রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

বাংলাদেশের জনপ্রশাসনঃ বর্তমান প্রেক্ষিত

একটি দক্ষ, স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির  পূর্বশর্ত। জনপ্রশাসন যদি দক্ষ না হয়, যদি রাজনৈতিক ভাবে নিরপেক্ষ না থাকতে পারে এবং দুর্নীতি মুক্ত না থাকে তাহলে দেশকে একটি শক্তিশালী ভিতের উপর দাঁড় করানো যায় না। জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা হচ্ছেন রাষ্ট্রের প্রাণ। রাজনীতিবিদরা নীতিনির্ধারন করবেন আর জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা সেই নীতি বাস্তবায়ন করবেন। আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে তাই নিরপেক্ষ জনপ্রশাসনের গুরুত্ব অনেক বেশী। বিশ্বায়নের এই যুগে জনপ্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও দক্ষতা যদি আমরা নিশ্চিত করতে না পারি তাহলে  প্রতিযোগিতায় আমরা পিছিয়ে পড়ব।
বাংলাদেশে যে প্রশাসন তার কাঠামো মূলত বৃটিশ শাসন ও পরবর্তীকালে পাকিস্তান শাসনামলে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। স্বাধীন বাংলাদেশে জনপ্রশাসনের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বেশ কটি কমিশন গঠন করা হলেও জনপ্রশাসনের কাছ থেকে যে প্রত্যাশা ছিল তা পূরণ হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রশাসনের অদক্ষতা এক চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর কারন মূলত একটিই। আর তা হচ্ছে রাজনৈতিক বিবেচনায় পদোন্নতি প্রদান [নয়া দিগন্ত, ২৩/০২/২০১২]। ঢালাও এই পদোন্নতির ফলে অনেক অযোগ্য কর্মকর্তা পদোন্নতি পাচ্ছেন এবং যোগ্যদের বিবেচনায় নেয়া হচ্ছেনা। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তাদের অভাবের ফলে [যুগান্তর , ২৩/০৯/২০১১] জনপ্রশাসনে কাজের গতি আসছেনা এবং চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়ছে। ঢালাও পদোন্নতির ফলে জনপ্রশাসনে সৃষ্টি হয়েছে বিশৃংখলা [আমার দেশ, ২৭/০২/২০১২]।  গত ৮ ফেব্র“য়ারী জনপ্রশাসনে কেন্দ্রীয় স্ত¬¬¬রে বর্তমান সরকারের আমলে সবচেয়ে বড় পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদে ১২৭, যুগ্ম সচিব পদে ২৬৪ এবং উপ সচিব পদে ২৫৮ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। মোট পদোন্নতি পেয়েছেন ৬৮১ জন। এছাড়া লিয়েনে এবং বিদেশে প্রশিক্ষনরত ২৮ জন যোগ করলে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৭০৯ জন। এত বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে গিয়ে বিদ্যমান বিধি-বিধানের অপব্যবহারের মাধ্যমে অশুভ নীল নকশা বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে [নয়া দিগন্ত, ১০/০২/২০১২]। দুঃখজনক হচ্ছে এটা করতে গিয়ে ৭০০ এর অধিক জ্যেষ্ঠ ও পদোন্নতি যোগ্য কর্মকর্তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাই ৮ ফেব্র“য়ারীকে অনেকে কালো দিবস হিসেবে অভিহিত করেছেন [নয়া দিগন্ত,১০/০২/২০১২]। যে অভিযোগটি গুরুতর তা হচ্ছে পিএসসি এর মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া বহু কর্মকর্তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। অভিযোগটি উঠেছে যারা পদোন্নতি পেয়েছেন, তারা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের অনুসারী [নয়া দিগন্ত, ১০/০২/২০১২]। পদোন্নতির জন্য আবশ্যক সিনিয়র ষ্টাফ কোর্স এবং উচ্চতর প্রশাসনিক ও উন্নয়ন বিষয়ক কোর্স সম্পন্ন না করেই এবং অনেকে এসিআর জালিয়াতিসহ সততা ও সুনামের ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ থেকেও পদোন্নতি পেয়েছেন। কেউ কেউ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে  একটি ডিগ্রীর সনদ ‘ক্রয়’ করে তাদের পদোন্নতি নিশ্চিত করেছেন। অথচ ঐসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। একটি জাতীয় সংবাদ পত্রের প্রতিবেদনে [নয়া দিগন্ত, ১০/০২/২০১২] উল্লেখ করা হয়েছে যে ধর্মীয় অনুশাসন পালনে একনিষ্ঠ, দাঁড়ি, টুপি বা হিজাব পরিধানকারী কর্মকর্তারাও ঢালাওভাবে বাদ পড়েছেন। দুঃখজনক হচ্ছে উপ সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে পদোন্নতি নীতিমালা ২০১২ এর ৪ (২) খ অনুচ্ছেদ নতুন করে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনাকে সামনে রেখেই ৪ (২) খ অনুচ্ছেদটি অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এর ফলে জনপ্রশাসনে পদোন্নতিতে কর্মকর্তার প্রথম নিয়োগকাল থেকে সার্বিক কার্যক্রম ও বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য পরিষ্কার।
জনপ্রশাসনে এভাবে  ঢালাও পদোন্নতি, যা কী না সুনামি হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে, তা আমাদের দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করছে। যোগ্য ও মেধাবি কর্মকর্তাদের পদোন্নতি থেকে বাদ দেয়া, পদের চেয়ে দ্বিগুণ/ত্রিগুণ কর্মকর্তার পদোন্নতি [আমার দেশ, ২৬/০২/২০১২], কিংবা যোগ্য কর্মকর্তাদেরকে ওএসডি করা জনপ্রশাসনের জন্য কোন সুস্থ লক্ষণ নয়। জনপ্রশাসনে যে সব কর্মকর্তাকে ওএসডি হিসেবে রাখা হয়েছে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর নতুন একটি সার্কুলার দিয়ে তাদের ট্রেনিং, বিদেশ ভ্রমন ও লিয়েন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। অনুরূপভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে যারা সংযুক্তিতে আছেন, তারাও বৈধ সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। যাদেরকে ন্যস্ত রাখা হয়েছে, তারা বেতনও পাচ্ছেন না। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় গত ফেব্র“য়ারী, ২০১২ পর্যন্ত ওএসডি হিসাবে কর্মরত ছিলেন ৮৩৫ জন, আর গত তিনবছর ধরে আছেন ১২৩ জন [আমার দেশ, ২২/০২/২০১২]। দুঃখজনক হলেও সত্য, গেল আড়াই বছরে ওএসডি অবস্থায়  পিআরএল-এ গেছেন ২২৭ জন কর্মকর্তা। কর্মহীন অবস্থায় পিআরএল-এ যাওয়ায় সহকর্মীদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় নেওয়ার সুযোগ তারা পাননি। সারা জীবন যিনি জাতির জন্য, রাষ্ট্রের জন্য শ্রম দিলেন, মেধা দিলেন, তাকে বাধ্য করা হল পিআরএল-এ যেতে ওএসডি থাকা অবস্থাতেই। জনপ্রশাসনের জন্য এ ধরনের প্রবণতা কোন মঙ্গল বয়ে আনবেনা। বর্তমান সরকারের গত সাড়ে তিন বছরে দেশের বিভিন্নস্থানে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত জেলা প্রশাসক সহ জনপ্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা রাজনৈতিকভাবে নির্যাতিত ও নিগৃহীত হয়েছেন। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে পাবনার জেলা প্রশাসকসহ কর্মকর্তাবৃন্দ, টেকনাফ উপজেলার ইউএনও, কুমারখালি উপজেলা ইউএনও, বাগেরহাট, বাঘা, বিরল উপজেলার ইউএনও গন রাজনৈতিকভাবে লাঞ্ছিত ও নিগৃহীত হয়েছেন। রাজনৈতিক চাপে তারা জনগনকে প্রকৃত সেবা দিতে পারছেন না। এর ফলে জনগন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এমনকি কোন কোন স্থানে স্থানীয় ক্ষমতাসীনরা এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন, সেখানে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের পদায়নে সমস্যা হচ্ছে। ফলে স্থানীয় পর্যায়ে বাড়ছে দূর্নীতি। এবং সেই সাথে জনস্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে না।
ইতোমধ্যে সচিবদের মধ্যে ৮টি সিনিয়র সচিব পদ সৃষ্টি করে এক তুঘলকি কান্ড ঘটানো হয়েছে  জনপ্রশাসনে। প্রায়শই জনগন সিনিয়র সচিব আর সিনিয়র সহকারী সচিব পদকে গুলিয়ে ফেলছে। পুলিশের মহাপরিদর্শককে সিনিয়র সচিব পদমর্যদা দেয়া হয়। তদুপরী পুলিশ বিভাগে একাধিক আইজিপি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।  এই সিনিয়র সচিব পদ সৃষ্টি কিংবা পুলিশ বিভাগের জন্য সচিব পদমর্যাদার একাধিক আইজপি পদ সৃষ্টি জনপ্রশাসনে শৃংখলা ও কর্মদক্ষতা বাড়ানোর জন্য আদৌ করা হয়নি। বরং বিশেষ ব্যক্তিকে খুশি করা, একইসঙ্গে একটি বিশেষ গোষ্ঠিকে দিয়ে সুবিধা আদায় করার নিমিত্ত করা হয়েছে।
পুলিশ বিভাগ এখন আলোচনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। অভিযোগ আছে এবং সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে যে ঢাকা শহরে যতগুলো থানা সৃষ্টি করা হয়েছে, সেখানে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা মূলত ২টি জেলার লোক। গোপালগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের পুলিশ কর্মকর্তাদের এসব পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মাঝে আবার শতকরা ৮০ ভাগ কর্মকর্তা শুধুমাত্র গোপালগঞ্জের অধিবাসী। এর ফলে পুলিশ বিভাগের মত একটি গুরুত্বপূর্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা একটি বিশেষ জেলা কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে, যার ফলে জনসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে দূর্নীতি বাড়ছে-আইনের ব্যত্যয় ঘটছে। অভিযোগ উঠেছে পুলিশ প্রশাসনের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে। অতিসম্প্রতি নরসিংদীতে পুলিশ কর্তৃক বিচারক নিগৃহীতকরণ, ফেণীতে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটকে নিগৃহীতকরণ এবং শেরেবাংলা নগরে ফ্রাংকেনস্টাইন কায়দায় চিফহুইপের উপর আক্রমন থেকে স্পষ্ট যে পুলিশ বাহিনী দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কাজ করছে। অথচ পুলিশের স্বাভাবিক কাজ অপরাধ প্রতিরোধ এবং অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে বিচারের কাজের সহায়তা করা। আর এ কাজটিতে গত সাড়ে তিন বছরে তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না। যেমন সাভারে ছয় ছাত্র হত্যা, সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা খুন, শ্রমিক নেতা আমিনুল হত্যা, সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যা ইত্যাদি সহ অসংখ্য গুম ও হত্যা মামলায় পুলিশের ভূমিকায় জনমনে প্রশ্ন জেগেছে।
সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে যে সব সচিব রয়েছেন, তাদের প্রায় অনেকেই ১৯৯৬ সালে  “জনতার মঞ্চ” এর সাথে জড়িত ছিলেন। এমনকি যিনি বারো বছর জনপ্রশাসন থেকে দূরে ছিলেন, তাকেও বর্তমান সরকার পদোন্নতি দিয়ে পরপর দুটি গুরুত্বপূর্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে পদায়ন করেছেন। সেই “জনতার মঞ্চ”এর সাথে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন ক্ষমতাধর সচিব এখন জনপ্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাদেরকে প্রশাসনে রাখার জন্য চাকুরীর মেয়াদ হঠাৎ করে দুবছর বাড়ানো হয়েছে।  সাম্প্রতিক সময়ে পিএসসি কর্তৃক যারা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন, তাদের নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। যারা পিএসসির সদস্য ও চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন, তারা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের অনুসারী। এমনকি বর্তমানে যিনি চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি ১৯৯৬ সালের জনতার মঞ্চের সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত ছিলেন। অন্য সদস্যরা কেউ কেউ মন্ত্রী/এমপিদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। ফলে সংগত কারনেই তাদের ভূমিকা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে এবং নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বিতর্কিত হয়েছে। পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে গত সাড়ে তিনবছরে পুলিশ বিভাগে যারা এএসপি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তারা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।
এখানে উল্লেখ্য করা প্রয়োজন যে, প্রজাতন্ত্রের সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে জনপ্রশাসন পরিচালনায় তার কোন সুনির্দিষ্ট আইন নেই। শুধুমাত্র বিধিমালা  দিয়েই চলছে গত ৪১ বছর  [ডেসটিনি, ১৭ এপ্রিল ২০১২]। শুধুমাত্র দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ ও পদোন্নতির স্বার্থেই কোন আইন করা হয়নি। এখানে অভিযোগ উঠেছে যে আইন প্রনয়ন না হওয়ায়, সংবিধানের শুধু ১৩৩ অনুচ্ছেদই নয়, সংবিধানের ২০ ও ২১ অনুচ্ছেদের নির্দেশনাও যথাযথভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে না।
গত সাড়ে তিনবছরে  একের পর এক এডহক ভিত্তিতে আইন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন সুনির্দিষ্ট আইন করা সম্ভব হয় নি। বর্তমান সরকারের সময় আছে মাত্র দেড় বছর। এ সময়ে সীমায় তাদের পক্ষে কোন আইন করাও সম্ভব হবে না। সরকারের পক্ষ থেকে  ঈরারষ ঝবৎারপব অপঃ ২০১০ নামে একটি আইন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। পরে সরকারের উদ্যোগে এড়াঃ. ঊসঢ়ষড়ুববং অপঃ ২০১২    প্রস্তাব করা হয়। অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি একচিঠিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন সচিবালয়ের সব নিয়োগ হবে রাজনৈতিক বিবেচনায় [যুগান্তর, ৪ জুলাই, ২০১২]। তিনি আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে নিয়োগের জন্য প্রস্তাব করছেন। এটা অর্থমন্ত্রীর মস্তিস্কপ্রসূত। এর ফলে সচিবালয়ের শীর্ষ পর্যায় থেকে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এটা সুস্থ প্রশাসনের জন্য কোন ভালো লক্ষন নয়। আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে বৃটিশ কাঠামো পেয়েছি। কিন্তু উপমহাদেশের কোন দেশে বিশেষ করে ভারত এমনকি মালয়েশিয়ায় কিংবা থাইল্যান্ড ও শ্রীলংকার মত দেশেও  জনপ্রশাসনে “আউটসোর্সিং” এর কোন সুযোগ নেই। “আউটসোর্সিং” এর নাম করে প্রশাসনের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়োগ, জনপ্রশাসনের উন্নয়নের জন্য প্রধান অন্তরায়। জাতীয় সংসদে সকল দলের সংসদ সদস্যগন বিশদ মতামত নিয়ে জনপ্রশাসন আইনটি প্রনীত হলে  কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বদলী, পদায়ন ও পদোন্নতিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যেত। এতে করে জনপ্রশাসনের উপর দলীয়করনের খড়গ অনেকাংশে কমত। বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়ার কালাকানুন থাকত নাÑমেধাবি কর্মকর্তারা নির্ভয়ে কাজ করতে পারতেন।
সম্প্রতি পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ দৃষ্টে দেখা যায় যে, দূর্নীতির কারনে বিশ্ব ব্যাংক কর্তৃক পদ্মা সেতু প্রকল্পের ঋন চুক্তি বাতিল করা হয়। সেতু বিভাগ ও প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা এবং মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীকে দোষারুপ করা হয়েছে। তেমনি ভাবে রেলওয়ের নিয়োগবানিজ্যে কর্মকর্তাগনের সাথে মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রীকেও দায়ী করা হয়েছে। শোনা যাচ্ছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে রাজনৈতিক বিবেচনায় গণনিয়োগে সাফল্য প্রদর্শনকারী একজন কনিষ্ঠ অতিরিক্ত সচিবকে পুরষ্কারস্বরূপ প্রায় শতাধিক কর্মকর্তাকে ডিঙ্গিয়ে প্রথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগের সচিব পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে অনুরুপ রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রমের জন্য।
প্রায়শই জনগন ফুঁসে উঠছে সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের উপর যেমন বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, সিটি কর্পোরেশন থেকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগকৃতের দৌরাত্ম্যের কারণে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এমন কি বিদেশে যেসব শ্রমিক হাড়ভাঙ্গা খাটুনির মাধ্যমে কষ্টার্জিত বৈদিশিক মূদ্রা অর্জন করছেন তারাও আমাদের দূতাবাস সমূহ থেকে সময় মত সেবা পাচ্ছেনা। যতই আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার স্বপ্ন দেখাইনা কেন বাস্তবে দুর্বৃত্তায়ণের কারণে জনগণ প্রত্যাশিত সেবা থেকে অনেক দূরে।    
একটি দেশ ও সরকারের মস্তিষ্ক হল জনপ্রশাসন। এই জনপ্রশাসনে যোগ্য লোকের দরকার। অযোগ্য, অদক্ষ ও মেধাহীন কর্মকর্তারা দলীয় বিবেচনায় পদোন্নতি পাওয়ার ফলে তারা নেগোসিয়েশন (দর কষাকষি)-এ কোন যোগ্যতা প্রদর্শন করতে পারছে না। ফলে তারা বিদেশে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনায় বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এজন্য দরকার জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ এবং উপযুক্ত ব্যক্তিকে সঠিক পদে পদায়নকরণ। এটা করা হলে প্রশাসনে অধিকতর গতিশীলতা আনা সম্ভব হবে। এ ছাড়া আন্তঃক্যাডার কলহ,  বদলি আতংক, পদায়ন বৈষম্য ইত্যাদি উপসর্গ দূর করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা প্রশাসনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ যদি দূর করা না যায়, তা হলে সেই প্রশাসন দিয়ে জাতির কোন মঙ্গল প্রত্যাশা করা যায় না।    




0 comments:

Post a Comment