রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ইরাক নিয়ে বড় প্রশ্ন থেকেই গেল

যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক আগ্রাসনের ৯ বছর পর ১৭ ডিসেম্বর ইরাক থেকে তার সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ইতিহাসে এই ইরাকি আগ্রাসন এখন কিভাবে চিহ্নিত হবে? ২০০৩ সালের ২০ মার্চ ইরাকের কাছে তথাকথিত WMD (Weapons of Mass Destruction) আছে, এই অভিযোগ তুলে ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনী ইরাক আক্রমণ করেছিল। ৯ এপ্রিল তারা দখল করে নিয়েছিল বাগদাদ। তখনো জীবিত ছিলেন সাদ্দাম হোসেন। তিনি প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারেননি। ডিসেম্বরে নিজ শহর তিকরিতের পার্শ্ববর্তী একটি ছোট্ট শহর আদদাওরে মাটির নিচে একটি গর্তে লুকানো অবস্থায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিচারে তার ফাঁসি হয়েছিল। ২০০৩ থেকে ২০১১_সময়টা দীর্ঘ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অর্জনটা কী? কিংবা ইরাকিরাই বা এই আগ্রাসন থেকে কী পেল?
ইরাক আগ্রাসনের ঠিক তিন দিন আগে ১৭ মার্চ তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক টিভি ভাষণে সম্ভাব্য ইরাক আক্রমণের একটা যুক্তি দিয়েছিলেন এভাবে, 'We will deliver the food and medicine you need. We will tear down the apparatus of terror and we will help you to build a new Iraq that is prosperous and free'। ইরাকি জনগণকে বুশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি তাদের খাদ্য ও ওষুধপত্র দেবেন। একটি সমৃদ্ধিশালী ইরাক তিনি উপহার দেবেন। আজ ৯ বছর পর যদি হিসাবের খাতা মেলানো যায়, তাহলে এ প্রশ্নটাই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে? একটি সমৃদ্ধিশালী ইরাকের কি জন্ম হয়েছে। সাদ্দাম হোসেনের জমানায় যে ইরাক একটি ধনী রাষ্ট্ররূপে পরিচিত ছিল, আজ সেই ইরাকের রাজধানী বাগদাদে বিদ্যুৎ নেই, সুপেয় পানি পাওয়া যায় না, দরিদ্রতা অনেক বেশি। বুশ বলেছিলেন, তিনি সন্ত্রাসীদের মূল কাঠামো ভেঙে দেবেন। তিনি সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসিতে চড়িয়েছেন সত্য, কিন্তু ইরাক আজ পরিণত হয়েছে আত্মঘাতী বোমাবাজদের স্বর্গরাজ্যে। ইরাক যুদ্ধ ইরাকের কী ক্ষতি করেছে, তা নিচের একটি পরিসংখ্যান দিয়েই বোঝা যাবে। যুদ্ধে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১১০৬৬৩ থেকে ১১৯৩৮০ জন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা মৃত্যুর সংখ্যা ৪৪৮৪ জন, বহুজাতিক বাহিনীর ৪৮০৩ জন। যুক্তরাষ্ট্রের আহতের সংখ্যা ৩২২০০ জন। ইরাকি সাধারণ মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা ১০৩৬৭৪ থেকে ১১৩২৬৫ জন। যুদ্ধে স্থানচ্যুত হয়েছে ১ দশমিক ২৪ মিলিয়ন মানুষ, আর শরণার্থী হয়েছে ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন জনগোষ্ঠী। ইরাকি যুদ্ধের মোট খরচ ৮০৬ মিলিয়ন ডলার। এর সঙ্গে ইরাক যুদ্ধে আহত যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সদস্যদের চিকিৎসাভাতা যদি যোগ করা হয়, যার পরিমাণ ৪২২ মিলিয়ন থেকে ৭১৭ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে_তাহলে ইরাক যুদ্ধের খরচ ১ ট্রিলিয়ন ডলারের অঙ্ককেও ছাড়িয়ে যাবে। ইরাক পুনর্গঠনে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮২ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ইরাক সরকার জোগান দেবে ১০৭ দশমিক ৪১ মিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্র জোগান দেবে ৬১ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পাওয়া গেছে ১৩ দশমিক ০৩ মিলিয়ন ডলার। যুদ্ধ মানেই তো ব্যবসা। ইরাকের পুনর্গঠনের কাজ করছে মার্কিন কম্পানিগুলো। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে মার্কিন প্রশাসন ছয়টি মার্কিন বৃহৎ করপোরেশনের সঙ্গে ইরাক পুনর্গঠনের কাজের জন্য গোপনে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। এই কম্পানিগুলো আগে যুদ্ধের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। যুদ্ধের কারণে তারা লাভবান হয়েছিল। ওই কম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বেকটেল গ্রুপ (Bectel Group), যারা ইরাকের যোগাযোগব্যবস্থা, বিদ্যুৎ বিতরণ, পানি এবং পয়োনিষ্কাশন-ব্যবস্থা পুনর্গঠনের কাজে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। ইরাক যুদ্ধ মার্কিন সেনাদের জন্য কোনো সুখ বয়ে আনেনি। ইরাক ফেরত মার্কিন সৈনিকদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। যেখানে প্রতি এক লাখ সাধারণ মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যা ১১ দশমিক ২৬ জন, সেখানে যুদ্ধ ফেরত মার্কিন সেনাদের এই সংখ্যা ৩৮ জন। আফগান যুদ্ধের এ পরিসংখ্যান (খরচ, মৃত্যু ইত্যাদি) আমাদের দিয়েছে একটি আমেরিকান গবেষণা সংস্থা The Center for American Progress। এ সংস্থার দুই গবেষকের (Matt Duss and Peter Juul) গবেষণায় (The Progress Report, 16 December, 2011) এ তথ্যগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। এ সংস্থার পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের অন্য একটি গবেষণা সংস্থা Maplecraft-এর গবেষণায় ইরাককে পৃথিবীর তিনটি সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্রের মধ্যে একটি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত Rand Corporation তাদের একটি গবেষণায় (২০১০) উল্লেখ করেছিল, ইরাক যুদ্ধ ইরাকে একটি বড় ধরনের অস্থিতিশীলতার জন্ম দিয়েছে। এ অঞ্চল ঘিরে ভবিষ্যতে একটি বৃহৎ শিয়া রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে এবং শিয়া ও সুনি্নদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের সূচনা হতে পারে। এ গৃহযুদ্ধের ফলে সৌদি আরব, ইয়েমেন, লেবানন ও বাহরাইনের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হতে পারে।
ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের এক দিনের মাথায় ইরাক থেকে যেসব খবরাখবর আসছে, তা এ ইঙ্গিতই দিচ্ছে যে ইরাক একটি বড় ধরনের অস্থিতিশীলতার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। সেখানে শিয়া ও সুনি্ন সম্প্রদায় পরস্পরের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। এমন সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে যে শিয়া প্রভাবাধীন মালিকি সরকার সুনি্ন ভাইস প্রেসিডেন্টকে ও তাঁর দেহরক্ষীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিল। এ ঘটনার মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হয়, বাগদাদে ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়ে গেছে। এরই মধ্যে ইরাকের উপ-প্রধানমন্ত্রী সালেহ আল মুতলাব সরাসরি প্রধানমন্ত্রী মালিকির সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, মালিকি সাদ্দাম হোসেনের চেয়েও খারাপ। তিনি প্রধানমন্ত্রী মালিকিকে যিনি একজন শিয়া নেতা, তাঁকে স্বৈরশাসক হিসেবে অভিহিত করেছেন। এদিকে ইরাকের ভাইস প্রেসিডেন্ট (যিনি একজন সুনি্ন সম্প্রদায়ের লোক) তারেক আল হাশমি তাঁর বিরুদ্ধে মালিকি সরকার যে সন্ত্রাসের অভিযোগ এনেছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ইরাক একটি বড় দেশ (৪৩৮৩১৭ বর্গকিলোমিটার), বাংলাদেশের চেয়ে তিনগুণ বড়। সাদ্দাম হোসেন অত্যন্ত শক্ত হাতে দেশটি শাসন করেছিলেন। তাঁর সময়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী চিন্তাধারা বিকশিত হয়নি। উত্তরে কুর্দি অধ্যুষিত এলাকা, দক্ষিণাঞ্চলে ইরান সমর্থিত শিয়া অঞ্চল আর বাগদাদকেন্দ্রিক মধ্যাঞ্চল এখন আলাদা হয়ে যেতে পারে। কুর্দিরা (তিনটি অঞ্চল) এক ধরনের স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে আসছে। তাদের নিজস্ব পার্লামেন্টও আছে। তারা স্বাধীনতার দাবি করে বসতে পারে। জনগোষ্ঠীর তিন ভাগের একভাগ মাত্র সুনি্ন সম্প্রদায়ভুক্ত। অথচ এরাই দেশটি শাসন করে আসছিল। অন্যদিকে তিন ভাগের দুই ভাগ জনগোষ্ঠী শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত। ইরানের শিয়া নেতৃত্বের সঙ্গে ইরাকি শিয়াদের একটি সম্পর্ক রয়েছে। ইরাকি শিয়ারা ইরাকি মডেলে ইরাকে একটি ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ার উদ্যোগ নিতে পারে। এমনকি অদূর ভবিষ্যতে ইরান-ইরাক মিলে একটি কনফেডারেশন গঠনের সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ইরাকি শিয়া সম্প্রদায়ও বেশি মাত্রায় ধর্মীয় রাজনীতি দ্বারা প্রভাবানি্নত। অন্যদিকে সুনি্ন নেতাদের মধ্যেও গ্রহণযোগ্য এমন কোনো ব্যক্তি নেই, যিনি ইরাককে একুশ শতকে নেতৃত্ব দিতে পারেন। সুতরাং আগামী দিনের ইরাক নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই।
২০১০ সালের মার্চে ইরাকে নির্বাচন হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ পাঁচ মাস লেগেছিল সেখানে একটি সরকার গঠন করতে। ইরাক এখন ত্রিমুখী দ্বন্দ্বে ঘুরপাক খাচ্ছে। একদিকে শিয়া-সুনি্ন, অন্যদিকে শিয়া নেতৃত্বের মধ্যে দ্বন্দ্ব। এর বাইরে রয়ে গেছে কুর্দিরা। ২০০৫ সালের নির্বাচনে সুনি্নরা অংশ নেয়নি। ওই নির্বাচনের পর ইরান সমর্থিত একটি শিয়া ব্লক সরকার গঠন করে। কুর্দিরা তখন শিয়াদের সঙ্গে একটি সহাবস্থানে গিয়েছিল। বিনিময়ে প্রেসিডেন্ট পদটি কুর্দিদের দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন আইয়াদ আলাভি। কিন্তু শিয়াদের ভেতরকার দ্বন্দ্বে আলাভি ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মালিকি। শিয়া নেতৃত্বের মধ্যে এই যে বিভেদ, তা একটি নতুন মাত্রা পেয়েছে। গেল বছরের মার্চ মাসে যে নির্বাচন হয়, তাতে আলাভির দল শতকরা ২৪ দশমিক ৭ ভাগ ভোট পেয়েছিল। আর মালিকির সমর্থকরা পেয়েছিল ১৮ দশমিক ২ ভাগ ভোট। ফলে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল, তা রয়ে গিয়েছিল। কে সরকার গঠন করবে, এর ফয়সালা দীর্ঘদিন হয়নি। যদিও ধারণা করা হয়েছিল, কম ভোট পেয়েও মালিকি মুকতাদা আল সদরের সমর্থন পেয়েছিলেন। এর আগে মুকতাদা মালিকির ওপর থেকে তাঁর সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। ইরাকি পার্লামেন্টে মুকতাদার সমর্থকদের পাল্লাও একেবারে খারাপ নয়। সরকার গঠনে তাঁর সমর্থন খুব জরুরি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন নির্বাচন হতে পারে। ইরাকে নিযুক্ত সাবেক শীর্ষ মার্কিন কমান্ডার জেনারেল রে অডিয়েরনো একবার বলেছিলেন, নতুন নির্বাচনই একমাত্র সমাধানের পথ। কিন্তু যে সমস্যা আজ সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে, তা হচ্ছে আত্মঘাতী বোমাবাজির যে সংস্কৃতি ইরাকে জন্ম হয়েছে, তা থেকে ইরাক বেরিয়ে আসতে পারবে কি না? এটি একটি বড় চিন্তার কারণ। আল কায়েদার প্রভাব ইরাকে বাড়ছে। এরা এখন যথেষ্ট শক্তিশালী। ইরাকে যেকোনো সরকারের জন্য এটি একটি হুমকি। সাদ্দাম-পরবর্তী ইরাকে যে সেনাবাহিনী গঠিত হয়েছে, তা শিয়া প্রভাবাধীন। তবে ধারণা করা হচ্ছে, যেকোনো সংকটে এরা নিরপেক্ষ থাকবে। কিন্তু আল-কায়েদা সমর্থকদের বিরুদ্ধে 'যুদ্ধে' এরা কেমন করবে, সেটা একটা ঝড় প্রশ্ন এখন। ইরাকের আনবার প্রদেশে এরা ঘরে ঘরে আল-কায়েদার পতাকা পর্যন্ত তুলতে বাধ্য করেছিল। এখন মার্কিন সেনাদের অনুপস্থিতিতে ইরাকি সেনাবাহিনী আল-কায়েদার বিরুদ্ধে কিভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করে, সেটাই দেখার বিষয়।
ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার সেখানে একটা 'শূন্যতার' সৃষ্টি করবে। এর সুযোগ নেবে চরমপন্থীরা। আর যেহেতু ইরাক এখন জাতিগত দ্বন্দ্বে বিভক্ত, ফলে তা ইসলামী চরমপন্থীদের বড় ধরনের সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ পরিস্থিতিকে কিভাবে দেখবে, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। এমনিতেই ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। ইরাক-ইরানের প্রভাব বাড়ুক, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাইবে না। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ইরাকি নেতাদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব কমিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে। মালিকি সরকার এ আহ্বানে কতটুকু সাড়া দেয়, সেটাই দেখার বিষয়। তাই ইরাক নিয়ে একটি বড় প্রশ্ন থেকেই গেল।
 
দৈনিক কালের কন্ঠ, ২৭ ডিসেম্বর ২০১১

ড. তারেক শামসুর রেহমান
অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ,
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
tareque.rahman@aol.com

0 comments:

Post a Comment