রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

রুশ-মার্কিন সম্পর্ক কোন পথে

গত ১৬ জুলাই হেলসিংকিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঐতিহাসিক বৈঠকটির পর যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে রুশ-মার্কিন সম্পর্ক এখন কোন পথে? যদিও শীর্ষ বৈঠকটির পর পুতিন ও ট্রাম্প যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অতীতকে এক পাশে ঠেলে একত্রে হাঁটার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন; কিন্তু দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক কোন পর্যায়ে উন্নীত হয়, সে ব্যাপারে প্রশ্ন আছে অনেক। অনেক ইস্যু রয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার স্বার্থ পরস্পরবিরোধী, সে ব্যাপারে দুই নেতা কোনো স্পষ্ট বক্তব্য দেননি।
২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এখন তদন্ত হচ্ছে। এরই মধ্যে এফবিআইয়ের সাবেক প্রধান রবার্ট মুলারের নেতৃত্বে একটি তদন্তদল ১২ জন রুশ গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে অভিযুক্ত করেছে। এমনকি এসব তদন্তে ট্রাম্প নিজেও জড়িয়ে যেতে পারেন। অনেকের স্মরণ থাকার কথা, ২০১৬ সালের নভেম্বরের আগে হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপের জন্য রুশ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেটা নিয়ে এখন বিতর্ক কম হয়নি। পুতিনের ব্যাপারে খোদ রিপাবলিকান শিবিরেও বড় আপত্তি রয়েছে। কয়েকজন রিপাবলিকান সিনেটর বৈঠকটি বাতিলেরও আহ্বান জানিয়েছিলেন। যদিও সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ও পুতিন দুজনই স্বীকার করেছেন যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো ধরনের রুশ হস্তক্ষেপ হয়নি। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদন যদি সত্য হয়, তাহলে এই শীর্ষ বৈঠক আদৌ কোনো ফল বয়ে আনবে না। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার ব্যাপারে ট্রাম্পের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। কেননা পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের আগে তিনি ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি জার্মানি সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, জার্মানি পুরোপুরিভাবে রাশিয়া দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। জার্মানি রাশিয়ার গ্যাস ক্রয় করে রাশিয়াকে ধনী দেশে পরিণত করছে। এর পরপরই তিনি পুতিনের সঙ্গে দেখা করে তাঁর প্রশংসা করলেন। ট্রাম্প তাঁর ইউরোপ সফরে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন। ন্যাটোর প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি স্নায়ুযুদ্ধকালীন অবস্থায় ফিরে যাওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছেন। ফলে পুতিনের সঙ্গে তাঁর বৈঠকটি নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই।
শুধু প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বরাদ্দ বাড়ানোই নয়, বরং ট্রাম্প প্রশাসন বাণিজ্য নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে এক ধরনের বিবাদে জড়িয়ে গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক পণ্যের ওপর (ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি) যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে। এটা নিয়ে এক ধরনের বিবাদ এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে ইউরোপে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর এই সফরে ব্রিটেনেও গিয়েছিলেন। ব্রিটেনে তিনি বড় ধরনের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন। তাঁর বাণিজ্যনীতি, অভিবাসননীতি তাঁকে ব্রিটেনে বিতর্কিত করছে। অনেকের মনে থাকার কথা, বেশ কিছুদিন আগে লন্ডনের মেয়র সাদিক খান ঘোষণা করেছিলেন, ট্রাম্প লন্ডনে অনাকাঙ্ক্ষিত। সাদিক খানের এই বক্তব্যের জন্য কি না জানি না, লন্ডনে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। তবে ট্রাম্পের এই ইউরোপীয় সফরের উল্লেখযোগ্য দিক ছিল প্রথমবারের মতো পুতিনের সঙ্গে তাঁর শীর্ষ বৈঠক। এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে ছিল সারা বিশ্ব। সিঙ্গাপুরে কিম জং উনের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের পর হেলসিংকি বৈঠকটি (ট্রাম্প-পুতিন) যেকোনো বিবেচনায় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। বিভিন্ন ইস্যুতে দেশ দুটি পরস্পরবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে (২০১৬) রাশিয়ার পরোক্ষ হস্তক্ষেপ, সিরিয়ায় আসাদের পক্ষাবলম্বন ইত্যাদি কারণে দেশ দুটির মধ্যে বড় ধরনের আস্থাহীনতার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষুদ্র আকারের পরমাণু বোমা তৈরি করার, যা কিনা বিশ্বে পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে উসকে দেওয়ার একটা আশঙ্কা তৈরি করেছে। এই যখন পরিস্থিতি তখন ব্রিটেন প্রথমে ২৩ জন রুশ কূটনীতিককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিল। অভিযোগে ছিল ব্রিটেনে বসবাসরত একসময়ের রুশ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য সার্গেই স্ক্রিপালকে হত্যার! স্ক্রিপাল ছিলেন ডাবল এজেন্ট। তিনি রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করলেও, একই সঙ্গে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাকেও তথ্য সরবরাহ করতেন তিনি। তাই স্ক্রিপালকে যখন নার্ভ গ্যাস প্রয়োগ করে হত্যার প্রচেষ্টা চালানো হয় তখন অভিযোগ ওঠে রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে। ব্রিটেনের এই সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ। তারা সবাই মিলে ১৩৯ জন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে রাশিয়া বহিষ্কার করে ১৫০ জন পশ্চিমা কূটনীতিককে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের কূটনীতিকরাও ছিলেন। এই বহিষ্কার ও পাল্টা বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে নতুন করে দুই দেশের মধ্যে (যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া) উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, এর মধ্য দিয়ে নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা হতে পারে।
স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয়েছিল আজ থেকে ২৭ বছর আগে। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয়েছিল। একটা সময় ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, যখন ইউরোপে প্রভাববলয় বিস্তারের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে দুই পরাশক্তির মধ্যে এক ধরনের ‘যুদ্ধের’ আশঙ্কার জন্ম হয়েছিল। দীর্ঘ সময় ওই পরিস্থিতি বহাল ছিল, যা ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছে স্নায়ুযুদ্ধ হিসেবে। কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধের দীর্ঘ সময়ে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, যেখানে দুই পরাশক্তির কাছে যে পারমাণবিক অস্ত্র ছিল, তা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এ ক্ষেত্রে আরো কিছু উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ১২২টি দেশ পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল। এখন ৫০টি দেশ চুক্তিটি অনুমোদন করলেই ৯০ দিন পর এটি কার্যকর হবে। তবে এই চুক্তি বয়কট করেছে যুক্তরাষ্ট, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। পরমাণু যুদ্ধ এড়াতে সাত দশকের প্রচেষ্টার পর প্রথমবারের মতো পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধ করতে বৈশ্বিক ওই চুক্তিটি হয়েছিল। জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ দেশের আলোচকরা ১০ পাতার চুক্তিটি চূড়ান্ত করেছিলেন। চুক্তির পক্ষে পড়েছিল ১২২টি ভোট। একটি ভোট পড়েছে বিপক্ষে। দেশটি হচ্ছে নেদারল্যান্ডস। সিঙ্গাপুর ভোটদানে বিরত ছিল।
পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া ছিল না। এখন ট্রাম্প-পুতিন আলোচনায় প্রশ্নটি উঠেছে। Vox News আমাদের জানিয়েছিল যে শীর্ষ বৈঠকে New START চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণে দুই পক্ষ START চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল ২০১১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। ওই চুক্তিতে দুই পক্ষের পারমাণবিক অস্ত্র পরিদর্শনের সুযোগ ছিল; যদিও ওই চুক্তিটি ২০২১ সাল পর্যন্ত কার্যকর রয়েছে। তবে তা আরো পাঁচ বছর বাড়ানোর সুযোগ আছে। কিন্তু ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন, ওই চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে ছিল এবং তিনি আর তা নবায়ন করবেন না। ফলে ট্রাম্প-পুতিন আলোচনার পর New START চুক্তি নিয়ে দুই পক্ষ আদৌ কোনো সমঝোতায় উপনীত হবে কি না, সে প্রশ্ন থাকলই। কেননা এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো তথ্য কোনো পক্ষ থেকেই দেওয়া হয়নি। দুই নেতা একান্তে বৈঠক করেছেন কোনো সহকারী ছাড়াই। তবে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, আগামী দিনে দুই পক্ষ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈঠক করবে। যখন ট্রাম্প প্রশাসন ছোট আকারের পারমাণবিক বোমা তৈরির উদ্যোগ নেয় তখন START চুক্তি নিয়ে কতটুকু সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হবে, এ প্রশ্ন থাকলই।
পারমাণবিক অস্ত্রের পাশাপাশি সিরিয়া ও ইউক্রেন প্রশ্নে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এক ধরনের মতপার্থক্য রয়েছে। সিরিয়ায় রাশিয়ার হস্তক্ষেপের কারণেই আসাদ সরকার টিকে যায়, যা যুক্তরাষ্ট্রের মনঃপূত নয়। যুক্তরাষ্ট্র আসাদ সরকারের পতন চেয়ে আসছে এবং আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদের সমর্থন করছে। এর বাইরে রয়েছে ইউক্রেন পরিস্থিতি। ইউক্রেন নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে এক ধরনের ঠাণ্ডা লড়াই চলছে। ইউক্রেনে ইয়ানোকোভিচ সরকারের পতন ঘটেছিল ২০১৪ সালে। অভিযোগ আছে, ইয়ানোকোভিচ, যিনি ছিলেন মস্কোঘেঁষা, তাঁর পতন তথা উত্খাতের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের একটা বড় ভূমিকা ছিল। রাশিয়া এখন পূর্ব ইউক্রেনে তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করছে এবং ইউক্রেনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট পেট্রো প্রোসেনকোকে উত্খাতের উদ্যোগ নিতে পারে। একই সঙ্গে চীন-রাশিয়া সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি ট্রাম্পের জন্য চিন্তার কারণ। সার্গেই স্ক্রিপালের হত্যার ঘটনায় পশ্চিমা বিশ্ব যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, চীন তার সমালোচনা করেছিল। চীন কোনো মার্কিন কূটনীতিককে বহিষ্কার করেনি সত্য; কিন্তু নৈতিকভাবে রাশিয়ার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল।
রুশ-মার্কিন সম্পর্কের অবনতি কারো জন্যই কোনো ভালো খবর নয়। প্রেসিডেন্ট পুতিন ক্ষমতায় থাকবেন ২০২৪ সাল পর্যন্ত। সুতরাং পুতিনকে আস্থায় নিয়েই বিশ্বে স্থিতিশীলতা আসবে। পারমাণবিক ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে। আস্থাহীনতার সম্পর্ক বৃদ্ধি পেলে তা বিশ্বে উত্তেজনা ছড়াবে মাত্র। স্নায়ুযুদ্ধ বিশ্বে কোনো মঙ্গল ডেকে আনেনি। সুতরাং নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম হলে তা-ও কোনো মঙ্গল ডেকে আনবে না।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ট্রাম্পকে নিয়ে। তিনি এক ধরনের আগ্রাসী নীতি নিয়ে চলতে পছন্দ করেন। ট্রাম্প-উন (উত্তর কোরিয়ার নেতা) শীর্ষ বৈঠক আয়োজনে চীনের একটি বড় ভূমিকা থাকলেও, চীনের সঙ্গে এক ধরনের ‘বাণিজ্যযুদ্ধে’  তিনি জড়িয়ে গেছেন। কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও তিনি একই ধরনের আচরণ করছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি খুব স্বাভাবিকভাবেই মস্কোকে কাছে পেতে চাইবেন। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার উদ্যোগ যদি তিনি না নেন, যদি মস্কোর সঙ্গে এক ধরনের সহাবস্থানে না যান (সিরিয়া, ইউক্রেন ও পারমাণবিক অস্ত্র প্রশ্নে), তাহলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়বেই। এর ফলে চীন-রাশিয়া ঐক্য আরো শক্তিশালী হবে এবং স্নায়ুযুদ্ধ-২-এর আশঙ্কা আরো বাড়বে। এরই মধ্যে ট্রাম্প রাশিয়ার প্রশ্নে কিছুটা হলেও নতি স্বীকার করেছেন। হেলসিংকিতে যেখানে তিনি বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন না রাশিয়া ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছিল, সেখানে ওয়াশিংটনে ফিরে এসে শেষ পর্যন্ত তিনি স্বীকার করে নিলেন রাশিয়া নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছিল (ফিন্যানশিয়াল টাইমস, ১৮ জুলাই)। তাঁর এই স্বীকারোক্তি রুশ-মার্কিন সম্পর্কের ওপর এখন প্রভাব ফেলতে পারে। এমনিতেই ট্রাম্প এখন নানা জটিলতায় জড়িয়ে আছেন। চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে তিনি যে এক ধরনের ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ শুরু করেছেন, তা যুক্তরাষ্ট্রকেই বিশ্ব আসরে একাকী করছে। এফবিআইয়ের তদন্তের তিনি মুখোমুখি হতে পারেন। অনেক কংগ্রেসম্যান তাঁর নেতৃত্বের সমালোচনা করেছেন। অভিবাসী ইস্যু, বিশেষ করে শিশুদের তাদের মা-বাবার কাছ থেকে পৃথক করা তাঁকে আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত করেছে। তিনি পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করে অভ্যন্তরীণ ইস্যুকে অন্যদিকে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এখানেও তিনি ব্যর্থ।
সিঙ্গাপুরে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠক শেষ পর্যন্ত ‘ফটোসেশনে’ পরিণত হয়েছিল। ওই বৈঠকের পর সেখানে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের ব্যাপারে অগ্রগতি কম। এখন পুতিনের সঙ্গে ঐতিহাসিক বৈঠকটিও আরেকটি ‘ফটোসেশনের’ জন্ম দিতে যাচ্ছে! স্পষ্টতই রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধ থেকে যাচ্ছে, যা কিনা নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম দেবে মাত্র।
Daily Kalerkontho
22.07.2018

0 comments:

Post a Comment