রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

সংবাদগুলো আমাদের আশাবাদী করে না

বাংলাদেশ যখন তার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশটির সফলতা যখন বহির্বিশে^ বাংলাদেশের অবস্থান একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে গেছে, তখন সাম্প্রতিক সময়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত কিছু কিছু সংবাদ ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সম্প্রচারিত সংবাদ আমাদের আশাবাদী করে না। সংবাদগুলো রাজউক ১৮ নম্বর সেক্টরে (রুয়াপ) রাজউক কর্তৃক নির্মিত বহুতল ভবন নির্মাণে দুর্নীতি ব্যবস্থাপনা ত্রুটি ও নানা অনিয়ম নিয়ে। উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরে একাধিক ভবনে (৭৯টি) ৬ হাজার ৬৩৬ ফ্ল্যাট রাজউক তৈরি করেছে। এটা প্রধানমন্ত্রীর একটি স্বপ্নের প্রকল্প। যেখানে ঢাকা শহরে কোনো খালি জমি আর খুঁজে পাওয়া যাবে না আগামীতে, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে হাইরাইজ ভবন নির্মাণ করে তা কিস্তিতে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত ছিল যুগান্তকারী। আবাসন খাতে এটা ছিল একটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ। সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সরকারের অনেকগুলো সাফল্যের মধ্যে এটা ছিল একটি। কিন্তু ২০১২-১৩ সালে গ্রাহকরা কিস্তির টাকা দেওয়া শুরু করলে এবং অনেক আগেই কিস্তির টাকা পরিশোধ করলেও ২০২১ সালে এসেও রাজউক ফ্ল্যাট মালিকদের অনুকূলে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রি করে দেয়নি। দুবছর হলো প্রায় কয়েক হাজার পরিবার এখানে বসবাস করছে। অথচ পাঁচ হাজার ফ্ল্যাট বিক্রি করা হলেও যারা ফ্ল্যাট কিনেছেন, তারা বসবাস করতে পারছেন না। এখানে বসবাস করার জন্য যে ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন, তা রাজউক নিশ্চিত করেনি। ফলে এখানে অসন্তোষ বাড়ছে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি (২০২১) ঢাকা পোস্টের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিলম্বে ফ্ল্যাট হস্তান্তরের ক্ষতিপূরণ চান মালিকরা। রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক-এ মালিক কল্যাণ সমিতি, সেক্টর-১৮-এর উদ্যোগে সেখানে অনিয়মের বিরুদ্ধে একাধিকবার মানববন্ধন হয়েছে। শর্ত ছিল ২০১৬ সালে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু ২০২১ সালে এসেও তা সবাইকে বুঝিয়ে দিতে পারেনি রাজউক। ফলে ক্ষোভ আর অসন্তোষ বাড়ছে। এখানে ব্যবস্থাপনার ত্রুটি চরমে উঠেছে। গত ১ মার্চ (২০২১) যুগান্তরের তিন কলামব্যাপী একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ‘সেবা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা’। প্রতিবেদনে নিম্নমানের লিফট সরবরাহ, ভবনের প্লাস্টার খসে পড়া, নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার, বাথরুম ফিটিংসে জং-ধরা ইত্যাদি নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে দোলনচাঁপা ভবনের ত্রুটিপূর্ণ লিফটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মাত্র দুবছরের মাথায় ভবনের চারটি লিফট অকার্যকর হয়ে পড়েছে! এ ব্যাপারে ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সভাপতি একাধিকবার প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোজাফফর আহমদকে লিখিতভাবে অবহিত করলেও ত্রুটিপূর্ণ লিফটগুলো সারিয়ে তোলা হয়নি। ফ্ল্যাট মালিকরা অভিযোগ করেছেন মাত্র দুবছরের মধ্যেই প্রতিটি লিফটে যদি ত্রুটি ধরা পড়ে, তাহলে আগামী ১০-১২ বছর পর আদৌ তা ব্যবহারের উপযোগী থাকবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট মালিকরা বুয়েটের অধ্যাপকদের দিয়ে প্রতিটি ভবনের লিফট পুনঃপরীক্ষার দাবি করেছেন। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অন্যান্য ভবনের লিফটেরও একই সমস্যা। কালের কণ্ঠের গত ২০ ফেব্রুয়ারির এক প্রতিবেদনেও এই প্রজেক্টের নানা অনিয়ম নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। দি ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস পত্রিকার এক প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছিল এই প্রজেক্টের নানা অনিয়মের কথা। সরকার জনস্বার্থে অনেক ভালো ভালো কাজ করছে। একাধিক মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এতে করে সরকার সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ওইসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের শৈথিল্য, অদক্ষতা, অনেক মহাপরিকল্পনার শেষ অবধি সফল হবে না! রাজউক অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প (উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টর) এমন একটি মহাপরিকল্পনা, যা এখন শুধু বিতর্কেরই জন্ম দিচ্ছে। এখানে রাজউক তার দক্ষতা প্রমাণ করতে পারেনি। পঞ্চবটির এই এলাকাটি সুরক্ষিত নয়। এই এলাকার পাশ দিয়ে চলে গেছে মিরপুর বেড়িবাঁধ, যা চলে গেছে আশুলিয়া পর্যন্ত। মিরপুরের এই বেড়িবাঁধটিতে একসময় রাতে প্রচুর ডাকাতি হতো। কিছুদিন আগে একজন অভিনেত্রী এই সড়কে ডাকাতির শিকার হয়েছিলেন। ২০১২ সালে এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাজউক হাইরাইজ ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু রাজউক কখনো নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়নি। যদিও তুরাগ থানা এখন পঞ্চবটি মোড়ে রাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে পুলিশ টহলের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু রাজউক কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী না দিয়েই দ্রুত ভবনগুলোর নির্মাণকাজ শেষ করেছে। এটাই ছিল তাদের বড় ভুল। ইতিমধ্যে নানাবিধ অভিযোগ উঠেছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধেও। শিডিউল অনুযায়ী যে লিফট সরবরাহ করার কথা ছিল, তা করা হয়নি। অত্যন্ত নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে ভবনগুলো তৈরি করা হয়েছে। হস্তান্তর হয়নি অনেক ভবন। কিন্তু সেখানে গেলে দেখতে পাবেন কোথাও কোথাও প্লাস্টার খসে পড়েছে। দরজাগুলো এক বছরের আগেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এখানে যে রাজউকের ‘ইন্সপেকশনের’ দরকার ছিল, রাজউক তা করেনি। দোলনচাঁপা ভবনে একাধিকবার লিফট ছিঁড়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, যারা লিফট সংযোজন, তত্ত্বাবধানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তারা ‘অদৃশ্য কারণে’ বিষয়টির গুরুত্ব দিচ্ছেন না। উপরন্তু তারা দ্রুত চাপ দিচ্ছেন ভবনগুলো বুঝে নেওয়ার জন্য। তাদের উদ্দেশ্য কী বুঝতে অসুবিধা হয় না কারও। কোনো রকম দায়সারাগোছের লিফট, ভবন এবং জেনারেটরের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে চায় রাজউক। একটি কোম্পানি এই এলাকায় ৪৭টি লিফট সরবরাহ করেছে। প্রতিটি লিফটের মান অত্যন্ত নিম্নমানের। এ ধরনের হাইরাইজ ভবনে যে ধরনের লিফট থাকার দরকার, তা এখানে সরবরাহ করা হয়নি। উপরন্তু লিফট সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সুপারভিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত পিডব্লিউডির কর্মকর্তাদের ‘সখ্য’ ইতিমধ্যেই প্রকল্প এলাকায় নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ৯,০৩০ কোটি টাকার প্রকল্প এটি। ৭৯টি হাইরাইজ ভবন এই এলাকায়, উত্তরা রাজউক প্রজেক্টে ‘এ’ ব্লকে তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে শুধু ‘এ’ ব্লকে ৭৯টি ভবনে ৬,৬৩৬টি ফ্ল্যাট তৈরি করে তা বিক্রি করা হয়েছে এবং সেখানে মানুষ বসবাস করছে। এরপর ‘বি’ ব্লকে তৈরি করা হবে ৮৬টি ভবনে ৭,২২৪টি ফ্ল্যাট। তারপর ‘সি’ ব্লকে ৭৫টি ভবনে তৈরি হবে আরও ৬,৩০০টি ফ্ল্যাট। এর অর্থ এই এলাকায় ২৪০টি হাইরাইজ ভবনে ২০,১৬০টি ফ্ল্যাট তৈরি করা হবে। ‘বি’ ও ‘সি’ ব্লক এখনো নির্মাণাধীন। অথচ শত শত ফ্ল্যাট খালি পড়ে আছে। এমতাবস্থায় ‘বি’ ও ‘সি’ ব্লকে এ ধরনের একটি বহুতল আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা কতটুকু যুক্তিযুক্ত, তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। শুধু উন্নয়নের নামে এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অর্থহীন। এতে দুর্নীতি বাড়ে ও সাধারণ মানুষ এতে উপকার পায় কম। এই যখন পরিস্থিতি তখন দৈনিক সমকালে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ ছাপা হয়েছিল গত ৮ জানুয়ারি (২০২১)। ‘ফ্ল্যাটে কষ্টের জীবন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তথাকথিত সার্ভিস চার্জের নামে একটি গোষ্ঠী এখানে তৎপর হয়ে উঠছে। এখানে এক ধরনের অদৃশ্য চাঁদাবাজি চলছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তথাকথিত বিল্ডিং কমিটির নামে সার্ভিস চার্জ আদায় করছেন, যার কোনো হিসাব নেই। এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালককে অবহিত করা হলেও, ‘অদৃশ্য’ কারণে তিনি নিশ্চুপ রয়েছেন। উপরন্তু ভবন কমিটি গঠন করার জন্য তিনি এখন অনলাইন ভোটিংয়ের ব্যবস্থা করছেন! যেখানে প্রজেক্টে বসবাসকারীদের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি, সেখানে ফ্ল্যাট মালিকরা অভিযোগ করেছেন এ মুহূর্তে এটা তার অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা উচিত নয়। কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে প্রকল্প পরিচালককে তথাকথিত ‘অনলাইন ভোটিং’ না করার অনুরোধ জানানো হলেও তিনি তা এড়িয়ে যাচ্ছেন। ফ্ল্যাট মালিকরা মনে করেন সার্ভিস চার্জ আদায়ের সঙ্গে যেহেতু দুর্নীতির একটি প্রশ্ন জড়িত, সেহেতু বিষয়টি রাজউকের নিজের হাতে রাখা উচিত। অথবা তৃতীয় পক্ষকে জড়িত করে ‘আউটসোর্সিং’-এর মাধ্যমে সার্ভিস চার্জ আদায়ের উদ্যোগ নিতে পারে রাজউক। নির্বাচন দিলে তাতে নানা জটিলতা তথা রাজনীতি জড়িয়ে পড়তে পারে। দোলনচাঁপা ভবনসহ আরও কিছু ভবনে গ্যারেজ স্বল্পতা রয়েছে। বিকল্প গ্যারেজ নির্মাণে রাজউকের কোনো আগ্রহ নেই। প্রকল্প এলাকায় মশার উপদ্রব থাকলেও রাজউকের কোনো উদ্যোগ নেই মশক নিধনে। কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় প্রকল্প এলাকার ভেতরেই চাষাবাদ হচ্ছে, ফলে জন্ম হচ্ছে মশক বাহিনীর। এই চাষাবাদ বন্ধের কোনো উদ্যোগ নেই রাজউকের। ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছেন এটা বন্ধেও রাজউক কোনো উদ্যোগ নেয়নি। রুয়াপ প্রধানমন্ত্রীর একটি অগ্রাধিকার প্রকল্প। জমি না দিয়ে ফ্ল্যাট তৈরি করে তা বিক্রি করা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। দীর্ঘ ৮ বছরেও ৭৯টি ভবনের ৬,৬৩৬ ফ্ল্যাট নির্মাণ শেষ ও তা ফ্ল্যাট মালিকদের যখন বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি, তখন ব্লক ‘বি’-তে ৮৬ ভবন (৭,২২৪ ফ্ল্যাট) ও ব্লক ‘সি’তে ৭৫ ভবনের (৬,৩০০ ফ্ল্যাট) নির্মাণকাজ কবে শেষ হবে, তা এক প্রশ্ন বটে। এখানে রাজউকের ব্যবস্থাপনার ত্রুটি রয়েছে। সরকারিভাবে একজন প্রকল্প পরিচালককে একাধিক প্রকল্পে না রাখার সিদ্ধান্ত হলেও শোনা যাচ্ছে রাজউক একই প্রকল্প পরিচালককে দিয়ে ব্লক ‘এ’, ব্লক ‘বি’ ও ব্লক ‘সি’-এর নির্মাণকাজ শেষ করতে চাইছে। এতে করে প্রকল্পের গতি পাবে না। ব্লক ‘এ’-এর জন্য বরাদ্দ ছিল ৯,০৩,০৭১ দশমিক ৮৭ লাখ টাকা। এই টাকার পরিমাণ এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, আমরা তা জানি না। সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকায় গড়ে তোলা এসব ভবন নানা অনিয়মে যদি জর্জরিত থাকে, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প ‘বিতর্কিত’ হয়ে পড়বে। সাধারণ ফ্ল্যাট মালিকরা তা চান না। এ জন্য রাজউকে শক্ত নেতৃত্ব দরকার। রাজউক একজন নতুন চেয়ারম্যান পেয়েছে। সুবর্ণজয়ন্তীতে উত্তরা প্রকল্পের সফলতা তার ওপর নির্ভর করছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ অত্যন্ত শক্ত মানুষ। তিনি রুয়াপের বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে দেখবেন, এটা প্রত্যাশা করি। ‘অনলাইন’ নির্বাচনের নামে একটি তুঘলকি সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজউক একটা অহেতুক ‘বিতর্ক’ সৃষ্টি করছে। এর কোনো প্রয়োজন নেই। বরং এই প্রকল্পে অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি আছেন। তাদের সঙ্গে নিয়ে রাজউকের নিয়ন্ত্রণে রুয়াপ পরিচালিত হওয়া উচিত বলে বসবাসকারীরা মনে করেন। Daily Desh Rupantor 18.3.2021

0 comments:

Post a Comment