প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন গত শুক্রবার। দেশের এক চরম সংকটকালে প্রধানমন্ত্রী এ ভাষণ দিলেন। কেননা মূল যে সমস্যাটিকে কেন্দ্র করে বর্তমান সংকটের জন্ম, অর্থাৎ একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের যে দাবি, সে দাবির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী এতটুকুও ছাড় দেননি। বিকল্প হিসেবে তিনি সর্বদলীয় সরকার গঠনের একটি প্রস্তাব করেছেন। এই প্রস্তাব নিয়েও আছে নানা কথা। প্রথমত, একটি সর্বদলীয় সরকার গঠনের কোনো কথা সংবিধানে নেই। প্রধানমন্ত্রী কোন ধারা বলে এই সরকার গঠন করবেন? এটা যদি তিনি করেন, তাহলে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠতে পারে। সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা বলা হয়েছে। সংবিধানে বর্ণিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আর প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলীয় সরকার পরস্পর সাংঘর্ষিক। একটি সর্বদলীয় সরকার গঠন করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই যদি একটি সর্বদলীয় সরকার গঠন করতেন, তাহলে কোনো প্রশ্ন উঠত না। এটা প্রধানমন্ত্রীর অধিকার। এখন নির্বাচনের তিন মাস আগে শুধু নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি সর্বদলীয় সরকার, যা সংবিধানে লিপিবদ্ধ নেই- এটা নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। দ্বিতীয়ত, সর্বদলীয় সরকারের প্রধান কে হবেন, সে ব্যাপারে তিনি স্পষ্ট কোনো ধারণা দেননি। সরকারের নীতিনির্ধারকদের বক্তব্য থেকে এটা বোঝা যায় যে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এই সরকারের প্রধান হবেন। এ ক্ষেত্রে একজন দলীয় প্রধান হিসেবে তিনি যদি সরকারপ্রধান থাকেন, তাহলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না- এ ধরনের প্রশ্ন উঠতে পারে। তৃতীয়ত, সর্বদলীয় বলতে তিনি কোন কোন দলের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে একটি মন্ত্রিসভা গঠন করবেন, এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে তিনি কিছু বলেননি। তাঁর নেতৃত্বে একটি মহাজোট সরকার ক্ষমতায়। ওই মহাজোটে জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ বেশ কিছু ছোট দল রয়েছে। মন্ত্রিসভায় অবশ্য ওয়ার্কার্স পার্টির কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। এ ক্ষেত্রে বিএনপির দুই থেকে তিনজন মন্ত্রী নিয়ে তো মন্ত্রিসভায় ব্যালেন্স হবে না। এখন সর্বদলীয় সরকারের নামে মহাজোট সরকারের প্রতিনিধিত্বই থেকে যাবে, তাতে জট খুলবে না। চতুর্থত, সর্বদলীয় সরকারে কি জামায়াত থাকবে? জামায়াতের সংসদে প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। ধারণা করছি, জামায়াত সেখানে থাকবে না। কেননা সরকারের 'বন্ধুরা', বিশেষ করে বাম সংগঠনগুলো এটা চাইবে না। যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াতের নেতারা শাস্তিপ্রাপ্ত। তাঁদের ব্যাপারে আপত্তি থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জামায়াতকে বাদ দিলে(?) কি সর্বদলীয় চরিত্র পাবে ওই মন্ত্রিসভা?
প্রধানমন্ত্রী কবে নির্বাচন হবে, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি ২৫ অক্টোবরের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে চান। সংবিধানে এভাবেই লেখা আছে। এটা সংবিধানসম্মত। তবে মনে রাখতে হবে, একটি নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে যদি সমাঝোতায় উপনীত হওয়া না যায়, তাহলে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করা যাবে বটে; কিন্তু প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ তাতে না থাকলে তার গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। আসলে মূল প্রশ্ন যা, তা হচ্ছে বিরোধী দল বিএনপিকে আস্থায় নেওয়া। এ কাজটি করতে হবে সরকারকেই। সংসদে বিএনপির কম আসন রয়েছে- এটা সত্য। কিন্তু ওই কম আসন দিয়ে বিএনপিকে বিচার করা হলে তাদের প্রতি অবিচার করা হবে। বিগত নির্বাচনেও বিএনপি ৩০ শতাংশ ভোট পেয়েছে। চারদলীয় জোটের প্রাপ্ত ভোটের হার প্রায় ৩৮ শতাংশ। এখন বিএনপি যদি সর্বদলীয় সরকারে যোগ না দেয় এবং যার সম্ভাবনাই বেশি, তাহলে ক্ষমতাসীন মহাজোটকে এককভাবে নির্বাচন করতে হবে। সাংবিধানিকভাবে সেটা ঠিক আছে। কিন্তু অনেক সময় সংবিধানের বাইরে গিয়েও জাতির বৃহত্তর স্বার্থের খাতিরে ঐক্য গড়ে তুলতে হয়। সমসাময়িক বিশ্বরাজনীতিতে কেনিয়া ও জিম্বাবুয়ের দৃষ্টান্ত আমরা দিতে পারি। আমাদের কাছে পাকিস্তান, নেপাল কিংবা গ্রিস ও বুলগেরিয়ার ইতিহাসও আছে। নিঃসন্দেহে সংবিধান প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সংবিধান বাইবেল নয়। এ ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধন করেই যে নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, তেমনটি নয়। বরং সংসদে গৃহীত একটি সিদ্ধান্তের আলোকেই এ ধরনের সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, সময় খুব দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। আগামী ২৫ অক্টোবরকে ঘিরে জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। শঙ্কাও বাড়ছে মানুষের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রী একটি ঝুঁকি নেবেন, যদি তিনি এককভাবে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এতে অস্থিরতা আরো বাড়বে। এই অস্থিরতা বাংলাদেশের বিকাশমান গণতন্ত্রের জন্য কোনো মঙ্গল ডেকে আনবে না। টেকসই গণতন্ত্রের জন্য তা হবে ছুরিকাঘাতের শামিল! সর্বশেষ জার্মানিতে সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দুটি প্রধান দলের মধ্যে সংসদীয় ঐক্য হতে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন সিডিইউ ও প্রধান বিরোধী দল এসপিডি একটি কোয়ালিশন সরকারে যোগ দিতে যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত যে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যেও ঐক্য ও যৌথভাবে সরকার গঠন সম্ভব। আমাদের জাতীয় নেতারা কি বিষয়টি উপলব্ধি করেন? কোনো বিদেশি দাতাগোষ্ঠী নয়, জাতিসংঘও নয়; বরং আমাদের সমস্যা আমাদেরই সমাধান করতে হবে। বাইরে থেকে কেউ এসে আমাদের সমস্যার সমাধান করে দেবে না।
আমি এখনো মনে করি, একটা সমাধান খুঁজে বের করা সম্ভব। যেহেতু সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার চাবিকাঠি, সংবিধানের বর্তমান কাঠামো অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা সংবিধানকে অস্বীকার করতে পারব না। তাই সংবিধানের আলোকেও একটি সমাধান বের করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান থাকতে পারেন। তবে স্বরাষ্ট্র ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তুলে দিতে হবে বিরোধী দল মনোনীত প্রার্থীদের কাছে। বেগম জিয়া নিজে অথবা সংসদের একজন বিএনপির প্রার্থীর কাছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বটি থাকতে হবে। ১০ জন সদস্য নিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভা গঠিত হবে। দুটি বড় দলের প্রস্তাবিত নাম নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। এভাবেই একটা সমাধান বের করা সম্ভব, যেখানে দরকার শুধু আন্তরিকতার। ইতিহাসের এক কঠিন সময় আমরা পার করছি। আমাদের রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতা আমাদের 'রাজনীতির ব্ল্যাকহোলে' ঠেলে দিতে পারে। 'খাদের কিনারে' দাঁড়িয়ে এখন চলমান রাজনীতি। আমাদের রাজনীতিবিদরা ভুল করবেন না- এটাই শুধু আমাদের প্রত্যাশা। প্রধানমন্ত্রী একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু তাঁর ভাষণে অনেক অস্পষ্টতা আছে। এসব অস্পষ্টতা দূর করতে হবে। এখনো সম্ভাবনা আছে একটি সংলাপের। আমি আশা করব, বিএনপি একটি প্রস্তাব দেবে। নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে তাদের প্রস্তাব কী, তা-ও জাতিকে জানানো দরকার। তখন দুই প্রস্তাবকে সামনে রেখে একটি সংলাপ হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী কবে নির্বাচন হবে, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি ২৫ অক্টোবরের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে চান। সংবিধানে এভাবেই লেখা আছে। এটা সংবিধানসম্মত। তবে মনে রাখতে হবে, একটি নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে যদি সমাঝোতায় উপনীত হওয়া না যায়, তাহলে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করা যাবে বটে; কিন্তু প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ তাতে না থাকলে তার গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। আসলে মূল প্রশ্ন যা, তা হচ্ছে বিরোধী দল বিএনপিকে আস্থায় নেওয়া। এ কাজটি করতে হবে সরকারকেই। সংসদে বিএনপির কম আসন রয়েছে- এটা সত্য। কিন্তু ওই কম আসন দিয়ে বিএনপিকে বিচার করা হলে তাদের প্রতি অবিচার করা হবে। বিগত নির্বাচনেও বিএনপি ৩০ শতাংশ ভোট পেয়েছে। চারদলীয় জোটের প্রাপ্ত ভোটের হার প্রায় ৩৮ শতাংশ। এখন বিএনপি যদি সর্বদলীয় সরকারে যোগ না দেয় এবং যার সম্ভাবনাই বেশি, তাহলে ক্ষমতাসীন মহাজোটকে এককভাবে নির্বাচন করতে হবে। সাংবিধানিকভাবে সেটা ঠিক আছে। কিন্তু অনেক সময় সংবিধানের বাইরে গিয়েও জাতির বৃহত্তর স্বার্থের খাতিরে ঐক্য গড়ে তুলতে হয়। সমসাময়িক বিশ্বরাজনীতিতে কেনিয়া ও জিম্বাবুয়ের দৃষ্টান্ত আমরা দিতে পারি। আমাদের কাছে পাকিস্তান, নেপাল কিংবা গ্রিস ও বুলগেরিয়ার ইতিহাসও আছে। নিঃসন্দেহে সংবিধান প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সংবিধান বাইবেল নয়। এ ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধন করেই যে নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, তেমনটি নয়। বরং সংসদে গৃহীত একটি সিদ্ধান্তের আলোকেই এ ধরনের সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, সময় খুব দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। আগামী ২৫ অক্টোবরকে ঘিরে জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। শঙ্কাও বাড়ছে মানুষের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রী একটি ঝুঁকি নেবেন, যদি তিনি এককভাবে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এতে অস্থিরতা আরো বাড়বে। এই অস্থিরতা বাংলাদেশের বিকাশমান গণতন্ত্রের জন্য কোনো মঙ্গল ডেকে আনবে না। টেকসই গণতন্ত্রের জন্য তা হবে ছুরিকাঘাতের শামিল! সর্বশেষ জার্মানিতে সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দুটি প্রধান দলের মধ্যে সংসদীয় ঐক্য হতে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন সিডিইউ ও প্রধান বিরোধী দল এসপিডি একটি কোয়ালিশন সরকারে যোগ দিতে যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত যে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যেও ঐক্য ও যৌথভাবে সরকার গঠন সম্ভব। আমাদের জাতীয় নেতারা কি বিষয়টি উপলব্ধি করেন? কোনো বিদেশি দাতাগোষ্ঠী নয়, জাতিসংঘও নয়; বরং আমাদের সমস্যা আমাদেরই সমাধান করতে হবে। বাইরে থেকে কেউ এসে আমাদের সমস্যার সমাধান করে দেবে না।
আমি এখনো মনে করি, একটা সমাধান খুঁজে বের করা সম্ভব। যেহেতু সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার চাবিকাঠি, সংবিধানের বর্তমান কাঠামো অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা সংবিধানকে অস্বীকার করতে পারব না। তাই সংবিধানের আলোকেও একটি সমাধান বের করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান থাকতে পারেন। তবে স্বরাষ্ট্র ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তুলে দিতে হবে বিরোধী দল মনোনীত প্রার্থীদের কাছে। বেগম জিয়া নিজে অথবা সংসদের একজন বিএনপির প্রার্থীর কাছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বটি থাকতে হবে। ১০ জন সদস্য নিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভা গঠিত হবে। দুটি বড় দলের প্রস্তাবিত নাম নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। এভাবেই একটা সমাধান বের করা সম্ভব, যেখানে দরকার শুধু আন্তরিকতার। ইতিহাসের এক কঠিন সময় আমরা পার করছি। আমাদের রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতা আমাদের 'রাজনীতির ব্ল্যাকহোলে' ঠেলে দিতে পারে। 'খাদের কিনারে' দাঁড়িয়ে এখন চলমান রাজনীতি। আমাদের রাজনীতিবিদরা ভুল করবেন না- এটাই শুধু আমাদের প্রত্যাশা। প্রধানমন্ত্রী একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু তাঁর ভাষণে অনেক অস্পষ্টতা আছে। এসব অস্পষ্টতা দূর করতে হবে। এখনো সম্ভাবনা আছে একটি সংলাপের। আমি আশা করব, বিএনপি একটি প্রস্তাব দেবে। নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে তাদের প্রস্তাব কী, তা-ও জাতিকে জানানো দরকার। তখন দুই প্রস্তাবকে সামনে রেখে একটি সংলাপ হতে পারে।
দৈনিক কালের কন্ঠ, ২০ অক্টোবর ২০১৩।
নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র থেকে
লেখক : অধ্যাপক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
tsrahmanbd@yahoo.com
নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র থেকে
লেখক : অধ্যাপক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
tsrahmanbd@yahoo.com
0 comments:
Post a Comment