রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

কূটনীতিতে বাংলাদেশ ৫০ বছরের

বাংলাদেশ যখন তার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছে, তখন কূটনীতিতে দেশটির সাফল্যের পাল্লাটা কম ভারী নয়। গেল ৫০ বছরে আমাদের বেশ কিছু সাফল্য রয়েছে। তবে সেই সঙ্গে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আগামী ২০৩১ সালে বাংলাদেশ পালন করবে হীরকজয়ন্তী। আর তাই চ্যালেঞ্জগুলোকে ‘এড্রেস’ করেই নিতে হবে মহাপরিকল্পনা। সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচ শীর্ষ নেতাÑ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সলিহ, নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারী, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং ও শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। বাংলাদেশের কূটনীতির জন্য এটা একটা বড় পাওয়া। দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ পাঁচ নেতা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে ও ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। বিশ্ব নেতাদের বাংলাদেশে উপস্থিতি এর আগেও আমরা একবার দেখেছিলাম ১৯৯৭ সালে যখন বাংলাদেশ স্বাধীনতার ২৫ বছর পূর্তি পালন করেছিল। তখনো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা, ইয়াসির আরাফাত ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট সুলেইমান ডেমিরেল। advertisement বাংলাদেশের সাফল্যের পালকে আরেকটি পালক যোগ হয়েছে যখন দেশটি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে চলতি ২০২১ সালে। ২০২৬ সালে স্বীকৃতি মিলবে উন্নয়নশীল দেশের। এ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ রয়েছে অনেক। উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ায় বিশ্বে আমাদের মর্যাদা বেড়েছে সন্দেহ নেই তাতে, কিন্তু কিছুটা ‘ঝুঁকি’ রয়েছে। রপ্তানি আয় ৮ থেকে ১০ শতাংশ কমে যাওয়ায় ঋণ প্রাপ্তিতে জটিলতা, ইউরোপ ও কানাডায় পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রত্যাহার ইত্যাদি ঝুঁকি তৈরি হলো। ফলে এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবিল করার জন্য এখন থেকেই নিতে হবে মহাপরিকল্পনা। গোল্ডম্যান স্যাক্স পরবর্তী যে উঠতি ১১টি শক্তিশালী অর্থনীতির কথা বলেছেন (এন-১১), বাংলাদেশ রয়েছে তার শীর্ষে। এটা বাংলাদেশের জন্য একটা বড় প্রাপ্তি। গোল্ডম্যান স্যাকসের মূল্যায়নে বাংলাদেশ অবস্থান করছে উঠতি অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশ ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া কিংবা মেক্সিকোর পাশাপাশি। আর তাই বিখ্যাত ম্যাগাজিন ডিপ্লোম্যাটের মন্তব্য ছিল এ রকম South Asia Has a New Leader : will the world Take Note ? ( Diplomat, October 23, 2020 ) . বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার নতুন অর্থনৈতিক শক্তিÑ বিশ্বকে এখন এ দিকেই নজর দিতে হবে। বাংলাদেশের সাফল্যের কথা আছে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনেও। নিকোলাস ক্রিস্টফ তার প্রবন্ধ Look to Bangladesh (১০ মার্চ ২০২১)-এ লিখেছেন সে কথা। বাংলাদেশ যে ‘অর্জন’ করেছে তার পেছনের কারণ কী? ক্রিস্টফের মতে, What was Bangladesh's secreat ? It was education and girls - শিক্ষা, বিশেষ করে মেয়েশিশুদের শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে বংলাদেশ। আর এভাবেই অনেক দেশকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের উদ্ধৃতি দিয়েছেন ক্রিস্টফ। লিখে The World Bank calls Bangladesh an inspiring story of reducing poverty - with 25 million Bangladeshi,s lifted from poverty over 15 years. The share of children stunted by malnutritiin has fallen by about half in, Bangladeshsince 1991 and is niw lower than in India. এটাই হচ্ছে মোদ্দা কথা। বাংলাদেশের সাফল্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। advertisement কূটনীতিতে সাফল্যের কথা যদি বলতে হয়, তা হলে বলতে হবে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ও ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সদস্যপদ প্রাপ্তির মাত্র চার বছরের মাথায় ১৯৭৮-১৯৮০ সময়সীমায় বাংলাদেশ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল। ২০০০-২০১২ সালেও বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়েছিল। ১৯৮৬ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পরে সংসদের স্পিকার (১৯৯৬-২০০১) হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৪১তম অধিবেশনে (১৯৯৬) সভাপতিত্ব করেছিলেন। আরেকটি সাফল্য হচ্ছে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ। গড়পড়তা প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি সেনাসদস্য বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত ছিলেন এবং এখনো আছেন। বিশেষ করে সোমালিয়া, রুয়ান্ডা, মোজাম্বিক, কুয়েত, বসনিয়া-হারজেগোভিনা, আইভরিকোস্ট, হাইতি, সিয়েরা লিওনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কার্যক্রম আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। একাধিক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের প্রশংসা করেছেন। এর মধ্য দিয়ে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। এমনকি সিয়েরা লিওনের কোনো কোনো অঞ্চলে বাংলা ভাষা ‘দ্বিতীয় ভাষা’ হিসেবে চালু হয়েছে। বাংলাদেশকে স্থানীয় মানুষ নামে চেনে। কৃষিক্ষেত্রে সেখানে বাংলাদেশিরা কাজ করছে। বাংলাদেশের জন্য একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে সিয়েরা লিওনকে সামনে রেখে আফ্রিকায় বাংলাদেশি পণ্যের একটা বাজার গড়ে তোলার। মানবসম্পদের দিক দিয়ে বাংলাদেশিদের জন্য একটা বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে সেখানে। ইসলামি বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির একটি অন্যতম দিক। এর ভিত্তি গড়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামি ঐক্য সংস্থার (ওআইসি) সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। তার সফরসঙ্গীদের মধ্যে তোফায়েল আহমেদের মতো তরুণ নেতৃত্বের পাশাপাশি আতাউর রহমান খানের মতো রাজনীতিবিদও ছিলেন (উইকি পিডিয়া)। মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায় যখন জিয়াউর রহমানের শাসনামলে জেরুজালেম ও ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে গঠিত ‘আল-কুদস’ কমিটিতে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শুধু তাই নয়, ইরান-ইরাক দীর্ঘ যুদ্ধে (১৯৮০-১৯৮৮) মধ্যস্থতা করার জন্য যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, বাংলাদেশ ওই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৯১ সালে ইরাক কুয়েত আক্রমণ ও সীমিত সময়ের জন্য কুয়েত দখল করে নিলে সৌদি আরব অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হলে জাতিসংঘের নেতৃত্বে Operation Desert Shield গঠিত হয়। বাংলাদেশ এখন একটি কোয়ালিশন ফোর্সের পক্ষ হয়ে প্রথম গালফ যুদ্ধে অংশ নেয়। পরে কুয়েতে বাংলদেশ সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট স্থাপন করা হয়, যাদের কাজ ছিল কুয়েতকে ল্যান্ডমাইনমুক্ত করা। ইরাক-কুয়েত যুদ্ধে ইরাকই ওইসব মাইন স্থাপন করেছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কুয়েত থেকে ল্যান্ডমাইন অপারেশনের কাজে নিয়োজিত ছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরের সদস্যরা এখনো সেখানে আছে। বলা ভালো, প্রথম গালফ যুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের ৫৯ জন সদস্য এবং পরে ল্যান্ডমাইন অপসারণে ৭২৮ জন সদস্যকে হারিয়েছে। মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায় যখন ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বরে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয় সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন Islamic Military Counter Terrorism Coalition ( IMCTC )- এ যোগ দিতে। বর্তমানে ৪১টি দেশ এর সদস্য। IMCTC এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলামিক উগ্র জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সামরিক অভিযান পরিচালনা করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের এপ্রিলে IMCTC এর একটি সামরিক মহড়া প্রত্যক্ষ করেন। IMCTC এ বাংলাদেশের অংশগ্রহণ প্রমাণ করে মুসলিম বিশ্ব বাংলাদেশকে কত গুরুত্ব দেয়। কূটনীতিতে বাংলাদেশের সাফল্য এখানেই যে, বাংলাদেশ মুসলিম বিশ্বে তার একটি অবস্থান তৈরি করে নিতে পেরেছে। বাংলাদেশের কূটনীতির ক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় উল্লেখযোগ্যÑ আর তা হচ্ছে বাংলাদেশ আঞ্চলিক সহযোগিতাকে গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশ মনে করে আঞ্চলিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের উন্নয়ন সম্ভব। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের উদ্যোক্তা। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এটা উপলব্ধি করে সত্তর দশকের শেষের দিকে দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে একটি চিঠি লিখেছিলেন। বাংলাদেশের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতেই ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় দক্ষিণ এশিয়ার নেতাদের উপস্থিতিতে সার্ক গঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশ বিমসটেকেরও (১৯৯৭ সালে গঠিত) উদ্যোক্তা। বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোতে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন জনগোষ্ঠীর বসবাস ও দেশগুলোর সম্মিলিত জিডিপির পরিমাণ ৩ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার। এই সংস্থাটি হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে যোগসূত্র। বলা যেতে পারে বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলগুলোর (বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড) সঙ্গে সমুদ্র নেই ও পাহাড়-পর্বত বেষ্টিত দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশের (ভুটান ও নেপাল) মধ্যকার একটি যোগসূত্র। ২০০৪ সালে সংস্থাটি Bay of Bengal Initiative for Multi Sectoral Technical and Economic Cooperation হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। কূটনীতিতে বাংলাদেশের আরও তিনটি উদ্যোগের কথা বলা যেতে পারে। বাংলাদেশ উদ্যোগ নিয়েছিল মুসলমানপ্রধান ৮টি দেশকে নিয়ে Developing 8 গঠন করার। এই ৮টি দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, মিসর, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া ও পাকিস্তান। ১৯৯৭ সালে এটি গঠিত হয়। কৃষি, বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়ে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে সংস্থাটি কাজ করছে। দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো, মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, প্রযুক্তি সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালে APTA - Asia Pacific Trade Agreement গঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশ ছিল অন্যতম উদ্যোক্তা। বাংলাদেশের পাশাপাশি চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলংকা, ভারত, লাওস APTA -এর সদস্য। APTA ভুক্ত অঞ্চলের জনসংখ্যা ২৯২১ দশমিক ২ মিলিয়ন, আর মোট জিডিপি ১৪৬১৫ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার। APTA -ভুক্ত দেশগুলো এখন একটি অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হচ্ছে ২০০৬ সালে বাংলাদেশের ASEAN Regional Forum ( ARF) -এ যোগদান। বাংলাদেশের পূর্বমুখী পররাষ্ট্রনীতি এবং অদূর ভবিষ্যতে আসিয়ানে যোগদানের সম্ভাবনার ক্ষেত্রে ARF একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। বলা ভালো ভারত আসিয়ানের সঙ্গে ২০০৯ সালে একটি মুক্তবাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা ২০১০ থেকে কার্যকর হয়েছে। এই চুক্তির কারণে ভারত শুল্কমুক্তভাবে তার পণ্য নিয়ে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোতে যেতে পারবে। প্রসঙ্গক্রমেই ত্রিদেশীয় মহাসড়কের কথা আমরা উল্লেখ করতে পারি। বাংলাদেশ এই ত্রিদেশীয় মহাসড়কে যুক্ত হতে চাইছে। সম্প্রতি মোদি-হাসিনা ভার্চুয়াল বৈঠকে বাংলাদেশ এই প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবিত ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড মহাসড়ক বাংলাদেশের জন্যও একটি সম্ভাবনার সৃষ্টি করতে পারে। ভারতের East West Evonomic Corridor -এর এটা একটা অংশ। মহাসড়কটি ভারতের মণিপুর রাজ্যের Moreh শহরকে মিয়ানমারের ওপর দিয়ে থাইল্যান্ডের Myawaddy Mae Sot শহরকে সংযুক্ত করবে। পরে এই মহাসড়ক আরও সম্প্রসারিত হবে লাওস ও ভিয়েতনাম পর্যন্ত। বাংলাদেশের পণ্যও অদূর ভবিষ্যতে এই মহাসড়ক ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে যেতে পারবে। বাংলাদেশের জন্য পার্শ¦বর্তী দুটি বড় দেশের (ভারত ও চীন) সঙ্গে সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ছিটমহল সমস্যার সমাধান করেছে। ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমানা আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে চিহ্নিত হয়েছে। এগুলো দুটি দেশের সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে গেলেও, সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়নি। তিস্তার পানিচুক্তি স্বাক্ষর হয়নি। সর্বশেষ ফেনী নদীর ওপর মৈত্রী সেতু উদ্বোধন, ভারতকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে দেওয়া ইত্যাদি ঘটনায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উন্নত হলেও অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর, চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ মহাপরিকল্পনায় বাংলাদেশের যোগদান, বাংলাদেশে চীনের উন্নয়ন সহযোগিতা বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করলেও বাংলাদেশ অত্যন্ত কৌশলে একটি ভারসাম্যমূলক কূটনীতি অনুসরণ করছে। কোনো একটি দেশের প্রতি ‘ঝুঁকে পড়ার’ প্রবণতা বাংলাদেশ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে। কূটনীতিতে সাফল্য এখানেই নিহিত। তবে কিছু কিছু সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ না করলেই নয়। সমুদ্রসীমা (ভারত ও মিয়ানমার) নির্ধারণ হয়ে যাওয়ার পরও সমুদ্রের বিশাল সম্পদ আহরণ ও ব্যবহারের ব্যাপারে কোনো বড় পরিকল্পনা চোখে পড়ে না। একুশ শতক হবে ‘ব্লু-ইকোনমি’নির্ভর। ২০১৪ সালে তৎকালীন জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ঢাকা সফরের সময় জাপান ইওএ-ই পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছিল। বঙ্গোপসাগরভুক্ত দেশগুলো উন্নয়নে (অর্থনীতি, অবকাঠামো, জ্বালানি, উন্নয়ন প্রক্রিয়া) জাপান অংশীদার হতে চায়, যাতে জাপানের স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থ রক্ষিত হয়। বলা হচ্ছে, এই পরিকল্পনার আওতায় জাপান ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরকে সংযুক্ত করতে চায়। BIG- B পরিকল্পনা Japan - Bangladesh Comprehensive Partnership এর অংশ। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এ অঞ্চলে জাপান যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম অংশীদার। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গঠিত Quadrilateral Security Dialogue - QUAD , যেখানে সদস্য রয়েছে ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। এটি একটি সামরিক জোটও বটে। এই জোট চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহত হতে পারে বলে গবেষকদের ধারণা। বাংলাদেশের স্ট্র্যাটেজিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ ভৌগোলিক কারণে কৌশলগতভাবে ভারত, নেপাল, ভুটান ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর গেটওয়ে। এটা বিবেচনায় নিয়েই যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তার যে স্ট্র্যাটেজি তাতে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। গেল অক্টোবরে (২০২০) মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বিগান তার ঢাকা সফরে বাংলাদেশকে এই প্রস্তাব দিয়ে গিয়েছিলেন। যদিও বাংলাদেশ তাতে রাজি হয়নি। সুতরাং কূটনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আগামীতে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দক্ষ জনশক্তি যদি তৈরি করা না যায়, তা হলে কূটনীতিতে সফলতা পাওয়া যাবে না। Amader Somoy 26.3.2021

0 comments:

Post a Comment