আজ
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ভারতের ‘রিপাবলিকান ডে’
অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর মার্চপাস্ট অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। ওবামার এটা
দ্বিতীয়বার ভারত সফর। ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে ভারত যে কত বেশি
গুরুত্বপূর্ণ, তা এই সফরের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হলো। অনেকেরই স্মরণ থাকার
কথা, ২০১০ সালের নভেম্বরে ওবামার ভারত সফরের সময় প্রায় ২০০ ব্যবসায়ীর একটি
প্রতিনিধি দল নিয়ে তিনি ভারতে এসেছিলেন। এবারে কতজন ব্যবসায়ী তার সঙ্গে
থাকবেন, তার একটা পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও এটা জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র
ওবামার নয়াদিল্লি সফরের সময় সেখানে বেশ কিছু মার্কিন সেনা মোতায়েনের
পরিকল্পনা করছে। সংবাদপত্রে এ খবর দিয়ে আরও বলা হচ্ছে, ওই সময় ৬টি মার্কিন
জঙ্গিবিমান নয়াদিল্লির ওপর টহল দেবে এবং একটি যুদ্ধজাহাজ ওই এলাকায় মোতায়েন
করা হবে। ভারত সরকার ৮০ হাজার পুলিশ ও ১০ হাজার আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য
মোতায়েনেরও পরিকল্পনা করছে। কেননা ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ওবামার ওই সফরের
সময় একটি জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করছে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, ভারতের
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এই জানুয়ারি মাসেই (১১-১৩) গুজরাটে অনুষ্ঠিত
‘ভাইব্রান্ট গুজরাট’ শীর্ষ সম্মেলনেও যোগ দেন। এতে করে একটা ধারণার জন্ম
হয়েছে যে, বিশ্ব রাজনীতির আলোকে যুক্তরাষ্ট্রের যে দক্ষিণ এশীয় নীতি, তাতে
ভারত একটি বড় অংশ দখল করে আছে। অনেকেরই স্মরণ থাকার কথা, এর আগে জন কেরির
বাংলাদেশেও আসার কথা ছিল। শেষ মুহূর্তে সেই সফর বাতিল ঘোষিত হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে টিকফা চুক্তি করেছে। এর বাইরে ‘আকসা’ বা
‘অ্যাকুইজেশন অ্যান্ড ক্রস সার্ভিসেস এগ্রিমেন্ট’ নামে অপর একটি চুক্তি
করতে চায়। এই চুক্তির বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী বাংলাদেশে ‘পোর্ট
অব কল’ সুবিধা পাবে। বাংলাদেশ এর আগে ন্যাটোর স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ
কর্মসূচির ব্যাপারেও আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। বাংলাদেশের দূতাবাসের
কর্মকর্তারা ন্যাটোর সদর দফতরে শীর্ষস্থানীয় মার্কিন কমান্ডারদের সঙ্গে এক
সৌজন্য সাক্ষাৎকারে (জুন ২০১২) এই আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন। তবে এটা জানা
যায় যে, এই আগ্রহের ধরন-প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ন্যাটোর সম্প্রসারিত ভূমিকা।
অর্থাৎ ইউরোপের বাইরেও ন্যাটো একটি ভূমিকা রাখতে চায়। অনেকেরই মনে থাকার
কথা, ২০১২ সালের ৩১ মে টাইমস অব ইন্ডিয়ার অনলাইনে একটি সংবাদ ছাপা হয়েছিল।
তাতে বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরে একটি ঘাঁটি গাড়তে চাইছে। যদিও
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। তবে
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব লিওন প্যানেট্রা ‘সংগ্রিলা ডায়ালগ’
(সিঙ্গাপুর জুন ২০১২)-এ এটা স্পষ্ট করেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া ও
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে রণতরীর সংখ্যা বাড়াবে। ২০১৭ সালের শেষের দিকে এই
রণতরীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৬-এ। খুব স্বাভাবিক কারণেই এতে বঙ্গোপসাগরে মার্কিন
রণতরীর যাতায়াত বাড়বে। তারা চট্টগ্রাম বন্দরের ‘পোর্ট অব কল’ সুবিধা নেবে।
এ জন্যই তারা চাচ্ছে আকসা চুক্তিটি। মনে রাখতে হবে, দক্ষিণ এশিয়ার
বঙ্গোপসাগরভুক্ত এই অঞ্চল ক্রমেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ
হয়ে উঠছে। অনেকেরই মনে থাকার কথা, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা
দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর-পরই প্রথম বিদেশ সফর
হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন মিয়ানমারকে (নভেম্বর ১৯, ২০১২)। মিয়ানমারে ইতোমধ্যেই
প্রথমবারের মতো একজন মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করা হয়েছে। এ অঞ্চলের
ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের ধারাবাহিকতায়ই প্রেসিডেন্ট ওবামা
দ্বিতীয়বার মিয়ানমার সফর করেন গেল বছরের নভেম্বরে। তিনি বাংলাদেশে না এলেও
বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিননীতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। তবে দ্বিপক্ষীয়
সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছুটা জটিলতা দেখা দিয়েছে। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ
তথা দক্ষিণ এশিয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ বেড়েছে নানা কারণে।
প্রথমত, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের নৌবাহিনীর প্রভাব বৃদ্ধি, যা
যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে আঘাত করতে পারে। সে কারণে দক্ষিণ এশিয়ার
দেশগুলোকে নিয়ে চিনের বিরুদ্ধে একটি অ্যালায়েন্স গড়ে তোলা প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, ২০১৪ সালেই আফগানিস্তান থেকে যুদ্ধরত মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার
করা হয়েছে। ফলে সেখানে যে ‘শূন্যতার’ সৃষ্টি হয়েছে, সেই শূন্যতা পূরণের
জন্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সমন্বয়ে একটি ‘শান্তিরক্ষী’ বাহিনী গঠন করা,
যারা ২০১৫ সালে মার্কিন সৈন্যদের পরিবর্তে আফগানিস্তানে শান্তিরক্ষায়
নিয়োজিত হবে। তৃতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে ইসলামিক কট্টরপন্থীরা দক্ষিণ
এশিয়ায়, বিশেষ করে বাংলাদেশে নতুন করে একটি ঘাঁটি গাড়তে পারে। সে কারণে
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে একটি সন্ত্রাসবিরোধী মোর্চা গঠন করা প্রয়োজন।
চতুর্থত, এ অঞ্চলে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে বিপুল জ্বালানিসম্পদ রয়েছে (গভীর
সমুদ্রে)। মার্কিনি আইওসির এ ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে যথেষ্ট। বাংলাদেশের
ভূরাজনৈতিক অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের জন্য এ কারণেই যথেষ্ট
গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে অবস্থান করে খুব সহজেই মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ
করা যায় এবং বাংলাদেশের নিকট-প্রতিবেশী চিনের রাজনৈতিক উত্থান-পতনে প্রভাব
খাটানো সম্ভব। হিলারি কিনটনের বাংলাদেশ সফরের পর-পরই বাংলাদেশকে নিয়ে
যুক্তরাষ্ট্রের একটি গ্রান্ড স্ট্র্যাটেজি রচিত হয়েছে। এ লক্ষ্যেই
যুক্তরাষ্ট্র আকসা চুক্তি করতে চাচ্ছে। যদিও এখন অবধি বাংলাদেশ তার
সমর্থনের কথা জানায়নি। বঙ্গোপসাগরে মার্কিন রণতরীর দীর্ঘ উপস্থিতি,
বাংলাদেশকে তার স্ট্র্যাটেজিক কনসেপ্টের আওতায় নিয়ে আসা, এমনকি মালদ্বীপের
সঙ্গে একই মডেলে অপর একটি চুক্তির অর্থ একটাইÑ চিন যে এ অঞ্চল ঘিরে ‘ঝঃৎরহম
ড়ভ ঢ়বধৎঃং’ বা ‘মুক্তার মালা’ নীতি গ্রহণ করছে, তার বিরুদ্ধে একটা
অ্যালায়েন্স গড়ে তোলা। দক্ষিণ চিন সাগর থেকে মালাক্কা প্রণালি হয়ে ভারত
মহাসাগর পার হয়ে রাশিয়ান গালফ পর্যন্ত যে সমুদ্রপথ, এ পথের নিয়ন্ত্রণ নিতে
চায় চিন। চিন যে তেল আমদানি করে তার ৮০ ভাগ এই মালাক্কা প্রণালি হয়ে চিনে
যায়। তাই সংগত কারণেই চিনের জন্য তার ভারত মহাসাগরে উপস্থিতি অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। গাওদারে চিনা নৌবাহিনীর একটি ছোট্ট ইউনিটও থাকবে, যা কি না
ভারত মহাসাগরের সব নৌ মুভমেন্ট মনিটর করবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের
সম্পর্কের অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে গাওদার বন্দরের কৌশলগত গুরুত্ব আরও বেড়েছে।
স্ট্রেইট অব হরমুজ থেকে গাওদারের দূরত্ব মাত্র ১৮০ নটিকাল মাইল। আর ইরান
সীমান্ত রয়েছে মাত্র ৭২ কিলোমিটার দূরে। চিন প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার ব্যয়
করেছে গাওদার সমুদ্রবন্দর উন্নয়নে। চিন তার দক্ষিণাঞ্চলের ইউনান প্রদেশে
মধ্য এশিয়ার গ্যাস এই গাওদার বন্দর দিয়েই পাইপলাইনের মাধ্যমে নিয়ে যেতে
চায়। চিন শ্রীলংকার হামবানটোটায় একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করেছে।
তামিল টাইগারদের সঙ্গে যুদ্ধে চিন শ্রীলংকা সরকারকে সমর্থন করেছিল।
মিয়ানমারে রয়েছে চিনের নৌবাহিনীর একটি রাডার স্টেশন। সিটওয়েসহ আরও বেশ কটি
বন্দরে রয়েছে চিনা উপস্থিতি। ভারত মহাসাগরভুক্ত অঞ্চলে চিন যে বিশাল
প্রতিরক্ষা গড়ে তুলছে, তা মূলত তার জাতীয় স্বার্থকে সামনে রেখেই করা হয়েছে।
চিনের এই জাতীয় স্বার্থকে আঘাত করা ও চীনের নৌবাহিনীর ভূমিকাকে খর্ব করার
উদ্দেশ্য নিয়েই যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে সঙ্গে নিয়ে এই অঞ্চলে একটি মোর্চা গড়ে
তুলছে, যাতে বাংলাদেশকে অন্যতম একটি পার্টনার হিসেবে দেখতে চায়
যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই যে স্ট্র্যাটেজি তাতে
আদৌ পরিবর্তন আসবে না। জন কেরি না এলেও ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তারা
নিয়মিত বাংলাদেশ সফর করছেন এবং আগামীতেও করবেন। এখানে দেখতে হবে আমরা
আমাদের স্বার্থকে কীভাবে নিশ্চিত করতে পারি। সেই জাতীয় স্বার্থ খুব একটা
নিশ্চিত হচ্ছে না। মহাজোট সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের যথেষ্ট
উন্নতি হলেও নানা ইস্যুতে এখনো জটিলতা রয়ে গেছে। তিস্তাচুক্তি নিয়ে এখনো
ধূম্রজাল রয়ে গেছে। বলা হচ্ছে আগামীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্ভাব্য
ভারত সফরের সময় এই তিস্তাচুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে। কিন্তু ভারতীয়
রাজনীতিতে যে সমীকরণ, তাতে পশ্চিম বাংলার আপত্তির মুখে কেন্দ্রীয় সরকার আদৌ
চুক্তি করতে পারবে বলে মনে হয় না। উপরন্তু পশ্চিম বাংলায় ২০১৬ সালে
নির্বাচন। এই নির্বাচনে তিস্তাচুক্তি একটি ইস্যু হয়ে যেতে পারে। তবে বারাক
ওবামার ভারত সফরের মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশের চেয়ে ভারতকে গুরুত্ব দেয় বেশি। সেটাই স্বাভাবিক। ভারত উঠতি
অর্থনৈতিক শক্তি। সেখানে মার্কিনি স্বার্থ অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্র কখনোই
ভারতকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করবে না। এ অঞ্চলে
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র যে অক্ষ গড়ে উঠছে, বাংলাদেশকে সেই অক্ষেই অবস্থান গ্রহণ
করতে হবে। এর বাইরে গিয়ে বাংলাদেশ লাভবান হবে না। তবে মনে রাখতে হবে,
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র অক্ষকে ব্যবহার করেই বাংলাদেশকে তার জাতীয় স্বার্থ
নিশ্চিত করতে হবে। আর সেভাবেই পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করতে হবে। অতি সম্প্রতি
এই জানুয়ারিতেই ওবামার ভারত সফরের আগে নয়াদিল্লি ঘুরে এসেছেন
প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। সেখানে নয়াদিল্লিতে
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার আলাপ-আলোচনায় এ অঞ্চলের জঙ্গি
তৎপরতা ও নিরাপত্তার প্রশ্নটিও উঠে এসেছে। বিশেষ করে পশ্চিম বাংলার
বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সম্পর্কতা ও
ঢাকায় অতি সম্প্রতি ৪ জন আইএস জঙ্গির গ্রেফতার ইত্যাদি ঘটনায় বাংলাদেশের
উদ্বেগ রয়েছে। একই ধরনের উদ্বেগ রয়েছে নয়াদিল্লিরও। যুক্তরাষ্ট্রও এ অঞ্চলে
জঙ্গি তৎপরতার ব্যাপারে উৎকণ্ঠিত। নয়াদিল্লিতে ওবামা-মোদি আলোচনায়ও এই
বিষয়টি স্থান পাবে। এ ক্ষেত্রে নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন যে কোনো ‘উদ্যোগের’
সঙ্গে বাংলাদেশও সম্পৃক্ত হতে পারে। ভারত বড় অর্থনীতির দেশ। বড় বাজার।
পরিবর্তিত বিশ্ব রাজনীতিতে ভারত-চিন সম্পর্ক (ঈযরহফরধ) ওয়াশিংটনে একটা
উদ্বেগ সৃষ্টি করলেও শ্রীলংকায় সরকার পরিবর্তনে ভারতের একটা ‘ভূমিকার’
ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্ট। আগামীতে ভারত-চিন সম্পর্ক বৃদ্ধি না পেয়ে
একটা পারস্পরিক অবিশ্বাসের জন্ম হতে পারে। আর এটা থেকেই ফায়দা উঠাবে
ওয়াশিংটন। ওবামার দ্বিতীয়বার ভারত সফর এই সম্ভাবনাকে আরও শক্তিশালী করবে
মাত্র।
Dailyn AMADER SOMOY
26.1.15
0 comments:
Post a Comment