই প্রস্তুতিটি দরকার।
Daily Kalerkontho
08.07.2018

0 comments:

Post a Comment