রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কোন পথে

 


খোলা জানালা

 

বেশ কিছুদিন যাবত চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। গেল বছর যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করার মধ্য দিয়ে যে ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ শুরু হয়েছিল, তা গড়িয়েছে দক্ষিণ চীন সাগরে আধিপত্য বিস্তার অব্দি। ট্রাম্প প্রশাসন এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করেছে।

এ সামরিক উপস্থিতি চীনের জন্য একটি চিন্তার কারণ। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সচিব আলেস্ক্র আজার গত ১১ আগস্ট তাইওয়ান সফর করেছেন। ওই সফরে মি. আজার আবার তাইওয়ানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এটা নিঃসন্দেহে এক ধরনের উস্কানি। এরই মধ্যে গত ৪ আগস্ট New Eastern Outlook নামে একটি ম্যাগাজিন দক্ষিণ চীন সাগর ঘিরে ট্রাম্পের ‘গোপন যুদ্ধের’ একটি খবর প্রকাশ করেছে (Trump's Secret War Plan for the South China Sea)। এ ধরনের তৎপরতা নিঃসন্দেহে এ অঞ্চলে নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম দিতে যাচ্ছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছিল, যা স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা করেছিল। যেমন- বার্লিন ব্লকেড (১৯৪৮-৪৯), কোরিয়া যুদ্ধ (১৯৫০-৫৩), সুয়েজ সংকট (১৯৫৬), বার্লিন সংকট (১৯৬১) ও কিউবান মিসাইল সংকট (১৯৬২)। এসব ঘটনায় মার্কিন নীতিনির্ধারকরা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘ইন্ধন’ ও ‘প্ররোচনা’কে মার্কিন স্বার্থের পরিপন্থী বলে মনে করেছিলেন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল জর্জ কেনানের ‘কনটেইনমেন্ট পলিসি’। তিনি ছিলেন ওই সময়ে মস্কোতে নিযুক্ত মার্কিন কূটনীতিক। তিনি বিখ্যাত ‘ফরেন অ্যাফেয়ার্স’ ম্যাগাজিনে মি. ‘এক্স’ নামে বেনামে একটি প্রবন্ধ লেখেন (The Sources of Soviet Conduct, February 1946)। এই প্রবন্ধই তাকে বিখ্যাত করে তোলে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের কাছে তিনি একজন ‘স্ট্র্যাটেজিস্ট’ হিসেবে পরিচিতি পান। তার প্রবন্ধের মূল বিষয় ছিল ‘যেহেতু সোভিয়েত ইউনিয়ন মার্কিন স্বার্থকে আঘাত করছে, সেহেতু সোভিয়েত ইউনিয়নকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলতে হবে।’ অর্থাৎ সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা (কূটনৈতিক, সামরিক, জোট) গ্রহণ করে দেশটির ক্ষমতা খর্ব করতে হবে।

মার্কিন নীতিনির্ধারকরা এ পলিসি গ্রহণ করেছিলেন এবং যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘসময় ধরে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে এক ধরনের ‘যুদ্ধে’ জড়িয়ে গিয়েছিল, যা ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছে স্নায়ুযুদ্ধ নামে। সাম্প্রতিক সময়ে চীন অন্যতম ‘শক্তি’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যা মার্কিন স্বার্থকে চ্যালেঞ্জ করছে। বিশেষ করে বিশ্বে চীনের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভাব (২০৩০ সালে চীনের জিডিপি হবে ২২.১ ট্রিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্রের হবে ২৪.৮ ট্রিলিয়ন ডলার। পিপিপিতে চীন হবে প্রথম), চীনের ওবিওআর পরিকল্পনায় ৬১টি দেশকে চীনের আওতায় আনা, ভারত মহাসাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি বৃদ্ধি (জিবুতিতে নৌঘাঁটি), আফ্রিকায় বিশাল চীনা বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে (সাব-সাহারা আফ্রিকাতে ২৯৯ মিলিয়ন+৬০ মিলিয়ন ডলার; ২০১৮ সালে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ মাত্র ৪৭.৮০ মিলিয়ন ডলার) নতুন এক আফ্রিকার জন্ম দেয়া, স্ট্র্যাটেজিক্যালি ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়া, নৌশক্তি হিসেবে চীনের আবির্ভাব ইত্যাদি বিষয় মার্কিন স্ট্র্যাটেজিস্টদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ঘাটতি। ২০১৮ সালে এ বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪১৯.২ বিলিয়ন ডলার। এ ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করেছে, যা জন্ম দিয়েছে এক ধরনের বাণিজ্য যুদ্ধের। শুধু তাই নয়, পরিসংখ্যান বলছে- চীনের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণের পরিমাণ (২০১৮) ১.১৩ ট্রিলিয়ন ডলার।

সুতরাং, বোঝাই যাচ্ছে চীন কেন এখন টার্গেট। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র হিউস্টনে ‘গোয়েন্দা কার্যক্রমে’ জড়িত থাকার অভিযোগে চীনা কনস্যুলেট অফিস বন্ধ করে দিয়েছে। চীনও এর প্রতিশোধ হিসেবে চেংডুতে মার্কিন কনস্যুলেট অফিস বন্ধ করেছে। চীন ওয়াশিংটনে তাদের দূতাবাসে বোমা হামলার অভিযোগ এনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও চীনা জনগণকে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এ কথাও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে চীনা জনগণের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো এবং যুক্তরাষ্ট্র এ কাজটিই করবে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে সিনেটর জিম রিস ও সিনেটর করি গার্ডনার মার্কিন সিনেটে একটি বিল উপস্থাপন করেছেন, যেখানে চীনা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে মেধাস্বত্ব চুরি করার অভিযোগ আনা হয়েছে এবং ওইসব কোম্পানিকে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ধারণা করছি, এ বিলটি সিনেটে পাস হবে এবং এতে করে আগামীতে দু’দেশের সম্পর্কের আরও অবনতি হবে। এর আগে মার্চে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প Taipei Act-এ স্বাক্ষর করেছিলেন। এ আইনের আওতায় তাইওয়ানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। চীন এ সিদ্ধান্তকে নিশ্চয়ই ভালোভাবে নেবে না। তাইওয়ানকে চীন বৃহত্তর চীনের অংশ বলেই মনে করে। ‘হংকং মডেলে’ চীন তাইওয়ানকে বৃহত্তর চীনের অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। তবে বিষয়টি অত সহজ নয়। অনেক দেশের সঙ্গেই তাইওয়ানের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার না করলেও ওয়াশিংটন ডিসিতে তাইওয়ানের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র রয়েছে। তাইওয়ানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। তাইওয়ানের নিরাপত্তার অন্যতম গ্যারান্টার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তাইওয়ানে অত্যাধুনিক অস্ত্র, বিশেষ করে সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান সরবরাহ নিয়ে অতীতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের যথেষ্ট অবনতি হয়েছিল। এখন নতুন করে ট্রাম্পের Taipei Act দু’দেশের মাঝে সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটাবে।

এই যখন পরিস্থিতি, তখন ২১ জুলাই পম্পেও ব্রিটেন সফরে গিয়েছিলেন। এখানে তিনি চীনা কোম্পানি হুয়াওয়াই ৫জি (Huawei 5G) নিষিদ্ধ ঘোষণা করার ব্যাপারে ব্রিটেনের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী চীনের বিরুদ্ধে একটি ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নেবে’ (সুমবার্গ)। মেসেজটি স্পষ্ট; যুক্তরাষ্ট্র এখন চীনকে টার্গেট করছে এবং চীনবিরোধী একটি অ্যালায়েন্স গড়ে তুলতে চাইছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে এ ধরনের একটি উদ্যোগ নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। আর এভাবেই জন্ম হয়েছিল স্নায়ুযুদ্ধের। এখন সেই স্নায়ুযুদ্ধের ধারণায় আবার ফিরছে যুক্তরাষ্ট্র। পম্পেওর কথায় সে ধারণাই প্রতিফলিত হল।

যুক্তরাষ্ট্র চীনকে টার্গেট করে একের পর এক যেসব কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, তার সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে ভারত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ও উদ্যোগে নৌ সামরিক মহড়া। দু-দুটো নৌ সামরিক মহড়ায় যুক্তরাষ্ট্র অংশ নিয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বিমানবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ অংশ নিয়েছে। এ নৌ সামরিক মহড়া কার্যত চীনের প্রতি এক ধরনের হুমকি। ২২ জুলাই দক্ষিণ চীন সাগরের পার্শ্ববর্তী এলাকা ফিলিপাইনস সাগরে যুক্তরাষ্ট্র নৌ মহড়া সম্পন্ন করেছে জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে সঙ্গে নিয়ে। একই সঙ্গে ভারতের নৌবাহিনীর সঙ্গেও নৌ মহড়া সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অনেকেই স্মরণ করতে পারেন এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র তার কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে একটি চারদেশীয় সামরিক জোট গঠন করেছিল। QUAD বা Quadrilateral Security Dialogue গঠিত হয়েছিল ২০০৭ সালে। বলা হচ্ছে, এ অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই এ জোট। এ জোটের উদ্যোগে ও ভারতের আগ্রহে এ জোটের পক্ষ থেকে মালাক্কা প্রণালির অদূরে প্রতিবছরই একটি নৌ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়, যা মালাক্কার নৌ মহড়া নামে পরিচিত। যদিও গত কয়েক বছর অস্ট্রেলিয়া মালাক্কার নৌ মহড়ায় অংশ নিচ্ছে না। তবে ২০২০ সালের মালাক্কা মহড়ায় ভারত অস্ট্রেলিয়াকে আমন্ত্রণ জানাবে বলে ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। চীন এসব নৌ সামরিক মহড়াকে যে খুব সহজভাবে নেবে, তা মনে করার কোনো কারণ নেই।

আমরা ইতিহাস ঘেঁটে দেখেছি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ‘সোভিয়েত আতঙ্কে’ মার্কিন নেতারা যেসব কথা বলতেন; বর্তমানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অনেকটা সেরকম কথাবার্তা বলছেন। হোয়াইট হাউসের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি চীনের কর্মকাণ্ডকে ‘কুকর্ম’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন (২৯ মে, ২০২০)। ট্রাম্প বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। তার অভিযোগ ছিল, চীন এ সংস্থায় বাৎসরিক চাঁদা দেয় মাত্র ৪০ মিলিয়ন ডলার; কিন্তু নীতিনির্ধারণে বড় ভূমিকা পালন করে। যুক্তরাষ্ট্র চাঁদা দেয় বছরে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার; অথচ যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই। ট্রাম্পের উগ্রবাদী নীতি শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর কাছে তাকে জনপ্রিয় করলেও ব্যাপক মার্কিনির কাছে তার জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে। জনপ্রিয়তা বাড়াতে তিনি এখন ‘চীনা কার্ড’ ব্যবহার করছেন।

ট্রাম্পের উদ্দেশ্য যাই থাকুক না কেন, চীনের বিরুদ্ধে তার কঠোর মনোভাব নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা করল। একটি ‘এশিয়ান ন্যাটো’ গঠনের কথাও কোনো কোনো মহল থেকে বলা হচ্ছে। মোদ্দা কথা, ইউরোপে প্রভাববলয় বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক সময় স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম হয়েছিল। এখন ভারত মহাসাগরে জন্ম হয়েছে স্নায়ুযুদ্ধ-২ এর। খুব সঙ্গত কারণেই এশিয়ার দেশগুলো এ ‘প্রভাববলয় বিস্তারের খেলায়’ আক্রান্ত হবে। বাংলাদেশও এর বাইরে থাকবে না। এখন দেখার পালা, চীন-যুক্তরাষ্ট্র বৈরিতায় এশিয়ার দেশগুলো কোন পক্ষ অবলম্বন করে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, ভারত মহাসাগর তথা গাল্ফ থেকে যুক্তরাষ্ট্র তার সব সেনাসদস্য প্রত্যাহার করে নেবে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় চিন্তার কারণ হচ্ছে চীন-ইরান অ্যালায়েন্স। ২০১৬ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট ইরান সফর করেন। ওই সময় চীন একটি Comprehensive Strategic Partnership চুক্তির প্রস্তাব করেছিল, যা সম্প্রতি ইরান স্বাক্ষর করেছে। এ চুক্তির মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে চীনের উপস্থিতি আরও শক্তিশালী হল এবং এর ফলে ভারত মহাসাগরে চীন এক ধরনের সুবিধা পাবে। বলা ভালো, ইরান তার উৎপাদিত জ্বালানি তেলের শতকরা ২২ ভাগ চীনের কাছে বিক্রি করে।

চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের অবনতির আরও একটি দিক হচ্ছে, ট্রাম্প কর্তৃক চীনা ভিডিও অ্যাপ ‘টিকটক’ নিষিদ্ধ করা, যাকে কোনো কোনো বিশ্লেষক অভিহিত করেছেন ‘টিকটক ওয়ার’ হিসেবে। এ ঘটনায় টিকটকের মূল কোম্পানি বাইটড্যান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক পরিচালনা করা মার্কিন কোম্পানি মাইক্রোসফটের মধ্যে চলছে তুমুল অস্থিরতা। ট্রাম্প টিকটককে জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কোম্পানি চীনে ব্যবসা করছে। (জেনারেল মোটরস, জেনারেল ইলেকট্রিক, বোয়িং, নাইকি ইত্যাদি)। এখন চীন যদি এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়, তাহলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? সামনে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন। ৩ নভেম্বর ট্রাম্পের ভাগ্য নির্ধারিত হবে। ২০১৬ আর ২০২০ এক নয়। ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা এখন সর্বনিম্নে। নির্বাচনে তিনি ‘চীনা কার্ড’ ব্যবহার করছেন- এটা স্পষ্ট। এখন প্রশ্ন এখানেই- যদি ট্রাম্প নির্বাচনে বিজয়ী হতে না পারেন, তাহলে নয়া প্রেসিডেন্ট বাইডেন কি চীন-মার্কিন সম্পর্ক উন্নত করার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেবেন? আবার যদি ট্রাম্প ‘বিজয়ী’ হন, তাহলে ট্রাম্প কি চীনের সঙ্গে একটি যুদ্ধের প্রস্তুতি নেবেন? তবে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে নভেম্বর পর্যন্ত যে উত্তেজনা থাকবে, তা বলাই বাহুল্য

Jugantor

16.8.2020

0 comments:

Post a Comment