রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

বাইডেনের সামনে আন্তর্জাতিক রাজনীতির চ্যালেঞ্জগুলো

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যখন আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ নিয়ে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করবেন, তখন তাকে বিশ্ব রাজনীতির অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এর মাঝে আছে বেশ কিছু আঞ্চলিক রাজনীতি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি হিসেবে আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ভূমিকা কাম্য। যেমন কয়েকটি আঞ্চলিক এবং সেই সঙ্গে বৈশ্বিক রাজনীতির কথা আমরা উল্লেখ করতে পারি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এ মুহূর্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইয়েমেন সংকট আন্তর্জাতিক পরিসরে ব্যাপক আলোচিত হলেও সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটের ইয়েমেনের বিরুদ্ধে বিমান হামলা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এ বিমান হামলায় সেখানে এক অমানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। হাজার হাজার শিশু ওষুধের অভাবে ইতোমধ্যে মারা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র সেখানে মানবিক সাহায্য শুরু করবে- এ প্রত্যাশা সবার। মার্কিন কংগ্রেস একটি War Powers Resolution পাস করলেও ট্রাম্প তাতে ভেটো দেন। এ আইনের মাধ্যমে কংগ্রেস ইয়েমেন যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্পের সৌদি আরব প্রীতির কারণে যুদ্ধ বন্ধ করা যায়নি। বাইডেন প্রশাসনের এখন দায়িত্ব হবে সৌদি আরব ও আরব আমিরাতে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের উদ্যোগ নেয়া। আরব আমিরাত লিবিয়ায় জেনারেল হাফতারের বাহিনীকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করায় লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধের কোনো সমাধান হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রে Leahy Law অনুযায়ী সেদেশের কোনো অস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওইসব দেশে কোনো অস্ত্র রফতানি করতে পারবে না, যে দেশগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত। অথচ এ আইন ভঙ্গ করে আরব আমিরাতের সঙ্গে ২৪ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি করেছিলেন ট্রাম্প প্রশাসন। আমিরাত যেখানে ইয়েমেনে গণহত্যার সঙ্গে জড়িত সেখানে আইন অনুযায়ী (Leahy Law) আমিরাতে অস্ত্র বিক্রি করা যাবে না। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের Arms Export Control Act অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র কোনো দেশকে ওই দেশের নিজের নিরাপত্তা ও সীমান্ত রক্ষার জন্যই শুধু অস্ত্র বিক্রি করতে পারবে। কিন্তু সৌদি আরব ও আরব আমিরাতে বিক্রি করা অস্ত্র নিজ দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যবহৃত হয়নি। ব্যবহৃত হয়েছে ইয়েমেনে গণহত্যায়। বাইডেন প্রশাসনকে এখন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু কাজটি সহজ নয়। কারণ অভিযোগে আছে, সৌদি আরব ও আরব আমিরাত ইসরাইলের স্বার্থে কাজ করছে। এখন বাইডেন প্রশাসন ইসরাইলি স্বার্থের বিরুদ্ধে যেতে পারবে কিনা, সেটাই দেখার বিষয়। ভুলে গেলে চলবে না, নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হারিসের স্বামী ইহুদি ধর্মাবলম্বী এবং কমলা হারিস অতীতে একাধিকবার ইসরাইলের স্বার্থে কথা বলেছেন। ইউটিউবে তার বক্তৃতা আছে, যেখানে কমলা হারিস ইসরাইলের নিরাপত্তার স্বার্থে ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহ ও দেশটির নিরাপত্তার পক্ষে কথা বলেছেন। এখন বাইডেন কি তার ভাইস প্রেসিডেন্টকে অস্বীকার করতে পারবেন? মনে হয় না। শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, বাহরাইনসহ কয়েকটি আরব দেশের সঙ্গে ইসরাইলের রাজনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। ট্রাম্পের এই নীতি ইসরাইলে জনপ্রিয় হলেও ফিলিস্তিনিরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর করে ট্রাম্প ইসরাইলের সরকারি সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছিলেন। অথচ ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারে তিনি কোনো উদ্যোগ নেননি। ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য নীতি ছিল প্রো-ইসরাইলি, অর্থাৎ ইসরাইল ঘেঁষা। কিন্তু বাইডেন কি তা অনুসরণ করবেন? বাইডেনের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে একটি বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করার। তিনি কী করবেন সেটাই এখন দেখার বিষয়। মধ্যপ্রাচ্য সংকটের সঙ্গে ইরান প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের সঙ্গে ছয় জাতি পারমাণবিক চুক্তি (Joint Comprehensive Plan of Action- JCPOA) থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত জার্মানি মেনে নেয়নি। অথচ জার্মানি JCPOA-এর সদস্য। এখানে প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র আবারও JCPOA চুক্তিতে ফিরে যাবে। ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের বিরুদ্ধে কিছু অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছিল। ইরান কোভিড-১৯ মোকাবেলায় আইএমএফ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্পের বিরোধিতার কারণে ওই পরিমাণ অর্থ ছাড় করা হয়নি। এখন বাইডেন যদি অর্থ ছাড়করণের অনুমতি দেন, তাহলে তা ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পথে কিছুটা অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হবে। বাইডেন আরও যেসব বিষয় বিবেচনায় নেবেন, তার মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়-ইনের ‘Permanent Peace Regime’-এর ব্যাপারে উদ্যোগ, রাশিয়ার সঙ্গে নতুন START আলোচনা শুরু এবং ট্রাম্প প্রশাসনের বিলিয়ন ডলারের পারমাণবিক কর্মসূচি স্থগিত করা, ছয়টি মুসলমানপ্রধান দেশের ব্যাপারে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা বাতিল করা, কিউবার ব্যাপারে ওবামা প্রশাসনের নীতিতে ফিরে যাওয়া ও দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করা, সামরিক খাতে ব্যয় বরাদ্দ কমানো, সামরিক খাতে ব্যয় বরাদ্দ কমানোর ব্যাপারে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য বারবারা লি প্রস্তাবিত বিলের প্রতি সমর্থন দিয়ে (বছরে এ খাতে বাজেট ৩৫০ বিলিয়ন ডলার কমানো) প্রতিরক্ষা বাজেটে অর্থের পরিমাণ কমিয়ে ওই পরিমাণ অর্থ স্বাস্থ্য খাতে, শিক্ষায়, ক্লিন এনার্জিতে বরাদ্দ করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্র আবার যোগ দেবে এবং কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী একটি ভূমিকা রাখবে। ট্রাম্পের ‘একলা চলো’ নীতি যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব নেতৃত্ব থেকে অনেক পেছনে ফেলে দিয়েছিল। এখন যুক্তরাষ্ট্রকে তার আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে হবে। সবাই জানে, ইউরোপ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেডিশনাল মিত্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পশ্চিম ইউরোপে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে সমর্থন করা ও অব্যাহত ‘সোভিয়েত ভীতি’কে সামনে রেখে সামরিক জোট ন্যাটো গঠন করা এবং সমাজতন্ত্রের হাত থেকে পশ্চিম ইউরোপকে রক্ষা করা- এসব ছিল মার্কিন স্ট্র্যাটেজির অংশ। ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের আগ পর্যন্ত এ স্ট্র্যাটেজিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। কিন্তু ট্রাম্পের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ সম্পর্কের কিছুটা ক্ষতি হয়। ন্যাটোর সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী মোতায়েনে যে ব্যয় হয়, তা ওইসব দেশকে বহন করতে হবে বলে দাবি করেছিলেন ট্রাম্প, যা কিনা ওই দেশগুলো মেনে নেয়নি। ফলে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও ক্ষতি হয়। একই সঙ্গে পশ্চিম ইউরোপে উৎপাদিত পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসন অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছিল, যা পশ্চিম ইউরোপের নেতৃবৃন্দ মেনে নেননি। ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি হওয়ার এটাও ছিল অন্যতম কারণ। ট্রাম্পের উত্থান ইউরোপ এবং ব্রাজিলের মতো দেশে ‘পপুলিজম’ বা জনতুষ্টিবাদের জন্ম দিয়েছে। ইউরোপে ভিক্টর উরবান (হাঙ্গেরি), জারোসলাভ কাজানিস্ক্রি (পোল্যান্ড), জানেজ জানসা (স্লোভেনিয়া), বরিস জনসন ও নাইজেল ফারাজ (ব্রিটেন), মারিয়া লি পেন (ফ্রান্স), জেইর বলসোনারো (ব্রাজিল) ও মাথিও সালভিনির (ইতালি) মতো নেতার উত্থান ঘটেছিল, যারা ট্রাম্পের আদর্শকে ধারণ করে নিজ নিজ দেশে ‘উগ্র জাতীয়তাবাদের’ জন্ম দিয়েছেন। তারা নিজ দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে ধ্বংস করেছেন। তাদের ব্যাপারে বাইডেন প্রশাসনের ভূমিকা কী হবে, তাও লক্ষ করার বিষয়। একই সঙ্গে চীনের ব্যাপারেও সদ্য গঠিত রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপের (আরসিইপি) বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের ভূমিকা হবে অন্যতম আলোচিত বিষয়। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলো এর সদস্য। এখানে বলা ভালো, জো বাইডেন একজন সিনেটর হিসেবে পররাষ্ট্রনীতি সংক্রান্ত সিনেট কমিটিতে কাজ করে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তিনি ২০০১-০৩ ও ২০০৭-০৯ মেয়াদে দু’দুবার সিনেট ফরেন রিলেশনস কমিটির সদস্য ছিলেন। ফলে বৈদেশিক সম্পর্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সম্পর্কে তার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ আলোকেই বলা যায়, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল সম্পর্কে তিনি যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। এখন দেখার পালা এ অঞ্চলে তিনি কীভাবে মার্কিন স্বার্থ আদায়ে উদ্যোগী হবেন। চীন বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি। সাধারণ হিসেবে বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতি হচ্ছে চীনের (১৪.১৪ ট্রিলিয়ন ডলার)। চীন তার ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ কর্মসূচির আওতায় ৬৪টি দেশকে এককাতারে নিয়ে এসেছে। এর মধ্য দিয়ে চীন তার প্রভাব বলয় বিস্তার করছে বলে অনেকে মনে করেন। যদিও এটা ঠিক, অতীতে চীন কখনও কোনো ঔপনিবেশিক শক্তি ছিল না। দেশটির আধিপত্য বিস্তারের কোনো ইতিহাসও নেই। কিন্তু মার্কিন নীতিনির্ধারকরা চীনের এ কর্মসূচির ব্যাপারে সন্দিহান। ফলে মার্কিন নীতিনির্ধারকদের কাছে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে তাদের সামরিক উপস্থিতি খুবই জরুরি। এ অঞ্চলে অবস্থিত দক্ষিণ চীন সাগরের গুরুত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অনেক বেশি। দক্ষিণ চীন সাগরের স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে অর্থনৈতিক গুরুত্বও। দক্ষিণ চীন সাগরে তেলের রিজার্ভ রয়েছে ১১ দশমিক ২ বিলিয়ন ব্যারেল, আর গ্যাসের রিজার্ভ রয়েছে ১৯০ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট। চীন ইতোমধ্যে দক্ষিণ চীন সাগরে তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। এর মধ্যে দিয়ে চীনের জ্বালানি চাহিদা অনেকটাই মিটবে। যুক্তরাষ্ট্রও চায় এই জ্বালানি সম্পদের ভাগিদার হতে। সুতরাং এখানেও একটা চীন-যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ বাণিজ্যিক ও মালবাহী জাহাজ দক্ষিণ চীন সাগরের জলপথ ব্যবহার করে চলাচল করে। এ কারণেই এই সমুদ্রপথের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় বেইজিং, যা মার্কিন স্বার্থকে আঘাত করতে পারে। তাই চীনকে মোকাবেলা করতে জাপানকে সব ধরনের সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য প্রদান করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। কোরীয় উপদ্বীপের রাজনীতি আরেকটি কারণ। উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক শক্তি হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ভয়টা ওই দেশকে নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ চীনের সমুদ্রপথ ব্যবহার করে তার নৌবাহিনীকে প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবেশ করাতে পারে, যা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি সামরিক কৌশলগত জলসীমা হিসেবে বিবেচিত। যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরিকল্পনা রয়েছে ভারত মহাসারগীয় অঞ্চলে ৬০ ভাগ সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করায়। এক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসন এ ধরনের পরিকল্পনা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে বলে মনে হয় না। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, বাইডেন অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপর গুরুত্ব দেবেন বেশি। জো বাইডেনের এশিয়া নীতি আলোচনা করতে গেলে অবশ্যই Regional Comprehensive Economic Partnership (RCEP) নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। গত ১৫ নভেম্বর আসিয়ান সম্মেলনে এই মুক্ত বাণিজ্য জোটটি গঠিত হয়। তবে মনে রাখতে হবে চীনের সঙ্গে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার ব্যাপারে আসিয়ান নেতৃবৃন্দ ২০১২ সাল থেকেই আলোচনা চালিয়ে আসছিলেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য শুল্ক কমানো, সরবরাহ শৃঙ্খলা শক্তিশালী করা এবং ই-কমার্সের জন্য নতুন বিধিবিধান চালু করা। আরসিইপির অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো হচ্ছে আসিয়ানভুক্ত ১০টি দেশ এবং সেই সঙ্গে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশ জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। তবে এটি কার্যকর হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। কারণ চুক্তিভুক্ত দেশগুলোর সংসদে তা অনুমোদিত হতে হবে। নানা কারণে আরসিইপি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী এবং এক-তৃতীয়াংশ জিডিপি এ বাণিজ্য চুক্তির আওতায় আসবে। চুক্তিবদ্ধ ১৫টি দেশে বাস করে ২২০ কোটি মানুষ। একটি বড় বাজার। বৈশ্বিক জিডিপিতে অঞ্চলটির সম্মিলিত অবদান ৩০ শতাংশের বেশি। দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ২৬ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলার। কোভিড-১৯-পরবর্তী যে বিশ্বব্যবস্থা গড়ে উঠছে এবং চীনের নেতৃত্বে যে নতুন এক ‘বিশ্বায়ন’ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, আরসিইপি এক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা রাখবে। এখানে বলা ভালো, এ অঞ্চলে ঘিরে ওবামা প্রশাসনের আমলে টিপিপি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প ওই চুক্তি থেকে ২০১৭ সালে বেরিয়ে এসেছিলেন। ট্রাম্প বিশ্বকে একটি অস্থিরতার জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে এখন জো বাইডেনকে ফিরে আসতে হবে। চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ বা বিআরআই (বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ)-এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির একটা সমন্বয় প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বাইডেন যদি ট্রাম্পের নীতি অনুসরণ করেন, যদি চীনকে ‘একঘরে’ করার ট্রাম্পের নীতি সমর্থন করে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করেন, তাহলে চীন-মার্কিন দ্বন্দ্ব বাড়বে বৈ কমবে না। বাইডেন তার ‘America Back’ ধারণার কথা বলেছেন। এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা তিনি না দিলেও প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবেন। এ থেকে ফিরে আসবেন না (গার্ডিয়ান, ২৫ নভেম্বর)। এখন দেখার বিষয়, বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তিনি উঠতি শক্তিগুলো, বিশেষ করে চীনের সঙ্গে আদৌ কোনো দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যান কিনা। Jugantor 29.11.2020

0 comments:

Post a Comment