রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

গাজা হত্যাকাণ্ডে বৃহৎ শক্তির নীরব সমর্থন!

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের ১৫ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরও সেখানে ইসরাইলিদের হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত রয়েছে। সেখানে ইসরাইলি সেনা প্রবেশ করেছে এবং শহরটি বাহ্যত একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গাজা এখন কার্যত একটি মৃত্যুনগরী। মৃত্যুর সংখ্যা প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়ে গেছে। এ সংখ্যা কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা কেউ বলতে পারে না। তবে দুঃখজনক হচ্ছে, ইসরাইলি বোমায় প্রতিদিনই শিশু ও নারী মারা গেলেও পশ্চিমা বিশ্ব পালন করছে অদ্ভুত এক নীরবতা! ইউক্রেনে একটি মালয়েশিয়ান বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় জাতিসংঘ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, গাজায় শত শত শিশু ও নারী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাদের সেভাবে কঠোর অবস্থান নিতে দেখা যায়নি। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া বারাক ওবামার প্রতিক্রিয়া ছিল খুবই সাধারণ। গত সোমবার জাতিসংঘ ও ওবামা লোক দেখানো যুদ্ধবিরতি পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন সত্য, কিন্তু গাজা থেকে ইসরাইলি সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়নি। জর্ডান নিরাপত্তা পরিষদে এ প্রস্তাবটি এনেছিল। প্রেসিডেন্ট ওবামা গাজায় বেসামরিক লোকজন নিহত হওয়ার ঘটনায় এক ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বটে, কিন্তু এটাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। তিনি টেলিফোনে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীকে উপদেশ দিয়েছেন এভাবে যে, গাজায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীকে এমনভাবে অভিযান পরিচালনা করতে হবে যাতে বেসামরিক নিহতদের সংখ্যা কম হয়!ওবামার এ ধরনের বক্তব্য মূলত গাজা হত্যাকাণ্ডে পরোক্ষ সমর্থনেরই শামিল। শুধু ওবামা বলি কেন, ফ্রান্সে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতে মোদি সরকারও গাজার গণহত্যার সমালোচনা করেনি। আরও দুঃখজনক হচ্ছে আরব বিশ্বের দৃষ্টিকটু নীরবতা। মুসলমান প্রধান দেশ হিসেবে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী এরদোগানই একমাত্র সরকারপ্রধান, যিনি প্রকাশ্যে ইসরাইলি ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, ইসরাইলের বর্বরতা হিটলারকেও ছাড়িয়ে গেছে। তার মতে, ইসরাইল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে। তুরস্কের সঙ্গে ইসরাইলের কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকলেও এবং তুরস্ক মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটোর অন্যতম সদস্য হওয়া সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সময়গুলোতে ইসরাইলের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। সনাতন মুসলিম বিশ্বের দেশগুলো, বিশেষ করে সৌদি আরবের ভূমিকাও ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। মুসলিম বিশ্বের অভিভাবকের দাবিদার সৌদি আরবের পরোক্ষ সমর্থন নিয়ে (?) ইসরাইল গাজায় স্থল অভিযান চালাচ্ছে, এমন অভিযোগও উঠেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, হামাসের কর্মকাণ্ডে সৌদি রাজবংশ পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়। হামাসের রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি সৌদি রাজবংশের জন্য এক ধরনের হুমকিও বটে।>ইসরাইল গাজায় যে অভিযান চালাচ্ছে, তার নাম দিয়েছে অপারেশন প্রটেকটিভ এজ। এ অভিযানের শেষ কোথায়, তা স্পষ্ট করে কেউ বলতে পারছে না। ১১ জুন তিনজন ইসরাইলি কিশোরকে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগে এ অভিযান শুরু হলেও এর পেছনে ইসরাইলি নেতাদের সুদূরপ্রসারী দুরভিসন্ধি কাজ করছে। বলা ভালো, হামাস এই কিশোরদের হত্যাকাণ্ডে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছে। তবে এটা সত্য, অতীতে হামাস এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল।গাজায় ইসরাইলি স্থল অভিযান ও হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছে এমন একটি সময়ে, যখন ফাতাহ ও হামাস নেতারা নীতিগতভাবে একটি কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে রাজি হয়েছিলেন। ইসরাইলি স্থল অভিযানের মুখে এই কোয়ালিশন সরকার গঠন প্রক্রিয়া এখন অনিশ্চিত হয়ে উঠল। বলা ভালো, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এখন কার্যত দ্বিধাবিভক্ত। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন আল ফাতাহ গ্র“প নিয়ন্ত্রণ করে পশ্চিমতীর, আর হামাস নিয়ন্ত্রণ করে গাজা। হামাস উগ্রবাদী একটি সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত। তবে ২০০৬ সালে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের পার্লামেন্টের যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তাতে হামাস বিজয়ী হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ইসমাইল হানিয়া। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হয়নি। এমনকি খোদ ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের কাছেও তার এই নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন ছিল।ফিলিস্তিনি স্বায়ত্তশাসন তথা স্বাধীন একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারে ওয়াশিংটন চুক্তি (১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩) ছিল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। ওই শান্তিচুক্তির ফলে ইসরাইল অধিকৃত গাজা ও পশ্চিততীরের জেরিকো শহরে সীমিত স্বায়ত্তশাসন স্বীকৃত হয়েছিল। পরবর্তীকালে ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি অপর একটি চুক্তির মাধ্যমে হেবরন শহরে ফিলিস্তিনি শাসন সম্প্রসারিত হয়। ওয়াশিংটন চুক্তির পরপরই যে ফিলিস্তিনি স্বশাসিত এলাকার সৃষ্টি হয়েছিল, তা আজও স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা পায়নি। তবে ১৯৯৬ সালে ফিলিস্তিনি স্বশাসিত এলাকার প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং ইয়াসির আরাফাত প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু ২০০৪ সালে আরাফাতের মৃত্যু ফিলিস্তিনি আন্দোলনের জন্য ছিল এক ছুরিকাঘাতের শামিল। জীবদ্দশায় আরাফাত একজন প্রেসিডেন্টের সম্মান পেয়ে গেছেন, কিন্তু স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র তিনি রেখে যেতে পারেননি। অভিযোগ আছে, ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ বিষ প্রয়োগ করে তাকে হত্যা করেছে। এরপর ২০০৫ সালে মাহমুদ আব্বাস ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। কিন্তু অচিরেই ফিলিস্তিনের জনগণ প্রত্যক্ষ করে হামাস-আল ফাতাহ দ্বন্দ্ব। এ দ্বন্দ্বের জের ধরে ২০০৭ সালে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল হানিয়া পদত্যাগ করেন। অথচ এর ঠিক এক বছর আগে হামাস নেতা হানিয়াকে ফিলিস্তিনি জনগণ বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছিল।>ফিলিস্তিন নিয়ে সমস্যা মূলত একটিই- আর তা হচ্ছে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। পশ্চিমা বিশ্ব বারবার এই রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্র“তি দিলেও আজও তা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক শান্তি আলোচনা সেই ১৯৭৩ সালে শুরু হয়েছে। আজও এ আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। ১৯৯৩ সালে ওয়াশিংটনে ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর ১৯৯৮ সালে ওয়াশিংটনের অদূরে উই রিভার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ইসরাইলের ব্যাপারে পিএলও ও আরব রাষ্ট্রগুলো বিভিন্ন সময়ে কিছু নমনীয় মনোভাব গ্রহণ করলেও ইসরাইল কখনও তার একগুঁয়ে ও আগ্রাসী মনোভাব পরিত্যাগ করেনি। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২৪২ ও ৩০৮নং প্রস্তাব অনুযায়ী ইসরাইলের অধিকৃত আরব এলাকা ফিরিয়ে দেয়ার কথা। কিন্তু ইসরাইল নিরাপত্তা পরিষদের সেই সিদ্ধান্ত কখনোই কার্যকর করেনি। বরং একের পর এক বসতি স্থাপন করে উত্তেজনা জিইয়ে রেখেছে। নিরাপত্তা পরিষদও সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে কখনও উদ্যোগী হয়নি। অথচ ১৯৯১ সালে ইরাকের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য জাতিসংঘের উদ্যোগে বহুজাতিক বাহিনী গঠন করে সেখানে সেনা পাঠানো হয়েছিল এবং ইরাককে বাধ্য করা হয়েছিল সেই সিদ্ধান্ত মানতে। কিন্তু আজ ফিলিস্তিনের নিরীহ শিশুদের ইসরাইল হত্যা করলেও এ কর্মকাণ্ড বন্ধের কোনো উদ্যোগ নেয়নি জাতিসংঘ। এখানেই এসে যায় মূল প্রশ্নটি- জাতিসংঘ মূলত পশ্চিমাদের স্বার্থেই পরিচালিত হয়। যুদ্ধ, মানবতা তাদের কাছে বড় নয়। গাজা একটি বিধ্বস্ত নগরীতে পরিণত হলেও, শত শত শিশুকে হত্যা করা হলেও তা প্রাধান্য পায়নি জাতিসংঘের কাছে। বরং নিরাপত্তা পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউক্রেনে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায়! কী বৈপরীত্য!যারা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির কিছুটা খোঁজখবর রাখেন তারা জানেন, জিওনবাদের বা ইহুদিবাদের স্বপ্নদ্রষ্টা থিওডর হারজেল ১৯০৪ সালে একটি বৃহত্তর ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই রাষ্ট্রটির সীমানা হবে একদিকে নীল নদ, অন্যদিকে ফোরাত নদী। এ লক্ষ্যেই ১৯৮২ সালে ইনন পরিকল্পনা (ণরহড়হ) প্রণয়ন করা হয়েছিল। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে ধর্মীয় ও এথনিকভাবে ছোট ছোট রাষ্ট্রে বিভক্ত করা হবে। ফলে আরব রাষ্ট্রগুলো দুর্বল হবে এবং তা ইসরাইলি রাষ্ট্রের জন্য কোনো নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করবে না। আজ ইরাকের দিকে তাকালে কিন্তু সেই ইনন ফর্মুলার বাস্তব প্রতিফলনই আমরা দেখতে পাই। ইরাক আজ বাহ্যত তিন ভাগে বিভক্তির পথে- কুর্দি অঞ্চলে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র কুর্দিস্তান, শিয়া ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে একটি শিয়া রাষ্ট্র এবং সুন্নিরা আলাদা হয়ে একটি আলাদা রাষ্ট্র। এই পরিকল্পনা এখন অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কুর্দিরা স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য একটি ভোটের কথা বলছে। অনেকে স্মরণ করতে পারেন, জো বাইডেন (বর্তমানে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট) ২০০৬ সালের ১ মে পররাষ্ট্রবিষয়ক সিনেট কমিটিতে (তখন তিনি একজন সিনেটর) এক ভাষণে ইরাককে ভেঙে তিনটি রাষ্ট্র করার প্রস্তাব করেছিলেন। ২০০৭ সালে সিনেটে গৃহীত এক প্রস্তাবে (৭৫-২৩ ভোটে) সেই প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছিল। কুর্দিরা সেই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। আজ যখন জো বাইডেন মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যান, তখন সঙ্গত কারণেই তার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। উল্লেখ্য, জো বাইডেন নিজে একজন ইহুদি। ওবামার ইহুদিপ্রীতির খবরও ইতিহাসে আছে। তরুণ সিনেটর হিসেবে প্রয়াত ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী গোল্ডামায়ারের সঙ্গে দেখা ও তার প্রশংসা করা এবং চলতি জানুয়ারিতে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শ্যারনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগদান এবং নেতানিয়াহুর সঙ্গে দুঘণ্টা বৈঠক- এসবই ছিল ইসরাইলের প্রতি তার ভালোবাসার প্রকাশ। এখানে আরও একটা কথা বলা দরকার। ১৯৬০ সাল থেকেই কুর্দি নেতারা ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে এবং সেখান থেকে সামরিক সাহায্য পেয়ে আসছে। চলতি জুনে নেতানিয়াহু তেলআবিব বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ভাষণে স্বাধীন কুর্দিস্তানের পক্ষে কথা বলেছেন।ইতিহাসের কী অনিবার্য পরিণতি! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন হিটলারের দক্ষিণ হস্ত বলে পরিচিত আইকম্যানের ফর্মুলা অনুযায়ী হিটলার ইহুদিদের বন্দি শিবিরে একত্রিত রাখা ও তাদের উচ্ছেদ অভিযানে নেমেছিলেন। গ্যাস চেম্বারে ইহুদিদের হত্যা করা হয়েছিল। আজ এত বছর পর সেই ইহুদি নেতৃত্ব একই পন্থা অবলম্বন করে ফিলিস্তিনিদের বস্তি-জীবনযাপনে বাধ্য করছে! ইতিহাস থেকে ইহুদি নেতৃত্ব কোনো শিক্ষাই নেননি। আজ গাজায় ইসরাইলের স্থল অভিযান মূলত এ লক্ষ্যেই রচিত। ফিলিস্তিন থেকে হামাস নেতাদের উৎখাত করে গাজায় তাদের পদলেহীদের দিয়ে একটি দুর্বল প্রশাসন পরিচালনা করা এবং সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের ছোট ছোট গ্র“পে বিভক্ত করে তাদের এক রকম বস্তি-জীবনযাপনে বাধ্য করছে। এটাই হচ্ছে ইসরাইলের স্ট্র্যাটেজি। এর সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যাবে দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ শাসনের, যখন শ্বেতাঙ্গ নেতৃত্ব ১০টি হোমল্যান্ড গঠন করে কৃষ্ণাঙ্গদের সেখানে পাঠিয়ে এক ধরনের বস্তির জীবনযাপনে বাধ্য করেছিল।হামাসের রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ফিলিস্তিনের জনগণ তাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে এবং ইসরাইলের আগ্রাসী নীতি আজ তাদের বাধ্য করেছে এ পর্যায়ে আসতে। আজ যদি ইসরাইলি নেতৃত্ব তাদের মানসিকতায় পরিবর্তন না আনে, তাহলে এ এলাকায় কোনোদিন শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না। হামাস যে ১০ দফা প্রস্তাব করেছে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হতে পারে। ১০ বছর মেয়াদি একটি যুদ্ধবিরতি, গাজার অবরোধ প্রত্যাহার, কারাগারে আটক ফিলিস্তিনিদের মুক্তি, গাজার সমুদ্র ও বিমানবন্দর জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে খুলে দেয়া ইত্যাদি প্রস্তাব খুব সহজেই মেনে নেয়া যায়। কিন্তু ইসরাইল এ কাজটি করবে না। তাদের উদ্দেশ্য সৎ নয়। স্থল অভিযানে গাজা দখল করে নিয়ে গাজা থেকে হামাস নেতাদের উৎখাত করেই তারা তাদের অভিযান শেষ করবে। এর মধ্য দিয়ে মার্কিনি একটি সন্তুষ্টি হয়তো আমরা দেখতে পাব। কিন্তু ফিলিস্তিন-ইসরাইল এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না। এতে করে হামাসের যোদ্ধারা আরও বেপরোয়া হবে এবং ইহুদি এলাকায় আÍঘাতী হামলা আরও বাড়বে। ইসরাইল যতদিন না ফিলিস্তিনের অস্তিত্ব মেনে নেবে, ততদিন এ এলাকায় অস্থিতিশীলতা বিরাজ করবেই। পশ্চিমা বিশ্ব ও জাতিসংঘ একটি টু-নেশন ফর্মুলায় যতদিন না ইসরাইলকে রাজি করাতে পারবে, ততদিন বান কি মুন, ওবামা কিংবা জো বাইডেনের মধ্যপ্রাচ্য সফর কোনো ফল বয়ে আনবে না। Daily JUGANTOR 24.07.14

0 comments:

Post a Comment