আগামী ২৫ অক্টোবরের পর দা-কুড়াল নিয়ে তৈরি থাকতে নির্দেশ দিয়েছিলেন ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। এরপর থেকে তিনি উধাও। পুলিশ তাকে খুঁজছে। একটি অনলাইন সংবাদপত্রে পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, তিনি সম্ভবত দা-কুড়াল বানাচ্ছেন। এ কথাটার পেছনে সত্যতা হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু এটা তো সত্য যে, রাজনীতিতে ‘লগি-বৈঠার’ পর ‘দা-কুড়াল’ এসে গেছে। বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার ৪২ বছরে পা দিয়েছে। আমাদের দুর্ভাগ্য এখানেই যে, সাধারণ মানুষের প্রতি আস্থা না রেখেই আমাদের রাজনীতিকরা লগি-বৈঠা আর দা-কুড়ালে গণতন্ত্র খুঁজছেন! জনাব খোকা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের একজন নন। স্থায়ী পরিষদের তিনি সদস্য নন। তবে ঢাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। খোকা ছাড়া ঢাকায় জনসভা করা চিন্তাও করা যায় না এবং তিনি বেগম জিয়ার আস্থাভাজন-এ কথাটা বিএনপি সার্কেলে সবাই জানেন। তাই তিনি যখন দা-কুড়াল নিয়ে প্রস্তুত থাকার কথা বলেন, তখন আমি আতঙ্কিত না হয়ে পারি না। স্মরণ করিয়ে দেয় ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের কথা, যখন প্রকাশ্যে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছিল। বাংলাদেশের মতো দেশে প্রকাশ্যে দিনের আলোকে মানুষ পিটিয়ে মারার বিষয়টি ছিল অকল্পনীয়। রাজনীতিবিদদের উস্কানিমূলক বক্তব্যে মানুষ কত সহিংস হয়ে উঠতে পারে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের ঘটনা ছিল এর বড় প্রমাণ। তারপর অনেক সময় পার হয়েছে। দোষীদের চিহ্নিত করে বিচার করা সম্ভব হয়নি। ক্ষমতার পালাবদল ঘটেছে। জনগণ ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে বিপুল সংখ্যক ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় পাঠিয়েছে। আজ সাত বছর পর দা-কুড়ালের কথা শুনলাম। এই নিউইয়র্ক শহরে বসেও দেশের রাজনীতির উত্তাপ খুঁজে পাই। দুঃখ লাগে আমরা এত বছর পরও মানবিক হতে পারিনি। ক্ষমতার জন্য কখনো বলছি ‘লগি-বৈঠার’ কথা, কখনো বলছি ‘দা-কুড়ালের’ কথা! সাধারণ মানুষের প্রতি আস্থা রাখতে পারছি না। অথচ এই সাধারণ মানুষের ভোটেই ক্ষমতার পালা-বদল ঘটে। আজ এই দা-কুড়ালের কথা শুনলাম এমন একসময় যখন জাতি প্রস্তুত হচ্ছে নতুন একটি সংসদ গঠন করার জন্য। কিন্তু সেখানেও নানা প্রশ্ন, নানা জিজ্ঞাসা। একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যা প্রয়োজন, তা এখানে অনুপস্থিত।
ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে তার ভাষণে নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তা নাকচ করে দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করে বিকল্প প্রস্তাব দেন। তিনি বলেছেন, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সদস্যদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করুন। যদিও তার প্রস্তাবে সাবেক উপদেষ্টাদের অনেকেই সরাসরি না বলেছেন, যা পত্র-পত্রিকায় এসেছে। তাছাড়া সেই দু-সরকারের কেউ কেউ ইতোমধ্যে প্রয়াতও হয়েছেন। কারো কারো শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটের কোনো কোনো শরিক দল বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাব নাকচ করে দেয় সঙ্গে সঙ্গে। এর মধ্যে সৈয়দ আশরাফকে মির্জা ফখরুল একটি চিঠি দিয়েছেন এবং সৈয়দ আশরাফ এর পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুলকে ফোনও করেছেন। বলা যায়, এই নতুন চিত্র কিছুটা হলেও জনমনে স্বস্তির রেখাপাত করেছে এবং সংলাপের অন্তত একটি সরু রাস্তা হলেও তৈরি হয়েছে। আশরাফ-ফখরুলের ফোনালাপ বিদ্যমান জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক বলা যায়। এই প্রক্রিয়া এগিয়ে গেলেই মঙ্গল। অন্যদিকে বিদেশি কূটনীতিকরা সংকট নিরসনে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। সম্প্রতি রাজনীতিতে অনেক কিছুই ঘটছে যা আগে থেকে আঁচ করা যাচ্ছে না। সংসদের চলতি অধিবেশনেও বিএনপি যোগ দিচ্ছে এমন সংবাদ ২২ অক্টোবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সংকট থেকে বড় দু’দলই যে বেরিয়ে আসতে চাইছে এর একটা লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, এটি খুব আশার কথা বলা যায়।
অতি সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে জনমত জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। জনমত জরিপে দেখা গেছে, এই মুহূর্তে যদি ভোট হয়, তাহলে শতকরা ৫০ দশমিক ৩ ভাগ ভোট পড়বে বিএনপির ঘরে। আর জামায়াতকে নিয়ে এই হার ৫৩ দশমিক ২০ ভাগ। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভোটের হার ৩৬ দশমিক ৫০। বিদেশে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা পশ্চিম ইউরোপে এই জনমত জরিপ নির্বাচনে একটা বড় ভূমিকা রাখে। প্রেসিডেন্ট ওবামা যখন দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন তখন জনমত জরিপই জানিয়ে দিয়েছিল তিনি প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন। নির্বাচনের ফলাফলে তাই জনমত জরিপের প্রতিফলন ঘটেছিল। বাংলাদেশে এই জনমত জরিপ নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। সত্যিকার অর্থেই এই জনমতে সাধারণ মানুষের মতামত কতটুকু প্রতিফলিত হয়েছে বা হয়, এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে অনেকের। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে এই জনমত জরিপ কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলবে। তবে এই জনমত জরিপ দিয়ে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিকে বোঝা যাবে না। বাংলাদেশে এখন ২৫ অক্টোবরকে ঘিরে একটা শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ওই দিন বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ঢাকায় জনসভা আহ্বান করেছে। যদিও বিএনপি জনসভার অনুমতি পায়নি। বিএনপি জনসভা করতে পারবে বলেও মনে হয় না। তাহলে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে? বিএনপিকে জনসভা করতে না দিলে বিএনপির কর্মীরা কী আরো সহিংস হয়ে উঠবে না? পরিস্থিতি যা তাতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের সম্ভাবনা আদৌ নেই এমনটিই মনে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রেখে সরকার নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিএনপির নেতারা বলেছেন এমন কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। এই যে পরস্পরবিরোধী মনোভাব, তা কি বাংলাদেশে টেকসই গণতন্ত্র বিনির্মাণে আদৌ সাহায্য করবে? একজন সাধারণ মানুষকে এ প্রশ্নটা করলে তিনিও না বলবেন। আমরা বারবার বলছি আস্থার সম্পর্ক স্থাপন না করলে টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। দেশ আজ এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ১৮ অক্টোবর জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছেন সেখানে নতুন কিছু নেই। সেই পুরনো কথা। উন্নয়নের কথা। বিরোধী দলের তথাকথিত অপ-তৎপরতার কথা! যারা সরকারে থাকেন, তারা অভিভাবক। উদ্যোগ তাদের নিতে হয়। এক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগটাই প্রধান। কিন্তু চলমান সংকটের সমাধানে সরকারের কোনো আন্তরিক উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। ফলে সংকটের গভীরতা আরো বাড়ছে। বেগম জিয়া চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাতে দুই মহাসচিব পর্যায় আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার তাতে আগ্রহ দেখায়নি। জাতিসংঘের মহাসচিবের দূতের বাংলাদেশ সফরের সময় বিরোধী দলকে একটি চিঠি লেখার কথা ছিল সরকারের। সেই চিঠি আর লেখা হয়নি।
নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী টেকসই গণতন্ত্রের যে কথা বলেছেন, তাতে প্রধান বিরোধী দলের কোনো অংশগ্রহণ নেই। অথচ প্রধান বিরোধী দল এবং জোট মোট ভোটারদের ৩৮ ভাগের প্রতিনিধিত্ব করে। যখন ৩৮ ভাগ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব এখানে নেই, সেই গণতন্ত্র টেকসই হবে কীভাবে? বিরোধী দলের প্রতি জিজ্ঞাসা ও আস্থা স্থাপনের অপর নামই গণতন্ত্র। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে সেটা অনুপস্থিত। বিরোধী দলকে বাইরে রেখে যে নির্বাচন, তা বাংলাদেশে টেকসই গণতন্ত্র উপহার দেবে না। নির্বাচনের প্রশ্নে একটা সমাধান প্রয়োজন। নির্বাচনকালীন একটি সরকার দরকার, যাতে প্রধান বিরোধী দলের আস্থা থাকবে। সংবিধানের আওতায়ও একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। প্রয়োজন শুধু আন্তরিকতার। সেই সঙ্গে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করা, জনসভা করতে না দেয়া, এই মানসিকতার পরিবর্তন করাও জরুরি।
প্রধানমন্ত্রীর জন্য একটি সুযোগ তৈরি হয়েছিল। তিনি ইতিহাসে স্থান করে নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি সম্ভবত বেছে নিয়েছেন এক দলীয় নির্বাচন। বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, তাতে নির্বাচনে অংশ নেয়ার লোকের অভাব নেই। রাজনৈতিক দলেরও অভাব নেই। নির্বাচন হতেই পারে। কিন্তু গ্রহণযোগ্যতা? ১৯৮৬ সালে দেশে নির্বাচন হয়েছিল। তাতে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত অংশ নিয়েছিল। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশ না নেয়ায় সেই নির্বাচন কোনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তাই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন হওয়ার জন্য ওই সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছিল। তাতে আওয়ামী লীগ অংশ নেয়নি। ফলে সংসদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। ওই সময় সংসদ টিকে ছিল মাত্র ১৩ দিন। যারা ওই সময় সংসদে নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাদের নিয়েও বিতর্ক কম হয়নি। বিতর্কের মুখে সংসদ ভেঙে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই সংসদের গুরুত্ব আছে একটি কারণে-আর তা হচ্ছে ওই সংসদেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস হয়েছিল। তারপরের ইতিহাস সবার জানা। বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাস একটি দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায় সপ্তম (১৯৯৬), অষ্টম (২০০১) ও নবম (২০০৮) জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছিল এবং ওই তিনটি নির্বাচন ব্যাপক গ্রহণযোগ্য হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দু’দুবার বিজয়ী হয়ে (১৯৯৬, ২০০৮) সরকার গঠন করেছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখন ইতিহাস। ওই সরকার ভালো ছিল, কী মন্দ ছিল, তা নিয়ে একসময় গবেষণা হবে। যে প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল ঘোষিত হয়েছে, তা বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। আদালতের রায়ে ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল ঘোষিত হয়েছে, কিন্তু উচ্চ আদালতের সুপারিশ গ্রহণ করা হয়নি। অনেকেই বলার চেষ্টা করেন অনির্বাচিত একটি সরকার গণতন্ত্রের পরিপন্থী। এর পেছনে ‘সত্যতা’ যতটুকু আছে, তার চাইতেও বেশি ‘সত্য’ হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে এ ধরনের একটি সরকারের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। আমরা টেকসই গণতন্ত্র চাই বটে কিন্তু একজন দলীয় প্রধানকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রেখে এবং তাকে সব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যে নির্বাচন, সেই নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে দেশে টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। সরকার ২৫ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির (২০১৪) মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবে। সরকার অপেক্ষা করছে বিএনপির সিদ্ধান্তের জন্য। নিঃসন্দেহে বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোটের জন্য এটা একটা কঠিন সময়। নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিকে উহ্য রেখে বিএনপি যদি নির্বাচনে যায়(?), তাহলে সরকারের অবস্থান শক্তিশালী হবে। সরকারের লেজিটেমেসি তাতে আরো বাড়বে। আর বিএনপি যদি নির্বাচনে না যায়(?), তাহলেও সরকার সংবিধানের দোহাই দিয়ে নির্বাচন করবে ও পুনরায় সরকার গঠন করবে। এক্ষেত্রে একটি ‘সরকার সমর্থক’ বিরোধী দলের জন্ম হওয়া বিচিত্র কিছু নয়। হয়তো সেই সরকার ন্যূনতম দু’বছর ক্ষমতায় থাকবে এবং রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে। ততদিনে বিএনপি তার অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারবে কিনা, সেটাই প্রশ্ন হয়ে থাকবে অনেকের কাছে। নিঃসন্দেহে প্রধানমন্ত্রী একটি ঝুঁকি নেবেন যদি তিনি এককভাবে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এতে অস্থিরতা আরো বাড়বে। এই অস্থিরিতা বাংলাদেশের বিকাশমান গণতন্ত্রের জন্য কোনো মঙ্গল ডেকে আনবে না। টেকসই গণতন্ত্রের জন্য তা হবে ছুরিকাঘাতের শামিল। সর্বশেষ জার্মান সংসদ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে দুটি প্রধান দলের মাঝে একটি সংসদীয় ঐক্য হতে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন সিডিইউ এবং প্রধান বিরোধী দল এসপিডি একটি কোয়ালিশন সরকারে যোগ দিতে যাচ্ছে। ওটা আমাদের জন্য একটা দৃষ্টান্ত যে সরকার ও বিরোধী দলের মাঝেও ঐক্য সম্ভব ও সরকার গঠন করা সম্ভব। আমাদের জাতীয় নেতারা কি বিষয়টি উপলব্ধি করেন? কোনো বিদেশি দাতাগোষ্ঠী নয়, জাতিসংঘও নয়; বরং আমাদের সমস্যা আমাদেরই সমাধান করতে হবে। বাইরে থেকে কেউ এসে আমাদের সমস্যার সমাধান করে দেবে না।
এখনো মনে করি একটা সমাধান খুঁজে বের করা সম্ভব। যেহেতু সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার চাবিকাঠি এমন অবস্থায়। সংবিধানের বর্তমান কাঠামো অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলেও, বাস্তবতা হচ্ছে আমরা সংবিধানকে অস্বীকার করতে পারব না। সংবিধানের আলোকেও একটি সমাধান বের করা সম্ভব। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান থাকতে পারেন। তবে স্বরাষ্ট্র ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তুলে দিতে হবে বিরোধী দল মনোনীত প্রার্থীদের কাছে। বেগম জিয়া নিজে অথবা সংসদের একজন বিএনপির প্রার্থীর কাছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বটি থাকতে হবে। ১০ জন সদস্য নিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভা গঠিত হবে। দুটি বড় দলের প্রস্তাবিত নাম নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। এভাবেই একটা সমাধান বের করা সম্ভব, সেখানে দরকার শুধু আন্তরিকতার। ইতিহাসের এক কঠিন সময় আমরা পার করছি। রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতা, আমাদের ‘রাজনীতির ব্ল্যাকহোলে’ ঠেলে
দিতে পারে। ‘খাদের কিনারে’ দাঁড়িয়ে রয়েছে
দেশের রাজনীতি। এই সংকটকালে আমাদের রাজনীতিবিদরা ভুল করবেন না, এটাই শুধু আমাদের প্রত্যাশা।
ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে তার ভাষণে নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তা নাকচ করে দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করে বিকল্প প্রস্তাব দেন। তিনি বলেছেন, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সদস্যদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করুন। যদিও তার প্রস্তাবে সাবেক উপদেষ্টাদের অনেকেই সরাসরি না বলেছেন, যা পত্র-পত্রিকায় এসেছে। তাছাড়া সেই দু-সরকারের কেউ কেউ ইতোমধ্যে প্রয়াতও হয়েছেন। কারো কারো শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটের কোনো কোনো শরিক দল বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাব নাকচ করে দেয় সঙ্গে সঙ্গে। এর মধ্যে সৈয়দ আশরাফকে মির্জা ফখরুল একটি চিঠি দিয়েছেন এবং সৈয়দ আশরাফ এর পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুলকে ফোনও করেছেন। বলা যায়, এই নতুন চিত্র কিছুটা হলেও জনমনে স্বস্তির রেখাপাত করেছে এবং সংলাপের অন্তত একটি সরু রাস্তা হলেও তৈরি হয়েছে। আশরাফ-ফখরুলের ফোনালাপ বিদ্যমান জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক বলা যায়। এই প্রক্রিয়া এগিয়ে গেলেই মঙ্গল। অন্যদিকে বিদেশি কূটনীতিকরা সংকট নিরসনে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। সম্প্রতি রাজনীতিতে অনেক কিছুই ঘটছে যা আগে থেকে আঁচ করা যাচ্ছে না। সংসদের চলতি অধিবেশনেও বিএনপি যোগ দিচ্ছে এমন সংবাদ ২২ অক্টোবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সংকট থেকে বড় দু’দলই যে বেরিয়ে আসতে চাইছে এর একটা লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, এটি খুব আশার কথা বলা যায়।
অতি সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে জনমত জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। জনমত জরিপে দেখা গেছে, এই মুহূর্তে যদি ভোট হয়, তাহলে শতকরা ৫০ দশমিক ৩ ভাগ ভোট পড়বে বিএনপির ঘরে। আর জামায়াতকে নিয়ে এই হার ৫৩ দশমিক ২০ ভাগ। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভোটের হার ৩৬ দশমিক ৫০। বিদেশে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা পশ্চিম ইউরোপে এই জনমত জরিপ নির্বাচনে একটা বড় ভূমিকা রাখে। প্রেসিডেন্ট ওবামা যখন দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন তখন জনমত জরিপই জানিয়ে দিয়েছিল তিনি প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন। নির্বাচনের ফলাফলে তাই জনমত জরিপের প্রতিফলন ঘটেছিল। বাংলাদেশে এই জনমত জরিপ নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। সত্যিকার অর্থেই এই জনমতে সাধারণ মানুষের মতামত কতটুকু প্রতিফলিত হয়েছে বা হয়, এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে অনেকের। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে এই জনমত জরিপ কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলবে। তবে এই জনমত জরিপ দিয়ে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিকে বোঝা যাবে না। বাংলাদেশে এখন ২৫ অক্টোবরকে ঘিরে একটা শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ওই দিন বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ঢাকায় জনসভা আহ্বান করেছে। যদিও বিএনপি জনসভার অনুমতি পায়নি। বিএনপি জনসভা করতে পারবে বলেও মনে হয় না। তাহলে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে? বিএনপিকে জনসভা করতে না দিলে বিএনপির কর্মীরা কী আরো সহিংস হয়ে উঠবে না? পরিস্থিতি যা তাতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের সম্ভাবনা আদৌ নেই এমনটিই মনে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রেখে সরকার নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিএনপির নেতারা বলেছেন এমন কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। এই যে পরস্পরবিরোধী মনোভাব, তা কি বাংলাদেশে টেকসই গণতন্ত্র বিনির্মাণে আদৌ সাহায্য করবে? একজন সাধারণ মানুষকে এ প্রশ্নটা করলে তিনিও না বলবেন। আমরা বারবার বলছি আস্থার সম্পর্ক স্থাপন না করলে টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। দেশ আজ এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ১৮ অক্টোবর জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছেন সেখানে নতুন কিছু নেই। সেই পুরনো কথা। উন্নয়নের কথা। বিরোধী দলের তথাকথিত অপ-তৎপরতার কথা! যারা সরকারে থাকেন, তারা অভিভাবক। উদ্যোগ তাদের নিতে হয়। এক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগটাই প্রধান। কিন্তু চলমান সংকটের সমাধানে সরকারের কোনো আন্তরিক উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। ফলে সংকটের গভীরতা আরো বাড়ছে। বেগম জিয়া চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাতে দুই মহাসচিব পর্যায় আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার তাতে আগ্রহ দেখায়নি। জাতিসংঘের মহাসচিবের দূতের বাংলাদেশ সফরের সময় বিরোধী দলকে একটি চিঠি লেখার কথা ছিল সরকারের। সেই চিঠি আর লেখা হয়নি।
নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী টেকসই গণতন্ত্রের যে কথা বলেছেন, তাতে প্রধান বিরোধী দলের কোনো অংশগ্রহণ নেই। অথচ প্রধান বিরোধী দল এবং জোট মোট ভোটারদের ৩৮ ভাগের প্রতিনিধিত্ব করে। যখন ৩৮ ভাগ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব এখানে নেই, সেই গণতন্ত্র টেকসই হবে কীভাবে? বিরোধী দলের প্রতি জিজ্ঞাসা ও আস্থা স্থাপনের অপর নামই গণতন্ত্র। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে সেটা অনুপস্থিত। বিরোধী দলকে বাইরে রেখে যে নির্বাচন, তা বাংলাদেশে টেকসই গণতন্ত্র উপহার দেবে না। নির্বাচনের প্রশ্নে একটা সমাধান প্রয়োজন। নির্বাচনকালীন একটি সরকার দরকার, যাতে প্রধান বিরোধী দলের আস্থা থাকবে। সংবিধানের আওতায়ও একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। প্রয়োজন শুধু আন্তরিকতার। সেই সঙ্গে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করা, জনসভা করতে না দেয়া, এই মানসিকতার পরিবর্তন করাও জরুরি।
প্রধানমন্ত্রীর জন্য একটি সুযোগ তৈরি হয়েছিল। তিনি ইতিহাসে স্থান করে নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি সম্ভবত বেছে নিয়েছেন এক দলীয় নির্বাচন। বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, তাতে নির্বাচনে অংশ নেয়ার লোকের অভাব নেই। রাজনৈতিক দলেরও অভাব নেই। নির্বাচন হতেই পারে। কিন্তু গ্রহণযোগ্যতা? ১৯৮৬ সালে দেশে নির্বাচন হয়েছিল। তাতে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত অংশ নিয়েছিল। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশ না নেয়ায় সেই নির্বাচন কোনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তাই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন হওয়ার জন্য ওই সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছিল। তাতে আওয়ামী লীগ অংশ নেয়নি। ফলে সংসদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। ওই সময় সংসদ টিকে ছিল মাত্র ১৩ দিন। যারা ওই সময় সংসদে নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাদের নিয়েও বিতর্ক কম হয়নি। বিতর্কের মুখে সংসদ ভেঙে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই সংসদের গুরুত্ব আছে একটি কারণে-আর তা হচ্ছে ওই সংসদেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস হয়েছিল। তারপরের ইতিহাস সবার জানা। বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাস একটি দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায় সপ্তম (১৯৯৬), অষ্টম (২০০১) ও নবম (২০০৮) জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছিল এবং ওই তিনটি নির্বাচন ব্যাপক গ্রহণযোগ্য হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দু’দুবার বিজয়ী হয়ে (১৯৯৬, ২০০৮) সরকার গঠন করেছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখন ইতিহাস। ওই সরকার ভালো ছিল, কী মন্দ ছিল, তা নিয়ে একসময় গবেষণা হবে। যে প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল ঘোষিত হয়েছে, তা বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। আদালতের রায়ে ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল ঘোষিত হয়েছে, কিন্তু উচ্চ আদালতের সুপারিশ গ্রহণ করা হয়নি। অনেকেই বলার চেষ্টা করেন অনির্বাচিত একটি সরকার গণতন্ত্রের পরিপন্থী। এর পেছনে ‘সত্যতা’ যতটুকু আছে, তার চাইতেও বেশি ‘সত্য’ হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে এ ধরনের একটি সরকারের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। আমরা টেকসই গণতন্ত্র চাই বটে কিন্তু একজন দলীয় প্রধানকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রেখে এবং তাকে সব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যে নির্বাচন, সেই নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে দেশে টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। সরকার ২৫ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির (২০১৪) মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবে। সরকার অপেক্ষা করছে বিএনপির সিদ্ধান্তের জন্য। নিঃসন্দেহে বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোটের জন্য এটা একটা কঠিন সময়। নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিকে উহ্য রেখে বিএনপি যদি নির্বাচনে যায়(?), তাহলে সরকারের অবস্থান শক্তিশালী হবে। সরকারের লেজিটেমেসি তাতে আরো বাড়বে। আর বিএনপি যদি নির্বাচনে না যায়(?), তাহলেও সরকার সংবিধানের দোহাই দিয়ে নির্বাচন করবে ও পুনরায় সরকার গঠন করবে। এক্ষেত্রে একটি ‘সরকার সমর্থক’ বিরোধী দলের জন্ম হওয়া বিচিত্র কিছু নয়। হয়তো সেই সরকার ন্যূনতম দু’বছর ক্ষমতায় থাকবে এবং রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে। ততদিনে বিএনপি তার অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারবে কিনা, সেটাই প্রশ্ন হয়ে থাকবে অনেকের কাছে। নিঃসন্দেহে প্রধানমন্ত্রী একটি ঝুঁকি নেবেন যদি তিনি এককভাবে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এতে অস্থিরতা আরো বাড়বে। এই অস্থিরিতা বাংলাদেশের বিকাশমান গণতন্ত্রের জন্য কোনো মঙ্গল ডেকে আনবে না। টেকসই গণতন্ত্রের জন্য তা হবে ছুরিকাঘাতের শামিল। সর্বশেষ জার্মান সংসদ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে দুটি প্রধান দলের মাঝে একটি সংসদীয় ঐক্য হতে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন সিডিইউ এবং প্রধান বিরোধী দল এসপিডি একটি কোয়ালিশন সরকারে যোগ দিতে যাচ্ছে। ওটা আমাদের জন্য একটা দৃষ্টান্ত যে সরকার ও বিরোধী দলের মাঝেও ঐক্য সম্ভব ও সরকার গঠন করা সম্ভব। আমাদের জাতীয় নেতারা কি বিষয়টি উপলব্ধি করেন? কোনো বিদেশি দাতাগোষ্ঠী নয়, জাতিসংঘও নয়; বরং আমাদের সমস্যা আমাদেরই সমাধান করতে হবে। বাইরে থেকে কেউ এসে আমাদের সমস্যার সমাধান করে দেবে না।
এখনো মনে করি একটা সমাধান খুঁজে বের করা সম্ভব। যেহেতু সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার চাবিকাঠি এমন অবস্থায়। সংবিধানের বর্তমান কাঠামো অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলেও, বাস্তবতা হচ্ছে আমরা সংবিধানকে অস্বীকার করতে পারব না। সংবিধানের আলোকেও একটি সমাধান বের করা সম্ভব। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান থাকতে পারেন। তবে স্বরাষ্ট্র ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তুলে দিতে হবে বিরোধী দল মনোনীত প্রার্থীদের কাছে। বেগম জিয়া নিজে অথবা সংসদের একজন বিএনপির প্রার্থীর কাছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বটি থাকতে হবে। ১০ জন সদস্য নিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভা গঠিত হবে। দুটি বড় দলের প্রস্তাবিত নাম নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। এভাবেই একটা সমাধান বের করা সম্ভব, সেখানে দরকার শুধু আন্তরিকতার। ইতিহাসের এক কঠিন সময় আমরা পার করছি। রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতা, আমাদের ‘রাজনীতির ব্ল্যাকহোলে’ ঠেলে
দিতে পারে। ‘খাদের কিনারে’ দাঁড়িয়ে রয়েছে
দেশের রাজনীতি। এই সংকটকালে আমাদের রাজনীতিবিদরা ভুল করবেন না, এটাই শুধু আমাদের প্রত্যাশা।
দৈনিক মানবকন্ঠ, ২৪ অক্টোবর ২০১৩
লেখক: অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
লেখক: অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
0 comments:
Post a Comment