অতিসাম্প্রতিককালে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসবাদী ঘটনা ঘটেছে এবং প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতা জানা গেছে। ঘটনার শুরু প্যারিসে জঙ্গি হামলার মধ্য দিয়ে, যেখানে আইএসের জঙ্গিরা ১২৯ জন সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছিল। এরপর ঘটল মালির রাজধানী বামাকোতে সন্ত্রাসবাদী ঘটনা। আইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জঙ্গিরা হোটেল র্যাডিসনে ১৭০ জন মানুষকে জিম্মি করেছিল। তাদের উদ্ধারে মারা যান ২৭ জন সাধারণ মানুষ। এরপর জঙ্গিরা বর্ষবরণে হামলা চালাল তুরস্কের বড় ও প্রাচীন শহর ইস্তাম্বুলে। ওই হামলায় ১০ জন জার্মান পর্যটক নিহত হয়েছিলেন। এরপরের ঘটনাও মালিতে। মধ্য জানুয়ারিতে দুটি ঘটনায় দুই সেনা ও এক রক্ষীসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন। আফ্রিকার মালির মধ্যাঞ্চলীয় শহর মোপতি ও মরু শহর তিম্বাকুতে ইসলামপন্থীরা এই হামলা চালায়। এরপরের ঘটনা ইন্দোনেশিয়া ও আফ্রিকার বুরকিনা ফাসোতে। ইন্দোনেশিয়ায় জঙ্গি হামলা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতির জন্য একটি বড় ধরনের ঘটনা। ইসলামিক স্টেট (আইএস) যে ‘দূরবর্তী খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেছে, তারই অংশ হিসেবে ইন্দোনেশিয়ায় এই হামলা চালানো হয়েছে। এ হামলায় অন্তত ১৪ জন বন্দুকধারী অংশ নিয়েছে, যদিও মাত্র ৭ জন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনাটি অনেকটা প্যারিস স্টাইলের হামলার মতো। বলা হচ্ছে, আইএসের দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় শাখা কাতিবা নুসানতারা এ হামলার জন্য দায়ী। আইএস এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। এর মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হলো যে, আইএস তথাকথিত ইসলামিক খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্থানীয় কোনো কোনো সংগঠনকে স্বীকৃতি দেয়। আর জাকার্তায় জঙ্গি হামলার রেশ শেষ হওয়ার আগেই সর্বশেষ জঙ্গি হামলায় আক্রান্ত হলো পশ্চিম আফ্রিকার অপর একটি দেশ বুরকিনা ফাসো। এতে মারা যান ২৭ জন এবং এর দায়-দায়িত্ব স্বীকার করেছে আল কায়েদা ইন ইসলামিক মাগরেব। জঙ্গি তৎপরতা এখন মধ্যপ্রাচ্য ছাড়িয়ে পশ্চিম আফ্রিকাতে। মালির উত্তরে TUAREG অঞ্চলে ন্যূনতম চারটি ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠীর খবর আমরা জানি, যারা একটি জিহাদি যুদ্ধ পরিচালনা করছে। একটি ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেও তারা কাজ করে যাচ্ছে। এই চারটি সংগঠন হচ্ছে আনসার দ্বীন (Ansar dine), আল কায়েদা ইন ইসলামিক মাগরেব (AQIM), মোজওআ (MOJWA) ও আল মুয়াক্কিন বি ডিমা (Al-Muwaqin Bidima)। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে ‘সাহেল জোন’র অন্তর্ভুক্ত মালি, মৌরিতানিয়া ও নাইজারে ইসলামিক জঙ্গিদের তৎপরতা বেড়েছে। মাগরেবভুক্ত এ অঞ্চলের বাইরে নাইজেরিয়াতে ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠী বোকো হারামের নৃশংস ঘটনাবলি সারা বিশ্বের দৃষ্টি কেড়েছিল। বোকো হারামের জঙ্গিরা কিশোরী মেয়েদের স্কুল থেকে অপহরণ করত এবং তারা জঙ্গি কমান্ডারদের তথাকথিত যৌন দাসী হিসেবে ব্যবহার করত। শত শত কিশোরী মেয়েকে অপহরণের পর আর তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। বোকো হারাম সম্প্রতি ইসলামিক স্টেটের নেতৃত্বের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করেছে। একিউআইএম চাচ্ছে একটি ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। ২০০৭ সালে তারা এই ঘোষণা দেয়। আলজেরিয়া, লিবিয়া, মালি, মরক্কো ও তিউনিসিয়ায় তাদের তৎপরতা সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে নাইজেরিয়াতে বোকো হারাম ও আনসারুল্লাহর মতো সংগঠন একটি খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। নাইজার ও ক্যামেরুনেও তাদের কর্মকা- সম্প্রসারিত হয়েছে। বলা হয়, নাইজেরিয়ার ৩৬টি প্রদেশের মধ্যে ১৪টিতে বোকো হারামের অবস্থান অত্যন্ত শক্তিশালী। আর মালিতে ২০১১ সালে জঙ্গি সংগঠন আনসার দ্বীন সেখানে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় শরিয়া আইন বলবৎ করেছে। ফলে এ অঞ্চলগুলো একটি বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে আছে। উত্তর আফ্রিকার অনেক দেশ এক সময় ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল। ফলে এসব দেশের অনেক মানুষ ফ্রান্স, বিশেষ করে রাজধানী প্যারিসে বসবাস করেন। এদের দ্বিতীয় তথা তৃতীয় জেনারেশন ফ্রান্সে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু ফ্রান্সের নাগরিকত্ব পেলেও এরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। চাকরির ক্ষেত্রে, সামাজিক দিক দিয়ে এরা বৈষম্যের স্বীকার হয়ে আসছিলেন। আর এই সুযোগটিই নিয়েছিল আইএস। এরা তরুণ সমাজের মাঝে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করেছিল। ধর্ম, বিশেষ করে ইসলাম ধর্ম এ ক্ষেত্রে আদৌ কোনো ভূমিকা পালন করেনি। এর বড় প্রমাণ হাসনাআইত বুলাচেনের ঘটনা যিনি ইউরোপে প্রথম নারী আত্মঘাতী হিসেবে পরিচিতি পান। বুলাচেন কিছুদিন আগ পর্যন্ত পশ্চিমা পোশাক ও পশ্চিমা সংস্কৃতিতে আকৃষ্ট ছিলেন। তার বন্ধুরা ইংল্যান্ডের টেলিগ্রাফকে জানিয়েছে, হাসনা ব্যক্তিজীবনে জিনস প্যান্ট কোকাকোলা আর পশ্চিমা সংগীতে বুঁদ হয়ে থাকতেন। তার কাছে ইসলাম ধর্মের কোনো আবেদন ছিল না। হঠাৎ করেই তিনি ‘হিজাবি’ হয়ে যান ও জিহাদি তৎপরতায় জড়িয়ে যান। আইএসের সমর্থক হাসনা বুলাচেন পুলিশের আক্রমণের মুখে গত ১৯ নভেম্বর প্যারিসে নিজেকে উড়িয়ে দেন। আইএস এভাবেই তরুণ প্রজন্মের ভেতর তার ‘প্রভাব’ বিস্তার করেছিল।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সিরিয়ায় আইএস বা ইসলামিক স্টেটের নাম প্রথম শোনা যায় ২০১৩ সালে। তখন সংগঠনটির নাম ছিল ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড লেভান্ট। এই এলাকার ঐতিহাসিক নাম লেভান্ট। জঙ্গিরা এই নামটি গ্রহণ করেছিল। পরে নামটি পরিবর্তন করে। তবে ১৯৯১ সালে ‘জামাত আল তওহিদ ওয়াল জিহাদ নামে একটি সংগঠনের ব্যাপারে মূলত এটি সংগঠিত হয়েছিল। পরে এরা ‘আল কায়েদা ইন ইরাক’ নাম ধারণ করে। এই সংগঠনটি মূলত সুন্নি প্রভাবাধীন ও সুন্নি সম্প্রদায়নির্ভর। ২০০৬ সালে ইরাকে সুন্নি প্রভাবাধীন মুজাহিদিন শূরা কাউন্সিলে সংগঠনটি যোগ দেয়। ২০১৩ সালে সারা বিশ্ব প্রথমবারের মতো আবু বকর বাগদাদির নাম জানতে পারে। ২০১৪ সালের ২৯ জুন বাগদাদি একটি খেলাফতের ডাক দিলে সংগঠনটি ব্যাপক পরিচিতি পায়। তখন সংগঠনটি নতুন নাম ধারণ করে আইএস বা ইসলামিক স্টেট। তবে আল কায়েদার সঙ্গে সংগঠনটির সম্পর্ক কী, এটা নিয়েও প্রশ্ন আছে। বলা হচ্ছে ২০১৪ সালের জুন মাস থেকে আইএসের সঙ্গে আল কায়েদার কোনো সম্পর্ক নেই। আল কায়েদার রাজনৈতিক দর্শন ও ইসলামিক স্টেটের রাজনীতির মাঝে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। দুটো সংগঠনই মূলত জিহাদি, সালাফি ও ওয়াহাবি মতবাদ দ্বারা পরিচালিত হয়। আল কায়েদা জিহাদি ও ওয়াহাবি মতবাদ অনুসরণ করলেও খেলাফতের কথা বলেনি কখনো। আইএস খেলাফতের কথা বলেছে। বাগদাদি নিজেকে খলিফা বা আমিরুল মুমেনিন হিসেবে ঘোষণা করেছেন, যা আল কায়েদার নেতা লাদেন যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন নিজেকে খলিফা ঘোষণা করেননি। বাগদাদি নিজেকে সারা মুসলিম বিশ্বের নেতা বা খলিফা হিসেবে ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে দাবি করেছেন সব মুসলমানের দায়িত্ব হচ্ছে এই খেলাফতের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করা। তিনি মুসলমানপ্রধান সব দেশকে নিয়ে এক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেন। অন্যদিকে আল কায়েদার স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে ছোট্ট ছোট্ট আমিরাত প্রতিষ্ঠা করা। আল কায়েদা মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে অপারেট করে। কিন্তু আইএস তা করে না। তবে বলার অপেক্ষা রাখে না, আল কায়েদা ও আইএসÑ উভয় সংগঠনই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার জন্ম দেওয়া। পুরো মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একটা বড় স্ট্র্যাটেজি রয়েছে। এখানে তার স্বার্থ অনেক। স্বার্থ রয়েছে ফ্রান্সেরও। বাহরাইন ও কাতারে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি। ফ্রান্স ও ব্রিটেনের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে আমিরাত ও সাইপ্রাসে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে সস্তায় তেল পাওয়া যায়। এই তেলের ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের নির্ভরশীলতা অনেক বেশি। লিবিয়ার তেলের ওপর ৩টি পশ্চিমা দেশের নির্ভরশীলতা ইতোমধ্যে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ইতালির প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেলের ২৯ ভাগ আসে লিবিয়া থেকে। ফ্রান্সের ও স্পেনের এই নির্ভরশীলতার হার যথাক্রমে ১৪ ভাগ ও ১০ ভাগ। তারা চাইবে সস্তায় তেল নিতে। সিরিয়ায় খুব বেশি তেলসম্পদ নেই। কিন্তু এই তেলই এখন ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের আয়ের অন্যতম উৎস। আইএস প্রতিদিন তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে ৪০ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলন করে। কালোবাজারে তা বিক্রি করে। এর মূল্য বছর হিসেবে ৩২ কোটি ডলার। আর প্রতিদিনের তেল বিক্রির অর্থ জমা হচ্ছে ইসলামিক স্টেটের ফান্ডে। এই ফান্ড ব্যবহৃত হয় জঙ্গিদের মাসিক বেতন (৪৩০ ডলার থেকে ১ হাজার ডলার) ও সেই সঙ্গে বিদেশে জঙ্গি তৎপরতার কাজে। যেমন বলা যেতে পারে প্যারিসে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের জন্য প্রায় ৫০ হাজার ডলার ব্যয় হয়েছে বলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার ধারণা। কাকতালীয়ভাবে ২০০১ সালের ‘টুইন টাওয়ার’ হামলার সঙ্গে সম্প্রতি বিভিন্ন দেশে সংঘটিত হত্যাকা-ের অনেক মিল আছে। দীর্ঘ ১৪ বছর পরও ‘টুইন টাওয়ার’ হত্যাকা-ের প্রকৃত ‘রহস্য’ আজও উদঘাটিত হয়নি। কেন ‘টুইন টাওয়ার’ হামলায় একজন ইহুদিও মারা গেল না, কারা অভিযুক্ত সৌদি নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল, এর পেছনে কাদের আর্থিক স্বার্থ বেশি ছিল, একটা মুসলমান বিদ্বেষী মনোভাব তৈরি করে কারা লাভবান হয়েছে, কেন সৌদি আরব রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলো না- এসব প্রশ্নের কোনো জবাব আমাদের জানা নেই। আমি ইতোমধ্যে আমাদের সময়ে ৯/১১ নিয়ে একাধিক লেখা প্রকাশ করেছি। তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বলার চেষ্টা করেছি ৯/১১-এর ঘটনাবলি ছিল একটি বড় ধরনের ‘ষড়যন্ত্রের’ই ফল। আজ যখন ভিন্ন আঙ্গিকে সন্ত্রাসী কর্মকা- সংঘটিত হতে দেখি, তখন স্পষ্টতই আবারও সেই ‘ষড়যন্ত্র’-এর কথাই মনে হয়ে যায়। আল কায়েদার চ্যাপ্টার এখন ‘শেষ’। ওসামা বিন লাদেন এখন ইতিহাস। রাজনীতির মঞ্চে এখন আছেন বাগদাদি আর ইসলামিক স্টেট। কে এই বাগদাদি, কারা আইএস তৈরি করল- এ নিয়ে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যারা গবেষণা করেন, তারাই বলেন এটা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সৃষ্টি। টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মিসেল চম্বুডোভস্কি তো স্পষ্টই ইঙ্গিত করেছেন, প্যারিস ট্র্যাজেডি হচ্ছে ৯/১১ ফ্রেন্স স্টাইল (LE 11 september a la francaise)। যারা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির কিছুটা খোঁজখবর রাখেন, তারা নিশ্চয়ই greater middle east policy সম্পর্কে কিছুটা ধারণা রাখেন। কয়েক বছর আগে একজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ওয়েসলি কার্ক ৭টি দেশের পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন। এই ৭টি দেশ হচ্ছে- ইরান, সিরিয়া, লেবানন, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইরাক। ইতোমধ্যে লিবিয়া ও ইরাকে পরিবর্তন হয়েছে। সিরিয়া পরিবর্তনের পথে। ২০২০-পরবর্তী মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে মানচিত্র আঁকতে হবে। সৌদি আরব ভেঙে যাওয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া ও ইরাক একাধিক রাষ্ট্রে বিভক্ত হওয়া- এসবই এখন ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে। আর সূক্ষ্মভাবে দেখলে দেখা যাবে, এ থেকে উপকৃত হচ্ছে একমাত্র ইসরায়েল। আজ তাই কোনো কোনো পক্ষের কাছে যেমনি প্রয়োজন ছিল ৯/১১-এর জন্ম দেওয়ার, ঠিক তেমনি প্রয়োজন ছিল প্যারিস ট্র্যাজেডি সৃষ্টি করার। আর এর রেশ ধরেই মালি এবং বুরকিনা ফাসোতে ঘটল সন্ত্রাসী কর্মকা-। এর মধ্য দিয়ে এখানেই ‘সন্ত্রাসী কর্মকা-’ শেষ হয়ে যাবেÑ এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। কেননা আইএসের স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে ‘সন্ত্রাসের মাঝে বিজয় অর্জন’। বাগদাদি এই স্ট্র্যাটেজি রচনা করেছেন। সন্ত্রাসের মাধ্যমে তিনি সিরিয়া ও ইরাকের বিশাল এলাকায় আইএসের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন বটে, কিন্তু তা বিশ্ববাসীর কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। প্যারিসে ১২৯ জন সাধারণ মানুষকে হত্যা করে আইএস ঘৃণাই অর্জন করেছে। সাধারণ মানুষ তাদের কর্মকা- পছন্দ করছে না। বাগদাদি তার সন্ত্রাসী কর্মকা- আফ্রিকাতেও ছড়িয়ে দিতে চান। আর তাই মালির রাজধানী বামাকো এবং কুরকিনা ফাসাতে যে সন্ত্রাসী কর্মকা- ঘটল তা সমর্থন পাবে না। তবে একটা ভয়ের আবহ ছড়িয়ে দিল। আফ্রিকা এখন আইএসের টার্গেট। এর শেষ কোথায়? আইএস হোয়াইট হাউস উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। আল কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠন মালির রাজধানীতে জঙ্গি তৎপরতা চালিয়ে বিশ্ববাসীকে জানান দিল ইসলাম নয়, বরং সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমেই তারা ‘বিজয়’ অর্জন করতে চায়! আইএসের বিরুদ্ধে একটি সর্বাত্মক ‘যুদ্ধ’ শুরু করা জরুরি। আর ভয়টা হচ্ছে আইএসের যে দূরবর্তী খেলাফত প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা তাতে করে আমাদের মতো দেশও আক্রান্ত হতে পারে! ইতোমধ্যে বাংলাদেশে আইএস আছে কী নেই এ নিয়ে একটা ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার ঘটনা থেকে আমাদের সতর্ক হতে হবে। স্থানীয় জঙ্গিরা আছে। তারা যে কোনোভাবেই হোক আইএসের কাছ থেকে একটা ‘অনুমোদন’ পাওয়ার চেষ্টা করছে। ইন্দোনেশিয়ার জনগোষ্ঠীর (২৫ কোটি) একটা বড় অংশ মুসলমান। জানা যায়, প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ যুবক আইএসের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ইন্দোনেশিয়াতে ফিরে এসেছে। এরাই সর্বশেষ সন্ত্রাসী হামলা পরিচালনা করেছে। এই বিষয়টা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আইএসের বাংলাদেশ কিংবা ভারতীয় মহাদেশের কোনো ‘শাখা’ গঠিত না হলেও আল কায়েদার শাখা আছে। আমাদের তাই সতর্ক হতে হবে। আমাদের গোয়েন্দাদের তৎপরতা বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে মুসলমানপ্রধান দেশগুলোতে যে সন্ত্রাসী তৎপরতা বাড়ছে, তাতে বাংলাদেশও আক্রান্ত হতে পারে। আমাদের তাই সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
Daily Amader Somoy
24.1.16
0 comments:
Post a Comment