রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

বাংলাদেশের সমুদ্র জয়



হামবুর্গে 'ইটলস'-এ বাংলাদেশের বিজয় বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। বাংলাদেশকেই এখন উদ্যোগী হতে হবে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়কটি দ্রুত শেষ করাও জরুরি। রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটা সমস্যা রয়েছে বটে। কিন্তু বৃহত্তম স্বার্থের খাতিরে এই সমস্যাটিকে বড় করে দেখার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্ক আমাদের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ভারতকেন্দ্রিক আমাদের পররাষ্ট্রনীতির বৃত্ত থেকে আমরা বেরিয়ে এসে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ যদি নেই, তা আমাদের জাতীয় স্বার্থকেই শুধু রক্ষা করবে না, বরং পূর্বের দিগন্ত আমাদের জন্য উন্মোচিত হবে। 'ইটলস'-এর এই রায়ের একটি সদূরপ্রসারী প্রভাব রয়ে যাবেই। বাংলাদেশ এই রায়কে নিজেদের স্বার্থে কতটুকু এবং কীভাবে ব্যবহার করবে, সেটাই দেখার বিষয় এখন। শুধু আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না। যেভাবে প্রতিদিন প্রতিটি সংবাদপত্রে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রশংসাসূচক বিজ্ঞাপন ছাপা হচ্ছে, তাতে করে মূল বিষয়টি চাপা পড়ে যেতে পারে। রায় পেয়েছি; কিন্তু এখন যেতে হবে অনেকদূর। শুধু আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না। মনে রাখতে হবে, এই রায় আমাদের জন্য বিশাল এক সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। সমুদ্রের যে বিশাল সম্পদ, সেই সম্পদকে আমরা আমাদের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারি। এই মুহূর্তে তড়িঘড়ি করে সমুদ্রের বস্নকগুলো বণ্টন করার প্রয়োজন নেই। কেননা এটা করা হলে বিতর্ক আরো বাড়তে পারে। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে বিদেশিদের কাছে গ্যাস ক্ষেত্রগুলো 'ইজারা' না দেয়ার একটি জনমত রয়েছে। একটি জাতীয় কমিটি বিষয়টি নিয়ে আন্দোলন করছে। এমনি এক পরিস্থিতিতে আমাদের নিজস্ব বাপেক্সকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায়, তা চিন্তা করা প্রয়োজন। বাপেক্সের জন্য জনবল, অর্থ ও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিও প্রয়োজন। বাপেক্সকে অবজ্ঞা করে যদি বিদেশি কোম্পানিগুলোকে গ্যাস বস্নকগুলো ইজারা দেয়ার ব্যাপারে আমরা উৎসাহিত হই, তাহলে তাতে বিতর্কের মাত্রা আরো বাড়বে। তাই যে কথাটা বলা প্রয়োজন তা হচ্ছে, সমুদ্রে আমাদের জয় নিশ্চিত হয়েছে। এটা আমাদের বড় পাওয়া। কিন্তু যেতে হবে অনেকদূর। পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের দিকে যদি আমরা হাত বাড়িয়ে না দেই, তাহলে ক্ষতি হবে আমাদেরই। একটি 'আস্থা ও বিশ্বাসের' সম্পর্ক রেখেই মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক উন্নত হতে পারে, যা কি-না সাগরের বিশাল সম্পদ আহরণে আমাদের সাহায্য করবে।

ড. তারেক শামসুর রেহমান

প্রফেসর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ঃধৎবয়ঁব.ৎধযসধহ@ধড়ষ.পড়স

0 comments:

Post a Comment