রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

চীন-মার্কিন দ্বন্দ্ব কি বড় সংঘর্ষের জন্ম দেবে



চীনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর হ্যাংঝুতে সদ্য শেষ হওয়া জি-২০ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নতুন করে আবারও বড় ধরনের আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্বের দুইটি বড় অর্থনীতি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। দেশ দুইটি জি-২০ এর সদস্য। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতির দেশগুলোকে নিয়ে জি-২০ গঠিত। প্রতি বছরই একবার করে এ দেশগুলো একটি শীর্ষ সম্মেলনে মিলিত হয়। এবারও তারা মিলিত হয়েছিল চীনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর হ্যাংঝুতে। কিন্তু এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তিক্ততার জন্ম হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ওবামা যখন হ্যাংঝুতে পৌঁছলেন তখন তাকে প্রটোকল অনুযায়ী লালগালিচা সংবর্ধনা জানানো হয়নি। অথচ জি-২০ সম্মেলনে অংশ নেয়া অন্যান্য বিশ্ব নেতাদের, বিশেষ করে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ওঁলাদ, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে, কিংবা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়েছিল। ওবামাকে লালগালিচা সংবর্ধনা না দেয়া ছিল অনাকাক্সিক্ষত। এজন্য চীন কোনো দুঃখ প্রকাশও করেনি। এমনকি ওবামার সফর সঙ্গীদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার পর্যন্ত করা হয়েছিল। ওবামার জি-২০ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যেও চীনের প্রতি এক ধরনের ‘হুমকি’ ছিল। দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে যে দ্বন্দ্ব এবং সেখানে চীনের সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্র যে অখুশি, তাও ওবামার বক্তব্যে ফুটে উঠেছিল। সম্মেলনে ওবামা বলেছিলেন, চীন আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করলে, তাকে এর পরিণাম ভোগ করতে হবে। সিএনএনের ফারিদ জাকারিয়াকে ওবামা বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাশা করে, চীন দায়িত্বশীল আচরণ করবে। এ ধরনের মন্তব্য চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কের জন্য কোনো ভালো খবর নয়। দক্ষিণ চীন সাগরের কর্তৃত্ব নিয়ে চীনের সঙ্গে আশপাশের দেশগুলোর দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। ফিলিপাইনের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক আদালত সম্প্রতি একটি রায় দিয়েছেন। তাতে তারা বলেছেন, দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থিত কয়েকটি দ্বীপপুঞ্জের ব্যাপারে চীনের দাবি অযৌক্তিক। বলা ভালো, শুধু ফিলিপাইনেই নয়, বরং ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়া এমনকি জাপানেরও দাবি রয়েছে এ দ্বীপগুলোর ব্যাপারে। আন্তর্জাতিক আদালত ফিলিপাইনের পক্ষে রায় দিলেও চীন তা মানছে না। যুক্তরাষ্ট্র ওই এলাকায় তার সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে। ফলে সঙ্গত কারণেই চীন মার্কিন কর্মকা-ে অখুশি। যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে তার সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করেছে। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গেও একটি সামরিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওই চুক্তিটি, যা লেমোয়া (LEMOA- Logistic Exchange Memorandum of Agreement) নামে অভিহিত, তা ভারতের পররাষ্ট্র নীতির জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট। এ চুক্তি ভারতকে আরও বেশি করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি নির্ভরশীল করে তুলবে। যুক্তরাষ্ট্র আরও দুইটি চুক্তি নিয়ে বর্তমানে ভারতের সঙ্গে কথাবার্তা বলছে এবং ধারণা করছি, শিগগিরই ভারত এ দুইটি চুক্তিতেও স্বাক্ষর করবে। এর একটি হচ্ছে সিসমোয়া (CISMOA- Communications Interpretability and Security Memorandum of Agreement) এবং অপরটি হচ্ছে বেকা (BECA- Basic Exchange and Cooperation Agreement for Geospatial Cooperation)। সিসমোয়া চুক্তির ফলে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সব তথ্য পাবে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে ‘বেকা’ চুক্তির আওতায় বিভিন্ন স্থানের ডিজিটাল মানচিত্র ও সমীক্ষা রিপোর্টের ব্যবহারের সুযোগ পাবে যুক্তরাষ্ট্র। সুতরাং এ ধরনের চুক্তির ধরন এবং এর ব্যবহার যে ভারতকে আরও বেশি মাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রমুখী করবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, প্রায় ১৬ বছর যাবৎ ভারতের রাজনীতিতে, বৈদেশিক সম্পর্কের প্রশ্নে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে একটি পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। ২০০৮ সালে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি অসামরিক পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। এর ফলে পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণসহ সব ধরনের পারমাণবিক প্রযুক্তি, যা শুধু অসামরিক কাজে ব্যবহৃত হবে, তা যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে সরবরাহ করছে। ভারত এখন নিউক্লিয়ার সাপ্লাইস গ্রুপ বা এনএসজি’র সদস্য হতে চায়, যা কিনা যুক্তরাষ্ট্রও সমর্থন করছে। যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক বৃদ্ধির পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রধান কারণ হচ্ছে, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা ও প্রভাব বৃদ্ধিকে চ্যালেঞ্জ করে ভারতকে এ অঞ্চলে চীনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করানো। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন মনে করে, একুশ শতকের মূল কেন্দ্রবিন্দু হবে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল। বাংলাদেশ ও ভারত যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য প্রণীত নীতির আওতাভুক্ত। এ অঞ্চলের রাজনীতির উত্থান-পতন, এ অঞ্চলের তিনটি শক্তির (চীন, ভারত, জাপান) মধ্যকার সম্পর্ক একুশ শতকের বিশ্ব রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করবে। এজন্যই যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিতে অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে এ অঞ্চলের গুরুত্ব পাচ্ছে বেশি। পাঠক স্মরণ করতে পারেন, ওবামার ‘Pivot to Asia’ পলিসির প্রধান বিষয় হচ্ছে, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল। এ অঞ্চলের উত্থান-পতনে এবং বৈদেশিক সম্পর্কের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র একটি ভূমিকা রাখতে চায়। চীনের ভূমিকাকে খর্ব করে যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে তার প্রভাব বাড়াচ্ছে। পাঠক স্মরণ করতে পারেন, প্রেসিডেন্ট ওবামা দু’দুবার ভারত সফর করেছেন। প্রতিবারই তিনি বিশাল এক ভারতীয় ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল নিয়ে ভারত গেছেন এবং একাধিক বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। শুধু তাই নয়, ওবামা তার ভারত সফরের সময় ভারতের জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদের দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। এতেই বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে চীনের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাতে চাইছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ অঞ্চলের ব্যাপারে তার একটা স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার সমন্বয়ে এবং সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণে একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ২০১৬ সালের মার্চে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘রাইমিনা ডায়ালগে’ যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ষষ্ঠ ফ্লিটের প্রধান অ্যাডমিরাল হ্যারি হারিস এ ধরনের একটি প্রস্তাব করেছিলেন। তবে এ ধরনের  প্রস্তাব নতুন নয়। জাপানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শিনজে আবে এ ধরনের একটি প্রস্তাব করেছিলেন ২০০৬-০৭ সালে। জাপানি প্রধানমন্ত্রীর ওই প্রস্তাব Quadrilateral Initiative হিসেবে পরিচিত। এ থেকেই বোঝা যায়, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের Pivot to Asia পলিসির আসল উদ্দেশ্য কী। চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি বৃদ্ধি ও দক্ষিণ চীন সাগরের চীনা নৌবাহিনীর উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও গুয়ামে সাপ্লাই লাইনের জন্য রীতিমতো হুমকিস্বরূপ। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য তাই পরিষ্কারÑ এ অঞ্চলভুক্ত জাপান ও অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতকে সংযুক্ত করে একটি সামরিক অ্যালায়েন্স গড়ে তোলা। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজি বুঝতে আমাদের সহজ হবে যদি আমরা অতি সাম্প্রতিক এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র যে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছে, তার দিকে তাকাই। যুক্তরাষ্ট্র গেল জুলাইয়ে (২০১৬) ফিলিপাইনের নৌবাহিনীকে USA Boutwell নামে একটি বড় ধরনের ডেস্ট্রয়ার সরবরাহ করেছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনা নৌবাহিনীর গতিবিধি লক্ষ রাখা ও প্রয়োজনে চীনা জাহাজকে চ্যালেঞ্জ করা। বেশ কিছুদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ফিলিপাইনের সঙ্গে Enhanced Defense Cooperation নামে একটি চুক্তি করার ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে আসছে। এ চুক্তির বলে যুক্তরাষ্ট্র ফিলিপাইনের সামরিক ঘাঁটিতে মার্কিন সেনা অথবা মেরিন সেনাকে স্থায়ীভাবে মোতায়েনের সুযোগ পাবে। যুক্তরাষ্ট্র ২০১৫ সালে South East Asia Maritime Security Initiative (MSI) এর আওতায় ৪২৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে। এর আগে ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র South East Asia Maritime Law Enforcement Initiative গ্রহণ করেছিল। উদ্দেশ্য হচ্ছে, এ অঞ্চলের দেশগুলোর সমুদ্রসীমার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা ও প্রশিক্ষণ দেয়া। মূল কথা একটাইÑ চীনের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলের দেশগুলোকে দাঁড় করানো।
চীনের জন্য দক্ষিণ চীন সাগরের গুরুত্ব অনেক। এ কারণেই চীন চায় না তার প্রভাবাধীন এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় শক্তি সামরিক তৎপরতা চালাক। শুধু স্ট্র্যাটেজিক কারণেই এ এলাকার গুরুত্ব বাড়েনি, বরং বাণিজ্যিক রুট হিসেবেও এর গুরুত্ব রয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক বাণিজ্যিক রুট এটি। বছরে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য এ পথে পরিবহন করা হয়। বিশাল এক জ্বালানি রিজার্ভ রয়েছে এ অঞ্চলে। প্রায় ১১ বিলিয়ন ব্যারেল তেল, ১৯০ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাস ও ১০ মিলিয়ন টন মাছের এক বিশাল ভা-ার রয়েছে দক্ষিণ চীন সাগরে। চীনের জ্বালানি সুধা’র কথা সবাই জানে। চীন তার অর্থনৈতিক কর্মকা- অব্যাহত রাখতে হলে তার জ্বালানি প্রয়োজন। চীন তার জ্বালানি চাহিদা মেটায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে। সুতরাং চীন খুব স্বাভাবিকভাবেই চাইবে, দক্ষিণ চীন সাগরের নিচে যে বিশাল জ্বালানি সম্পদ রয়েছে, তা ব্যবহার করতে। কিন্তু মার্কিন তেল কোম্পানিগুলোর লোলুপদৃষ্টি পড়েছে এ অঞ্চলের দিকে। আর তাদের স্বার্থে কাজ করছে মার্কিন সেনা ও নৌবাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী দাবি করছে, তাদের সাপ্লাই রুটের জন্য দক্ষিণ চীন সাগরের সামুদ্রিক পথ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গুয়াম, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইনে মার্কিন মেরিন সেনাদের সহায়তার জন্য এ রুটটির নিরাপত্তা তারা চায়। কিন্তু পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ভিন্নÑ সাপ্লাই রুটের নাম করে এ অঞ্চলে যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র মূলত চীনের ওপর এক ধরনের ‘চাপ’ প্রয়োগ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য যে সৎ নয়, তা বোঝা যায় যখন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। Foreign Military Financing কিংবা Development of Asian Reassurance এর আওতায় যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামকে সামরিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে, যার অন্যতম একটি দিক হচ্ছে প্রশিক্ষণ দেয়া ও ‘ক্যাপাসিটি বিল্ডিং’। উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার, চীনের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলের দেশগুলোকে সহযোগিতা করা। এখানে বলা ভালো, যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের ওপর থেকে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অন্যদিকে ভারতও ভিয়েতনামকে ৫০ কোটি ডলারের সামরিক সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে। ভারত ভিয়েতনাম নিয়ন্ত্রিত এলাকায় তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে নিয়োজিত রয়েছে। ভারতের নৌবাহিনীর চারটি জাহাজকে দক্ষিণ চীন সাগরে সম্প্রতি মোতায়েন করা হয়েছিল। এজন্যই অনেকের দৃষ্টি এখন দক্ষিণ চীন সাগরের দিকে। অনেকেই ধারণা করছেন, দক্ষিণ চীন সাগরের বিশাল জ্বালানি রিজার্ভের কারণে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সংঘর্ষ অনিবার্য! কীভাবে চীনে আক্রমণ চালানো হবে, এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠিত থিঙ্ক ট্যাঙ্ক (গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান) RAND একটি সিরিয়াস গবেষণা কর্মও পরিচালনা করে। বলা হয়ে থাকে, পেটাগনের উদ্যোগ এবং অর্থায়নে এ গবেষণা কর্মটি পরিচালিত হয়েছে। সিরিয়াস পাঠকরা War with China শীর্ষক গবেষণা কর্মটি ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে খুঁজে দেখতে পারেন।
বিশ্ব রাজনীতির দৃশ্যপট বদলে যাচ্ছে। এক সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে প্রভাব বলয় বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পরাশক্তি, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আর যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে এক ধরনের ‘যুদ্ধ’ এর জন্ম হয়েছিল, যা ইতিহাসে Cold War বা স্নায়ুযুদ্ধ নামে পরিচিতি পেয়েছিল। দীর্ঘ ৪৬ বছর, অর্থাৎ ১৯৯১ সাল পর্যন্ত এ স্নায়ুযুদ্ধ বহাল ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির সঙ্গে সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধেরও অবসান ঘটে। আজ দৃশ্যপট বদলে গেছে। এখন আর ইউরোপ দুই পরাশক্তির (যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া) মাঝে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রভূমি নয়। বরং এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল হচ্ছে এমন একটি জায়গা, যাকে কেন্দ্র করে নতুন করে এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম হচ্ছে। এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেট হচ্ছে চীন! এক সময় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে ঘিরে ফেলার উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি হয়েছিল ‘কনটেইনমেন্ট পলিসি’। এখন চীনকে ঘিরে ফেলার উদ্দেশ্য নিয়েই নতুন করে তৈরি হয়েছে আরেকটি ‘কনটেইনমেন্ট পলিসি’। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের এ উদ্দেশ্যকে চীন যে চ্যালেঞ্জ জানাবে, এটাই স্বাভাবিক। হ্যাংঝুতে চীন যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, এটা তারই বহিঃপ্রকাশ।
বিশ্বে স্থিতিশীলতার জন্য চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক অত্যন্ত জরুরি। এ দুইটি দেশের মাঝে সম্পর্কের যদি অবনতি ঘটে, তাহলে তা বিশ্ব রাজনীতিতে উত্তেজনা বাড়াবে মাত্র। বিশ্ব আসরে চীন ও রাশিয়া এক কাতারে অবস্থান করছে। চীন সিরিয়া সংকটে যুদ্ধ বিমান পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা মার্কিন স্বার্থবিরোধী। সুতরাং চীন-মার্কিন সম্পর্ক এখন কোন দিকে যায়, সেদিকে লক্ষ থাকবে অনেকের।
ডালাস, যুক্তরাষ্ট্র
Daily Alokito Bangladesh
18.09.2016

0 comments:

Post a Comment