রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন ও সন্ত্রাসী হামলার মধ্যে যোগসূত্র আছে কি?


সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের শুরুতে নিউইয়র্ক, মিনেসোটা আর নিউ জার্সিতে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ আবারও প্রমাণ করল সন্ত্রাসীদের টার্গেটের শীর্ষে এখনও রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পরপর কয়েকটি ঘটনায় নতুন করে আবার আতংক ছড়িয়ে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে। প্রথম ঘটনা ঘটল মিনেসোটায়। একজন কৃষ্ণাঙ্গ অভিবাসী, যে ১৫ বছর ধরে মিনেসোটায় বসবাস করছে, সে একটি শপিং মলে ছুরিকাঘাত করে আহত করল ৯ জনকে। জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সংবাদ সংস্থা ‘আমাক’-এ দাবি করা হল, এ কাজটি তাদের সৈনিকরা করেছে। পুলিশ অবশ্য তাকে গুলি করে হত্যা করে। পরের ঘটনা নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে। দুটি ‘প্রেশার কুকার’ বোমা পাওয়া গেল। একটি বিস্ফোরিত হল। আহত হল ২৯ জন। অপর বোমাটি অবিস্ফোরিত অবস্থায় ‘আবিষ্কার’ করল পুলিশ। নিউইয়র্কের গভর্নর জানালেন, এ সন্ত্রাসী ঘটনায় কোনো বিদেশী সম্পৃক্ততা নেই। অর্থাৎ সম্ভাব্য আইএস সংশ্লিষ্টতা তিনি অস্বীকার করলেন। তৃতীয় ঘটনা নিউ জার্সিতে। সেখানে অবিস্ফোরিত অবস্থায় পাওয়া গেল ৫টি বোমা। উদ্ধার করতে গিয়ে একটি বোমা বিস্ফোরিত হল।

এখানে (যুক্তরাষ্ট্র) জনমনে, মিডিয়ায় এখন প্রশ্ন একটিই- এই সন্ত্রাসী হামলার শেষ কোথায়? এক্ষেত্রে তিনটি বিষয় বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। এ ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ ঘটল এমন একটি সময় যখন ১. যুক্তরাষ্ট্র ৯/১১-এর ঘটনার (টুইন টাওয়ারে হামলা ও ধ্বংস করে দেয়া) ১৫ বছর পার করেছে, ২. জাতিসংঘের ৭১তম অধিবেশন শুরু হচ্ছে এবং বিশ্ব নেতারা নিউইয়র্কে জমায়েত হতে শুরু করছেন, ৩. মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন (নভেম্বর) প্রচারণা এখন তুঙ্গে এবং অন্যতম প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য মুসলমানদের দায়ী করছেন এবং মুসলমানদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেয়ার হুমকি অব্যাহত রেখেছেন। যারা ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাস করেন, তারা এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে উপরে উল্লিখিত তিনটি বিষয়ের মধ্যে একটি মিল খুঁজে পাবেন। কিন্তু বাস্তবতা কী বলে? বাস্তবতা বলে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশে, যেখানে রাষ্ট্র নাগরিকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়, সেখানে একের পর এক সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটছে। পাঠক, চলতি বছর অরল্যান্ডোর সমকামী ক্লাবে বোমা হামলার ঘটনা স্মরণ করতে পারেন। যিনি হামলা চালিয়েছিলেন, তিনি একজন মুসলমান এবং হামলার আগে ইসলামিক স্টেটের প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন। এর আগে এক পাকিস্তান বংশোদ্ভূত দম্পতির স্কুলে আত্মঘাতী হামলা এবং আইএসের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়েছিল। এখন যে বিষয়টি বহুল আলোচিত তা হচ্ছে- আইএস মার্কিন সমাজে কতটুকু ভিত গাড়তে পেরেছে? নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্থানীয়ভাবে তৈরি বোমা দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। এবং এটা অস্বীকার করা যাবে না যে, অভিবাসীদের দ্বারাই এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে! মিনেসোটায় যে যুবক ৯ জন লোককে ছরিকাঘাত করে আহত করল, সে সোমালি বংশোদ্ভূত। সোমালিয়ায় আল শাবাব জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রভাব রয়েছে এবং আল শাবাব অতি সম্প্রতি আইএস নেতা বুগদাদির প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করেছে। ফলে আইএসের পক্ষ থেকে ‘আমাক’ যখন মিনেসোটার ঘটনাকে ‘ইসলামী সেনার’ কাজ বলে অভিহিত করে, তখন এটাকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ কম। তবে নিউইয়র্কের ঘটনায় তথাকথিত আইএসের সংশ্লিষ্টতা এখনও প্রমাণিত হয়নি। এফবিআই তদন্ত করছে। ধারণা করছি, হয়তো আগামীতে জানা সম্ভব হবে এ ঘটনার সঙ্গে আইএস আদৌ জড়িত ছিল কিনা। তবে যারা এ কাজটি করেছে, তারা সন্দেহাতীতভাবে দুটি বিষয় মাথায় রেখেছে- এক. মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, দুই. জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন।

এসব ‘সন্ত্রাসী ঘটনায়’ লাভবান হবেন ট্রাম্প। তার জনপ্রিয়তা বাড়বে। হয়তো কয়েক পয়েন্টে তিনি হিলারির চেয়ে এগিয়ে যাবেন। তিনি তার নির্বাচনী প্রচারণায় এ সন্ত্রাসী ঘটনাকে তার স্বার্থে ব্যবহার করবেন। তিনি মুসলমানদের বিরুদ্ধে তার আক্রমণ আরও শাণিত করবেন। ফলে নির্বাচনে তার অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে। ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ বলে, যারাই এ কাজটি করেছে, তারা চাইছে ট্রাম্প নির্বাচনে বিজয়ী হোন! ভবিষ্যৎই বলতে পারবে যুক্তরাষ্ট্রে এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নির্বাচনে কতটুকু প্রভাব ফেলবে। আমার কাছে সন্ত্রাস দমন প্রশ্নে হিলারির অবস্থানকে শক্তিশালী মনে হয়নি। ফলে পরোক্ষভাবে ট্রাম্প সুবিধা পাচ্ছেন বেশি। এখানে আবার ‘ইসরাইলি কানেকশনের’ প্রশ্নটি চলে আসে। অভিযোগ আছে, আইএসের জন্ম ও উত্থানের পেছনে ইসরাইলের একটা যোগসূত্র আছে। অনেক নিবন্ধে তথ্য ও উপাত্তসহ স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’ আইএস তৈরি করেছে। দ্বিতীয়ত, ইসরাইলের নীতিনির্ধারকরা, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদি লবিও চাচ্ছে ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে। সুতরাং একটি ‘আইএস ফোবিয়া’ তৈরি করে জনমতকে ট্রাম্পের দিকে নিয়ে যাওয়ার যে ‘তত্ত্ব’, তা অস্বীকার করি কীভাবে? ট্রাম্প নিজে ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রতি তার ভালোবাসা ও আনুগত্যের কথা স্বীকার করেছেন একাধিকবার। তিনি একবার প্রকাশ্যে বলেছেন, তার মেয়ে এক ইহুদি সন্তান জন্ম দিতে যাচ্ছেন। অর্থাৎ তার মেয়ে-জামাই যে ইহুদি, এটা তিনি স্মরণ করিয়ে দিলেন। ফলে নির্বাচনে আইএস বিতর্ক কাজ করবে।

কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র ৯/১১-এর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ১৫ বছর পার করেছে। ২০০১ সালের ওই হামলা সারা বিশ্বের রাজনীতিকে বদলে দিয়েছিল। সারা বিশ্বের মানুষ প্রথমবারের মতো প্রত্যক্ষ করেছিল সন্ত্রাসীরা কত ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। ৯/১১-কে নিয়ে যে ‘মিথ’, যে ‘বিতর্ক’, এত বছর পরও তার কোনো সমাধান হয়নি। গত ১১ সেপ্টেম্বর বিকালবেলা আমি গ্রাউন্ড জিরোতে গিয়েছিলাম। এক সময় সেখানে টুইন টাওয়ার ছিল, যা ৯/১১-এর হামলায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সেখানে এখন দাঁড়িয়ে আছে নতুন একটি ভবন ‘ফ্রিডম টাওয়ার’। যারা হামলা করেছিল বিমান হাইজ্যাক করে, তাদের পরিচয় পাওয়া গেছে সত্য (১৫ জন ছিলেন সৌদি নাগরিক), কিন্তু কে তাদের প্ররোচিত করেছিল, আল কায়দা এর সঙ্গে কতটুকু জড়িত ছিল- এ বিতর্কের আজও কোনো সমাধান হয়নি। একটি কমিশন গঠিত হয়েছিল সত্য। কিন্তু কমিশনকে পর্যাপ্ত তথ্য দিয়ে সহায়তা করেনি সরকার। চার চারটি প্লেন কীভাবে একসঙ্গে হাইজ্যাক করা হল, কেন চারটি বিমানের ‘ব্ল্যাকবক্স’ খুঁজে পাওয়া গেল না, কেন হাইজ্যাকার কিংবা বিমানযাত্রীদের ডিএনএ টেস্ট করা হল না- এসব প্রশ্নের কোনো সঠিক জবাব মানুষ আজও পায়নি। টুইন টাওয়ারের মতো সুউচ্চ ভবন কীভাবে একসঙ্গে ভেঙে পড়ল এটা নিয়েও বিতর্ক আছে। ইউরোপের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটা ছিল 'Controllad Demolition' অর্থাৎ ‘নিয়ন্ত্রিত ধ্বংস’। আরও স্পষ্ট করে বলা যায়, অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ভবন দুটি ধ্বংস করা হয়েছে। সাধারণত বড় বড় ভবন এভাবে ধ্বংস করা হয়, যাতে করে পাশের ভবনের কোনো ক্ষতি না হয়। একটি বিমান কোনো ভবনে আঘাত করলে, পুরো ভবনটি একসঙ্গে নিচের দিকে ভেঙে পড়ার কথা নয়। টুইন টাওয়ারের ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছিল। পাশের তৃতীয় একটি ভবন ভেঙে গিয়েছিল অনেক পরে। কিন্তু সেখানে কোনো বিমান হামলা হয়নি।

সুতরাং ৯/১১ নিয়ে বিতর্ক আছে এবং বিতর্ক থাকবেই। কিন্তু যা গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে ৯/১১-এর হামলাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ কর্মসূচি গ্রহণ করে, যা দীর্ঘ ১৫ বছরেও শেষ হয়নি। একদিকে আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া আর সিরিয়ার মতো দেশ যখন পরিপূর্ণ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, অন্যদিকে তখন আফ্রিকায় জন্ম হয়েছে নতুন নতুন ফ্রন্টের। ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ নামে আফ্রিকায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে নয়া কমান্ড ‘আফ্রিকম’ (AFRICOM)। দক্ষিণ এশিয়াতেও এ ধরনের অপর একটি কমান্ড প্রতিষ্ঠার তোড়জোড় চলছে। কিন্তু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। বরং বেড়েছে। ৯/১১-কে কেন্দ্র করে সারা বিশ্বের মানুষ জেনেছিল আল কায়দার কথা। আর এখন মানুষ জানছে ইসলামিক স্টেটের কথা। কিন্তু সন্ত্রাস বন্ধ হয়নি। ইতিমধ্যে তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের করদাতারা জনপ্রতি হাজার হাজার ডলার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পরিশোধ করে আসছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াটসন ইন্সটিটিউট একটি গবেষণাকর্ম পরিচালনা করেছে, যেখানে দেখানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পেছনে। তাদের তথ্যমতে, ২০১৬ সাল পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলার। এ অর্থ আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া ও পাকিস্তান যুদ্ধে ব্যয় হয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০১৭ সালের বাজেটে আরও যুক্ত হচ্ছে ৬৫ বিলিয়ন ডলার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য, ৩২ বিলিয়ন ডলার হোমল্যান্ড সিকিউরিটির জন্য এবং যুদ্ধাহত সৈন্যদের জন্য আরও খরচপাতি। সব মিলিয়ে যুদ্ধের পেছনে খরচ গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ৪ দশমিক ৭৯ ট্রিলিয়ন ডলার। এ অর্থ বিভিন্ন সূত্র থেকে ধার করা হচ্ছে। রাষ্ট্রকে তা পরিশোধ করতে হবে সুদসহ। বছরের পর বছর সুদের পরিমাণ বাড়বে এবং ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের মতে, ২০৫৩ সালে (যখন সব ঋণ পরিশোধ হবে) যুদ্ধের খরচ গিয়ে দাঁড়াবে ৭ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলারে। জুয়ান কোল এক প্রতিবেদনে দেখিয়েছেন, ন্যূনতম ৫ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করে কী করা যেত (Juan Cole, What did we buy with $ 5 trillion that the Iraq and Afghanistan wars have cost us? Truthdig, Sept. 13, 2016)। তিনি দেখিয়েছেন, প্রতিদিন যদি ১০ মিলিয়ন ডলার খরচ করা যায়, তাতেও এ টাকা শেষ হতে সময় লাগবে ২৭৩ বছর! এ যুদ্ধে ৭ হাজার মার্কিন সৈন্য মারা গেছেন, ৫২ হাজার সৈন্য আহত হয়েছেন। আর ইরাকি ও আফগান জনগণের মৃত্যুর হিসাব কয়েক লাখ। ৪০ লাখ মানুষ নিজ বাসভূমি ছেড়ে দেশান্তরিত হয়েছেন। জুয়ান কোলের মতে আল কায়দা যুক্তরাষ্ট্রেরই সৃষ্টি। ইরাকে কোনো আল কায়দা ছিল না। এমনকি সিরিয়াতেও নেই। এ দুটি দেশে ধর্মনিরপেক্ষ ও লিবারেলরা ক্ষমতায় ছিল বা আছে (সাদ্দাম হোসেন ও আসাদ)। কিন্তু ‘যুদ্ধ’ সেখানে ‘ইসলামী জঙ্গিবাদের’ জন্ম দিয়েছে। দেশ দুটি ধ্বংস হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ কোনো ফল বয়ে আনেনি। বরং যুক্তরাষ্ট্রে দারিদ্র্য বেড়েছে। আয়-বৈষম্য বেড়েছে। কর্পোরেট হাউসগুলো এ যুদ্ধ থেকে লাভবান হয়েছে। এই কর্পোরেট হাউসগুলোর স্বার্থেই এই ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ অব্যাহত থাকবে। যুদ্ধ মানেই ব্যবসা। এ ব্যবসায় সাধারণ মানুষ লাভবান হয় না। লাভবান হয় বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো। কর্পোরেট হাউসগুলো।

আজ যখন নিউইয়র্ক, মিনেসোটা আর নিউ জার্সিতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হয়, তখন এসব প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। সাধারণত মিডিয়ায় এ নিয়ে আলোচনা হয় কম। কিছু ওয়েবসাইট ও অনলাইনভিত্তিক সংবাদপত্র রয়েছে, যেখানে বিষয়গুলো আলোচিত হয় বেশি। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শুরু হয়েছে। এ সময় খোদ নিউইয়র্ক শহরে শত নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেও যখন বোমা বিস্ফোরিত হয়, তখন এটা স্পষ্ট, যারাই এ কাজটি করেছে তারা বিশ্ব নেতাদের একটি মেসেজ দিতে চায়- আর তা হচ্ছে, ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ এখনও শেষ হয়নি। তাহলে এর শেষ কোথায়? ১৫ বছর পার হয়েছে। যুদ্ধ এখনও চলছে। এক নয়া মধ্যপ্রাচ্যের জন্ম হতে যাচ্ছে। তথাকথিত একটি জিহাদি রাষ্ট্রের ইতিমধ্যে জন্ম হয়েছে। সেখানে ‘যুদ্ধ’ জিইয়ে রাখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের লাভটা এখানেই। দুঃখজনক হচ্ছে, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো, কিংবা মুসলিম বিশ্ব আজ দ্বিধাবিভক্ত। সেখানে কোনো ঐক্য নেই। সিরিয়া সংকটের আদৌ কোনো সমাধান হবে বলে মনে হয় না। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার বিমান হামলা শুরুর পর দীর্ঘ এক বছর পার হয়েছে। আইএসকে উৎখাত করা যায়নি।

নিউইয়র্কের বোমা বিস্ফোরণে অভিযুক্ত আহমদ খান রাহামিকে শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পেরেছে পুলিশ। এর মধ্য দিয়ে নিউইয়র্কের ‘ঘটনার’ হয়তো একটা সমাধান পাওয়া যাবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কি বন্ধ হবে? অভিযুক্ত রাহামি একা এ কাজ করেছেন, তা আমার মনে হয় না। আমার ধারণা, এ ঘটনার সঙ্গে শুধু রাহামি একাই জড়িত ছিল না। বরং যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসীদের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। এ নেটওয়ার্ক যদি ভেঙে ফেলা না যায় তাহলে নিউইয়র্কের মতো ঘটনা আরও ঘটবে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর অভিবাসী রয়েছে। এদের মাঝে আইএস সমর্থকদের সংখ্যা বাড়ছে। অতি সম্প্রতি সিরিয়া থেকে বেশ কিছু শরণার্থী এসেছে। তাদের মাঝে আইএসের এজেন্ট যে নেই, তা হলফ করে বলা যাবে না। তাই একটা প্রশ্ন থেকে গেলই- যুক্তরাষ্ট্রে আদৌ সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে কিনা? তবে এ ঘটনা যে আগামী নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। এ ক্ষেত্রে যদি নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হন, তাতেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
Daily Jugantor
22.09.2016

0 comments:

Post a Comment