রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

প্যারিস ট্রাজেডি ও ভবিষ্যৎ বিশ্ব রাজনীতি

গত ১৩ নভেম্বর প্যারিসে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিদের হাতে ১২৯ জন সাধারণ মানুষের মৃত্যুর পর যে প্রশ্নটি এখন বিশ্ব মিডিয়ায় বড় হয়ে দেখা দিয়েছে তা হচ্ছে, এর শেষ কোথায়? ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ওলান্দ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একটি নয়া যুদ্ধ শুরু করেছেন। এ যুদ্ধ বিশ্বকে কোথায় নিয়ে যাবে? মধ্যপ্রাচ্য কি আগামীতে চতুর্থ যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করবে? সারা বিশ্বের মিডিয়ায় এখন নানা প্রশ্ন, নানা জল্পনা-কল্পনা। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে বিশ্বের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছিল নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলা। সারা বিশ্বের মানুষ সেদিন টিভির পর্দায় দেখেছিল কীভাবে মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস হয়ে গেল টুইন টাওয়ার। সন্ত্রাসীরা সেদিন ৪টি বিমান হাইজ্যাক করে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে বিধ্বস্ত করিয়েছিল। ওই ঘটনার পরের ইতিহাস সবার জানা। আল কায়দা ও এর নেতা ওসামা বিন লাদেন টুইন টাওয়ার ধ্বংসের এবং কয়েক হাজার সাধারণ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী- এ অভিযোগ তুলে অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিমানবহর হামলা চালাল আফগানিস্তানে এবং দেশটি দখল করে নিল। দীর্ঘ ১৩ বছর যুক্তরাষ্ট্র সেখানে ছিল। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সরকারিভাবে আফগানিস্তান থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়া হলেও সেখানে এখনও কিছু মার্কিন সেনা রয়ে গেছে। বলা হচ্ছে, তাদের কাজ শুধু প্রশিক্ষণ দেয়া। এরপর ২০০৩ সালের মার্চ। ইরাকের কাছে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র রয়েছে- এই অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালিয়ে দেশটি দখল করে নিল। প্রিয়েমটিভ স্ট্রাইকের তত্ত্বটি ব্যবহার করা হয়েছিল ইরাক আক্রমণের ক্ষেত্রে। এ তত্ত্বের মূল কথা হচ্ছে, শত্র“ আঘাত হানার আগেই তাকে ধ্বংস করে দেয়া। কিন্তু পরে প্রমাণিত হয়েছে, ইরাকের কাছে কোনো মারণাস্ত্র ছিল না। ওই সময়ের ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার সম্প্রতি স্বীকার করেছেন, ইরাক হামলা ভুল ছিল। বাস্তবতা হচ্ছে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ ইরাক আক্রমণের আগে ইরাকি জনগণকে খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা দিলেও পুরো ইরাক ধ্বংস হয়ে গেছে। ইরাকি জ্বালানি তেলের ব্যাপারে আগ্রহ ছিল মার্কিনিদের। আর ওই তেল বিক্রি করেই ইরাক পুনর্গঠনের কাজ পেয়েছিল মার্কিন কোম্পানিগুলো। এর পরের টার্গেট ছিল লিবিয়ার গাদ্দাফি। ২০১১ সালে গাদ্দাফিকে উৎখাত করা হল। এ ক্ষেত্রে অবশ্য ইরাকি তত্ত্ব ব্যবহার করা হয়নি। স্থলবাহিনীও সেখানে পাঠানো হয়নি। ব্যবহার করা হয়েছিল হিউম্যানিটারিয়ান ইন্টারভেনশন তত্ত্ব, অর্থাৎ মানবাধিকার রক্ষায় হস্তক্ষেপ তত্ত্ব। গাদ্দাফির শাসনামলে সেখানে মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে, এ অভিযোগ তুলে মার্কিন ও ফরাসি বিমান লিবিয়ায় হামলা চালাল এবং গাদ্দাফিকে হত্যা করা হল। এরপর চার বছর পেরিয়ে গেছে। লিবিয়া কার্যত এখন একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সেখানে কোনো সরকার নেই। মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে প্রতিদিন। লিবিয়া এখন সন্ত্রাসীদের রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করছে লিবিয়ার রাজনীতি। এরপর এলো রেসপন্সিবিলিটি টু প্রটেক্ট তত্ত্ব। এর মূল কথা হচ্ছে, মানবতা রক্ষায় বিশ্বশক্তির দায়িত্ব! সিরিয়ার ক্ষেত্রে এ তত্ত্বটি ব্যবহৃত হয়েছে। সিরিয়ায় আইএসের উত্থানের আগেই প্রেসিডেন্ট আসাদ ছিলেন মার্কিনিদের পরবর্তী টার্গেট। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল সাধারণ মানুষ হত্যার, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করার। তাই উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল আসাদকে উৎখাতের। একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত হয়েছিল রেসপন্সিবিলিটি টু প্রটেক্ট তত্ত্ব। তবে এ ব্যাপারে কোনো চুক্তি হয়নি। ফলে এ তত্ত্ব কোনো আন্তর্জাতিক আইন হিসেবেও গ্রহণযোগ্য নয়। সাধারণত কোনো দেশে সামরিক আগ্রাসন চালাতে হলে নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। ইরাকের (২০০৩) ক্ষেত্রে কিংবা সিরিয়ার ক্ষেত্রে (২০১১) এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি নিরাপত্তা পরিষদ। সেখানে জন্ম হয় আইএস জঙ্গিগোষ্ঠীর, যারা এখন সিরিয়া ও ইরাকের একটা বিশাল অংশ দখল করে একটি তথাকথিত জিহাদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। আসাদবিরোধী ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর সিরিয়ান রেভ্যুলেশনারি অ্যান্ড অপজিশন ফোর্সেস গঠিত হয়েছিল ২০১২ সালের নভেম্বরে দোহায়। ২০১৩ সালের জুলাইয়ে আহমেদ জারবা এ সংগঠনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাদের কর্মসূচির মধ্যে ছিল স্বাধীন একটি গণতান্ত্রিক সিরিয়া প্রতিষ্ঠার। কিন্তু দেখা গেল, আইএসের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে ন্যাশনাল কাউন্সিলের ভূমিকা সীমিত হয়ে গেছে। রাজনীতির দৃশ্যপটে আবির্ভূত হয় আইএসের জঙ্গিরা। তাদের নৃশংস কর্মকাণ্ড সারা বিশ্বের শুভবুদ্ধির মানুষের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। প্রশ্ন হচ্ছে, কারা আইএসকে সংগঠিত করেছে? এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, সিরিয়ায় আইএসের নাম প্রথম শোনা যায় ২০১৩ সালে। তখন সংগঠনটির নাম ছিল ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড লেভান্ট। এ এলাকার ঐতিহাসিক নাম লেভান্ট। জঙ্গিরা এ নামটি গ্রহণ করেছিল। পরে তারা নামটি পরিবর্তন করে। তবে ১৯৯১ সালে জামাত আল তওহিদ ওয়াল জিহাদ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে মূলত এটি সংগঠিত হয়েছিল। পরে এরা আল কায়দা ইন ইরাক নাম ধারণ করে। এ সংগঠনটি মূলত সুন্নি প্রভাবাধীন ও সুন্নি সম্প্রদায়নির্ভর। ২০০৬ সালে ইরাকে সুন্নি প্রভাবাধীন মুজাহিদিন শূরা কাউন্সিলে সংগঠনটি যোগ দেয়। ২০১৩ সালে সারা বিশ্ব প্রথমবারের মতো আবু বকর বুগদাদির নাম জানতে পারে। ২০১৪ সালের ২৯ জুন বুগদাদি একটি খেলাফতের ডাক দিলে সংগঠনটি ব্যাপক পরিচিতি পায়। তখন সংগঠনটি নতুন নাম ধারণ করে ইসলামিক স্টেট বা আইএস। তবে আল কায়দার সঙ্গে সংগঠনটির সম্পর্ক কী তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। বলা হচ্ছে, ২০১৪ সালের জুন থেকে আইএসের সঙ্গে আল কায়দার কোনো সম্পর্ক নেই। আল কায়দার রাজনৈতিক দর্শন ও আইএসের রাজনীতির মাঝে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। দুটি সংগঠনই মূলত জিহাদি, সালাফি ও ওয়াহাবি মতবাদ দ্বারা পরিচালিত হয়। আল কায়দা জিহাদি ও ওয়াহাবি মতবাদ অনুসরণ করলেও খেলাফতের কথা বলেনি কখনও। আইএস খেলাফতের কথা বলেছে। বুগদাদি নিজেকে খলিফা বা আমিরুল মুমেনিন হিসেবে ঘোষণা করেছেন; কিন্তু আল কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেন যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন নিজেকে খলিফা ঘোষণা করেননি। বুগদাদি নিজেকে পুরো মুসলিম বিশ্বের নেতা বা খলিফা হিসেবে ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে দাবি করেছেন, সব মুসলমানের দায়িত্ব হচ্ছে এ খেলাফতের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করা। তিনি মুসলমানপ্রধান দেশগুলোকে নিয়ে এক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেন। অপরদিকে আল কায়দার স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে ছোট্ট ছোট্ট আমিরাত প্রতিষ্ঠা করা। আল কায়দা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে অপারেট করে। কিন্তু আইএস তা করে না। তবে বলার অপেক্ষা রাখে না, আল কায়দা ও আইএস- উভয় সংগঠনই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার জন্ম দেয়া। পুরো মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একটা বড় স্ট্র্যাটেজি রয়েছে। এখানে তার স্বার্থ অনেক। স্বার্থ রয়েছে ফ্রান্সেরও। বাহরাইন ও কাতারে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি। ফ্রান্স ও ব্রিটেনের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে আমিরাত ও সাইপ্রাসে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে সস্তায় তেল পাওয়া যায়। এ তেলের ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের নির্ভরশীলতা অনেক বেশি। লিবিয়ার তেলের ওপর ৩টি পশ্চিমা দেশের নির্ভরশীলতা ইতিমধ্যে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ইতালির প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেলের ২৯ ভাগ আসে লিবিয়া থেকে। ফ্রান্স ও স্পেনের এ নির্ভরশীলতার হার যথাক্রমে ১৪ ও ১০ ভাগ। তারা চাইবে সস্তায় তেল নিতে। সিরিয়ায় খুব বেশি তেলসম্পদ নেই। কিন্তু এ তেলই এখন আইএসের জঙ্গিদের আয়ের অন্যতম উৎস। আইএস প্রতিদিন তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে ২৬ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলন করে। কালোবাজারে তা বিক্রি করে। এর মূল্য দেড় থেকে ২ মিলিয়ন ডলার। আর প্রতিদিনের তেল বিক্রির অর্থ জমা হচ্ছে আইএসের ফান্ডে। এ ফান্ড ব্যবহৃত হয় জঙ্গিদের মাসিক বেতন (৪৩০ থেকে ১ হাজার ডলার) এবং সেই সঙ্গে বিদেশে জঙ্গি তৎপরতার কাজে। যেমন, প্যারিসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য প্রায় ৫০ হাজার ডলার ব্যয় হয়েছে বলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার ধারণা। কাকতালীয়ভাবে ২০০১ সালের টুইন টাওয়ার হামলার সঙ্গে প্যারিসে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের অনেক মিল আছে। দীর্ঘ ১৪ বছর পরও টুইন টাওয়ার হামলার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটিত হয়নি। কেন টুইন টাওয়ার হামলায় একজন ইহুদিও মারা গেল না, কারা অভিযুক্ত সৌদি নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল, এর পেছনে কাদের আর্থিক স্বার্থ বেশি ছিল, একটা মুসলমানবিদ্বেষী মনোভাব তৈরি করে কারা লাভবান হয়েছে- এসব প্রশ্নের কোনো জবাব আমাদের জানা নেই। আমি যুগান্তরে ৯/১১ নিয়ে একাধিক লেখা লিখেছি। তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বলার চেষ্টা করেছি, ৯/১১-এর ঘটনাবলী ছিল এটি বড় ধরনের ষড়যন্ত্রেরই ফল। আজ যখন ভিন্ন আঙ্গিকে প্যারিস ট্রাজেডি সংঘটিত হতে দেখি, তখন স্পষ্টতই আবারও সেই ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কথাই মনে পড়ে যায়। আল কায়দার চ্যাপ্টার এখন শেষ। ওসামা বিন লাদেন এখন ইতিহাস। রাজনীতির মঞ্চে এখন বুগদাদি আর ইসলামিক স্টেট। কে এই বুগদাদি, কারা আইএস তৈরি করল- এ নিয়ে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যারা গবেষণা করেন তারাই বলেন, এটা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সৃষ্টি। টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মিশেল চসুদোভস্কি তো স্পষ্টই ইঙ্গিত করেছেন, প্যারিস ট্রাজেডি হচ্ছে ৯/১১-এর ফরাসি স্ট্রাইল (Le ll September a la Francaise)। যারা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতির কিছুটা খোঁজখবর রাখেন, তারা নিশ্চয়ই গ্রেটার মিডলইস্ট পলিসি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা রাখেন। কয়েক বছর আগে একজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ওয়েসলি ক্লার্ক ৭টি দেশের পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন। ওই ৭টি দেশ হচ্ছে ইরান, সিরিয়া, লেবানন, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইরাক। ইতিমধ্যে লিবিয়া ও ইরাকে পরিবর্তন হয়েছে। সিরিয়া পরিবর্তনের পথে। ২০২০-পরবর্তী মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে মানচিত্র আঁকতে হবে। সৌদি আরবের ভেঙে যাওয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া ও ইরাক একাধিক রাষ্ট্রে বিভক্ত হওয়া- এসবই এখন ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে। আর সূক্ষ্মভাবে দেখলে দেখা যাবে, এ থেকে উপকৃত হচ্ছে একমাত্র ইসরাইল। এ ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্রকারীদের যেমন প্রয়োজন ছিল ৯/১১-এর জন্ম দেয়ার, ঠিক তেমনি প্রয়োজন ছিল প্যারিস ট্রাজেডি সৃষ্টি করার! আরও একটা কারণে প্যারিস ট্রাজেডির প্রয়োজন ছিল। সামনে, অর্থাৎ ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। একজন কনজারভেটিভ, কট্টর, ইমিগ্রেশনবিরোধী রোনাল্ড ট্রাম্পের মতো প্রেসিডেন্ট সেখানে দরকার! হিলারির জনপ্রিয়তায় ধস নামানো প্রয়োজন! তাই প্যারিস ট্রাজেডি নিয়ে অনেক প্রশ্ন ও অনেক জিজ্ঞাসা থাকবেই। ৯/১১-এর ঘটনার রেশ এখন স্তিমিত হয়ে আসছে। তাই প্যারিস ট্রাজেডির প্রয়োজন ছিল। এর জের সারা বিশ্বকে টানতে হবে। নতুন করে মুসলমানবিরোধী একটা জনমত আবার ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যাচ্ছে। অভিবাসন প্রক্রিয়ায় এখন বড় পরিবর্তন আসবে। এ মুহূর্তে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সিরিয়া থেকে আসা অভিবাসীরা। যুক্তরাষ্ট্র ১০ হাজার সিরীয় অভিবাসী গ্রহণে রাজি হয়েছিল। এখন তাতে প্রতিবন্ধকতা আসবে। ইতিমধ্যে ১৪টি রাজ্য (যুক্তরাষ্ট্রের) সিরীয় শরণার্থী গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেসব সিরীয় শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের এখন এক ধরনের বস্তির জীবনযাপনে বাধ্য করা হবে। সিরিয়া থেকে আইএস উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া এক ধরনের ঐকমত্যে পৌঁছলেও চূড়ান্ত বিচারে এ ঐকমত্য কতদিন টিকে থাকবে- এটা একটা প্রশ্ন। এই ঐক্য সাময়িক। আসাদকে সিরিয়ায় ক্ষমতায় রাখার প্রশ্নে খুব শিগগিরই এ ঐক্যে ভাঙন ধরবে। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ইরান একটি ফ্যাক্টর। পারমাণবিক সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তি ইরানকে এ অঞ্চলের ব্যাপারে একটা ভূমিকা রাখতে উৎসাহ জুগিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ সমঝোতা আদৌ ইসরাইলি স্বার্থে আঘাত করবে কি-না? সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। ইউরোপের মতো সুরক্ষিত দেশ ফ্রান্সে বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটল। এর আগে লন্ডন, মাদ্রিদেও সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে। আমাদের মতো দেশ এ থেকে শিক্ষা নিতে পারে। আমাদের দেশে আইএস নেই বলে আমরা যেন আÍতুষ্টিতে না ভুগি। আইএস সমর্থকরা এ দেশে সক্রিয় হচ্ছে। প্যারিসের ঘটনা তাদের উৎসাহ জোগাতে পারে। তাই গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো, প্রশিক্ষিত ও দক্ষ লোকদের সমন্বয়ে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স ফোর্স গঠন করা জরুরি। সর্বক্ষেত্রে মনিটরিং বাড়ানো প্রয়োজন। অনেক ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সবার বিচারও হয়নি। প্যারিস ট্রাজেডি আবার নতুন করে ইউরোপে ইসলাম ফোবিয়ার জন্ম দেবে। কিন্তু এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মূল হোতাদের খুঁজে বের করা যাবে- এ আস্থাটা রাখতে পারছি না। তবে নিঃসন্দেহে প্যারিস ট্রাজেডি থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। Daily Jugantor 22.11.15

0 comments:

Post a Comment