রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন ও তিস্তা চুক্তির ভবিষ্যৎ

আগামী ২৭ মার্চ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচনে প্রথম পর্যায়ের ভোটগ্রহণ শুরু হচ্ছে। মোট ২৯৪ আসনের বিধানসভার এ নির্বাচনে প্রথম পর্যায়ে ৩০ আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১ এপ্রিল ৩০ আসনে, ৬ এপ্রিল ৩১ আসনে, ১০ এপ্রিল ৪৪ আসনে, ১৭ এপ্রিল ৪৫ আসনে, ২২ এপ্রিল ৪৩ আসনে, ২৬ এপ্রিল ৩৬ এবং সর্বশেষ ২৯ এপ্রিল ৩৫ আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলাফল জানা যাবে ২ মে। একই সময়সীমায় পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি কেরালা, তামিলনাড়ু, আসাম ও পণ্ডিচেরীতেও বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে সব ছাপিয়ে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের গুরুত্ব অনেক বেশি এবং তা ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। বেশ কিছু কারণে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার এ নির্বাচন অনেকের দৃষ্টি কেড়েছে। প্রথমত, ২০১১ সালে দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস বিধানসভার নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সর্বত্র আলোড়ন তুলেছিল। ২০১৬ সালে পরবর্তী নির্বাচনেও দলটির বিজয় সহজ হয়েছিল। কিন্তু ২০২১ সালে এসে দলটির সম্ভাব্য ‘বিজয়’ কতটুকু সহজ হবে, সেটি একটা প্রশ্ন। দ্বিতীয়ত, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি ও নির্বাচনে বিজেপি অন্যতম একটি শক্তিরূপে আবির্ভূত হয়েছে। বিজেপির উত্থান মমতাকে যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে, তার প্রতিক্রিয়া নির্বাচন-পরবর্তী রাজনীতিতে কতটুকু প্রতিফলিত হয়, সেদিকে দৃষ্টি থাকবে অনেকের। তৃতীয়ত, মমতার বিকল্প হিসাবে পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেস-সেক্যুলার ফ্রন্ট ঐক্য কি আদৌ একটি ‘শক্তি’ হিসাবে আবির্ভূত হবে? নাকি বিকল্প শক্তি হিসাবে দাঁড়িয়ে যাবে বিজেপি? চতুর্থত, তৃতীয়বারের মতো মমতা ব্যানার্জি যদি বিজয়ী হন, তাহলে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির ভবিষ্যৎ কী? এ ক্ষেত্রে মমতার আপত্তির কারণে শেষ পর্যন্ত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হলে তা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে কতটুকু প্রভাব ফেলবে? পশ্চিমবঙ্গের এ নির্বাচন খোদ নরেন্দ্র মোদির ‘রাজনীতির’ জন্য একটি ‘টেস্ট কেস’। মোদির জনপ্রিয়তা এখন আর আগের মতো নেই। ভারতে ‘কৃষক আন্দোলন’ ও অর্থনীতির দুরবস্থা মোদির জনপ্রিয়তায় কিছুটা হলেও ধস নামিয়েছে। জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ফোর্বস লিখেছে, গেল ৪২ বছরের মধ্যে ভারতের অর্থনীতি এত খারাপ অবস্থার দিকে আর কখনো যায়নি। যদিও এটা ঠিক, পশ্চিমবঙ্গসহ যেসব রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তার ফলাফল কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের ওপর আদৌ কোনো প্রভাব ফেলবে না। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি বিজয়ী হতে না পারলেও মোদি সরকারকে তা বেকায়দায় ফেলবে না। ২০১৬ সালের বিধানসভার নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি পেয়েছিল মাত্র তিনটি আসন। এবার তাতে পরিবর্তন আসবে। ১০০টির উপর আসনে বিজেপি বিজয়ী হবে বলে জনমত জরিপ বলছে। তবে বিজেপি আসামে বিজয়ী হবে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে বিজেপি সেখানে প্রথমবারের মতো বিজয়ী হয়েছিল। এর বাইরে কেরালায় সিপিআই(এম), তামিলনাড়ুতে ক্ষমতাসীন অল ইন্ডিয়া আন্না দ্রাভিদা মুন্নেত্রা কাজাগাম এবং ইউনিয়ন টেরিটরি পণ্ডিচেরীতে কংগ্রেস ও আন্না দ্রাভিদা মুন্নেত্রা কাজাগামের কোয়ালিশন ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে বলেই পর্যবেক্ষকরা অভিমত দিচ্ছেন। এসব অঞ্চলে বিজেপির তেমন প্রভাবও নেই। অনেকদিন ধরেই নরেন্দ্র মোদি পশ্চিমবঙ্গকে টার্গেট করছেন। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের প্রশ্নে মোদি সরকারের জন্য পশ্চিমবঙ্গের রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতে এনআরসি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস) এবং সিএএ’র (সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট) আলোকে পশ্চিমবঙ্গের এ নির্বাচন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বিজেপির শীর্ষ নেতারা, বিশেষ করে অমিত শাহর মতো নেতা যখন কিছু ‘মুসলমান’কে বাংলাদেশি হিসাবে আখ্যায়িত করে (তিনি উইপোকা হিসাবে এদেরকে চিহ্নিত করেছিলেন) তাদের বের করে দেওয়ার হুমকি দেন, তখন মমতা ব্যানার্জি তাদের পাশে এসে দাঁড়ান। মমতার বারবার বিজয়ের পেছনে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের ভোটের বড় ভূমিকা রয়েছে। এ কারণেই তিনি বিজেপির টার্গেট। তবে এবার মুসলমানদের ভোট তিনি কী পরিমাণ পাবেন, তা এক প্রশ্ন। কারণ রাজনীতির মঞ্চে আবির্ভূত হয়েছেন মালদহের ফুরফুরা শরিফের পীরের ছেলে ‘ভাইজান’ খ্যাত আব্বাস সিদ্দিকী। তার ভাই নওশাদ সিদ্দিকী ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের চেয়ারম্যান। তারা তৃণমূলের সঙ্গে ঐক্য করেননি। ঐক্য করেছেন বাম আর কংগ্রেসের সঙ্গে। এই ঐক্য তৃণমূলের মুসলমান ভোট কেড়ে নেবে। এটা মমতার একটি ব্যর্থতা যে তিনি আব্বাস সিদ্দিকীর মতো তরুণ মুসলিম নেতাকে কাছে টানতে পারেননি। তরুণ মুসলমান ভোটারদের মাঝে আব্বাস সিদ্দিকীর জনপ্রিয়তা আছে। তার সমর্থকদের ভোট তৃণমূল পাবে না। ফলে পরোক্ষভাবে সুবিধা পাবে বিজেপি। এই নির্বাচন সামনে রেখে মমতা ব্যানার্জির একটি মন্তব্য বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিষয়টি এখন সামনে নিয়ে এসেছে। মমতা ব্যানার্জির একটি মন্তব্য ছাপা হয়েছে এভাবে-‘তিস্তা উত্তরবঙ্গের হিস্সা। আগে নিজে খাব, তারপর তা দেব। আগে আমার ঘরে রাখতে হবে। তারপর দেওয়ার কথা উঠছে।’ গত ৭ মার্চ শিলিগুড়িতে মহামিছিল করে তিনি এ মন্তব্যটি করেন। এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিস্তার পানি বণ্টনের ব্যাপারে তার অবস্থান তিনি আরও স্পষ্ট করলেন। ইতোমধ্যে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, ব্যক্তিগতভাবে মোদিও চান তিস্তার পানি বণ্টনের ব্যাপারে একটি চুক্তি হোক। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি ঢাকায় এসেও বাংলাদেশের ন্যায্য দাবির প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত করেননি। বরং উল্টো তিস্তার পানি বণ্টনের সঙ্গে আত্রাই পানি বণ্টনের প্রশ্নটিও যুক্ত করেছিলেন। কাজেই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচনের আগে যখন মমতা ব্যানার্জি তিস্তার পানি বণ্টনের প্রশ্নে এ ধরনের মন্তব্য করেন, তখন স্পষ্টতই তা বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য যথেষ্ট চিন্তার কারণ। তিস্তার পানির ওপর আমাদের অধিকার ন্যায়সঙ্গত ও যৌক্তিক। আন্তর্জাতিক আইন আমাদের পক্ষে। উজানের কোনো দেশ (এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) পানি প্রত্যাহার করে নিতে পারে না। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। সেখানে পানির চাহিদা আছে সত্য, কিন্তু তা কোনো অবস্থাতেই বাংলাদেশকে পানিবঞ্চিত করে নয়। আমাদের দাবি ভারত সরকারের কাছে। আর ভারত সরকারের উচিত বাংলাদেশের দাবির প্রতি সম্মান জানানো। এ ক্ষেত্রে কোনো ‘ইস্যু’ (এ ক্ষেত্রে তিস্তার পানি বণ্টন) যদি ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কোনো অন্তরায় সৃষ্টি করে, তা সমাধানের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। মমতা ব্যানার্জি তিস্তার পানি বণ্টনের প্রশ্নে যখন একটি নেতিবাচক ধারণার জন্ম দেন, তখন সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ওঠে-বাংলাদেশের ভূমিকা এখন কী হবে? বাংলাদেশের উচিত হবে প্রস্তাবিত তিস্তা পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পটি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। আশার কথা, এ প্রকল্পে চীনা অর্থায়নের আশ্বাস পাওয়া গেছে। চীন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশকে ঋণ প্রদানের শর্ত দিলে বাংলাদেশ তা গ্রহণ করে। প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্পে বাংলাদেশের সীমানার ভেতরের তিস্তা নদীর ১১৫ কিলোমিটারে ব্যাপক খনন চালিয়ে নদীর মাঝখানের গভীরতা ১০ মিটার বাড়িয়ে ফেলা হবে এবং নদীর প্রশস্ততাকে ব্যাপকভাবে কমিয়ে ফেলা হবে। নদী শাসনের মাধ্যমে জমি উদ্ধার করা হবে এবং ব্যাপক চাষাবাদের উদ্যোগ নেওয়া হবে। নদীর দুই তীর বরাবর ১১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে চার লেনের সড়ক নির্মাণ করা হবে। একইসঙ্গে বর্ষাকালে প্রবাহিত নদীর বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত জলরাশি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এ প্রকল্প বাংলাদেশের সবচেয়ে দারিদ্র্যপীড়িত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বসবাসকারী সাধারণ মানুষের জনজীবনে বড় পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা তৈরি করলেও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, ভারত এ প্রকল্পের ব্যাপারে তাদের আপত্তি জানিয়েছে। এ কারণে প্রকল্পটি এখন পর্যন্ত একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয়নি। ভারতের যুক্তি হচ্ছে, প্রকল্পে চীনের অংশগ্রহণের কারণে তাদের দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হবে। ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পে বেশ কয়েকশ’ চীনা নাগরিক কর্মরত থাকবেন। ভারতের শিলিগুড়ি করিডোরের কাছে বহুল আলোচিত ‘চিকেন লেকে’র কাছাকাছি চীনা নাগরিকদের উপস্থিতি তাদের ভাষায় ভারতের জন্য একটি নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এর পেছনে সত্যতা কতটুকু আছে আমরা জানি না। প্রস্তাবিত তিস্তা পানি ব্যবস্থাপনার প্রশ্নটি আমাদের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কারণ তিস্তার উজানে পানি প্রত্যাহারের ফলে মাঝেমধ্যে লালমনিরহাটের ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ ৫০০ কিউসেকে এসে দাঁড়ায়। অথচ নদী রক্ষার জন্য প্রয়োজন হয় এক হাজার কিউসেক। আর সেচ প্রকল্পের জন্যও আমাদের দরকার ন্যূনতম তিন হাজার কিউসেক পানি। সুতরাং তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৭ ও ২০১১ সালে দু-দুবার তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু মমতা ব্যানার্জির আপত্তির মুখে শেষ পর্যন্ত চুক্তিটি আর স্বাক্ষরিত হয়নি। এখন মমতা ব্যানার্জি যদি আবারও ক্ষমতায় আসেন, তাহলে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এ ক্ষেত্রে মোদি সরকারের ইচ্ছা থাকলেও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো চুক্তি করতে পারবে না। ফলে বাংলাদেশকে চীনের সাহায্য ও সহযোগিতা নিয়ে তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই। তবে পশ্চিমবঙ্গে যদি রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়, তাহলে তিস্তা চুক্তি হতে পারে। কিন্তু সে সম্ভাবনা ক্ষীণ। সুতরাং পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচন আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বারবার মমতা ব্যানার্জির ওপর আস্থা রেখেছি। আমরা তাকে সম্মানিত করেছি। কিন্তু বাংলাদেশের ন্যূনতম চাহিদার প্রতি মমতা ব্যানার্জি কোনো সম্মান দেখাননি। এমনকি তিনি নিজে অধ্যাপক কল্যাণ রুদ্রকে দিয়ে একটি কমিশন পর্যন্ত গঠন করেছিলেন। অধ্যাপক রুদ্র নিজে অভিমত দিয়েছিলেন, উত্তরবঙ্গের চাহিদা মিটিয়েও বাংলাদেশে পর্যাপ্ত পানি দেওয়া সম্ভব। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি অধ্যাপক রুদ্রের মতামত গ্রহণ করেননি। আসলে ‘তিস্তার পানি বণ্টন’ মমতার জন্য একটি ‘রাজনৈতিক ইস্যু’। এ ইস্যুকে ব্যবহার করে তিনি বারবার বিজয়ী হয়েছেন। সম্ভবত এবারও বিজয়ী হবেন। সুতরাং তিস্তার পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি Jugantor 14.3.2021

0 comments:

Post a Comment