রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

কতটা চমক দেখাতে পারবেন কমলা হ্যারিস


কমলা হ্যারিস এ মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে আলোচিত একটি নাম। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদলীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী, জো বাইডেনের রানিং মেট। ৩ নভেম্বর সেখানে নির্বাচন। কমলা হ্যারিস আলোচিত নানা কারণে। তাঁর শরীরে ভারতীয় রক্ত যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে জ্যামাইকান রক্তও। মা শ্যামালা গোপালান ভারতীয়, আর বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস এসেছিলেন জ্যামাইকা থেকে। দুজন ইমিগ্র্যান্টের সন্তান কমলা, জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে। নিজেকে তিনি কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে পরিচয় দিলেও শতভাগ কৃষ্ণাঙ্গ, এটা বলা যাবে না। অনেকটাই বাদামি রং তাঁর শরীর ধারণ করে। কমলা হ্যারিসের জন্ম ও গায়ের রং নিয়েও কটাক্ষ করেছেন ট্রাম্প; যদিও ট্রাম্প নিজেও ইমিগ্র্যান্টের সন্তান। তবে পার্থক্যটা হলো তিনি শ্বেতাঙ্গ, কমলা শ্বেতাঙ্গ নন, বাদামি। কমলা হ্যারিসকে নিয়ে শ্বেতাঙ্গদের ভয়টা কি এ কারণে যে কমলা হ্যারিস ডেমোক্র্যাট দলের উঠতি স্টার! ৭৭ বছরের জো বাইডেনের রানিং মেট হয়ে কমলা কি সবাইকে জানিয়ে দিলেন, তিনি ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী! ২০২৪ সালের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কি কমলা হ্যারিস টার্গেট করছেন?


এটা ঠিক, আমেরিকার রাজনীতিতে ভাইস প্রেসিডেন্টের তেমন কোনো ভূমিকা থাকে না। নীতিনির্ধারণে প্রেসিডেন্টের ভূমিকাই আসল। জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট ওবামার অধীনে ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন (২০০৯-১৭)। তবে এটা সত্য, তিনি কোনো ‘ক্যারিসমেটিক’ লিডার নন, যেমনটা ছিলেন বারাক ওবামা। এ ক্ষেত্রে কমলা হ্যারিসের মনোনয়ন ডেমোক্র্যাটদের ইমেজ বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে কিছুটা হলেও।


কমলা হ্যারিসের ভারতীয় ও জ্যামাইকান ‘কালেকশন’ ভারতীয় ও ক্যারিবীয় বংশোদ্ভূতদের মাঝে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলবে। এ ক্ষেত্রে ক্যারিবীয় কিংবা ভারতীয় আমেরিকানদের সংখ্যা যে বেশি, তা বলা যাবে না। পরিসংখ্যান বলছে, ক্যারিবীয়দের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৪ শতাংশ আর ভারতীয়দের ক্ষেত্রে ০.৯ শতাংশ। নতুন প্রজন্মের ক্যারিবীয় ও ভারতীয়দের সঙ্গে তাদের আদি বাসস্থানের কোনো সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না। কমলা হ্যারিসের মা এসেছিলেন চেন্নাই থেকে। তাঁর যখন বয়স সাত বছর, তখন তাঁদের মা-বাবার মাঝে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। চেন্নাইয়ে তাঁর মাতৃকুলের আত্মীয়-স্বজন আছেন। তবে তাঁদের সঙ্গে কমলা হ্যারিসের যোগাযোগ খুব একটা আছে বলে মনে হয় না। মায়ের কারণে সনাতন ধর্মের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও ভক্তি আছে। আবার বাবার কারণে তিনি চার্চেও যান। তবে তিনি কোনো একটি বিশেষ ধর্ম পালন করেন কি না তা জানা যায়নি। তাঁর মা-বাবা উভয়েই উচ্চ শিক্ষিত এবং পিএইচডি ডিগ্রির অধিকারী। তাঁর বাবা ডোনাল্ড জে হ্যারিস স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ছিলেন। আর তাঁর মা শ্যামালা গোপালান ব্রেস্ট ক্যান্সার গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। তবে তাঁর স্বামী ইহুদি। তিনি ইসরায়েলের জোরালো সমর্থক।


কমলা হ্যারিস একজন আইনজীবী, ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ও সিনেটর। জাতীয় রাজনীতিতে তিনি আসবেন, এমন কথা অনেক দিন থেকেই শোনা যাচ্ছিল। তিনি নিজে জো বাইডেনের সঙ্গে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছিলেন। তাতে সফল হননি। শেষ পর্যন্ত জো বাইডেনই তাঁকে তাঁর রানিং মেট হিসেবে বেছে নেন। বলা ভালো, কমলা হ্যারিসই প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান তথা প্রথম এশিয়ান-আমেরিকান, যিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর আগে মাত্র দুজন মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। অবৈধ অভিবাসীদের কাজের অনুমতি দিতে তিনি Dream Ac (২০০১)-এর প্রস্তাব করে অভিবাসী সম্প্রদায়ের কাছে প্রিয়পাত্র হলেও তাঁর ইসরায়েলপ্রীতি আরবদের কাছে তাঁকে জনপ্রিয় করেনি। এমনকি ভারতীয়-আমেরিকানদের মাঝে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বেশি। সুতরাং তাঁর ভারতীয় ‘কানেকশন’ নির্বাচনে কতটুকু প্রভাব ফেলবে, তা একটা প্রশ্ন বটে। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই নয়, সারা বিশ্বের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের গুরুত্ব অনেক। একদিকে কভিড-১৯ মোকাবেলা করার ব্যর্থতা, অন্যদিকে বেকারত্বের হার বেড়ে যাওয়া, চীনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ইত্যাদি কারণে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে তাই তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব। কমলা হ্যারিস তাই কতটুকু চমক আনতে পারেন, সেটাই দেখার বিষয়।

Kalerkontho

22.8.2020

0 comments:

Post a Comment