রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নয়া সমীকরণ

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে অতি সম্প্রতি বেশকিছু পরিবর্তন হয়েছে। ২৩ আগস্ট তুরস্কের সেনাবাহিনী সিরিয়ার অভ্যন্তরে তাদের সামরিক অভিযান চালিয়েছে। সেই সামরিক অভিযানে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সিরীয় শহর জারাব্লুস দখল করেছে এবং ওই শহরটি আইএসমুক্ত করেছে। তুরস্কের সামরিক অভিযানের সময় যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তুরস্ক সফর করেছেন এবং প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তুরস্কের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন। সিরিয়া প্রশ্নে জেনেভায় কেরি-লেভারভ বৈঠক করেছেন এবং আগামী বছরের শুরুতে একটি শান্তি পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন। সিরিয়ার সংকট নিয়ে এই যখন পরিস্থিতি- তখন চীন জানিয়েছে, তারা সিরিয়ায় যুদ্ধবিমান পাঠাচ্ছে। এ যুদ্ধবিমানগুলো কোথায় মোতায়েন করা হবে কিংবা কোনো সিরীয় বিমানঘাঁটি থেকে তা পরিচালনা করা হবে কিনা, সে ব্যাপারে কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া না গেলেও এটা বলা হয়েছে- এ বিমানগুলো সিরিয়ায় জঙ্গি স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালাবে। চীনের এ ভূমিকা নিঃসন্দেহে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ইতিমধ্যে আইএসের বিরুদ্ধে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের বিমানগুলো গত এক বছর ধরে বিমান হামলা করে আসছে। এখন এর সঙ্গে যোগ দিল চীন। এরদোগানের রাশিয়া সফরের পরপরই তুরস্ক সিরিয়ার অভ্যন্তরে সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছে। আইএস নির্মূলের প্রশ্নে তুরস্কের যেমন একটি ভূমিকা রয়েছে, ঠিক তেমনি সিরিয়ায় আসাদের ক্ষমতায় টিকে থাকা, লাখ লাখ সিরীয় নাগরিকের দেশান্তরের ঘটনায়ও তুরস্কের ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায় না। প্রতিটি ক্ষেত্রে তুরস্কের রাজনীতি, তুরস্কের স্ট্র্যাটেজিক অবস্থান গুরুত্বের দাবি রাখে। সুতরাং তুরস্কে যখন একটি ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান (১৫ জুলাই, ২০১৬) সংঘটিত হয়, তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই এর একটি প্রতিক্রিয়া তুরস্কের রাজনীতির পাশাপাশি আঞ্চলিক রাজনীতিতেও থাকবে। বিশেষ করে সিরিয়া সংকটের সমাধান, আইএসকে পরিপূর্ণভাবে নির্মূলের প্রশ্নে তুরস্কের ভূমিকা কী হবে, সেটি একটি বড় প্রশ্ন এখন। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে। তুরস্ক ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তুরস্কে মার্কিন সেনা রয়েছে এবং একাধিক বিমানঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহার করে। এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের যে স্ট্র্যাটেজিক ইন্টারেস্ট রয়েছে, তাতে তুরস্ক অন্যতম একটি ফ্যাক্টর। তুরস্কের ব্যাপারে রাশিয়ারও স্বার্থ রয়েছে। তুরস্ক রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দেশ নয়। ব্ল্যাক সী বা কৃষ্ণসাগর এ দেশ দুটোকে আলাদা করেছে। এ দেশ দুটোর মাঝে আছে আবার তিনটি দেশ- জর্জিয়া, আরমেনিয়া ও আজারবাইজান। জর্জিয়াকে ন্যাটো সদস্যভুক্ত করার আগ্রহ যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের। জর্জিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার ‘সীমিত যুদ্ধের’ খবর আমরা জানি। অন্যদিকে আরমেনিয়া ও আজারবাইজানের ‘অভ্যন্তরীণ যুদ্ধে’ তুরস্ক ও রাশিয়া পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে। তবে ক্রিমিয়া রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় (২০১৪), কৃষ্ণসাগরের গুরুত্ব বেড়েছে। এখানে রয়েছে রাশিয়ার বড় নৌঘাঁটি। কৃষ্ণসাগরের পাশ ঘেঁষে রয়েছে তুরস্কের বিখ্যাত বসফোরাস প্রণালী ও মারমারা সাগর। ইস্তাবুলের বিখ্যাত বসফোরাস প্রণালী হচ্ছে প্রাচ্য ও পশ্চিমের অদ্ভুত এক মিলন স্থান। এই মারমারা প্রণালী ভূমধ্যসাগর এবং কৃষ্ণসাগরকে সংযুক্ত করেছে। রাশিয়ার নৌ-স্ট্রাটেজিস্টরা এ কারণেই তুরস্ককে গুরুত্ব দেন বেশি। সুতরাং তুরস্কে একটি ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পেছনে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি যতটুকু ভূমিকাই পালন করে থাকুক না কেন, দুই পরাশক্তির (রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র) এতে একটা ‘যোগসূত্র’ থাকা বিচিত্র কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুরস্কের ‘সনাতন সম্পর্ক’ থাকলেও, সাম্প্রতিক সময়গুলোয় প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখতে পারছিল না ওয়াশিংটন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তুরস্ক-যুক্তরাষ্ট্র বিরোধও লক্ষণীয়। অন্যদিকে স্ট্যাটেজিক গুরুত্বের কারণে রাশিয়া তুরস্কে এমন একটি সরকার চাইবে, যা তার স্বার্থরক্ষা করবে। বিশ্ব আসরে রাশিয়াকে তার অবস্থান শক্তিশালী করতে হলে তুরস্ককে আস্থায় নেয়া প্রয়োজন। ইতিমধ্যে ইরানের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের কারণে এ অঞ্চলের রাজনীতিতে রাশিয়ার অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে। ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ‘পারমাণবিক সমঝোতা’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর, ইরানের ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। ইরান এ অঞ্চলের অন্যতম উঠতি শক্তি, যা কিনা বিশ্ব এখন গ্রহণযোগ্যতায় নিয়েছে। ফলে খুব সঙ্গতকারণেই এ অঞ্চলে যদি রাশিয়া-ইরান-তুরস্ক একটি ‘ঐক্য’ গড়ে ওঠে, তাহলে তা বিশ্ব রাজনীতিতেও যে প্রভাব ফেলবে, তা বলাইবাহুল্য। মনে রাখতে হবে, ইতিমধ্যে বেশকিছু ইস্যুতে চীন-রাশিয়া ঐক্য গড়ে উঠেছে। দেশ দুটো এসসিও বা ‘সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনে’র সদস্য। ভারত এ জোটের অবজারভার। অন্যদিকে চীন-রাশিয়া-ভারত এবং আরও বেশক’টি দেশের সমন্বয়ে একটি ‘বিকল্প বিশ্ব ব্যাংক’ (ব্রিকস ব্যাংক) গড়ে উঠেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে আঘাত করছে। ফলে দুই পরাশক্তির মাঝে এক ধরনের প্রভাব বলয়ের রাজনীতি শুরু হয়েছে অনেক আগেই। এ ক্ষেত্রে তুরস্কের স্ট্র্যাটেজিক অবস্থানের কারণে এ দুই পরাশক্তি তুরস্কের ব্যাপারে যে আগ্রহী হয়ে উঠবে, সেটাই স্বাভাবিক। দীর্ঘদিন তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে কাজ করে আসছে। ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ পার্টনার হচ্ছে তুরস্ক। ন্যাটোর পারমাণবিক অস্ত্রের একটা মজুদ আছে তুরস্কে; যা কিনা রাশিয়ার বিরুদ্ধেও ব্যবহৃত হতে পারে আগামীতে। সুতরাং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাশিয়া যে তুরস্কের পাশে এসে দাঁড়াবে, এটাই স্বাভাবিক। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে তুরস্কেরও একাধিক স্বার্থ কাজ করছে। প্রথমত সিরিয়া সংকটে কুর্দিদের একটি গ্রুপ কুর্দিজ ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন পার্টি (পিওয়াইডি) অত্যন্ত সক্রিয়। রাশিয়া পিওয়াইডিকে সমর্থন করে এবং মস্কোয় তাদের একটি লিয়াজোঁ অফিস খুলতেও অনুমতি দিয়েছে। তুরস্ক মনে করে পিওয়াইডি হচ্ছে কুর্দিস্তান ওয়ার্কাস পার্টির (পিকেকে) একটি অঙ্গসংগঠন। পিকেকে তুরস্ক ও ইরাকি কুর্দিস্তানে তৎপর। দলটি ১৯৮৪ সালের পর থেকে তুরস্ক সরকারের বিরুদ্ধে সব সংগ্রাম পরিচালনা করে আসছে। দলটি তুরস্কে নিষিদ্ধ। এখন তুরস্ক মনে করছে, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে পিকেকে তথা পিওয়াইডির ওপর থেকে রাশিয়ার সমর্থন কমে যাবে এবং পিকেকে তুরস্কের অভ্যন্তরে যে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, তা হ্রাস পাবে। দ্বিতীয়ত রাশিয়ার গ্যাস। প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার (১ হাজার ২০০ কোটি ডলার) ব্যয়ে একটি পাইপলাইন নির্মিত হচ্ছে, যার মাধ্যমে রাশিয়ার গ্যাস ইউরোপে যাবে (টার্কিস স্ট্রিম প্রজেক্ট)। ইউরোপের অনেক দেশ রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল, যা কিনা ইউক্রেনের মাধ্যমে (সাউথ স্ট্রিম) সরবরাহ করা হতো। কিন্তু ইউক্রেন সংকট গভীর হলে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পুতিন তার তুরস্ক সফরের সময় এ বিকল্প ‘টার্কিস স্ট্রিম’ গ্যাস পাইপলাইন চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর ফলে রাশিয়ার গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে কৃষ্ণসাগরের নিচ দিয়ে ইউরোপের কয়েকটি দেশে সরবরাহ করা হবে। গ্যাস পাইপলাইন চালু হলে তা তুরস্কের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে। তৃতীয়ত, তুরস্ক ও রাশিয়া একটি ‘যৌথ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। ফলে তুরস্ক তার আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে এবং রাশিয়াকে এখন ‘কাছের বন্ধু’ ভাবছে। এ ‘নয়া সম্পর্ক’ সিরিয়া সংকট থেকে শুরু করে এ অঞ্চলের রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলবে। সিরিয়ায় আসাদ বিরোধিতা থেকে তুরস্ক এখন সরে আসবে এবং আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহী বাহিনীগুলো এখন আর তুরস্ক সরকারের সহযোগিতা পাবে না। তুরস্কের এ ‘অবস্থান’ কিছুটা হলেও এ অঞ্চলের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে। তবে এ পরিবর্তন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে নেবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। দুজন প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন নির্বাচনী প্রচারণার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছেন। চীনের পররাষ্ট্রনীতিতে অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় হস্তক্ষেপের কোনো নজির নেই। চীন বোঝে ব্যবসা। আদর্শ এ ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা পালন করে না। তবে সিরিয়া প্রশ্নে চীনের ভূমিকা আসাদের পক্ষেই। এ কারণে চীন সিরিয়ায় অস্ত্র বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিগগিরই দামেস্ক যাচ্ছেন এবং চীন আসাদের সমর্থনে এখন যুদ্ধবিমান পাঠাচ্ছে। সঙ্গতকারণেই তাই একটি প্রশ্ন ওঠে- তা হচ্ছে, সিরিয়ার ভবিষ্যৎ তাহলে কী? তুরস্কের অবস্থান পরিবর্তন কী সিরিয়ায় কোনো ধরনের পরিবর্তন আনবে? এর জবাব এ মুহূর্তে দেয়া কঠিন। তবে সিরিয়া নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে যেসব পরিবর্তন ঘটছে, তা লক্ষণীয়। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান যখন রাশিয়ার সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর থেকে তার নির্ভরশীলতা কমাতে চাচ্ছেন, তখনই ২৩ আগস্ট আংকারা ছুটে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আর বেইজিংয়ে দেখা হয়েছে ওবামার সঙ্গে এরদোগানের। উদ্দেশ্যটা স্পষ্ট। তুরস্ককে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বলয়ে রাখা। জো বাইডেন যখন আংকারায় তখনই তুরস্ক সিরিয়ায় সবচেয়ে বড় ধরনের মিলিটারি অপারেশন শুরু করেছে। তুরস্ক বলছে, তার এ মিলিটারি অপারেশনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তবর্তী শহর জারাব্লুস থেকে আইএস জঙ্গিদের উৎখাত করা। কিন্তু সিরিয়ার ভেতরে এ ধরনের তুর্কি সামরিক অভিযানের নিন্দা করেছে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সিরিয়ার কুর্দিদের সংগঠন ওয়াইপিজি বা ‘পিপলস প্রটেকশন ফোর্স’। ওয়াইপিজি বলছে এটা সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ ঘটনায় হস্তক্ষেপের শামিল। জো বাইডেনের আংকারা সফর নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। ১৫ জুলাই ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান এবং এ অভ্যুত্থানের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে- এ অভিযোগের পর প্রথম কোনো যুক্তরাষ্ট্রের নেতা আংকারা সফর করলেন। এতে করে তুরস্ক-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কতটা উন্নত হবে বলা মুশকিল। কিন্তু তুরস্কের অবস্থানগত পরিবর্তনের ফলে সিরীয় রাজনীতিতে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। এখানে বলা ভালো, সিরিয়া এখন কার্যত কয়েকভাগে ভাগ হয়ে আছে এবং এক-একটি এলাকা এক-একটি জঙ্গিগোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করছে। আসাদ সমর্থিত সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আলেপ্পোর কিছু অংশ, দামেস্ক, হাসা ও হোমসের মতো বড় বড় শহর। অন্যদিকে আইএসের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পালমিরা, রাকা (অলিখিত আইএসের রাজধানী), দেইর আজ জোর ও কোবানির মতো শহরগুলো। উত্তরাঞ্চলের একটা বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে অপর একটি জঙ্গিগোষ্ঠী- সাবেক নুসরা ফ্রন্ট, বর্তমানে যাদের নাম জাবহাত ফাতেহ আল শাম। দামেস্কর আশপাশে ছোট ছোট বিদ্রোহী গ্রুপও কাজ করছে। এক বছর আগে সিরিয়ায় আইএস অবস্থানের ওপর রাশিয়ার যুদ্ধবিমান বিমান হামলা শুরুর পর আইএসের ভিত্তি দুর্বল হয়েছে বটে; কিন্তু তাদের উৎখাত করা সম্ভব হয়নি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত বিশাল হামলায়ও আইএস দুর্বল হয়েছে- এটা বলা যাবে না। প্রাপ্ত তথ্যমতে, সিরিয়ায় বর্তমানে প্রায় ৩০০ মার্কিন সেনা রয়েছে, যারা কোনো কোনো বিদ্রোহী গ্রুপের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। এরা সিরিয়া সরকারের আমন্ত্রণে সেখানে যাননি। গেছেন বিদ্রোহী গ্রুপ, বিশেষ করে কুর্দি গ্রুপগুলোকে সহায়তা করতে। যুক্তরাষ্ট্র চায় আসাদ সরকারের উৎখাত। অন্যদিকে রাশিয়া চাচ্ছে আসাদ সরকার ক্ষমতায় থাকুক। কুর্দিদের ‘স্বাধীনতা আন্দোলন’কে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করছে। সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কুর্দি নিয়ন্ত্রিত ও অধ্যুষিত এলাকায় একটি স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্র গঠনের দাবি যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে। এ দুই শক্তির বাইরে (যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া) সৌদি আরব ও কাতার জিহাদিদের আর্থিক সহায়তা করছে, যারা আইএসের পক্ষ হয়ে এখন একটি ‘খিলাফত’ প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করছে। সিরিয়ার এই যে পরিস্থিতি, এ পরিস্থিতিতে নিঃসন্দেহে তুরস্ক একটি ফ্যাক্টর। শত শত জিহাদি তুরস্ক সীমান্ত দিয়েই সিরিয়ায় প্রবেশ করে আইএসের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে। ফলে সিরিয়ার সংকটে তুরস্কের একটা ভূমিকা থাকবেই। তবে খুব দ্রুত সিরিয়া সমস্যার সমাধান হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের আগামী নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরেও সিরিয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে পরিবর্তন আসবে, তা মনে করার কোনো কারণ নেই। তবে রাজনীতির চিত্র ক্রমশ বদলে যাচ্ছে। তুরস্কের অবস্থানগত পরিবর্তনের ফলে আসাদ সরকার আরও শক্তিশালী হবে। তবে আইএস পরিপূর্ণভাবে ধ্বংস হবে কিংবা উৎখাত হবে- এমনটি মনে হচ্ছে না; বৃহৎ শক্তিগুলো তাদের স্বার্থেই সিরিয়া সংকট জিইয়ে রাখবে। ডালাস, যুক্তরাষ্ট্র Daily Jugantor 05.09.2016

0 comments:

Post a Comment