রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

সিরিসেনার উত্থান প্রসঙ্গে কিছু কথা

শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মিথ্রিপাল সিরিসেনার বিজয় অনেককে অবাক করলেও একটি প্রশ্ন কোনো কোনো মহলে আলোচিত হচ্ছে সিরিসেনাকে ‘বিজয়ী’ করিয়ে নিয়ে আসার ব্যাপারে ভারতের কোনো ভূমিকা ছিল কি না এবং চিনের পরিবর্তে ভারত এখন শ্রীলংকায় বড় ভূমিকা পালন করবে কি না? সম্ভাব্য ভারতের এই ভূমিকা ইতোমধ্যে সংবাদপত্রে আলোচনাও হয়েছে। বিশেষ করে শ্রীলংকার কোনো কোনো সংবাদপত্রে এমনও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, সাবেক প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষে বেশিমাত্রায় চিনের প্রতি ঝুঁকেছিলেন। ফলে ভারতের স্ট্র্যাটেজিস্টরা বিষয়টিকে খুব ভালো চোখে নেননি। নির্বাচনের ফল চূড়ান্তভাবে ঘোষিত হওয়ার আগেই মিথ্রিপাল সিরিসেনাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। এ থেকে একটি সন্দেহ দৃঢ় হয় যে, ভারত নিশ্চিত ছিল সিরিসেনা বিজয়ী হবেন। সিরিসেনা এক সময় রাজাপক্ষের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তামিল টাইগারদের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধে’ সিরিসেনা রাজাপক্ষেকে সমর্থন করেছিলেন। উপরন্তুরাজাপক্ষের দল শ্রীলংকান ফ্রিডম পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। এক্ষেত্রে বিশেষ মহলের পরামর্শে সিরিসেনা মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। মজার ব্যাপার, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরোধী দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির প্রার্থী রনিল বীক্রমাসিংহ প্রার্থী না হয়ে সিরিসেনাকে সমর্থন করেন। ধারণা করা হয়, ভারতের একটি ‘মহল’ রাজাপক্ষের নিশ্চিত বিজয় ঠেকাতেই সিরিসেনাকে সমর্থন করতে ইউপিএ নেতাদের চাপ দেন। সিরিসেনা নিশ্চিত করেছেন, তিনি তার প্রথম বিদেশ সফরে নয়াদিল্লি যাবেন। তাই বোঝাই যায়, তিনি সরকার পরিচালনায় বেশিমাত্রায় ভারতের ওপর নির্ভরশীল হবেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্ররা ‘প্রিমাকভ ডকট্রিন’ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা রাখেন। ২০০৭ সালের পর থেকে শ্রীলংকা, চিন, ইরান ও রাশিয়ার সমন্বয়ে এ অঞ্চলে যে ‘ঐক্য’ গড়ে উঠছে এবং যা ‘প্রিমাকভ ডকট্রিন’ হিসেবে পরিচিতÑ তা একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের স্বার্থকে আঘাত করছে। চিনের এ অঞ্চল ঘিরে যে ‘মুক্তার মালা’ নীতি, তা ভারত মহাসাগরে এর কর্তৃত্বকে নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই প্রণীত। ভারত মহাসাগরে চিনের শক্তি বৃদ্ধিকে ভারত তার নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ হিসেবেও মনে করছে। ফলে শ্রীলংকায় একটা পরিবর্তন অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। মনে রাখতে হবে, চিন একদিকে বেলুচিস্তানের গাওদার বন্দর তৈরি করে দিয়েছিল, অন্যদিকে শ্রীলংকার হাসবানতোতায়ও একটি গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরি করে দিয়েছে। গাওদারে চিনা নৌবাহিনীর একটি ঘাঁটি আছে। আর হাসবানতোতায় চিনা নৌবাহিনীর উপস্থিতি না থাকলেও বন্দরটি তারাই পরিচালনা করে। ১ হাজা ৫০০ কোটি ডলারের বিশাল এক চিনা বিনিয়োগে রয়েছে শ্রীলংকায়। ভারতের ব্যবসায়ীদের এখানে স্বার্থ রয়েছে। চিনের বদলে তারা এখন শ্রীলংকায় ব্যবসা করতে চান। এ জন্যই দরকার একটি ‘ভারতবান্ধব’ সরকার। সম্ভবত সিরিসেনার বিজয় এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাচ্ছে এখন। নিঃসন্দেহে সিরিসেনার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিযুক্তি সবাইকে অবাক করেছে। তাকে ফিরে একটি বড় ধরনের ‘ঐক্য’ গড়ে উঠেছে। আমাদের মতো দেশ হলে নির্বাচনে বিরোধী দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) নিজেদের প্রার্থী দিত। কিন্তু দলটি তা করেনি। বরং সিরিসেনাকে সমর্থন করে একটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করেছে শ্রীলংকায়। তাই অনেক প্রশ্ন এখন সামনে চলে এসেছে। যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা আদৌ থাকবে কিনা? সিরিসেনা ইতোমধ্যেই ইউএনপি নেতা রনিল বিক্রমাসিংহকে প্রধানমন্ত্রী করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, সিরিসেনার নিজের দল শ্রীলংকান ফ্রিডম পার্টি এই ঐকমত্যের প্রক্রিয়াটি আগামী সংসদ নির্বাচনে সমর্থন করবে কিনা? সাধারণত যিনি হেরে যান, তিনি আর রাজনীতিতে তেমন একটা সক্রিয় থাকেন না (যেমন চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা)। এখন দেখার বিষয়, রাজাপক্ষে আদৌ শ্রীলংকার রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন কি না? তবে শ্রীলংকার ইতিহাস বলে, ফ্রিডম পার্টিকে এখন নতুন একজন নেতা খুঁজতে হবে। তামিল টাইগারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে রাজাপক্ষে শ্রীলংকার অখ-তা রক্ষা করেছেন সত্য। কিন্তু৫ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও তিনি শ্রীলংকার তামিলদের আস্থা অর্জন করতে পারেননি। এটি ছিল তার বড় ব্যর্থতা। সাধারণ তামিলরা তাকে বরাবর ঘৃণা করে আসছে এবং নির্বাচনে তারা এককভাবে সিরিসেনাকে ভোট দিয়েছে। এখন সিরিসেনার প্রধান কাজ হবে তামিলদের আস্থা অর্জন করা। এখানে ভারতীয় তামিলরা একটি ফ্যাক্টর। তাই ওই কাজটি করা খুবই সহজ হবে বলে মনে হয় না। সিংহলিদের একটা অংশ এখনো তামিলবিরোধী। শ্রীলংকার জাতিগত দ্বন্দ্বের ইতিহাসও বেশ পুরনো। ৬৫ হাজার ৬০৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনেও ওই দেশটির লোকসংখ্যা মাত্র ২ কোটি ৩ লাখ। ভারত মহাসাগর ঘেঁষা ওই দেশটি বিভিন্ন সময় পর্তুগাল, হল্যান্ড ও ব্রিটেনের কলোনি ছিল। ১৫০৫ সালে পর্তুগিজরা দেশটির পশ্চিম ও দক্ষিণে বসতি স্থাপন করে। পরের শতকের মাঝামাঝি ডাচরা (হল্যান্ড) দেশটি দখল করে নেয়। ১৮০২ সালে শ্রীলংকা পৃথক ব্রিটিশ কলোনি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৪৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত দেশটির পরিচয় ছিল সিংহল হিসেবে। তামিলদের আস্থা অর্জন করার কাজটি হবে কঠিন। জনগোষ্ঠীর ১১ দশমিক ২ শতাংশ তামিল। তামিল টাইগার নেতা ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণের হত্যাকা-ের ঘটনা সাধারণ তামিলরা মেনে নিতে পারেনি আজও। প্রবাসী তামিলদের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনা এখনো আছে। শ্রীলংকার মূলধারার রাজনীতিতে তাদের নিয়ে আসার কাজটি হবে কঠিন। তামিল অধ্যুষিত দুটি প্রদেশ (মোট প্রদেশ ৯টি) পূর্বাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলকে ২০০৬ সালে একত্র করা হয়। কিন্তু প্রাদেশিক নির্বাচন ও প্রাদেশিক সরকার গঠিত হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রভাব বেশি। সত্যিকার অর্থে প্রাদেশিক সরকার কোনো স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে না। ফলে তামিলরা এখনো নিজেদের বঞ্চিত মনে করে। সিরিসেনাকে এখন প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বলা ভালো, ১৮০২ সালে ইংরেজরা শ্রীলংকায় ব্রিটিশ শাসন কায়েম করার আগে থেকেই সেখানে হিন্দু ধর্মাবলম্বী তামিলরা বসতি স্থাপন করে। তামিলরা আসে মূলত ভারতের তামিলনাড়– রাজ্য থেকে। ব্রিটিশরা তাদের এ অঞ্চলে চায়ের বাগান ও রাবার বাগানে কাজ করার জন্য নিয়ে এসেছিল। তবে দীর্ঘদিন তাদের শ্রীলংকার নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছিল। এই বৈষম্যমূলক আচরণের ফলেই তামিলরা ১৯৮৪-৮৫ সালের পর থেকেই স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু করে। তবে তামিল টাইগারদের (তারা তাদের সিম্বলে বাঘের মুখ ব্যবহার করতো। তাই তামিল টাইগার হিসেবে তারা পরিচিতি পেয়েছিল) কথা প্রথম জানা যায়, ১৯৭৫ সালেÑ যখন জাফনার মেয়র দুরায়াপ্পাকে টাইগাররা হত্যা করে। শ্রীলংকার জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশ হচ্ছে মুসলমান, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা ৭৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ। সম্প্রতি সেখানে মুসলমান-বৌদ্ধ দাঙ্গার খবর আমরা জানি। বাংলাদেশ দূতাবাস আক্রান্ত হওয়ার খবরও আমরা জানি। একটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী জঙ্গিগোষ্ঠী ‘বদুপালা সেনা’র অপতৎপরতা ও শ্রীলংকাকে একটি পরিপূর্ণ বৌদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করার ঘোষণার খবরও আমরা জানি। রাজাপক্ষে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এখন দেখার বিষয়, সিরিসেনা তাদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষে নেন! জাতিসংঘসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন শ্রীলংকায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সোচ্চার। জাতিসংঘ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে এবং শ্রীলংকার কয়েক সামরিক কর্মকর্তা ও সরকারি কর্মকর্তাকে বিচারের মুখোমুখি করার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন জিএসপি সুবিধা বাতিল করে দিয়েছে। এখন সিরিসেনাকে বহির্বিশ্বের, বিশেষ করে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আস্থা অর্জন করতে হবে। কাজটি খুব সহজ হবে না নয়া প্রেসিডেন্টের জন্য। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার জন্য একটি খারাপ খবর হচ্ছে, সংসদের স্পিকার হচ্ছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষের ভাই চামাল রাজাপক্ষে। ২২৫ আসনের সংসদে রাজাপক্ষের সমর্থকদের অর্থাৎ তার দলের সদস্য সংখ্যা ১৪৪। অথচ প্রধানমন্ত্রী রানিল বিক্রমসিংহের (যিনি এর আগেও দু’বার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং একবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাজাপক্ষের কাছে হেরে যান) দলের সদস্য সংখ্যা মাত্র ৬০। সমস্যাটি এখানেই তৈরি হবে। বিক্রমসিংহ সংসদের আস্থা নাও পেতে পারেন। পরবর্তী সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা ২০১৬ সালে। কিন্তু এখন হবে এই এপ্রিলে। এক্ষেত্রে সিরিসেনার ‘ভারতমুখিতা’ ভোটারদের আবার শ্রীলংকা ফ্রিডম পার্টিমুখী করতে পারে। তাই সিরিসেনাকে খুব হিসাব করে চলতে হবে। শ্রীলংকায় জাতীয়তাবাদী চেতনা অত্যন্ত শক্তিশালী। ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলাকÑ এটি সিংহলিরা কখনোই ভালো চোখে দেখবে না। অতীত ইতিহাসটি ভারতের জন্য কোনো ভালো সংবাদ নয়। তামিল বিদ্রোহীদের হাতে সেখানে মারা গেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রেমাদাসা, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ললিত আথুলাথদালি, গামিনি দেশনায়েকে ও ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধী। রাজিব গান্ধীর বিরুদ্ধে তামিলদের অবিযোগ ছিল, শ্রীলংকার শাসকদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে তিনি শ্রীলংকার তামিলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন। ১৯৮৭ সালে শ্রীলংকার সঙ্গে ভারতের একটি চুক্তির বিনিময়ে তামিল বিদ্রোহ দমন করতে ভারতীয় সৈন্য তামিল অধ্যুষিত এলাকায় প্রবেশ করেছিল। ফলটি অনেকেই স্মরণ করতে পারবেনÑ ১ হাজার ২০০ ভারতীয় সৈন্য মারা গিয়েছিল সেখানে। বাধ্য হয়ে ভারত ১৯৯০ সালে শ্রীলংকা থেকে তাদের সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ১৯৮৭ সালে ভারত-শ্রীলংকা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন রাজিব গান্ধী ও শ্রীলংকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জুলিয়াস জয়াবর্ধনে। কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রেমাদাসা এর বিরোধিতা করেছিলেন। ওই বিরোধিতা সামনে রেখেই প্রেমাদাসা ১৯৮৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং বিজয়ী হন। আজ শ্রীলংকার রাজনীতিতে ওই ‘দৃশ্যপট’ লক্ষণীয়। ভারতীয় প্রভাব সেখানে বাড়ছে। সিরিসেনা ওই ‘ভারতীয় স্বার্থ’ই প্রতিনিধিত্ব করছেন। নির্বাচনের আগে তিনি একাধিকবার ‘চিনবিরোধী’ বক্তব্য রেখেছেন। এমনকি নয়া প্রধানমন্ত্রীও ঘোষণা দিয়েছেন, চিনের সঙ্গে সাক্ষরিত ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের চুক্তি তিনি বাতিল করবেন। এখন দেখা যাক সত্যি সত্যিই তিনি তা করেন কিনা? ভারতের মোদি সরকারের সঙ্গে এখন অনেক ব্যবসায়ী শ্রেণি ভিড় করেছে। ১১-১৩ জানুয়ারি গুজরাটে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘ভাইব্রান্ট গুজরাট’ সম্মেলনে। ওই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি যোগ দিয়েছিলেন। ফলে মাদি সরকারকে যারা ক্ষমতায় বসিয়েছে, ওই ব্যবসায়ী শ্রেণি (যেমন আদালি গ্রুপ) চাইবে মোদি সরকারকে ব্যবহার করে শ্রীলংকার বাইরে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারিত করতে। শ্রীলংকায় দ্বন্দ্বটি এভাবেই তৈরি হতে পারে। ভুলে গেলে চলবে না, শ্রীলংকার ব্যাপারে চিনের শুধু যে ব্যবসায়িক স্বার্থ রয়েছে, তা নয়। বরং চিন যে ‘ম্যারিটাইম সিল্ক রুট’-এর কথা বলেছে, শ্রীলংকা এর অংশ। বাংলাদেশের কক্সবাজারের কাছে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে চেয়েছিল চিন। তা এখন আর হচ্ছে না।এটি স্বীকার করতেই হবে, রাজাপক্ষের কিছু ভুলের কারণে শ্রীলংকার জনগণ তার ওপর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। শ্রীলংকার স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত তিনি অনেক সিদ্ধান্ত নিলেও তা তার নিজের ও দলের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারেননি। ভারতীয় নেতারা তার ওপর শতভাগ সন্তুষ্ট ছিলেন না। শ্রীলংকায় চিনের অর্থের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটলেও ভারতকে ‘উপেক্ষা’ করা এবং তামিল মুসলমানদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাওয়া তার পতনকে ত্বরান্বিত করে। উপরন্তু ছিল পারিবারিক দুর্নীতি ও ক্ষমতা করায়ত্ত করার প্রচেষ্টা। এটি একটি ‘শিক্ষা’। নিশ্চয়ই সিরিসেনা এটি থেকে শিখবেন। আগামী তিন মাসের মধ্যে সেখানে সংসদ নির্বাচন। তিনি চাচ্ছেন, শ্রীলংকায় একটি সংসদীয় সরকার পদ্ধতি। চাচ্ছেন পদত্যাগকারী প্রধান বিচারপতিকে ফিরিয়ে আনতে। কাজগুলো খুব সহজ নয়। তার ঐকমত্যের সরকার এখন কতটুকু কাজ করে, সেটিই দেখার বিষয়। Daily Amader Somoy 19.1.15

0 comments:

Post a Comment