রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

আরো দুই বছর ক্ষমতায় থাকার দুই বিকল্প নিয়ে আগাচ্ছে আ’লীগ

আজকাল-এর সাথে পর্যবেক্ষণ শেয়ার করলেন রাজনীতি-বিশ্লেষক তারেক শামসুর রেহমান:
আবু দারদা যোবায়ের ঃ বাংলাদেশের বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান সাপ্তাহিক আজকালকে বলেছেন, রাজনৈতিক সংকটের টান টান উত্তেজনার মধ্যে ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার মনে হয় এখন দুটি বিকল্পের একটি বেছে নিতে চিন্তা-ভাবনা করছে। বিকল্প দুটি হচ্ছে, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পাওয়া সাংবিধানিক ক্ষমতার বলে আওয়ামী লীগ এককভাবে নির্বাচন করবে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও। কিংবা বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনকে সহিংসতা বলে প্রতীয়মান করে দেশে জরুরী অবস্থা জারির মাধ্যমে আগামী দুই বছর ক্ষমতায় থাকা। দুটি বিকল্পেরই লক্ষ্য এক, আওয়ামী লীগের কমপক্ষে আরো দুই বছর ক্ষমতায় থাকা। কোনটি বেছে নেবে, শিগগির দেখতে পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে অনেক ক্ষমতা দিয়েছে। মহাজোট সরকার সাংবিধানিক ক্ষমতার বলে আগামী ২৪ জানুয়ারীর আগে দেশে সংসদ নির্বাচন করবে। তবে ২৪ অক্টোবর সরকারের ক্ষমতা শেষ এটা ঠিক নয়, ২৫ অক্টোবরের পরেও সংসদ চলতে পারে এবং সেটা সংবিধান-সম্মতভাবেই চলবে। আগামী জানুয়ারী মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করবে। নভেম্বর মাসে নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা হতে পারে।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন আস্থা অর্জন করতে পারেনি। কেননা প্রধান নির্বাচন কমিশনার সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকে কখন কি করতে হবে। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে শতকরা ৩৩ থেকে ৩৮ ভাগ ভোট পেয়ে ক্ষমতায় এসেছে। বিশাল জনসমর্থনের দল বিএনপিকে বাইরে রেখে কিংবা বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ না নেয় তবে সে নির্বাচন দেশে বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে না। এমনকি দাতা সংস্থাগুলির কাছেও নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়াও চীন, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ ইতিমধ্যে বিরোধী দলের অংশ গ্রহণে একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ওপর জোর দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর উচিত ভাল কাজ করে থাকলে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন করা । জনগণ যাকে ভোট দিবে তারাই ক্ষমতায় আসবে। কেননা জনগণ কখনোই ভুল করে না। আগামী নির্বাচন সষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হলে দেশে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে, প্রবৃদ্ধি বাড়বে। কিন্তু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে গণতন্ত্র হুমকির সম্মুখিন হবে।

তারেক শামসুর রেহমান বলেন, তবে বর্তমান বাস্তবতায় সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেত্বত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে সেডো কেবিনেটের মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনা করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে পাঁচজন পাঁচজন করে দশজন নিয়ে মন্ত্রীসভা গঠন করে সেই মন্ত্রী সভায় খালেদা জিয়ার মনোনীত প্রতিনিধিদের স্বরাষ্ট্র ও তথ্য মন্ত্রণালয়য়ের দায়িত্ব দিয়ে নির্বাচন করা যেতে পারে। এটার উদ্দেশ্যই হলো বিরোধী দলকে আস্থায় নিয়ে আসা এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছা করলে এটা করতে পারেন। আর তা না হলে সংবিধান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে যে ক্ষমতা দিয়েছে তা চালু রাখতে হলে অবশ্যই নির্বাচন করতে হবে। এ অবস্থায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের জোট দেশব্যাপি হরতাল , অবরোধ , জ্বালাও পোড়াও এর কর্মসূচি দিলে নানা সহিংসতা হতে পারে। আর সেই সহিংসতার অজুহাতে - বিকল্প হিসেবে শেখ হাসিনার সরকার দেশে জরুরী অবস্থা জারি করে আওয়ামী লীগ দুই বছর ক্ষমতায় থাকতে পারে, ভারতে ইন্ধিরা গান্ধী ৭৪ সালে যে ভাবে জরুরী অবস্থা জারি করে ক্ষমতায় ছিলেন।

তিনি বলেন, সেনা বাহিনীর ক্ষমতা দখলের সম্ভাবনা খুবই কম। বর্তমান বাস্তবতায় সেনাবাহিনী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পরিবর্তে সিভিল প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে বেশ আগ্রহী। সেনাবাহিনীতে ইতিমধ্যে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে, জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সেনাবাহিনীর সদস্যরা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। পাশাপাশি তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তাই সেনাবাহিনী বর্তমান সরকারের প্রতি আস্থাশীল বলেই মনে হ্েচ্ছ। বিএনপি একটি বিশাল রাজনৈতিক দল । এ দলের মূল নেতৃত্বকে নির্বাচনের বাইরে রেখে বিএনপি ভেঙ্গে আলাদা বিএনপি গঠন করে নির্বাচন অংশগ্রহণ দেখানো হলে তাও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।ত বে একটি কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, যেহেতু পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে তাই আগামীতে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা কি হবে সে ব্যাপারে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি সমঝোতায় আসতে হবে। দশম সংসদে হয়তো এর সমাধান হবে না, কিন্তু এগাদশ সংসদে অবশ্যই নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছাতে হবে এবং তখন তা করাও সম্ভব হবে।

0 comments:

Post a Comment