রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কোন পথে



প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শাসনামলে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে কিছুটা উন্নতি পরিলক্ষিত হলেও অতিসম্প্রতি চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে দু-দেশের সম্পর্কে অবনতি হয়েছে। মার্কিন মিডিয়ায় এটাকে ‘ট্রেড ওয়ার’ বা বাণিজ্যযুদ্ধ নামে অভিহিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি এমন যে, একদিকে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কথা বলছে, এর পাল্টা হিসেবে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কথা বলছে। ফলে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা একধরনের বাগ্যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে তা বিশ্ববাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রথমে ৫০ বিলিয়ন ডলারের সমস্থানের চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। পরবর্তী সময়ে তিনি আরও ২০০ বিলিয়ন ডলার চীনা পণ্যের ওপর কর আরোপ করবেন বলে হুমকি দেন। এমনকি তৃতীয় ধাপে আরও ২০০ বিলিয়ন ডলারের চীনা পণ্যের ওপর কর আরোপ করা হবে বলেও আভাস দেন। এর প্রতিক্রিয়ায় চীন যে বসে থাকবে না, এটা ছিল স্বাভাবিক। চীন একই সঙ্গে মার্কিনি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে। এর মধ্য দিয়ে দেশ দুটি একধরনের ‘বাণিজ্যিক যুদ্ধে’ লিপ্ত হলো। এটা ভুলে গেলে চলবে না, যুক্তরাষ্ট্র যে শুধু চীনের সঙ্গেই বাণিজ্যিক বিরোধে জড়িয়ে পড়ছে তা নয়; বরং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, কানাডা এবং মেক্সিকোর সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্র বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। এই ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ শুরু হয়েছিল যখন ট্রাম্প প্রথমে চীনা ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কথা বলেন। এরপর তিনি ইইউর ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপরও একইভাবে অতিরিক্ত করারোপ করেন। ফলে চীনের পাশাপাশি ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গেও ট্রাম্প বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। এর প্রতিফলন আমরা দেখেছি সদ্যসমাপ্ত জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনেও। ট্রাম্প কানাডায় সদ্য শেষ হওয়া জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো সম্পর্কেও বিরূপ মন্তব্য করেন। জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র যৌথ ইশতেহারে স্বাক্ষর করেনি।এখানে পাঠকদের একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যিক সম্পর্ক চীনের অনুকূলে। অর্থাৎ চীন যুক্তরাষ্ট্রে তার পণ্য বেশি রপ্তানি করে, আমদানি করে কম। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র চীনে রপ্তানি করেছে ৪২২৯১.৫ মিলিয়ন ডলারের পণ্য, আর চীন থেকে আমদানি করেছে ১৬১৩৪২.৪ মিলিয়ন। ঘাটতি এই ৪ মাসে ১১৯০৫০.৯ মিলিয়ন ডলার। আমরা যদি ২০১৭ সালের পরিসংখ্যান দিই, তাতে দেখা যায় এই ঘাটতি ৩৭৫৫৭৬.৪ মিলিয়ন ডলার (যুক্তরাষ্ট্রের চীনে রপ্তানি ১২৯৮৯৩.৬ মিলিয়ন, আমদানি ৫০৫৪৭০ মিলিয়ন)। ২০১৬ সালে ঘাটতি ছিল ৩৪৬৯৯৬.৫ মিলিয়ন ডলার (রপ্তানি ১১৫৫৪৫.৫, আমদানি ৪৬২৫৪২ মিলিয়ন)। বেশ কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র এ ঘাটতির সম্মুখীন হয়ে আসছে। ঘাটতি কমাতে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্র এখন যে দেশগুলোর সঙ্গে ‘বাণিজ্যিক যুদ্ধে’ জড়িয়ে যাচ্ছে, তার প্রতিটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ঘাটতি রয়েছে। আমরা বিষয়টি বোঝার জন্য কয়েকটি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে পারি। সাধারণত ২০টি দেশকে ধরা হয়, যার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ভালো। এই ২০টি শিল্পোন্নত দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র রপ্তানি করে মোট রপ্তানির শতকরা ৭৬ দশমিক ৬ ভাগ, আর মোট আমদানির শতকরা ৮১ ভাগ। যুক্তরাষ্ট্রের কমার্স ডিপার্টমেন্ট থেকে দেখা যায়, (২০১৪) যুক্তরাষ্ট্র ইইউতে রপ্তানি করেছে ১৪৫৪৬২৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য, আর ওইসব দেশ থেকে আমদানি করেছে ২১৮৮৯৪০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। এখানে ঘাটতি ৭৩৪৩১৬ মিলিয়ন ডলার। এখন ইইউর সঙ্গেই বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কানাডার সঙ্গেও বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাটতি ১১২৪০ মিলিয়ন ডলার (রপ্তানি ২৬৬৮২৭ মিলিয়ন, আর আমদানি ২৭৮০৬৭ মিলিয়ন)। মেক্সিকোর সঙ্গে ঘাটতি ৬৩১৯২ মিলিয়ন (রপ্তানি ২৩০৯৫৯ মিলিয়িন, আমদানি ২৯৪১৫১ মিলিয়ন)। জাপানের সঙ্গে ঘাটতি ৬৮৯৩৮ মিলিয়ন ডলার (রপ্তানি ৬৩২৬৪ মিলিয়ন, আমদানি ১৩২২০২ মিলিয়ন)। শুধু যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, ব্রাজিল, বেলজিয়াম, সিঙ্গাপুর, হংকং ইত্যাদি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য উদ্ধৃত রয়েছে।কিন্তু সবকিছু ছাড়িয়ে এখন চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি মিডিয়ায় এই বাণিজ্য বিরোধ নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই লেখা হচ্ছে। ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ যদি প্রলম্বিত হয়, তাহলে চীন যুক্তরাষ্ট্রের বদলে অন্যত্র ‘বাজার’ খুলে দিতে পারে। চীনের জন্য সয়াবিন আর মাংসের বাজার হতে পারে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা; অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা যদি চীনা বাজার হারিয়ে ফেলেন, এ বাজার যুক্তরাষ্ট্রের কৃষক কোথায় পাবেন? প্রকারান্তরে তো তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে! চীনের পথ ইইউ, কানাডা ও মেক্সিকোও অনুসরণ করতে পারে। তখন? প্রশাসনের ওপর তখন কি কৃষক প্রেশার খাটাবেন না? রাজনীতিবিদরা তখন ট্রাম্পের ওপর প্রেশার খাটাবেন। কংগ্রেস প্রেসিডেন্টকে ‘চাপ’ দেবে। চীনকে হালকাভাবে নেওয়া ট্রাম্প প্রশাসনের ঠিক হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় করপোরেট হাউজগুলোর স্বার্থ রয়েছে চীনে। অ্যামাজন, ওয়ালমার্ট, জিএমের মতো কোম্পানি যেসব পণ্য মার্কিন নাগরিকদের কাছে বিক্রি করে, তার বলতে গেলে পুরোটাই আসে চীন থেকে। অ্যাপলের পণ্য তৈরি হয় চীনে। অন্যদিকে জিএম গাড়ির কথাই ধরা যাক। এটা মার্কিন গাড়ি প্রতিষ্ঠান। জিএম গাড়ি যেখানে খোদ যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হয় ৩০ লাখ, সেখানে ৪০ লাখ গাড়ি বিক্রি হয় চীনে। এখন জিএম চীনে তার ব্যবসা হারানোর ঝুঁকিতে থাকবে। চিন্তা করুন স্টারবাক্্স কফি, কেএফসি ফাস্টফুড, ম্যাকডোনাল্ড কিংবা শেরাটন-হিল্টনের হোটেল চেনগুলো চীনে ব্যবসা করছে। এই ব্যবসা এখন বড় ধরনের ঝুঁকিতে থাকবে। এরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করে চীনে। চীন যদি ‘প্রতিশোধ’ হিসেবে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে, এ ধরনের ব্যবসায় ক্ষতি হবে। ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এই ক্ষতি তো এরা সহজে মেনে নেবে না। এসব আমেরিকান ব্যবসায়িক করপোরেট হাউজগুলোর ক্ষতির মানে হচ্ছে মার্কিনি অর্থনীতির ক্ষতি। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেরই ক্ষতি নয়, বরং বিশ্ব অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়বে। আলজাজিরার অনলাইন পোর্টালে একটি মতামত দিয়েছেন রিচার্ড জাভেদ হেডারিয়ান ((The Global implications of Trump’s Trade war))। ওই নিবন্ধে তিনি বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক রবার্টো আজেভেদের উদ্ধৃতি দিয়েছেন, যেখানে তিনি এই বাণিজ্যযুদ্ধকে ÔCatastropheÕ’ বা বিপর্যয়কারী ঘটনা হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং এটি একটি ‘কঠিন’ সিদ্ধান্ত বলেছেন। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক এই বাণিজ্যযুদ্ধ রোধ করতে তার সংস্থা কাজ করবে বলেও জানান। আরেক অর্থনীতিবিদ নমি প্রিন্স (Nomi Prins) The Nation পত্রিকায় লিখিত এক প্রবন্ধে আগামীতে এক মহামন্দার আভাস দিয়েছেন (Donald Trump’s Trade wars could lead to the Next Great Depression)। তিনি লিখেছেন, এ রকম একটি ঘটনা ১৯২০ সালের দিকে ঘটেছিল, যার পরিণতিতে ১৯২৯ সালের দিকে বড় ধরনের মন্দার সৃষ্টি হয়েছিল। এই মন্দার কারণেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো ঘটনার জন্ম হয়েছিল। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের করারোপ এবং বাকি দেশগুলোর পাল্টা করারোপ কোনো ভালো খবর নয়। যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছ থেকে ঋণ নেয়। মার্চ (২০১৮) পর্যন্ত এই ঋণের পরিমাণ ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এই ঋণের পরিমাণ জাপান থেকে নেওয়া ঋণের (১ দশমিক ০৪ ট্রিলিয়ন ডলার) চেয়ে বেশি। এই ঋণ দিনে দিনে বাড়ছেই। যদিও ২০১৩ সালে এই ঋণের পরিমাণ ছিল ১.৩০ ট্রিলিয়ন ডলার। এই ঋণ যুক্তরাষ্ট্র কমাতে পারছে না। ফলে যুক্তরাষ্ট্র যদি চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক দ্বন্দ্বে আরও বেশি জড়িয়ে যায়, তাহলে চীনের ঋণ একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। এখানে চীনের একটা প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের যে প্রতিক্রিয়া হবে, তা চীন তার মুদ্রার (ইউয়ান) মান কমিয়ে মোকাবিলা করতে পারবে। শতকরা ২৫ ভাগ হারে যুক্তরাষ্ট্র কর আরোপ করলে ১৫ ভাগ হারে মুদ্রার মান কমিয়ে দেবে চীন। তাতে প্রতিক্রিয়া হবে কম। চীনের জনগণ অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া মোকাবিলা করতে জানে, যা হয়তো আমেরিকার জনগণের জন্য মোকাবিলা করা কঠিন। নাফটা নিয়েও সমস্যা আছে। নাফটার দুই সদস্য কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গেও ট্রাম্প প্রশাসন বিরোধে জড়িয়ে গেছে। কানাডা ও মেক্সিকো এখন মার্কিন পণ্যের ওপর অতিরিক্ত করারোপের কথা বলছে। যুক্তরাষ্ট্র হুমকি দিয়ে আসছে যে, দেশটি নাফটা থেকে প্রত্যাহার করে নেবে। এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি তা করেন, তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেম্বারস অব কর্মাসের মতে, ২৬ লাখ লোক যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি হারাবে। আর বিখ্যাত ব্রুকিংস ইনস্টিটিউট একটি গবেষণায় দেখিয়েছে, যদি ১০ ভাগ হারে করারোপ করা হয়, তাহলে অনেক দেশেরই জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ থেকে ৪.৫ ভাগ হারে হ্রাস পাবে। যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবে ১.৩ ভাগ হারে এবং চীনের হ্রাস পাবে ৪.৩ ভাগ। আর করারোপ যদি ৪০ ভাগ হয় (ট্রাম্প বলেছেন শতকরা ২৫ ভাগ), তা বিশ্ব অর্থনীতিকে মহামন্দার দিকে নিয়ে যাবে। এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অর্থনৈতিক উপদেষ্টরা তাকে কী উপদেশ দিয়েছেন, তা বলতে পারব না; কিন্তু জাপানি কার নির্মাতারা যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি তৈরির যে উদ্যোগ নিয়েছিল, তা এখন বাধাগ্রস্ত হবে। এবং প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার লোক যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি হারাবেন। জাপানি উদ্যোক্তারা তাদের গাড়ি তৈরির কারখানা অন্য দেশে সরিয়ে নেবে। ট্রাম্প অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ব্যাপারে যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে, এতে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরির বাজার সৃষ্টি হবে। কিন্তু চীন ও জাপানি বিনিয়োগকারীরা যদি তাদের কারখানা মেক্সিকো কিংবা ইউরোপে সরিয়ে নেয় (ফ্রান্স), তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে তো বেকার সমস্যা বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্র যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কথা বলছে, তা কার্যকর হবে আগামী ৬ জুলাই থেকে। কিন্তু তার আগেই এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ আশঙ্কা করছে যে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০১৮ সালে ২.৮ ভাগে থাকলেও ২০১৯ সালে এই প্রবৃদ্ধি প্রথম দিকে ২.৪ ভাগে ও শেষে দিকে ২ ভাগে নামতে পারে। তখন বেকারত্বের হার ৩.৮ ভাগে গিয়ে দাঁড়াবে। যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় কোম্পানি ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে যে, তারা কর্মী ছাঁটাই করবে। সব মিলিয়ে এই বাণিজ্যযুদ্ধ একটি বড় আতঙ্ক তৈরি করেছে। যে সংকট তৈরি হতে যাচ্ছে, তা মোকাবিলা করার জন্য স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করা জরুরি। তুলনামূলক বিচারে বাংলাদেশের অর্থনীতি ছোট। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বাংলাদেশের অনুকূলে। অর্থাৎ বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে বেশি, আমদানি করে কম। যেমন ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত যে পরিসংখ্যান পাই, তাতে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে এই চার মাসে রপ্তানি করেছে ৫৯৯.৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য; আর আমদানি করেছে ২০৩৭.৩ মিলিয়ন। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের ঘাটতি ১৪৩৭.৯ মিলিয়ন ডলার (২০১৭ সালে মোট ঘাটতি ছিল ৪২১৩.৫ মিলিয়ন ডলার)। এখন বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হলে তা নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে। সুতরাং বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবা উচিত। মন্ত্রণালয়ের উচিত এই মুহূর্তেই একটি টাস্কফোর্স গঠন করা, যাতে কর্মপন্থা গ্রহণ করা সহজ হয়। মনে রাখতে হবে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীন, ইইউসহ অন্যান্য দেশ বাণিজ্যিক দ্বন্দ্বে আবারও আক্রান্ত হবে। সে ক্ষেত্রে আমরা কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব এবং ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কী কর্মপন্থা নেওয়া প্রয়োজন, সে ব্যাপারে এখন থেকেই কাজ শুরু করা দরকার। এই ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ বিশ্ব অর্থনীতির জন্য কোনো ভালো খবর নয়। ডালাস, যুক্তরাষ্ট্রDaily Alokito Ba
02.07.2018

0 comments:

Post a Comment