মিয়ানমারের সাধারণ নির্বাচন দীর্ঘ
২৫ বছর পর একটি বড় প্রত্যাশা সৃষ্টি করেছে দেশটির জনগণের মধ্যে। ১৯৯০ সালে
অনুষ্ঠিত আরেকটি নির্বাচন এমন প্রত্যাশা সৃষ্টি করলেও অচিরেই
মিয়ানমারবাসীর সেই আশা ভঙ্গ হয়েছিল। সামরিক বাহিনী ওই নির্বাচন বাতিল ঘোষণা
করেছিল। এরপর ২০১০ সালে একটি নির্বাচন হয়েছিল বটে; কিন্তু তার কোনো
গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। প্রথমদিকে দল নিবন্ধন করতে না পারায় অং সান সুচির দল
ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি। পরে অবশ্য
সুচি উপনির্বাচনে ৪০টি আসনে বিজয়ী হয়েছিলেন। ২০১০ সালের নির্বাচনের
ধারাবাহিকতায়ই ৯ নভেম্বর সেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল এবং যা প্রত্যাশা করা
হয়েছিল, তা-ই হয়েছে। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে সুচির দল বিজয়ী হয়েছে বলে
মনে করা হচ্ছে।
কিন্তু এ নির্বাচন অনেক প্রশ্নেরই কোনো জবাব দেয় না। প্রথমত,
জনগণের ভোটে সুচি বিজয়ী হলেও তিনি মিয়ানমার রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী
অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট কিংবা প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। সংবিধানে
প্রধানমন্ত্রীর পদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আর সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার
কারণে তিনি প্রেসিডেন্টও হতে পারবেন না। কারণ তিনি একজন বিদেশীকে বিয়ে
করেছিলেন এবং তার দুই সন্তান বিদেশী নাগরিক। দ্বিতীয়ত, সেনাবাহিনী
মিয়ানমারের সমাজ ব্যবস্থায় অন্যতম একটি শক্তি। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি
নিয়ন্ত্রণ করে সেনাবাহিনী। ১৯৬২ সালে প্রথম সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই
সেখানে এ অবস্থা বিরাজ করছে। এখন রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেনাবাহিনীর স্বার্থে
আঘাত করলে তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। সেনাবাহিনী তাদের কর্পোরেট স্বার্থ
বিসর্জন দেবে, এটা মনে হয় না। অবশ্য সর্বশেষ খবর অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট ও
সেনাপ্রধান উভয়েই নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় সুচিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
তৃতীয়ত, মিয়ানমারে সাম্প্রতিককালে একটি উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী রাজনীতির
জন্ম হয়েছে। সেনাবাহিনী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ উগ্র জাতীয়তাবাদী
রাজনীতিকে প্রমোট করছে। উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীরা মা বা থা অথবা
অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য প্রটেকশন অব রেস অ্যান্ড রিলিজিয়ন নামক একটি সংগঠনের
ব্যানারে সংগঠিত হয়েছে। একজন বার্মিজ বিন লাদেন ভিরাথুর কথাও ছাপা হয়েছিল
বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনে ২০১৩ সালের ১ জুলাই। ভিরাথু মিয়ানমার থেকে সব
মুসলমানের উচ্ছেদ চান। অং সান সুচি বরাবরই এদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে রাজনীতি
করে গেছেন। এখন দেখতে হবে উগ্রপন্থীদের সঙ্গে তার সম্পর্ক কোন পর্যায়ে
উন্নীত হয়। চতুর্থত, প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন নির্বাচনের আগে ৮টি
বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তি করেছিলেন। কিন্তু আরও ৭টি
সংগঠন রয়ে গেছে। এখন দেখতে হবে সুচির ব্যাপারে এদের দৃষ্টিভঙ্গি কী।
পঞ্চমত, রোহিঙ্গাদের নিয়ে বড় সমস্যা রয়েই গেছে। সুচি কখনও রোহিঙ্গাদের
মানবাধিকারের প্রশ্নটিকে বড় করে দেখেননি। এমনকি সেনাবাহিনী বলে থাকে
রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক নয় এবং সুচি এ বক্তব্যের কখনও সমালোচনা
করেননি।রোহিঙ্গা ইস্যু এবং সেই সঙ্গে
সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্ক এখন নানা
জটিলতায় আটকে আছে। অতীতে মিয়ানমার সরকার কর্তৃক নাফ নদীতে বাঁধ নির্মাণের
উদ্যোগের কারণ দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। এই বাঁধ নির্মাণকে
কেন্দ্র করে পরবর্তী সময়ে, ২০০০ সালের ডিসেম্বরে, উভয় দেশের
সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে গুলিবিনিময়ের ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছিল। অনেকের স্মরণ
থাকার কথা, ২০০১ সালের জানুয়ারিতে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে ৩৫ হাজার এবং
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ২০ হাজার সৈন্য নিজ নিজ সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছিল।
এরপর অবশ্য দুপক্ষের মাঝে একটি সমঝোতা হয়েছিল এবং মিয়ানমার বাঁধ নির্মাণ
কর্মসূচি স্থগিত রেখেছিল। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় (২০০৬-২০০৮)
বাংলাদেশ গভীর সমুদ্রে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান করায় (একটি কোরীয় কোম্পানি
কর্তৃক) মিয়ানমার সেখানে যুদ্ধজাহাজ পর্যন্ত পাঠিয়েছিল। নিরাপত্তার
স্বার্থে বাংলাদেশ নৌবাহিনীও সেখানে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছিল। বাংলাদেশ
বারবার মিয়ানমারকে আস্থায় নিয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার সেই আস্থার কোনো মর্যাদা
দেয়নি। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে তাদের কোনো উদ্যোগ নেই।রোহিঙ্গা
নিয়ে যে সমস্যা, তার শুরু মূলত ১৯৭৮ সালের এপ্রিলে। ওই সময় মিয়ানমারের
সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত Operation Dragon-এর শিকার হয়ে আরাকানের
মুসলমানরা (রোহিঙ্গা) দলে দলে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।
আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা ছিলেন আকিয়াব (সিটিওয়ে), পালেটবা, মিনবিয়া, মায়োহং,
মাইবন, মংডু ও রাথেডং অঞ্চলের অধিবাসী। ওই সময় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে
বাংলাদেশের ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৮ সালের জুলাই মাসে
মিয়ানমার ৩টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে সব রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফেরত নেয়ার
ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এবং ১৯৭৮ সালের ৩১
আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে আগত ১ লাখ ৮৭ হাজার
২৫০ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়। এদের সবার কাছেই মিয়ানমার সরকার
কর্তৃক ইস্যুকৃত 'National Registration Card' (NRC) ছিল। এরপর ১৯৯১ সালের
মাঝামাঝি সময়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী আরাকানে অপারেশন পিয়েথায়া নামে আরেকটি
অভিযান পরিচালনা করলে আরও হাজার হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজার এলাকায় অবৈধভাবে
প্রবেশ করে এবং আশ্রয় নেন। এরপর থেকে দুপক্ষের মাঝে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
নিয়ে আলোচনা হলেও কার্যত তা খুব একটা ফল দেয়নি।ধারণা
করা হচ্ছে, বর্তমানে প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ রোহিঙ্গা বৃহত্তর কক্সবাজার
এলাকায় অবৈধভাবে বসবাস করছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে নিবন্ধিত
রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ২৫ হাজার ৪৫। তারা টেকনাফের কতুপালং ও নোয়াপাড়া
শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে। কিন্তু অনিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা অনেক বেশি।
বাংলাদেশ সরকার অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে অবস্থানরত অনিবন্ধিত মিয়ানমারের
নাগরিক শুমারি ২০১৫ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২২ কোটি
টাকা। এ উদ্যোগটি ভালো। রোহিঙ্গাদের এই দুটো ক্যাম্প থেকে নিঝুম দ্বীপে
সরিয়ে নেয়ার চিন্তাও করছে সরকার। এই উদ্যোগটিও ভালো। বাংলাদেশ সরকারকে এখন
রোহিঙ্গা সমস্যাটিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে।দ্বিতীয়ত,
মিয়ানমার থেকে বিপুল পরিমাণে মাদক ইয়াবা আসছে। বাংলাদেশ ইয়াবার চালানের
বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ায় বিজিবি সদস্য রাজ্জাকের অপহরণের ঘটনাটি
ঘটেছিল। রোহিঙ্গা ইস্যুর সঙ্গে ইয়াবার প্রশ্নটিও তার অপহরণের সঙ্গে জড়িত।
গত সাত বছরে ইয়াবার চোরাচালান বেড়েছে ১৭৭ গুণ। এই হিসাব মাদকদ্রব্য
নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের। ঢাকায় ইয়াবা বিক্রির রয়েছে ৫ শতাধিক স্পট (আমাদের
সময়, ২৪ জুন)। আরেকটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায়
অন্তত ৩৯টি ইয়াবা কারখানা রয়েছে, যেখান থেকে চোরাই পথে প্রতি মাসে সীমান্ত
দিয়ে শত কোটি টাকার ইয়াবা চালান ঢুকছে বাংলাদেশে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ
অধিদফতরের হিসাবে বাংলাদেশে বছরে তিন হাজার কোটি টাকার মাদকের বাজার রয়েছে।
এর অর্ধেক দখল করে রেখেছে ইয়াবা (সকালের খবর, ২৪ জুন)। দুঃখজনক হলেও সত্য,
ইয়াবা পাচারের সঙ্গে মিয়ানমারের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা জড়িত।
বাংলাদেশের আইনশৃংখলা বাহিনীর অনেক সদস্যও এ কাজে জড়িয়ে গেছেন বলে খবর
রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে অং সান সুচির দল ভবিষ্যতে যদি রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা
করেও মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষাকারী বাহিনীর স্বার্থ যেখানে জড়িত, সেখানে
পরিস্থিতির অগ্রগতি হবে এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই।তবে
এ নির্বাচন প্রমাণ করল মানুষ সেখানে পরিবর্তন চায়। তাই পরিবর্তনটি এসেছে।
জনগণই সব ক্ষমতার উৎস- রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই স্বতঃসিদ্ধ বাক্যটির সত্যতা
মিয়ানমারের ক্ষেত্রে আবারও প্রমাণিত হল। সেনাবাহিনী ক্ষমতা ধরে রাখার
চেষ্টা করলেও জনগণের সম্মতি তাতে ছিল না। জনগণ চেয়েছিল একটি সুষ্ঠু ও
নিরপেক্ষ নির্বাচন। এটি প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন নিশ্চিত করেছেন। এজন্য
নিঃসন্দেহে তিনি ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। ১৯৯০ সালের মতো নির্বাচন বাতিল করার
কোনো উদ্যোগ তিনি নেননি। কেননা তিনি জানেন, নির্বাচন বাতিল করা হলে তা
পশ্চিমা বিশ্বের, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে
না। আসিয়ানের নেতৃবৃন্দও এটা মানবেন না। ফলে একটি বড় ধরনের ঝুঁকি এড়াতেই
জেনারেল থেইন সেইন এ নির্বাচনের ফল মেনে নিয়েছেন। সারা বিশ্বই এখন
সাংবিধানিক পথে যাচ্ছে, নির্বাচনের পথে যাচ্ছে। একসময় যে ইন্দোনেশিয়ায়
সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব ছিল রাজনীতি, প্রশাসন সর্বত্র, সুহার্তো-পরবর্তী সেই
ইন্দোনেশিয়া এখন ধীরে ধীরে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীও ধীরে ধীরে নিজেদের বদলে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে। এর
প্রথম প্রকাশ হিসেবেই তারা সাধারণ নির্বাচনকে মেনে নিয়েছে। তবে ধারণা করছি,
অং সান সুচির সঙ্গে তাদের পরোক্ষ একটা সমঝোতা হয়েছে। সুচি বর্তমান
সংবিধানকে মেনে নেবেন। এ মুহূর্তে সংবিধান সংশোধনের কোনো উদ্যোগ তিনি নেবেন
না। এমনকি মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে কোনো জেনারেলকে তিনি বিচারের
মুখোমুখিও দাঁড় করাবেন না। এক ধরনের স্ট্যাটাস কো তিনি মেনে নেবেন। তবে
একটা প্রশ্ন থাকছেই- নতুন সরকারে তার ভূমিকা কী হবে? প্রধানমন্ত্রীর পদ না
থাকায় এ পদটি আপাতত তিনি গ্রহণ করতে পারছেন না। ফলে একজন সিনিয়র মন্ত্রীর
পদ সৃষ্টি করে অথবা প্রধানমন্ত্রীর সমমর্যাদার পদ সৃষ্টি করে তিনি নয়া
সরকারে দায়িত্ব নিতে পারেন। সমঝোতার ফলে জেনারেল থেইন সেইনকে তিনি
দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট পদে সমর্থন করতে পারেন। অথবা দলের সমর্থক
একজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দিতে পারেন। বর্তমান
প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের মেয়াদ শেষ হবে ২০১৬ সালের মার্চে।সুচি
মিয়ানমারকে সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে ফিরিয়ে নিতে চাইলেও এ মুহূর্তে তা
পারবেন বলে মনে হয় না। নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগেই তিনি বিবিসির
সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে যে ভাষায় কথা বলেছেন, তা একটা শংকারও জন্ম দিয়েছে।
তিনি বলেছেন, পার্লামেন্টে সেনাবাহিনীর ২৫ শতাংশ আসন প্রথা বিলুপ্ত হবেই।
তিনি গণতান্ত্রিক সমাজের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, পার্লামেন্টে সেনাবাহিনীর
জন্য আসন থাকা গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনার পরিপন্থী। কথাটা তিনি মিথ্যা
বলেননি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে মিয়ানমার কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়।
নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তিনি যদি এই কোটা পদ্ধতি বাতিল করার এখনই উদ্যোগ নেন,
তাহলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তিনি বিতর্কে জড়িয়ে যাবেন, যা পুনরায় সামরিক
অভ্যুত্থানে সেনাবাহিনীর জেনারেলদের প্ররোচিত করতে পারে। তিনি রিয়েল
পলিটিক্সের পরিচয় দেবেন, এটাই সবাই প্রত্যাশা করে। এ মুহূর্তে যা প্রয়োজন
তা হচ্ছে জাতীয় ঐক্য দৃঢ় করা, গণতন্ত্রকে সংহত করা ও শান্তিচুক্তি
বাস্তবায়ন করা। অনেকটা ইন্দোনেশিয়ার সুহার্তো-পরবর্তী মডেল তিনি অনুসরণ
করতে পারেন, যেখানে সেনাবাহিনী এখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কমিটেড। একই সঙ্গে
সুচি প্রেসিডেন্টের পদটিকে একটি নিয়মতান্ত্রিক পদে পরিণত করতে চান।
সাংবিধানিকভাবে এটাও এখন সম্ভব নয়। সংবিধানে পরিবর্তন আনতে হলে সেনাবাহিনীর
সমর্থন নিয়েই তা করতে হবে। কিন্তু বিষয়টি অত সহজ নয়। সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন
ধরে যে লিখিত সুবিধা ভোগ করে আসছে, তা রাতারাতি ছেড়ে দেবে, এটা মনে হয় না।মিয়ানমারে
একটি গণতান্ত্রিক সরকার আমাদের জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ও
মিয়ানমার উভয় রাষ্ট্রই বিসিআইএম ও বিবিআইএমএস-টেকজোটের সদস্য। বাংলাদেশের
পূর্বমুখী পররাষ্ট্রনীতির জন্য এ দুটো জোটের গুরুত্ব অনেক বেশি। যদিও
মিয়ানমারে দীর্ঘ সেনাশাসন থাকায় দুদেশের মাঝে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়নি।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশ যে পরিমাণ পণ্য মিয়ানমারে রফতানি করে
আমদানি করে তার চেয়ে অনেকটাই বেশি। ২০০৫-০৬ সালে বাংলাদেশ রফতানি করেছিল ৫
দশমিক ১৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য (২০১২-১৩ সালে এর পরিমাণ ছিল ১৩ দশমিক ৬৭
মিলিয়ন), আর আমদানি করেছিল ২৯ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন ডলারের পণ্য (২০১২-১৩ সালে
এর পরিমাণ ছিল ৮৪ মিলিয়ন)। অথচ বিশাল সম্ভাবনার দেশ মিয়ানমার বাংলাদেশের
জ্বালানি সুবিধার অন্যতম উৎস হতে পারে। বস্তুত একটি গণতান্ত্রিক সরকার
সম্ভাবনার অনেক দুয়ার খুলতে পারে।প্রেসিডেন্ট
থেইন সেইন নির্বাচনে এনএলডির বিজয়কে স্বাগত জানালেও সুচির একটি বক্তব্য
একটি আশংকারও জন্ম দিয়েছে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক চ্যানেল এশিয়ার সঙ্গে এক
সাক্ষাৎকারে তিনি উল্লেখ করেছেন, তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন, প্রেসিডেন্ট নন।
তিনি একথাও বলেছেন, সংবিধান যদি তাকে সরকারের নেতৃত্ব দিতে বাধা সৃষ্টি
করে, তাহলে একটি পথ বের করতেই হবে যাতে তিনি সরকারের নেতৃত্ব দিতে পারেন।
সমস্যাটা এখানেই তৈরি হবে। সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট একই সঙ্গে
রাষ্ট্রপ্রধান ও মন্ত্রিসভার প্রধান। সংবিধান পরিবর্তন না করে সুচির পক্ষে
মন্ত্রিসভার নেতৃত্ব দেয়া সম্ভব নয়। আর সংবিধান সংশোধনের কাজটিও সুচির জন্য
সহজ হবে না। সংসদের উভয় কক্ষে (আসন ৬৬৪) সেনাসদস্য রয়েছেন ১৬৬ জন। প্রয়োজন
তিন-চতুর্থাংশের সমর্থন। কাজটি সুচির জন্য সত্যিই কঠিন। সুতরাং মিয়ানমারের
নির্বাচন থেকে এখনই সব প্রশ্নের জবাব মিলছে না।
Daily Jugantor
13 .11.15
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment