রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

বিশ্বব্যাংকের সংস্কার ও ব্রিকস ব্যাংক

অতি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা উল্লেখ করার মতো। প্রথমটি হচ্ছে, ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে ব্রিকস উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত। মূলত বিশ্ব অর্থনীতিতে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের কর্তৃত্ব খর্ব করার উদ্দেশ্যেই গত ১৫-১৭ জুলাই ব্রাজিলের ফর্তালেজা শহরে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া ৫ জাতিভিত্তিক ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে এ ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় সংবাদটি হচ্ছে, বিশ্বব্যাংকের কাঠামোগত ও পরিচালনায় সংস্কার আনার তাগিদ দিয়েছে ভারত। ব্রিকস সম্মেলনে যখন ‘নতুন একটি বিশ্বব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, ঠিক এর পর-পরই বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়াং কিম ছুটে যান ভারতে। বৈঠক করেন ভারতের নতুন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে। অরুণ জেটলি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে জানান, ভারত মনে করে, বিশ্বব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে হবে। ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ৫০ মিলিয়ন ডলার মূলধন নিয়ে ব্রিকস ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং ভারত এর প্রথম সভাপতির দায়িত্ব পালন করবে। ব্রিকস ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় হবে সাংহাইয়ে। ব্রিকস ব্যাংক প্রতিষ্ঠার এই সিদ্ধান্ত যে বিশ্বব্যাংককে কিছুটা হলেও একটা দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের ভারত সফর এর বড় প্রমাণ। এখানে বলা ভালো, গোল্ডম্যান স্যাকসের অর্থনীতিবিদ জিম ও’নেইল (ঔরস ড়’ ঘবরষষ) ২০০১ সালে নতুন অর্থনৈতিক ব্যাংক হিসেবে ইজওঈ (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন)-এর কথা বলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা এই গ্রুপে যোগ দেয় ২০১০ সালে। তবে এটাও সত্য, ব্রিকের যে ধারণা তিনি দিয়েছিলেন, ২০০৯ সালে এসে এতে তিনি কিছু পরিবর্তন আনেন এবং নতুন এক অর্থনৈতিক ব্যাংকের কথা বলেন। গওকঞ নামে পরিচিত এই অর্থনৈতিক ব্লকে রয়েছে মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও তুরস্ক। ২০১১ সালে এসে অধ্যাপক জিম ও’নেইল স্পষ্ট করেই বলেছেন, ব্রিকসকে কেন্দ্র করে যে দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির কথা বলা হয়েছিল, এতে জটিলতা তৈরি হতে পারে। কেননা চীন ও রাশিয়ায় কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী হ্রাস পাবে এবং এই বয়স্ক জনগোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিকে চাপের মুখে রাখবে। অধ্যাপক জেক গোল্ডস্টোনও একই অভিমত পোষণ করেছিলেন। তবে সত্যিকার অর্থে ব্রিকসের অর্থনীতি কতটুকু দাঁড়াতে পারবে, সেটি ভবিষ্যতের ব্যাপার। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এই মুহূর্তে চীন ও ভারত বিশ্বের বড় অর্থনীতি। চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বড় অর্থনীতি। যুক্তরাষ্ট্রের পরই এর স্থান। অন্যদিকে ইন্টারন্যাশনাল কম্পারিজন প্রোগ্রামের (আইসিপি) মতে, জাপানকে হটিয়ে দিয়ে ভারত ২০১১ সালে বিশ্বের তৃতীয় অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। আইসিপি বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে কাজ করে। অথচ ২০০৫ সালে ভারত দশম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ছিল।আইসিপির রিপোর্ট থেকেই জানা গেছে, ২০১১ সালে বিশ্ব ৯০ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের পণ্য ও সেবা উৎপাদন করে। তবে এর মোট উৎপাদনের অর্ধেকই নিম্ন ও মধ্য আয়ের অর্থনীতির দেশগুলো থেকে আসে। আইসিপির প্রধান পর্যবেক্ষণ হল, বিশ্বের ১২টি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের ৬টিই মধ্য আয়ের অর্থনীতির দেশের অন্তর্গত। ১২টি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ সম্মিলিতভাবে উৎপাদন করে বিশ্ব অর্থনীতির দুই-তৃতীয়াংশ। আর বিশ্বের ৫৯ শতাংশ মানুষ এ ১২টি দেশে বসবাস করে বলে আইসিপি তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে। ক্রয়ক্ষমতার অসমতা (পার্চেজিং পাওয়ার প্যারিটি- পিপিপি) অনুযায়ী বিশ্ব জিডিপি ৯০ হাজার ৬৪৭ মিলিয়ন ডলার। সেই তুলনায় বিনিময় হার অনুযায়ী বিশ্ব জিডিপি ৭০ হাজার ২৯৪ বিলিয়ন ডলার। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন থাকবে, মাত্র ৫টি দেশ নিয়ে গঠিত ব্রিকস কতদূর যেতে পারবে? ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া কিংবা আর্জেন্টিনার মতো দেশ অদূর ভবিষ্যতে ব্রিকসে যোগ দেবে কি না, তাও একটা প্রশ্ন।বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক আছে উন্নয়নশীল বিশ্বে। বিশ্বব্যাংক সমাজসেবা করে না। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তারা যে সাহায্য দেয়, এটি তাদের বিনিয়োগ। সুদসহ তারা আসল বুঝে নেয়। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের ঋণ পলিসি নিয়ে নানা কথা আছে। যারা পল ব্যারেন, রাউল প্রোবিস, গ্রাহাম হেনকক, পল সুইজি, এজি ফ্রাংক কিংবা সামির আমিনের লেখার সঙ্গে পরিচিত, তারা জানেন বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ ঋণ কেন দেয়, তাদের স্বার্থ কী এবং ঋণের বিনিময়ে তাদের ‘প্রাপ্তি’ কী? তাই শুধু ভারত নয়, বরং উন্নয়নশীল বিশ্বের অনেক দেশ কিছুদিন ধরেই বিশ্বব্যাংকের সংস্কার দাবি করে আসছে। অনেকের স্মরণে থাকার কথা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৬৭তম অধিবেশনে (২০১৩) ভাষণ দিতে গিয়ে বিশ্বব্যাংকের সংস্কারের দাবি তুলেছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের কাঠামো ও সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া ৬০ বছরের পুরনো ক্ষমতার সমীকরণের প্রতিফলন। প্রধানমন্ত্রী যা বলতে চেয়েছেন, তা হচ্ছে বেটন উডস (১৯৪৪) সম্মেলনের পর অনেক দিন পার হয়ে গেছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে এসব প্রতিষ্ঠানে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণ বাড়ানো উচিত। আজ প্রধানমন্ত্রীর ওই কথারই প্রতিধ্বনি করলেন ভারতের অর্থমন্ত্রী। বিশ্বব্যাংক উন্নয়নশীল বিশ্বকে আর্থিক সহায়তা দেয়- এটি সত্য। কিন্তু শর্ত থাকে। শুধু তা-ই নয়, তাদের কথা অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য করা হয়। বাংলাদেশেও বিশ্বব্যাংকের ভূমিকা একেবারে বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নিয়ে বাংলাদেশে বড় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাংক অর্থায়নে ফিরে আসবে বলা হলেও সংস্থাটি আর ফিরে আসেনি। বাংলাদেশ এখন নিজ উদ্যোগেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করছে।বিশ্বব্যাংকের ঋণের সঙ্গে কাঠামোগত সামঞ্জস্য বা ঝঃৎঁপঃঁৎধষ অফলঁংঃসবহঃ-এর একটি কথা শোনা যায়। বাংলাদেশে এটি ব্যাপকভাবে পরিচিত। এটা হচ্ছে একধরনের সুপারিশমালা। বিশ্বব্যাংক ঋণের শর্ত হিসেবে এই কাঠামোগত সামঞ্জস্যের কথা বলে থাকে। কাঠামোগত সামঞ্জস্যের নামে বিশ্বব্যাংক যেসব শর্ত আরোপ করে থাকে, তা হচ্ছে অনেকটা এ রকম- ১. গ্রহীতা দেশের মুদ্রার অবমূল্যায়ন, ২. সরকারি ব্যয় হ্রাস, ৩. শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্যসহ সেবামূলক খাত ও কৃষি খাতে ভর্তুকি হ্রাস, ৪. প্রকৃতি মজুরি হ্রাস ও ঋণ সংকোচন, ৫. মূল্য নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার, ৬. জনসেবামূলক খাত, কৃষি উপকরণ, বিদ্যুৎ, রেলওয়ে বেসরকারিকরণ, ৭. উঁচু কর ও সুদের হার বাড়ানো, ৮. আমদানি অবাধ করা, ৯. মুক্তবাজার প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি। বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলো এবং সমাজতন্ত্রের পতনের পর পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো এখন কাঠামোগত সামঞ্জস্যের আওতায় ঋণ পেয়ে থাকে। কিন্তু এতে কি ঋণগ্রহীতা দেশের অর্থনীতিতে তেমন পরিবর্তন এসেছে? কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে এর জবাব দেওয়া যেতে পারে। ১৯৭৭-৮৫ সালে পেরুতে বিশ্বব্যাংকের ফর্মুলা অনুযায়ী কাঠামোগত সামঞ্জস্যের শর্তাবলি গ্রহণ করা হয়। ফলে মাথাপিছু আয় শতকরা ২০ ভাগ কমেছে, মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬০ ভাগে, ওই সঙ্গে বেড়েছে বেকারত্ব। আরও একটা কথা। ঋণ দেওয়া হয় সাধারণত ধনতন্ত্র কায়েম এবং সমাজতন্ত্রের অগ্রগতিরোধ করতে। অনেক জাতীয়তাবাদী সরকারের পতন ঘটানো হয়েছে শুধু তাদের কথামতো না চলার জন্য (ইরানে মোসাদ্দেক ১৯৫৩ সালে, গুয়েতেমালার আরবেনজ ১৯৫৪ সালে, ব্রাজিলে গাউলাট ১৯৬৪ সালে, ইন্দোনেশিয়ায় সুকর্ন ১৯৬৫ সালে, ঘানায় নক্রমা ১৯৬৬ সালে, মালিতে কাইটা ১৯৬৮ সালে, চিলিতে আলেন্দে ১৯৭৩ সালে)। ১৯৭২-৭৬ সালে আর্জেন্টিনায় পেরনিস্টরা কিংবা ব্রাজিলে গাউলাট বিশ্বব্যাংকের কোনও ঋণ পাননি। কেননা তাদের রাজনীতিতে পুঁজিবাদী বিশ্ব সন্তুষ্ট ছিল না। অথচ তারা যখন উৎখাত হন, তখন থেকেই ওই দুই দেশে বিশ্বব্যাংকের সাহায্য বেড়ে যায়। শুধু ১৯৭৬ সালে এককভাবে আর্জেন্টিনা বিশ্বব্যাংক থেকে যত ঋণ পেয়েছে, এর আগের ২০ বছরেও এত ঋণ পায়নি। বাংলাদেশের কথা যদি বলি, তাহলে বলতে হয়- বাংলাদেশ ১৯৯০ সালের জুলাই থেকেই সম্প্রসারিত কাঠামোগত সমন্বয় কর্মসূচির আওতায় কাজ করে যাচ্ছে। এতে সরকারের ৯টি ক্ষেত্রে (কৃষি, শিক্ষা, বাণিজ্য, সরকারি সম্পদের ব্যবহার, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো, সরকারি ব্যয়নীতি, বহির্খাত, অর্থ খাত সংশোধন, মানবসম্পদ ও দারিদ্র্য দূবীকরণ এবং পরিবেশনীতি) করণীয় কাজ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। করণীয় কাজের মাধ্যে রয়েছে সেচ উপকরণ আমদানি ও বিতরণ ব্যবস্থা সহজীকরণ, আমদানির ওপর আরোপিত শর্তাবলি তুলে দেওয়া ও রপ্তানি ভর্তুকি-ব্যবস্থা বাতিল করা, ভ্যাট প্রথা প্রবর্তন, পাট, বস্ত্র, রসায়ন, ইস্পাত ও প্রকৌশল সংস্থাকে বেসরকারিকণ, রেলওয়ে ঘাটতি দূরীকরণ, প্রশাসনিক খাতে ব্যয় হ্রাস, রপ্তানিকে বহুমুখিতা, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায় শক্তিশালীকরণ ইত্যাদি। এছাড়া পরিবার পরিকল্পনা, শিল্পায়ন ইত্যাদি বিষয়েও দাতাদেশ ও সংস্থাগুলোর বিভিন্ন সুপারিশ রয়েছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, বাংলাদেশ এ থেকে কতটুকু উপকৃত হয়েছে? দরিদ্রতা কিংবা চরম দারিদ্র্যসীমায় বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা কমেনি। বাংলাদেশে প্রতিদিন হাজার হাজার শিশুর জন্ম হয়েছে কয়েক হাজার টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে। রাষ্ট্রকে এই ঋণ পরিশোধ করতে হয় আর চক্রবৃদ্ধি হারে ওই ঋণের পরিমাণ বাড়তে থাকে, ঋণ আর শোধ হয় না। ১৯৭২-৭৩ সালে যেখানে এক ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হার ছিল মাত্র ৭ দশমিক ৮৮ টাকা, আজ সেখানে ৭৯ টাকা। ঋণের শর্ত হিসেবে আমরা টাকার মান নির্ধারণ করতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু দরিদ্রতা কমেনি। উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে বটে, কিন্তু এতে উপকৃত হয়েছে কতিপয় ব্যক্তি ও রাজনীতিবিদ। তথাকথিত কনসালটেন্সির নামে কয়েক বুদ্ধিজীবী তথা শিক্ষকের পকেট ভারী হয়েছে মাত্র।মনে রাখতে হবে, বিশ্বব্যাংক থেকে একবার ঋণ নিলে সেখান থেকে আর বের হয়ে আসা যায় না। ব্রাজিল একবার ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে ‘ডিফল্টার’ হয়ে গিয়েছিল। বিশ্বব্যাংক দেশটিকে আবারও ঋণ দিয়েছিল- যাতে ব্রাজিল ঋণের সুদ পরিশোধ করতে পারে। না হলে আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থায় বিপর্যয় দেখা দিত। এ জন্যই ঋণের পরিমাণ বাড়লেও বিশ্বব্যাংক ঋণ দেওয়া অব্যাহত রাখে।আজ তাই বিশ্বব্যাংকের যে সংস্কারের কথা উঠেছে, এতে অযৌক্তিক কিছু নেই। কিন্তু বিশ্বব্যাংক আদৌ সংস্কারের কোনও উদ্যোগ নেবে- এটা মনে হয় না। সঙ্গত কারণেই ব্রিকস ব্যাংকের দিকে তাকিয়ে থাকবে সবাই। কিন্তু কাজটি খুব সহজ হবে বলে মনে হয় না। এর ভবিষ্যৎ অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে। দুটি বড় অর্থনীতি চীন ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক আগামী দিনে কোন পর্যায়ে গিয়ে উন্নত হয় কিংবা বড় অর্থনীতির দেখা হিসেবে চীনের ভূমিকা ব্যাংক পরিচালনায় কী হবে অথবা ঋণের ধরন কী হবে- এসবের ওপর ব্রিকস ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। বলা ভালো, আপতত ১০ হাজার কোটি ডলার মূলধন নিয়ে ব্যাংকটি যাত্রা শুরু করছে। এখানে চীন একাই দেবে ৪ হাজার ১০০ কোটি ডলার। রাশিয়া, ভারত ও ব্রাজিল দেবে ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার করে। আর দক্ষিণ আফ্রিকা দেবে ৫০০ কোটি ডলার। ভুলে গেলে চলবে না, বিশ্বের ৪০ শতাংশ জনগণ ও ২৫ শতাংশ এলাকা এই দেশগুলোর দখলে এবং বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় ২৫ শতাংশ এই দেশগুলোর। ব্রিকস দেশগুলো বর্তমানে বৈশ্বিক মুদ্রা রিজার্ভের ৪৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং ব্রিকস ব্যাংকের ব্যাপারে একটা আগ্রহ থাকবেই। তবে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প হিসেবে ব্রিকস ব্যাংক কতটুকু দাঁড়াতে পারবে, সে প্রশ্ন থাকলই। Daily AMADER SOMOY 28.07.14

0 comments:

Post a Comment